অধ্যায় ২৫
মুহিব-শামীমের মধ্যে প্রতিযোগিতার বিষয়টা এর আগে কখনও আসেনি। তবে এই মুহূর্তে তাদের কেউ দেখে ফেললে ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারবে না। নাক বরাবর তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে দৌড়াচ্ছে তারা, একে অন্যকে পিছিয়ে দেওয়ার প্রয়াসে পা থেকে নিংড়ে বের করছে সর্বোচ্চ শক্তি। তাদের সামনে পড়ে গেছিলো এক পিচ্চি টোকাই, সভয়ে গতিপথ থেকে সরে গিয়ে নিজের প্রাণটুকু বাঁচালো সে। মাথায় মুড়ি নিয়ে যাচ্ছিলো হকার, আরেকটু হলে মুহিবের সাথে সরাসরি সংঘর্ষ বেঁধে যেতো, বস্তা পড়ে গিয়ে তুলকালাম লেগে যেতো নিঃসন্দেহে। শেষ মুহূর্তে চরকির মতো পাক খেয়ে তাকে এড়িয়ে গেলো সে, তারপর আগের গতি আর উদ্যম নিয়েই শামীমের পিছু নিলো।
“ঐ মিয়ারা দেইখা চলতে পারেন না…” মুড়িওয়ালা শুরু করেছিলো, তার গলা ঢাকা পড়ে গেলো ট্রেনের বিকট হুইসেলে।
“ফাক! মিস…” এবার হতাশায় চিৎকার করলো শামীম।
প্রায় পূর্ণগতি পেয়েছে এখন ট্রেন। প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে প্রায় বেরিয়ে গেছে সর্পবাহন, আর ক’টি কামরা বাকি। দমের সাথে ফুরিয়ে আসছে সামনের প্ল্যাটফর্ম। সাধারণ শোভন কামরাগুলো অনেক সামনে, বেরিয়ে গেছে এরই মধ্যে। ওদের ধরার প্রশ্নই আসে না। এই প্রান্তে ছিল কেবিনগুলো। দরজা ভেতর থেকে লাগানো থাকে এদের, যেহেতু প্রায়সময়ই এরা হয়ে থাকে বুকড। সুতরাং ধরে ঝুলে উঠে পড়ার কায়দা নেই।
মুহিব হাল না ছেড়ে এখনও ছুটছে। গত কয়েক মাস ধরে চুল কাটা হয় না, ঘামে ভেজা কেশদল বাতাসের ধাক্কায় উড়ে এসে ওরই চোখে বার বার খোঁচা দিচ্ছে। বিরক্তির সাথে ঘাড় ঝাঁকিয়ে চুলগুলোর ওড়ার পথ পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করলো অযথাই, শামীমকে পিছিয়ে ফেলেছে এরই মধ্যে।
শব্দ করে শেষ কেবিনের দরজাটা খুলে গেলো এ সময়। পরিচিত একটা মুখ বেরিয়ে এলো সেখান থেকে, “কুইক, মি. মুহিব। মি. শামীম।”
বিস্মিত হওয়ার অবকাশ নেই। বিরাট এক লাফের সাহায্যে কেবিনের পা–দানিতে চড়ে বসলো মুহিব। কাঁধের ব্যাগটা খুলে ভেতরে ছুঁড়ে দিয়েছে। হাতটা মুক্ত হয়ে আসতেই শামীমের দিকে বাড়িয়ে ধরলো সেটা। বন্ধুকে টেনে ভেতরে নিয়ে এলো। কেবিনের নিরাপদ মেঝেতে ধপ করে বসে পা দিয়ে দরজাটা আবারও লাগিয়ে দিলো তারপর। সশব্দে হাঁফাচ্ছে।
“ব্যাড প্র্যাকটিস। ভেরি ব্যাড প্র্যাকটিস।” হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন প্রফেসর হাকারবিন, “শেষ মুহূর্তে ট্রেনের পেছনে ধাওয়া করবেন না।”
“সরি, মি. রবিন।” দম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল শামীম, “আপনিও ঢাকায় যাচ্ছেন মনে হচ্ছে।”
“হুঁ। আপনাদের ঐ বন্ধুর ব্যাপারে একটা মিটিং করার চেষ্টা করছি। আইসোটোপ গ্রুপের নাম শুনেছেন তো? ওদের চিফ এক্সিকিউটিভের সঙ্গে আরকি। দেখা যাক।” একটা পানির বোতল বের করে ওদের দিকে বাড়িয়ে ধরলেন তিনি, “কথা পরে বলা যাবে। খানিক বিশ্রাম করুন। এভাবে ছুটে আসার পর জোরে পানি খাবেন না। ছোট ছোট চুমুকে খান।”
শেষ কথাটা মুহিবকে উদ্দেশ্য করে বলা, তবে ততোক্ষণে ফ্যাসাদ যা বাঁধানোর বাঁধিয়ে ফেলেছে মুহিব। গলায় পানি আটকে খক খক করে কাশছে এখন। সুযোগটা নিয়ে শামীম বোতলটা একরকম ছিনিয়ে নিলো। দেখে শেখার দলে সে, কাজেই নিরাপদে পান করলো পানিটুকু।
“আমরা যাচ্ছি একই উদ্দেশ্যে। লিটুর জন্য আরেকদফা ক্যাম্পেইন হবে আমাদের। বসুন্ধরা সিটির সামনে আজ। যমুনা ফিউচার পার্কে কাল। আমরা আশা করছি বড় একটা অ্যামাউন্ট উঠে আসবে এ দুটো জায়গা থেকে।
“আপনারা মাত্র দু’জন কেন?”
“বাকিরা আমাদের মতো দেরি করেনি।” মুখ গোমড়া করে বলল মুহিব। কাশি থেমেছে তার।
“আশা করি, এই দৌড়ঝাঁপ কাজে আসবে। আশা করি লিটুর জ্ঞান ফিরবে।” মুহিবেরর কাঁধ হাল্কা চাপড়ে দিলো শামীম, হাত বাড়িয়ে দিলো তার দিকে, “ওঠ।”
শামীমের হাত ধরে মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালো মুহিব। হাত দিয়ে প্যান্টের পেছন থেকে বালি ঝাড়লো। বাংকে গিয়ে বসলো ওরা, মুখোমুখি হাকারবিন বাংকের ওপর লাগেজ ব্যাগ। তার ওপর সিগারেটের প্যাকেট চোখ এড়ালো না মুহিবের। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভাবলো, বাড়তি চাপ তাকে কিভাবে সিগারেটের ওপর প্রতিদিন আগের থেকেও বেশি আকৃষ্ট করে তুলছে। নাকি খানিকটা দায় তার নিজেরও আছে? সব দায়িত্ব দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষক আর কর্মচারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়াটা তার একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়নি তো? দ্বিধান্বিত মুহিব বিষয়টা মাথা থেকে মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলো। প্রিয় শিক্ষকের মুখের দিকে তাকালো সরাসরি। গড়পরতার হিসেবে প্রফেসর রবিনের বয়স এমন বেশি কিছু না। তবে ঘন ঘন আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হোক আর অত্যাধিক ধূম্র কিংবা মদ্যপানের কারণেই হোক, মুখে অনেকগুলো বলিরেখা পড়ে গেছে ভদ্রলোকের। সার্বক্ষণিক ক্লান্তির ছাপ সেখানে যেন অনেকদিন ঘুমাতে পারেননি ঠিকমতো।
“থ্যাংক ইউ, স্যার। আপনি যথেষ্টরও বেশি করছেন লিটুর জন্য।” সামনাসামনি এই কথাটা বলার ইচ্ছে ওর অনেকদিন ধরেই ছিল।
“আমার ভার্সিটির ছেলে ডেডলি ডিজিজে আইসিইউ পর্যন্ত চলে যাবে, আর আমি চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো? মসজিদে গিয়ে দোয়া করে ভাববো দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে? তেমনটা তো নয়। এটা আমার দায়িত্ব। ধন্যবাদ জানানোর মতো বিষয় না এগুলো। বরং কাজটা না করলে নিন্দা জানাতে পারতে।”
প্রফেসর কাদের ওপর রেগে আছেন তা ওরা জানে। এই বিষয় নিয়ে কথা বাড়ালো না আর। যাদের উদ্দেশ্য করে কথাটা বললেন তিনি, তারাও যেহেতু সম্পর্কে ওদের শিক্ষক। আর তাদের নিয়ে আলোচনা করার ফলাফল কি হতে পারে তা শাহাবুজ্জামানরা গত চল্লিশ বছর ধরে খুব ভালো মতোই স্পষ্ট করে রেখেছেন।
ওদের মুখের দিকে তাকালেন প্রফেসর, “ইটস ওকে। এখানে কারও বদগোমারি করতে চাইনি। সরি অ্যাবাউট দ্যাট। কেবল আশা করেছিলাম যথেষ্ট সাপোর্ট পাবো টিচার্স কমিউনিটি থেকে।”
একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেললেন তিনি। একহাতে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে চেপে সেই হাতেই লাইটার ধরানো। চুপচাপ ধোঁয়া ছাড়লেন কিছুক্ষণ। শলাকার মাঝে গিয়ে খেয়াল করলেন সামনের দুই শ্রোতাকে এখনও বেশ বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে।
“না দিকগে।” সখেদে বললেন তিনি, “ওদের জন্য ছেলেটার চিকিৎসার খরচ আটকে থাকবে না কোনোদিনও। স্ট্যাটাসে বড় হলেই বড় মন হয়ে যায় না কারও।”
কোন বিষয়ে কথা হচ্ছে এবার, তাও ওদের দু’জনের বেশ জানা আছে। কাজেই এবারও মুখ বন্ধ রাখাই উত্তম মনে করলো তারা। শামীম ফস করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেললো। প্রফেসর হাকারবিনের সামনে সিগারেট ধরাতে কোনো নিষেধ নেই। একটাই শর্ত : ক্লাসরুমে সিগারেট ধরানো চলবে না। তা বেশ, ট্রেনের এই কামরা কোনো ক্লাসরুম নয়।
“দুঃখিত। আপনাদের দুশ্চিন্তার বিষয়টা কিছু হলেও বুঝতে পারি। ঐ বিষয়েই কাজ করতে যাচ্ছি আমরা সবাই, ঠিক। তবে যাত্রাকালীন এই পাঁচ–ছয় ঘণ্টা আমরা লিটুর জন্য কিছুই করতে পারবো না। এই সময়টা আমাদের অন্য কিছু নিয়ে ভাবা উচিত। আ চেইঞ্জ অব সাবজেক্ট।”
“চেঞ্জ অব সাবজেক্ট?” চোখ পিটপিট করে জানতে চাইলো মুহিব।
“শিওর থিং। এতে করে যখন আপনারা অ্যাকশনে নামবেন, মাথার ভেতরটা পরিস্কার থাকবে। কারণ এর আগের কয়েকটা ঘণ্টা মস্তিষ্ক ঐ একই বিষয় নিয়ে ব্যস্ত ছিল না। সাময়িক বিশ্রাম বলতে পারেন একে। আমাকে অনেকবার সাহায্য করেছে এমন প্রসঙ্গ পরিবর্তন।”
মাথা দোলালো ওরা। প্রফেসর ভুল কিছু বলেননি। এই মুহূর্তে আলাপচারিতার বিষয় পরিবর্তন তাদের উপকারেই আসতে পারে। শামীমের হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে একটা টান দিলো মুহিব। ধোঁয়ার সঙ্গে জুড়ে দিলো প্রশ্ন, “শামস হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তাহলে ছোটখাটো একটা ইন্টারভিউ হয়ে যেতে পারে। আমি আর শামীম ক্যাম্পাস টোয়েন্টি-ফোর সেভেনের সাথে আছি। প্রশাসন শামস হত্যা নিয়ে এখন কি ভাবছে তা আমাদের জানা দরকার।”
নাক ঝাড়ার মতো একটা শব্দ প্রফেসর মুখ দিয়ে করলেন। তার সঙ্গে জুড়ে দিলেন, “কিছুই ভাবছে না। আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেন, তারা কিছুই করছে না এই ব্যাপারে।”
“পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো আপডেট জানা গেছে?’
কাঁধ ঝাঁকালেন তিনি, “তারা ভিসি স্যারকে কিছু জানায়নি। আমি নিজে একবার থানায় থেমে খোঁজ নিয়েছিলাম। যেই অফিসারের আন্ডারে তদন্ত হচ্ছিলো সে জানালো এখনও তদন্ত চলছে। কিছু পাওয়া গেলে তিনি নিজে থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমার কার্ডও রেখে দিলেন।”
“তাও তো ভালো। অন্তত জানাবে তারা।” শামীম বলল।
বিরক্তি নিয়ে তাকে দেখলেন প্রফেসর, “বুঝতে পারেন নাই? এর অর্থ হলো তারা আর তদন্তই করছে না। আমাকে খেদিয়ে দিলো যেন বার বার ছোঁক ছোঁক করতে না পারি। আমার মনে হয় কেসটা আনসলভড হিসেবে রেখে দিয়েছে তারা। ক্লোজ করে দিয়েছে। অবশ্য এ দেশে থানা-পুলিশ কিভাবে কাজ করে আমার ঠিক জানা নেই। তবে মানুষের কোন আচরণের অর্থ কি তা আমি ঠিক ঠিক বুঝতে পারি।”
থানা থেকে এমনটার বেশি কিছু আশা করেনি মুহিব কিংবা শামীম ও তারা বাড়তি কিছু যোগ করলো না। প্রফেসর হাকারবিন না জানতে পারেন, এই দেশে সরকারি চাকুরেরা নিজেদের দায়িত্ব পালনে কেমন ঢিলে তা ওদের জানা আছে। তা সে খুনিকে ধরার দায়িত্বই হোক কিংবা বোর্ড বৃত্তির কাগজ শিক্ষাবোর্ডে পাঠানোর দায়িত্ব। সবখানেই একই রকম হাল।”করতেই হবে” ধরণের কাজগুলো ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব পালন করবে না এদেশের সরকারি কর্মচারি, কর্মকর্তা। সম্ভবত তোফায়েল রেদোয়ানের কল্যাণে শামস হত্যার তদন্তটা ঠিকমতো না করা হলেই অনেকের জন্য মঙ্গল!
ওদের দিকে পালাক্রমে তাকালেন প্রফেসর, “তোমাদের কথা বলো। সাংবাদিকতা যেহেতু টুকটাক করছো, এই কেসের ব্যাপারে তো বেশ ভালো তথ্য থাকার কথা তোমাদের কাছে। কি কি জানতে পারলে?”
প্রফেসরকে অবিশ্বাস করার কিছু নেই। ওরা অনেকটাই খুলে বলল তাদের। সন্দেহের তীর যে তোফায়েল গ্রুপের দিকে সেটাও বলে দিলো মুহিব। জানালো তূর্ণার সঙ্গে জাকির রহস্যময় আচরণের কথা। জাকির মাথার ততোধিক রহস্যময় ব্যান্ডেজের কথা। এমনকি তূর্ণার ভীতির ব্যাপারেও হাকারবিনকে জানালো ওরা। কেবল চেপে গেলো খুনের সময় ক্রাইম সিনে তার উপস্থিতির কথা।
মুহিব বলে যাচ্ছে, “আমরা স্যার, এটা একটা ফ্যাক্ট হিসেবে জানি যে মার্ডার সিনে তোফায়েল আর রেদোয়ান উপস্থিত ছিল। বিশ্বস্ত এক সোর্স বলেছে ছুরিটা রেদোয়ানই চালিয়েছিলো শামসের গলায়। সঙ্গে সহযোগি ছিল আরও তিন-চারজন। কিন্তু এটা আমরা কাউকে বলতে পারছি না। তাদের ব্যাপারে আপনি জানেন। উপযুক্ত প্রমাণ থাকলেও এই নামগুলোর বিরুদ্ধে কিছু উচ্চারণ করা আমাদের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। সেখানে প্রমাণ ছাড়া আমরা কিভাবে এ নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করি?”
“তোমরা নিশ্চিত করেই জানো কাজটা করেছে কে এবং কিভাবে করেছে?” ওদের দিকে একটা ভ্রু উঁচু করে জানতে চাইলেন প্রফেসর
মুহিবকে মোটেও বিচলিত মনে হলো না। স্থির কণ্ঠেই উত্তর দিলো, “আমাদের একজন আই-উইটনেস আছে।”
তথ্যটা আসলেই নাড়া দিয়ে গেলো প্রফেসরকে, “কি বলো? এই উইটনেস তো খুনিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে দাঁড়াতে পারবে। পুলিশ একটা কেস বিল্ড না করে থাকতে পারবে না তখন আর।”
মাথা নাড়লো শামীম, “উইটনেসের ধারণা তার ওখানে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে জানতে পারলে খুনিরা তাকেও গুম করে ফেলবে। যাদের দিকে আমরা ইঙ্গিত দিচ্ছি তারা এমন কিছু করার ক্ষমতা রাখে। তা যদি নাও করে, তার একার এক সাক্ষ্য বাংলাদেশের আদালত পর্যন্ত পৌছাবে কি না কে জানে। অযথা জীবনের ঝুঁকি নিতে কে চায় বলুন?”
“আমি বলবো তোমাদের ঐ সাক্ষী একজন কাপুরুষ।” আরেকটা সিগারেট একই কায়দায় ধরিয়ে বললেন হাকারবিন, “নিজের চামড়া বাঁচাতে একটা মানুষকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করছে।”
এমনিতে প্রফেসর রবিনকে সে পছন্দই করে, তবে এই বিশেষ মন্তব্যের পর মুহিবেরও মাথার ভেতরটা জ্বলে উঠলো প্রচণ্ড রাগে। ওর ইচ্ছে হলো প্রফেসরকে বলে নিজে উপস্থিত না থেকে অনেক কিছুই বলা যায়। দূর থেকে দাঁড়িয়ে আরেকজনকে বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উৎসাহ সহজেই দেওয়া যায়। পারলে এসে দাঁড়ান না আমার জায়গায়!
তবে এসব কিছু বলল না সে, বরং স্বাভাবিক মুখে কথার কথা বলার ভঙ্গিতে কেবল বলল, “কারণ, হয়তো সে জানে কোনো কারণে সে ফেঁসে গেলে অন্য কেউ নিজের চামড়া বাঁচাতে তাকেও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করবে।”
একটা হাত তুলে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন প্রফেসর, “আমি বলছি না নিজের জীবন দিয়ে দিতে।”
কিছুক্ষণ চুপচাপ ধূমপান করলো গুরু-শিষ্য। কামরায় প্রচ্ছন্ন এক শত্রুভাব সৃষ্টি হয়েছে। শামীম এ বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ নয়, তারপরও ওর মনে হলো মুহিবের আচরণ কিছুটা পাল্টে গেছে। প্রফেসরের শেষ কথাটা তার জন্য অপমানসূচক। তবে মুহিবের এমন প্রতিক্রিয়া দেখানোটা ভুল বলেই মনে করলো শামীম। প্রফেসর কি খুব সহজেই ধারণা করে ফেলবেন না সেই ‘আই-উইটনেস’টি কে হতে পারে? গলা খাকারি দিয়ে প্রসঙ্গ পরিবর্তনের চেষ্টা করছিলো সে, তার আগেই মুখ খুললেন প্রফেসর।
“তাহলে, আপনাদের পরবর্তি পদক্ষেপ কি? এই খুনির ব্যাপারে আর কে কে জানে?”
একে অন্যের দিকে তাকালো ওরা। তারপর মাথা নাড়লো মুহিব, “লিটু জানতো। সে এখন হাসপাতালে। ঐ প্রত্যক্ষদর্শি ছাড়া আমরাই শেষ দু’জন যারা এই ব্যাপারে জানি।”
“সেই প্রত্যক্ষদর্শি কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আপনাদের মিথ্যেও বলতে পারে।”
মাথা নাড়লো মুহিব, “আমার তা মনে হয় না। সে যথেষ্টই প্রভাবিত করতে পেরেছে আমাদের। বরাবর ওখানে উপস্থিত না থাকলে কারও পক্ষে এমনটা বিস্তারিত বলা সম্ভব হতো না।”
“অথচ আপনাদের সে বলেছে। ফ্রেন্ড?”
মাথা দোলালো শামীম, “অবশ্যই। নইলে বলবে কেন?”
“অর্থাৎ আপনারা এমন বড় একটা বিষয়ও গোপন রাখতে পেরেছেন।” খানিক শ্রদ্ধা নিয়ে তাদের দেখলেন তিনি, “ভাববেন না-আপনাদের এই কথাগুলো আমার কাছেও গোপন থাকবে। আপনাদের বান্ধবি, মিস ইলোরা এ বিষয়ে কতোটা জানে?”
মাথা নাড়লো মুহিব, “তার সঙ্গে তোফায়েলের প্রেমের সম্পর্ক আছে। এসব নিয়ে তাকে আমরা কিছু বলতে পারতাম না। তাকে আমরা অন্ধকারে রেখেছি।”
“এর আরেকটা অর্থ কিন্তু দাঁড়াচ্ছে। আপনারা ছাড়া আর কেউ যেহেতু জানে না, খুনিকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আপনাদেরই কাজ করতে হবে। আমি যে কোনো ধরণের সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি। শামস হত্যার বিচার আমিও চাই।”
“ধন্যবাদ, স্যার।” মন থেকেই বলল মুহিব, একটু আগে প্রফেসরের ওপর যে ক্রোধ অনুভব করছিলো তা সাহায্য প্রস্তাবনার সঙ্গে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে।”আপনাকে অবশ্যই জানাবো আমরা। আপনার সাহায্য অনেকটাই উপকারে আসবে আমাদের।”
“আমি কি সেই প্রত্যক্ষদর্শির সঙ্গে কথা বলতে পারি?” একটা ভ্রু উঁচু করে জানতে চাইলেন হাকারবিন, “কথা দিচ্ছি তার পরিচয় গোপন রাখবো।”
একে অন্যের দিকে আবারও তাকালো শামীম আর মুহিব। চোখে অস্বস্তি। তারপর মুহিব উত্তর দিলো, “আমাদের আগে তার সঙ্গে কথা বলে দেখতে হবে। যদি রাজি হয়, আপনারা কথা বলবেন। আর সে যদি নিষেধ করে দেয়, তাহলে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে আমাদের। সে নিজের জন্য যেটা নিরাপদ মনে করবে আমাদের সেভাবেই চলতে হবে।”
“ইটস ওকে। আমি বুঝতে পারছি বিষয়টা।”
আবারও কিছুক্ষণ নীরবতা। সেই সঙ্গে ধূমপান চলতে থাকলো। মুহূর্তের জন্য মুহিবের মনে হলো আর কয়েকটি মাস আগেও এমন একটা পরিস্থিতির কথা সে চিন্তা করতে পারতো কি না। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সঙ্গে বসে সিগারেট খাচ্ছে, জীবনের সত্যিকারের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছে! এধরণের সমস্যাগুলো এই শ্রেণির মানুষদের থেকে লুকিয়ে রাখাটাই নিয়ম। শিক্ষক সমাজ ছাত্রদের সমস্যার কথা জেনে ফেললে পরে একটা প্রবল ঝামেলাই লাগিয়ে বসেন, সমাধানে ঠন ঠন। এর পেছনে একটা কারণ হতে পারে শিক্ষকদের ছাত্রজীবন। অধিকাংশ শিক্ষকই নিজেদের ছাত্রজীবনে ঢাউস সব বই পড়েছেন। চোথা মুখস্ত করেছেন। অঙ্ক কষেছেন। ল্যাব, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার এক সপ্তাহ আগেই সামলে ফেলেছেন। নিখুঁত পরীক্ষা দিয়েছেন, উচ্চতর সিজিপিএ নিশ্চিত করেছেন।
কিন্তু এতোকিছুর ভিড়ে লক্ষ্য করেননি পৃথিবী কিভাবে চলে। কেমন আচরণ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অপর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কাছে আশা করে থাকে। অধিকাংশ শিক্ষকের ব্যাপারে মুহিব একটা বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছে, তাদের বয়স আঠাশ হোক আর পঁয়তাল্লিশ এই শিক্ষকগুলোর মানসিক গঠন ষোলো-সতেরো বছরের বাচ্চা একটা ছেলের মতো। বইপত্র থেকে জ্ঞান ধারণ করলেও স্বাভাবিক বুদ্ধির বিকাশ অধিকাংশের হয়নি। কারণ ঐ সময়ের পর থেকে তারা বাস্তব জগত সম্পর্কে এতোটাই অমনোযোগি হয়ে ওঠেন যা তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি একেবারেই খালি করে দেয়। এই দেশে একজন ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট বয়কে ক্রিকেটের মাঠে, চায়ের দোকানের আড্ডায়, লং ট্যুরে দেখা যায়? অনেকক্ষেত্রেই এর উত্তরটা হবে “না!” সম্ভবত পড়াশোনার এই প্রবল প্রতিযোগিতায় এতো সময় বাইরে দিলে প্রথম অবস্থানটা ধরে রাখা সম্ভব হয় না।
আর বাইরে সময় না দিলে একজন মানুষ কি করে বাইরের জগতটা কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে পারবে? অভিজ্ঞতা বাড়বে কি করে? এভাবে চিন্তা করলে মুহিব সাময়িকভাবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে ক্ষমা করে দিতে পারে। তারা অনভিজ্ঞ এবং শিশুতোষ। তারা নানারকম ভুল করতেই পারে। কিন্তু কিছু কিছু অপরাধ ক্ষমা করার মতো বড়ো হৃদয় এখন এতো সহজলভ্য নয়। যেমন রোগির বন্ধুর মুখের ওপর বলে বসা, “তোমাদের ঐ বন্ধু তো বাঁচবে না, টাকা পয়সা তুলে লাভ নাই।” অথবা ক্রিকেটার জাফরভাই।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার জাফরভাই ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। অনিয়মিত ছাত্র হওয়ায় শিক্ষকদের চোখের মণি কখনোও ছিলেন না। ফার্স্ট ইয়ারে যখন পড়েন তখন ফার্স্ট ক্লাস ইত্যাদি খেলেন। এধরণের ক্রিকেটারদের দাম-টাম না দিলেও চলে। দেশে কতো ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটার আছে। সবাইকে পাত্তা দিলে কি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের চলে? সেই জাফরভাই কি করলেন? দুম করে জাতীয় টেস্ট দলে চান্স পেয়ে গেলেন, একেবারে প্লেইং এলিভেনে! তখনও মুহিবরা ক্যাম্পাসে আসেনি, তবে বড় ভাইদের কাছে শুনেছে তৎকালীন ছাত্ররা ভেবেছিলেন এবার হয়তো জাফরভাইয়ের দিকে শিক্ষক-প্রশাসনের দৃষ্টি নমনীয় হয়ে আসবে। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক, মণীষীরা তো আর শুধু শুধু এমনটা বলে যাননি
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টেস্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। ঠিক সেই সময়ই বেরসিকের মতো পড়ে গেলো স্টেট ইউনিভার্সিটির সেমিস্টার ফাইনাল। জাফরভাই একটা দরখাস্ত নিয়ে উপাধ্যক্ষ, বিভাগীয় প্রধান থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেথরের কাছে পর্যন্ত দৌড়ালেন। কেউ জাতীয় টেস্ট দলের একজন ক্রিকেটারের “বিশেষ সেমিস্টার ফাইনাল” নেওয়ার জন্য তেমন কোনো আগ্রহ দেখালেন না। আইসিসির উচিত ছিল স্টেট ইউনিভার্সিটির সেমিস্টার ফাইনালের শিডিউল দেখে টেস্ট ম্যাচ ফেলা, এমন একটা ভাব তখন তাদের চোখেমুখে। মাঝ থেকে বিভাগীয় প্রধান জাফরভাইয়ের সাথে যেমন ব্যবহারটা করলেন তার চোখে পানি এসে গেছিলো প্রায়। মাথা নিচু করে শহর ছেড়েছিলেন জাফরভাই। দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে গেছিলেন খেলতে। স্বভাবতই সেমিস্টার ফাইনালের সময় ‘অনুপস্থিত থাকার কারণে ডাহা ফেল মারলেন জাফরভাই। ভদ্রলোক এর আগে পাঁচটা সেমিস্টার ফাইনাল দিয়েছেন, ফেল কখনও মারেননি। প্র্যাকটিস আর ম্যাচ নিয়ে মাঠে পড়ে থেকেছেন সারা বছর, তবে সেমিস্টার ফাইনালগুলো ঠিকমতোই দিয়েছেন। নিজের সময়ে ল্যাব করতে না পারলে অন্য সেকশনের শিডিউলে গিয়ে সেই ল্যাবটা করে এসেছেন। জোড়াতালি দিয়ে রেজাল্ট করলেও ফেল মারার রেকর্ড তার ছিল না। দেশের বাইরে গিয়ে ফেলটা ঠিক ঠিক মারলেন। সেই সঙ্গে মারলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। সেই ম্যাচে বাগালেন সাত সাতটি উইকেটও। ম্যাচ বাংলাদেশ হারলেও রাতারাতি আঠারো কোটি মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন চলে এলো জাফরভাইয়ের দিকে।
যে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের একটি ছেলেকে ফেল না করিয়ে বিশেষ একটি পরীক্ষা নেওয়ার সৌজন্যটুকু দেখায়নি, তারাই বিশাল এক সংবর্ধনার আয়োজন করে ফেললো। জাফর আহসান প্রত্যাবর্তন সংবর্ধনা। উপাধ্যক্ষ আবেগী গলায় ভাষণ দিলেন। বিভাগীয় প্রধান সবগুলো দাঁত বের করে ক্যামেরার সামনে জাফরভাইকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে পোজ দিলেন। সেই ছবি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পেলো।”স্টেট ইউনিভার্সিটির জাফর” শিরোনামে। যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তার জাতীয় দলে আর খেলা সম্ভব হতো না। ভর্তি পরীক্ষায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়াও জাফরভাইয়ের কৃতিত্ব ছিল না, দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করে, ক্রিকেট খেলার কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অত্যাচার সহ্য করে ভালো পারফর্ম করাও তার কৃতিত্ব ছিল না—সব কৃতিত্ব তাকে প্রতি পদে বাঁধা দেওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিরই।
মাঝ দিয়ে সেমিস্টার ফাইনালে অনুপস্থিত থাকার কারণে জাফরভাই ডাহা ফেল মারলেন।
এই বিভাগীয় প্রধান, উপাধ্যক্ষরা সারাজীবন’সফলতা’র সংজ্ঞাটা তাদের সাদামাটা, অরোমাঞ্চকর পথেই শিখেছেন। আটটার ক্লাসে আটটার সময় গিয়ে ঢোকা, ছয়টা বাজলে পড়তে বসা, ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কর্মকাণ্ডে না জড়ানো। সবকিছু নিয়ম মাফিক করে এসেছেন তারা। নিজেদের জানা পথের বাইরে যে আরও পথ থাকতে পারে তারা তা স্বীকারই করেননি কখনও। জাফরভাই আটটার ক্লাস না করে, পরীক্ষার হলে সময়মতো না ঢুকে, পড়াশোনার জায়গায় খেলাধূলো করে নিজের মনমতো সময়ে পরীক্ষা দিতে চাইবে কেন? এটা তো রীতিমতো স্পর্ধা প্রকাশ! এভাবে ‘সফল’ হওয়া যায় বলে তো তারা কেউ শোনেননি, তাদের সময় তো এমনটা ছিল না। চল্লিশ বছরে এমনটা তো দেখা যায়নি। জাফরভাইয়ের এফ-গ্রেডটা এফ-গ্রেড হয়েই থাকলো। তাকে ব্যাকলগ পরীক্ষা দিয়ে সেই পরীক্ষায় পাশ তুলতে হলো। প্রতিভার ‘কদর’ করতে স্টেট ইউনিভার্সিটি কখনোই পিছিয়ে থাকেনি!
এধরণের ছোটো ছোটো অগণিত ঘটনা আছে। সত্যিকারের প্রতিভাদের হেরে যাওয়ার গল্প। অথচ এধরণের বাই দ্য বুক শিক্ষকরাই নিয়োগ পাচ্ছেন সিজিপিএ-র ভিত্তিতে, বার বার। তাদের জন্য প্রতিদিন কতো প্রতিভারা ঝড়ে যাচ্ছে এই কারাগারগুলোয়। সবাই জাফরভাই হতে পারেন না।
ছোটো ছোটো এমন দুইশ ঘটনা যখন জমে যায়, বাই দ্য বুক শিক্ষকদের প্রতি তখন সাধারণ ছাত্রদের বুকে জমে থাকে শুধুই ঘৃণা। শ্রদ্ধাবোধের ছিটেফোঁটাও তখন আর অবশিষ্ট থাকে না। হাকারবিনেরা তার মধ্যেও শ্রদ্ধা কেড়ে নেন, তবে সবাই হাকারবিনও হতে পারেন না।
প্রফেসর রবিনের প্রশ্নটা চিন্তার জগত থেকে টেনে বের করে আনলো মুহিবকে। আরও একটা সিগারেট ধরিয়েছেন ভদ্রলোক। গোল গোল ফ্রেমের পেছনে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার প্রতিফলন ঘটছে চোখে। তার সামনেটা অনেকটাই ধোঁয়াচ্ছন্ন, সিগারেটের ধোঁয়া। কপালের ভাঁজটা এখন বেশ গভির মনে হচ্ছে। স্পাইক করা চুল অবশ্য সব সময়ের মতোই নিখুঁত
হাকারবিন এক হাতে স্পাইকের কাজটা ঠিকমতো কি করে করেন?
“জি?” থতমত খেয়ে বলতেই হলো মুহিবকে
“জানতে চাইলাম, আপনারা একটা ফাঁদ পাতছেন না কেন? খুনিদের যেহেতু চেনেন, নিখুঁত একটা পরিকল্পনা করতে পারলেই খুনি নিজেই রেসপন্স করবে। এতে করে প্রমাণ হয়ে যাবে কাজটা তারা করেছে। কোর্ট ম্যাটেরিয়াল যোগাড় করে ফেলতে পারলে পুলিশের সাহায্যে নিতে পারবেন। আমি আমার প্রভাব খাটিয়ে একজন জেলা জজের সঙ্গে মিটিংয়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। আদালতে বিষয়টা কিভাবে আনতে হবে তা নিয়ে আপনাদের একটা হেডস-আপ দিতে পারবেন তিনি।”
মাথা দোলালো মুহিব। ফাঁদ পাতার কথা তারা আগেও ভেবেছে। তবে ঠিক কোন পথে যেতে হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ ওরা কখনোই পায়নি। লিটুর অসুস্থতা শামস হত্যার ঘটনাটিকে রাতারাতি দ্বিতীয় প্রায়োরিটিতে নিয়ে গেছে।
প্রফেসরের দিকে তেমন আশাবাদী না হয়েই তাকালো সে, ঠোঁটে চেপে ধরেছে নতুন এক সিগারেট।
“ফাঁদটা কিভাবে পাততে বলছেন?”
একটু সামনে এগিয়ে ছাত্রের সিগারেটে আগুন ধরিয়ে দিলেন প্রফেসর, “ব্ল্যাকমেইল।”