চতুর্থ খণ্ড
2 of 2

কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ২০

২০

এই ধরনের সারারাত্রি চিৎকারের জন্য হলদীকে দোষ দেওয়া যায় না। বেচারার হাঁটুটা একেবারে ফুলে এবং পেকে যেন ঢোল হয়ে উঠেছিল। সারারাত্রি চীৎকার করে ভোরবেলা বুড়ী একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমাদের সাড়া পেয়ে জেগে উঠে আবার চিৎকার শুরু করে দিলে। রথীন দেখতে গেল তার ক্ষতটা, তাতে আতঙ্কিত হয়ে ছোট মেয়ের মত হাউ-মাউ করতে লাগল।

কুইনি তাকে বোঝালে-এমন করে না দিদিয়া। ডাক্তারবাবুকে দেখতে হবে তো। কিন্তু সে-কথা শোনে কে? এবার ঘরের ভিতর ঢুকলেন অন্নপূর্ণা-মা। ধমক দিয়ে বললেন—এই হলদী। কচি খুকি নাকি তুই? অ্যাঁ! ছেলেবেলার সে অভ্যেস তোর দেখছি এখনো যায়নি। চুপ কর।

হলদী অন্নপূর্ণা-মাকে দেখে কেমন হয়ে গেল। সবিস্ময়ে অনেকক্ষণ চেয়ে রইল। এবং চুপ করেই চেয়ে রইল। রথীন হাঁটুর ক্ষতটা বেশ ভাল করেই দেখলে একবার দুবার নাড়ালেও, তবু হিলডা যেন তা খেয়ালই করলে না, সে চেয়ে রইল অন্নপূর্ণা-মায়ের মুখের দিকে।

অন্নপূর্ণা-মা বললেন—পছানতে পারিস?—আঁ? পারছিস না?

হিলডা বললে—মালুম হচ্ছে কি চিনি আপনাকে, লেকিন—

—ঠিক ঠাওর করতে পারছিসনে? না? রায়বাহাদুর হুজুরের আমল মনে পড়ে? অ্যাঁ?

উঠে বসতে চেষ্টা করলে হিলডা। তার ফলে চাড় পেয়ে হাঁটুর ফুলোর যে অংশটা আংশিকভাবে পেকেছিল, তা ফেটে গেল। চিৎকার করে উঠল হিলডা। রথীন বললে—গরম জল করে আনো। এখন ধুয়ে দাও। টিংচার আয়োডিন থাকলে খানিকটা দিয়ে দাও তাতে। তারপর আমি বরং কম্পাউন্ডারকে পাঠিয়ে দেব, সে পরিষ্কার করে দিয়ে ড্রেস করে ব্যান্ডেজ করে দেবে। আমি কুইনিকে বললাম- তুমি যাও কুইনি, রঘুকে বল—সে জল গরম করে দেবে। টিংচার আয়োডিনও থাকতে পারে।

অন্নপূর্ণা-মায়ের মুখের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে হিলডা বললে—পিসি রাণীমাঈ!

—হ্যাঁ। পিসি রাণীমাঈ!

হিলডা বললে—এ হি দেখেন পিসি রাণীমাঈ, আপনের সাদীর সময় হামি আপনেকে নাকের টাপ চেয়েছিলাম, এহি দেখেন—এহি সেই টাপ, হামি আজও খুলে নাই। কুইনিকে বললাম—হামি মরব যখন, তখুন তু খুলিয়া লিস। ইটা খুব দামী পাখল বটে।

—হ্যাঁ, ওটা হীরে। হাত দিয়ে নাড়ছিলাম, ওটা পড়ে গেল বাগানে। খুঁজে পাওয়া গেল না। একবেলা পর তুই ওটা খুঁজে পেয়ে আমাকে ফেরত দিতে এসেছিলি। আমি বলেছিলাম—তুই ওটা নে। ভায়লা বলে সেই মেয়েটা তোকে সঙ্গে করে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল।

—আপনের সব মনে আছে, আপনের সব মনে আছে! ঠোঁটদুটো তাঁর কাঁপতে লাগল। কিছুক্ষণ পর বললে—তব তো আচ্ছা হল পিসি রাণীমাঈ—আপনে বিচার করে দেন। আপনে জানেন। ভায়লাকে নিয়ে গোপাল কলকাতা গেল —।

অন্নপূর্ণা-মা বললেন—হ্যাঁ আমি জানি। আমি শুনলাম দাদা ভায়লার ছেলেকে বাড়ী দিয়ে গিয়েছিলেন। এলিয়ট রোডের বাড়ী। সেই বাড়ী প্রণবেশ্বর কেড়ে নিচ্ছে। আমি শুনেছি।

—হামাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে।

—সেও শুনেছি। চোখে দেখছি। রত্নেশ্বর রায়, ধার্মিক রত্নেশ্বর রায় রায়বাহাদুরের স্বর্গসিংহাসন ওল্টাতে ওল্টাতে পড়ছে মাটিতে তাও দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু তুই ভাবিসনে, আমার ছেলে হাইকোর্টের উকীল, তাকে বলে দেব, সে তোদের হয়ে মামলা করে দেবে হাইকোর্টে। বাড়ী তোদের যাবে কোথায়?

একটু চুপ করে থেকে প্রশ্ন করলেন—এই মেয়েটি কে হয় ভায়লার?

—ভায়লার? ভায়লার বেটা পিড়ুজ, ওই পিড়ুজ সাদী করলে এক আংরেজ ফিরিঙ্গী লেড়কীকে। একটা বেটী পয়দা হল। ওহি বেটী সাদী করলে এক দেশী ক্রীশ্চান মুখার্জিকে। তারই বেটী এই কুইনী।

—ভায়লার বেটার বেটীর বেটী?

—হ্যাঁ!

—হ্যাঁ। তাই দেখলাম। চোখে-মুখে ভায়লার আদল আছে। ভায়লার রঙ ছিল সাদা। এর রঙে কোন্ মুখুজ্জেবাড়ীর রঙের ছোপ ধরেছে। কিন্তু চোখদুটো একরকম—নাক-মুখ তাও মেলে। অঞ্জনা-দিদিকে মনে পড়িয়ে দেয়। চুলগুলোও কোঁকড়া। সেই এক ছাঁচ।

কুইনি দুই হাতে তোয়ালে দিয়ে ধরে ফুটন্ত গরম জলের একটা অ্যালুমিনিয়ামের ডেকচি এনে নামালে।

অন্নপূর্ণা-মা বললেন—ওরে বেটী, একবার মুখ তোল তো, দেখি আর একবার ভাল করে।

একটু অবাক হয়ে গেল কুইনি।

ঠিক অ—। বলে থেমে গেলেন অন্নপূর্ণা-মা। তারপর বললেন—ঠিক তেমনি চোখ, তেমনি চুল। আমার বয়স তখন তো কম নয়। আমার ছয়। দেবুরও ছয়। বউদিদির কোলে একটা মেয়ে হয়ে মারা গেছে। আমার তাকে বেশ মনে পড়ে। কাশী থেকে কীর্তিহাটে আসতাম—থাকতাম, দিনরাত দেবু-আমি ছুটোছুটি করতাম-বউদিদি সামলাতে পারত না। সামলাতো ওই—।

চুপ করে গেলেন। তারপর বললেন-এ বাড়ী যদি কেড়ে নেয় যজ্ঞেশ্বরের ছেলেরা তবে কি বলব তবে? কি বলব?

রথীন বললে-বড়-মা বড়-মা! তুমি উপরে চল। এখানকার ব্যবস্থা সব হচ্ছে, হবে। চল ওপরে চল।

***

উপরে অন্নপূর্ণা-মাকে চেয়ারে বসিয়ে তোলা হল। রথীন আর আমি দুপাশে দুজন উঠছিলাম। হঠাৎ রথীন বললে–রাগলে আর তোমার জ্ঞানগম্যি থাকে না বড়-মা।

অন্নপূর্ণা-মা বললেন—ওরে হারামজাদা, যেখানে আমি রেগে জ্ঞানগম্যি হারাই, সে হল আমার খাস এলাকা। বুঝলি। সেখানে আমি যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন ও-কথা যে বলবে, তার মুখে পোকা পড়বে। তোদের সংসার আমার পাতা, আমার মায়ের আশীর্বাদে আর পিসেমশায় বিমলাকান্ত চাটুজ্জের মূলধনে। বুঝলি। নইলে তোদের মূল মুকুজ্জেবংশের পরিণাম তো দেখছিস চোখে। আর এই এ-পাশে এই দেখ সুরেশ্বর; ওদের এতবড় রায়বাড়ী, এত সম্পত্তি, এত চাল, এত চলন, তার পরিণামও দেখছিস। রায়বাহাদুর রত্নেশ্বর আমার ভাই, লোকে বলে তার মত লোক আর হয় না। ধার্মিক, রায়বংশের শ্রেষ্ঠ পুরুষ, একেবারে কষ্টি পাথরে নিখাদ সোনা! হায়, হায়, হায়। কি বলব? দেখ, তার বংশের পরিণাম দেখ।

***

উপরে মায়ের ঘরে এসে ঘরখানা খানিকটা চোখ বুলিয়ে দেখে বললেন —সুরেশ্বর, রথীন কাল রাজী হয়েছে বিয়ে করতে। বল রে—বল রথীন।—বল, সুরেশ্বরকে কথা দে।

রথীনবাবু বললেন—আমি কথা দিলাম সুরেশ্বরবাবু, অর্চনাকে আমি বিয়ে করব, করব, করব।

আমি বললাম—বড়-মা, তাহলে কখন বিয়েটা হবে? দিন একটা স্থির করে আপনিই দিন। কলকাতা থেকেই বিয়ে দেব—আপনি যেমন বলেছেন। বিয়ের পর কখনো অর্চনাকে কীর্তিহাটে পাঠাতে বলব না। আর জগদীশ্বরকাকার সে সামর্থ্যও নেই। তাঁরা মেয়েকে দেখতে ইচ্ছে হলে এ-বাড়ীতে আসবেন, এসে ইচ্ছে হলে মেয়ে-জামাইকে নেমন্তন্ন করে খাওয়াবেন বা আপনার বাড়ীতে যাবেন। আপনি যা বলেছেন, তাই হবে বড়-মা। আমরা তাই মানব।

অন্নপূর্ণা-মা বললেন-দেখ, কাল তুই গিয়েছিলি, তোকে একরকম ফিরিয়েই দিয়েছিলাম। আমি নই—ওই রথীন ফিরিয়ে দিয়েছিল। ভোরবেলা উঠে এসে বললে-বড়-মা, আমাকে মাপ কর তুমি, ওই মেয়েকেই বিয়ে করব আমি। চল তুমি, সুরেশ্বরবাবুর ওখানে আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে চল—একলা যেতে ঠিক আমার পা উঠছে না। তাই ওকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। ওসব শর্তের কথা যা বলেছিলাম, তা মানবি—ভালই। তবে ওগুলো আমি একরকম রাগ করেই বলেছিলাম রে! শর্ত কাল যেগুলো বলেছিলাম, তার কড়াকড়ি এক রাত্রেই হাল্কা হয়ে গেছে। কিন্তু একটা শর্ত আজকে দিচ্ছি তোকে। বিয়ে হবে, মেয়ে আমি সাজিয়ে দেব। তুই বরাভরণটা দিস। আর এই বাড়ীতে বিয়ে হবে—ফুলশয্যের তত্ত্ব কলকাতায় একটা বড় ব্যাপার, সেটা ভাল করে করিস। কিন্তু এসব ছাড়া কিংবা এসবের উপরে একটা শর্ত আমি তোকে দিচ্ছি সুরেশ্বর। সেটা তোকে মানতে হবে।

—বলুন বড়-মা, কি মানতে হবে।

—ওই যে নীচে যে-মেয়েটিকে দেখে এলাম, কি নাম?

—কুইনি।—

—হ্যাঁ। কুইনি মুখুজ্জে। ওর বাড়ী কেড়ে নিয়েছে কোন্ প্যাচপোঁচে ফেলে যজ্ঞেশ্বরের ছেলেরা। ওকে ওর বাড়ী ফিরিয়ে দিতে হবে। মামলা করলে উদ্ধার হয়তো হবে। নিশ্চয় হবে। সাক্ষী তো আমি আজও বেঁচে রয়েছি। দয়াল চোখে অঞ্জনাকে দেখেনি। কিন্তু অঞ্জনার নাম, তার কাণ্ডকারখানা, তার জন্যে রায়বাহাদুর একটা গোয়ান ছোঁড়াকে কেটে ভাসিয়ে দিলে এসব দয়াল শুনেছে। জানে।

রথীন অবাক হয়ে শুনছিল—মানে ঠিক বুঝতে পারছিল না। আমি আন্দাজ করছিলাম অন্নপূর্ণা-মা কি বলছেন বা বলতে চাচ্ছেন। আমি তার ডায়রীর এখান সেখান পড়েছি, একদিক থেকে আর একদিক পর্যন্ত পড়েছি। বুঝতে আমার কষ্ট হয়নি। তবু এইটুকু বিস্ময়বোধ করছিলাম যে, রায়বাহাদুর রত্নেশ্বর রায় অত্যাচারী প্রজাপীড়ক, জটিলবুদ্ধি, মামলাবাজ আইনানুগত্যের মুখোশে মুখ ঢেকে ন্যায়পরায়ণ সেজে ইস্কুল, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন, অনেক কিছু করেছেন কিন্তু ডায়রীতে মিথ্যা কথা লেখেন নি। মধ্যে মধ্যে কথা বাদ দিয়ে গেছেন মাত্র।

অন্নপূর্ণা-মা বলে যাচ্ছিলেন-লোকের কাছে সত্য গোপন থাকে না। অঞ্জনা ছিল সম্পর্কে আমাদের দিদি, দাদার সমবয়সী, তার বিয়ে হয়েছিল এক বাউন্ডুলের সঙ্গে—

—জানি বড়-মা।

—তুই জানিস? -জানি।

—কি করে জানলি?

—কাগজ ঘেঁটে, রায়বাহাদুরের ডায়রী পড়ে। আপনার বাবার একখানা খাতা আছে—সেখানা পড়ে।

একটু চুপ করে থেকে অন্নপূর্ণা-মা বললেন-তাহলে তো জানিস যে আলফানসো পিদ্রুজ বলে সেই খুনে ফিরিঙ্গীটা অঞ্জনাকে নিয়ে পালিয়েছিল। পালিয়েছিল গোয়ায়। সেখানে অঞ্জনা মারা গেল। অঞ্জনার অসুখের সময় আলফানসো চিঠি লিখেছিল দাদাকে—আমার দাদাকে। দাদা টাকা পাঠিয়েছিলেন হিলডার বাবার হাত দিয়ে। হিলডার তখন জন্ম হয়নি। আমারই বয়স তখন দশ—মনে পড়ছে পিভুজ অঞ্জনার মেয়ে ভায়লেটকে নিয়ে ফিরে এল কীর্তিহাটে। শুনলাম আলফানসো পাগল হয়ে গেছে। পিড়ুজ মেয়েটাকে নিয়ে এসেছে এখানে। দাদার নাকি তাই হুকুম ছিল।

ভায়লেট তখন তিন বছরের। বাংলা একটু-আধটু বুঝতো। হয়তো অঞ্জনা শিখিয়েছিল। ভায়লেটের চোখ ছিল ঠিক অঞ্জনাদিদির মত।

তারপর—

অনেকক্ষণই চুপ করে থেকে অন্নপূর্ণা-মা বললেন—তখন দাদার সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। বিয়ের পর টাকা নিয়ে সম্পত্তির দাবী ছেড়ে দিয়েছি। আমার শ্বশুর আমাকে একরকম ত্যাগ করেছেন। স্বামী প্রতিবাদ করতে পারেন নি। আমি কাশী এসে পিসেমশায়ের মেয়ের মত সংসার পেতে ছেলেকে মানুষ করছি। একদিন খবর শুনলাম, দেবু, দেবেশ্বর, তোর ঠাকুরদা, বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যা করবার চেষ্টা করেছে।

সে এই ভায়লার জন্যে। ভায়লেট পিদ্রুজের জন্যে।

আমি সে-সময় একবার শ্যামনগর এসেছিলাম। দেবুকে দেখবার জন্যে। দাদাকে বলেও এসেছিলাম—এ দেবুর পাপ নয়। এ তোমার পাপের ফল।

***

অন্নপূর্ণা-মা বললেন—দাদা রেগে আগুন হয়ে উঠেছিল। অন্য কেউ হলে তার ঘাড়ে মাথা থাকত না। ধার্মিক দাদা আমাকে খুন করাতেন অন্য লোককে দিয়ে, তারপর যে খুন হল, তার ছেলেদের জমি-জেরাত-টাকা দিতেন। আবার খুন করে যে ফাঁসি যেতো, তার মামলায় টাকা খরচ করতেন। তার ছেলে-মেয়েদেরও টাকাকড়ি দিতেন। ঠাকুরদাস পাল এমনি একটি কথা বেফাঁস করেছিল বলে হিলডার বাবা পিদ্রুজ তাকে খুন করেছিল। সেসব এই ভায়লা মেয়েটাকে নিয়ে।

একটু চুপ করে থেকে বিষণ্ণ হেসে অন্নপুর্ণা-মা বললেন-তবু এমন মানুষ, এমন শক্ত ধার্মিক মানুষ আর হয় না। আমি বললাম—এ তোমার পাপের ফল। দাদা চমকে উঠে বললে কি বললি অন্নপূর্ণা? এতবড় কথা তুই বললি?

তখন ঠাকুরদাসের পালা শেষ হয়ে গিয়েছে সদ্য সদ্য।

আমি বলেছিলাম—তুমি বীরেশ্বর রায়ের ছেলে, আমি মেয়ে। আমি ঠাকুরদাস পাল নই। তোমার বাড়ীতে আমি জল পর্যন্ত খাব না।

গুম হয়ে গেলেন প্রবল প্রতাপ মহিমান্বিত রায়বাহাদুর। একটুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন—হ্যাঁ, আমি তুই ভাই আর বোন। এ-বাড়ীতে তোর যে অধিকার, আমার সেই অধিকার। এ-বাড়ীর মান-মর্যাদা তুই আদালতে দাঁড়ালে—

বলেছিলাম—থাক। সে-কথা তুলো না। সেখানে পাপ তুমিও করনি, আমিও এমন কিছু ধৰ্ম্মের ধ্বজা তুলিনি।

—বেশ, তাহলে বলে যা, এতে তুই আমার পাপটা কোথায় দেখলি? ঠাকুরদাস কি বলে আমাকে শাসিয়েছিল তুই জানিস?

অন্নপূর্ণা বলেছিলেন—ঠাকুরদাস মরেছে ছোট মুখে বড় কথা বলে। সে তুমি যা করেছ তাই করেছ। ও যদি পাপ হয়, তবে ও-পাপ না করে তোমার উপায় ছিল না। আমি কাছে থাকলে তোমার কানে কানে বলতাম—দাও, মুখটা একেবারে বন্ধ করে দাও। আমি বলছি ভায়লাকে দেবেশ্বর ভালোবেসেছে একটা কাণ্ড করেছে বলে তুমি লাফাচ্ছ, বলছ—ছেলের মুখদর্শন করব না। তুমি ডাক্তার-বদ্যির ব্যবস্থা করে দিয়ে কীর্তিহাটে এসে বসে আছ। ঠিক কথা। খুব পুণ্যিবানের কথা। কিন্তু কই বল তো, অঞ্জনাদিদিকে তো মা-বাবা এখানে ঘরবাড়ী দিয়ে ওর স্বামীকে সুদ্ধ চাকরি দিয়ে সংসারী করে দিতে চেয়েছিলেন। তুমি সেসব করলে, বাড়ী দিলে, জমি দিলে, ওর বাউন্ডুলে স্বামীটাকে চাকরি দিলে, কিন্তু অঞ্জনাদিদিকে সে-বাড়ীতে স্বামী নিয়ে সংসার পাততে দিলে না কেন? তার কোলে দেবুকে দিয়ে তোমরা স্বামী-স্ত্রীতে—। থাক, তুমি বড়-দাদা, বয়সে অনেক বড়। বাপেরই বয়সী—বাইশ বছরের বড়। সেসব কথা বলা আমার উচিত নয়। বলব না। অঞ্জনা যে চলে গেল, সে তোমার পাপে গেল। আবার সেই পাপের ফল তুমি টাকা-পয়সা খরচ করে গোয়ায় লোক পাঠিয়ে এখানে নিয়ে এলে। চোখের সামনে পুষে রাখলে। এ-পাপ তোমার কর্মফল কিনা?

—বল না, তুমিই বল।

–: তৃতীয় খণ্ড সমাপ্ত :—

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *