অধ্যায় ২৩
বাস থেকে নামতেই ইলোরার শক্ত আলিঙ্গনে বাঁধা পড়লো মুহিব। আরেকদিনের মতো উচ্ছ্বাসের তীব্রতা সেখানে ছিল না, কেমন মন খারাপ করা এক আলিঙ্গন। ইলোরার পিঠ একবার জড়িয়ে ছেড়ে দিলো মুহিব। ওদের মধ্যে কথা হচ্ছে না, অদ্ভুত এক নীরবতা ধরে রেখেই কাছের একটা খাবারের দোকানে ঢুকে পড়লো মুহিব-ইলোরা। মেনু খুঁটিয়ে দেখে সবচেয়ে কমদামি খাবারটিই অর্ডার করলো।
বান্ধবির দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলো মুহিব। খাবার নিয়ে খুঁতখুঁতে হিসেবে ইলোরার বদনাম আছে। অথচ আজ তাকে দেখে সম্পূর্ণ অন্য কেউ মনে হচ্ছে। মুহিবের ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা। ছয় ঘণ্টার বাস জার্নির পর সামনে পান্তা ভাত দিলেও অমৃত মনে হবে। খাবার শেষ হওয়ার আগে ওরা কেউ একটা শব্দও উচ্চারণ করলো না।
বের হয়ে পাবলিক প্লেসেই একটা সিগারেট ধরালো ইলোরা, “চল তোকে মেস পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি। ঘুম দে একটা। কালকে সকালে বের হতে হবে।”
মাথা দোলালো মুহিব। কোনো প্রতিবাদ ছাড়া একটা রিকশা ঠিক করলো। যাত্রাপথেও প্রায় চুপই থাকলো ওরা। মাঝে একবার মুহিবের উদ্দেশ্যে সিগারেট বাড়িয়ে দিয়েছিলো ইলোরা, এতোটুকুই যোগাযোগ হলো ওদের মাঝে।
লিটু বারডেমের আইসিইউয়ে শুয়ে আছে পনেরোদিন হয়ে গেলো। একরকম রেয়ার এক কন্ডিশন তার। মস্তিষ্কে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। প্রায় আশিভাগ মস্তিষ্কই আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর আচমকাই কার্যকারিতা হারিয়েছে তার সিস্টেম। রাতে আচমকা মুহিবের সামনে আছড়ে পড়ার পেছনে মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ ব্যর্থতাই দায়ি। কিংকর্তব্যবিমূঢ় মুহিব তখনই লিটুর অচেতন, কাঁপতে থাকা দেহটা নিয়ে মেসে ফিরে এসেছিলো। নিচতলায় সিগারেট খেতে থাকা দুই সহপাঠীকে নিয়ে একটা অটো ধরে সরকারি হাসপাতালে ছুটে এসেছিলো ওরা।
রাতের মধ্যেই মফস্বলের সরকারি হাসপাতাল নিজেদের অপারগতা স্বীকার করলো। প্রয়োজনীয় সবগুলো টেস্ট করানোই সম্ভব নয় এখানে। ওরা সরাসরি বারডেম সাজেস্ট করলে কয়েকটা ফোন করে ব্যবস্থা নেয় মুহিব। তারপর সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা। পরদিন বারডেমে এসে পৌছায় শ্রাবন্তী। মুহিব এই মেয়েটিকে শক্ত প্রকৃতির বলে ধারণা করেছিলো, অথচ সেদিন তার চোখমুখ ফুলে একাকার। কান্নার চিহ্ন
ধরা গলায় প্রলাপ বকার মতো বলেছিলো, “দোষ আমার। সব আমার দোষ। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই খুব মাথাব্যথা হতো ওর, কোনোবার ডাক্তার দেখালো না। আমি কেন ধরে নিয়ে গেলাম না!”
শ্রাবন্তীকে কি সান্ত্বনা মুহিব দিয়েছিলো তা এখন ওর মনে নেই। নিঃসন্দেহে শ্রাবন্তীরও মনে নেই সেসব। লিটু ডাক্তার কেন দেখাতো না তা তো ওদের কারও অজানা না। ছয় ভাই আর চার বোনকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসা নিম্নবিত্ত পরিবারের একটা ছেলে কথায় কথায় ডাক্তার দেখাতে পারে না। ডাক্তার দেখানোর চেয়ে বড় ভয় হলো টেস্টের ভয়। এই ওই টেস্ট ডায়াগনোসিসের জন্য দরকার তা কে না জানে? তবে দরকাউকে চেপে রাখার শিক্ষাটি নিম্নবিত্ত বাঙালি পরিবারের সব সদস্য জন্মের পর থেকে পেয়ে এসেছিলো। লিটুও এর কোনো ব্যতিক্রম না।
লিটুর বাবাও পরদিন এসে পৌছান। মুহিবের হাত ধরে বললেন, “বাবা, তোমরার তো অনেক খরচা হয়ি গেল। কয়ডা মাসের মইধ্যি শোধ দিয়া দিবানে। আগে ছাওয়ালটাকে লিয়ে বাড়ি যাই।”
ডাক্তারদের বোঝাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হলো যে রোগিকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। হেলথ সাপোর্ট সরালেই মারা যাবে তার ছেলে, এই ধরণের আজগুবি কথা তো পুরো জীবনেও শোনেননি তিনি। তার বাবাও শুনেছে কি না সন্দেহ! তিনি ছেলেকে নিয়ে বাড়ি যাবেনই। মুহিব শান্তভাবে ভদ্রলোককে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার পর পরই বিপদটা ঠিকমতো উপলব্ধি করতে পারলেন তিনি। কেঁদে ফেললেন ওখানেই।
“তাইলি এইখানেত আমার পুয়াটারে কয়দিন রাখবিনি তেনারা?’
এই প্রশ্নের উত্তর ডাক্তারদের কাছেও ছিল না। সবচেয়ে কাছাকাছি উত্তর, ছয় মাস। মস্তিষ্কের একটা স্টেবল অবস্থার জন্য এরকম একটা সময়ই তাদের দরকার। তারপর অপারেশন করা হবে রোগির।
সঙ্গে সঙ্গেই ওর মাথার ভেতরের ক্যালকুলেটরটা হিসেব শুরু করেছিলো। ছয় মাসে একশ আশি দিন। এক দিন আইসিইউ-য়ে রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন টেস্ট আর মেডিকেশনে চুয়াল্লিশ থেকে চুয়ান্ন হাজার টাকা খরচ হবে বলে এস্টিমেশন দেওয়া হয়েছে। প্রথমদিন অবশ্য সত্তর হাজারের মতো খরচ হয়ে গেছে ওদের, রোগিকে ঢাকায় আনা নেওয়ার খরচসহ। বন্ধুদের সবার সাহায্য নিয়েছে ওরা এই টাকা তুলতে। এখন শোনা যাচ্ছে একশ আশি দিন ধরে গড়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে খরচ হবে লিটুকে কেবল বাঁচিয়ে রাখতে।
একশ আশি দিনে সর্বমোট নব্বই লক্ষ টাকার ধাক্কা!
প্রায় এক কোটি টাকা ছয়মাসের কম সময়ে তুলে ফেলতে হবে, এবং একটি নির্দিষ্ট হারে। কারণ এমন নয় যে প্রতি সপ্তাহ শেষে তাদের সাড়ে তিন লাখ টাকার প্রয়োজন। ওদের ‘প্রতিদিন’ পঞ্চাশ হাজার টাকার প্রয়োজন, অনবরত, অবিরাম, একশ আশিদিনের জন্য।
প্রথম দিন ক্যাম্পেইন হলো স্টেট ইউনিভার্সিটির ভেতর। নিজের ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রিদের প্রত্যেককে বেঁধে দেওয়া হলো এক হাজার টাকা। একদিনে উঠে এলো মাত্র বারো লাখ, কারণ টাকাটা দিলো শতকরা মাত্র পঁচিশ ভাগ ছাত্রছাত্রি। বাকিদের বৃহৎ একটা অংশ নির্বাক রইলো। ক্ষুদ্র একটি দল বলল, তারা এধরণের কাজকে জায়েজ হিসাবে দেখে না। কারণ, বাঁচা মরা আল্লাহর হাতে। টাকা তুললেই একটা ছেলে বেঁচে যাবে এমন মনে করা যেহেতু শিরক, এরকম টাকা তোলাও শিরক। এধরণের পাপ কাজে তারা তো অংশ নেবেই না, বরং অন্যদেরও পরামর্শ দেবে যেন আর কেউ অংশ না নেয়।
একজন দুইজন নয়, পঞ্চাশ-ষাটজন যে এমন ফতোয়ায় বিশ্বাস ও প্রচার করতে পারে তা ওরা এই ঘটনা না দেখলে বিশ্বাসই করতো না। একটা ছেলেকে টাকার অভাবে লাইফ সাপোর্ট থেকে সরিয়ে আনতে হতে পারে, যার অর্থ ঠাণ্ডা মাথায় একজন কাছের বন্ধুকে খুন করা। লাইফ সাপোর্টের বাইরে লিটু একদিনও বাঁচবে না–এমনটা দুটো প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানিয়েছেন। ওদের সার্কেলের একটা ছেলে মরে যাচ্ছে, স্টেট ইউনিভার্সিটির একটা ছেলে মরে যাচ্ছে, সেখানে স্টেট ইউনিভার্সিটিরই আরেক দল ছেলের এমন নির্লজ্জ ফতোয়া শুনে রাগে, দুঃখে, ঘৃণায় বমি চলে এসেছিলো মুহিবের।
গত পনেরোদিনে ওরা অনেক ধরণের মানুষ চিনতে পেরেছে। পাশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক ছাত্রের ফ্রড অপবাদ দেওয়া যেমন সহা করেছে, তেমনই দেখেছে হতদরিদ্র কাউকে লিটুর জন্য এগিয়ে আসতে। তবে একটা ব্যাপার ওদের কাউকেই অবাক করেনি। শিক্ষক সমাজের উদাসীনতা।
প্রফেসর রবিন জান দিয়ে দিচ্ছেন। নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে কথা বলছেন। ডোনেশন আশা করছেন। হাকারবিনের কল্যাণে বাইরের কিছু সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। ভদ্রলোক নিজেই দুই লাখ টাকা দিয়েছেন লিটুর জন্য, তবে ওদের বলেছেন এই খবর যেন বাইরে প্রকাশ না পায়। তবে সবাই তো আর এমন নন, অধিকাংশই এই সমস্যাটিকে স্রেফ লিটু আর তার পরিবারের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
শাহাবুজ্জামানের সঙ্গে ছেলেরা দেখা করতে গিয়েছিলো। শিক্ষকদের জন্য পাঁচ হাজার টাকার চাঁদা ধরা হয়েছে। ফ্যাকাল্টি মেম্বার তো কম না। পনেরো লাখ সহজেই উঠে আসবে যদি অর্ধেকও সহযোগিতা করেন। অথচ শাহাবুজ্জামান, একজন ফুল প্রফেসর, পান চিবুতে চিবুতে বলেছিলেন, “ছেলে তো সিভিলের। আমাদের ডিপার্টমেন্টের কি করার আছে এইখানে?”
ওরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুমূর্ষু ছাত্রকে রক্ষা করার সময় বিভাগের পরিচয় জানা এতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তা ওরা কেউ ধারণা করেনি।
“ব্রেইনের আশিভাগ নষ্ট হয়ে গেছে বললা না? এই ছেলে বাঁচবে না।”
সেখানে শামীমও ছিল। মুঠো শক্ত হয়ে গিয়েছিলো ওর। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কতোখানি দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে মুমূর্ষু রোগির আত্মীয় বা বন্ধুদের সামনে এধরণের একটা বাক্য উচ্চারণ করতে পারে?
গলা তুলেই সেদিন প্রশ্ন করেছিলো শামীম, “আপনি কি এই বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ? নাকি খোদা বলে দাবি করছেন নিজেকে? যদি না করে থাকেন, প্লিজ, কে বাঁচবে কে মরবে তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না।”
তার দিকে সরু চোখে তাকিয়েছিলেন শাহাবুজ্জামান, “তুমি তো মেকানিকালেরই। এই হলো আমাদের ডিপার্টমেন্টের ছেলেদের আচার আচরণের অবস্থা, না? শিক্ষকের সাথে কথা বলা শেখো নাই।”
বাকিদের নিয়ে বের হয়ে এসেছিলো শামীম। তবে দরজার কাছে গিয়ে আরেকবার ঘুরে তাকিয়েছিলো সে। বলেছিলো, “পেপার পাবলিশ থেকে বাইরে হায়ার স্টাডি, সবই তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বানিয়েছেন রসুনের ব্যবসা। একটা ছেলের চিকিৎসার সময়ও সেজন্য ব্যবসা দেখেন। বাঁচলে টাকা দেবেন। বাঁচার সম্ভাবনা না থাকলে দেবেন না। আপনার ছেলের এমনটা হলে নিশ্চয় খরচ বন্ধ করে দিতেন, যেহেতু ছেলেটা বাঁচতো না।”
শাহাবুজ্জামান নিজের বিশাল ডেস্কের পেছন থেকে বলেছিলেন, “ঐ ছেলের ভবিষ্যৎ না ভেবে নিজেরটা ভাবো। তোমার রোল নাম্বার আমার জানা আছে।”
এধরণের শিক্ষকরা নিজেদের মিথ্যে জগতে এতোটা ভালোভাবেই আটকে গেছেন তা ওরা কোনদিনও জানতে পারতো না। একজনের জীবন বা মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও তাঁরা ব্যস্ত নিজেদের ‘আত্মসম্মান’ রক্ষা করতে, কাউকে হুমকি মনে হলে তাকে সিজিপিএ নিয়ে পাল্টা হুমকি দিতে। আজে বাজে বিষয়ের ওপর গবেষণা করে এমন সব ‘নতুন আবিষ্কার’ করতে, যা পৃথিবীর কোনো কাজেই কখনও আসবে না তবে গবেষণার সংখ্যাধিক্যের কারণে একসময় কাঙ্খিত প্রমোশন তাঁরা পেয়ে যাবেন। এদিকে ওদিকে কনফারেন্সে গলার রগ ফুলিয়ে চেঁচাবেন, তবে কনফারেন্স শেষে তাদের ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে মানুষ মুখ টিপে হাসাহাসি করবে। সেসব ব্যর্থতার দায় তারা যতোটা সম্ভব এনে ফেলবেন আন্ডারগ্র্যাড স্টুডেন্টদের ওপর। এতো সীমিত এক গণ্ডির মধ্যে এরা চিন্তা করে এসেছেন গত চল্লিশটা বছর ধরে, মুহিবের ভাষায় এই মানসিকতা হলো “বিয়ন্ড রিপেয়ার।”
,
সবশেষে ওরা ঢুঁ মেরেছিলো জেলার বাইরে। শামীমের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তখন জমা পড়েছে বিশ লাখের মতো। স্টেট ইউনিভার্সিটির ছেলের জন্য যদি স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-ছাত্রই পাল্টা ফতোয়া দাঁড় করায়, সেখানে বিশ লাখ উঠেছে এটাই তো অনেক বড় ব্যাপার। হাকারবিন আশ্বাস দিয়েছেন তিনি একাই বিশ লাখ উঠিয়ে দেবেন। তবে কতোদিনে সেই টাকা উঠবে তা নিয়ে ওদের কোনো স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি তিনি। মাসখানেক লাগবে বলেছেন। এর অর্থ, সংগৃহীত বিশ লাখ এবং হাকারবিনের বিশ লাখ বাদে আরও পঞ্চাশ লাখ টাকা ওদের সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এবং এই টাকাটা সংগ্রহ করতে হবে বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। পথে নামতে হবে, ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে একটি সাহায্যের আবেদন নিয়ে। মুহিব এমন আবেদনকারীদের দেখেছে। রাস্তায় নানারঙা কাগজের বাক্স নিয়ে ঘোরে তারা। মুখে থাকে চিন্তার ঝড়। পথচারীদের ডাকে “ভাইয়া” কিংবা “আপু” বলে। ওদের মধ্যে অনেকে থাকে ভণ্ড। এজন্য পথে পথে বাক্স নিয়ে নেমে আসা মানুষগুলোকে কখনোই সাহায্য করেনি মুহিব। আজ অবশ্য বাস্তবতা খুব কঠোরভাবে তাকে আঘাত করছে, একটা মানুষ কতোটা মরিয়া হয়ে ভিক্ষুকের মতো একটা বাক্স নিয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিটা মানুষের কাছ থেকে টাকা চেয়ে বেড়াতে পারে তা সে বুঝতে পেরেছিলো।
তাই, ঢাকাগামী দলটায় নিজের নাম ভলান্টিয়ার করেছিলো মুহিব। তিন দিনের ট্যুর থেকে পাঁচ লাখ টাকা তুলতে পেরেছিলো ওদের দলটা। সেখান থেকে ফিরে এসেছে প্রবল ক্লান্তি চোখের পাতায় জড়িয়ে। ঢাকায় বিশ্রামের সুযোগ তেমন মেলেনি।
ইলোরা ওর একটা হাত কনুইয়ের ওপর শক্ত করে ধরে রেখেছে রিকশায়। যেন ভয় করছে যে কোনো সময় মুহিব রিকশা থেকে ছিটকে পড়বে! তার ভয়টা একেবারে অমূলক হয়তো নয়। মুহিবের এতো ঘুম পাচ্ছে যে বলার মতো না।
“মনে হয় আরও দশটা দিন চলবে এই টাকায়। ডাক্তাররা নাকি ইন্ডিয়ায় নিয়ে যেতে বলছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের আরও অ্যাক্টিভ হতে হবে।”
“হয়ে যাবে, দোস্ত। তুই এখন এসব নিয়ে ভাবিস না। আমরা দেখছি। শামীমের টিম নড়াইলে গেছে। জাহিদের টিম চট্টগ্রামে কালেক্ট করছে। আমরা মেঘনা আর স্কয়ার গ্রুপ থেকে একটা ডোনেশন আনার চেষ্টা করছি, প্রবাসী স্টেট ইউনিভারসিটির এক্স-স্টুডেন্টরা পেপালে টাকা পাঠাচ্ছে। সবাই চেষ্টা করছে, হয়ে যাবে। তোর পার্টটা তুই করেছিস। ঢাকা থেকে পাঁচ লাখ নিয়ে এসেছিস। গ্রেট জব ইনডিড। তুই এখন রুমে গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিবি।”
ইলোরার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো মুহিব। ঘুমে সে মনে হয় পাগল হয়ে যাবে।