1 of 2

কুকুরদল – ৩১

অধ্যায় ৩১

শাহাবুজ্জামান স্যার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিংয়ের সামনে এসে হতচকিত হয়ে গেলেন। ব্যক্তিগত কাজে দুইদিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় গেছিলেন। ছোটো মেয়ের শাদীটা ধুমধাম করে দিলেন। ছেলে মাশাআল্লাহ আল্লাহভক্ত পাওয়া গেছে। এমন ছেলে এই সময়ে বিরল। মানুষ যাচ্ছে জাহেলিয়াতের যুগে। সেখানে নবীজির সুন্নতকে আগাগোড়া ধারণ করা ছেলে পাওয়া মাত্ৰ সময়ক্ষেপ না করে শুভকাজটা করিয়ে দিয়েছেন তিনি। বুয়েটের ছাত্র, এখন মেঘনাঘাট পাওয়ার প্ল্যান্টে চাকরি করছে। পরণে সুন্নতি লেবাস সব সময়ই থাকে ছেলের, মায় মাথার পাগড়ি পর্যন্ত। চাশতের নামাজ পর্যন্ত ছোটে না, খবর নিয়ে দেখেছেন তিনি। এমন ছেলে হাতছাড়া করবে যে বাবা, তাকে হাশরের ময়দানে অবশ্যই জবাবদিহিতা করতে গিয়ে হোঁচট খেতে হবে। হাশরের কঠিন সময়ে হোঁচট খাওয়ার ইচ্ছে শাহাবুজ্জামানের ছিল না।

মেয়ে-জামাইয়ের বাড়ি থেকে ফেরার সময় ফোনে ভিসি স্যার পরিস্থিতিটা সম্পর্কে হাল্কা-পাতলা জানিয়েছেন। বাইরে কোনো শিক্ষক অবশিষ্ট নেই। শেষ ভরসা শাহাবুজ্জামান স্যার আর রবিনস্যার। রবিনস্যারকে শিক্ষকসমাজ নিজেদের একজন মনে করে না। ভাইস চ্যান্সেলরের এতো বড় বিপদেও তার টিকিটা পর্যন্ত দেখা যায়নি। এরকম নাফরমান মানুষের ওপর ভরসা করা চলে না।

শাহাবুজ্জামান দেখলেন অ্যাড বিল্ডিংয়ের সামনে অন্তত দেড় হাজার ছেলে-মেয়ে বসে আছে। তাদের চারপাশে আরও তিন ডজন মিডিয়া কর্মি। ছেলেদের অনেকের উর্ধ্বাঙ্গে জামা নেই। ঐ জামা দিয়ে মশাল বানিয়ে রাতে মশাল মিছিল করা হয়েছে। মেয়েগুলোও অর্ধনগ্ন ছেলেদের সাথে কেমন ঘেঁষাঘেষি করে আছে। নাজায়েজ দৃশ্যটার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি। লজ্জায় কান গরম হয়ে উঠেছে এরই মধ্যে।

কাছেই আরেকটা জটলার মধ্যে একটা ছেলেকে দেখা গেলো ছয় ইঞ্চি ফলার এক ধারালো ছুরি নিয়ে দেওয়ালের কাছে উবু হয়ে বসে পড়েছে। ডানহাতে ছুরিটা এতো শক্ত করে ধরেছে, তার হাতের সবগুলো রগ স্পষ্ট দেখা যায়।

ছুরিধারীর চারপাশে ক্যামেরা আর ফটো-সাংবাদিকদের মেলা বসে গেলো। এমন একজনের ধাক্কায় আরেকটু হলেই ছিটকে পড়ে যাচ্ছিলেন

শাহাবুজ্জামান। ফটো সাংবাদিক ক্ষমাপ্রার্থনার ধারে-কাছেও গেলো না। বরং বিরক্ত মুখে বলল, “সরেন তো, বুড়া মিয়া।”

শাহাবুজ্জামান বলতে চাইলেন, ব্যাটা তোর বয়সের চেয়ে আমার কেটে ফেলে দেওয়া মুন্ডির চামড়াটার বয়স বেশি ছিল। আর আজকে এমন বেয়াদবি করার সাহস করিস! তবে তিনি এরকম কিছু বলতে পারলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার একটা সমস্যা হলো, কথায় কথায় ভয়াবহ অশ্লীল গালি দেওয়া যায় না। এই কাজটা করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।

উবু হয়ে বসে থাকে ছেলেটা নিজের বাম হাত গভিরভাবে কেটে ফেলেছে। ছড় ছড় করে সেখান থেকে রক্ত বের হয়ে এলো। শাহাবুজ্জামান ভীত কণ্ঠে বললেন, “এই ছেলে। তুমি এটা কি করছো? রক্ত তো খুব যাচ্ছে। চলো, এখনই হাসপাতাল চলো।”

ছেলেটা তার কথার উত্তর না দিয়ে রাস্তায় রক্ত ছিটাতে শুরু করলো। ক্যামেরা ধরে থাকা একজন সাংবাদিকের লেন্সের সামনে পড়ে গেছিলেন মনে হয়। অধৈর্য সাংবাদিকটি উঁচুগলায় বলল, “বুড়োটাকে কেউ সরাবেন? একটা দারুণ টেক নেওয়া যেতো।”

রক্ত দেখলে শাহাবুজ্জামানের মাথা ঘোরে। এখন তার মনে হচ্ছে এতোগুলো মানুষের সবাই দুলছে, তিনি একাই স্থির আছেন। ভিড়ের জন্য এক কাতার পর আর ছাত্রদের শরীর দেখা যায় না। শুধু মাথা দেখা যায়। শাহাবুজ্জামান দেখলেন অনেকগুলো মাথা দুলছে। একই ছন্দে, যেন সমুদ্রের স্রোত।

তিনি আরেকবার দুর্বল গলায় বলার চেষ্টা করলেন, “ভিসি স্যার তোমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”

ছাত্রটা কাঁপতে কাঁপতে নিজের রক্ত দিয়ে খুব গাঢ় করে রাস্তার মাঝে লিখে ফেলেছে “35”।

কাছ থেকে আরেকটা ছেলে এসময় এগিয়ে আসলো। এই ছেলে ছুরিধারীর মতো শান্ত, সৌম্য নয়। উর্ধ্বাঙ্গে পোষাক নেই তারও, চোখদুটো টকটকে লাল। সম্ভবত গাঁজা খেয়ে এসেছে। গাঁজাখোরদের চোখ লাল টুকটুকে হয় বলে শাহাবুজ্জামান শুনেছেন।

গাঁজাখোরদের মতো চেহারার ছেলেটা কাছাকাছি এসে তীব্র গলায় বলল, “আশ্বাস দিয়ে কি আমরা হোল করবো, স্যার? বাজে না বকে অফিসে চলে যান। আপনারা আমাদের রক্তই চেয়েছেন তো? দিচ্ছি আমরা রক্ত। আপনার হোলের আলাপ এখানে করবেন না।”

গাঁজাখোরটাকে তখনই চিনতে পারলেন শাহাবুজ্জামান। এই ছেলেটা লোকাল। স্থানীয় ছেলেদের একজন, যারা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে। স্থানীয় ভাষায় ‘হোল’ একটি নোংরা গালি হিসেবে পরিচিত। তিনি হোল শব্দের অর্থও জানেন। এর অর্থ হলো পুরুষাঙ্গ। অপমানে প্রফেসরের কান ঝাঁ ঝাঁ করতে শুরু করলো।

তাদের পরিচিত ছাত্ররা আজ যেন রণমূর্তি ধারণ করেছে। পয়ত্রিশ ক্রেডিট সিস্টেম বাতিল করাটাকে তারা নিজেদের অধিকার বলে চিনে নিয়েছে। অথচ সাত দিন ধরে অবরুদ্ধ হয়েও তাদের সাথে কোনো ধরণের নেগোশিয়েশন করছে না অবরুদ্ধ শিক্ষকগণ। তারা হয়তো ভেবেছেন গত চল্লিশ বছরের মতো এক্ষেত্রেও ছাত্রদের মতামতকে পাত্তা না দিয়ে পার পেয়ে যাওয়া চলবে। কিন্তু বাস্তবিক ফলাফল হচ্ছে উল্টোটা। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ছাত্রদের মেজাজ উত্তরোত্তর খারাপ হচ্ছে। থেকে থেকে স্লোগান তারা প্রথম দিন থেকেই দিচ্ছিলো। সময়ের সাথে সেই স্লোগানে যুদ্ধংদেহী ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝে মাঝে অশ্লীল স্লোগানও শোনা যাচ্ছে। শাহাবুজ্জামানকে অ্যাড বিল্ডিংয়ের সিঁড়িতে দেখে দূর থেকে এক স্লোগানরত দল চেঁচিয়ে বলল :

সাবু স্যাররে নিচে ফেলে
পুটকি মারো তালে তালে

শাহাবুজ্জামান গলার কাছে বমির স্বাদ পেলেন। মনে হচ্ছে এবার তিনি অজ্ঞান হয়ে যাবেন, বন বন করে ঘুরছে মাথা। তার মধ্যেই তিনি জোর করে পা টেনে টেনে দোতলার দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। ভাইস চ্যান্সেলর স্যারকে বলতে হবে। এখনই পেপার সাইন করিয়ে আন্দোলন থামানোর জন্য বলতে হবে।

আর বেশিক্ষণ এদের অপেক্ষা করিয়ে রাখলে এরা হয়তো গায়ে হাত তুলতেও পিছুপা হবে না। দোতলায় উঠে তিনি শুনতে পেলেন নিচে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া একজন মাইক হাতে দাঁড়িয়ে পড়েছে। ভরাট গলায় সে বলতে শুরু করলো

“আমার ভাইয়েরা, আমার ছাত্রভাইয়েরা! আজ সেই দিন। আজ আমরা ছাত্ররা আরও একবার প্রমাণ করে দেবো অধিকার বঞ্চিত করলে আমরা অধিকার ঠিক ঠিক আদায় করে নিতে পারি। আমাদের পূর্বসূরিরা চুপ করে সহ্য করে গেছে। এই প্রশাসনের যন্ত্রণা, অত্যাচারের স্টিম রোলার তারা বুকে পেতে নিছে। আমরা সেই অত্যাচার সহ্য করবো না। প্রয়োজনে প্রতিটা ইট পাথর খুলে নিবো, অধিকারে ছাড় দেবো না। আজ এই কর্মচারী, এই কর্মকর্তা, এই শিক্ষকমণ্ডলী এই ক্যাম্পাসে কাদের জন্য আছে? ভাইসব, তারা যদিও প্রতিটা উপলক্ষ্যে আমাদের লাথি মারে, আমাদের অধিকার খর্ব করে, আমাদের অপদার্থ হিসেবে প্রমাণের জন্য ব্যস্ততা দেখায় অথচ তারা এইখানে আছে আমাদের জন্য! (নেতার গলার স্বর আরও উঁচু স্কেলে উঠলো) ভাইয়েরা, তাদের সরকার বেতন দেয় আমাদের জন্য! আজ এই ক্যাম্পাসে একটা ছাত্র না থাকলে, একটা কর্মচারিও থাকবে না ভাই। একজন শিক্ষকেরও চাকরি থাকবে না। আমাদের জন্য তারা ভাইসব, তাদের জন্য আমরা না। আমাদের মধ্যে সম্ভাবনা আছে, সেই সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলার মহান দায়িত্ব দিয়ে মাননীয় সরকার তাদের এখানে চাকরি দিয়ে পাঠাইছে, আর তারা আজ চুরিচামারি করে উপশহরে বিল্ডিং তুলতেছে। আমাদের রিসার্চের টাকা মাইরা খাইতাছে ভাই, আমাদের প্রাইজমানির টাকা মাইরা খায়, উচ্চশিক্ষার প্রজেক্ট থেকে একশটা ফোর-কে টিভি কেনা হইলো কিন্তু অ্যাকাডেমিক রিসার্চ আমাদের নিজের পকেট থেকে করা লাগে কেন? ওই সময় টাকা যায় কোথায়? ভাই আমার, আমরা কি জানি না টাকাগুলা যাই কই? টিভিগুলা যায় কই? এই অন্যায়ের নিষ্পত্তি হইবে আর এখনই হইবে। আজই হইবে

শাহাবুজ্জামান আর শুনতে পেলেন না। তাকে ছাত্রদের এক উৎসাহী দল ভিসি স্যারের দরজার সামনে পেয়ে ভেতরে ঢোকার পথ খালি করে দিয়েছে। তিনি ঢুকে পড়তেই কয়েকজন দ্রুত দরজায় হেলান দিয়ে দরজা অবরুদ্ধ করে ফেললো।

শাহাবুজ্জামান অনেক কিছু বলতে চাইছিলেন, কিন্তু কিছুই বলতে পারলেন না। বরং হড় হড় করে ভাইস চ্যান্সেলরের গায়ে বমি করে দিলেন।

*

শুটিং রেঞ্জে কানে হেডফোন পরে চোখের পাতা না ফেলে একটার পর একটা গুলি ছুঁড়ে যাচ্ছে স্টেট ইউনিভার্সিটির দু’জন ছাত্র। ক্যাম্পাসের বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যেন তাদের কোনো মাথাব্যথাই নেই। জোড়া পিস্তলের গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে রেঞ্জের ভেতরটা, তবে শুটারদের চোখের পাতা পড়ছে না।

নারকীয় লক্ষ্যভেদ অনুশীলন চলছে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। তোফায়েলের আইডিয়ায় অনেকদিন পর আবারও রেঞ্জে ফিরে এসেছে ওরা দুইজন। সেই প্রথম বর্ষে একসঙ্গে এই রেঞ্জেই শুরু করেছিলো। ছাত্র সংগঠন থেকে রেঞ্জে শুটিং এক্সপেরিয়েন্স রাখায় উৎসাহ দেওয়া হয়। হাজার হোক, ছাত্র রাজনীতি যারা করে তাদের একটা অংশকেই মূলধারার দলটি রাস্তার লেঠেল হিসেবে কাজে লাগাতে ভালোবাসে। পিস্তলে হাত পাকা থাকা রাজনীতির মাঠে কোনো ডিসক্রেডিট নয়, এটা বরং কৃতিত্বের পরিচায়ক সেইসূত্রে তোফায়েল আর রেদোয়ান উভয়েই কীর্তিমান। আর কে না জানে, কীর্তিমানের মৃত্যু নাই।

আধ মাতাল অবস্থায় এসব যুক্তি দেখিয়ে বন্ধুকে টেনে রেঞ্জে নিয়ে এসেছে তোফায়েল। এই মুহূর্তে প্র্যাকটিস শেষে ওরা বিয়ারের কেসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ সদস্যদের জন্য রেঞ্জে বিয়ার পানের অনুমতি নেই। তবে রফিকের রেঞ্জে তোফায়েল-রেদোয়ানের জন্য সব পছন্দই উন্মুক্ত। বিয়ারের বোতল খোলার সঙ্গে সঙ্গেই ওদের রেজাল্ট চলে এলো।

“একশ তেইশ দশমিক আট।” ফলাফলে সন্তুষ্টির অভাবেই অর্ধেক বোতল সাবড়ে দিলো রেদোয়ান।

“একশ একুশ দশমিক পাঁচ।” বড় একটা ঢোক গিললো তোফায়েলও।

“খানকিটা আর ফোন করেছিলো?”

“ফোন করেনি। ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছে।”

বিয়ারের বোতলে আরেকটা লম্বা চুমুক দিলো রেদোয়ান, “তারপর?”

“ব্ল্যাকমেইলাররা যা করে, তাই করেছে। একটা নির্দিষ্ট মূল্য দাবি করেছে।”

“কতো টাকা?”

মাথা নাড়লো তোফায়েল, “টাকার ব্যাপার এটা না। আমাদের আগেই বোঝা উচিত ছিল। খানকিটা ঐ কার্ডটা চায়।”

“ওইটা?” চিন্তায় পড়ে গেলো রেদোয়ান, “এটা কি তার নিজেরই নাকি?”

“বুঝতে পারছি না। সম্ভাবনা আছে। নিজের না হলে সে এটা দাবি করবে কেন?”

বোতলটা খালি করে কেস থেকে আরোও দুটো বোতল বের করে আনলো রেদোয়ান। একটা রাখলো তোফায়েলের সামনে।

“তাহলে অবশ্য অনেক কিছুই সেন্স মেক করে। ঐ রাতে সে ক্যামেরা নিয়ে অন্ধকারে বসেও থাকতে পারে। এটা অস্বাভাবিক হচ্ছে না আর। হয়তো কার্ডটার জন্য তোকে বা আমাকে সে অনেকদিন ধরেই টার্গেট করেছে। পিছু নিয়েছে নিয়মিত। আর আমাদের ফলো করে সবাইকে সে ওখানে পেয়ে গেছে। শামসের সাথে ডিল করতে দেখেছে। ফলো করার জন্যই যেহেতু বের হয়েছে, ক্যামেরাও ছিল সঙ্গে। এই সুযোগে অনেকগুলো ছবি নিয়েছে। তারপর অপেক্ষা করেছে কখন পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসবে। এবং তারপর সে আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে। এখন কার্ডটা না দিলে সে ছবি ফাঁস করে দেবে।”

মাথা দোলালো তোফায়েল, “এমনটা হলে আসলেই সবকিছুর অর্থ পাওয়া যাচ্ছে। ওই রাতের মেয়েটাকে কি মনে আছে তোর?”

না-বোধক ইঙ্গিত দিলো রেদোয়ান, “কয়টা মেয়েকে মনে রেখেছিস তুই? আমিও রাখিনি। ভয়েস মেসেজটা শোনা।”

মোবাইল বের করে কাঠের টেবিলে যত্ন করে রাখলো তোফায়েল। সেভড মেসেজ থেকে ভয়েস মেসেজ প্লে করে দিলো। একটা মেয়ের কণ্ঠ গড়গড় করে কথা বলে যাচ্ছে, যেন স্ক্রিপ্ট দেখে পড়ছে সে। অথচ ভঙ্গিটার মধ্যে এমন কিছু আছে যা নিশ্চিত করে সামনে কোনো কাগজ রেখে সে মেসেজ পড়ছে না। বরং অনেকদিন ধরেই এই কথাটা বলার জন্য যেন অপেক্ষায় ছিল মেয়েটি, মাথার ভেতর অসংখ্যবার রিহার্সাল করেছে। অবশেষে সুযোগ পেয়েছে বলার।

“ছবিগুলো ফেরত চাও? বিনিময়ে মূল্য তো চুকাতেই হবে। মুফতে ছবি পাওয়ার আশা নিশ্চয় তুমি করোনি, তাই না? বেশি কিছু দাবি নেই। শামসের কাছ থেকে যেটা আদায় করতে চেয়েছিলে, তাই আমার চাওয়া। ফিরিয়ে দাও ওটা, ছবিগুলো তোমার হয়ে যাবে।”

টেবিলের কাঠে আঙুল দিয়ে টোকা দিলো রেদোয়ান। যেন বিবেচনা করছে মেসেজটা। মাথা চুলকে নতুন বোতলটা খুললো সে।”আমার ধারণা ছিল ওদের চেহারা যেমন আমাদের মনে থাকে না, আমাদের চেহারাও ওদের মনে থাকবে না। খুঁজে বাইর কইরা ফেললো কি করে?”

“সব সময় এভাবে দুনিয়া চলে না। তাছাড়া আমাদের কাজ ওদের অনেকের পছন্দ ছিল না। আরে মাগি, এনজয় না করলে পার্টিতে কি? এসব অবশ্য ওদের বলে লাভ নাই। এসব খানকিরা পারে শুধু পোঁদ মারাতে। পরে একটা ফ্যাকড়া বাঁধিয়ে দেবে। এই খানকি যেমনটা বাঁধালো।”

আবারও অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ বিয়ার পান করলো ওরা। রাজনৈতিক চাল হিসেবে এই ব্ল্যাকমেইলকে দেখার সম্ভাবনা কমে আসছে বলে স্বস্তিবোধ করবে, নাকি তাদেরই শিকার আজ শিকারীর ভূমিকায় নেমে গেছে উপলব্ধি থেকে শঙ্কিত হবে তোফায়েল বুঝতে পারছে না। তবে গত কয়েকদিনের টানা মানসিক চাপ গেছে। আজকেই এই চাপ থেকে বের হতে হবে।

রেদোয়ানের থেকে বটল ওপেনারটা নিয়ে নিলো সে, “শোন, আজকের জন্য এসব বালছাল ভাবা বাদ দে। এনাফ প্যাড়া খাইলাম গত কয়েকদিনে। প্যাড়া খাইতে তোরে আজ রেঞ্জে আনি নাই।”

“তাহলে?”

“প্রচুর চাপে ছিলাম। এখন একটা দিন চিল করার অধিকার আমাদের পাওয়া উচিত!”

“বাইরে এক খানকি তোর হোগামারার জন্য এভিডেন্স নিয়ে ঘুরতেছে। এটা ফূর্তিবাজির সময় না।”

“ফূর্তিবাজির সময় কোনটা আমাকে বুঝতে দে। আজকে তোকে যে শুধু রেঞ্জে এনেছি তাই না, মাউরা ইউসুফের বারেও নিয়ে যাবো। শেষ কবে গিয়েছিলাম তোর মনে আছে? থাকার তো কথা না। কয়েক যুগ পার হয়ে গেছে মনে হয়।”

কথাটার মাঝে সত্যতা আছে। মাউরা ইউসুফের বারটা তাদের কাছে নেশার মতো। গত দুই বছর ধরে দীর্ঘ কোনো বিরতি ছাড়াই ওরা সেখানে গিয়েছে। নেশার বস্তুর অভাব ওখানে নেই, ভাগ্য ভালো হলে জুটে যায় নারীদেহ। এই নেশা থেকে বের হওয়ার ইচ্ছে ওদের কারও নেই। রেদোয়ান আর তেমন আপত্তি করতে পারলো না।

খালি বোতলগুলো সরিয়ে রাখলো ওরা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *