কিছুক্ষণ
এক
ঠকাস। বিশ্রী শব্দ। চায়ের কাপ রাখা হল গোল কাচের সেন্টার টেবিলে। রাখলেন বড়মামা। বিপরীত দিকের সোফায় বসে থাকা মেজোমামার দুটো ভুরুর মাঝখানে বিরক্তির একটা ভাঁজ দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। নিজের মনেই বললেন, ‘এটাকে এবার সরাতে হবে। সকলের জন্যে সব জিনিস নয়। এখানে একটা তেলের ড্রাম রাখতে হবে।’
মেজোমামার চা শেষ হয়নি। এক হাতে চায়ের কাপ, আর-এক হাতে একটা ইংরেজি বই—If you want to live with a Chimpanzee. জোরে-জোরে পড়তে শুরু করলেন, যেন পরীক্ষার পড়া। বইটা ইংরিজি, পড়ছেন বাংলা—’সব মানুষই মানুষ নয়। মানুষের মতো দেখতে হলেও ভেতরে আদিমতা থেকেই যায়। যেমন, চায়ের কেটলি, বাইরেটা ঝকঝকে, ভেতরটা কালো। সেই জন্যে মানুষের আর-এক নাম, আদমি। আমেরিকানরা বলে, গাই। স্বভাব অনুসারে মানুষের বিভিন্ন নাম, ষণ্ড, পাষণ্ড, ভণ্ড, কুষ্মাণ্ড। এরা দিনের-পর-দিন সভ্য সমাজে সভ্য মানুষের সঙ্গে থাকলেও সভ্য আচরণ শেখে না। এরা এক ধরনের শিম্পাঞ্জি। এরা ছেলেবেলায় ক্লাসে প্রচুর পেটাই খায়। ক্লাসের বাইরে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, তবু মানুষ হয় না।’
বড়মামার হাতেও একটা বই—How to be a man. বড়মামাও জোরে-জোরে পড়া শুরু করলেন। বাংলায়। ‘অনেকেই নিজেকে মানুষই ভাবে। মানুষের মধ্যে প্রকৃত মানুষ কজন। আশ্চর্য একটা ব্যাপার বৈজ্ঞানিকরা লক্ষ করে অবাক হয়েছেন, একই মায়ের দুটি সন্তান। দুটির মধ্যে একটি মানুষ, আর-একটি বাঁদর।’
মেজোমামা সঙ্গে-সঙ্গে পড়লেন, ‘গবেষণা করে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড়টা বাঁদর হয়। এর জন্যে দায়ী পিতামাতার অতিরিক্ত আদর। বাংলা ভাষায় সুন্দর একটি কথা আছে—আদরে বাঁদর। দেখা গেছে মেজোরা সাধারণত খুবই ভালো হয়। শিক্ষায়, দীক্ষায়, আচার-আচরণে। প্রায় দেবতুল্য।’
বড়মামা ফাঁক পেয়েই ঢুকে পড়লেন, ‘আমরা ইতিহাস ঘাঁটলে দেখতে পাব কথাটা কত সত্য, একশো ভাগ সত্য—পৃথিবীতে বড়রাই বড় হয়। গৌতম বুদ্ধ, যিশুখ্রিস্ট, শঙ্করাচার্য, স্বামী বিবেকানন্দ। এই গ্রন্থের শেষকালে আলাদা একটি তালিকা আছে। পৃথিবীতে বড়দের বড় হওয়ার কাহিনি। দেখি-দেখি তালিকায় আমার নামটা আবার ঢুকিয়ে দেয়নি তো! তিনশো পঞ্চাশ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।’
মেজোমামা বললেন, ‘নব্বই পাতার বইতে তিনশো পঞ্চাশ পৃষ্ঠা! অদৃশ্য কাগজে অদৃশ্য কালিতে লেখা। জলে ডুবিয়ে পড়তে হবে।’
বড়মামা আমাকে দিয়ে বলালেন, ‘বলে দিতে পারিস, যদি তোর ইচ্ছে হয়, বটের চারা এইটুকখানি, তার ভেতরেই বিশাল একটা বটগাছ। হাজারটা বছর তার মধ্যে গোটানো। হেঁজিপেঁজিরা আসবে যাবে, বট ছায়া ফেলে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি কি বর্তমানের বই পড়ছি, পড়ছি ভবিষ্যৎ। এই যে পেয়েছি। মরেছে—আমাকে ঢুকিয়ে দিয়েছে রে! আমি প্রচার চাই না, তবু প্রচার। মুখোপাধ্যায় সুধাংশু। জন্মসাল, মৃত্যুসাল অজ্ঞাত। অনুমান করা যায় মানব সমাজে মানব কল্যাণে দীর্ঘকাল জীবিত ছিলেন। বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় ও বসুন্ধরা দেবীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। সিংহের মতো বলবীর্যশালী। মেধাবী। উচ্চতায় ছ-ফুট এক ইঞ্চি। বুকের ছাতি ছাপ্পান্ন ইঞ্চি, কোমর মুঠোয় ধরা যায়। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হতে পারে গ্রিক ভাস্কর্য। সুখ্যাত ডাক্তার। হাজার-হাজার মানুষ তাঁর চিকিৎসায় জীবন ফিরে পেয়েছেন। তাঁরা মারা গেলে বিশ্বের অপূরণীয় ক্ষতি হত। বড়-বড় আবিষ্কার বন্ধ হয়ে যেত। নিরহঙ্কারী এই মানুষটি ছিলেন শিশুর মতো সরল। এখনও হয়তো আছেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদ যখন বিশ্বে প্রচারিত হয়নি। ভাবতে অবাক লাগে, যখন দেখি তাঁর পরের ভাইটি দাদার পথ অনুসরণ না করে, অন্য পথে গিয়ে, অসৎসঙ্গে পতিত হয়ে নিজের মূল্যবান জীবনটি নষ্ট করলেন। চোখের সামনে জ্বলজ্যান্ত আদর্শ থাকা সত্ত্বেও মানুষ হতে পারলেন না। ডাক্তার হওয়া দূরে থাকুক কম্পাউন্ডারও হতে পারলেন না। নিজেকে অধ্যাপক বলে গর্ব করেন; কিন্তু মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে তিনি ক’টা মানুষ তৈরি করলেন। ডাক্তার মুখোপাধ্যায় সর্বকালের একজন সেরা মানুষের উদাহরণ। তিন নম্বর চ্যাপ্টারে আমরা তাঁর মহান জীবন আলোচনা করেছি। এই কাজে নানা তথ্যসংগ্রহে আমাদের রিসার্চ ব্যুরো ভীষণ সাহায্য করেছেন। তিনি সুন্দর একটি কথা আমাদের প্রতিনিধিকে বলেছেন, আমি কিছুই হতে চাইনি, শুধু মানুষ হতে চেয়েছিলাম, ত্যাগ, সেবা, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, মানুষের মধ্যে এসব গুণ না থাকলে সে মানুষই নয়।’
মেজোমামা ধরলেন, ‘বাড়িতে যদি শিম্পাঞ্জি থাকে, কতকগুলো ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের প্রয়োজন আছে। শিম্পাঞ্জিরা অনুকরণ প্রিয়। কোট-প্যান্ট পরে ঠোঁটে চুরুট লাগিয়ে ভাবে মানুষ হয়েছি। ভালো কাপে চা দেওয়া হল, কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতলটা ভেঙে ফেলল। সেন্টার টেবিলে কাপটা এত জোরে রাখল গ্লাসটপটা ভেঙে গেল। বাথরুমে ঢুকে জায়গাটা মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য করে রেখে এল। হঠাৎ ছাতে উঠে ধুমধুম করে লাফাতে শুরু করল। দুর্বোধ্য ভাষায় বেসুরে চিৎকার করে গান। সহ্যশক্তি বাড়াতে না পারলে এক সঙ্গে থাকা দুঃসাধ্য। বাড়িটা ক্রমশই একটা চিড়িয়াখানা হয়ে উঠবে। বাঁচার একমাত্র উপায়, প্রাণীটিকে বিপরীত শিক্ষা দিতে হবে। উঠতে বসতে বলতে হবে, তুমি মানুষ হও, তুমি মানুষ হও। তুমি যা, তুমি তাই। বাড়িতে তার জন্যে আলাদা একটা থাকার জায়গা নির্দিষ্ট করে দিলে ভালো হয়। কখন তার ভেতর জঙ্গলের ভাব জেগে উঠবে কে বলতে পারে। সেই জায়গায় বড়-বড় কয়েকটা গাছ অবশ্যই থাকা চাই। ডাল ধরে ঝোলার জন্যে। ডিগবাজি খাওয়ার জন্যে। একটা ব্যাং ভরতি পচা ডোবা। ওইটাই হবে শিম্পাঞ্জির বাথটাব। খেতে দিতে হবে ফল-মূল, কাঁচা শাকপাতা, শালপাতাও দেওয়া যেতে পারে। ছুরি, কাঁচি তার হাতের কাছে যেন না থাকে। কেটেকুটে সব শেষ করে দেবে। অনুসন্ধানে আমরা জেনেছি, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অবিকল মানুষের মতো দেখতে শিম্পাঞ্জি পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের মতোই পরিষ্কার কথা; কিন্তু স্বভাবে ধূর্ত, মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি। কারুর সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে না। এটিকেট, ম্যানারস জানে না। এরা যদি ডাক্তার হয়, রুগিদের কি হবে কেউ জানে না।’
দরজার বাইরে কাশির শব্দ। প্রধান বিকাশবাবু। একেবারে চারচৌকো। হাতল উঁচু স্যুটকেশের মতো। মাথাটা হল হাতল। প্রচুর পয়সা। বিদেশে গঙ্গামাটি, গঙ্গাজল, আমড়া, কামরাঙা, ওল, চালকুমড়ো, কচু এইসব এক্সপোর্ট করেন। প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ইন্ডিয়া কমপ্লিকেটেড’। সেদিন বলে গেলেন জাপান থেকে ঝামা আর ধামার অর্ডার এসেছে।
ঘরে ঢুকেই বললেন, ‘আপেল খাওয়া চলবে না। ভীষণ অ্যাসিড হয়ে যাচ্ছে।’
‘খাবেন না। কে আপনাকে আপেল খেতে বলেছে।’
‘তুমিই তো বলেছ।’
‘আমার কি মাথা খারাপ! আলসারের রুগিকে আপেল খেতে বলব!’
‘কে তাহলে বলল!’
মেজোমামা বললেন, ‘আপনি কি আমার দাদাকে হাতুড়ে ভাবেন? হোল ওয়ার্লডে এমন একজন ডাক্তার পাবেন? আমেরিকার বিখ্যাত ডাক্তার স্ট্যান হোপ কি বলেছেন জানেন, মেডিসিনে দাদাই শেষকথা। লাস্ট ওয়ার্ড। হাতে কোনও গোলমেলে কেস এলে ইন্টারনেটে দাদার পরামর্শ নেন। আপেল আপনার অ্যাসিডের কারণ নয়, আপনার অ্যাসিডের কারণ আমড়া। আমড়ার চাটনি, আমড়া-পোস্ত। শিলে ছ্যাঁচা আমড়া। আমড়ার বয়েস চলে গেছে।’
‘কি করে বললে বলো তো?’
‘স্বামী কৃপনন্দের কৃপা। আমাদের দুজনেরই গুরু। হিমালয়ের গুহার মধ্যে থাকেন ছদ্মবেশে।’
‘ছদ্মবেশে কেন?’
‘জায়গাটা তো ভালো নয়। মিলিটারিদের উৎপাত। তাই ভাল্লুক সেজে থাকেন। শ্বেত ভাল্লুক। মস্ত বড় যোগী। দিনে একবার মাত্র শ্বাস ফেলেন, যখন মা বলেন, বাকিটা সময় টাইট কুম্ভক। কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে হলে মেঘ হয়ে ভেসে-ভেসে চলে যান। দেহ ছেড়ে বাইরে চলে যাওয়ার কায়দাটা আমাকে আর দাদাকে শিখিয়ে দিয়েছেন।’
‘মানে, মরে যাওয়া!’
‘আজ্ঞে না, মরে যাওয়া মানে মরেই যাওয়া। প্রত্যেক মানুষেরই দুটো শরীর, একটা স্থূল, একটা সূক্ষ্ম। এই সূক্ষ্ম শরীরটাকে আমরা ঠেলে বের করে দিতে পারি। আমরা দুজনে এই সোফায় যেমন বসে আছি সেই রকমই বসে আছি। চা, কি কফি খাচ্ছি কিন্তু আমরা নেই। কেরলে স্বামী কৃপানন্দের আশ্রমে বসে আছি। তাঁর প্রবচন শুনছি।’
‘ওসব গাঁজাখুরি কথা আমাকে বলতে এসো না। সব সময় ফচকেমি। ডাক্তার, তুমি আমাকে একটা ডায়েট চার্ট করে দাও। আমার মিনিমাম একশো বছর বাঁচা দরকার।’
‘কেন, কেন, খামোখা একশো বছর বাঁচবেন কেন?’
‘পঁচাশি বছরে আমাকে বুধে ধরবে। তুঙ্গী বুধ। তখন আমি রাজা হব। সোনার সিংহাসন। মাথায় রুপোর ছাতা। সোনার থালা, বাটি, গেলাস। ইচ্ছে করলে হাতি কিনতে পারি।’
‘হাতি আপনাকে কিনতে হবে না। ফ্রি-লি সব ঘুরে বেড়াচ্ছে। চুকচুক করে ডেকে আনতে পারলেই হল। রাত্তিরবেলা আমার মামার বাড়ির জানলার গরাদের বাইরে হাতি এসে দাঁড়ায়। শুঁড়টা জানলা দিয়ে ঢুকিয়ে বড়মামার মাথা এক ঘণ্টা মাসাজ করে দেয়। মুখে শুঁড় ঘষে ‘ফেসিয়াল’ করে দেয়। এর নাম ‘হাতিপ্যাক।’ বড়মামার বয়েসের গাছপাথর নেই। দেখলে মনে হবে, পঁচিশ বছরের যুবক। দুটো হাতি বিকেলবেলা কেল্লার মাঠে বড়মামাকে ফুটবল করে খেলা করে।’
‘সেটা কি ব্যাপার?’
‘বড়মামার মাঠের মাঝখানে দলা পাকিয়ে নিজেকে ফেলে রাখেন আর হাতিদুটো পা দিয়ে ফুটবলের মতো ‘ড্রিবল’ করে। শরীর ফিট। হাতিদের ডেলি ফি হল, কুড়িটা কলাগাছ আর ছ-কাঁদি কলা।’
‘তোমাদের রঙ্গরস শোনার সময় আমার নেই। কি খাব, সেটা যদি দয়া করে বলে দাও।’
‘সে তো আমি বলব না, বলবে আমার মেজোভাই। গবেষণা করছে—আহার ও দেহ। ফিনিক্স ইউনিভার্সিটি থেকে ডাক এসেছে।’
‘সে আবার কোথায়?’
‘গ্রিসে?’
‘আরে গ্রিসে তো আমি কাঁচা লঙ্কা পাঠাই।’
‘ওকে ডেকে পাঠাবার কারণ, গ্রিসের লোকেরা ক্রমশই বেঁটে হয়ে যাচ্ছে কেন?’
‘কারণ, বেশি করে কাঁচালঙ্কা খাচ্ছে না।’
‘আপনি বললে তো হবে না, গবেষণা করে দেখতে হবে। সারা পৃথিবীতে ওর নাম ছড়িয়ে পড়েছে। স্পেসাল প্লেন আসছে ওকে নিতে। প্রথমে যাবে ইংল্যান্ডে। রানির একটা সমস্যা হয়েছে, আইসক্রিম খেলেই চোখ দুটো বড়-বড় হয়ে যাচ্ছে। সবাই ভাবছেন, রানি রেগে গেছেন।’
‘আইসক্রিম না খেলেই হয়।’
‘এইখানেই তো সমস্যা। আইসক্রিম না খেলে রানির যৌবন চলে যাবে।’
‘হ্যাঃ, বুড়ির আবার যৌবন। কত হল?’
‘এই তো সামনের বৈশাখে একশো হবে। আমার দাদুর বয়সি। আমার দাদু যখন ইংল্যান্ডে ডিউকদের সঙ্গে গলফ খেলতেন, রানি তখন জানলার ধারে বসে মিল্টন পড়তেন, মনে-মনে ভাবতেন এই ইন্ডিয়ানটার সঙ্গে গলফ খেলায় কেউ পারে না কেন? শুধু গলফ। লর্ডসে ক্রিকেট! ব্যাট ধরলেই সেঞ্চুরি। দাদুকে দেখলে মনেই হবে না অত বয়েস। ছোলা ভাজা, চাল ভাজা, কাঁচা পেয়ারা সবই খেতে পারেন। সবই ওই মেজোর জন্যে। শামুকের ছাই দিয়ে দাঁত মাজেন। হাতি শাওয়ারে চান করেন। আর মেজোর দেওয়া একটা স্পেশাল স্যুপ খান।’
‘হাতি শাওয়ার মানে?’
‘দাদুর একটা স্পেশাল পুকুর আছে, মার্বেল পাথর দিয়ে বাঁধানো। কাচের মতো জল। দুটো হাতি শুঁড় দিয়ে জল টেনে ফোয়ারার মতো জল ছিটিয়ে দাদুকে চান করিয়ে দেয়।’
‘আর স্যুপটা।’
‘ওটা মেজো বলবে। যেটা নিয়ে পৃথিবীতে মহা হইচই।’
মেজোমামা বললেন, ‘ফর্মূলাটা আমি স্বপ্নে পেয়েছি। তখন আমি আলাস্কায়। এক্সিমোদের খাদ্য নিয়ে গবেষণা করছি। চা খেলে দাঁত পড়ে যাচ্ছে। বয়েস বেড়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। কেলেঙ্কারি কাণ্ড। লোকে মেয়েকে মা ডাকছে, মাকে মেয়ে। মেয়ে চা খায়, মা চা খায় না। তখন স্বপ্ন পেলুম। স্বয়ং মহাদেব। বাঘছাল পরা বিশাল মূর্তি। গলায় সাতপাট মাফলারের মতো একটা বিশাল ময়াল সাপ জড়ানো। দশ-বারো ফুট উঁচু। তুষারের মতো গায়ের রং। হালকা নীলের আভা। ত্রিনয়নে সোনালি বর্ডার। একটা গোল হীরে হল চোখের মণি। দু-হাতে দুশো ভরি সোনার বালা। ক্যাঁত করে একটা লাথি মেরে বললেন, ওঠ। কাগজ আন, কলম আন, ফর্মূলাটা লিখে নে—’চিরহরিত যৌবন বটিকা।’ তার তলায় লেখা,
উপাদান
১। কচি কলাপাতা—একখানা
২। বটপাতা—সতেরো খানা
৩। গাঁদাল পাতা—সাত খানা
৪। চারটে তেলা কচু।
৫। সাতটা গুঁড়ি কচু।
এইবার টেপ রেকর্ডার আন। রেকর্ড কর। টিভি-তে যেরকম রান্না শেখায়, আমি সেই কায়দায় বলে যাব। স্টার্ট, ‘কলাপাতা খুব ভালো করে ধুয়ে, কুচিকুচি করে কাট। কচু আর গাঁদাল পাতা বাট। তেলা কচু থেঁতো কর। এইবার মিক্সিতে ফেলে মণ্ড বানাও। তারপর দু-থাবা আখের গুড়। বটপাতা চাপা দিয়ে নরম আঁচে ভাপাও। বড়-বড় গুলি পাকিয়ে মানপাতায় সারি দিয়ে রাখ। একটু মজে গেলে কাচের বয়ামে তুলে রাখ।’
‘তখন আমি ফিলিপিনস থেকে কলাপাতা আনালুম। বাকি সব এই বাংলা থেকে। কুড়িজন ক্যানেডিয়ান মেয়েকে চাকরি দিলুম। মাল তৈরি। এক বুড়ির ওপর পরীক্ষা করা হল। আশি বছরের বুড়ি। এক মাসে আঠারো বছরের সুন্দরী। বলে, ফ্যাশান মডেল হব। সত্যি-মিথ্যে জানি না। শুনছি, আমাকে নোবেল দেবে। লিস্টে নাম উঠেছে। কেলেঙ্কারি কাণ্ড। কী থেকে কি হয়ে গেল। এখন যত টেনিস প্লেয়ার, ফ্যাশন মডেল, অ্যাকটার, অ্যাকট্রেস, সব আমার ওই আলাস্কা ক্যাম্পে এক মাস, দু-মাসের জন্যে হেলথ কোর্স করতে আসছে। এভারগ্রিন পিল খেয়ে, ব্যাগে যৌবন ভরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। ডলার, ডলার, বৃষ্টি হচ্ছে। বড়দার নামে প্যাসিফিকে ছোট্ট একটা দ্বীপ কিনছি। ক্যানারি আইল্যান্ড। রাজহাঁস সেখানে ডিম পাড়তে আসে। ঝাঁক-ঝাঁক পাখি সারাদিন গান গায়। সবুজ ঘাস। ছাই-ছাই রঙের বার্চ টি। সমুদ্রের বাতাসে হুসহাস করে। আঙুরের চাষ হয়। গুড়ের চেয়েও মিষ্টি আঙুর। থোলো থোলো। আড়াই তলা, সাত প্যাঁচের একটা ফরাসি কায়দার বাংলো। একদিকটা সুধ সাদা, আর একদিকটা নেভি ব্লু। ইয়া গাবদা-গাবদা গোলাপ ফুলের বাগান। গাছের ডালে শ্যামক। আমার বড়দা দোল খেতে-খেতে আঙুর খাবে। পরনে সিল্কের বারমুডা।…’
মেজোমামা চোখ বুজিয়ে হড়-হড় করে বলে যাচ্ছিলেন। বড়মামা বললেন, ‘চুপ কর। চলে গেছেন।’
মেজোমামা বললেন, ‘অন্যের ভালো সহ্য হল না। পরশ্রীকাতর।’
এইসময় তীব্র মূর্তিতে মাসিমা ঘরে ঢুকলেন। জিগ্যেস করলেন, ‘রবিবার কেন হয়?’
বড়মামার চটজলদি উত্তর, ‘অনেকদিন থেকে হয়ে আসছে, তাই হয়।’
মেজোমামা সঙ্গে-সঙ্গে বললেন, ‘কারেক্ট অ্যানসার। এ উত্তর আমিও দিতে পারতুম না। চমৎকার আই. কিউ। এ ছেলেটা আই.এ.এস. দিল না কেন? কুসি তুই আর একটা প্রশ্ন কর, দেখি পারে কি না?’
মাসিমা জিগ্যেস করলেন, ‘দামড়া কাকে বলে?’
বড়মামা বললেন, ‘বেশ বিগ সাইজের বলদকে।’
‘তোমরা দুটো হচ্ছ তাই। বাবা ঠিকই বলতেন।’
‘অসম্ভব স্নেহে আদর করে বলতেন। জানি, তুইও আমাদের অসম্ভব ভালোবাসিস। তোর স্নেহচ্ছায়ায় সুখে প্রতিপালিত। বাপ, মা হারা দুটো অনাথ শিশু।’
মেজোমামা যোগ করলেন, ‘তোর পক্ষপুট আশ্রয় করে আমরা লীলা করছি কৃষ্ণ-বলরাম।’
বড়মামা হে-হে করে এক ধরনের হাসি ঝরিয়ে বললেন, ‘সেই থেকে আমরা দুজনে কত কাজ করলুম। গল্পের লড়াই, প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসার বিনিময়। এই বিচ্ছেদের পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ থেকে দৃঢতর করে জগতের সামনে বুক চিতিয়ে বলা, ভাই হো তো অ্যায়সা। মাত্র দু-কাপ চা। তাইতেই এত সব হয়ে গেল।’
মেজোমামা বললেন, ‘রুগি দেখাও হল।’
‘হ্যাঁ, এক কমপ্লিকেটেড রুগিকে আমরা দুজনে দেখলুম। এমন দেখলুম, সে প্রাণ হাতে করে পালিয়ে বাঁচল। পালাবে কোথায়! আবার আমরা ঠিক ধরব। আহা! কি অপূর্ব সেই গান—
অন্ধজনে দেহো আলো, মৃতজনে দেহো প্রাণ
তুমি করুণামৃত সিন্ধু করো করুণাকণাদান।
‘মেজো তুই নাচতে পারিস?’
‘আগে পারতুম, এখন ভুঁড়িটা কিছু টাবল দেয়।’
‘সে দিক, এক রাউন্ড থল-থল নাচ হয়ে যাক না। জেলি-ড্যানস।
জ্বলজ্বল চিতা, দ্বিগুণ দ্বিগুণ—
পরান সঁপিবে বিধবা বালা।
জ্বলুক জ্বলুক চিতার আগুন,
জুড়াবে এখনি প্রাণের জ্বালা।।
বড়মামা চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েছেন। ভীষণ একটা বীরভাব। মাসিমার দিকে নাটকীয় ভঙ্গিতে এগোচ্ছেন।
শোন রে যবন, শোন রে তোরা,
যে জ্বালা হৃদয়ে জ্বালালি সবে
সাক্ষী বলেন দেবতা তার—
এর প্রতিফল ভুগিতে হবে।।’
মাসিমাকে জাপটে ধরে মেঝে থেকে তুলে ধরেছেন। সেই অবস্থায় নাচতে-নাচতে—
‘কুসি আমার আমার কুসি
থাকে যখন বেজায় খুশি
নাকের ডগায় বসলে মাছি
কেবল কেন আসে হাঁচি।।’
মাসিমা চিৎকার করছেন, ‘বাঁচাও, বাচাও।’
মেজোমামা বলছেন,
‘যবনে ধরেছে যাকে
বাঁচিবে সে কেমনে,
পথ আছে একটাই,
দু-কাপে চা চাই।।’
মাথায় কাউন্টি ক্রিকেট ক্যাপ। স্মার্ট চেহারা। জিনসের প্যান্ট, চকলেট রঙের টি শার্ট, হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলেন, ‘কি? সব রেডি? আমি একটু দেরি করে ফেলেছি। চলুন, চলুন। বড় গাড়ি এনেছি।’
বড়মামা অবাক হয়ে বললেন, ‘কোথায় যাব?’
‘কী আশ্চর্য! চন্দননগরে! আমাদের বাগানে। কাল রাত্তিরে বাবার সঙ্গে অত কথা হল!’
‘এই দ্যাখো, আমি ভুলে মেরে দিয়েছি। কি হবে এখন? আমাদের তো কিছুই হয়নি। কি হবে রে কুসি! রমেন আজ ছেড়ে দাও, সামনের রবিবার।’
‘তা বললে হয়। অত আয়োজন! পাঁচ রকম মাছের কথা বলেছেন।’
মেজোমামার খুব উৎসাহ, ‘পাঁচ রকম কী, কী?’
‘চিংড়ির মালাইকারি, রুইমাছের কালিয়া, ভেটকি পাতুরি, তপসে ফ্রাই আর চিলি পুঁটি।’
মেজোমামা বললেন, ‘না, আর দেরি করা উচিত হবে না। আমরা ভাই স্প্রেড করে খাব। মানে, ওখানে পৌঁছেই গোটা কতক ফ্রাই খেয়ে নেব; তারপর এদিক-ওদিক বেড়িয়ে এসে পাতুরিটা ম্যানেজ করে ফেলব। কিন্তু চান-টান তো কিছুই হয়নি।’
‘আপনি চানের কথা ভাবছেন, বাবা আমেরিকা থেকে ফিরে এসে বিরাট একটা সুইমিং পুল করেছেন। নীল জল। পাম গাছ দিয়ে ঘেরা। এমন একটা যন্ত্র ফিট করেছেন, চালিয়ে দিলেই সমুদ্রের ঢেউ।’
বড়মামা ক’দিন ধরে আমাকে ‘চালতা’ বলে ডাকছেন। খেয়ে-খেয়ে আমার মুখটা গোল মতো হয়ে গেছে। হাসলে দু-গালে দুটো টোল পড়ে। বড়মামার আদেশ হল, ‘চালতা, টোম্যাটোকে ডেকে আন।’
আমাদের পাশের পাশের বাড়িতে একটি মেয়ে থাকে। আমার বয়সি। নাম দীপা। বড়মামা নাম রেখেছেন টোম্যাটো। ভালো মেয়ে, তবে যত রকমের দুষ্টবুদ্ধি তার মাথায় ঠাসা। লেখাপড়ায় ভীষণ ভালো। সবাই তাকে ভালোবাসে। বড়মামা একটু বেশি। যখন চার বছর বয়েস বাবা মারা গেছেন।
দুই
বড়মামা বললেন, ‘চালতা আর টোম্যাটো সামনে বসবে। দুজনে এক জায়গায় হলেই বকবক। ওদের কথার শেষ নাই।’
প্রথমেই ছোটখাটো একটা লাঠালাঠি। দীপা জানলার ধারে বসবে। বড়মামা বললেন, ‘অবশ্যই বসবে চালতা ভেতর দিকে বসবে।’
গাড়ি ছেড়ে দিল। ঝকঝকে ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি। দীপার পোশাকে সুন্দর গন্ধ। আমি জানি দীপার মা পোশাকের আলমারিতে ধূপের প্যাকেট রাখেন। তাঁর সব ব্যাপারেই একটা ব্যাপার থাকে। ফুল ভালোবাসেন। ভীষণ পরিচ্ছন্ন। সবসময় টিপটপ। যেখানকার জিনিস সেখানে। এমনকি দু-পাটি জুতো পাশাপাশি, সমান-সমান, একটুও যেন এঁকেবেঁকে না থাকে। খবরের কাগজ ভাঁজে-ভাঁজে পাট-পাট।
মাসিমা একবার জিগ্যেস করলেন, ‘অসুবিধে হচ্ছে?’
বড়মামা বললেন, ‘চালতা, তুই ওর দিকে অতটা সরে গেছিস কেন?’
‘কি বলব? আমি সরেছি না, ও সরে এসেছে। বাতাসে চুল উড়ছে। মাঝে-মাঝে আমার মুখে ঝাপটা মেরে যাচ্ছে। একটা লজেনস দিয়ে নীচু গলায় বললে, ‘খা চালতা খা।’ রোদে গায়ের রং জ্বলজ্বল করছে। বেজায় সুন্দরী। কয়েক বছর পরে কোনও বড়লোক বিয়ে করে বিদেশে নিয়ে চলে যাবে। তাতে আমার কি! আমিও বিলেত চলে যাব রিসার্চ করতে। মহাকাশে পাড়ি দেব। নতুন কোনও গ্রহ আবিষ্কার করব।
কনুইয়ের খোঁচা মেরে দীপা বললে, ‘বোবা হয়ে গেছিস? ক্যাবলার মতো বসে আছিস?’
‘ভাবছি।’
‘কি ভাবছিস?’
‘তুই যখন আরও-আরও বড় হয়ে যাবি তখন কি করবি?’
‘তোকে চিবিয়ে খাব।’
‘বাঃ, আমার কি বরাত!’
‘তোর বরাত তো আমার হাতে।’
ক্যাঁক করে আমার কোমরের কাছে এক খোঁচা।
বড়মামা পেছন থেকে বললেন, ‘শুরু হয়ে গেছে।’
দীপা বলল, ‘আমাকে যা-তা বলছে। বলেছে, চাটনি করে খাবে।’
বড়মামা শিখিয়ে দিলেন, ‘তুই বল না, চালতা তোকে অম্বল করে খাব।’
‘আমি ওইরকমই বলেছি, তোকে চিবিয়ে খাব।’
‘ঠিক বলেছিস। চালতা চিবিয়েই খেতে হয়। যত চিবোবি তত রস। মেয়েরা খুব লাইক করে। রমেন! তোমাদের বাগানে চালতা গাছ নেই?’
‘তিনটে আছে।’
‘শেষ পাতে একটু লড়িয়ে দিলে হয় না!’
‘চলুন, কি হয় দেখা যাক।’
‘চিনি দিয়ে হবে না। আখের গুড়।’
মাসিমা বললেন, ‘উঃ দাদা! কেবল খাব-খাব কোরো না।’
মেজোমামা বললেন, ‘এখন যদি হঠাৎ খিদে পায় কি করব?’
মাসিমা বললেন, ‘বৃথা চেষ্টা। এদের মেরামত করা অসম্ভব। ছাগলকেও ছাড়িয়ে গেছে।’
দীপা আমার কানে ঠোঁট ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বললে, ‘তোর পাশে বসে কীরকম যেন প্রেম-প্রেম লাগছে।’
‘একেবারে পেকে গেছিস।’
‘তুমি ভারি কাঁচা আছ! সব বলে দেব?’
‘এই না, প্লিজ। তুই তো বললি। শেখালি।’
‘তোকে আমি বাঁদর নাচ নাচাব।’
‘সবাই তোর নিন্দে করবে। খারাপ মেয়ে বলবে।’
‘তার আগেই তো পাইথনের সাত প্যাঁচ। তারপর একটু-একটু করে গিলে ফেলব।’
‘অ-এ অজগর।’
মেজোমামা বললেন, ‘রমেন, এই রাস্তায় বিখ্যাত একটা মিষ্টির দোকান আছে না?’
‘পেছনে ফেলে এসেছি, ফেলুমোদক।’
বড়মামা অভিজ্ঞের উপদেশ দিলেন, ‘পেটটা খালি রাখ। অনেক কিছু অপেক্ষা করে আছে।’
‘তা আছে, তবে কি জানো, যাহা যায় তাহা যায়। শূন্য এ বুকে পাখি মোর ফিরে আয়। একটা ভালো মিষ্টির দোকান মিস করা মানে গ্রেট মিস।’
উঃ, বাগান বটে! গাড়ি থেকে সবুজ ঘাসের ওপর পা রেখে মনে হল, স্বপ্ন দেখছি। অনেকটা দূরে দশ-বারোটা পেল্লায় রাজহাঁস গলা উঁচু করে সার বেঁধে চলেছে। পেছন-পেছন ছ-সাতটা কুঁচি-কুঁচি বাচ্চা। হাঁসগুলো এক সঙ্গে ডাকছে, প্যাঁক-প্যাঁক।
দীপা আমার হাত ধরে টান মেরে বললে, ‘চল, চল, মা সরস্বতীর বাহন দেখে আসি। একটাকে আমি পায়ের কাছে নিয়ে বসব। জ্যান্ত সরস্বতী। তুই আমার গলায় মালা পরিয়ে আমার শ্রীচরণে পুষ্পাঞ্জলি দিবি, জয় জয় দেবী, চরাচর সারে। আমি তোকে আশীর্বাদ করব।’
‘তারপর আমি তোকে আসছে বছর আবার হবে, বলে পুকুরে বিসর্জন দেব।’
দীপা আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ছুটতে শুরু করল। আমার মনে হল ছুটি। দূরে মাটির ওপর আকাশ ভেঙে পড়ে আছে যেন—সুইমিং পুল। ফ্যান্টাস্টিক। সার, সার বটল পাম। আরও ভেতর দিকে সবুজ, সবুজ অন্ধকার। গাছের ডালে-ডালে ‘চিনা লণ্ঠন’ ঝুলছে। মাকরানা পাথর দিয়ে তৈরি একটা পথ কুঞ্জবনে ঢুকে গেছে। বড়-বড় গাছের উঁচু ডালে কাঠের তৈরি পাখির বাসা। প্রত্যেকটায় বাসা করেছে। নানা রকমের পাখি। মায়েরা দিগবিদিগ থেকে খাবার সংগ্রহ করে আনছে আর বাচ্চাদের গলা ফুটো দিয়ে বেরিয়ে আসছে। বড়-বড় হাঁ। পারলে মাটাকেই খেয়ে ফেলে।
হঠাৎ কানে এল, ‘এই গাধা।’
দীপার গলা। ‘তুই কোথায়।’
‘তোর মাথায়, ওপর দিকে তাকা।’
মাথার ওপর মোটা একটা গাছের ডাল। দু-দিকে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।’
‘পড়ে মরবি যে!’
‘তোর মাথায় পড়ব। দুজনেই বলো হরি হয়ে যাব।’
‘দাঁড়া, এইবার আমি সত্যিই মাসিমাকে বলব।’
সিঁ করে একটা শব্দ হল প্রথমে, তার পরেই কণ্ঠস্বর, ‘চালতা আর টোম্যাটো যেখানেই থাকো চলে এসো।’
দীপা ধুপ করে লাফিয়ে পড়ল, ‘চল, মাসিমাকে যদি বলেছিস, তোর অবস্থা আমি কি করব দেখিস!’
কী উঁচু, কী বড় একটা বসার ঘর। চতুর্দিক থেকে আলো এসে ঢুকছে। মাথার ওপর স্কাইলাইট। চারপাশে কাচের জানলা। সাদা মার্বেল পাথরের মেঝে ঝকঝক করছে। ধবধবে সাদা পাজামা, পাঞ্জাবি পরা সুন্দর চেহারার এক ভদ্রলোক। বড়মামা বিশু-বিশু বলে ডাকছেন।
বড়মামা পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘আমাদের ভাগনে আর ভাগনি।’
প্রণাম করলুম।
‘লেখাপড়ায় কোনটা ভালো?’
‘দুটোই।’
‘আমেরিকায় নিয়ে যাব। এখানে কিছু হবে না। ওখানে কত স্কোপ।’
দীপা পাগলি মহা উৎসাহে বললে, ‘ওখানে গিয়ে প্রথমেই আমি ঘোড়ায় চড়া শিখব। আর হেলিকপ্টারে উড়ব।’
‘স্পেসে যাবে না।’
‘প্রথমে এই ভীতুটাকে পাঠাব। সবেতেই ভয়।’
‘ও এক্ষুনি কি করেছে জানেন?’ দীপা চোখ বড়-বড় করে তাকাল।
বিশুমামা বললেন, ‘কি হল। থামলে কেন?’
‘পরে বলব।’
দীপা বললে, ‘দেখলেন, কি ভীতু! চোখ বড়-বড় করেছি যে!’
মেজোমামা ওপাশে একটা মোটা বইয়ের মধ্যে ডুবেছিলেন। মুখ না তুলে খুঁত-খুঁত করে বললেন, ‘ব্রেকফাস্টটা আজ মনে হয় টি.ভি. ব্রেক হয়ে গেল!’
আর ঠিক এই সময় গাড়ি চেপে চারপাশে অসম্ভব রকমের সুগন্ধ ছড়াতে-ছড়াতে এল। বিশ্ববাবু ঘোষণা করলেন, ‘তাহলে হাত লাগান। তপসে ফ্রাই। তবে বেশি খাবেন না। পরের ব্যাপারটা মনে রাখবেন।’
দীপা বললে, ‘তুই এখন খাবি না কি?’
আমার তো ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছিল। জিগ্যেস করলুম, ‘তুই খাবি না?’
‘না। আমার ঘেন্না করে। আঁষ্টে গন্ধ। মাছ খুব নোংরা জন্তু। জলে থাকলে কি হবে! যা-তা খায়।’
‘তুই তাহলে কি খাবি?’
‘গাছে ঝুলছে।’
‘কি ঝুলছে?’
‘পাকা-পাকা পেয়ারা।’
তিন
সুইমিং পুলটা দীপা আর আমি যেদিকে গিয়েছিলুম তার উলটো দিকে। বড়মামা মেজোমামাকে বলছেন, ‘বড়িয়া।’
মেজোমামা বললেন, ‘ফ্যান্টাস্টিক।’
‘তোকে আমি বেশ ঠেলে ফেলে দেব। হাবু ডুবু, হাবু-ডুবু। তখন তোকে রেস্কু করব নিজের জীবন বিপন্ন করে। কাগজে রিপোর্ট বেরোবে। রিপাবলিক ডে-তে ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ড পাব। বীরচক্র, অশোক চক্র।’
‘এতে যা জল আছে তাতে হাবু ডুবু হবে না।’
‘বিশ্রী রকমের বড়লোক, কি বলিস?’
‘ঠিক বলেছিস। অ্যাডজাস্ট করা যাচ্ছে না। কেবল আমেরিকা, আমেরিকা।’
‘থার্ড ক্লাস।’
‘ফোর্থ ক্লাস।’
‘চল, আমরা বেশ হারিয়ে যাই। দূর কোনও গ্রামে। গরিবের পর্ণকুটিরে। একথালা পান্তা। পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা।’
‘উঠোন ঘিরে কৃষ্ণকলি। দাওয়ায় মাদুর। সজনের ডালে টিয়া।’
‘হাম্বা।’
‘এটা কি করলি?’
‘মাঠ থেকে ফিরে এল গাভী।’
রমেনমামা বিরাট একটা ব্যাগ নিয়ে এল। বড়মামা বললেন, ‘যাও। সাবধানে থেকো। ফ্লাইট ক’টায়?’
রমেনমামা বললেন, ‘আমি তো কোথাও যাচ্ছি না।’
‘এত বড় ব্যাগ?’
‘অ্যাডিডাসের স্যুইম স্যুট। পুলে নামবেন তো?’
‘স্যুইম স্যুট মানে জাঙ্গিয়া।’
‘অনেকটা তাই।’
‘অনেকটা নয় পুরোটা। গামছা আছে?’
‘গামছা কি করবেন?’
‘গামছা পরে নামব।’
‘না-না, সুইমিং পুলের অপমান হবে।’
‘তাহলে বাথরুম।’
মেজোমামা বললেন, ‘জেমস বন্ডের ছবিতে দেখেছি সুইমিং পুলে খুব খারাপ-খারাপ ব্যাপার হয়।’
বড়মামা বললেন, ‘কেন, হিন্দি সিনেমায়! গুন্ডারা বুক জলে দাঁড়িয়ে চোঙা-চোঙা গেলাসে মদ খায়।’
‘সুইমিং পুলের কোনও ক্যারেকটার নেই।’
‘সে আছে পুকুরের। শুদ্ধ বাংলায় কি বলে রে?’
‘পুষ্করিণী।’
‘সুইমিং পুলের সংস্কৃত হয়?’
‘না, হিন্দির সঙ্গে মিশে আছে—সন্তরণ কা ডিব্বা।’
বড়মামা আমাকে বললেন, ‘দুজনকে অনেকক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না, কুসি আর দীপা।’
রমেনমামা বললেন, ‘কুসি মাসি তো মায়ের সঙ্গে রান্নাঘরে।’
মেজোমামা বললেন, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।’
আমি দীপার খোঁজে বেরুলুম। যিনি লনের ঘাস ছাঁটছিলেন, বললেন, ‘দিদিমণি, বনমালীর বাড়িতে। ওই ওদিকে।’
দীপা জানলার দিকে মাথা করে বিছানায় শুয়ে আছে। ভিজে চুল খাটের পাশে ঝুলছে। রান্নাঘরে বনমালীদার স্ত্রী তোলা উনুন রাঁধছেন। দীপা বকবক করছে। আমাকে দেখে বললে, ‘তোকে ঠিক হনুমানের মতো দেখাচ্ছে।’
বনমালীদার বউ জিগ্যেস করলেন, ‘ও তোমার কে হয়?’
‘ও আমার অনেক কিছু, এখন আমার হনুমান।’
‘সে যাই বলো ভাই, আমার কিন্তু একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে। ও তোমার হাতে একতাল মাটি। ছেলেটা ভারী মিষ্টি।’
দীপা বললে, ‘দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে মেয়েদের কথা শুনতে খুব ভালো লাগছে। তাই না! যা, না, তোর আমেরিকায় যা।’
‘তোকে ডাকছে।’
‘আমি বউদির কাছে খাব। বউদির পাশে দুপুরে শোব। বোকারোর গল্প শুনব। পেছনে একটা পুকুর আছে। কাচের মতো জল। চানটা সেরে নে। তারে ভিজে শাড়ি আর গামছা আছে।’
‘দাঁড়া, আমি আগে তোর খবরটা দিয়ে আসি।’
মাসিমা বললেন, ‘সে কি রে! এঁরা কি ভাববেন! তোরা আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না। বিলকুল পাগল।’
বনমালীদার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মাসিমা বললেন, ‘বাঃ, মালঞ্চ।’
গলা পেয়ে বউদি বেরিয়ে এসে বলছেন, ‘আসুন দিদি, আসুন দিদি।’
মাসিমা ঘরে ঢুকে দেখলেন, দীপা রাজরানির মতো বিছানায় শুয়ে গুনগুন করছে।
মাসিমা অবাক হয়ে বললেন, ‘এ কি রে? কোথায় চান করলি?’
‘পেছনের সরোবরে। ইচ্ছে করলে তুমিও করতে পারো, ওই জন্তুটাও করতে পারে।’
মাসিমা দীপার পাশে বসে বললেন, ‘ওখানের রান্না আমিই করছি, তুই না খেলে ওদের অপমান করা হবে তাই না!’
‘ওদের আমি সহ্য করতে পারছি না। টেনে তো চাপছেই না, কেবল প্লেন।’
‘সে আর কি হবে বল। যার যেমন জীবন।’
‘তোমরা যাও, আমি বউদির হাতের চচ্চড়ি একটু খেয়ে তবে যাব।’
চার
এলাহি আয়োজন। বিশাল খাওয়ার টেবিল।
বিশুবাবু বলছেন, ‘এত বড় টেবিল হায়দরাবাদের নিজাম ছাড়া কারও নেই।’
বড়মামা বললেন, ‘আননেসেসারি।’
‘মানুষ ছোট করে বাঁচতে-বাঁচতে কীট-পতঙ্গ হয়ে যায়। থিংক বিগ অ্যান্ড ইউ বিকাম বিগ।’ মেজোমামা আমার কানে-কানে বললেন, ‘কিছু-কিছু ছুঁচো বড় ভাবতে পেরেছিল বলেই হাতি হয়েছিল।’
বিশুবাবু বললেন, ‘কিছু বলছেন?’
‘একটা কৌতূহল। টেবিলটার এই মাথায় একটা শামুক বসিয়ে দিলে ওই মাথায় যেতে কতটা সময় লাগবে?’
বিশুবাবু বললেন, ‘ইন্টারেস্টিং।’
থামলেন না, ‘এই যে দেখছেন বাংলোটা—এটা সুইজারল্যান্ডের কায়দায় তৈরি। সুইস বাংলো।’
‘কায়দাটা কি?’
‘স্টেপ আপ। দোতলাটা যেই শেষ হল, পরেরটার একতলা শুরু হল। শেষ্টা তিনতলায় উঠে পরের একতলাটাকে পেয়ে গেল। ভেরি ডিফিকাল্ট কনস্ট্রাকশান। তেমনি খরচ। প্রথমটা মাটি পেয়েছে। পরের দুটো হ্যাঙ্গিং। ওদের দেশের মানুষ যে কি বড়লোক, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। টয়লেটের প্রত্যেকটা কলের মাথায় একটা করে হীরে বসানো। ঠোঁটগুলো সোনার পাত দিয়ে মোড়া।’
দীপাটা এত পাজি, পা দিয়ে আমার পায়ে এত জোরে চাপ দিয়েছে, আমি আঁ করে উঠেছি।
বিশুবাবু জিগ্যেস করলেন, ‘ইজ সামথিং রং?’
দীপা সঙ্গে-সঙ্গে বললে, ‘চিংড়ি মাছ কামড়ে দিয়েছে।’
রেগে গেছেন, ‘ফচকেমি হচ্ছে। মরা চিংড়ি কামড়াতে পারে? মরা বাঘ কামড়াতে পারে?’
মেজোমামা বললেন, ‘সামটাইমস। অটো বায়োগ্রাফি অফ মহারাজা অফ যোধপুর পড়ে দেখবেন। মাঝরাতে প্রাসাদের পার্লারে বিকট চিৎকার। ড্রেসিং গাউন পরে নীচে নেমে এসে যে দৃশ্য দেখলেন, মাথা ঘুরে গেল। একটা স্টাফর্ড টাইগার একজন ভৃত্যের ঘাড় কামড়ে ধরেছে। তিনি বন্দুক এনে বাঘটাকে দ্বিতীয়বার মারলেন। রক্তের বদলে ভুসভুস করে এক গাদা কাঠের গুঁড়ো বেরল। তিনি লিখছেন, এরপর থেকে যখনই আমার পার্লারে বসতুম পাশে রাখতুম একটা লোডেড ম্যাঞ্চেস্টার রাইফেল। বইটা এখন আর পাওয়া যায় না। ডাবলিনের কাউন্টি লাইব্রেরিতে একটা কপি ছিল। সন্ধানটা দিয়েছিলেন প্রফেসার মরগ্যান।’
বড়মামা বললেন, ‘কেন, আমাদের দাদু, মাতামহ, দেড়শো বছর বেঁচেছিলেন, একেবারে ফুল যৌবন নিয়ে। সাতচল্লিশ সালের ১৫ আগস্টে, সকালবেলা দুটো পাকা মর্তমান কলা খেয়ে দিদিমার ছবির দিকে তাকিয়ে বললেন, হেমাঙ্গিনী আমার কাজ শেষ হল, ওই দ্যাখো স্বাধীন ভারতের পতাকা পতপত করে উড়ছে। আমার হাত ধরো, তোমার দেউলে উঠি। ডান পা-টা ওপর দিকে তুললেন, যেন কোনও উঁচু জায়গায় উঠতে চাইছেন। প্রাণ চলে গেল। দিদিমা মাত্র ষাট বছর বেঁচেছিলেন। বাকিটা সময় দাদু একেবারে একা। কারও সেবা নিতেন না; কিন্তু অদৃশ্য কেউ একজন তাঁর সেবা করতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চার্লস গর্ডন কুইন ভিক্টোরিয়ার একটা খানা টেবিল দাদুকে উপহার দিয়েছিলেন। দাদু তখন ম্যাঞ্চেস্টারে। বিলিতি তাঁতে কাপড় বোনা শিখছেন। স্বদেশের তাঁতিদের বাঁচাবার জন্যে। থিওসফিক্যাল সোসাইটির মেম্বার। মাদাম ব্লাভাটাস্কির অন্তরঙ্গ বন্ধু। প্রেতাত্মাদের ফাঁদে ফেলার কায়দা রপ্ত করে ফেলেছেন। একেবারে নস্যি।
‘ওই টেবিলটা গড়পাড়ের বাড়িতে এল। ঐতিহাসিক জিনিস। লর্ড ক্লাইভ ওই টেবিলে বসে খানা খেয়েছেন। কীরকম ক্ষমতা! ওই টেবিলে বসে খাচ্ছেন আর হুকুম করছেন, মালাইকারির চিংড়ি পাতে আয়। সঙ্গে-সঙ্গে চলে এল। আর-একটা লুচি, চলে এল।’ বিশুমামা বললেন, ‘কীভাবে এল?’
দাদু বলেছিলেন, ‘ক্লাইভ আমাদের স্বাধীনতা হরণ করেছিল, আমি ক্লাইভের স্বাধীনতা হরণ করে দাস বানিয়েছি, ঢেঁকি মন্ত্র প্রয়োগ করে।’
‘ঢেঁকি মন্ত্র?’
‘ঢেঁকি দেখেছেন, ওপর দিকে উঠেই ধপাস করে নীচে পড়ে যায়। ওই কায়দায় আত্মাকে আটকে রাখা যায়, আপ অ্যান্ড ডাউন, আপ অ্যান্ড ডাউন। ডোন্ট গো বিয়ন্ড ইওর ক্রাউন। গো অন ক্রশিং, জাস্ট টু অ্যাভয়েড থ্রাশিং।’
‘ইংরিজি মন্ত্র, নার্সারি রাইমের মতো।’
‘তা তো বটেই।’
মেজোমামা বললেন, ‘ওইটা বল। জামার ভেতর বডি। আমরা অজ্ঞান হয়ে গেলুম।’
‘সে তো গড়পাড়ে, মামার বাড়ির ছাতে। দুপুরবেলা। মাইমা ছাতে আমের আচার রোদে দিয়েছেন। আমরা দু-ভাই চুরি করতে উঠেছি। বেশ কিছুটা সাবাড় করেছি। তারে একটা হ্যাঙারে দাদুর কাচা পাঞ্জাবি রোদে ঝুলছে। যেই না হাতটা মুছতে গেছি, পাঞ্জাবির হাতা সপাটে একটা চড় মারল। হাতার ভেতর ফরসা ধবধবে একটা হাত। দুজনে অজ্ঞান।
পাঁচ
আমরা পাঁচজনে বাগান ঘুরতে বেরিয়েছি। বনমালীদা আর বউদি দাওয়ায় বসে দড়ি পাকাচ্ছেন। আমাদের দেখে তাড়াতাড়ি উঠে এলেন। বললেন, ‘খুব একটা প্রাচীন মন্দির দেখবেন। বাগানের একেবারে শেষ মাথায়। সেখানে পঞ্চবটী আছে। পঞ্চমুণ্ডী আছে।’
খড়খড়ে পাথরে তৈরি বেশ শক্তপোক্ত মন্দির। বেশ গা ছমছমে জায়গা। ভেতরে একটা বেদি। বিরাট এক মহাপুরুষ বসে আছেন। সাদা পাথরের মূর্তি। তলায় লেখা আছে, অস্পষ্ট হলেও পড়া যাচ্ছে—স্বামী কৃপানন্দ।
বড়মামা আর মেজোমামা থপাস, থপাস করে বসে পড়লেন।
বড়মামা বললেন, ‘এ কি রে! স্বামী কৃপানন্দ!’
‘গল্প সত্য হল?’
‘তাই তো রে! কিছু বলছেন, শুনতে পাচ্ছি আমি। লেখ লেখ।’
মেজোমামা পকেটবুক বের করে প্রস্তুত। লিখবেন।
‘লেখ,
ইয়ারকি করেও মিথ্যে কথা বলবে না। সদ্ভাব বজায় রাখবে। ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে গল্প করতে-করতে জীবনের শেষ মাথায় চলে যাবে। সেখানে আমি আছি।’
লেখা শেষ করে মেজোমামা বললেন, ‘বড়দা, এটা সত্যি তো?’
উত্তর দিলেন মাসিমা—’সন্দেহ আছে!’