কেবলই ছায়া – ৫

পাঁচ

মহীদা একদিন সকালে বললেন, একে স্কুলে ভর্তি করা হোক।

মা বললেন, খরচ?

সে ভাবনা আমার ছোটো মা।

মামা বললেন, কোনো চিন্তা নেই। আমি রোজগারের একটা রাস্তা ধরে ফেলেছি।

মহীদা হাসলেন, শুনি রাস্তাটা কী?

এক সাধু আমাকে দৈব ওষুধের পেটেন্ট দিচ্ছেন। সেই ওষুধ বিক্রি করে আমি লাল হয়ে যাব।

সে ওষুধে কী কী রোগ সারবে?

কিছু সভ্য রোগ। কিছু অসভ্য রোগ।

অসভ্য রোগ আবার কী?

খোকার সামনে আমি বলত পারব না।

বেশ সভ্য রোগই বলো।

বাত, হাঁপানি, লিভারের অসুখ, হজমের গোলমাল, অর্শ, ছুলি, হাজা, দাদ, চুলকানি।

কী ওষুধে এসব সারবে?

গাছ, গাছড়া, মাদুলি।

কীভাবে রুগি ধরবে?

প্রথমে পাড়ায়, পাড়া থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে শহর। শহর থেকে শহরে শহরে। দিকে দিকে। মুখে মুখে প্রচার। এক হাঁপানিতেই লাল হয়ে যাব। এর সঙ্গে দাঁতের ব্যথা। বাঙালি তো হাঁপিয়েই মরল আর থেকে থেকে দাঁতের ব্যথায় গাল ফুলো। সাধুবাবাকে আর একটু সন্তুষ্ট করতে পারলেই পাগলের দাওয়াইও পেয়ে যাব। তখন আর আমাকে পায় কে? আদ্দির পাঞ্জাবি, মিহি ধুতি পরে গাড়ি চেপে বেড়াব।

বি টি এম তুমি বরং শেষেরটাই আগে ধরো। নিজে মাসখানেক আগে তারপর পাড়ায় খাইয়ে বেড়াও।

দাদা, এখন ঠাট্টা করছেন করুন। পরে কিন্তু আমাকে খাতির করতে হবে।

তোমাকে তো এখনও খাতির করি।

মামা গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে চলে গেলেন। যাবার সময় দরজার কাছ থেকে বলে গেলেন, আজ আমি নাও ফিরতে পারি। একেবারে একটা হিল্লে করে ফিরে আসব।

আমার মামাকে নিয়ে একটা বই লেখা যায়। ভালো সাহিত্যিক হলে সে চেষ্টা করা যেত।

মহীদা নিজেই একদিন স্কুলে গিয়ে আমাকে ভর্তি করে দিয়ে এলেন। মহীদাকে দেখার জন্যে ভিড় জমে গেল চারপাশে। ঝুল বারান্দায় বারান্দায় মেয়েরা শরীরের আধখানা ঝুলিয়ে, ওই যে, ওই যে করছে। কোথা থেকে গোটাকতক ফুল এসে পড়ল গায়ে। মহীদার জন্যে শহরের লোক পাগল। আমারও খুব ইচ্ছে হত অভিনেতা হব। মহীদার মুখে যাঁদের নাম অনবরতই শুনতুম, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অর্ধেন্দুশেখর, দানিবাবু, দুর্গাদাস, তাঁদের চেয়েও বড়ো হব।

মহীদার জন্যে স্কুলে সবাই আমাকে খুব খাতির করত। মাস্টারমশাইরা ডেকে ডেকে আমার কাছে মহীদার গল্প শুনতে চাইতেন। কখন ঘুম থেকে ওঠেন, কী খান, কত রাতে ফেরেন, মেকআপ তুলতে কতক্ষণ সময় লাগে। রেগে যান কী না। হাজার হাজার প্রশ্ন। স্কুলে যাওয়া—আসার পথে সবাই ফিসফিস করে, ওই দ্যাখ মহীদার ভাই যাচ্ছে।

এইসব যতই শুনতুম, ততই আমার ভেতরটা বড়ো হয়ে উঠত। মনে হত আমি যে—সে নই। কাগজে একদিন আমার ছবি ছাপা হবে। শহরের দেয়ালে দেয়ালে আমার নাম আর ছবি পড়বে। মহীদার মতো আমিও হাজার দর্শককে রাতের পর রাত স্তব্ধ করে রাখব।

আমরা সবাই একদিন মহীদার নতুন নাটক দেখতে থিয়েটারে গিয়েছিলুম। মঞ্চের সামনে ঝলমলে পর্দা। সমস্ত চেয়ার ভর্তি। সুন্দর সুন্দর সব মানুষ। সুন্দরী মহিলা আতর আর সেন্টের গন্ধ। চারপাশে উড়ছে। খোঁপায় সব মালা গোঁজা। দামি গহনায় আলো পড়ে ঝিকমিক করে উঠছে। সে যেন স্বপ্ন। থিয়েটারের বাইরে সারি সারি গাড়ি। কোনোটার চাল খোলা। টুকটুকে লাল গদি। ফুলের ছেঁড়া পাপড়ি পড়ে আছে। মেয়েদের নাকের কাছে সিল্কের রুমাল ঘুরছে। ভেতরে চাঁদের আলোর মতো চাপা আলো থইথই করছে। ঝিমঝিম বাজনা বাজছে স্টেজের ভেতর। প্রত্যেকের হাতে হাতে হলদে কাগজ। বাতাসে খড়খড় করছে। ছাপানো পরিচিয়—লিপি! দৃশ্য, অঙ্ক, অভিনেতা, অভিনেত্রীর নাম।

সেদিনের পালা ছিল সীতাহরণ। গিরিশচন্দ্র ঘোষের নাটক। সামনের সারিতে নাকি বসেছিলেন রাজা, মহারাজা, মহারানি, বিশিষ্ট আরও সব অতিথি। হাতে হাতে চন্দনকাঠের কারুকাজ করা হাতপাখা নড়ছে। বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে গন্ধ এসে নাকের কাছে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেইদিনই মনে হয়েছিল জীবনের চেয়ে অভিনয় কত বড়ো!

মঞ্চে ভেলভেট পর্দা ধীরে ধীরে সরে গেল দু—পাশে। রাম সেজেছেন মহীদা। কী মানিয়েছে? চোখ যেন জুড়িয়ে যায়। মা আর মাসিমার মুখ গর্বে উজ্জ্বল। প্রথম কথাতেই মহীদা একেবারে মাত করে দিলেন। রাজসভা। রাম আর লক্ষ্মণ। রাম বলছেন,

নাহি জানি, ভাইরে লক্ষ্মণ,
এই কী রে রাজ্যসুখ?
ক্ষণে ক্ষণে হয় মনে, ভাই,
দণ্ডক—অরণ্য মাঝে কুরঙ্গের সনে
ছিনু তিনজনে সুখে,
সংসারের রোল কভু না উঠিত কানে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহীদা দর্শকদের নড়তে চড়তে দিলেন না। সবাই ফিসফিস করে বলতে লাগলেন, কী অসাধারণ অভিনয়। রাধাদি আনন্দে মাঝে মাঝে আমার হাত চেপে ধরেছেন।

 পর্বত কাটিব
 সাগর শুষিব বাণে
 বল, সীতা কোথায় লক্ষ্মণ
 হানি বাণ ব্রহ্মাণ্ড ভেদিব।

দর্শকদের তখন সে কী হাততালি। মহীদা যেন সত্যিই রামচন্দ্র।

মঞ্চের এ কোণ থেকে ও কোণে সরে যাচ্ছেন। আসা—যাওয়ার সে কী ভঙ্গি। দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বলছেন,

 তবে কোথা সীতা?
 আহা রাজার দুহিতা,
 আমা হেতু বনবাসী
 শুনি মহী সীতার জননী
 দুহিতার হেরিয়ে কুটীরে
 নিজবাসে সেই বা লইল।
 ভাই রে লক্ষ্মণ,
 আমারে ছাড়িয়া জানকী না রহে তিল।
 কোথা সীতা, কোথা পাব সীতা।

মহীদার মুখ তখন বিষাদে বিবর্ণ। দু—পাশে ছড়ানো দুটো হাত থিরথির করে কাঁপছে। সত্যিই যেন মহীদার সীতা হারিয়ে গেছে। মা, মাসিমা, রাধাদি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। মনে হল কলকাতায় আমরা নেই। চলে গেছি সেই যুগে, সেই সময়ে। আমার সংগীতগুরু বলতেন, বেটা সুরের সঙ্গে একেবারে মিশে যাবি। শ্রোতাদের আসন থেকে তুলে নিয়ে যাবি সুরলোকে। মহীদা বলতেন চরিত্রের সঙ্গে একেবারে এক হয়ে যেতে হয়। শ্বাস—প্রশ্বাস তখন তোমার নয় চরিত্রের। পরিশ্রমের ঘাম তোমার নয়, চরিত্রের। তুমি তখন মৃত। অজ্ঞাতবাবা বলতেন, তুঁহুঁ, তুঁহুঁ আমি নয়, তবেই মুক্তি।

নাটক যখন শেষ হল তখন গভীর রাত। রামচন্দ্রের শেষ কথা কানে বাজছে—

 ছার প্রাণ আর না রাখিব!
 ভাইরে লক্ষ্মণ
 অনলে কী তাপ এ—অধিক।

সাজঘরের সিঁড়িতে রামচন্দ্রের বেশে মহীদা এসে দাঁড়িয়েছেন। তখনও মেকআপ রয়েছে। কোনো স্টেটের মহারানি নাকি অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। মহারানি পায়ের ধুলো নেবেন। নিচু হয়েছেন। সামনে ঝুলে পড়েছে মুক্তোর মালা। মহীদা তাঁর দুটি হাত ধরে সোজা করার চেষ্টা করছেন। প্রণাম নেবেন না। রানি আছড়ে পড়লেন রামচন্দ্রের বুকে। আমার মনে হল ওই যে সীতা। পরনে সিল্কের শাড়ি, জড়োয়ার গয়না। আমরা তিনজন দূরে দাঁড়িয়ে আছি। মহীদা তখন আমাদের নয়। ভক্তের।

গাড়ি করে ফিরছি। মহীদা বসে আছেন সামনে। খোলা গা। ধবধবে সাদা পিঠ। রুক্ষ চুল বাতাসে উড়ছে। যেন পরচুল। আমাদের দিকে না তাকিয়েই বললেন, রানি তার এস্টেটে যাবার জন্যে নেমন্তন্ন করে গেল। যাবে নাকি তোমরা?

মাসিমা বললেন, খবরদার যাসনি। মেয়েটি তোর জন্যে পাগল হয়েছে।

রাজা—মহারাজার ব্যাপার। বলা যায় না, কী থেকে কী হয়। গুলি—গোলা চালিয়ে দিতে পারে।

পাগল হয়েছ মা! ওসব ফাঁদে কেউ পা দেয়?

কথা শুনতে শুনতে একসময় আমি রাধাদির কোলে ঘুমিয়ে পড়লুম।

কী শীত কী গ্রীষ্ম মহীদা রাতে চান করতেন। চান সেরে গরদের কাপড় পরে নিজের নির্জন ঘরে বাঘছালে ধ্যানে বসতেন। মিটমিট করে প্রদীপ জ্বলত। তাঁর রাতের খাবার ছিল এক গেলাস শরবত। মদ খেতেন, মাতাল হতেন না। সেই সময় মহীদাকে দেখলে মনে হত কারুর জন্যে যেন অপেক্ষা করছেন। তিনি হয়তো ঈশ্বর নন। অন্য কেউ। অনেক সময় গভীর রাতে আমার ঘুম ভেঙে যেত। সেই সময় মহীদার চাপা গলা শুনতুম। এসো, কাছে এসো, রাগ করে ওখানে দাঁড়িয়ে থেকো না। তোমার অভিমান এখনও গেল না। মামা বলতেন, নেশার ঘোরে বকছে। আমার কিন্তু তা মনে হত না।

সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। আমাদের নিচের উঠোন যেন আলোর সরোবর। বাথরুমে যাব বলে দরজা খুলে বেরিয়ে চমকে উঠলুম। রকে থুত্থুড়ে এক বৃদ্ধ বসে আছেন। সাদা চুল, সাদা দাড়ি। পরনে গেরুয়া রঙের চকচকে আলখাল্লা। ভয়ে দরজা বন্ধ করে যাচ্ছিলুম, মহীদার গলা, কী রে ভয় পেলি? এগিয়ে আয়।

কাছে এসে জিজ্ঞেস করলুম, এ কী সাজ?

বোস, বলছি।

বসলুম তাঁর পাশে। পুরো মেকআপ নিয়ে বসে আছেন। পিঠে হাত রাখলেন,

জানিস খোকা, সব মানুষই কোথাও একটা যেতে চায়। যেখানে আছে, যে শরীরে আছে, সেখান থেকে দূরে, বহু দূরে, নির্জনে, একান্তে। সেখানে আকাশের গায়ে নীল একটা পাহাড় থাকবে। রাতের অন্ধকারে ঝাপসা হয়ে। একটা ঝরনা থাকবে কোথাও। জলের ধারা কথা বলবে শিশুর গলায়। বিশাল বিশাল গাছের তলায় থাকবে গোরস্থান। সাদা মার্বেলের ক্রস আর বেদি। আর থাকবে পরিত্যক্ত একটি বাগান। সেই বাগানে থাকবে একটি শ্বেতপাথরের তৈরি পরি। মানুষ থেকে মানুষ বেরিয়ে যেতে চায় মাঝে মাঝে। জীবনে সময়টাকে কখনো এগিয়ে দিতে চায়, কখনো পেছিয়ে দিতে চায়। যা ঘটে গেছে, সেই ঘটনায় আবার ফিরে যেতে চায়, যা ঘটেনি তা টপকে যেতে চায়। এসব তুই বুঝবি না খোকা? মানুষের মনে যে কী হয়?

বললুম আমি বুঝেছি মহীদা। আমারও যে ওইরকম হয়।

তোরও হয়?

হ্যাঁ, আমারও হয়। আমি আমার বাবার মৃত্যুর রাতে আবার ফিরে যেতে চাই। ফিরে যেতে চাই একে একে সেইসব দিনে, বাবা যেসব দিনে বসে থাকতেন পুকুর ধারে, জলে ছিপ ফেলে, বৃথা মাছের আশায়।

সত্যিই কি যাওয়া যায় না, হ্যাঁরে খোকা? দেহে আটকে আছি বলে এত পরাধীনতা। সময় চলছে বলে আমাকে সেই তালে চলতে হবে? কেন, আমি দ্রুত তালে চলে তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যেতে পারি না! কেন পারি না? আমি ফিরতে পারি না? এ কার খেলা? কে খেলায়, আমি খেলি বা কেন? কোথায় তোর সেই অজ্ঞাতবাবা? আমি এসব প্রশ্নের জবাব চাই। আমি বিধির বিধান মানব না। ডাক তাঁকে।

মহীদা এমনভাবে কথা বলছেন, তার ওপর ওই পোশাক। কেমন যেন ভয় করতে লাগল। ধীরে ধীরে, অক্ষর গুনে গুনে বললুম, অজ্ঞাতবাবা তো এখন রিষড়ার আশ্রমে। তাঁকে এখন পাবেন কোথায়?

কেন, তাঁর তো অনেক ক্ষমতা। গায়ে হাত ঠেকালে রুগি সেরে ওঠে। আমাদের ডাক শুনে তিনি আসতে পারেন না? যোগী শ্যামানন্দ পারতেন, বিশুদ্ধানন্দ পারতেন। অজ্ঞাতবাবা কেন পারবেন না? পারতে হবে।

মহীদা কুলকুল করে গেলাসে মদ ঢাললেন। মিষ্টি একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে। আজ কেন এত খাচ্ছেন। এসব খেয়ে কী হয় মানুষের? মহীদা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। বড়ো বড়ো তারা ধক ধক করে জ্বলছে। তিন—চার চুমুক খেয়ে বললেন, চল, ছাতে যাই। এখানে বসে মনে হচ্ছে পুকুরে পড়ে আছি।

ঘুরে ঘুরে সিঁড়ি উঠে গেছে ছাতে। সারা বাড়ি নিস্তব্ধ। সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বারান্দার বিশাল খাঁচায় মুনিয়ারা ডানায় ঠোঁট গুঁজে স্থির। মহীদা আগে আগে উঠছেন। গেলাসে বোতলে ঠোকাঠুকির ঠুং ঠুং আওয়াজ। বাঁ হাতে ছাতের দরজা টান মেরে খুলতেই চাঁদের আলোর ফোয়ারা ছুটে এল। মহীদা ছাতে একটা পা রেখেই থমকে দাঁড়ালেন। সামনে আর এগোচ্ছেন না। আমি পেছন থেকে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করছি কী হল? মহীদা আড়াল করে আছেন। কোমর আর হাতের ফাঁক দিয়ে যতটুকু দেখা যায়! কে একজন আমাদের দিকে পেছন ফিরে ছাতের মাঝখানে বাবু হয়ে বসে আছেন। গায়ে যেন কাচের কাপড়। জ্বলজ্বল করছে চাঁদের আলোয়। মাথার চুল যেন আরতির চামরের মতো। কে ইনি? কোথা থেকে এলেন? ভয়ে আমার শরীর ভারী হয়ে আসছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। চেনা চেনা মনে হচ্ছে অথচ চিনতে পারছি না।

মহীদা ফিসফিস করে বললেন, দাঁড়াও, এগিয়ো না। আমি আগে যাই।

মহীদা ধীরে ধীরে এগোতে লাগলেন। বিশাল ছাত, তার মাঝখানে। আমি দরজার কাছে একা দাঁড়িয়ে কোনোরকমে। মহীদা যত কাছে যাচ্ছেন তাঁর গায়ে অদ্ভুত একটা রুপোলি আলো এসে পড়ছে। আমি বলার চেষ্টা করছি, আর এগোবেন না। গলা দিয়ে শব্দ বেরোচ্ছে না। মহীদা ক্রমশ রুপোর মতো সাদা হয়ে যাচ্ছেন। একেবারে যেন ঝলমলে রাংতার মানুষ।

আর আমার তাকিয়ে থাকার ক্ষমতা রইল না। তারপর কী হল আমার মনে নেই। হয়তো ভয়ে অজ্ঞানই হয়ে গিয়েছিলুম। নাকে এসেছিল তীব্র ফুলের গন্ধ। সে ফুলের গন্ধ আমি জীবনে শুঁকিনি। সকালের রোদ গায়ে পড়তেই চমকে ধড়মড় করে উঠে বসলাম। রোজ যেমন সকাল হয়, সেই একই সকাল। মাঝ—ছাতে মহীদা চিৎ হয়ে পড়ে আছেন। দুদিকে দু—হাত ছড়ানো। চারপাশে ভাঙা কাচ।

ভয় হল মহীদা বোধহয় মারাই গেছেন। মনে করার চেষ্টা করলুম, কাল রাতে কী ঘটেছিল! অনেক রাতে আমি কি নূপূরের আওয়াজ শুনেছিলুম। চুড়ির শব্দ? রাজস্থানি পোশাক পরা কোনো মহিলা কি মহীদার মাথার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন? সেই মহিলা? যিনি আয়নার সামনে বসে থাকতে থাকতে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন?

সকলকে ছাতে ডেকে নিয়ে এলুম। মা মহীদার কপালে হাত রাখলেন। সাজ দেখে সবাই অবাক। কে এই বৃদ্ধ। মহীদা উঠে বসে বলতে লাগলেন, আর আমার অবিশ্বাস নেই। আর আমার সন্দেহ নেই। যা জানি না, তাও হয়। আমি নির্বোধ, আমি মূর্খ?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *