অধ্যায় ৩৩
হোটেল ওয়ারিশানের অ্যাটাচ বাথগুলো চমৎকার। হট ওয়াটার কাজ করছে, বডি লোশন, শ্যাম্পু, সাবান, শাওয়ার ক্রিম গুছিয়ে রাখা, ঝকঝকে তোয়ালে গোল করে রাখা হয়েছে বেসিনের নিচে কাঠের কেবিনেটে। মফস্বলে এসে এতো গুছানো বাথরুম শিয়া আশা করেনি। মুহিবরা চলে যাওয়ার পর রুমে ফিরে এসে দুটো সিগারেট খেতে খেতে ঘরটা গুছিয়ে নিয়েছে। তারপর টানা আধঘণ্টার শাওয়ার, মোবাইল ফোনটা সব সময় দৃষ্টিসীমার মধ্যে রেখেছে অবশ্য।
শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরে নিজের ঘরে ফিরে এলো শিয়া। ল্যাপটপটা টেবিলের ওপর খোলা। একটা চেয়ার টেনে তার সামনে বসে পড়লো। হোটেলের ওয়াইফাই স্পিড খুব আনন্দিত হওয়ার মতো না, তবে ইন্টারনেট সংযোগ আছে। গুগল ম্যাপসে ঢুকে সার্চ দিলো “লালখালি”। ম্যাপসে জায়গাটা পাওয়া গেলো। একটা ক্লিক করে স্যাটেলাইট ভিউ নিয়ে এলো শিয়া। অনেক গাছপালা সেদিকে, মফস্বলে গাছপালা একটু বেশিই দেখা যায়। স্যাটেলাইট ভিউয়ে রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায় না। রাস্তায় গাছ। ডিভাইডারে গাছ। সবুজ ‘শহর’ হয়তো পরিবেশের জন্য বেশ উপকারী, এই মুহূর্তে শিয়ার কোনো কাজে আসছে না পরিবেশের বন্ধুরা। চোখ কুঁচকে এলাকাটার ব্যাপারে একটা ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করলো সে।
মোবাইলটা চার্জে আছে। ডিসপ্লে অন করে দেখলো অষ্টআশি পার্সেন্ট 1 ল্যাপটপটা খোলা রেখেই উঠে গেলো ও, লাগেজ খুলে পোষাকগুলো লকারের ভেতর হ্যাঙ্গারে সাজিয়ে রাখলো। হলুদ জামাগুলো স্পর্শ করলো মমতা নিয়ে, কিন্তু গায়ে দিলো না। আজকে রাতে হলুদ পরে বের হওয়া যাবে না। কালো টিশার্ট আর কালো এক জিন্স বেছে নিলো। কমব্যাটের জন্য এই টিশার্টগুলো বেশ আরামদায়ক। অনুশীলন সমিতির সাজেশন থেকে এই ড্রেসগুলো কিনেছিলো। এমনকি সমিতির পছন্দ করে দেওয়া অন্তর্বাসও আছে।”তিন মিলিমিটারের স্বস্তির অভাবে মিশন ব্যর্থ হতে পারে!” ওয়ার্ডরোব ট্রেইনার কমরেড আসলাম এটা বলেছিলেন। তিনি কি বোঝাতে চেয়েছিলেন তা হয়তো শিয়া এখন বোঝে বুটজোড়ার ফিতে যত্ন করে বেঁধে আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পনিটেইল করলো। লাগেজ ব্যাগের ভেতর চোরাকুঠুরির ভেতর হাত গলিয়ে বের করে আনলো নাকবোঁচা রিভলভারটা।
“স্নাব-নোজড!” বিড়বিড় করে ফুলহাতা টিশার্টের ডানহাত গুটিয়ে ফেললো সে। মেয়েদের হাত অনেক পুরুষের কাছেই আকর্ষণীয় মনে হয়। কালো টিশার্ট আর কালো জিন্সের সঙ্গে সাদা চকচকে নারীহস্তের আবেদন স্বভাবতই আরও বেশি। আবেদন বাড়ানো দু-হাত ব্যবহার করে শিয়া তার রিভলভার দৃশ্যত লুকিয়ে ফেলতে পারবে। পুরুষের মনোযোগ তার হাতে আর বুকে থাকলেই সুবিধে, কোমরে খুব ভালোমতো না গেলেই হলো।
ছোট্ট হোলস্টারটা ডান কোমরে আটকে নিলো। জিন্সের ভেতরের দিকে ওটা আটকানোর জন্য প্যান্টের সাথে কাস্টোমাইজড হোল্ডার আছে। সেখানে রিভলভারটা ভরে ফেলতেই হয়ে গেলো। আয়নার সামনে একবার ঘুরে ফিরে দেখলো শিয়া। কোনোদিক থেকেই কোমরের সঙ্গে রিভলভারটা দেখা যায় না। যদি সে বামদিকে উবু হয়, তবে একটা এক ইঞ্চিমতো চারকোণা আবরণ দেখা যাবে। ওটাকে যে কেউ ইলেক্ট্রিক ডিভাইস ভেবে ভুল করবে। রিভলভারের চিন্তা তাদের মাথায় আসার কথা না। আর ঐ চারকোণা হাতলটাও যেন চোখে না পড়ে সেজন্যই কি নিজের আকর্ষণীয় হাতজোড়া কনুই পর্যন্ত উন্মুক্ত করেনি সে?
ঠিক এই সময় দরজায় নক পড়লো।
রিভলভারের ওপর টিশার্ট নামিয়ে দরজা খুলে দিলো শিয়া। অগোছালো ধাঁচের একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সন্দেহাতীতভাবে এ রুম সার্ভিস নয়। স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো শিয়া। বয়সে তার থেকে কিছুটা বড়ই হবে। শামসভাইয়ের বয়েসী। মুখে অবহেলায় না কাটা কয়েকদিনের দাঁড়ি। চোখে কোমলতা।
“শিয়া, তুমি আমাকে চিনবে না। তোমার ভাই আমার বন্ধু ছিল।” হড়বড় করে বলল সে, “আমার নাম নির্ঝর।”
এক মুহূর্ত হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থাকলেও সামলে নিলো সে। মিষ্টি করে হাসলো, “ভেতরে আসুন!“
মাথার ভেতর ঝড়ের গতিতে চিন্তা চলছে তার। তিন ঘণ্টাও হয়নি এই মফস্বলে নেমেছে সে। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। মুহিব আর শামীম ছাড়া কেউ জানে না তার পরিচয়, তার এই শহরে উপস্থিতি। এই ছেলে সবগুলো দাঁত বের করে নিজেকে শামসভাইয়ের বন্ধু বলে পরিচয় দিলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাওয়া যায় না। জাকির সঙ্গে মুহিবরা দেখা করতে গিয়েছে, তারা জাকিকে জানাতেই পারে শহরে শিয়া এসেছে। তবে শিয়াকে একটিবারও ফোন না করে তার হোটেল রুম নম্বরসহ বলে দেবে এতোটা বোকাও শামীম-মুহিব না
রুমের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে নিজেকে নির্ঝর পরিচয় দেওয়া মানুষটা। দরজা লাগিয়ে ছিটকিনি তুলে দিয়ে তার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো শিয়া, ঠিক চারফুট দূরে। হাসিমুখে নির্ঝর ঘুরে দাঁড়াতেই সাপের মতো নড়ে উঠলো শিয়ার ডান পা।
কেউ যদি জানালা থেকে দৃশ্যটা দেখতো, মুগ্ধ না হয়ে পারতো না। শিয়ার সম্পূর্ণ দেহই অনড়। ডান আর বাম হাত শরীরের দুইপাশে আলগোছে ঝুলে আছে। তাদের অবস্থানের একচুল পরবর্তন ঘটলো না। ভাঁজ হলো না বাম কিংবা ডান পায়ের হাঁটু। বাঁ পায়ে সটান সোজা দাঁড়িয়েই ডানদিক থেকে ছড়িয়ে দিয়ে সামনে আঘাত হানলো ডান পায়ের বুট। নির্ঝরের ঘাড়ের বাম পাশে সজোরে চাপড় মারার শব্দ তুলে আছড়ে পড়লো ওটা। সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে মুখ থুবড়ে হোটেল রুমে পড়ে থাকলো নির্ঝর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জ্ঞান হারিয়েছে সে। আগের মতোই অবিচল ভঙ্গিতে তার থেকে চার ফিট দূরে দাঁড়িয়ে থাকলো শিয়া। তারপর খুব শান্তভঙ্গিতে গিয়ে লাগেজ থেকে একফালি দড়ি বের করে হাত আর পা পিছমোড়া করে বেঁধে ফেললো। মুখে ঢোকানোর মতো কাপড় চারপাশে তাকিয়ে পেলো না। অগত্যা একটা ব্রা বিসর্জন দিতে হলো সেখানে। দেহটাকে বক্স খাটের পাটাতন তুলে তার ভেতরের ধূলোয় ফেলে দিলো তারপর। সবগুলো পাটাতন বসিয়ে দিতেই বন্দি গায়েব। মাথার দিকে চাদর যেন খাটের ভেতরটা বায়ুনিরোধ করে না দেয় সেজন্য চাদর খানিক সরিয়ে রাখলো শিয়া। তারপর মোবাইল ফোনের চার্জার খুলতে খুলতে লক্ষ্য করলো, একশ’ পার্সেন্ট চার্জ হয়ে গেছে। অনুপ্রবেশকারীকে ধন্যবাদ।
হোটেল রুমে তালা মেরে বেরিয়ে পড়লো ও।
*
লালখালির মাগিপাড়ায় প্রতিরাতের দৃশ্য একই রকম। এখানে ওখানে হট্টগোল লেগে আছে। এসব জায়গার পরিচয় শুধু দেহ বেচাকেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। বরং চোলাই মদ, বিদেশি মদ এখানে সস্তায় মেলে। সস্তায় পাওয়া যায় যৌনবর্ধক ঔষধ। গাঁজা এখানে একরকম ফ্রি, বহিরাগতদের বিক্রিও করা হয় মহাসমারোহে। উৎকট নেশাদ্রব্যের গন্ধের সাথে এসে মিশে মানুষের গন্ধ। পাড়া দেখভালের জন্য আছে বয়স্কা পতিতারা। গল্পগাঁথায় যেমন দেখা যায়, একজন ‘সর্দারনি’ বা বয়স্কা পতিতা গোটা একটা পতিতালয়ের দেখভাল করেন, বাস্তবের লালখালির মাগিপাড়ায় এমন সর্দারনি আছেন তিনজন। এরা যদি কোনো নামকরা ক্রাইম অর্গানাইজেশনের সর্দার হতেন, তবে নানারকম সাহিত্যিক খেতাব এদের তিনজনের কপালে জুটতো। তবে পতিতাবৃত্তি তেমন ‘এলিট’ ক্রাইম না। যেকারণে সস্তা এক পরিচয়ই পেয়েছে জায়গাটা –”তিন মাগির পাড়া।”
প্রিয়াংকা এখানে কাজ করে দেড় বছর ধরে। তার জীবনের একটা আলাদা গল্প আছে। প্রিয়াংকা আজীবন ভেবে এসেছে সে ‘আলাদা’, তার গল্পটার গুরুত্ব অন্যরকম। আর সবার মতো তো সে নয়। তবে এখানে আসার পর সে বুঝতে পেরেছে তার জীবনের গল্পটা তেমন গুরুত্বপুর্ণ নয়। কারণ, আসলে সবাই ‘আলাদা’, একজনের গল্পের গুরুত্ব অন্য কারও চেয়ে কম না। একেকজনের ভাগ্য পরিবর্তনের গল্পটা অপরজনের চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয়, বরং একের থেকে অন্যের গল্পের ট্র্যাজেডিটা উত্তরোত্তর বেড়ে চলে। গুরুত্ব রাখার মতো তথ্য একটাই, প্রিয়াংকা তার আসল নাম নয়। আসল নামটা আরও সুন্দর, তবে ব্যবসার জন্য যথেষ্ট চটকদার না।
ফুলি খালা যখন ডেকে বললেন আজকে ক্লায়েন্ট বাইরের, তখন প্রিয়াংকার মন হঠাৎ করেই ভালো হয়ে গেলো। বিকালে তাকে বাজারে কেনাকাটা করতে দেখলে কেউ ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করতে পারবে না এই মেয়েটি একজন পতিতা। অসাধারণ ঢেউ খেলানো চুল আর পরিপূর্ণ ভরাট মুখখানির সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্রির মিল রয়েছে, পতিতাদের নয়। প্রিয়াংকার ধারণা মাথায় সামান্য বুদ্ধি থাকলে সময় থাকতেই এই পথ থেকে সরে আসা সম্ভব। টাকা সে জমাচ্ছে, তবে আরও তিন চার বছর এখানে কাজ করতে হবে। তারপর গ্রামের বাড়িতে ফিরে গিয়ে একটা বুটিক শপ দেবে সে। খামার করবে। পতিতাবৃত্তিতে কতো টাকা তা অনেকেই জানে না। পাঁচ বছরের ব্যবধানে নিজের একটা ব্যবসা করার কথা অঁজ পাড়াগায়ের কোন মেয়েটা ভাবতে পারতো? গতানুগতিক পথে টাকা কামানোর চেষ্টা করলে পড়াশোনা করতেই হতো আরও ছয় সাত বছর। সবে কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রি হতো সে। তারপর দুই বছর ধরে কলেজের পড়াশোনা করো। এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট করো। তারপর ভর্তি পরীক্ষা দাও। ভর্তি পরীক্ষায় বাদ পড়ে গেলে বাদ। প্রাইভেটে পড়ানোর মতো টাকা নেই তার রিটায়ার্ড স্কুল শিক্ষক বাবার
বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে মানুষ বেশি বেতনের চাকরি দেয় না মেয়েদের। পড়লেও যে অনেক বেতন তেমন না। ছয় বছরের চড়াই উতরাই পার করে প্রিয়াংকা যখন চাকরি শুরু করতো, তখন সে থাকতো কপর্দকশুন্য। চাকরি করতো হয়তো, বুড়ো বাপ আর ছোটভাইকে টাকা দিতে হতো। টেনে টুনে সংসার চালিয়ে নিতো। কিন্তু নিজের ব্যবসা খুলে বসা আর হতো না।
এরচেয়ে শরীর বিক্রি করা ভালো না? রূপ কম নেই প্রিয়াংকার, সেই সঙ্গে আছে সুশিক্ষিত বাবার কল্যাণে বিশুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলার ক্ষমতা। পর্নো ভিডিও দেখে অনেক কৌশল রপ্ত করেছে সে। তিন মাগির পাড়া থেকে যে হাই ক্লাস এসকর্ট সার্ভিসগুলো বাইরে দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিমান্ড তার। এখানে আসা কাস্টোমারও তাকে পেতে চাইলে এক রাতের জন্য খরচ করতে হয় দশ হাজার টাকা। খদ্দের তাতে কমে যায়নি, বেড়েই চলেছে। খুব কম রাতই কাজ ছাড়া থাকতে হয় তাকে। এলিট শ্রেণির দেহবসায়ি হওয়ার বিশেষ সুবিধেগুলো সে পাচ্ছে ঠিকঠাক। এরই মধ্যে ব্যাংকে জমিয়ে ফেলেছে ত্রিশ লাখ টাকা। এই কাজে বেশ্যালয়ের বেতনের থেকে খদ্দেরদের খুশি হয়ে দেওয়া উপরিই বেশি। কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসায় নামবে যখন, তাকে আর এই পথে ফিরে আসতে হবে না।
চেহারা আর শরীর একটু ভালো হলে ওসব চব্বিশ-পঁচিশ বছর ধরে পড়াশোনা করে ফকিরের জীবন যাপন করার পথে মাথায় বুদ্ধি থাকলে কোনো মেয়েই যাবে না বলে প্রিয়াংকার বিশ্বাস। বুদ্ধি বিক্রি করে শিক্ষকরা ছাত্র পড়ান, বুদ্ধিটা বিক্রি করেই টাকা নেন মাস শেষে। কারণ, তাদের বুদ্ধিটা ভালো, বিক্রি করার মতো। যার তার বুদ্ধি তো কেনে না মানুষ। নয়তো কম সিজিপিএ ধারীরাও শিক্ষক বনে যেতো।
তাহলে কারও যদি সুন্দর শরীর থাকে সে কেন সেই শরীর বিক্রি করতে পারবে না? মানুষ তো টাকা দিয়ে কিনতে আগ্রহি আছেই। এই কেনাবেচা কেন খারাপ? আত্মসম্মান হারানোরই বা আছেটা কি? প্রিয়াংকা এসএসসিতে গোল্ডেন ফাইভ পাওয়া ছাত্রি। সে এতটুকু জানে মানুষ একটা বায়োলজিকাল প্রাণি। তারা হাগামুতা যেমন করে, তেমন পুরুষ-নারীর সঙ্গেও যৌন সহবাস করে থাকে। এগুলো একই বিষয়, আলাদা কিছু নয়। ভাত খাওয়া যদি অপরাধ না হয়, যৌনসংস্রবও অপরাধ নয়। কারণ, দিন শেষে মানুষ একধরণের জানোয়ারই। যদিও নিজেদের মহৎ করে তুলে ধরার জন্য, শ্রেষ্ঠ প্রাণি হিসেবে পরিচয় দেওয়ার জন্য তারা বাড়তি পার্থক্য গড়ে তুলতে চায়। এসবই বাজে কথা। মানুষ তার বুদ্ধির জন্য শ্রেষ্ঠ। সেজন্য নিকৃষ্ট বুদ্ধির প্রাণিদের সবই বর্জন করার চেষ্টা তারা করবে কেন? এটাই তো নির্বুদ্ধিতা। নির্বোধ না হলে প্রাণি হয়েও নির্দোষ প্রাণিসত্তা অস্বীকার করে কেউ? অস্বীকার করবেই বা কি করে, বীরপুরুষেরা কি পারবে স্বপ্নদোষ ঠেকাতে?
প্রিয়াংকা নিজেকে চোখ রাঙায়। ক্লায়েন্টের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার ডাক আসলে একটু দার্শনিক চিন্তার বিলাসীতা করা তার পুরোনো অভ্যাস। এতে তার দোষ সামান্য। বড়লোক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে মেলামেশার মজা আলাদা। ডাক আসলে প্রিয়াংকার শরীর ঝমঝম করে। বিবাহপূর্ব অথবা বিবাহউত্তর, যতোক্ষণ অংশ নেওয়া প্রতিটি পক্ষ স্বেচ্ছায় কাজটা করছে একে কখনও পাপ হিসেবে দেখেনি সে। যৌনতা স্বাভাবিক একটা মানববৃত্তীয় বিষয়। এটা উপভোগের বিষয় হতে পারে, পাপের নয়। যখন ঝাঁ চকচকে পোষাকে প্রিয়াংকা বের হয়ে এলো, তখনও তার মাথায় এসব উদ্ভট চিন্তাভাবনা ঘুরছে। শরীর ঝমঝম করছে অনাগত উত্তেজনার কথা ভবে।
বাইরে ওকে সঙ্গে করে নিয়ে এলেন রমজ” ভাই। এই মানুষটার মতো নির্মোহ মানুষ প্রিয়াংকা তার গোটা জীবনে দেখেনি। ওদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন তিনি। কোমরে একটা বিশাল পিস্তল সব সময় থাকে, আর তা ক্লায়েন্টদের দেখানোর ক্ষেত্রে তিনি সমান সচেষ্ট। লুকোছাপায় নয়, অস্ত্র প্রদর্শনই এখানে মঙ্গলজনক। রমজান ভাই কখনও তাদের দিকে খারাপ নজরে দেখেননি। এমনকি প্রিয়াংকার বিখ্যাত বুকজোড়ার দিকেও কখনও আলাদা করে তাকাননি। পতিতাদের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন তিনি, কখনও কাউকে স্পর্শ করেন না। এবং কথা তিনি বলেন যথাযোগ্য সম্মান দেখিয়েই। যেমনটা স্কুল-কলেজে গেলে শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রে করে থাকে সভ্য জগতের মানুষ। রমজান ভাই ক্লায়েন্টের সঙ্গে একবার ঠিকমতো কথা বলে নিলেই তারা নিজেদের বাড়িতে গিয়ে ‘মিসবিহেভ’ করার আগে কয়েকবার ভাবে। তারপরও যদি কেউ তেমন কিছু করে ফেলে, খদ্দেরের ঠিকানা তো আর রমজান ভাইয়ের অজানা নয়। তিনি ব্যবস্থা নেন। অন্তত সবাই তেমনটা জানে, রমজান ভাই কি ব্যবস্থা নেবেন তা দেখার জন্য কেউ কোনো মেয়েকে বাইরে নিয়ে অত্যাচার করার সাহস করেনি। যমরাজও নাকি ভগবানকে ভয় পায়। সেরের ওপর সোয়া সের থাকে, সোয়া সেরের ওপরও দেড় সের থাকে।
রাস্তায় বের হয়ে ক্লায়েন্টের গাড়িটা দেখে প্রিয়াংকার উত্তেজনা বেড়ে গেলো। এই গাড়ি কারও ব্যক্তিগত যান হতেই পারে না। সামনের ছোট্ট স্টারটা স্থানীয় এক রেন্ট-এ-কারের। অর্থাৎ খদ্দের শহরের বাইরে থেকে এসেছে। এধরণের খদ্দেরদের সে বেশি ভালোবাসে। কারণ, এদেরই মানিব্যাগ বেশি ফুলে থাকে! আরও একবার উপলব্ধি করলো সে, নিজের কাজটাকেও সে প্রচণ্ড ভালোবাসে। আর সব ব্যাকডেটেড পতিতার মতো শরীরবৃত্তীয় কুসংস্কার না থাকার কারণেই হয়তো নিজের কাজটাকে সে ভালোবাসতে পেরেছে মন থেকে।
গাড়ির কাছে যেতে গ্লাসটা নেমে গেলো। প্যাসেঞ্জার সিটের দিকে ইশারা করে শিয়া ছোট্ট করে শুধু বলল, “উঠে পড়ো।”
বিস্ময়ে বোবা হয়ে গেছে প্রিয়াংকা। লেসবিয়ান সেক্স? এই পেশায় ঢোকার সময় সমকামিত্বে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছিলো সে। তবে দেড় বছরে একটা মেয়ে খদ্দেরও পায়নি। এই দেশে মেয়েরা সমকামিত্ব টাকা দিয়ে কেনায় এখনও অভ্যস্ত হয়নি মনে হচ্ছে। সমকামী ছেলেরা তো দিব্যি চালাচ্ছে
ব্যবসা। মেয়েদের বেলায় পশ্চাৎপদতা অকারণ।
“এরকম একটা রাতের জন্য অনেকগুলো মাস অপেক্ষা করেছি আমি। আপনাকে ধন্যবাদ।” আলতো করে একটা হাত ড্রাইভিং সিটের মেয়েটার উরুতে রাখলো প্রিয়াংকা।
পতিতার মুখে বিশুদ্ধ উচ্চারণ শুনে মোটেও অবাক হলো না শিয়া। সেরা মানুষটাকেই সে ভাড়া করতে পেরেছে জেনে বরং সন্তুষ্ট হলো।
“আমি তোমার ক্লায়েন্ট, তবে নিজের জন্য চুক্তিতে আসছি না তোমার সঙ্গে। আমার দুই বন্ধুর জন্য দরকার তোমাকে।”
হাতটা উরু থেকে সরিয়ে ফেললো প্রিয়াংকা, অবশ্যই সপ্রতিভ ভঙ্গিতে। এই গোপনীয়তার বিষয়টা সে এবার বুঝতে পেরেছে।
শিয়ার উদ্দেশ্যে চোখ টিপলো একবার, “ডোন্ট ওরি। আই লাভ থ্রিসাম।”