কি ভাবে একখানি কৃষি-পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলাম

কি ভাবে একখানি কৃষি-পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলাম
How I Edited an Agricultural Paper

বিপদ সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হয়ে কৃষি-পত্রিকাখানির অস্থায়ী সম্পাদক-পদ আমি গ্রহণ করি নি। কোন স্থলবাসী মানুষই বিপদ সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হয়ে জাহাজের প্রধান নাবিকের পদ নিতে পারে না। কিন্তু তখন আমার যা অবস্থা তাতে মাইনের কথাটাই ছিল বড়। নিয়মিত সম্পাদক তখন ছুটিতে যাচ্ছিল, আর তার প্রস্তাবমতই চাকরিটা নিয়ে আমি তার জায়গায় বসলাম।

পুনরায় কাজ করতে পারায় বেশ মজাই লাগছিল; অদম্য উৎসাহের সঙ্গে সারাটা সপ্তাহ কাজ করলাম। পত্রিকাটি ছাপতে গেল; আমার পরিশ্রম লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিনা দেখবার জন্য বেশ কিছুটা উদ্বেগের সঙ্গেই একটা দিন কাটালাম। সূর্যাস্তের আগে আপিস ছেড়ে যাবার সময় সিঁড়ির নীচে জমায়েত একদল বয়স্কলোক ও ছেলে-ছোকরা একসঙ্গে সরে গিয়ে আমাকে পথ করে দিল। তাদের দু একজনকে বলতে শুনলাম, এই তিনি! স্বভাবতই ঘটনাটা আমার ভাল লাগল। পরদিন সকালেও সিঁড়ির নীচে অনুরূপ একটা দলকে দেখতে পেলাম। তাছাড়া, এখানে-ওখানে ইতস্তত দাঁড়িয়ে থাকা কিছু লোককেও দেখতে পেলাম। সকলেই আগ্রহের সঙ্গে আমাকে লক্ষ্য করছে। আমি এগিয়ে যেতেই তারা দলে দলে সরে গেল। শুনতে পেলাম একজন বলছে: চোখটা দেখেছে! আমার উপর যে সকলেরই দৃষ্টি পড়েছে আমি যেন সেটা দেখতেই পাই নি এমনই ভাব দেখালাম, কিন্তু মনে মনে বেশ খুসি হলাম। ভাবলাম, পিসিকে এর একটা বিবরণ লিখে পাঠাব। অল্প কয়েকটা সিঁড়ি পার হয়ে উপর উঠে দরজার কাছে পৌঁছতেই খুসির গুঞ্জন ও কলকঠের হাসি কানে এল। দরজা খুলতেই দুটি গেঁয়ো মত লোককে দেখতে পেলাম। আমাকে দেখেই তাদের মুখ শুকিয়ে গেল।

আমি তো অবাক।

আধ ঘণ্টার মধ্যেই একটি বুড়ো ভদ্রলোক ঘরে ঢুকল। মস্ত বড় দাড়ি বুকময় ছড়িয়ে পড়েছে, মুখোনি সুন্দর কিন্তু গম্ভীর। আমার আমন্ত্রণে ভদ্রলোক আসন গ্রহণ করল। মনে হল, একটা কোন উদ্দেশ্য নিয়েই সে এসেছে। টু পিটা খুলে মেঝেতে রাখল, আর তার ভিতর থেকে বের করল একখানি লাল রেশমি রুমাল ও আমাদের পত্রিকার একটি কপি।

পত্রিকাটি কোলের উপর রেখে রুমাল দিয়ে চশমাটা মুছতে মুছতে সে বলল, আপনিই কি নতুন সম্পাদক?

জানালাম, আমিই।

এর আঘে কখনও কোন কৃষি-পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন?

না, আমি বললাম।  এই আমার প্রথম উদ্যম।

খুবই সম্ভব। কৃষির ব্যাপারে হাতে-কলমে কাজের কোন অভিজ্ঞতা আছে?

না, তাও নেই।

সহজ বুদ্ধি এই কথাই বলেছিল, চশমাটা চোখে দিয়ে একটু কড়া দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বুড়ো ভদ্রলোক কথাগুলি বলল। তারপর পত্রিকাখানিকে সুবিধাজনক আকারে ভাঁজ করে আবার বলল, এই সহজ বুদ্ধি কিসে হল সেটা আপনাকে পড়ে শোনাতে চাই। এই সম্পাদকীয় রচনাটির কথা বলছি। মন দিয়ে শুনুন, আর ভাবুন আপনিই কথাগুলি লিখেছেন কি না।

শালগম কখনও তোলা উচিত নয়, এতে এদের ক্ষতি হয়। কোন ছেলেকে পাঠিয়ে তাকে দিয়ে গাছটাকে নাড়া দেওয়াই ভাল।

এবার বলুন তো এ বিষয়ে আপনার কি ধারণা?-কারণ আমি সত্যিই মনে করি যে আপনিই এটা লিখেছেন।

আমার ধারণা? আমি তো মনে করি লেখাটা ভালই হয়েছে। বেশ অর্থপূর্ণ লেখা। কেবলমাত্র এই শহরেই যে আধ-পাকা অবস্থায় তুলে ফেলার জন্য লক্ষ লক্ষ ঝুড়ি শালগম নষ্ট করা হয়ে থাকে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। অথচ তারা যদি একটি ছেলেকে গাছে তুলে দিয়ে নাড়া দিত-

আপনার ঠাকুরমাকে নাড়া দিক! শালগম গাছে ফলে না!

ওহো, গাছে ফলে না! ফলে না বুঝি? আরে, কে বলেছে যে গাছে ফলে? কথাটা এখানে আলংকারিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, সম্পূর্ণ আলংকারিক। যার কিছুমাত্র জ্ঞানগম্যি আছে সেই বুঝবে যে আমি বলতে চেয়েছি, ছেলেটি লতাটাকে নাড়াবে।

বুড়ো লোকটি তখন উঠে দাঁড়াল, পত্রিকাটাকে টুকরো-টুকরো করে ছিঁড়ল, সেগুলোকে পা দিয়ে মাড়াল, হাতের ছড়ি দিয়ে কিছু জিনিসপত্র ভাঙল এবং শেষ পর্যন্ত বলল যে একটা গরু যা জানে আমি তাও জানি না। তারপর সে বেরিয়ে গেল। যাবার আগে দরজাটা সশব্দে ভেজিয়ে দিল এবং এক কথায় এমন সব কাণ্ডকারখানা করে গেল যাতে আমার মনে হল যে কোন ব্যাপারে সে অসন্তুষ্ট হয়েছে। কিন্তু অসন্তুষ্টির কারণ অনুধাবন করতে না পারায় আমি তাকে কোন রকম সাহায্যই করতে পারলাম না।

কিছুক্ষণ পরেই একটা লন্বা বিশ্রী দেখতে লোক ছুটে ঘরের মধ্যে ঢুকল। লম্বা চুলের গোছা কাধ পর্যন্ত ঝুলছে, এক সপ্তাহের খোঁচা খোঁচা দাড়ি সারা মুখের পাহাড়ে ও উপত্যকায় ছড়িয়ে আছে। ঘরে ঢুকেই সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়ল। ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে কোন কিছু শোনবার ভঙ্গীতে মাথা ও শরীরটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল। কোথাও কোন শব্দ নেই। তবু সে শুনছে। কোন শব্দ নেই। তখন দরজায় চাবি ঘুরিয়ে পা টি পে-টি পে আমার দিকে এগিয়ে এল এবং বেশ কিছুক্ষণ সাগ্রহে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ভিতর থেকে আমাদের পত্রিকার একটি ভাঁজ করা সংখ্যা বের করে বলল:

এই যে, এটা তো আপনারই লেখা। এটা পড়ে শোনান-তাড়াতাড়ি আমাকে স্বস্তি দিন। আমার কষ্ট হচ্ছে।

পড়তে লাগলাম। যত পড়ছি ততই যেন লোকটা স্বস্তি ফিরে পাচ্ছে। দেখলাম, তার টান-টান মাংসপেশী গুলো ঢিলে হচ্ছে। মুখের। উপর থেকে দুশ্চিন্তা সরে যাচ্ছে, আর নির্জন প্রান্তরের বুকে সদয় জোছনার মত বিশ্রাম ও শান্তি ছড়িয়ে পড়ছে তার সারা মুখে:

গুয়ানো একটি সুন্দর পাখি, কিন্তু তাকে পালন করতে হলে যথেষ্ট যত্ন আত্তির দরকার। জুনের আগে অথবা সেপ্টেম্বরের পরে তাকে আমদানি করা চলবে না। শীতের সময় তাকে গরম জায়গায় রাখতে হবে যাতে সে বাচ্চাদের তা দিতে পারে।

ফসলের জন্য যে একটু বিলম্বিত মরশুম প্রয়োজন সেটা তো পরিষ্কার কথা। সুতরাং কৃষক যদি জুলাইয়ের পরিবর্তে অগস্ট মাসে। বীজতলা তৈরি করে ফসল বুনতে শুরু করে তাহলেই ভাল হয়।

এবার লাউ-কুমড়োর কথা। এই ফলটি নিউ ইংলণ্ডের মফস্বল অঞ্চলের অধিবাসীদের খুব প্রিয়। ফলের কেক তৈরি করতে তারা বনকুল অপেক্ষা এই ফলটাই বেশী পছন্দ করে। আর সহজে ভালভাবে পেট ভরে বলে গরুর খাদ্য হিসাবেও রাস্পবেরি অপেক্ষা এটাকেই বেশী পছন্দ করে। উত্তরের মাটি তে ফলটা জন্মেও ভাল। কিন্তু অন্য গাছপালার সঙ্গে বাড়ির সামনের উঠোনে লাউ গাছ লাগানোর প্রথা এখন দ্রুত উঠে যাচ্ছে, কারণ এখন সকলেই স্বীকার করে যে ছায়া-তরু হিসাবে লাউ কোন কাজের নয়।

এখন, যেহেতু গরম আবহাওয়া এগিয়ে আসছে এবং রাজহংসীরা ডিম পাড়তে শুরু করেছে-

উত্তেজিত শ্রোতাটি গরম আবহাওয়া এগিয়ে আসছে এবং রাজহংসীরা ডিম পাড়তে শুরু করেছে-

উত্তেজিত শ্রোতাটি আমার সঙ্গে করমর্দন করবার জন্য লাফ দিয়ে কাছে এসে বলল: বাস-বাস-এতেই হবে। আমি জানি এখন আমি ভাল হয়ে গেছি। কারণ আপনিও আমার মতই প্রতিটি অক্ষর ধরে ধরে পড়েছেন। কিন্তু হে অপরিচিত, আজ সকালে প্রথম এটা পড়েই আমি নিজেকে বললাম, আমার বন্ধুরা যতই আমার উপর নজর রাখুক এতকাল কথাটা আমি বিশ্বাস করি নি, কিন্তু এখন আমি বিশ্বাস করি যে আমি উন্মাদ; আর সেই জন্যই আমি এমন হট্টগোল শুরু করেছি যেটা দু মাইল দূর থেকে আপনি হয়তো শুনতে পেয়েছেন। এবং একজন কাউকে খুন করতে বেরিয়েছি-কারণ কি জানেন, আমি জানি যে আগে হোক আর পরে হোক সেটা ঘটবেই, কাজেই আমার শুরু করতে আর দোষ কি। নিশ্চিত হবার জন্য এই পত্রিকার একটি অনুচ্ছেদ আমি আবার পড়ি আর তার পরেই আমার। ঘরটা পুড়িয়ে দিয়ে এখানে চলে এসেছি। কয়েকজনকে খোঁড়া করেছি; আর একজন ভয়ে গাছে চড়ে বসেছে; ইচ্ছা করলেই সেখানে। তাকে ধরতে পারি। কিন্তু এখান দিয়ে যেতে যেতে মনে হল সম্পূর্ণ নিশ্চিত হবার জন্য এখানেই ঢুকে পড়া যাক। এবার আমি নিশ্চিত, আর তাই আপনাকে বলছি, সে লোকটার ভাগ্য ভাল যে সে গাছে চড়ে বসেছে। ফিরবার পথে তাকে আমি নির্ঘাৎ খুন করতাম। বিদায় মশাই, বিদায়; আমার বুক থেকে মস্ত বড় বোঝা আপনি নামিয়ে দিয়েছেন। আপনার একটি কৃষি-সংক্রান্ত প্রবন্ধের চাপ যখন আমার বুদ্ধি সইতে পেরেছে তখন আর কিছুই তাকে ঘায়েল করতে পারবে না। বিদায় মশাই।

এই যে লোকটি মানুষকে খোঁড়া করে এবং ঘরে আগুন লাগিয়ে খোস মেজাজে আছে তার কথা ভেবে আমার কিছুটা অস্বস্তি বোধ হল, কারণ এ কথা না মনে করে আমি পারছি না যে তার এই সব কাজের মধ্যে অত্যন্ত দূরতম হলে ও আমার কিছুটা হাত রয়েছে। কিন্তু এ সব চিন্তা শীঘ্রই মন থেকে দূর হয়ে গেল, কারণ তখনই নিয়মিত সম্পাদক মশাই ঘরে ঢুকল।

সম্পাদককে খুবই বিষণ্ণ, বিচলিত ও বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।

সেই বৃদ্ধ ও দুটি চাষী যুবক যে ধ্বংসকাণ্ড করে গেছে সে সব ভাল করে দেখে নিয়ে সে বলল: কাজটা খারাপ হয়েছে-খুবই খারাপ হয়েছে। একটা আঠার বোতল ভেঙেছে, ভেঙেছে জানালার ছখানা কাঁচ, একটা পিকদানি ও দুটো মোমবাতি-দান। কিন্তু সেটা খুব খারাপ কিছু নয়। পত্রিকাটির সুনাম নষ্ট হয়েছে- স্থায়ীভাবে। সেটাই ভয়ের কথা। এ কথা ঠিক যে আগে কখনও পত্রিকাটির এত চাহিদা ছিল না; এত বেশী সংখ্যায় কখনও বিক্রিও হয় নি, বা জনপ্রিয়তার এত উচ্চে ও কখনও ওঠে নি; কিন্তু বিখ্যাত হবার জন্য কেউ কি পাগল হতে চায়? চায় মনের সুস্থতার বিনিময়ে উন্নতি করতে? বন্ধু আমি সৎ লোক বলেই বলছি, বাইরের রাস্তা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে, অনেকে বেড়ার উপর চড়ে বসেছে; তারা মনে করে যে আপনি পাগল, তাই তারা আপনাকে একবার দেখতে চাইছে। আর আপনার সম্পাদকীয় পড়বার পরে এ কথা তারা মনে করতেই পারে। সে সব লেখা সাংবাদিকতার এক চরম লজ্জা। এ ধরনের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতে আপনি পারেন এ ধারণা আপনার মাথায় এল কেমন করে? কৃষির প্রাথমিক কথাগুলোও তো আপনি জানেন না। লাঙলের শিরালা ও বিদে মইকে আপনি একই বস্তু মনে করেন; বলেন গরুদের খোলস ছাড়বার ঋতুর কথা; ভাল খেলা করতে পারে ও ইঁদুর ধরতে পারে বলে আপনি গন্ধগোকুলকে গৃহপালিত জীবে পরিণত করবার পরামর্শ দেন! গান-বাজনা শোনালে ঝিনুকরা চুপচাপ শুয়ে থাকবে-আপনার এ মন্তব্যও অবান্তর, সম্পূর্ণ অবান্তর। ঝিনুকরা কোন কিছুতেই বিরক্ত হয় না। তারা সব সময়ই চুপচাপ থাকে। গান-বাজনা নিয়ে তারা মাথাই ঘামায় না। হায় বন্ধু অজ্ঞানতা অর্জনকেই যদি আপনার জীবনের পাঠ্যবিষয় করতেন তাহলেও আজকের চাইতে অধিকতর সম্মানের সঙ্গে আপনি স্নাতক হতে পারতেন না। এ রকমটা আমি কখনও দেখি নি। সুপুরির ব্যবসা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই মর্মে আপনি যে মন্তব্য করেছেন তাতে এই পত্রিকার মহা সর্বনাশ হয়েছে। আমি চাই, আপনি চাকরি ছেড়ে চলে যান। ছুটি তে আমার দরকার নেই-ছুটি পেলেও আমি তা ভোগ করতে পারতাম না। আপনাকে আমার আসনে রেখে তো কোন মতেই না। আপনি কখন কি সুপারিশ করে বসেন তাই নিয়ে সর্বক্ষণ আমাকে ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে। জমিতে বাগান করা শিরোনাম দিয়ে ঝিনুক-চাষের আলোচনা করেছেন, একথা ভাবলেই আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। আমি চাই আপনি চলে যান। কোন কিছুতেই আমি আর একটি দিনের জন্যও ছুটি নেব না। উ :! আপনি কেন বলেন নি যে কৃষির আপনি কিছুই জানেন না?

আপনাকে বলব কি? আপনি তো খড়ের উঁটা, বাঁধা কপি, ফুল কপির বাচ্চা! এ ধরনের অদ্ভুত কথা এই আমি প্রথম শুনলাম। আপনাকে বলছি, আজ চোদ্দ বছর ধরে আমি সম্পাদকীয় কাজকর্ম করে আসছি; আর আজই আমি প্রথম এ রকম একটা বাজে মন্তব্য শুনলাম যে কোন সংবাদপত্রের সম্পাদনা করতে কাউকে কিছু জানতে হয়। আরে শালগম! দ্বিতীয় শ্রেণীর পত্র-পত্রিকার জন্য যত সব নাটকীয় সমালোচনা কে লেখে?কেন, একদল করিৎকর্মা মুচি আর সৌখিন মুর্দাফরাস-ভাল কৃষিকাজের আমি যতটা কাজনি তারাও তো ভাল অভিনয়ের ঠিক ততটাই জানে। পুস্তক সমালোচনা কারা করে? যে সব লোক কখনও একটা বইও লেখে নি। অর্থনীতি বিষয়ে ভারী ভারী প্রবন্ধকারা লেখে? এ বিষয়ে কিছু না জানবার সুযোগ যাদের সব চাইতে বেশী। রেড ইণ্ডিয়ান অভিযানের সমালোচক কারা? যে সব ভদ্রলোকরা আদিবাসীদের যুদ্ধের হল্লা আর তাঁবুর পার্থক্য বোঝে না, আদিম রণকুঠারধারীদের সঙ্গে যারা কোনদিন এক পা-ও হাঁটে নি, অথবা সন্ধ্যায় সমবেত শিবির-অগ্নি জ্বালাবার জন্য নিজেদের পরিবারের লোকের শরীর থেকে একটা তীরও খুলে নেয় নি। মদ্যপানবিরোধী আবেদন লেখে কারা? ভরা পান-পাত্র নিয়ে হৈ-চৈ করে কারা? কবরে যাবার আগে একটি দিনও যারা সুস্থভাবে নিঃশ্বাস টানে না তারাই। কৃষি-পত্রিকা কে সম্পাদনা করে-বলুন তো ওলমশাই? সাধারণত যে সব মানুষ কবিতা লিখতে পারে না, হলদে মলাটের উপন্যাস লিখতে পারে না, শহর-সম্পাদকের কাজ করতে পারে না, এবং সাময়িকভাবে দাঁতব্যশালায় যাবার হাত থেকে বাঁচতে শেষ পর্যন্ত কৃষির আশ্রয় গ্রহণ করে। আপনি আমাকে বোঝাতে চান সংবাদপত্রের কাজ! আরে মশাই, আমি তার আগাপাশতলা সব জানি। আমি বলছি, একটা লোক যত কম জানবে তত বেশী হৈ-চৈ ফেলে দেবে এবং তত বেশী মাইনে আদায় করে নেবে। ঈশ্বর জানেন, আমি যদি শিক্ষিত লোক না হয়ে মুগ্ধ হতাম, বিনীত না হয়ে বেহায়া হতাম, তাহলেই এই উদাসীন, স্বার্থপর জগতে নাম করতে পারতাম। এবার আমি বিদায় হচ্ছি। আপনি আমার প্রতি যে ব্যবহার করেছেন তারপরে আমার আর চলে যেতে আপত্তি নেই। কিন্তু আমার কর্তব্য আমি করেছি, যতটা সম্ভব আমার চুক্তিও পূরণ করেছি। আমি বলেছিলাম, আপনার পত্রিকাকে সব শ্রেণীর মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলব-আর তার করেছি। বলেছিলাম আপনার পত্রিকার প্রচার-সংখ্যা বিশ হাজারে তুলে দেব, আর দুসপ্তাহ সময় পেলে তাও করে দিতাম। আর যে শ্রেষ্ঠ পাঠক-শ্রেণী আপনাকে দিয়ে গেলাম এমনটি আজ পর্যন্ত কোন কৃষি-পত্রিকার ভাগ্যে জোটে নি-তার মধ্যে একজনও চাষী নেই, বা এমন কোন লোক নেই যে প্রাণের দায়ে তরমুজ-গাছ ও পীচ–লতার পার্থক্য বলতে পারে। আরে পিঠের গাছ, এই সম্পর্কচ্ছেদের ফেল আপনারই ক্ষতি হল, আমার নয়। বিদায়।

তারপরই সেখান থেকে চলে এলাম।

[১৮৭০]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *