প্রথম খণ্ড : লৌকিক ধর্ম-উৎসব ও অনুষ্ঠান । চতুর্দশ পরিচ্ছেদ : ব্রত অনুষ্ঠান – কুমারী ব্রত বা শিবপূজা
একদিকে চৈত্র উৎসব শেষ হল চৈত্র সংক্রান্তির দিনে, অন্যদিকে ঘরে ঘরে শুরু হল কুমারী ব্রত। চৈত্র উৎসব যেমন শৈবানুষ্ঠান ছাড়া আর কিছু নয়, তেমনি কুমারী মেয়েদের বৈশাখের কুমারী ব্রতও শিব পূজা ছাড়া আর কিছু নয়। পতি হিসাবে শিব হল মেয়েদের আদর্শ। পুরাণে এ সম্পর্কে বিলক্ষণ নজির আছে, হয়ত এ কারণেই বাংলার মেয়েরা কৈশোর থেকেই শিব পূজা করতে শুরু করে। এ শিব পূজায় পুরোহিতের কোনো দরকার নেই। সংস্কৃতের কঠিন শ্লোকও উচ্চারণ করবার কোনো প্রয়োজন হয় না। তারা নিজেদেরই তৈরী ছড়া আউড়ে কখনও বা সমস্বরে সুর করে ছড়া বলে যায়। চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন খুব ভোরে উঠে মেয়েরা বেলে মাটি দিয়ে ছোট ছোট শিব মূর্তি তৈরী করে। পরে সকলের শিবমূর্তি একত্রে বসিয়ে, আবার কখনও ব্রতী একা থাকলে শুধুমাত্র তার নিজের শিবমূর্তিটি তামার টাটের উপর বসিয়ে তাঁর সামনে ভোগ দেয় ফলমূল, আলোচালের নৈবেদ্য, জ্বালিয়ে দেয় ধূপদীপ, পরে শুরু করে শিবকে স্নান করাতে।
এই স্নানের সময়ো মন্ত্র আছে; তবে এ মন্ত্র তাদের নিজস্ব বানানো মন্ত্র। তারা ডান হাতে ধরে ঘটি কা কমণ্ডলুর মাথা, বাঁ হাতে স্পর্শ করে ডান হাতের কনুই, পরে বলতে থাকে :
শিল শিলাটন শিলে বাটন
শিল অঝ্ঝর ঝরে
স্বর্গ হতে বলেন মহাদেব
“গৌরী কি বর্ত করে?”
নড়ে আশা নড়ে পাশ নড়ে সিংহাসন
হর গৌরী কোলে করে গৌরী আরাধণ।।
এরপরে প্রণাম মন্ত্র, তাও তাদেরই তৈরি ছড়া :
আকন্দ বিল্বপত্র আর গঙ্গাজল
এই পেয়ে তুষ্ট হোন ভোলা মহেশ্বর।।
এইভাবে তারা তাদের ব্রত সমাপন করে সেদিনের মতো চলে যায় যে যার কাজে; গোটা বৈশাখ মাস ধরে এইভাবে শিবপূজা করে সংক্রান্তির দিন করে উদযাপন।