যদুবংশীয় শূরসেন (বসুদেব) ও তাঁর ভার্যা দেবকীর পুত্র। কৃষ্ণ ছাড়াও কেশব, জনার্দন, বাসুদেব প্রভৃতি তাঁর শতনাম ছিল। কৃষ্ণের সত্যভামা, রুক্মিনী, জাম্ববতী প্রমুখ ষোল হাজার ভার্যা ছিলেন। তাঁর পুত্র-পৌত্রাদির সংখ্যাও অসংখ্য। পত্নী রুক্মিনীর গর্ভজাত পুত্ররা হলেন – সুচারু, চারুবেশ, যশোধর, চারুশ্রবা, চারুদেষ্ণ, প্রদ্যুম্ন ও শম্ভু। জাম্ববতীর গর্ভে শাম্ব জন্মান। পুত্রদের মধ্যে প্রদ্যুম্ন যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। কৃষ্ণ ছিলেন বিষ্ণুর অবতার। স্বয়ং নারায়ণ দেবকীর গর্ভে নিজের কৃষ্ণ কেশ নিক্ষেপ করেছিলেন, সেখান থেকেই কৃষ্ণের (কেশব) জন্ম। ধর্মরাজ্য সংস্থাপন ও দুষ্কৃতদের বিনাশ – এই দুই উদ্দেশ্যেই তিনি দেহধারণ করেছিলেন। রাজনীতিজ্ঞ, যোদ্ধা, কর্তব্যপরায়ণ, ধর্মপ্রচারক ও মহাযোগী – এক কথায় কৃষ্ণ ছিলেন আদর্শ পুরুষ। পিতৃস্বসা (পিসীমাতা) কুন্তির তৃতীয় পুত্র অর্জুন (পূর্বজন্মে নর-ঋষি) ছিলেন কৃষ্ণের সখা। অর্থাৎ নরনারায়ণই কৃষ্ণার্জুন হিসেবে মর্ত্তে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সখাত্ব ছাড়াও অর্জুনের সঙ্গে কৃষ্ণের আরেকটি মধুর সম্পর্ক ছিল। অর্জুন কৃষ্ণের বৈমাত্রেয় ভগিনী সুভদ্রাকে বিবাহ করেছিলেন। যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান বলে সন্মান করতেন। গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ শুরু করার আগে তিনি সব সময়ে কৃষ্ণের পরামর্শ নিয়েছেন । রাজসূয়-যজ্ঞের আগে জরসন্ধকে বধ, দুর্যোধনের কাছে অর্ধরাজ্য দাবী করে শান্তির দূত প্রেরণ, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সৈন্যাধ্যক্ষ নির্বাচন, মহাযোদ্ধাদের বধের উপায়, ইত্যাদি সর্ব ব্যাপারে কৃষ্ণের উপদেশের ওপরেই যুধিষ্ঠির নির্ভর করেছেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৃষ্ণ কারোর পক্ষ নিয়েই যুদ্ধ করেন নি, কারণ কৌরব ও পাণ্ডব – উভয়ই ছিলেন ওঁর আত্মীয় – পাণ্ডবরা জন্মসূত্রে, কৌরবরা বৈবাহিক সূত্রে। দুর্যোধনের কন্যা লক্ষণার সঙ্গে কৃষ্ণের পুত্র শাম্বের বিবাহ হয়েছিল। কিন্তু পাণ্ডবদের কল্যাণকেই তিনি জগতের কল্যাণ হিসেবে দেখেছেন। তাই যুদ্ধ না করেও পাণ্ডবদের যাতে জয় হয় সেটাই তাঁর লক্ষ্য ছিল। কাম্যক বনে বনবাসের সময়ে দ্রৌপদী যখন সভাগৃহে দুর্যোধনদের হাতে তাঁর লাঞ্ছনার কথা কৃষ্ণকে জানিয়ে কৃষ্ণের শরণ নিয়েছেন, তখন দ্রৌপদীকে শোক করতে বারণ করে বলেছেন যে, পাণ্ডবদের যাতে কল্যাণ হয়, তাই তিনি করবেন। দ্রৌপদীকে রাজগণের রাণী করবেন বলেও প্রতিজ্ঞা করেছেন। রাজসূয় যজ্ঞের সময়ে মহামতি ভীষ্ম কৃষ্ণকে শ্রেষ্ঠ পুরুষ হিসেবে সন্মান দিয়েছেন। কৃষ্ণের সত্য-পরিচয় ভীষ্ম বা বিদুরের অজ্ঞাত ছিল না। দুর্যোধন অন্যপক্ষে কৃষ্ণকে যদু বংশীয় বীর হিসেবেই দেখতেন। তাই কৃষ্ণ যখন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য পাণ্ডবদের হয়ে দৌত্য করতে এলেন, তখন একেলা এসেছেন বলে তাঁকে বন্দী করবার দুর্মতিও দুর্যোধনের হয়েছিল। বিদুরের কাছে কৃষ্ণের ইন্দ্রকে পরাজিত করার কাহিনী, পূতনাবধ, গোবর্ধন-ধারণ, অরিষ্ট-ধেনুক-কংস- শিশুপাল প্রভৃতির নিধনের কথা শুনেও কৃষ্ণকে সম্যক রূপে তিনি চিনতে পারেন নি। কৃষ্ণ যে একা নন, সেটা দুর্যোধনকে বোঝানোর জন্য অট্টহাস্য করতেই কৃষ্ণের মুখের ভেতর থেকে আদিত্য রুদ্র বসুগণ বেরিয়ে এসে তাঁর দেহে অধিষ্ঠান করল, পাণ্ডগণ ও বৃষ্ণ্যন্ধকগণ তাঁকে ঘিরে দাঁড়ালেন। তাঁর সেই ভয়ঙ্কর বিশ্বরূপ দেখে ভীষ্ম, দ্রোণ ও বিদুর ছাড়া আর সবাই ভয়ে চক্ষু মুদ্রিত করলেও দুর্যোধনের তাতে চেতনা হল না। দৌত্য বিফল হল। ফেরার পথে যে-কর্ণ দুর্যোধনের মস্ত বড় সহায় তাঁকে কৃষ্ণ ধরলেন। কৃষ্ণ কর্ণকে তাঁর জন্ম পরিচয় জানিয়ে পাণ্ডবদের দলে যোগ দিতে আহবান করলেন। সেক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব হিসেবে সিংহাসন বসার এবং দ্রৌপদীকে ভার্যা হিসেবে পাবার অধিকার ওঁর থাকবে – সেই প্রলোভনও দেখালেন। কর্ণ রাজি হলেন না, যদিও এই যুদ্ধের ঘোর পরিণাম কৃষ্ণের কথায় তিনি বুঝতে পারলেন। যুদ্ধ না করলেও কুরুক্ষেত্রে কৃষ্ণই পাণ্ডবপক্ষকে চালনা করেছেন। যুদ্ধারম্ভে প্রতিপক্ষে ভীষ্ম, দ্রোণ ও অন্যান গুরুজন এবং বন্ধুবান্ধবদের দেখে অর্জুন যখন বিষাদগ্রস্থ হয়ে ধনুর্বান ত্যাগ করলেন,তখন কর্মযোগ জ্ঞানযোগ ভক্তিযোগের তত্বাবলী শুনিয়ে কৃষ্ণ অর্জুনকে উদ্বুদ্ধ করলেন। অর্জুনকে বিশ্বরূপ প্রদর্শন করে – এই সমস্থ কিছুই যে, ঈশ্বরের ইচ্ছায় ঘটছে, অর্জুন শুধু তার নিমিত্ত মাত্র – এই গভীর সত্য অর্জুনকে তিনি বুঝিয়েছেন। পাণ্ডবদের জয়ের জন্য তিনি এত উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, যুদ্ধের তৃতীয় দিনে ভীষ্ম যখন বিপুল বিক্রমে পাণ্ডব সৈন্য সংহার করছেন, তখন কৃষ্ণ তা সহ্য করতে না পেরে নিজের প্রতিজ্ঞা ভুলে রথ থেকে লাফিয়ে নেমে ভীষ্মকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। কৃষ্ণের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে পেরেছেন দেখে ভীষ্মও পরম আনন্দিত হয়েছিলেন। অর্জুনের হস্তক্ষেপে কৃষ্ণ তাঁর সম্বিৎ ফিরে পান। অর্জুন যখন শপথ করেন যে, সূর্যাস্তের আগে জয়দ্রথকে বধ না করতে পারলে তিনি অগ্নিতে প্রাণ বিসর্জন দেবেন, তখন সেই কার্যে অর্জুনকে সফল করতে যোগবলে সূর্যাস্তের একটু আগেই ক্ষণকালের জন্য সূর্যকে তিনি আচ্ছাদিত করেছেন। সূর্যাস্ত হয়েছে ভেবে জয়দ্রথের নিরপত্তা বেষ্টনী একটু শিথিল হতেই জয়দ্রথের সন্মুখীন হয়ে অর্জুন তাঁকে বধ করতে পেরেছেন। দিব্যাস্ত্র দিয়ে জয়দ্রথের শিরশ্ছেদ করে মুণ্ডুটিকে অনেক দূরে তাঁর পিতার কোলে না ফেললে যে অর্জুনের মস্তক শতধা বিদীর্ণ হবে – সে ব্যাপারে অর্জুনকে তিনি সাবধান করেছেন। কর্ণের কাছে যতদিন ইন্দ্রপ্রদত্ত একপুরুষ-ঘাতিনী অস্ত্র ছিল, কৃষ্ণ ততদিন অর্জুনকে নিয়ে কর্ণের সন্মুখীন হন নি। কর্ণ যখন সেই অস্ত্র প্রয়োগ করে ঘটোৎকচকে বধ করতে বাধ্য হলেন, তখন পুত্রহারা পাণ্ডবরা শোকাহত হলেও, কৃষ্ণকে পরিতুষ্ট হতে দেখা গেছে। তার প্রথম কারণ এবার কর্ণকে বধ করা অর্জুনের পক্ষে সম্ভব হবে। দ্বিতীয় কারণ, ভীমের পুত্র হিসেবে পাণ্ডবদের নানান ভাবে সহায়তা করলেও, রাক্ষসীর গর্ভজাত বলে ঘটোৎকচ স্বভাবতই ধর্মদ্বেষী পাপাত্মা। পাপাত্মাদের ধবংস করাই কৃষ্ণের কাজ। কৌরবদের পরাজিত করতে ছলনার আশ্রয় নিতেও কৃষ্ণের কোনও অসুবিধা হয় নি। দ্রোণ যখন অমিত বিক্রমে যুদ্ধ করছেন, তখন কৃষ্ণই যুধিষ্ঠিরকে ছলনা করে দ্রোণপুত্র অশ্বত্থমার নিধন বার্তা শোনাতে বলেন। এই কথা শুনলে দ্রোণ অবশ্যই অস্ত্রত্যাগ করবেন – তা তিনি জানতেন। ওঁর সখা অর্জুনও এই পরামর্শে সায় দিতে পারেন নি। তখন কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বুঝিয়েছেন যে, জীবন রক্ষার জন্য মিথ্যা বললে তাতে পাপ হয় না। পিতার মৃত্যুর সংবাদ শুনে অশ্বত্থমা যখন নারায়ণাস্ত্র নিক্ষেপ করলেন,তখন কৃষ্ণ সবাইকে শস্ত্রত্যাগ করে রথ থেকে নামতে বললেন। কৃষ্ণই শুধু জানতেন যে, এই ভাবেই এই অস্ত্রের হাত থেকে একমাত্র রক্ষা পাওয়া যায়। কর্ণের সঙ্গে অর্জুনের দ্বৈরথ যুদ্ধে অনেক্ষণ যুদ্ধের পর ব্রাহ্মণের প্রদত্ত শাপের জন্য কর্ণের রথের চাকা মাটিতে ঢুকে গেল। চাকা তোলার জন্য কর্ণ অর্জুনের কাছে এক মুহূর্ত সময় চাইলেন। পাছে অর্জুন তাতে রাজি হয়ে যান, সেইজন্য কৃষ্ণ অর্জুনকে বার বার মনে করিয়ে দিলেন দ্যূতসভায় দ্রৌপদীর লাঞ্ছনা, সাত মহারথ মিলে অভিমন্যু বধ, জতুগৃহে পুড়িয়ে মারার চক্রান্ত – এইসব কথা। কৃষ্ণের উদ্দেশ্য সাধিত হল। অর্জুন জ্বলে উঠে একটা মহাস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। পরশুরামের অভিশাপে তাকে প্রতিহত করার কোনও দিব্যাস্ত্র কর্ণের স্মরণে এলো না। তাঁর মস্তক দেহচ্যূত হল। যুদ্ধের শেষে উরুভঙ্গ অবস্থায় মরণাহত দুর্যোধন কৃষ্ণকে কংসের দাসপুত্র বলে সম্বোধন করে, পাণ্ডবদের সমস্থ অন্যায় কর্ম যে কৃষ্ণের ষড়যন্ত্রেই সম্ভব হয়েছে জানিয়ে – স্বধর্মে নিরত কৌরবদের বধ করার জন্য কৃষ্ণকেই দায়ী করেছেন। কৃষ্ণ তাতে বিচলিত না হয়ে উত্তর দিয়েছেন যে, এগুলি সবই দুর্যোধনের দুষ্কার্যের প্রতিশোধ। তারপর বিষাদগ্রস্থ পাণ্ডবদের তিনি বলেছেন যে, শুধু ন্যায়ের পথ নিলে এই যুদ্ধজয় সম্ভব ছিল না বলেই যা করণীয় তা তিনি করতে বলেছেন। দুর্যোধন মরণাপন্ন, কিন্তু অশ্বত্থমা, কৃপ আর কৃতবর্মা বেঁচে আছেন। অশ্বত্থমা গভীর রাত্রে তাঁদের নিয়ে পাণ্ডবশিবিরে ঢুকে কৃষ্ণ ও পাণ্ডবদের অবর্তমানে দ্রৌপদীর পাঁচপুত্র ও ধৃষ্টদ্যুম, শিখণ্ডী প্রমুখ পাঞ্চালগনকে হত্যা করে পাণ্ডবদের ভয়ে লুকিয়েছেন। পাণ্ডবরা এই দুঃসংবাদ শুনে যখন অশ্বত্থমার সন্মুখীন হলেন,তখন তিনি ভয়ঙ্কর অস্ত্র ব্রহ্মশির পাণ্ডবদের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করলেন। অর্জুন ব্রহ্মশিরকে সংহত করার জন্য নিজেও ব্রহ্মশির নিক্ষেপ করলেন। দুই দিব্যাস্ত্রে প্রায় অগ্নি-প্রলয়ের সৃষ্টি হল। দেবর্ষি নারদ ও ব্যাসদেবের নির্দেশে অর্জুন অস্ত্র সম্বরণ করলেন। অশ্বত্থমা বললেন যে, অস্ত্র প্রত্যাহার করা ওঁর পক্ষে অসাধ্য, সুতরাং তিনি অস্ত্রটি পাণ্ডবদের পুত্রবধূ উত্তরার গর্ভস্থ সন্তানের ওপর নিক্ষেপ করবেন। কৃষ্ণ অশ্বত্থমাকে বললেন যে, অশ্বত্থমা তাতে সফল হবেন না। উত্তরার মৃত পুত্র ভূমিষ্ঠ হবার পর কৃষ্ণ স্বয়ং তাঁকে বাঁচিয়ে তুলবেন। তারপর অশ্বত্থমাকে তিনি কুকর্মের জন্য অভিশাপ দিলেন যে, তিন হাজার বছর ব্যধিগ্রস্থ ও নিঃসঙ্গ হয়ে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হবে। কৃষ্ণের মহিমা আবার দেখা যায় যখন যুদ্ধের শেষে আগে অর্জুনকে তিনি রথ থেকে নামতে বললেন। অর্জুনের পর কৃষ্ণ নামতেই রথ ভস্মসাত্ হয়ে গেল। অর্জুনকে তখন কৃষ্ণ বললেন যে,দ্রোণ আর কর্ণের আগ্নেয়াস্ত্রে রথ আগেই দ±ধ হয়ে গিয়েছিল,কিন্তু কৃষ্ণ বসেছিলেন বলে তা ভস্ম হতে পারে নি। যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে পুত্রশোকাতুর ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীকে সান্ত্বনা দেবার জন্য পাণ্ডবদের সঙ্গে কৃষ্ণও গিয়েছিলেন। পুত্র-পৌত্রাদির অস্ত্রাঘাত-ছিন্ন মৃতদেহ দর্শনে আর বিধবা বধূদের করুণ বিলাপে গান্ধারী নিজেও স্থির রাখতে পারছিলেন না। কৃষ্ণকে বললেন যে, কৃষ্ণ অসীম ক্ষমতাধারী হয়েও, কেন কুরুকুলের এই ক্ষয় হতে দিলেন! তারপর কৃষ্ণকে অভিশাপ দিলেন যে, পঁয়ত্রিশ বছর পরে কৃষ্ণের জ্ঞাতিগণও পরস্পর হানাহানি করে নির্মূল হবে। কৃষ্ণ নিজেও সবাইকে হারিয়ে একা বনে বনে ভ্রমণ করে অবশেষে নিহত হবেন। কৃষ্ণ তার উত্তরে বলেছিলেন, এটা যে ঘটবে সেটা তাঁর অজানা নয়। যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ-যজ্ঞ শেষ হবার পর কৃষ্ণ দ্বারকায় ফিরে যাবার পর যাদবদের মধ্যে হানাহানি শুরু হল। কৃষ্ণ সবাইকে তীর্থযাত্রা করে সমুদ্রতীরে যাবার নির্দেশ দিলেন। প্রভাস-তীর্থে যাদবরা মদ্যপানে মত্ত হয়ে হানাহানি করে সবই নিহত হল। অর্জুনকে খবর পাঠিয়ে, অর্জুন না আসা পর্যন্ত পিতা বসুদেবের ওপরে যাদবনারীদের রক্ষার ভার দিয়ে, কৃষ্ণ বলরামের খোঁজে গেলেন। গিয়ে দেখলেন যোগযুক্ত অবস্থায় বলরাম দেহত্যাগ করছেন। বলরামের দেহত্যাগের পর কৃষ্ণ গভীর অরণ্যে বসে যোগালম্বন করলেন। বহুবছর আগে মহর্ষি দুর্বাসা তাঁর উচ্ছিষ্ট পায়েস কৃষ্ণকে সর্বাঙ্গে লেপন করতে আদেশ দিলে, কৃষ্ণ পদতল ব্যতীত সবস্থানেই তা লেপন করেছিলেন। তাই দেখে দুর্বাসা বলেছিলেন যে, পদতলে আহত হয়েই কৃষ্ণ দেহত্যাগ করবেন। গান্ধারী বলেছিলেন, তাঁর মৃত্যু হবে যখন তিনি একাকি অরণ্যে থাকবেন। তাই সত্য হল। জরা নামে এক ব্যাধ হরিণ ভ্রমে কৃষ্ণের পদতলে বাণ নিক্ষেপ করলেন। সেই ব্যধ যখন অপরাধ বুঝতে পারলেন, তখন কৃষ্ণ উর্ধলোকে যাত্রা করছেন।