1 of 2

কিলিং মিশন – ১২

বারো

ভোর চারটা পঁয়ত্রিশ মিনিটে উইলবার ফক্সের অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকেছে রানা। ওখানে ছিল পুরো পঞ্চাশ মিনিট। গোটা অ্যাপার্টমেন্ট সার্চ করে এইমাত্র ফিরেছে নিজের গাড়িতে। ড্রাইভিং সিটে বসে ভাবল, ফক্সকে খুঁজে বের করতে গিয়ে কোন পথ বেছে নেবে।

হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে বিমানে সহজেই যেতে পারবে য্যারাগোজা বা ভেলেন্সিতে। এরপর গাড়িতে করে দু’ঘণ্টায় পৌঁছুতে পারবে অ্যারাগনের আলদারিসিন গ্রামে। তবে সড়কপথে গেলে খাবার ও বিশ্রামের সময়টা বাদ দিলেও ব্যয় হবে কমপক্ষে ষোলো ঘণ্টা। সেক্ষেত্রে সীমান্তে গ্রেফতার না হলে সঙ্গে রাখতে পারবে পিস্তল। অস্ত্রসহ ধরা পড়লেও ওকে খুন করে লাশ গুম করবে না কাস্টমস। ওই একই কথা খাটবে না ফক্সের ক্ষেত্রে। সে আছে মৃত্যু-ভয়ে সতর্ক। নিরস্ত্র রানার সঙ্গে দেখা হলেই হয়তো খুন করে বসবে।

গাড়িতে করে স্পেনে যাওয়াই ভাল, ভাবল রানা। লণ্ডন ছেড়ে আবারও, ফিরল উপকূলের দিকে। মাঝপথে থেমে পিস্তল ও ম্যাগাযিন রাখল ইঞ্জিন বে-তে। সাতটা তিন মিনিটে পৌঁছুল ফোকস্টোনে। এককাপ কফি হাতে অপেক্ষা করল সাড়ে সাতটার ইউরোটানেল ট্রেনের জন্যে। স্থানীয় সময় সকাল নয়টা পাঁচ মিনিটে পৌঁছল ক্যালেই। দ্বিতীয়বারের মত কাস্টমসকে কাঁচকলা দেখিয়ে বেরিয়ে এল টানেল থেকে। দক্ষিণে প্যারিস পেছনে ফেলে পার হলো প্রাকৃতিক রিজার্ভ লা বেন 3 পেরিগার্ড-লিমাযিন। এরপর

এরপর পেছনে পড়ল মণ্টাউব্যান, টুলোউস ও ফ্রেঞ্চ পিরানিজ। সীমান্ত পেরিয়ে রানা ঢুকে পড়ল স্পেনে। আশা করল, অ্যারাগনের রাজধানী য্যারাগোজা পেরিয়ে দু’ঘণ্টায় পৌঁছে যাবে আলদারিসিন গ্রামে। একজন ড্রাইভারের জন্যে এটা দীর্ঘযাত্রা হলেও আগে এরচেয়েও বেশিক্ষণ ধরে ড্রাইভ করেছে রানা।

প্রথমবার তেল নিল ব্যস্ত মোটরওয়ের এক সার্ভিস স্টেশন থেকে। দ্বিতীয়বার থামল নির্জন এক গ্রাম্য স্টেশনে। তখন গাড়ির বনেট খুলে ইঞ্জিন বে থেকে ওয়ালথার নিয়ে রেখে দিল ড্রাইভিং সিটের নিচে। নতুন করে রওনা হয়ে মনে পড়ল, কী ছিল অ্যালেক্যাণ্ডার লিয়োনেলের ভিডিয়োতে। রেসিং ড্রাইভারের মত তীরবেগে শেষ দেড় শ’ কিলোমিটার পেছনে ফেলে নির্ধারিত সময়ের নব্বুই মিনিট আগে পৌঁছে গেল রানা গন্তব্যে।

স্থানীয় সময় রাত নয়টা তেতাল্লিশ মিনিটে আলদারিসিন গ্রামের নির্জন চত্বরে ঢুকল অফরোড প্রিমিয়াম। গত কয়েক ঘণ্টায় বহুবার ভেবেছে রানা, সত্যি হয়তো এখানে আসেইনি ফক্স। সেক্ষেত্রে ও ছুটছে বুনো হাঁসের পেছনে। এবং সেটা সত্য হলে এমন কোন সূত্র নেই, যেটা ধরে আর এগোতে পারবে। সার্বক্ষণিক দুশ্চিন্তা তো আছেই, সেইসঙ্গে ওর সঙ্গী হয়েছে দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়ার ভয়ানক ক্লান্তি। রানা বুঝে গেছে, প্রথম সুযোগে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিতে হবে ওকে। অবশ্য যতবার জেসিকার অন্ধকার সেই ঘরের কথা মনে পড়েছে, আবারও নতুন করে সজাগ হয়ে উঠেছে রানা। হাড়ে হাড়ে বুঝেছে, ওর তরফ থেকে ব্যর্থতা মানেই জেসিকার অপঘাতে মৃত্যু!

আলদারিসিন গ্রামের ধারে গাড়ি রেখে পকেট থেকে মোবাইল ফোন, নোটপ্যাড ও কলম নিল রানা। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে বুঝে নিল এদিকের এলাকায় কোথায় আছে রেস্টহাউস, হোটেল ও বোর্ডিং হাউস। উইলবার ফক্স গোপনে এদিকে এলে, পারতপক্ষে কোথাও কোন সূত্র রাখবে না। সেক্ষেত্রে হয়তো নানান জায়গায় তার ছবি দেখালে কাজ হতে পারে। রানা স্থির করল, এক এক করে ফুঁ দেবে রেস্টহাউস বা হোটেলে। তাতে হয়তো ফক্সের ব্যাপারে পাওয়া যাবে জরুরি কোন তথ্য। খুবই ছোট হলো রানার লিস্ট। আলদারিসিনে আছে মাত্র একটা রেস্টহাউস আর গোটা তিনেক হোটেল। তালিকার দিকে চেয়ে মাথা-ব্যথা শুরু হলো ওর। ভাল করেই বুঝে গেল, এভাবে খুঁজে বের করতে পারবে না প্রাক্তন এসএএস সৈনিককে। নোটপ্যাড থেকে কাগজ ছিঁড়ে মুচড়ে ফেলে দিল গাড়ির মেঝেতে। ড্রাইভিং সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে ভাবল এবার কী করবে।

সতর্ক নেকড়েকে খুঁজে বের করতে হলে ওকেও হতে হবে চতুর কোন নেকড়ে।

ফক্স এমন মানুষ নয় যে বিপদ হতে পারে জেনেও হোটেলে গিয়ে উঠবে। বোধহয় খুঁজে নিয়েছে নির্জন কোন এলাকা। সত্যিই লণ্ডন ত্যাগ করে আলদারিসিনে এলে বড়জোর গ্রামে ছিল এক বা দু’দিন। তারপর সাপ্লাই কিনে চলে গেছে পাহাড়ের উঁচু এলাকায়। বিপদ টের পেলে দূর থেকে আরও দূরে সরে যাবে।

আবার এমনও হতে পারে, রিটা ক্যাম্পো আর এই এলাকার প্রেমে পড়ে রয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে চট করে সাপ্লাই জোগাড় করতে হয়তো গ্রামের ধারেকাছেই থাকবে ফক্স।

ভাবতে গিয়ে রানার মনে হলো, রিটা ক্যাম্পো এখন কোথায় আছে সেটা জানার জন্যে হয়তো গ্রামে দু’এক ঘণ্টা থেমেছে ফক্স। তারপর কোথাও যাওয়ার আগে কোন রেস্টুরেন্টে ঢুকে পেট পুরে খাবার খেয়ে নিয়েছে। নিজেও ওই একই কাজ করবে বলে ভাবল রানা। সিটের নিচ থেকে পিস্তল বের করে গুঁজে নিল কোমরের বেল্টের নিচে। অফরোড প্রিমিয়াম থেকে নেমে দরজা লক করে হেঁটে চলল গ্রামের দিকে। ফুরফুরে হাওয়া ভরা নির্মেঘ রাত, ঝিকমিক করছে আকাশে কোটি নক্ষত্র। বাতাসে লেবু ফুলের মিষ্টি সুবাস। যদিও কিছুই ভাল লাগছে না রানার। আলদারিসিনের পুরনো অংশ মেডিইভেল আমলে তৈরি। সরু গলির দু’দিকে পাথরের একতলা বা দোতলা বাড়ি। গলির ভেতর মাঝারি এক গাড়ি ঢুকলে হেঁটে চলা কঠিন। ছোট এক রেস্টুরেন্ট এখনও খোলা দেখে ওখানে ঢুকল রানা। জানালার ধারের টেবিলে বসে তাকাল গলির দিকে। মনে মনে বলল, খুব ভাল হতো ওদিক থেকে এখন ফক্স হেঁটে এলে। কিন্তু মানুষের জীবন আসলে কোন সিনেমা নয়। ওয়েটার আসতেই মস্ত এক স্টেক ও দুটো বিয়ারের অর্ডার দিল রানা। মিনিট দশেক পর ওর টেবিলে এল ভাজা মাংস ও বিয়ার। দেরি না করে খাবারে মন দিল রানা। স্টেক শেষ করে ধীরে ধীরে গিলল বিয়ারদুটো। বিশ্রাম পেয়ে ধীরে ধীরে শক্তি ফিরছে ওর শরীরে।

গড়গড় করে স্প্যানিশ ভাষা বলতে পারে রানা। ওয়েটারকে ডেকে তার হাতে দিল বিলের টাকা ও ভারী টিপস্। তারপর পকেট থেকে নিয়ে দেখাল ফক্সের ছবি। বলল, ‘আমার সৎভাই। নাম র‍্যাণ্ডি। বলেছিল আলদারিসিনে দেখা হবে। কিন্তু তারপর এখানে এসে দেখি ও নেই। তুমি কি তাকে এদিকে কোথাও দেখেছ?’

পুরনো কৌশল। কখনও কাজ করে, কখনও করে না। ছবি দেখে ফাঁকা চোখে রানাকে দেখল ওয়েটার, তারপর মাথা নাড়ল। এবার রানা জানতে চাইল, ‘বাইরের কেউ এলে তাকে মনে রাখে, গ্রামে এমন কেউ আছে? গত কয়েক দিনের ভেতর এই গ্রামেই এসেছে আমার ভাই।’

আবারও মাথা নাড়ল ওয়েটার। ‘সপ্তাহে ছয়দিন আমি এখানে ডিউটি দিই। নতুন কাউকে দেখলে মনে থাকে। আপনাদের চেহারায় কোন মিল না থাকলেও আপনি তো বলছেন আপনার ভাইয়ের নাম র‍্যাণ্ডি, তা-ই না? সেই যুবক এদিকে এলেও তাকে লক্ষ করিনি আমি।’

আর কিছু করার নেই।

ওয়েটারকে ধন্যবাদ দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এল রানা। গ্রামের গলির ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলল। আঁকাবাঁকা এক গলিতে পেল আরেকটা বার অ্যাণ্ড রেস্টুরেন্ট। আগেও এমন রেস্টুরেন্টে খেয়েছে রানা। আজ রাতের মত বন্ধ হয়ে গেলেও এখনও ওটার দরজা খোলা। ভেতরে উঁকি দিল রানা। ঘরে কয়েক রঙের বেমানান, পুরনো চেয়ার ও টেবিল। ওর মনে হলো, ফক্স হয়তো ঢুকেছে এই রেস্টুরেন্টে। অ্যাপ্রন পরা এক যুবতী ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে মেঝে মুছছে। দরজায় ওকে দেখে বলল, ‘আমরা আজকের মত বন্ধ করে দিয়েছি।’

তার কথায় পাত্তা না দিয়ে ভেতরে ঢুকল রানা। ‘জানি রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। খুবই দুঃখিত যে বিরক্ত করছি। তবে আপনি হয়তো আমার বড় এক উপকার করতে পারবেন। আপনি কি আমাকে একটু সময় দেবেন?’

পুরনো গল্প আবার ফাঁদল রানা। ওর হাতে ফক্সের ছবি দেখে মাথা নাড়ল যুবতী। ‘আপনার ভাইকে বাপের জন্মেও দেখিনি।’

তাকে ধন্যবাদ দিয়ে দরজা লক্ষ্য করে পা বাড়াবে রানা, এমনসময় কিচেন থেকে এল এক বৃদ্ধ। তোয়ালে দিয়ে মুছছে দু’হাত। মেয়েটা তাকে বলল, ‘বাবা, ইনি তাঁর ভাইকে খুঁজছেন।’

‘তাই?’ রানার সামনে এসে দাঁড়াল বৃদ্ধ

ছবিটা দেখাল রানা।

‘আপনার ভাই?’ ভুরু কুঁচকে ফেলল বৃদ্ধ।

‘আসলে আমার সৎভাই,’ চট্ করে বলল রানা। ‘জানি, আমরা দেখতে একইরকম নই।’

তর্জনী দিয়ে ওপরের ঠোঁটে চিমটি কেটে বলল বৃদ্ধ, ‘তার দাঁতগুলো কি বেশিরভাগই …’

গোপনে শ্বাস ফেলল রানা। ‘সোনার দাঁতের কথা বলছেন তো? তা হলে ও-ই আমার ভাই। কমবয়সে এক দুর্ঘটনায় অর্ধেক দাঁত পড়ে গিয়েছিল।’

‘ওর নাম তো… জিম? জিম হকিন্স?’

মেয়েটাকে র‍্যাণ্ডি নামটা বলেনি, তাই নিজের ওপর খুশি হয়ে উঠল রানা। ‘জী, ঠিকই ধরেছেন। জিম। তো এদিকে এসেছে ও?’

‘দু’তিনদিন আগে। জানতে চাইল ক্যাম্পো পরিবারের ব্যাপারে। নইলে হয়তো মনেই পড়ত না।’

মাথা দোলাল রানা। ‘ওই পরিবারের মেয়ে রিটা আমার ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। মেয়েটার কি বিয়ে হয়ে গেছে?’

‘না। তবে ক্যাম্পোরা এখন চলে গেছে য্যারাগোজায়।’ এবার চিন্তায় পড়ল রানা। ‘তবে কি রিটার সঙ্গে দেখা করতে য্যারাগোজায় গেছে জিম?’

‘না, সে বলেছে আলদারিসিনে থাকবে। বোধহয় আপনার জন্যেই অপেক্ষা করছে?’

‘জী। এখানেই তো দেখা হওয়ার কথা।’

‘বলেছিল গ্রামটা তার খুব ভাল লেগেছে।’

অন্ধকারে এসে গ্রামের প্রায় কিছুই দেখেনি রানা। তবে উৎসাহের সঙ্গে মিথ্যা ঝেড়ে দিল, ‘সত্যিই অপূর্ব সুন্দর আপনাদের গ্রাম, একেবারে যেন স্বর্গের টুকরো। …তো, এখন আমার ভাই কি বলেছে, কোন্ হোটেলে গিয়ে উঠেছে?’

মাথা নাড়ল বৃদ্ধ। ‘না, তা অবশ্য বলেনি। আর আপনি যে একটু আগে বললেন ক্যাম্পোদের মেয়ের কথা? ওদের ছোট মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তবে বড়টার নয়। বোধহয় হবেও না। ভিনদেশি এক অচেনা ছেলেকে কথা দিয়েছিল, তার জন্যে অপেক্ষা করবে। তা-ও তো কয়েক বছর আগের কথা। তো সে-ছেলে যোগাযোগও করেনি, আসেওনি। মিসেস ক্যাম্পো অনেক করে বুঝিয়েছে, কিন্তু তার কোন কথাই শোনেনি রিটা। জীবনে নাকি মাত্র একবারই প্রেম আসে। বলুন, এটা কি কোন যুক্তির কথা হলো?’

গভীর শোকে মুহ্যমান হয়ে মাথা নাড়ল রানা।

‘আপনার ভাই আমাকে বলেছে, দু’একদিন পর আবার এই রেস্টুরেন্টে খেতে আসবে। বোধহয় এস্তোনার হাতের রান্না তার খুব ভাল লেগেছে।’ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল বৃদ্ধ।

‘সুযোগ পেলে আমিও চেখে দেখব,’ মৃদু হাসল রানা।

খুশি হলো বৃদ্ধ। ‘তো আসুন আগামীকাল। দারুণ মেনু থাকবে। বিশাল গলদা চিংড়ির কারি, গরুর ভাজা মাংস, বড় স্যামন ভাজা, আস্ত মুরগির রোস্ট, ভেড়ার কাঁধের মাংসের ভুনা, কয়েক ধরনের সবজির সালাদ, হাতে তৈরি লাল ও সাদা আটার বিশেষ রুটি, স্পেশাল পাস্তা…’

তালিকা আরও দীর্ঘ হবে বুঝে দ্রুত বলল রানা, ‘শুনে তো লোভই লাগছে। সঙ্গে জিমকেও নিয়ে আসব।’ বৃদ্ধ ও তার মেয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গলিতে বেরিয়ে এল ও। এখন নিশ্চিত, আলদারিসিনেই এসেছে ফক্স। ওর কাজের সহজ দিক আপাতত শেষ, পরের কাজ খুব কঠিন। অ্যালেক্যাণ্ডার লিয়োনেলের নির্দেশে ফক্সকে খুন করতে হবে, নইলে মরবে জেসিকা। কিন্তু একজন সহযোদ্ধাকে হত্যা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে রানার নেই। আবার তার হাতে খুন হতেও আপত্তি আছে ওর। এবার খুঁজে নিয়ে আলাপ করতে হবে ফক্সের সঙ্গে।

কয়েকটা গলির ভেতর দিয়ে হেঁটে গ্রামের ধারে নিজের গাড়ির কাছে পৌঁছুল রানা। ভাবল, পেছন-সিটে শুয়ে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেবে। ভোরে উঠে খুঁজতে শুরু করবে ফক্সকে। গাড়িতে ওঠার আগে দেখল ঝিকমিকে তারাভরা কালো আকাশ। শীতল হাওয়া আসছে পাহাড় থেকে। কেমন স্বর্গীয় নীরব এক পরিবেশ। বহুদূরে এবড়োখেবড়ো পাহাড়ের ওপরে কালো-নীলচে দিগন্ত। পুবে ঝুঁকে এসেছে দৈত্যের মত বিশাল পাহাড়।

আমি হলে ওখানেই ক্যাম্প করতাম, ভাবল রানা। এবার গাড়িতে উঠে শুয়ে পড়বে, এমনসময় পুবালী হাওয়ায় ভেসে এল চাপা ধুপ-ধুপ শব্দ। সাধারণ মানুষ ভাববে ওগুলো পটকার আওয়াজ। কিন্তু রাতের আকাশে কোথাও ঝিকিয়ে উঠছে না আতশবাজির রঙিন আলো।

রানার সতর্ক কান বলছে অন্যকিছু। বুঝে গেছে এতরাতে শিকারে বেরোয়নি কেউ। আওয়াজটা একাধিক রাইফেল ও বন্দুকের গর্জন। আগেও এই ধরনের আওয়াজ রানাকে বহুবার টেনে নিয়ে গেছে মস্তসব বিপদে। ড্রাইভিং সিটে উঠে দরজা বন্ধ করল রানা। নামিয়ে নিল জানালার কাঁচ। গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে রওনা হয়ে গেল পাহাড়ি ঢালু রাস্তা ধরে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *