কিন্ডারগার্টেন – জেমস ই গান
প্রথম দিন
আজ দিদিমণি মাকে আর বাবাকে ডেকে বলেছে যে আমার নাকি বুদ্ধি কম, বোকা,
ক্লাসে এরকম ছেলে একটাও নেই। কিন্তু আজ আমি একটা তারা বানিয়েছি, কী সুন্দর, কীরকম আলো! ওটা দেখে দিদিমণি খুব অবাক হয়ে গেছে, কিন্তু ভাবটা এমন যেন কিছুই হয়নি। বলল যে শুধুশুধু এত শক্তি নষ্ট করে ওটা বানানোর কী দরকার ছিল? আমি কিছু বলিনি। বলে কী হবে? সত্যি তারাটা কী সুন্দর!
দ্বিতীয় দিন
আজকে অনেকগুলো গ্রহ তৈরি করেছিঃ চারটে বড়, দুটো মাঝারি, আর তিনটে ছোট ছোট। দিদিমণি দেখে খুব হেসেছে। বলেছে, এতগুলো গ্রহ তৈরি করে লাভ কী হল? যেখানে ছ’টা গ্রহই হয় খুব ঠান্ডা নয় খুব গরম, তাতে প্রাণ তৈরি হতে পারবে না, শুধু শুধু সময় নষ্ট হল। আর বড়গুলোর ওজন বিরাট, আর বিষাক্ত পদার্থে তৈরি– কোনও কাজে আসবে না।
দিদিমণি কিছু বোঝে না। কাজে আসুক আর না-আসুক তৈরি করার মধ্যে একটা দারুণ আনন্দ আছে।
ছ’নম্বর গ্রহটার চারদিকে যে-রিংগুলো রয়েছে সেগুলো দেখতে কিন্তু চমৎকার।
তৃতীয় দিন
আজকে প্রাণ তৈরি করলাম। এখন বুঝতে পারছি আমাদের সবাই কেন কিছু তৈরি করাটাকে বেশি দাম দেয়।
বড় বড় জ্ঞানীগুণীদের মুখে শুনেছি বেঁচে থাকার অর্থ কী। তখন ভাবতাম, তার মানে শুধু বুঝি বয়েসে বেড়ে যাওয়া, বুড়ো হওয়া। এর আগে বেশ আনন্দেই ছিলাম : অন্য বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতাম, মহাশূন্যের বুকে যখন-তখন পাড়ি জমাতাম, কোনও অস্থায়ী তারায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ‘নোভা’ তৈরি করতাম, আরও কত কী!
কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি, জীবনের একটা অর্থ আছে, দাম আছে।
দিদিমণি ঠিকই বলেছিল, দুটো মাঝারি একটা খুদে গ্রহতেই প্রাণ তৈরির পরিবেশ রয়েছে। তিনটে গ্রহেই প্রাণ তৈরি করলাম, কিন্তু সূর্য থেকে তিন নম্বর গ্রহটাতেই কেবল প্রাণ টিকে থাকতে পারল।
আমি শুধু একটা নিয়মই তৈরি করে দিলাম–সেটা হল, বাঁচতে শেখো
চতুর্থ দিন
তিন নম্বর গ্রহটা আমার নাওয়া-খাওয়া কেড়ে নিয়েছে। ফুলে-ওঠা সমুদ্রের মধ্যে প্রাণীরা কিলবিল করছে।
আজ আর-একটা নতুন নিয়ম জুড়ে দিয়েছি : বংশবৃদ্ধি করো!
যেসব প্রাণী ধীরে ধীরে সমুদ্রে তৈরি হচ্ছে সেগুলোর গঠন বেশ জটপাকানো, ছেলেরা সব আমাকে খেলতে ডাকছে, কিন্তু এতে এমন মজা যে ছেড়ে যাওয়া যায় না।
পঞ্চম দিন
বারবার আমি সমুদ্রের প্রাণীদের ধরে ডাঙায় নিয়ে এসেছি, বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি।
যে ক’দিনে মরে যাওয়ার কথা তার চেয়ে বেশিদিন ওরা বেঁচে থেকেছে। কিন্তু তারপর মরে গেছে। তবে অনেকদিনের চেষ্টায় আমিই জিততাম। ওদের কারও ডাঙা বেশ সয়ে গেল।
ঠিকই ভেবেছিলাম, সমুদ্র ওদের জীবনে গতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ ডাঙার প্রাণীগুলো সমুদ্রের প্রাণীদের পেছনে রেখে তরতর করে উন্নতির পথে এগিয়ে চলল। বেশ ভালো লাগছে।
ষষ্ঠ দিন
এতদিন যা করেছি তা আজকের তুলনায় কিছুই না। আজ আমি বুদ্ধি তৈরি করেছি।
আজ একটা তিন নম্বর নিয়ম জুড়ে দিয়েছিঃ জানার চেষ্টা করো।
খুদে খুদে প্রাণী থেকে শেষ পর্যন্ত একটা দারুণ প্রাণী তৈরি হয়েছে। এটার দুটো পা, সোজা হয়ে হাঁটে, চলার সময়ে চারদিকে ফিরে অবাক হয়ে চেয়ে দেখে। প্রাণীটার হাত দুটো খুব দুর্বল, বুদ্ধিও তেমন নয়, কিন্তু সে একটার পর একটা সব জয় করে চলেছে। এমনকি পরিবেশকেও পর্যন্ত সে বাগ মানিয়েছে!
তারপর যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে বের করার চেষ্টা করছে আমার পরিচয়। দারুণ মজা লাগছে।
সপ্তম দিন
আজ ইস্কুল ছুটি। এত কষ্ট করে এতকিছু তৈরি করার পরে আজ খেলতে খুব ভালো লাগছে।
এ যেন কোনও সাদা বামন-তারার প্রচন্ড মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে হারিয়ে দিয়ে ছুটে চলা, তারপর বিশ্রাম নিয়ে ক্ষয়ে-যাওয়া শক্তি ফিরিয়ে আনা।
আজ দিদিমণি আবার মায়ের সঙ্গে বাবার সঙ্গে কথা বলেছে। দিদিমণি বলেছে, গত ক’দিনে আমার নাকি দারুণ উন্নতি হয়েছে। তবে আমার তৈরি জিনিসগুলো ঠিক নিয়মমাফিক হয়নি, উলটোপালটা খাপছাড়া হয়েছে। তা ছাড়া, কাজটা নাকি খুব বিপজ্জনক ছিল।
দিদিমণি বলেছে, এগুলো সব ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
কিন্তু আমার বাবা-মা মত দেয়নি, তারা বলেছে সূর্য থেকে তাপ নিয়ে তিন নম্বর গ্রহের প্রাণীদের এমন একটা অবস্থা হবে যে তারা নিজেরোই এক তাপ পারমাণবিক বিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। আমি ওই প্রাণীদের যেসব নিয়মে বেঁধেছি তাতে নিজে থেকেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ওরা একদিন বিলুপ্ত হবে।
দিদিমণি বলল যে এর দায়িত্ব আমার মা-বাবা তো আর নেবে না, সুতরাং দিদিমণিকেই যা ব্যবস্থা করার করতে হবে। কোনওরকম ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়।
তর্কে শেষ পর্যন্ত কে জিতল জানি না, আমি নিজের মনে সেখান থেকে সরে এসেছি। আমার মনটা যেন কেমন করছে। খুব খারাপ লাগছে।
ওটা নষ্ট হলে ক্ষতি কী? ওটা তো পুরোনো হয়ে গেছে। আমি বরং এর চেয়েও ভালো কতগুলো গ্রহ-তারা তৈরি করব।
কিন্তু হাজার হলেও এটাই তো আমার হাতে তৈরি প্রথম জিনিস, এটা নষ্ট করতে গেলে মন-খারাপ তো করবেই।
যদি কোনও প্রকাণ্ড ধূমকেতু সূর্যের দিকে শোঁশোঁ করে ধেয়ে যায় তা হলে সে-দৃশ্য আমি সইতে পারব না। তার চেয়ে বরং
অষ্টম দিন।