কিশোর রবি

কিশোর রবি

হে চিরকিশোর কবি রবীন্দ্র, কোন রসলোক হতে
আনন্দ-বেণু হাতে লয়ে এলে খেলিতে ধূলির পথে?
কোন সে রাখাল রাজার লক্ষ ধেনু তুমি চুরি করে
বিলাইয়া দিলে রস-তৃষাতুরা পৃথিবীর ঘরে ঘরে।
কত যে কথায় কাহিনিতে গানে সুরে কবিতায় তব
সেই আনন্দ-গোলোকের ধেনু রূপ নিল অভিনব।
ভুলাইলে জরা, ভুলালে মৃত্যু, অসুন্দরের ভয়
শিখালে পরম সুন্দর চিরকিশোর সে প্রেমময়।
নিত্য কিশোর আত্মার তুমি অন্ধ বিবর হতে
হে অভয়দাতা টানিয়া আনিলে দিব্য আলোর পথে।

তোমার এ রস পান করিবার অধিকার পেল যারা
তারাই কিশোর, তোমাতে দেখেছে নিত্য কিশোরে তারা
ওগো ও পরম কিশোরের সখা, জানি তুমি দিতে পার
নিত্য অভয়, অনন্ত শ্রী, দিব্য শক্তি আরও।
কোথা সে কৃপণ বিধাতার মধু-রসভাণ্ডার আছে
তুমি জান তাহা, তাহার গোপন চাবি আছে তব কাছে।
ওগো ও পরম শক্তিমানের জ্যোতির্দীপ্ত রবি
সেই বিধাতার ভাণ্ডার লুটে দিয়ে যাও হেথা সবই।
যারা জড়, যারা নুড়ির মতন নিত্য রসপ্রবাহে
ডুবিয়া থেকেও পাইল না রস, তারা তব কৃপা চাহে।
এই ক্ষুধাতুর, উপবাসী চির-নিপীড়িত জনগণে
ক্লৈব্য-ভীতির গুহা হতে আনো আনন্দ-নন্দনে।
ঊর্ধ্বের যারা তাহারা পাইল তোমার পরম দান
নিম্নের যারা, তাদের এবার করো গো পরিত্রাণ।
মরে আছে যারা তারা আজ তব অমৃত নাহি পায়
তোমার রুদ্র আঘাতে এদের ঘুম যেন টুটে যায়।
শুধু বেণু আর বীণা লয়ে তুমি আস নাই ধরা পরে
দেখেছি শঙ্খ চক্র বিষাণ বজ্র তোমার করে।

ওগো ও পরম রুদ্র কিশোর! তোমার যাবার আগে
নির্জিত নিদ্রিত এ ভারত যেন গো বহ্নিরাগে
রঞ্জিত হয়ে ওঠে! অসুরের ভীতি যেন চলে যায়।
ওগো সংহার-সুন্দর, পরো প্রলয়-নূপুর পায়!
তোমার যে মহাশক্তি কেবল জ্ঞান-বিলাসীর ঘরে
অনন্ত রূপে রসে আনন্দে নিত্য পড়িছে ঝরে,
গৃহহীন অগণন ভিক্ষুক ক্ষুধাতুর তব দ্বারে
ভিক্ষা চাহিছে, দয়া করো দয়া করো বলি বারে বারে।
বিলাসীর তরে দিয়াছ অনেক, হে কিশোর-সুন্দর,
এবার পঙ্গু-অঙ্গে পরশ করুক তোমার কর।
জানি জানি তব দক্ষিণ করে অনন্ত শ্রী আছে,
দক্ষিণা দাও বলে তাই ওরা এসেছে তোমার কাছে।

হে রবি, তোমারে নারায়ণরূপে এ ভারত পূজা করে,
যাইবার আগে, জাগাইয়া তুমি যাও সেই রূপ ধরে।
দৈত্য-মুক্ত ব্রজের রাখাল কিশোরেরা ভয়হীন,
খেলুক সর্ব-অভাবমুক্ত হয়ে ব্রজে নিশিদিন।
হউক শান্তিনিকেতন এই অশান্তিময় ধরা,
চিরতরে দূর হোক তব বরে নিরাশা-ক্লৈব্য-জরা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *