অধ্যায় ৩৫
ভাড়া করা একটা গাড়ির ভেতরে বসে গোল্ডলিফে টান দিতে দিতে শিয়া অপেক্ষা করছে ভাড়া খাটা একটা মেয়ের ফিরে আসার। শামীমের ফোনকলের পর নিজের কর্তব্য ঠিক করে ফেলেছিলো সে। হোটেল ওয়ারিশানের ডেস্কে চাইলেই তারা রেন্ট-আ-কার ম্যানেজ করে দেয়। নিজে ড্রাইভ করতে চাইলে অবশ্য ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি জমা দিতে হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স শিয়ার আছে, সেদিক থেকে এটা কোনো সমস্যাই ছিল না।
সেখান থেকে সরাসরি লালখালির তিন মাগির পাড়ায় চলে যায় সে। অবস্থানটা বের করতে খুব একটা কঠিন হয়নি। গুগলে ম্যাপস থেকে এলাকাটার অবস্থান সে জানতো। সেখানে গিয়ে একটা চায়ের দোকান খুঁজে বের করেছিলো যেখানে রিকশাওয়ালা শ্রেণির মানুষরা বসে। এলাকার হাঁড়ির খবর বের করতে এদের চেয়ে নির্ভরশীল সোর্স আর হতে পারে না।
গাড়ি এদের কাছে মূলতঃ গাড়িই। কোনটা রেন্ট-আ-কার আর কোনটা বাপ-দাদার তেলের ব্যবসা থেকে কেনা তার ফারাক এরা করতে পারে না। একটা গাড়ি এসে তাদের আড্ডার পাশে থেমেছে এবং বেশ সুন্দর দেখতে একজন ম্যাডাম তাদের কাছে তিন মাগির পাড়া কোনদিকে তা জানতে চেয়েছে। এটাই আগামি কয়েকদিনের জন্য তাদের ‘টক অব দ্য রিকশা’। ঠিকানা যোগাড় করা ছিল বেশ সহজ একটা কাজ। কঠিন ছিল পতিতালয়ের ভেতর নিজেকে ক্লায়েন্ট হিসেবে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। তবে দশ হাজার টাকা যখন কথা বলে তখন তিন মাগি চুপ হয়ে যায়। এধরণের হাই প্রোফাইল ক্লায়েন্ট নিয়ে তারা আগেও কাজ করেছে। প্রিয়াংকার মতো মেয়েরা সেজন্যই আছে। ক্লায়েন্ট না থাকলে তাদের রাখার প্রয়োজন পড়তো না। সস্তা পতিতা বাঁধভাঙা জলের মতো উপচে পড়ে তাদের দরজায়।
প্রিয়াংকাকে ব্রিফ দেওয়ার জন্য সময় পেয়েছিলো মাত্র দশ মিনিট। ইউসুফের বারের সামনে থেমে আরও আধঘণ্টা তাকে বোঝাতে হয়েছে। প্রিয়াংকা শিক্ষিত মেয়ে। বিষয়টা বুঝতে তার সমস্যা হয়নি। তাছাড়া বাড়তি ‘পার্সোনাল’ দশ হাজার টাকার উপরি যখন নগদেই হাতে পেয়ে গেলো, তখন প্রতিবাদের প্রশ্নই আসে না। রেদোয়ান আর তোফায়েলের ছবি তাকে একবার দেখিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট, শিয়ার গালে একটা অতি-উৎসাহী চুমু খেয়ে নেমে পড়েছিলো প্রিয়াংকা। চ্যালেঞ্জ তার ভালো লাগে, সত্য কথা বললে শিয়া তাকে পার্সোনাল টাকা অফার না করলেও সে কাজটা করতো। তবে যে টাঁকা দিতে চাইছে তাকে টাকা দিতে দাও। এটাই এই ব্যবসার নিয়ম। ওদিকে নিজের ছোট্ট ব্যবসাটার কথাও ভুললে চলবে না। ওসব শুরু করতে টাকার তো দরকার আছে।
শিয়া এতোকিছু জানে না। সে বদ্ধ গাড়িতে বসে বসে একটার পর একটা গোল্ডলিফ খাচ্ছে। এই ব্র্যান্ড নিয়ে সুভাষের আপত্তির কথা মনে পড়লো ওর। মৃদু হাসলো পুরোনো স্মৃতি মনে পড়তে। সুভাষ বলেছিলো, তার সাথে গোল্ডলিফ যায় না। এমন কথা অবশ্য সুভাষই প্রথম বলেনি। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের অনেকেই তাকে বলেছে এমনটা। মেয়েদের সিগারেট খাওয়া এখন আর নতুন বিষয় না। কিন্তু একটা মেয়ে গোল্ডলিফের মতো সস্তা ব্র্যান্ড খাবে এটা অনেকের কাছে বিস্ময়কর। হীরণ নামে একটা ছেলে আছে, তার মতে শিয়ার এই ‘ফকিন্নির ব্র্যান্ড’ টানাই উচিত হচ্ছে না। সুভাষের আপত্তিতেও এমন কিছু ছিল হয়তো, তবে শিয়া তাকে বুঝিয়েছে কোনো ব্র্যান্ডকে ‘ফকিন্নির ব্র্যান্ড’ বলা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বিরুদ্ধে।
শ্রেণি সংঘাত থামাতে গিয়ে যদি সিগারেটের ব্র্যান্ডেও শ্রেণিবিভাগ শুরু করা হয়, এই ধরণের কমরেডদের দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি কি করবে? সুভাষ তার ভুল বুঝতে পেরেছিলো। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আর কখনও মতবিরোধ হয়নি। সুভাষ যদি জানে সে এই মফস্বলে এসে তার ভাইয়ের খুনিকে ট্র্যাক করার চেষ্টা করছে, তা নিয়ে কি মতবিরোধ হবে? হওয়ার কথা তারা একেকজনক পার্টির জন্য অ্যাসেট। অনুশীলন সমিতিতে সুযোগ সবাইকে দেওয়া হয় না। তাদের বাছাই করা হয়েছে পার্টির জন্য। তাদের একেকজনের পেছনে ছয় কোটি টাকা সমমূল্যের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। কমব্যাট ট্রেনিং দীর্ঘ কোর্সের একটা অংশ কেবল, লিংগুইস্টিক ট্রেনিং, সোশাল এনভায়োরনমেন্ট কন্ট্রোল ট্রেনিং ছিল তার প্রিয়গুলোর মধ্যে দুটো। এদের মধ্যে লিংগুইস্টিক ট্রেনিংটা এখনও চলছে। ওটা পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের বাইরে কোনো কাজে তাকে পাঠানো হবে না। তা না পাঠাক, শিয়ার এতো দ্রুত দেশ ছাড়ার ইচ্ছে নেই। অনুশীলন সমিতিতে সদস্যপদ পাওয়ার আগে অনেক কঠিন ট্রেনিং আর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে। এরকম একটা মজার টেস্ট ছিল পলিম্যাথ-টেস্ট। লাই ডিটেক্টর শরীরের বিভিন্ন স্নায়ুর সাথে যুক্ত করে দেওয়া হতো। একজন প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন করতেন। খুব সাধারণ প্রশ্ন শুরুতে, বাবার নাম কি, মায়ের নাম কি, তারপর উত্তরোত্তর কঠিন হতো প্রশ্ন। এই টেস্টে পাস করতে হলে মিথ্যে বলতে হতো এবং সত্যও বলতে হতো। কিন্তু লাই ডিটেক্টর যদি ধরতে পারে তার মিথ্যেগুলো, সে টেস্টে ফেল। মিথ্যে এবং সত্য দুটোই বলার পরও যারা মেশিনের কাছে কেবল ও কেবলমাত্র সত্যবাদী, তারাই এই টেস্টে পাস করে। এসব টেস্টের দরকার গুপ্তহত্যার মতো কাজে কেন দরকার কে জানে! মস্কো থেকে আসা টাকার বাণ্ডিল কোন ট্রেনিংয়ে ঢালা হবে তা পার্টি ঠিক করে মরুক। শিয়া এসব নিয়ে ভাবতে চায়নি কখনও।
তবে সুভাষ সবটা জানলে নিশ্চয় ভাববে। দেশের জন্য, পৃথিবীর সব নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য ওদের পেছনে বিলিয়ন ডলার খরচ করে মস্কো। সেই ট্রেনিং গ্রহণ করার পর শিয়া-সুভাষ আর সাধারণ একজন পথচারি নয়। তারা এখন পার্টির সম্পত্তি। মূল্যবান সম্পদ। ভ্যালুয়েবল অ্যাসেট।
সচকিত হয়ে বাইরে তাকালো শিয়া, দু’জন মাতাল যুবককে ইউসুফ’স বার থেকে নেমে আসতে দেখা যাচ্ছে। টের পেলো চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে ওর, স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ডান হাত কোমরের কাছে চলে যায়। অনুশীলন সমিতির অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিংয়ের সবটুকু শিক্ষা কাজে লাগিয়ে নিজেকে শান্ত করলো শিয়া। ঠিক যতোটা পরিশ্রম করতে হয়েছিলো সেদিন গলির মাঝে মুহিবকে খুন করে না ফেলার জন্য, তেমনটাই হাঁফাতে শুরু করলো সে। প্রথমবার তাদের ছবি থেকে বাস্তবে উদয় হতে দেখে এমন অনুভূতি হবে তেমনটা ধারণা করতে পারেনি। ঘৃণা তাহলে এমন অনুভব করতে? এতোদিন যেন এক গ্লাস পানিতে এক ফোঁটা অ্যালকোহল পানকেই নেশা ভেবেছিলো সে। আজ সম্পূর্ণ র’ অ্যালকোহল প্রথমবারের মতো চুমুক দিলো, ঘৃণার তীব্রতা এতো গভির আর স্থায়ী হতে পারে এটা শিয়া আজকের আগে কখনও জানেনি। অনুভবই করেনি।
দরকার ছিল না, তবুও সিটের সঙ্গে মিশে গেলো শিয়া। যেন ভুলেই গেছে তাকে তোফায়েল বা রেদোয়ান চেনে না। দুই মাতাল একটা মোটরসাইকেলে চেপে বসলো। অনুশীলন সমিতির কল্যাণে এখন অনেক যানবাহনই মডেলসহ চেনে শিয়া। তারা যে মোটরসাইকেলে চেপে বসেছে তা একটা ইয়ামাহা ফেজার। তরুণদের অনেকে এই মডেলটা বেশ পছন্দ করে। তোফায়েল অবশ্য এখন বাইকের প্রতি তেমন প্রেম দেখাচ্ছে না, নিতান্ত দায়সারা ভঙ্গিতেই ইঞ্জিন স্টার্ট দিলো সে। মাথায় চাপিয়েছে একটা হেলমেট। তার পেছনে চড়ে বসলো রেদোয়ান। হাউলার লাগানো আছে খুব সম্ভব, বিকট শব্দ তুলে রাজপথ ধরে চলে গেলো বাইক।
দরজা খুলে সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে এলো শিয়া। বড় করে দম নিচ্ছে, যেন সহসাই এখানে বাতাসে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে! বেশিক্ষণ দাঁড়িয়েও থাকতে পারলো না সে। উবু হয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়লো। কোমরের কাছে খোঁচা দিচ্ছে নাকবোঁচা রিভলভারের বাট, ভ্রুক্ষেপই করলো না। জোরে জোরে নিশ্বাস টেনে নিজেকে সুস্থির করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। গতরাতে মনে হয় বৃষ্টি পড়েছে। রাস্তার মাঝখানটা শুকনো, ধারগুলো ভেজা। দুই পাশে ঢালু জায়গায় পানি জমে আছে। ওপরে ল্যাম্পপোস্টের নরোম আলোয় সেই পানিতে নিজের মুখের প্রতিফলন দেখতে পেলো শিয়া। আবছা আলোতেও অপ্রকৃতস্থ দেখাচ্ছে তাকে।
ওরা তার সামনে দিয়ে চলে গেলো! ভাইয়াকে যারা নিজ হাতে মেরে ফেলেছে তারা ওর সামনে দিয়ে চলে গেলো? কোমরে একটা রিভলভার নিয়েও তাদের কিচ্ছু করতে পারলো না সে? নিজেকে হঠাৎই খুব ব্যর্থ মনে হতে থাকে। ভাইয়ার হাসিমুখটা চোখের সামনে ভাসছে। কি ঝলমলে হাসিই না দিতে পারতো সে! মুখের প্রতিটা কোষ হেসে উঠতো সেই সাথে। এই মুহূর্তে ভাইয়া তাকে দেখতে পেলে কি বলতো? মুখে হাসি থাকতো না নিশ্চয়! তাকে অসময়ে ওদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, অথচ এর পেছনে যারা দায়ি তাদের শিয়া কিছুই বলল না? ভাইয়া কি তাকে নিয়ে লজ্জা পেতো না? যাদের জন্য আজ কয়েক মাস হলো মা পর্যন্ত অস্বাভাবিক আচরণ করে যাচ্ছে, তাদের এতো কাছে পেয়ে সে কি করে স্রেফ হেডরেস্টে মাথা দাবিয়ে লুকিয়ে যেতে পারলো? রেন্ট-আ-কারের কাঁচ ভেঙে যদি গুলি করতো, একজনকে কি নামিয়ে দিতে পারতো না? হয়তো দু’জনকেই ফেলতে পারতো। মাতাল মানুষ নড়ে ধীরে। হঠাৎই শিয়া খেয়াল করলো, হাঁফাচ্ছে না সে। কাঁদছে। কি যন্ত্রণা! যদি কেউ এখন এভাবে দেখতে পায় ওকে সমিতি থেকে নিশ্চয় বের করে দেবে!
খুব কাছে পায়ের শব্দ হলো। রাস্তার পাশে জমে থাকা পানিতে ওর ঠিক পাশে কারও দীর্ঘ ছায়া দেখতে পেলো সে।
“ম্যাডাম-”
হাঁফানোর মতো শব্দ করতে করতেই বিদ্যুৎগতিতে ঘুরে গেলো সে। গাড়ির পেছনের চাকায় ছিটকে গিয়ে মাডগার্ডের সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়লো। হাতে বেরিয়ে এসেছে রিভলভার। সরাসরি মানুষটার দুই চোখের মাঝে তাক করলো অস্ত্রটা।
“আমি, ম্যাডাম, গুলি করবেন না!” দু-হাত ওপরে তুলে গলা নামিয়ে বলল প্রিয়াংকা।
এখনও হাঁফাচ্ছে শিয়া, হাত এতো কাঁপছে ওর মনে হলো গুলি বেরিয়ে যাবে। কোনোমতে হোলস্টারে অস্ত্রটা ঢুকিয়ে রাখলো। দু-হাতে পাগলের মতো চোখ মুছছে সে। কাছে এসে এক হাতে ওকে ধরে ধীরে ধীরে দাঁড় করালো প্রিয়াংকা। শিয়ার এমন আচরণের ভিন্ন অর্থ ধরলো সে।
“আপনার স্বামী?”
হেঁচকি ওঠাতে ওঠাতে দ্রুত একবার মাথা দোলালো শিয়া। ধীরে ধীরে চিন্তা-ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠছে তার। এই পতিতা মেয়েটিকে বেশি কিছু জানানোর প্রয়োজন নেই।
“আই অ্যাম সো সরি। রিয়েলি।” এক হাতে ওকে ধরে ধরে ড্রাইভিং সিটের দরজায় নিয়ে এলো প্রিয়াংকা। দরজাটা নিজেই খুলতে পারলো শিয়া। উঠে বসলো ভেতরে।
“তুমি উঠে বসো। পৌছে দেই।” চোখ মুছতে মুছতে বলল ও।
বিনা বাক্য ব্যয়ে প্যাসেঞ্জার’স সিটে উঠে বসলো প্রিয়াংকা, “আমি খুবই দুঃখিত যে আপনার স্বামীর এরকম একটা অভ্যাস আছে।”
“তোমার সাথে কি ‘ওরা করেছিলো?” কাঁপা গলায় জানতে চাইলো শিয়া, যেমন গলা নারীরা খানিক কাঁদার পর স্বাভাবিক।
“সরি, ম্যাম। কিন্তু ওরা…করেছিলো আমার সাথে।”
“ওকে।” চোখ মুছে আবার বলল শিয়া, “ওকে। দুইজনই?”
জোর করে মুখ থেকে সুখের ছাপ সরিয়ে রাখলো প্রিয়াংকা। আজকের রাতটা তার জন্য অসাধারণ গেছে। তবে এই মুহূর্তে তার ক্লায়েন্টের সামনে সেটা বলা চলবে না। তার ঠিক বিপরীত চিত্র মেয়েটির। এতো অল্পবয়েসী আর এতো সুন্দর একটা মেয়ের স্বামী অন্য মেয়েদের সাথে ফূর্তি করে কি মনে করে? প্রিয়াংকার হিসাব মেলে না।
“জি ম্যাম। দু’জনই। একসাথে…আপনার স্বামী কোনজন?”
“চোখের কোণে কাটা দাগ যার।” নাক টেনে ফোঁত জাতীয় একটা শব্দ তুললো শিয়া। এই শব্দের কোনো দরকার ছিল না। ভেতরে ভেতরে নিজেকে সামলে নিয়েছে সে। এখন খানিক বাড়তি আবেগ দেখিয়ে পতিতাটিকে শোনানো গপ্পোটাকে শক্ত ভিত্তি দিতে হবে। কারণ এখানে যে গল্পটা সে জন্ম দিচ্ছে তাই অনেকদিন ধরে তিন মাগির পাড়ায় মুখে মুখে ফিরবে।
“উনি আমার পেছনে ছিলেন।” কথাটা বলতে গিয়ে লজ্জা পেয়ে গেলো প্রিয়ংকা, “আমি দুঃখিত।”
গ্লোভবক্স থেকে একটা টিস্যু বের করে নিজের চোখ মুছে নিলো শিয়া।”তোমার দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই, প্রিয়াংকা।”
“আমার আসল নাম প্রিয়াংকা না, ম্যাম।” মাথা নিচু করে বলল এলিট এসকর্ট। কেন যেন এই মেয়েটির প্রতি তার মায়া পড়ে গেছে। স্বামী সংসার নিয়ে সে হয়তো কিছুই জানে না, তবে এই মায়াবতী মেয়েটির কাছে সংসারের গুরুত্ব ছিল। মায়াবতীর আবেগ আজ তার মতো একজন দেহপসারিণীকেও ছুঁয়ে গেলো কি করে?
“তোমার নাম নিয়ে এখন আমি ভাবছি না।” লালখালির দিকে ড্রাইভ করতে করতে বলল শিয়া।”আমাকে একটা ডিভোর্স পেপার রেডি করতে হবে।”
যেটা তাকে বলল না, আগামিতে এই মেয়েটিকে আরেকবার কাজে লাগানোর কথা ভাবছে আসলে সে। নারীদেহের প্রতি তোফায়েল রেদোয়ানের আগ্রহের ব্যাপারটা জানা থাকায় ভালো হয়েছে। একটা সমস্যা হলো এরা বাইরে বের হয় না। ভেতরেই নিশ্চয় কাজ সারার ঘর আছে। কিন্তু অনেক ভালো মানের কোনো নারীদেহের ক্ষেত্রে? নিয়মিত জিমে যাওয়া সুগঠিত ফিগার আর পুরুষ প্রলোভনের বিদেশি ট্রেনিং পাওয়া কোনো মেয়ের আবেদনেও কি এদের একজন ইউসুফ’স বার থেকে বেরিয়ে শিয়ার সঙ্গে গাড়িতে উঠবে না?
“ডিভোর্সের সময় প্রমাণ হিসেবে আদালতে কি দেখাবেন, তা নিয়ে চিন্তা করছেন?” পাশ থেকে জানতে চেয়ে তার চিন্তার সূতো কেটে দিলো মেয়েটি। শিয়ার মেজাজ খারাপ হতে থাকে। পতিতা মানুষ পতিতার মতো থাকবে। এতো কথায় তার দরকার কি? শিয়ার বিরক্তি মেয়েটি বুঝতে পারলো বলে মনে হলো না। সে তার মতো বলে যাচ্ছে, “আমি একটা সাজেশন দিতে পারি, যদি কিছু মনে না করেন।”
শিয়া চুপ করে থাকলো। এই মেয়ের সাথে বক বক করতে তার ইচ্ছে করছে না।
“বাসায় উনি ফিরলে মোবাইলফোনটা নিবেন। ঐখানে আমাদের তিনজনের ভিডিও আছে, মানে ঐ সময়কার।” প্রিয়াংকার আজ হয়েছে কি? আবারও লজ্জা পেয়ে গেলো সে। এই পেশার মেয়েদের এতো লজ্জা থাকলে চলবে কেন?
বিচ্ছিরি শব্দ করে গাড়িটা ফুটপাতে তুলে দিলো শিয়া। আরেকটু হলেই এক মুড়িওয়ালা এবং তার তিন কাস্টোমার উড়ে যাচ্ছিলো। ফুটপাতে উঠে আসা গাড়িটাকে উদ্দেশ্য করে ছাপার অযোগ্য অশ্লীল কিছু গালি ছুঁড়ে দিলো তারা। ফিরেও তাকালো না শিয়া, তার পূর্ণ আগ্রহ এখন পাশে বসা মেয়েটির ওপর।
“তারমানে ওরা পুরোটা সময় ভিডিও করেছিলো?” বোকার মতো আবারও জানতে চাইলো সে।