1 of 2

কিলিং মিশন – ১১

এগারো

দু’দিন আগের ঘটনা।

স্পেনের অপূর্ব সুন্দর অ্যারাগন অঞ্চলে এসে ফুরফুর করছে উইলবার ফক্সের মন। ভাঙাচোরা, রঙচটা এক পুরনো বাসে চেপে পৌঁছে গেছে ছোট্ট গ্রাম আলদারিসিনে। প্রত্যন্ত এ গ্রামে গত তিনবছরে যোগ হয়েছে গোটা তিনেক বাড়ি। কিছু ছাতে এখন স্টিলের স্যাটেলাইট ডিশ। প্রধান চত্বরে গোটা দুয়েক সেকেণ্ড-হ্যাণ্ড গাড়ি ও তিনটে নতুন মোটরসাইকেল। এ-ছাড়া সবই আছে আগের মত। দূরে ছোট্ট এক বাড়ির ওপর চোখ যেতেই মন দুলে উঠল ফক্সের। ওখানেই বাবা-মা ও ছোট বোনের সঙ্গে বাস করত রিটা। প্রতিদিন সকালে বাগানে এসে ছবি আঁকার ফাঁকে চেয়ে থাকত ওর রেস্টহাউসের দিকে। হঠাৎ করে ফক্সের খুব ইচ্ছে হলো জানতে: প্রেমিক একদিন ফিরবে ভেবে আজও কি অপেক্ষা করছে মেয়েটা?

হঠাৎ করে লজ্জার মাথা খেয়ে ওই বাড়িতে হাজির হওয়া অনুচিত, ভাবল ফক্স। প্রায় যাত্রীহীন লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাস থেকে নেমে টের পেল, লণ্ডন ত্যাগ করার পর গত ক’দিনে প্রায় কিছুই পেটে পড়েনি ওর। বড় রাস্তা ছেড়ে সরু এক গলি ধরে এগোল ও।

মিনিট দুয়েক পর পৌঁছে গেল পরিচিত, ছোট এক বার অ্যাণ্ড রেস্টুরেন্টের সামনে। পুরনো বাড়িটাতে ঢুকে দেখল, কয়েক রঙের কিছু পুরনো চেয়ার ও টেবিল। বরাবরের মতই খদ্দের নেই বললেই চলে। একটা চেয়ার টেনে বসতে না বসতেই ওর দিকে এল রেস্টুরেন্টের মালিক দাড়িওয়ালা বৃদ্ধ, পরনে সাদা অ্যাপ্রন। খাবারের মেনু দেখে অর্ডার দিল ফক্স। বাদ পড়ল অ্যালকোহলিক পানীয়। পনেরো মিনিট পর ওর টেবিলে বৃদ্ধ রেখে গেল একপ্লেট ভেড়ার ঠাণ্ডা মাংস, পনির ও মাখন দেয়া হরেক সবজির রঙিন সালাদ, বড় দুটো হাতে তৈরি রুটি আর এক জগ শীতল পানি।

পরের দশ মিনিট গোগ্রাসে সুস্বাদু মাংস ও গরম রুটি পেটে চালান দিল ফক্স। প্লেট খালি করে ঢক ঢক করে গিলল দুই গ্লাস পানি। ওকে কিছু স্প্যানিশ শব্দ শিখিয়ে দিয়েছিল রিটা। পরে আরও জেনেছে কিছু সাধারণ বাক্য। তাতে অবশ্য গড়গড় করে স্প্যানিশ বলতে পারবে না। বিল মিটিয়ে স্বল্প বিদ্যা নিয়েও জেনে নিল বৃদ্ধের নাম- পেদ্রো সান্তানো। মানুষটা নিজে থেকে জানাল, তাদের এলাকা বড় সুন্দর। তাই অ্যারাগন এলাকা ছেড়ে কোথাও কখনও যায়নি। নিজের নাম জিম হকিন্স বলে জানাল ফক্স। আগেও এ গ্রামে এসেছে জেনে খুব খুশি হলো বৃদ্ধ। ফক্স দু’চার কথার পর জানতে চাইল, ক্যাম্পো পরিবারকে বৃদ্ধ চেনে কি না। তারা ওর পরিচিত। তাই জানতে চায়, কেমন আছে সবাই।

বৃদ্ধ জানাল, ক্যাম্পোদের চেনে সে। গতবছর মারা গেছে পরিবারের কর্তা লরেনযো ক্যাম্পো। এরপর গ্রাম ছেড়ে য্যারাগোজা শহরে চলে গেছে মিসেস ক্যাম্পো আর তাঁর দুই মেয়ে।

বৃদ্ধের কথায় হতাশ হলো ফক্স। তবুও জানতে চাইল, ক্যাম্পো পরিবারের অন্যরা য্যারাগোজায় এখন কোথায় বাস করে।

বৃদ্ধ গড়গড় করে ঠিকানা বলে যাওয়ায় চট করে ছোট এক প্যাডে ঠিকানা লিখে নিল ফক্স। রিটার মিষ্টি মুখ মনের আয়নায় ভাসতেই অজান্তে ঢোক গিলল। নিজেকে বলল: তুমি তো এখন একজন নিষ্ঠুর খুনি! হয়তো যে-কোন সময় নিজেই খুন হবে। তোমার কোন যোগ্যতা নেই যে রিটার মত নিষ্পাপ এক মেয়েকে নিজের নোংরা জীবনে ডেকে আনবে!

ওর মন আরও তিক্ত হতেই স্থির করল, পরে ভাববে যোগাযোগ করবে কি না রিটার সঙ্গে।

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠল ফক্স। ঝোপে ভরা উঁচু পাহাড়ের দিকে চেয়ে মনে পড়ল, ওখানে পিকনিক করেছিল রিটা আর ও। চলে এল গ্রামের একমাত্র ব্যাঙ্কের সামনে। একবার ভাবল টাকার হোল্ডঅল ওখানে রাখবে কি না। পরক্ষণে স্থির করল, উচিত হবে না কাজটা করা। টাকা আপাতত ওর কাছেই থাকুক।

আগে যে দোতলা রেস্টহাউসে উঠেছিল, পেছনে পড়ল ওটা। গ্রামে আরও কয়েকটা হোটেল আছে। কিন্তু রেস্টহাউস বা কোন হোটেলে ওঠার ঝুঁকি নিল না ফক্স। মনস্থির করল ক্যাম্প করবে পাহাড়ে। নিজেকে নিরাপদ বোধ করলে তখন ফোন দেবে রিটাকে। হয়তো বিয়ের পর ছোট এক এস্টেট কিনে নেবে ওরা। দু’জন মিলে গড়ে তুলবে ভেড়া ও মুরগির খামার। রিটার কথা ঘুরেফিরে ভাবছে বলে নিজেকে বকল ফক্স। এখন সময় নেই মধুর স্বপ্ন দেখার।

হাঁটতে হাঁটতে ওর মনে এল অতীত দুঃসহ স্মৃতি। এসএএস ফোর্স থেকে অবসর নিয়েছিল দ্রুত টাকা আয়ের জন্যে। যোগ দিল এক এজেন্সিতে। জানত না সিকিউরিটির কাজ নয়, ও যোগ দিয়েছে খুনি-চক্রে। তারপর ক’দিন আগে ইংল্যাণ্ডের সেই দ্বীপে দেখতে পেল দুঃস্বপ্নের মত মানব- বলি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে ওর। তখনই বুঝেছে, ভয়ঙ্কর একদল নরপশুর খপ্পর থেকে পালিয়ে যেতে হবে ওকে।

টাকার হোল্ডঅল কাঁধ থেকে নামিয়ে কপালের ওপর হাত রেখে চারপাশে দেখল ফক্স। পুবে অ্যালব্যারাসিনের উঁচু পাহাড়ি এলাকা। কঠোর ট্রেইনিং নিয়েছে বলে বুঝে গেল, রাতে ক্যাম্প করতে হলে ওদিকটা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। পাহাড়ে আছে ঈগলের নীড়ের মত ছোট কিছু গুহা। ওখান থেকে নজর রাখতে পারবে মাইলের পর মাইল। আরও ভাল কোন জায়গা পেলে সেখানে ক্যাম্প করে রয়ে যাবে কয়েক সপ্তাহ। দরকার হলে গ্রামে এসে সংগ্রহ করবে সাপ্লাই। চাইলে কোন রেস্টুরেন্টে ঢুকে পেটপুজো করতেও অসুবিধে নেই।

চারপাশের পরিবেশ স্বর্গের মত, তাই এই এলাকায় শেকড় গাড়ার কথা ভাবছে ফক্স। মৃদু হাসল। আবারও ব্যাগ কাঁধে তুলে এগিয়ে চলল পাহাড়ের দিকে।

একটু পর পৌঁছে গেল গ্রামের সীমানায়। এরপর ওপরে গেছে পাহাড়ি ঢালু পথ। ওদিকে পা বাড়িয়ে হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক এক আওয়াজে থমকে গেল ফক্স। বরং বলা উচিত একাধিক আওয়াজ। হঠাৎ করেই সতর্ক হলো ও। কর্কশ গলায় হাসছে কয়েকজন লোক। সেইসঙ্গে এল ভীত এক কুকুরের করুণ আর্তনাদ। ফক্স খেয়াল করল, পুরনো এক ভাঙা দেয়ালের ওদিক থেকে আসছে আওয়াজ। সেদিকেই এগোল ও।

দেয়ালের ওপাশে জংলা জায়গায় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুক্ষ চেহারার ছয়জন লোক। পরনে ময়লা পোশাক। এদেরকে জিপসি বলেই মনে হলো ফক্সের। তাদের একজনের বয়স কমপক্ষে পঁয়তাল্লিশ। সবচেয়ে কমবয়সীর বয়স বড়জোর বাইশ। ফক্সের মনে পড়ল রিটার কথা। রিটা বলত দুনিয়ার সবচেয়ে বদমাস হচ্ছে রোমানি জিপসি গিটানোরা। হেন কুকীর্তি নেই যা তারা করতে পারে না। চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত, তাই তাদেরকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে সমাজ থেকে। এই ছয়জনকে ওই দলের লোক বলেই মনে হলো ফক্সের। এরা মানুষের প্রতি অন্যায় করলে ওর হয়তো কিছুই যেত আসত না। কিন্তু এখন যা করছে, তা প্রকৃতি বিরুদ্ধ। ওর নিজের প্রাণ থাকতে সেটা হতে দেবে না ফক্স।

বৃত্ত তৈরি করে দাঁড়িয়ে আছে লোকগুলো। মাঝে আটকা পড়েছে বাদামি-কালো রঙের বুড়ো এক কুকুর। বিশ্রীভাবে ছিঁড়ে গেছে ওটার ডান কান। পেছনের অকেজো বাম পায়ের ক্ষত বহু আগের। ফক্স বুঝে গেল, কেউ পোষে না কুকুরটাকে। আবর্জনা ঘেঁটে ভাল খেতে না পেয়ে শুকিয়ে গেছে। এ-মুহূর্তে গলায় দড়ি বেঁধে আটকে রাখা হয়েছে ওটাকে। হঠাৎ হঠাৎ যার খুশি লাথি মারছে। তা দেখে খ্যাক- খ্যাঁক করে হাসছে অন্যরা। বেদম মার খেয়ে কেঁউ-কেঁউ করে কেঁদে উঠছে বুড়ো কুকুর। জিপসি দলের দু’জনের হাতে মোটা দুটো লাঠি। অবলা জন্তুটার পিঠে জোরে নামছে ওগুলো। তৃতীয়জনের হাতে লোহার শিকল। প্রচণ্ড জোরে ওটা দিয়ে আঘাত করবে ভেবে খুশিমনে হাসছে যুবক।

পেছনে দাঁড়িয়ে আছে দলের বয়স্ক লোকটা। মারপিটে অংশ না নিলেও অন্য মতলব আছে তার। হাতে প্লাস্টিকের বোতল। ওদিকে চেয়ে ফক্স বুঝে গেল, ওটার ভেতরে আছে কেরোসিন বা পেট্রল। লোকটার জিন্সের প্যান্টের পকেট থেকে অর্ধেক বের হয়ে আছে একবাক্স ম্যাচ। বোতলের মুখ খুলছে বদমাসটা। ফুর্তি করার জন্যে দাহ্য তরল কুকুরটার গায়ে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেবে সে।

তিক্ত হয়ে গেল ফক্সের মন। বুঝে গেল, ও বেঁচে থাকতে এমন কুকীর্তি করতে দেবে না নরপশুগুলোকে।

ধীরে ধীরে কাঁধ থেকে নামিয়ে ব্যাগটা মাটিতে রাখল ফক্স। সোজা হেঁটে গেল লোকগুলোর দিকে। যার যার কাজে তারা এতই ব্যস্ত, দেখেনি দেয়ালের মাঝের ফাঁক গলে এদিকে এসেছে কেউ। অবশ্য, কয়েক মুহূর্ত পর ফক্সকে দেখতে পেল কমবয়েসী যুবক। নার্ভাস হয়ে চট্ করে তাকাল বয়স্ক লোকটার দিকে।

যুবকের দৃষ্টি অনুসরণ করে অগ্রসরমান ফক্সকে দেখল মধ্যবয়স্ক লোকটা। মুহূর্তে কঠোর হয়ে গেল তার দু’চোখের চাহনি।

থেমে গেছে লাথি মারা বা লাঠির বাড়ি। টানা করুণ আর্তনাদ ছাড়ছে কুকুরটা। সুযোগ পেলে পালিয়ে যাবে। লোকগুলোর কয়েক ফুটের মধ্যে গিয়ে থামল ফক্স। এরই ভেতর বুঝেছে, দলনেতা হচ্ছে দাহ্য ভরা বোতলের মালিক বয়স্ক লোকটা। ফলে সরাসরি তার দিকেই তাকাল ফক্স। কয়েক মুহূর্ত কেউ কিছু বলল না। সবার চোখ ফক্সের ওপর। তারপর কেউ কিছু বলার আগেই ভাঙা উচ্চারণে স্প্যানিশ ভাষায় বলল ফক্স, ‘মজা করার সময় বাধা দিলাম বলে দুঃখিত। কিন্তু ওটাকে জীবন্ত পোড়াতে দেব না। ওকে ছেড়ে দাও।’ আস্তে করে মাথা নাড়ল ও। ‘ওটা চলে যাক নিজের পথে।’

চোখে টিটকারি ও বিস্ময় নিয়ে ওকে দেখল দলনেতা। ভারী, গম্ভীর কণ্ঠে বলল সে, ‘তাই?’ হাত নাড়ল দলের সবার দিকে চেয়ে। ‘এই শালা আবার কোথাকার জোকার? বলছে, এটাকে মরতে দেবে না!’

দলনেতার কথায় মজা পেয়েছে দলের দু’একজন। অন্যরা আর হাসছে না। কারও কারও চোখে উদ্বেগের ছাপ। আসলেই দুশ্চিন্তার কারণ আছে তাদের।

‘না, দেব না,’ ধীরস্বরে বলল ফক্স। কণ্ঠ অতিশান্ত। কুকুরটার দিকে আঙুল তাক করল। ‘যা করছিলে সেটা আর কখনও করবে না। ছেড়ে দাও ওটাকে।’ ওর ভাষা হয়তো শুদ্ধ নয়, তবে বক্তব্য খুব পরিষ্কার। জিপসি দলের সবাই বুঝে গেল, ঠাণ্ডা মাথায় হুমকি দিচ্ছে ভিনদেশি একাকী যুবক। এরপর খারাপ কিছু হলে সেজন্যে দায়ী থাকবে না সে।

অবশ্য কোন কিছু শোনার মানসিক ইচ্ছে দলনেতার নেই। সেজন্যে হয়তো বাকি জীবন আফসোস করতে হবে তাকে। হাত থেকে বোতল ফেলে হিপ-পকেট থেকে হাড়ের হাতলওয়ালা ভাঁজ করা এক ছোরা বের করল সে। ক্লিক শব্দে খুলে গেল রুপালি ফলা। ঝিকিয়ে উঠছে সূর্যালোকে। চকচক করছে দলনেতার দুই চোখ। মুখে ফুটল হিংস্র হাসি।

জবাবে মৃদু কাঁধ ঝাঁকাল ফক্স। এরা লড়তে চাইলে ওর কোন আপত্তি নেই। এক পা এগোল দলনেতার দিকে। দুনিয়ার সেরা কমব্যাট শিক্ষকের কাছে ট্রেইনিং নিয়েছে ফক্স ওর চোখ ছোরার ওপর থাকলেও ভাল করেই বুঝে গেছে, এ- লোক জানে না কীভাবে ছোরা চালাতে হয়। নিজে থেকে কোন কথা বলল না ফক্স। এগোল আরও এক পা। নীরবে অপেক্ষা করছে হামলা মোকাবিলা করার জন্যে।

ওর মধ্যে বিন্দুমাত্র ভীতি নেই দেখে ঘাবড়ে গেছে জিপসিরা। নিচু গলায় কী যেন বলল কমবয়স্ক যুবক। ফক্স আন্দাজ করল বলা হয়েছে: ‘বাদ দাও তোমরা। আমি এসবে নেই।’ ঘুরেই দেয়ালের মাঝের ফাটল গলে চলে গেল যুবক। পিছিয়ে গেছে আরও দু’জন। যে-কোন সময়ে দৌড়ে পালিয়ে যাবে।

বোধহয় মুখরক্ষা করতে গিয়েই পিছু হটল না দলনেতা। মুখে এখন টিটকারির হাসিটা নেই। শূন্যের কোঠায় নেমেছে আত্মবিশ্বাস। বুঝে গেছে, পরাজয়ের লজ্জা এড়াতে হলে হামলা না করে কোন উপায় তার নেই। এক পা বেড়ে ফক্সের গলা লক্ষ্য করে ছোরা চালাল সে।

আগেই ঝট করে একপাশে সরে গেছে ফক্স। ওর গলার দু’ইঞ্চি দূর দিয়ে সাঁই করে ছোরা যেতেই খপ করে ধরেছে লোকটার কবজি। ওটা উল্টোদিকে ঠেলে দিতেই মড়াৎ শব্দে ভাঙল হাড়। বিকট আর্তনাদ ছাড়ল জিপসি নেতা। পাথরে ভরা মাটিতে খটাং শব্দে পড়ল ছোরা। এক লাথিতে ওটাকে দূরে পাঠাল ফক্স। ভাঙা কবজি নিচে ঠেলতেই বাধ্য হয়ে বসে পড়ল লোকটা। পরক্ষণে তার মুখে নামল ফক্সের ডান পায়ের সবুট লাথি। এত জোরে মারেনি যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মগজ। মাপা লাথি খেয়ে খটাৎ শব্দে ভেঙেছে জিপসি নেতার চোয়ালের হাড়। বহুদিন নরম খাবার গিলতে হবে তাকে। পরেও শক্ত কিছু চিবুতে গেলে বারবার ভাববে ফক্সের কথা।

রক্তাক্ত মুখ চেপে ধরে চিত হয়ে মাটিতে লোকটা পড়তেই অন্যদেরকে দেখল ফক্স। ভুরু কুঁচকে ফেলেছে শিকল হাতে যুবক। অনিশ্চিত হয়ে গেছে হামলা করবে, না করবে না।

ইংরেজিতে নরম সুরে বলল ফক্স, ‘তা হলে এসো।’

দ্বিতীয়বার ভাবল যুবক, তারপর শেকল ফেলে ঘুরে দৌড়ে চলে গেল দেয়ালের ওদিকে। কুকুরের দড়ি ধরা যুবকও পিছু নিল তার। রয়ে গেছে ছয় নম্বর যুবক। কিন্তু তার এত সাহস নেই যে একা লড়বে। ঘুরে দেয়ালের ফাটল লক্ষ্য করে ছুটল সে। উল্টোদিকে গেল তিন ঠ্যাঙের কুকুর। তিক্ত চেহারায় মাথা নাড়ল ফক্স। বিড়বিড় করে বলল, ‘কাপুরুষের দল!’

দৌড়ে তিরিশ গজ দূরে গিয়ে থামল জিপসিরা। মুঠো পাকিয়ে গলা ছেড়ে গালি দিল। ভাষা অচেনা হলেও বক্তব্য বুঝে গেল ফক্স। প্রথম সুযোগে প্রতিশোধ নেবে তারা।

জবাবে ফক্স বলল, ‘বুঝলাম, তোমরা বীরপুরুষ!’ তিক্ত মনে ভাবল, প্রথম দিনেই একদল নতুন বন্ধু জুটিয়ে নিয়েছি!

মাটিতে শুয়ে ওকে দেখছে জিপসি নেতা। চোখে ফুটে আছে ব্যথা ও ভয়। ভাঙা চোয়ালের যন্ত্রণায় কুঁচকে ফেলেছে গাল। গুঙিয়ে উঠে বলল, ‘কে তুমি?’

জবাবে ফক্স বলল, ‘বলার মত তেমন কেউ নই।’ টাকার ব্যাগ কাঁধে তুলে দেখতে পেল দূর থেকে ওকে দেখছে কুকুরটা। চোখে অদ্ভুত কৌতূহল। গলায় এখনও দড়ি। ধীরপায়ে গিয়ে নিষ্কম্প হাত ওটার দিকে বাড়িয়ে দিল ফক্স। আগ্রহ নিয়ে ওর গায়ের গন্ধ শুঁকল কুকুরটা। সাবধানে ওটার গলা থেকে দড়ি খুলে নিল ফক্স। নরম সুরে বলল, ‘তো, এবার? কী করবি?’

কয়েক মুহূর্ত দ্বিধা করল কুকুরটা। বোধহয় ভাবছে, রয়ে যাবে কি না নতুন লোকটার সঙ্গে। তারপর মনোভাব পাল্টে তিন পায়ে ভর করে ছুটে গেল গ্রামের দিকে। ওটা রয়ে গেলে মন্দ হতো না, ভাবল ফক্স। তবে ওই কুকুর বোধহয় ওর মতই ভালবাসা পাওয়ার অযোগ্য, চিরকালের একাকী।

পাহাড় লক্ষ্য করে রওনা হয়ে বিড়বিড় করে বলল ফক্স, ‘ঠিক আছে রে, আবারও হয়তো দেখা হবে।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *