৯
লালসিং হাঁটতে শিখছে। কিতাগড়ের অন্তঃপুর তোলপাড় করে ঘুরে বেড়ায়। কথায় কথায় হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। মুৎনী প্রথম প্রথম ছুটে এসে ধরে ফেলত। এখন আর ধরে না। রাণীর হুকুম। লালসিং পড়ে যাক্, মুখ কাটুক, মাথা ভাটুক—ধরতে পারবে না মুৎনী। অত আগলে রাখলে কষ্টসহিষ্ণু হতে পারবে না। কষ্টসহিষ্ণু না হলে, বরাহভূম, ধলভূম আর সুপুরের রাজা হওয়া যায়—সতেরখানির নয়। রাজার ছেলে হয়ে জন্মালেই রাজা হওয়া যায় না এখানে। পরীক্ষা দিতে হয়—কঠোর পরীক্ষা।
প্রথম প্রথমে পড়ে গিয়ে কাঁদত লালসিং। এখন আর কাঁদে না। শিশুমনেও বোধহয় উপলব্ধি জেগেছে যে, হাঁটতে গেলে পড়তে হয়। আর পড়ে গেলে ব্যথাও পেতে হয়। কিন্তু তার জন্যে আকুল হবার কিছু নেই। ব্যথা আপনা থেকেই সেরে যায়।
ডান হাতের আঙুল কেটে ফেলেছিল লালসিং একদিন। বাবার অসাবধানে রাখা তরবারি নিয়ে খেলা করতে গিয়ে। রক্ত দেখে চমকে উঠেছিল মুৎনী। ছুটে গিয়ে রাণীকে ডেকে এনেছিল। কোথায় কেটেছে প্রশ্ন করা হলে যে ডান হাতখানা পেছনে লুকিয়ে রেখে ভালো মানুষের মতো বাঁ হাতখানা বাড়িয়ে দিয়েছিল মায়ের দিকে। আনন্দে ভরে উঠেছিল মায়ের বুক। জড়িয়ে ধরেছিল লালসিংকে।
কিন্তু সে ঘটনার পর বেশ কিছুদিন চলে গিয়েছে। প্রায় দুমাস হতে চলল। এই দুমাস অনেক পরিবর্তন হয়েছে ধারতির। পরিবর্তন হয়েছে সতেরখানির। এখন আর লালসিংএর দিকে চাইবার সময় নেই ধারতির। তার মাথায় অনেক চিন্তা। শত্রুরা এক নতুন কৌশল সুরু করেছে। খণ্ড খণ্ড দলে এসে মাঝে মাঝে সীমান্তে হানা দিচ্ছে। বুধকিস্কু অনেকদিন একা ঠেকিয়েছে। কিন্তু এখন সে অক্ষম। দিনের পর দিন না খেয়ে না ঘুমিয়ে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে তার। ফিরে এসেছে বাটালুকায়। না আসতেই চেয়েছিল সে। বাঘরায়ের মতো সে-ও খড়ের বিছানা বিছিয়ে নিয়েছিল এক পাহাড়ের গুহায়। ত্রিভন জোর করে ধরে এনেছে তাকে—তিরস্কারও করেছে। বিপদ যতই এগিয়ে আসছে ততই বজ্রকঠিন হয়ে উঠছে ত্রিভন। ভাবাবেগকে সে পছন্দ করত এককালে—এখন আর বরদাস্ত করতে পারে না। প্রৌঢ় বুধকিস্কু জীবনে অনেক আঘাতই হয়তো পেয়েছে, তবু ভাবাবেগকে কেন যে মনে স্থান দিল বুঝতে চেষ্টা করেনি ত্রিভন। সে শুধু বুঝেছিল সতেরখানির জনবল নগণ্য। বুধকিস্কু বাটালুকায় ফিরে এসে বিশ্রাম নিলে, স্বাস্থ্য তার ফিরে পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সে সুস্থ হলে চরমতম দিনে যথেষ্ট সাহায্য পাওয়া যাবে তার কাছ থেকে। তাই উগ্র ভাষা প্রয়োগ করেছিল সে বুধ-এর ছেলেমানুষীতে।
শত্রুদের কৌশল ব্যর্থ হয়নি। লোক কমে আসছে সতেরখানি তরফের। প্রতিদিন সীমান্তের দিকে পাড়ি দিচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চোয়াড়ের দল, আর প্রতিদিনই এ-বাড়ী ও-বাড়ী থেকে হাহাকার উঠছে। কান্নার আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয় সব কয়টি পাহাড়ে।
ত্রিভনের বুকে চাপা ব্যথার গুমড়ানি। সে ব্যথা সঞ্চায়িত হয়েছে ধারতির বুকেও। লালসিংকে দেখার সময় কোথায় তার?
—ভুলই করেছি ধারতি। ত্রিভন একদিন সীমান্ত থেকে ফিরে এসে বলে। এখন সে সীমান্তে ই থাকে। মাঝে মাঝে সময় করে কয়েকদণ্ডের জন্যে ফিরে আসে বাটালুকায়।
—না।
—রাজ্য জনশূন্য হতে চলল।
—হোক্।
—লিপুর!
—আমি রাণী, রাজা।
—হাঁ, রাণী। রাণী কি ভেবেচিন্তে আমার কথার জবাব দিচ্ছ? না, লিপুরের মতো খেয়ালের বশে কথা বলে চলেছ?
—রাণী আর লিপুরের তফাৎ আছে রাজা। কিন্তু মন তাদের একই। দুজনেই বাটালুকার মেয়ে—দুজনেই ভালোবাসে সতেরখানিকে।
—সে ভালোবাসা কি শুধু এখানকার বন-জঙ্গল পাহাড় আর মাটির জন্যে?
—না, রাজা। মানুষদেরই ভালোবাসি আমি। জানি, এ-যুদ্ধে সব সংসারেই বিধবা আর অনাথের সংখ্যা বাড়বে-না খেয়ে মরবে কত, তবু তুমি ভুল করনি।
—রাণী।
—শুধু বেঁচে থাকাটাই কি সব রাজা? আমি জানি, তুমি সব বোঝ। তবু এমন দুর্বল হয়ে পড় কেন মাঝে মাঝে? ধারতি কয়েক পা এগিয়ে এসে ত্রিভনের গলা বেষ্টন করে দুহাতে।
—একি! নিজের হাতের দিকে চেয়ে চমকে ওঠে ধারতি।
—রক্ত।
—কোথা থেকে লাগল?
—গলা থেকে। তীরটা গলার চামড়া উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল। বুকেও লাগতে পারত। আমি হলে ঠিক লাগাতে পারতাম।
—ও। আহত স্থানটি এক ঝলক দেখে নেয় ধারতি। মুখে তার হাসি ফোটে। সতেরখানির বীর রাজা। তবু একান্তভাবে তারই। যুদ্ধের সাজে এখন আর সাজিয়ে দিতে পারে না সে। সময় থাকে না।
এমনিভাবে ধূমকেতুর মতো এসে বিদায় নিয়ে আর হয়তো ফিরবে না ত্রিভন। ভাবতে গিয়ে শিউরে ওঠে ধারতি—অথচ কতবার ভেবেছে একথা।
যদি সত্যিই ত্রিভন না ফেরে একদিন—মনকে ভাবাবেগবর্জিত করে ভাবতে চেষ্টা করে ধারতি। তেমন দিন আসতে পারে বৈকি। তেমন দিন এলে নিজের জন্যে ব্যস্ত হবার বিশেষ কারণ নেই। শত্রুর সামনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে করতে সে মরতে পারবে। কিংবা আত্মহত্যা।
কিন্তু লালসিং? সে কোথায় যাবে?
ত্রিভন একদৃষ্টে চেয়ে ছিল ধারতির মুখের দিকে। ধারতির চোখের পাতায় আর মুখের রেখায় বোধহয় স্পন্দিত হচ্ছিল তার চিন্তাধারা। অনুমান করতে পারে ত্রিভন।
—আমি মরলেও তোমার মরা চলবে না রাণী।
কেঁপে ওঠে ধারতি,—কেন?
—লালসিং-এর জন্যেই তোমার বাঁচতে হবে। তোমার তত্ত্বাবধানে থাকলে একদিন সে সতেরখানি তরফের উপযুক্ত রাজা হয়ে উঠবে—এ আমি জানি। সব শিখিও তাকে।
ধারতি স্তব্ধ!
—পারবে তো রাণী?
অনেক চেষ্টার পর রাণী মুখ খোলে,—পারব রাজা। সাধ্যমতো চেষ্টা করব তোমার কথা মেনে চলতে।
কেঁদে ফেলে রাণী। কাঁটারাঞ্জার কালো পাথরের পাশে সেদিনের লিপুর একবার যেমন কেঁদেছিল ঠিক তেমনি।
ত্রিভন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। একটুও নড়ে না। সে শুধু ভাবে। কতখানি শক্তির অধিকারিণী হতে পারলে অনাগত সত্যকে এভাবে মেনে নিতে পারে মেয়েরা।
—আর একটা কথা। লালসিং-এর জীবনের জন্যে হয়তো তোমাকে সবার অলক্ষ্যে চোরের মতো পালিয়ে যেতে হবে।
—না। চোরের মতো পালাতে আমি পারব না।
—অবুঝ হয়ো না রাণী। সকলের সামনে দিয়ে রাণীর সম্মান নিয়ে চলে যাবার সুযোগ তোমার নাও আসতে পারে।
—তাই বলে চোরের মতো?
—হাঁ। ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে দিয়ে, শালবনের অন্ধকার ভেদ করে, পাহাড় পেরিয়ে যাবে তুমি। কোলে থাকবে লালসিং–তোমার আর আমার লালসিং। তোমার শিক্ষায় আমাদের লালসিং একদিন হয়ে উঠবে সারা সতেরখানির লালসিং।
—রাজা। আর্তনাদ করে ওঠে ধারতি।
—রাণী।
—বল, তোমার কি হয়েছে।
—কিছু নয় তো।
—তবে আসল ঘটনা খুলে বল। লুকিও না রাজা। তুমি যা বলবে অক্ষরে অক্ষরে মেনে নেব। শুধু সত্যি কথা আমাকে খুলে বল। সে-দিন কি খুবই কাছে যার জন্যে আজই তোমাকে এত কথা বলতে হচ্ছে?
—হাঁ লিপুর। আমার কাঁটারাঞ্জার কালো পাথরের লিপুরের কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় হয়ে এসেছে। এগিয়ে আসছে তারা। দল বেঁধে এগিয়ে আসছে। সাধ্য নেই যে ঠেকিয়ে রাখি। জনবল নেই, ওদের সিকিও যদি থাকত আমার, প্রচণ্ড আঘাত দিয়ে ফিরিয়ে দিতে পারতাম।
—আমি লুকিয়েই যাব রাজা। তুমি নিশ্চিন্ত হও। তোমার লালসিংকে সার্থক করে গড়ে তুলব। সে প্রতিশোধ নেবে—দারুণ প্রতিশোধ। তার জন্যে সতেরখানির শেষ পুরুষটি ও যদি প্রাণ দেয়, পেছপা হবে না সে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি রাজা, এইভাবেই তাকে গড়ে তুলব।
একটু থেমে কি যেন ভাবে রাণী। তার চোখের দৃষ্টি স্থির, ওষ্ঠ দৃঢ়। শেষে বলে,—আর যদি দেখি, তেমন করে তুলতে পারলাম না তাকে, যদি সে অন্যরকম হয়ে ওঠে, তবে নিজের হাতে বিষ দেব তোমার লালসিংকে।
ত্রিভন চেয়ে থাকে। এই রাণীকে সে চেনে না—যেন নতুন দেখছে। কিতাপাটকে নিঃস্ব করে দিয়ে সমস্ত শক্তিটুকু যেন মূর্তি ধরে এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে।
—বিজলী আজ নেই ধারতি। সে থাকলে ভাবতে হতো না। নিরাপদে তোমাদের পৌঁছে দিত সারিগ্রামে।
—সারিগ্রাম?
—হাঁ। রান্কো তোমাদের জন্যে ব্যবস্থা করে রেখেছে সেখানে। শত্রুদের দৃষ্টি অতদূর যাবে না। লালসিংকে খুঁজে পাবে না তারা।
—এতদূর এগিয়েছ, অথচ আমাকে জানাওনি রাজা।
—খুবই তাড়াতাড়ি সব হ’য়েছে। সীমান্ত থেকেই রান্কোকে পাঠিয়েছিলাম। তাছাড়া তোমাকে সত্যিই এতদিন চিনতে পারিনি। আমার লিপুর যে এতবড় তা জানতাম না।
ত্রিভন কথা শেষ করে হাসে। ধারতির মুখেও হাসি। সব বিপদের কথা ভুলে যায় তারা। মুগ্ধ নেত্রে চেয়ে থাকে উভয়ে উভয়ের দিকে।
.
যে রাতে কিতাগড় থেকে বাঁশের বাঁশীর বিষাদ সুর ভেসে বেড়িয়ে বাটালুকার আকাশবাতাসকে অভিভূত করে। আশেপাশের প্রতিটি কুঁড়েঘরের বিরহিণী সে সুরের মূর্ছনায় পাগল হয়ে ওঠে। তাদের চোখ দিয়ে তপ্ত অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল বাহুল্যহীন শয্যায়। শয্যার ওপর ঘুমন্ত শিশুদের কথা ভুলে যায় তারা।
ঝাঁপনী সাল্হাই হাঁসদার ডানহাতখানা শরীরের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসে। দেহ ক্লান্ত তার—অথচ মন বুভুক্ষু। শয্যা ছেড়ে মাটিতে নামে সে। অনেকটা দূর হলেও বাঁশীর সুর তার কানেও পৌঁছেছে।
—কোথায় যাচ্ছ? সাল্হাই জেগে উঠেছে। এটা তার নিয়মের ঘোরতর ব্যতিক্রম। ঝাঁপনী পাশে শুলে, একটা নিযমিত সময়ের পরেই তার আর জ্ঞান থাকে না। গভীর ঘুমে অচেতন হয় সে। ঘুম ভাঙে একেবারে ভোর বেলা। কিন্তু দুচারদিন থেকে সে আর ঠিকমতো ঘুমোতে পারছে না। মাঝে মাঝে এইভাবে জেগে ওঠে। সীমান্তের ঘটনা তাকে আতঙ্কিত করেছে। রাজার লোক হয়তো বাড়ীতে এসে হানা দেবে—তার সাহায্য চাইবে। সে ভালো রকম জানে, এই রাতে দু’চারজন বৃদ্ধ আর অক্ষম পুরুষ ছাড়া খুব কম লোকই ঘরে রয়েছে। সবাই জড়ো হয়েছে সীমান্তে আর কিতাগড়ে। কিতাগড়ের পাশে চোয়াড়দের আস্তানা উঠেছে—সারিমুর্মু তাদের সর্দার। সীমান্তের সর্দার রাজা নিজে আর রান্কো। অদ্ভুত কৌশলে রাজা নাকি এগিয়ে আসা শত্রুদের থামিয়ে দিয়েছেন কয়েকদিনের জন্যে। কি সে কৌশল সাল্হাই জানে না। যে চোয়াড় খবর পেয়েছিল সেও বলতে পারেনি। তবে রাজার এই কৌশল ক্ষণস্থায়ী। দুদিন পরেই আবার এগোতে সুরু করবে তারা। ভাবতেও গায়ে কাঁটা দেয় সাল্হাইএর।
ঝাঁপনী সাল্হাইএর দিকে হিংস্রদৃষ্টিতে চেয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। –বললে না কোথায় যাচ্ছো? সাল্হাই তাড়াতাড়ি উঠে বসে।
—বাইরে। ঝাঁপনী দরজা খোলে।
—এই রাতে? পাগল হয়েছ নাকি?
ঝাঁপনী কথা বলে না। বাইরে পা বাড়ায় সে।
—আরে! সত্যিই যাচ্ছো? ভালুকের ভয় নেই।
—না।
—ঝাঁপনী! চাটাই ছেড়ে ছুটে আসে সাল্হাই দরজার দিকে।
উন্মত্তের মতো ছুটে চলে ঝাঁপনী। মুহূর্তের মধ্যে রাশি রাশি অন্ধকার গ্রাস করে তাকে। সাল্হাই ঘরের বাইরে কিছুক্ষণ থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। শেষে ভালুকের কথা মনে পড়তেই কাঁপতে কাঁপতে এসে দরজায় খিল লাগায়। মনকে সান্ত্বনা দেয়, পাগলের পেছনে ছুটে প্রাণ হারিয়ে লাভ নেই। সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না। এভাবে বাইরে ছুটে যাবার কি কারণ থাকতে পারে ঝাঁপনীর
অনেকটা পথ দৌড়ে এসে এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়ায় ঝাঁপনী। নানান্ ফুলের মেশানো গন্ধ নাকে এসে লাগে। সে বুক ভরে টেনে নেয়।
বাঁশীর সুর তখনো কেঁপে কেঁপে বেজে চলেছে। ঝাঁপনী জানে কে ওই বাঁশীওলা! সবাই না জানলেও অনেকেই জানে।
কিতাগড়ের একটু দূরে চোয়াড়দের আস্তানা। সর্দার সারিমুর্মুর হুকুমে এদের নড়া বসা। রাজা ত্রিভনেরও এদের ব্যাপারে কিছু বলার নেই।
ঝাঁপনী অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে আস্তানার দিকে চেয়ে। মনে ক্ষীণ দুরাশা রান্কোকে হয়তো দেখতে পাবে এখানে। সে-ও তো এক সর্দার।
একটি মশালও জ্বলছে না চোয়াড়দের আড্ডায় একটি লোকও জেগে আছে বলে মনে হয় না! বৃদ্ধ সারিমুর্মুর কথা ভেবে মনে মনে হাসে ঝাঁপনী। বয়স যখন নেই, রাজার কাছে নিজেকে ওভাবে জাহির না করলেই ভালো করত সর্দার। নিজে অক্ষম হয়ে পড়লে দলের ওপরও দখল রাখা যায় না। শত্রুরা এই রাতের অন্ধকারে যদি এগিয়ে আসে বিনা বাধায় প্রবেশ করবে তারা কিতাগড়ে। সর্দারের ওপর নির্ভর করার ফল হাতে-নাতে পাবেন রাজা। অমন মন-কাঁদানো বাঁশী মুহূর্তে স্তব্ধ হবে।
ঝাঁপনী লক্ষ্য করেছে রান্কোরও অগাধ বিশ্বাস এই বৃদ্ধের ওপর। তার থেকেই তো সব শোনা। নইলে কিতাগড়ের এত সব খবর সতেরখানির এক কাপুরুষের স্ত্রীর কাছে এসে পৌঁছবে কি ভাবে?
নাঃ। রান্কো এখানে থাকতে পারে না। তার কাজ সীমান্তে। নিরাশ হয় ঝাঁপনী। ভাবে, বাঁশীর সুর শুনে এভাবে ছুটে আসা ঠিক হয়নি। সাল্হাইকে একটা ভালো রকম কৈফিয়ৎ দিতে না পারলে ঝঞ্ঝাট বাড়বে।
তবু, একবার যখন ঘর ছেড়েছে, শেষ দেখে যাবে। কাঁটারাঞ্জার যাবে সে-পারাউমুর্মুর বাড়ী। হয়তো আজই রান্কো রয়েছে সেখানে। অসম্ভবও তো সম্ভব হয় কখনো কখনো
পেছন ফিরতে গিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে ঝাঁপনী। দুজন পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে তার দুই পাশে।
—ভয় নেই।
—কে তোমরা?
—চোয়াড়। কিতাগড়ের রক্ষী। এখানে কেন এসেছ?
—তোমরা কোথায় ছিলে? আগে তো দেখিনি।
—সব জায়গাতেই আছি আমরা। একটা ছুঁচোও আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে কিতাগড়ের দিকে যেতে পারবে না।
সারিমুর্মুর কাছে মনে মনে ক্ষমা প্রার্থনা করে ঝাঁপনী। যাকে সে চেনে না, নিজের কাঁচা বুদ্ধি নিয়ে তার সম্বন্ধে মনে অশ্রদ্ধা পোষণ করা উচিত নয়। সেটা ধৃষ্টতা।
চোয়াড় দুজন একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে। সন্তোষজনক জবাব চায় তারা। এত রাত্রে একজন নারীর কিতাগড়ের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানোকে তারা সহজ চোখে দেখেনি।
ঝাঁপনী বুঝতে পারে, এরা বাটালুকার লোক নয়। তাই চেনে না তাকে। আশেপাশের গ্রামেরও নয়, তাহলে কিতাডুংরির উৎসবে অন্ততঃ একবার দেখা হত। জবাব এদের দিতেই হবে।
—রান্কো সর্দার নেই?
—সে এখানে থাকবে কেন? আমরা সারিমুর্মুর লোক।
—তা তো আমি জানি না। অত বুঝিও না। কিতাপাটের প্রসাদ রয়েছে। তাকে দেবো।
—সেখান থেকেই আসছো?
—হ্যাঁ।
—মিথ্যে কথা। দৃঢ় স্বর ঝংকৃত হয় একজন পুরুষের।
ঝাঁপনী কেঁপে ওঠে। শেষে প্রায় সত্যি কথাই বলতে হয় তাকে। সে স্বীকার করে যে, সে সাল্হাই হাঁসদার স্ত্রী। রাজার বাঁশী শুনে উঠে এসেছে। কেন এসেছে সে নিজেই জানে না।
—চল বাড়ী পৌঁছে দিয়ে আসি।
—না। বাড়ী যাব না।
—তবে চল সর্দার সারিমুর্মুর কাছে।
ঝাঁপনী বুঝতে পারে, এরা বোকা নয়। ছলনাতেও ভোলানো যাবে না এদের। মরিয়া হ’য়ে সে বলে—পারাউমুর্মুর বাড়ী পৌঁছে দাও।
—সেখানে কি করবে?
—তাতে তোমাদের দরকার নেই।
—সেখানে কেউ থাকে না।
—তোমাদের চেয়ে তা আমি ভালোভাবে জানি। যদি পৌঁছে দিতে হয়—সেখানে নিয়ে চল। নইলে আমাকে যেতে দাও। তোমাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় নেই আমার। আমারও কাজ আছে।
পুরুষ দু’জন অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে ঝাঁপনীর মুখের দিকে। অন্ধকারের মধ্যেও তন্নতন্ন করে খোঁজে তার মনের অভিসন্ধিকে। শেষে বিশ্বাস করে। যেতে দেয় তাকে।
অন্ধকারে কাঁটারাঞ্জার দিকে এগিয়ে যায় ঝাঁপনী। শেষ চেষ্টা।
.
হাণ্ডির হাঁড়িটা নিয়ে বসতেই দরজায় ধাক্কা শুনতে পায় রান্কো। এত রাত্রে এভাবে লোক আসা কাঁটারাঞ্জার মতন জায়গায় একটু অস্বাভাবিক। মুহূর্তের মধ্যে তার মস্তিষ্ক সবটুকু কাজই করল, অথচ কোনো মীমাংসায় আসতে পারে না সে। হয়ত রাজাই লোক পাঠিয়েছেন অনুমানের ওপর নির্ভর করে। সীমান্ত থেকে ত্রিভন চলে আসার কিছুক্ষণ পরে সেও চলে এসেছিল। এসে রাজার সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। বড় পরিশ্রান্ত বোধ করছিল।
শত্রুরা দুদিন আর এগোবে না। রাজার চমকপ্রদ কৌশলের জন্যে তারা বিপর্যস্ত। অবশ্য এই কৌশলের জন্য পাঁচ জল লোক জখম হয়েছে। চোয়াড়দের হাণ্ডির ভাঁড়গুলো নিয়ে একদল অসমসাহসী লোক শত্রুসেনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের পাশ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। ঝাঁপিয়ে পড়েছিল শত্রুরা। সেই প্রথম চোটেই পাঁচ জন জখম হয়। বাকী বিশ জন হাত জোড় করে বলে, তারা নিরীহ মানুষ। ত্রিভন সিংএর চোয়াড়দের জন্যে হাণ্ডি নিয়ে যাচ্ছিল। পথ ভুল করেছে।
শত্রুদের উল্লাসের বাঁধ ভেঙেছিল। তাদের অধিকাংশই হাণ্ডির পাত্র থেকে চুমুক দিয়ে কিছু না কিছু খেয়েছে। জানত না অমৃতের মধ্যেও কালকুট থাকে। ফলে মরেছে অনেক, অসুস্থ হয়েছে তার চেয়েও বেশী। এই সব অক্ষম সৈন্যদের ব্যবস্থা করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে আসতে সময় লাগবে ওদের। সেই অবসরে নিজেদের হাণ্ডির সংগ্রহ করতে হবে আবার। নইলে চোয়াড়দের মনোবল নষ্ট হবে। খালি পেটে তারা দিন কাটাতে পারে। হাণ্ডি ছাড়া নয়। একদিনেই অনেকে যেন ঝিমিয়ে পড়েছে বলে বোধ হল। তাই রাজা চলে আসার পরই নিজের দায়িত্বে দশজন লোক নিয়ে ফিরে এসেছে রান্কো বাটালুকায়—আরও দশজনকে পাঠিয়েছে তরফের অন্যান্য দিকে। তারা কতদূর সফল হবে জানে না সে। তবে বাটালুকা থেকে বেশ কিছু পাওয়া যাবে এবিষয়ে সে নিশ্চিন্ত। কারণ শুকোলদের মতো অনেকেই রয়েছে এখানে, যাদের হাণ্ডি তৈরী করা ব্যবসা।
শুকোলদের বাড়ীতে দশ হাঁড়ি পাওয়া গিয়েছে। তার থেকে নিজের জন্য চেয়ে নিয়েছে সে। তারও প্রয়োজন রয়েছে হাণ্ডিতে। সে-ও ক্লান্ত। প্রথম প্রহরেই খেত সে। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়েছিল হঠাৎ। ঘুম ভাঙতেই হাণ্ডি নিয়ে বসেছে। ও-জিনিষ পেটে না পড়লে ভোর রাতে তার পক্ষে পথ চলাই হয়তো মুশকিল হবে। পেট খালি রেখে কতদিন আর শরীরকে মজবুত রাখা সম্ভব।
সঙ্গে যারা এসেছে হাণ্ডি নিতে, তাদেরই কারও কাছ থেকে বোধ হয় খবর পৌঁছেছে রাজার কাছে। তাই মাঝরাতে এই তলব।
দরজাটা আবার ঝঝন্ করে ওঠে। মরিয়া হয়ে কেউ ধাক্কা দিচ্ছে। হয়তো এর মধ্যেই কোনো বিপদ ঘটেছে। রান্কো ছুটে গিয়ে খুলে দেয়।
এক ঝলক আগুন যেন এসে গায়ের ওপর পড়ে। না না, অমৃত। রান্কো ঠিক বুঝতে পারে না। শুধু সে ঝাঁপনীর মুদিত চোখ দুটির দিকে চেয়ে থাকে। মাটিতে ঝরে পড়া মহুয়া ফুল। গন্ধে ভরপুর—অথচ শুকিয়ে যাবে।
কোনো কথাই বলে না তারা। শুধু দুজনের বুকের ধুকধুকানি অনুভব করে দু’জনে—আনন্দের, উত্তেজনার, বিষাদের। সারিগ্রাম থেকে যেদিন প্রথম ঝাঁপনীকে নিয়ে আসে রান্কো সে-রাতে এমনিই অনুভব করেছিল। শত চেষ্টাতেও বহুক্ষণ কথা বলতে পারেনি।
এক হাতে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে রান্কো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,—বল ঝাঁপনী।
—তুমি বল।
—আজ আমি শুনব।
—রোজই তো তুমি শোনো।
—তোমার আর আমার মধ্যে এটাই বোধ হয় নিয়ম।
—আমাকে নিয়ে চল।
—কোথায়?
—তোমার সঙ্গে।
—আর একবার এই কথা বলেছিল। মনে আছে?
—হুঁ।
—বল তো কোথায়?
—কিতাডুংরিতে।
—তবু বলছ?
—বলব- চিরকাল বলব। না বলে যে পারি না গো।
ঝরঝর করে জল গড়িয়ে পড়ে ঝাঁপনীর দু’চোখ বেয়ে।
—চিরকালেরও শেষ আছে ঝাঁপনী।
—জানি। খুব তাড়াতাড়ি।
—কে বলল তোমাকে? রান্কো অবাক হয়!
—কিতাগড়ের পাশে রাতের অন্ধকারে চোয়াড়েরা বেড়াচ্ছে। তবু বুঝব না?
—তুমি বুদ্ধিমতী।
—তোমার জন্যে। এত সব ভাবি, শুধু তোমার কথা ভেবেই। নইলে সাল্হাই হাঁসদার বউএর দরকার ছিল না কোনো এতে কোনো মাথা ঘামানোর।
দমকা হাওয়ায় ভেজানো দরজা খুলে যায়।
—রাত ভোর হতে দেরী নেই ঝাঁপনী। ভোরেই রওনা হব আমি।
ফ্যাকাসে হয়ে যায় ঝাঁপনীর মুখ। সে কোনো জবাব দিতে পারে না। শুধু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রান্কোকে।
এসো ঝাঁপনী। আজকের মতো আনন্দ করে নিই। হাণ্ডি রয়েছে ঘরে। দুঃখের দিনের কথা ভেবে লাভ কি?
—রাজাও বুঝি সেইজন্যেই বাঁশ বাজাচ্ছেন?
—রাজা বাঁশী বাজাচ্ছেন?
—হ্যাঁ। সেই বাঁশীর সুর স্বপ্নের মধ্যে আমাকে জাগিয়ে দিল। তোমাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠলাম। অসম্ভব জেনেও ঘর থেকে বাইরে এলাম। কিন্তু বাধ দিল ও।
—কে?
—তোমাদের সাল্হাই হাঁসদা।
—সে তোমার পেছনে ছোটেনি তো?
—না। বড্ড ভীতু। ভালুকের ভয়। ওর ঠাকুর্দাকে ভালুকে মেরেছিল। রান্কো হেসে ওঠে।
ঝাঁপনী বলে—রাজার বাঁশীর সুরে অত দুঃখ কেন?
—সতেরখানির দুঃখ ঝরছে ওতে। অনেক স্বপ্ন দেখতেন রাজা। এখনো দেখেন। কিন্তু স্বপ্ন সত্যি হওয়া বড় কঠিন। তাই স্বপ্ন ভাঙার দুঃখ তার বাঁশীর সুরে।
হাণ্ডি খেয়ে দুজন নাচতে শুরু করে। কিতাডুংরির নাচের মতো উদ্দাম। রান্কোর নিজের বাড়ীতেও এমন নাচত তারা। পাড়ার বুড়োরা এসে গালাগালি দিত কত। নাচতে কেউ-ই মানা করে না। কিন্তু এদের সময়ের জ্ঞান ছিল কম। রাত বে-রাতে খেয়াল মতো হাণ্ডি খেয়ে নাচতে শুরু করত।
আজও তেমনি নেচে চলে।
শেষে এক সময় ভোরের পাখী ডেকে ওঠে। বাতাসে শিশির ভেজা লতাপাতার গন্ধ। খেয়াল হয় রান্কোর। নাচ থামায় সে। অবসন্ন ঝাঁপনী এলিয়ে পড়ে তার বুকের ওপর অনেক আগের পরিচিত বুক। ঠিক কোনখানে মাথা রাখলে আরাম হয়, সে জানে। সাল্হাই-এর বুক অমন নয়।
—এখনি ওরা আসবে ঝাঁপনী।
—কারা?
—সীমান্তে হাণ্ডি বয়ে নিয়ে যাবার জন দশজন লোক এসেছে আমার সঙ্গে।
—তবে সে হলো না। উতলা হল ঝাঁপনী।
—কি হলো না?
চুপ করে থাকে ঝাঁপনী।
—বল ঝাঁপনী।
তবু কথা বলে না সে। হাণ্ডির গুণে—তার অনেক লজ্জা খসে গিয়েছে। কিন্তু চরম জিনিস কি অত সহজে বলা যায়? সে যে মেয়ে। রান্কোকে সে চেনে—ভালোভাবেই চেনে। দেহে ও মনে। তবু কতদিন হয়ে গিয়েছে—অনেকদূরে সরে গিয়েছে রান্কো। দেহের দিক থেকেই সাল্হাই তার কাছে অনেক বেশী পরিচিত। রান্কো নতুনই—বহুদিনের অব্যবহার্য জিনিস এমন নতুন বলেই মনে হয়
—বলবে না ঝাঁপনী?
—হ্যাঁ বলব! বলবই তো। কতদিন আর মনের মধ্যে পুষে রাখব? ঝাঁপনী আবার থামে তার মন মাথা ঠোকে কথাটা বলে ফেলার জন্যে।
শেষে ভাষা খুঁজে পায়। বলে,—এত যে বাচ্চা হল আমার, সবাই হবে বাপের মতো ভীতু! ঝাঁপনী চুপ করে। সে রান্কোর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চায়।
—বল ঝাঁপনী। থামলে কেন?
—একজনও কি তোমার মতো হবে না?
—হবে হয় তো।
—না। দৃঢ় স্বর ঝাঁপনীর
—এখন কি করে বুঝবে?
—বুঝতে পারি আমি।
—তবে, সে তোমার ভাগ্য।
—মানব কেন ভাগ্য? তোমার মতো ছেলে আমার চাই-ই। কি নিয়ে বাঁচব?
—কি করে সম্ভব?
—তুমি দেবে।
চমকে ওঠে রান্কো
—বল, দেবে আমাকে?
—বড় দেরীতে বললে ঝাঁপনী।
—না দেরি হয়নি।
—কি করে বুঝলে?
—এতগুলোর মা হলাম, আমি বুঝিনে?
—কিন্তু —!
—কিন্তু নয়।
—আমার একবিন্দু অবসর বোধহয় মিলবে না আর। হয়তো আর দেখাই হবে না।
—আমিও জানি তুমি আর ফিরবে না। কয়েক দিন থেকে যাও।
—অসম্ভব। এখনি ওরা আসবে। বাটালুকা ছাড়তেই হবে আমাকে। চোয়াড়রা ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে আমার জন্যে—হাণ্ডির জন্যে।
রান্কো ভেবে পায় না ঝাঁপনী কি করে বুঝল যে সে আর ফিরবে না। মরতে তাকে হবেই। রাজাও বাঁচবেন না। সম্মানের জন্যে যেখানে যুদ্ধ সেখানে রাজা আর সর্দারেরা যুদ্ধের পরে বেঁচে থাকতে পারে না। বাঁচতে হলেও শত শত পিতৃহীন অনাথ আর বিধবাদের ফেলে রেখে অন্য রাজ্যে পালিয়ে যেতে হয়—যা এক্ষেত্রে অসম্ভব
রান্কোর চোখদুটো ভিজে ওঠে, কিতাডুংরির পাহাড়ের বিচারের দিনে কাঁদতে গিয়ে সর্দারের ধমক খেয়ে সে চোখের জল মুছে ফেলেছিল। তারপর এই প্রথম।
ঠিক সেই সময়ে ওরা এসে পড়ে। বাইরে থেকে ডাক দেয় রান্কোকে। অনেক হাণ্ডি সংগ্রহ করেছে, সারা রাত ঘুরে। শুকোলদের বাড়ী থেকে বাকীটুকু নিয়ে যাবে।
ঝাঁপনী আছড়ে পড়ে রান্কোর পায়ের ওপর,—কি নিয়ে থাকব বল। বলে যাও কি নিয়ে থাকব।
—তোমাকে একটু লুকোতে হবে ঝাঁপনী। ওরা দেখলে ফল খুব ভালো হবে না। –কি নিয়ে থাকব আমি?
—স্মৃতি! পথে ঘাটে অনেক মেয়েই দেখতে পাবে তখন। তাদেরও ছেলেপুলে নেই। নতুন বিয়ের পর স্বামীকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিল। স্মৃতি নিয়ে তারাও বাঁচবে। বাঁচতে হবে। নতুন করে ঘর গড়া সম্ভব হবে না সকলের পক্ষে! পুরুষ কমে যাবে সতেরখানির। তোমার তবু কাজ আছে। তাদের কিছুই নেই।
ঝাঁপনী স্তব্ধ হয়ে যায়।
.