কুকুরদল – ৫৬

অধ্যায় ৫৬

নোংরা একটা মাংসপিণ্ড বার বার ওর দেহের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। দাঁতে দাঁত চেপে নিম্নাঙ্গের যন্ত্রণাটুকু সহ্য করে যাচ্ছে শিয়া। চোখ মেলে রেখেছে সরাসরি এনার্জি বাল্বের দিকে। উজ্জ্বল চোখ ধাঁধানো আলোটিকে এখন আর বিরক্তিকর মনে হচ্ছে না মোটেও। ওটা তাকে রক্ষা করছে আরও ভয়ঙ্কর কোনো দৃশ্য দেখার হাত থেকে। তাকে কেউ ধর্ষণ করছে এটা শিয়া এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না।

রেদোয়ান নামক জানোয়ারটা যখন ওকে দু-হাতে খাবলেখুবলে ধরছিলো, বাঁধা দেওয়ার কোনোরকম চেষ্টা সে করেনি। কখনও কখনও ইচ্ছে করেছে যন্ত্রণায় মরে যেতে, টু শব্দটা করেনি সে। শুধু গোটা শরীর কেঁপে উঠেছে থেকে থেকে। পরিস্থিতিটা ও প্রথমেই বুঝে নিয়েছিলো। লোকটা তাকে এমনভাবে বন্দি করেছে, একটা মাংসপেশি নড়ানোর উপায় রাখেনি। একটা হাত খোলা থাকলেই অনায়াসে পশুটাকে হত্যা করতে পারতো সে। সম্ভবত শত্রুপক্ষও বিষয়টা জানে। নয়তো এতো কড়াকড়ির দরকার ছিল না।

ওর দেহটা নিয়ে খেলা শেষ করে রেদোয়ান ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো নিজের কাপড় খুলতে। অপুষ্ট চেহারার এক পুরুষাঙ্গ নিয়ে সরাসরি নিচের দিকে চলে গেছিলো সে। শিয়া এই সময়টাতেই আশাবাদী হয়ে উঠেছিলো, ছাত্রনেতা তার ‘যন্ত্র’টা ওর মুখে ঢোকাতে আসবে। সেক্ষেত্রে সেকেন্ডের মধ্যেই তাকে শুইয়ে দিতে পারতো সে। রেদোয়ানও তার মতলব ধরতে পেরেছে হয়তো, কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে সরাসরি ধর্ষণ শুরু করেছিলো। ধর্ষিতা হওয়ার কারণে শিয়ার একটাই লাভ হয়েছে, সুবিধে করার জন্য গলার বেল্টটা খুলে দিয়েছে রেদোয়ান। তখনই প্রথমবারের মতো নিজের শরীরটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো ওর।

তলপেট আর নাভির চারপাশে অনেকগুলো পোড়া দাগ, গত আধঘণ্টায় চারটা সিগারেট শেষ করেছে রেদোয়ান। চারটাই নিভিয়েছে হাতের কাছে আটকে থাকা নারীদেহের ত্বকে। শিয়ার শরীরটা নিয়ে খেলার সময় এর যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে সে। বাম স্তন থেকে পাঁজরের শেষ হাড় পর্যন্ত চলে গেছে একটা কাটাদাগ, এটা এসেছে রেদোয়ানের ডান হাতের আংটির কল্যাণে। ক্ষতটা থেকে রক্ত পড়েছে কিছু, তবে এতে করে ধর্ষকের আনন্দ আরও বেড়ে গেছে বলেই মনে হয়েছে তার

এই মুহূর্তে শিয়া তার ডান স্তনটি অনুভব করতে পারছে না। ওখানে গত পনেরো মিনিট ধরে ঢুকে আছে ছয় ইঞ্চি লম্বা একটা পিন। নিরীহদর্শন দুই ফুটো নিয়ে পিনটা ঢুকে আছে, প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথে কয়েক ফোঁটা রক্ত মেখে আছে কেবল। ভেতরে কতো জায়গায় কেটে গেছে শিয়া ভাবতে চাইছে না। নারীদেহের অ্যানাটমির শিক্ষাগুলো বার বার মনে পড়ে যেতে চাইছে। এই মুহূর্তে ওরা তাকে দুর্বল করে তুলবে। মাঝে মাঝেই রেদোয়ান ধর্মসুখ নিতে পিন এড়িয়ে চেপে ধরছে স্তনটি। মুখ থেকে একটা শব্দ না করলেও কাটা মুরগির মতো ছটফট করে উঠছে তখন শিয়া, প্রবল যন্ত্রণার মাঝেও বাম হাতের বেল্টের ওপর অতি অবশ্যই চাপ বেশি দেওয়ার চেষ্টা করছে।

রিভেটটাকে ছুটিয়ে আনতে হবে।

রেদোয়ান তখন শরীর চাপিয়ে দিয়েছে শিয়ার তলপেটে। রীতিমতো গোঙাচ্ছে কাপুরুষ ছাত্রনেতা, অর্ধেক সুখে, অর্ধেক পরিশ্রমে। এমন শক্ত মেয়ে সে আগে দেখেনি। যতটুকু হাতমশকো এরই মধ্যে সে করেছে, তার অর্ধেকেও আর সব মেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। এটাকে কি দিয়ে বানানো হয়েছে কে জানে। বন্দিনীর জ্ঞান থাকায় রেদোয়ানের অবশ্যই আপত্তি নেই। একবার যৌথ অভিযানে তোফায়েলকে সে বলেছিলো, “মরা মাগি ঠাপায়া লাভ কি?”

সেটাই ওদের পয়েন্ট। তাছাড়া এই মেয়েকে সে তুলে এনেছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, তার থেকে অনেক কিছু জানার আছে। চাচাতো ভাই হিল্লোলকে মারার পেছনে এর হাত আছে কি না তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিশ্চিত হতে হলে প্রশ্ন করতে হতো, উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। রেদোয়ান কখনও এক ছাদের নিচে একা একটা মেয়ে নিয়ে প্রথমে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করেনি। আগে একবার ‘ফূর্তি করে পরে প্রশ্ন করা হলেও ক্ষতিবৃদ্ধি কি হচ্ছে? মেয়ে তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। রেদোয়ানের ‘ফূর্তি’র ধরণটা এমনই, ওটার পর পাখির মতো গান গাইতে শুরু করে দেবে বন্দিনী।

অথচ এই মেয়েটা একটা শব্দও করছে না। যন্ত্রণাকাতর চিৎকার বা শীৎকার, কোনোটাই নয়।

হাঁফাতে হাঁফাতেই ধমকে উঠলো ছাত্রনেতা, “চিল্লা! চিল্লা কইতেছি!”

সজোরে শিকারের ডান স্তন চেপে ধরলো সে, অবশ্যই ছয় ইঞ্চি লম্বা পিনটা এড়িয়ে। শিয়ার মনে হলো ওর প্রতিটা স্নায়ু কেউ ছিঁড়ে নিচ্ছে। এতো যন্ত্রণা, এতো যন্ত্রণা! এনার্জি বাল্বটা কালো হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তবুও ও চিৎকার করলো না। প্রথম একটা মাস ওদের শুধু যন্ত্রণা দেওয়া হতো ‘অনুশীলন সমিতি’তে। শেষ সপ্তাহে ইন্সট্রাক্টর মেয়েদের যোনির মুখে তপ্ত জীবাণুমুক্ত স্টিল দিয়ে ছ্যাঁকা দিতেন। দেহের সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত সহ্য করতে না পেরে কাটা মুরগির মতো ছটফট করতো ওরা। ধীরে ধীরে ওটাও গা সওয়া হয়ে উঠেছিলো। ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর যেদিন নাভির ওপর সবাইকে উল্কি এঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হলো, ওখানে এসেছিলেন স্বয়ং ফরহাদ গাঙ্গুলী।

ওদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “তোমাদের আমি প্রণাম জানাই। তোমরাই দেশের সূর্যসন্তান।”

গলার রগ ফুলিয়ে চিৎকার করলো শিয়া। একবার হা করার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের সব বেদনার সাক্ষর হয়ে জমে থাকা প্রতিটি আর্তনাদ বেরিয়ে আসতে শুরু করলো ওর মুখ থেকে। পৈশাচিক এক হাসিতে ভরে গেলো রেদোয়ানের মুখ। আরও জোর খাটিয়ে নোংরা মাংসপিণ্ডটি মেয়েটির দেহে ঢোকাতে শুরু করলো সে। চেঁচিয়ে গেলো শিয়া, যতোক্ষণ পর্যন্ত না গলা ভাঙলো তার। সেই সঙ্গে হাত পা ছুঁড়ছে, বেল্টে বাঁধা অবস্থায় তারা কোথাও যেতে পারলো না।

আচমকা শব্দটা পাল্টে গেলো। বাঁ হাতের রিভেটের নড়াচড়া আগের থেকে বেড়েছে, শব্দের পরিবর্তন অবশ্য রেদোয়ান খেয়াল করলো না। সে এখন প্রবল উত্তেজনায় অন্ধ হয়ে আছে। যন্ত্রণার ভেতরও শিয়ার কানে স্বস্তির পরশ বুলিয়ে যায় নতুন এই শব্দধারা। তবে বেশিক্ষণের জন্য নয়।

দুম করে শিয়ার মেদহীন পেটে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো রেদোয়ান। তার বন্দি চিৎকার করেছে অবশেষে, এখন খেলাটাকে পরবর্তি ধাপে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে। পেটে বেমক্কা ঘুষিটা এসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখে অন্ধকার দেখলো শিয়া। সকালে যা খেয়েছে সব বেরিয়ে আসার জন্য তোরজোড় শুরু করেছে। কোমরের নিচে একটা বালিশ দিয়ে পেটটা উঁচু করে ফেলার কারণটা এবার স্পষ্ট হয়ে গেলো ওর কাছে।

এরপরের মুহূর্তগুলো ওর সারাজীবন মনে থাকবে। এককভাবে শুরু হয়ে গেছে রেদোয়ানের শো। হেভিওয়েট রেসলারের মতো একটার পর একটা ঘুষি মেরে চললো সে মেয়েটির পেটে। একবার ডানহাতে, একবার বাঁ হাতে। যেন কোনো নারীদেহ নয়, এটা স্রেফ এক বালির বস্তা। স্রেফ হাঁটুর ওপর ভর দিয়েই ধর্ষণ অব্যহত রাখলো ছাত্রনেতা, সেই সঙ্গে প্রতিবারই গতি বাড়ালো। ডান হাত আর বাম হাত, মুঠো নিয়ে আছড়ে পড়ছে বার বার, আগের চেয়ে জোরে।

কোনো আগাম সঙ্কেত না দিয়েই হড়বড় করে বমি করে ফেললো শিয়া।

*

জানাজার পর পর বৃষ্টি নামলো। লিটুকে নিয়ে ট্রাকটা চলে গেছে সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে। পরিবারটির মুখোমুখী হওয়ার সাহস নেই মুহিব কিংবা শামীমের ওরা থেকে গেছে ক্যাম্পাসেই। এখন চুপচাপ ভিজছে ওরা টিপটিপ বৃষ্টিতে। মুহিব চাইছে আকাশের দিকে মুখ করে একটার পর একটা উন্মত্ত চিৎকার ছেড়ে যেতে। এমন একটা অবিচার তাদের সাথে খোদা কি করে করতে পারলেন?

টাকার অভাবে লিটুকে মরতে হয়নি, ভাইরাসটা ওর মস্তিষ্ককে শেষ করে দিয়েছিলো একেবারে। নিভে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো জ্বলে ওঠা প্রদীপের মতোই লিটু গত কয়েকটা সপ্তাহ বেশ ভালো পারফর্ম্যান্স দেখিয়েছে। তার সিস্টেম লড়াই করে যাচ্ছিলো সবকিছুর বিরুদ্ধে, মাঝে মাঝেই রিকভার করছিলো। একদিন তাকিয়েওছিলো গত সপ্তাহে। কাউকে চিনতে পারেনি, তবে চোখ মেলার ঘটনাটা ছিল বড় ধরণের অগ্রগতি!

বন্ধুকে কবরে শুইয়ে দিয়ে ওদের মনে হয় সব ধরণের বাধ্যকতা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাকে। এই মুক্তি তারা কেউ চায়নি, কিন্তু নিতে হচ্ছে। শামীম একটু পর পর চোখ মুছছে। এই ছেলেটাকে কোনোদিন আবেগে ভেসে যেতে দেখেনি মুহিব। আজকের দিনটা একেবারেই ব্যতিক্রম।

লিটুকে দেখতে ইলোরাও এসেছিলো। বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি, দম আটকে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিলো মেয়েটা। কাঁদতে পারেনি, অথবা চেপে রেখেছিলো। এমনভাবে ফোঁপাচ্ছিলো সে, মুহিবের মনে হয়েছে নিঃশ্বাস আটকেই মরে যাবে সে। শ্রাবন্তী অবশ্য কেঁদেছে। উদভ্রান্তের মতো কেঁদেছে। তাকে সামলে রাখার জন্য হলেও ইলোরাকে শক্ত থাকতে হতো।

ওরা এখন কেউ নেই। শহীদ মিনারের সামনেটা জানাজার পর পর একেবারেই ফাঁকা হয়ে গেছে। আজকে স্টেট ইউনিভার্সিটির জন্যই দিনটা ব্যতিক্রমী। ছেলেমেয়েরা জীব্যূতের মতো একজন একজন করে হলের দিকে ফিরে গেছে। আজ কেউ বন্ধুদের সঙ্গে জটলা পাকিয়ে রাস্তায় হাঁটেনি। এটা এমন এক শুন্যতা যা চারপাশে বন্ধুরা ঘিরে থাকলেও এড়ানো সম্ভব নয়। আজ ওরা সবাই একা।

শামীম সমতল মাঠেই একবার হোঁচট খেলো। বিড়বিড় করে কিছু একটা বলতে বলতে শহীদ মিনারের বেদীতে বসে পড়লো সে। ঘাসের ওপর হাঁটুগেড়ে বসে বন্ধুকে চুপচাপ দেখলো মুহিব। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো মানসিক শক্তি তার মধ্যে অবশিষ্ট নেই। ঘাসের ওপর ছোটো ছোটো বৃষ্টি কণা জমে যাচ্ছে। তাদের ওপর এসে থামলো একজোড়া দামি জুতো।

ধীরে ধীরে মুখ তুলে মানুষটাকে দেখলো মুহিব। পঞ্চাশের মতো হবে বয়স। খানিক বেশিই হওয়ার কথা, কম হবে না। শুভ্র সফেদ এক পাঞ্জাবি পরণে, চুলে পাক ধরেছে বেশিরভাগ, কিছুটা কালোর আভাস রয়ে গেছে বিগত যৌবনের স্মৃতি ধরে রেখে।

স্লথগতিতে, যেন পানির নিচে নড়াচড়া করছে, দাঁড়ালো মুহিব। “ইয়েস?”

একটা হাত বাড়িয়ে দিলেন ভদ্রলোক, “আমাকে তুমি চিনবে না। আমার নাম লিয়াকত হোসেন। শ্রাবন্তী আমার মেয়ে।”

মুহিবের দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে নিমেষেই এলো পরিবর্তন, “আসসালামু আলাইকুম, আংকেল। আপনার ব্যাপারে অনেক শুনেছি। লিটু যখন হাসপাতালে ছিল, আপনি বড় কয়েকটা অনুদানও এনে দিয়েছিলেন। সেজন্য ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর ইচ্ছে ছিল। সুযোগ হয়ে ওঠেনি।”

মাথা নাড়লেন প্রাক্তন মেয়র, “এসব কি বলছো? ওর জায়গায় আমার মেয়েটাও থাকতে পারতো। তোমরা ওর জন্য যেভাবে সবাই এগিয়ে এসেছো আমার খুব ভালো লেগেছিলো। একটা দিনও যায়নি ছেলেটার জন্য খোদার কাছে দোয়া করিনি। এক সময় মনে হচ্ছিলো ছেলেটা ফিরে আসবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা বোঝা দায়।”

লম্বা করে নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। ভদ্রলোকের দিকে মনোযোগ চলে গেলো মুহিবের, দায়টা লেখকসত্তার। ডান হাতে ধরে আছেন একটা টুপি, অর্থাৎ জানাজাতে তিনিও ছিলেন। মেয়ের সঙ্গে সদ্যমৃত ছাত্রটির প্রণয়ের ব্যাপারে কি তিনি জানতেন? হয়তো। নাহলে স্টেট ইউনিভার্সিটিতে লাশ আনার সময় তিনি এতোটা গুরুত্ব দিয়ে আসবেন কেন? মেয়ের কাছাকাছি থাকতে জন স্বাভাবিক ব্যাপার। তিনি মুহিবকে কি করে চিনলেন? চা.. আসি দেখলো ও, কোথাও শ্রাবন্তীকে দেখা যাচ্ছে না। ওকে সঙ্গে করে হলে নিয়ে গেছে ইলোরা।

নিজেকে চোখ রাঙালো মুহিব। অতি সন্দেহ হয়ে যাচ্ছে। শ্রাবন্তী ওদের সঙ্গে আগেই বাবাকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। তখন ওরা লাশকে ঘিরে হতবিহ্বলের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। এরকম একটা পরিবেশে কোনো বাবা নিজের পরিচয় দিতে এগিয়ে আসবেন না। কাজেই, সবাই চলে যাওয়ার পরই প্রাক্তন মেয়র ভদ্রলোক তাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন। সান্ত্বনা দিতে এসেছেন। এর মধ্যে আর কিছু থাকতে পারে না।

মুহিবের পিঠ বার দুই চাপড়ে দিলেন প্রাক্তন মেয়র, আন্তরিক এক সহমর্মিতার ভঙ্গি, “বাসা থেকে অনেকটাই দূরে আছো। কখনও

অভিভাবকসুলভ কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করলে অবশ্যই আমার কাছে চলে আসবে। তোমার জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা।” একটা কার্ড বের করে ওর হাতে গুঁজে দিলেন তিনি, “তোমার সঙ্গে কিছু ব্যাপারে কথা বলারও আছে আমার। আশা করি সময় বের করতে পারবে।”

আরও কিছু সান্ত্বনাসূচক কথা বলে স্টেট ইউনিভার্সিটির গেটের দিকে পা বাড়ালেন তিনি। কার্ডটি হাতে নিয়ে স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে রইলো মুহিব। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় তারস্বরে বিপদসঙ্কেত বাজাচ্ছে। স্বাভাবিক নয়, মোটেও স্বাভাবিক নয়!

কার্ডটা পেছনের পকেটে রেখে দিতে দিতে প্রশ্নটা ধাক্কা দিয়ে গেলো তাকে, শ্রাবন্তী বাবাকে কতোটা বলেছে? এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা প্রশ্ন রয়ে যায়।

লিটু শ্রাবন্তীকে কতোখানি বলেছিলো?

শামীমের কাছে গিয়ে তাকে একটা ধাক্কা দিলো মুহিব, “চল্।”

“কোথায়?”

“জাহিদের সাথে দেখা করবো। মাল খাবো, আজকে খাবো।”

বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে থাকলো শামীম। ছেলেটা সিগারেট ছাড়া আর কিছু স্পর্শও করেনি। স্টেট ইউনিভার্সিটির হলগুলো গাঁজার গুদাম। যে কেউ চাইলেই এখানে গাঁজার ব্যবস্থা করতে পারে, খেতে পারে। উপাধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে পুলিশের গাড়িও ঢুকতে পারে না। আইনশৃক্সখলা বাহিনীর কোনো ভয় নেই। গাঁজা বানাও এবং আগুন ধরাও এখানকার নীতি। বন্ধুবান্ধব অনেকবার ‘ট্রাই’ করতে গেলেও মুহিব যায়নি কখনোও। বলেছে, “লেখার সময় মাথা পরিস্কার না থাকলে চলবে না। ম্যাড়ম্যাড়ে প্রেমের কাহিনী লিখছি না যে গাঁজা খেয়ে লিখে দেবো। ক্রাইম থুলার মানে পুরোদস্তুর লজিক। গাঁজা খেলে গাঁজাখুরি লজিক বের হবে।

বন্ধুদের জোর করে গাঁজার আসরে নিয়ে যাওয়ার প্রথা আছে। শামীমকেও জাহিদরা নিয়ে গেছে অনেকবার। কিন্তু মুহিব তার মতাদর্শে অটল, যায়নি কখনোও। আরও একবার শামীমকে ধাক্কা দিলো মাদকবিরোধী ছেলেটা, কে ওঠ। বেহেড হবো আজ। জাহিদের নাম্বারটা আছে? ফোনটা ভেঙে ফেলা উচিত হয় নাই, হোল।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *