1 of 2

কিলিং মিশন – ৬

ছয়

সত্যি কথাই বলেছে অ্যালেক্যাণ্ডার লিয়োনেল। রানার চেয়ে ভালভাবে উইলবার ফক্সকে চেনে না কেউ। ইউএন-এর মিশনে ক’বার আফ্রিকায় পাশাপাশি লড়াই করেছে ওরা। কাছ থেকে উইলবার ফক্সকে দেখেছে রানা। বিশেষ করে কঙ্গোর নিষ্ঠুর বিদ্রোহী দলের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ওরা হয়ে গিয়েছিল প্রায় আপন ভাইয়ের মত।

রানার চেয়ে চার বছরের ছোট উইলবার ফক্স। আঠারো বছর বয়সে যোগ দিয়েছে এসএএস ফোর্সে। প্রচণ্ড কঠোর ট্রেইনিং বাদে কারও পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয় ওই দলের কভেটেড উইংড ড্যাগার। শত শত ক্যাডারের মাঝ থেকে শেষমেশ পরীক্ষায় টিকে যেতে পারে মাত্র কয়েকজন।

বাজেভাবে আহত হয়ে প্রথমবার পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিল উইলবার ফক্স। সেবার ব্রেকন বিকনের তুষারাবৃত পাহাড় থেকে পিছলে পড়ে কয়েক শ’ ফুট নিচে। তাকে যখন আবিষ্কার করে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে, ডাক্তাররা দেখলেন মৃতপ্রায় রোগী ভুগছে অ্যাকিউট হাইপোথারমিয়া ও কংকাশনে। ভেঙে গেছে ডান কাঁধের হাড়। বেশিরভাগ ক্যাডেট দু’পায়ের মাঝে লেজ গুটিয়ে ফেরত যেত নিজের ইউনিটে। সারাজীবন ভাবত: প্রাণে যে বেঁচে গেছি, এটাই তো বড় কথা!

ফক্সকে কেউ আশ্বাস, দেয়নি যে পরেরবারের ট্রেইনিং আগের চেয়ে সহজ হবে। পরের শীতে দ্বিতীয়বারের মত প্রশিক্ষণে অংশ নিল ফক্স। সেবারও মরতে মরতে বেঁচে গেল। পিঠে ষাট পাউণ্ড ওজন নিয়ে পাহাড়ি বন্ধুর পথে হেঁটে গেল মাইলের পর মাইল। একবার পড়ে গেল গভীর খাদে। ওর রাইফেলের কুঁদোর গুঁতো লেগে চুরমার হলো মুখের অর্ধেক দাঁত। অবশ্য এবার হেরে যেতে রাজি হলো না ফক্স। খাদ থেকে উঠে দ্বিগুণ জোরে হেঁটে রক্তে মাখামাখি শরীরে পৌঁছল দূরের গন্তব্যে। সেবার পাশ করল ব্রিটেনে নয়জন ক্যাডেট

কয়েক মাস পর সাফল্যের সঙ্গে শেষ করল ভয়ঙ্কর কঠিন জাঙ্গল ট্রেইনিং, এস্কেপ অ্যাণ্ড ইভেশন ট্রেইনিং অ্যাণ্ড ট্যাকটিকাল কোয়েশচেনিং বা টর্চার রেফিস্ট্যান্স ট্রেইনিং। এরফলে উইলবার ফক্স হলো রেজিমেন্টের সম্পূর্ণ সদস্য। ওকে পরিয়ে দেয়া হলো এক্সালটেড বেইজ ব্যারেট ও উইংড ড্যাগার ইনসিগনিয়া। দাঁত নেই বলে ডেন্টিস্টের কাছ থেকে টাইটেনিয়াম ও সোনার দু’পাটি দাঁত বাঁধিয়ে নিল ফক্স। এসএএস ফোর্সের বন্ধুরা মজা পেয়ে ওর নাম দিল: স্বর্ণদন্ত। ওপর মহলের চোখ ছিল ওর ওপরে। কোন দুর্বলতা দেখলে কঠোর হতো তারা। কিন্তু কিছু দিন পর সবাই বুঝে গেল, সব ধরনের মানসিক চাপ বা অকথ্য দৈহিক যন্ত্রণা সহজেই সোনালি হাসি দিয়ে জয় করে নিচ্ছে ছেলেটা।

এসএএস ফোর্সের বন্ধুদের কাছে রানা শুনেছে, চাকরিতে লেগে থাকলে একদিন দক্ষ কমাণ্ডিং অফিসার হবে ওদের স্বর্ণদন্ত। এসএএস ফোর্সের পার্টিতে রানার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়েছিল উইলবার ফক্সের। কঠোর মনের সৈনিক নয়, চুপচাপ ধরনের হলেও হাসিখুশি মানুষ সে। বন্ধুদের কাছে রানা শুনেছিল, বোবা জানোয়ারদেরকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালবাসে ফক্স। একবার এক ট্রেইনিঙে গ্রামের একলোক তার ঘোড়াটাকে পেটাচ্ছে দেখে তাকে বেধড়ক পিট্টি দেয় ও। এজন্যে ঊর্ধ্বতন অফিসারের কাছ থেকে শাস্তিও মাথা পেতে নিতে হয় ফক্সকে। পরে কুকুর, বিড়াল ও গাধা জনিত কয়েকটা দুর্ঘটনা ঘটেছে তাকে নিয়ে। যদিও অফিসাররা ভালবাসত ওর নরম অন্তরটাকে।

স্বর্ণদন্তের সঙ্গে দু’বার মিশনে গেছে রানা। তারপর শুনল হঠাৎ করেই কেন যেন অবসর নিয়েছে ফক্স। এসএএস ফোর্স ছেড়ে গেলে বেশিরভাগ সময় হাই-লেভেল সিকিউরিটির কোন চাকরি বেছে নেয় অফিসার বা সৈনিকেরা। অথবা কাজ করে বড় সব অয়েল ফিল্ডে কনসাল্টেন্ট হিসেবে। প্রতি মাসে লাখ লাখ ডলারের বিনিময়ে কখনও নিরাপত্তা দেয় নানান দেশের ভিআইপিদেরকে। কিন্তু রানা জেনেছে, তাদের মত করে কোন চাকরি নেয়নি স্বর্ণদন্ত। কোথায় গেছে তা-ও কেউ জানত না। মিলিটারিতে চাকরি করছে এমন বন্ধুদের পার্টিতে রানা গেলে শুনত ওর ব্যাপারে অতীত স্মৃতিচারণ।

এবার সেই পুরনো সহযোদ্ধাকে খুঁজে বের করতে হবে। যদিও রানা জানে না, কোথায় ডুব দিয়েছে সে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *