বাইশ
সিতাংশুর বিয়ে হয়ে গেল।
বড় সাহেবের বুক থেকে চিন্তার পাহাড় সরল। আত্মতুষ্টিতে ভরপুর তিনি, এর অতঃপর সানন্দে তার যাওয়ার ইচ্ছেটা বাতিল করে দিয়েছেন বড় সাহেব, ফের যাওয়ার কথা তুললে রাগ করবেন বলে শাসিয়েছেন।
ধীরাপদ আর আপত্তি করেনি, আপত্তি করার ফুরসত্ত মেলেনি। কত কারণে ওর এখানে থাকাটা জরুরী এখন, মনের আনন্দে বড় সাহেব সেই ফিরিস্তি দিয়েছেন। এক ছেলের বিয়ে। খুব ছোট ব্যাপার হবে না সেটা, ও কাছে না থাকলে সবদিক দেখবে শুনবে কে? দ্বিতীয়, ছেলের বিয়ে ঢুকলেই মাস ছয়েকের জন্য আর একবার য়ুরোপের দিকে পা বাড়াবেন তিনি। ও-দেশের কারবারগুলোর আধুনিক ব্যবস্থাপত্র হালচাল পর্যবেক্ষণে যাবেন। ভারতীয় ভেষজ সংস্থার সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগসূত্রটা চোখে পড়ার মত করে পুষ্ট করে আসা যায় কিনা সেই চেষ্টা করবেন। এর ফলে সংস্থার আগামী প্রেসিডেন্ট ইলেকশনের ব্যাপারে তাঁর দাবি দ্বিগুণ হবে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে হয়ত বা কেউ আর মাথা উঁচিয়ে দাঁড়াবেন না। কানপুরের অধিবেশনে এ নিয়ে অনেকের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। অমন জোরালো বক্তৃতার পরে নিজের খরচে সংস্থার এই উন্নয়ন পরিকল্পনা শুনে তাঁরা একবাক্যে প্রশংসা করেছেন। সেখানে বসেই বাইরে অনেকগুলি চিঠিপত্র লিখে ফেলেছেন তিনি। জবাবের প্রত্যাশায় আছেন। ধীরাপদর সঙ্গে বসে এরপর ভ্রমণসূচী ঠিক করবেন। অতএব এখান থেকে নড়ার চিন্তা ধীরাপদর একেবারে ছাড়া দরকার।
চিন্তা ছেড়েছে। কিন্তু খবর দুটো শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনের তলায় যে দুটো প্রশ্ন আঁচড় কাটছে, জানলে বড় সাহেব রেগে যেতেন কি হেসে ফেলতেন বলা যায় না। মুখ ফুটে জিজ্ঞাসা করার মত নয় একটাও। প্রথম, ছেলের বিয়ে ছেলে নিজে তা জানে কি না। দ্বিতীয়, তিনি একা যাচ্ছেন, না এবারও চারুদি সঙ্গিনী হবেন? চারুদি সঙ্গে গেলে পার্বতীকে নিয়ে সমস্যাটা যেন ধীরাপদরই।
চারুদির বাড়ি গিয়েছিল সিতাংশুর বিয়ের দিন কয়েক পরে। চারুদির ডাক আসার প্রতীক্ষায় একটানা অনেকগুলো দিন কাটিয়ে শেষে নিজেই গেল একদিন। যেতে দ্বিধা বলেই যাবার ঝোঁক বেশি। তাড়না বেশি। কিন্তু এসে শঙ্কা বোধ করল। যে চারুদির দিকে তাকালে বয়সের কথা মনে হত না, শুধু ভালো লাগত—তাঁর দ্রুত পরিবর্তনটা বড় বেশি রুক্ষ লাগছে। বয়সটাই আগে চোখে পড়ে এখন। তাঁকে দেখামাত্র পার্বতীর সেদিনের উক্তিতে সংশয় জাগল। বড় সাহেবের সঙ্গে তাঁর কানপুর যাওয়া ব্যর্থই হয়েছে বোধ হয়…কাছে থেকেও এবারে চারুদি কিছু করাতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ।
বসো। খুশিও না, বিরক্তিও না। শুকনো অভ্যর্থনা। আগে হলে এতদিন না আসার দরুন অনেক কৈফিয়ত দিতে হত, অনেক সরস আর উষ্ণ টিপ্পনী শুনতে হত।
বিয়ের ঝামেলা মিটল?
হ্যাঁ, কবেই তো। বড় সাহেবের ছেলের বিয়েতে চারুদি কেউ না, একেবারে অস্তিত্বশূন্য।
বউ কেমন হল?
ভালই!
ছেলের মাথা ঠাণ্ডা থাকবে মনে হয়?
ধীরাপদ নিজেই জানে না থাকবে কিনা। মাথা নাড়ল, মনে হয়।
চারুদির আর কিছু শোনার আগ্রহ নেই, কথা বলার আগ্রহও না। ‘মনে হয় না’ বললে বিরস মুখে একটুখানি উদ্দীপনা দেখা যেত হয়ত। পিছনে সরে খাটে ঠেস দিলেন, ধারাপদ উঠলে হয়ত শুয়ে পড়বেন।
ওদিকে পার্বতীও হয়ত তার আসাটা টের পেয়ে আড়াল নিয়েছে কোথাও। এক পেয়ালা চা খেতে চাইলে কেমন হয়? পার্বতীর ডাক পড়বে, কতখানি ঘৃণা আর বিদ্বেষ জমেছে মুখে দেখা যাবে। চা চাওয়া হল না, এমনিতেই তেতে উঠছে। এতকাল ধরে অমিত ঘোষের অমন দস্যুবৃত্তির প্রশ্রয় কে দিয়ে এসেছে? তখন ধীরাপদ কোথায় ছিল? লোকটার সেই ফোটো অ্যালবামের পার্বতী কি আর কেউ নাকি?
চারুদির সঙ্গে সহজ আলাপে মগ্ন হতে চেষ্টা করল, বড় সাহেব য়ুরোপ যাচ্ছেন শিগগীরই শুনেছ?
শুনেছেন জানে, কারণ যাত্রার সঙ্কল্প কানপুর থেকেই পাকা হয়ে এসেছে। চারুদি আধ-শোয়া, মাথাটা খাটের রেলিংয়ের ওপর। ফিরে তাকালেন একবার, তারপর দৃষ্টিটা ঘরের পাখার ওপর রাখলেন।-দিন ঠিক হয়ে গেছে?
না, ছেলের বিয়ের জন্যে আটকে ছিলেন, এবারে যাবেন। কি মনে হতে পরামর্শ দিল, বলে-কয়ে অমিতবাবুকেও সঙ্গে পাঠাও না, বাইরে কাছাকাছি থাকলে অন্য রকম হতে পারে…
বিরক্তিভরা দুই চোখ পাখা থেকে তার মুখের ওপর নেমে এলো আবার। বললেন, তোমার অত ভেবে কাজ নেই, নিজের চরকায় তেল দাওগে যাও।
হঠাৎ এই উষ্মার কারণ ঠাওর করা গেল না। চারুদির রাগ দেখেছে, হতাশা দেখেছে, কিন্তু এ ধরনের বচন আগে আর শোনেনি। কর্কশ লাগল কানে, ভিতরটা চিনচিন করে উঠল।
কিন্তু ভিতরে বাইরে এক হতে নেই এ যুগে, ধীরাপদ হাসতে পেরেছে। রয়েসয়ে বলল, কানপুর থেকে ঘুরে এসে তোমার মেজাজের আরো উন্নতি হয়েছে দেখছি, অমিতবাবুর মাসি বলে চেনা যায় …
চারুদি আস্তে আস্তে উঠে বসলেন, তারপর মুখোমুখি ঘুরে বসলেন। এই প্রতিক্রিয়ার কারণও দুর্বোধ্য।- আমি কানপুরে গিয়েছিলাম তোমাকে কে বলল?
ধীরাপদর একবার ইচ্ছে হল চোখ কান বুঝে বলে দেয়, বড় সাহেব। পার্বতী বাড়িতে ডেকে এনে বলেছে বললেই বা কোন্ ভাব দেখবে মুখের?
এখানেই শুনেছি। একদিন এসেছিলাম।
কবে এসেছিলে?
তোমরা যাওয়ার দিন কয়েকের মধ্যে। তুমি যাবে জানতুম না।
তুমি একা এসেছিলে?
আর কে আসবে? জেরার ধরনে স্বস্তি বোধ করছে না খুব।
চারুদির সন্ধানী দৃষ্টিটা যা খুঁজছিল তা যেন পেল না। তবু খুঁজছেন কিছু।— পার্বতী আর কি বলেছে তোমাকে? চাপা ঝাঁজ, এদিকে সরে এসো, দেয়াল ফুঁড়ে কথা কানে যায় বেইমান মেয়ের। কি বলেছে?
চকিতে ধীরাপদ দরজার দিকে ঘাড় ফেরাল একবার, তারপর বিস্ময়ের আড়ালে একটুখানি অবকাশ হাতড়ে বেড়াল। –কি বলবে?
ধৈর্যচ্যুতি ঘটল, সমস্ত মুখ লাল। সামনে যে বসে তার ওপরই রাগ। —নিজেকে খুব আপন ভাবো ওর, কেমন? কি বলেছে?
যেটুকু ভাবা দরকার ছিল ভেবে নেওয়া গেছে। পার্বতী কি বলেছিল স্বাচ্ছন্দে বলা যেতে পারে। চারুদির কানপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্য জানিয়ে পার্বতী অনুরোধ করেছিল আপনি এসব বন্ধ করুন। পার্বতী শুধু তাকে শোনাবার জন্যে বলেনি, শুনে মুখ বুজে বসে থাকতেও বলেনি।
ধীরাপদ আগে তবু চুপচাপ চেয়ে রইল খানিক, চারুদির হাবভাব সুস্থ লাগছে না তাই বুঝিয়ে দিল। তারপর পার্বতী কি বলেছে স্মরণ করতেও যেন সময় লাগল একটু।
… পার্বতী বলছিল তুমি ওকে সম্পত্তি দান করার মতলব নিয়ে কানপুরে গেছ। ব্যাঙ্কের পাস-বইটই আর কারবারের কাগজপত্রও সঙ্গে নিয়েছিলে শুনলাম।
চারুদির নিষ্পলক প্রতীক্ষা, মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় বুকের মধ্যে জ্বলছে কিছু।
একেবারে উপসংহারে পৌঁছল ধীরাপদ, ওর তাতে বিশেষ আপত্তি দেখলাম— ছাই দেছে তুমি! ছাই বুঝেছ! শুধু আমার হাড় মাস চিবিয়ে খাওয়া ছাড়া আর সবেতে আপত্তি ওর সে কথা বলেছে তোমাকে?
ধীরাপদ হকচকিয়ে গেল, একপশলা তরল আগুনের ঝাপ্টা লাগল মুখে। একটু আগে যে কারণে তাকে কাছে সরে আসতে বলেছিলেন, চারুদি নিজেই তা ভুলে গেলেন। রাগে উত্তেজনায় কণ্ঠস্বর চড়তে লাগল।
আমাকে আক্কেল দেবার জন্যে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনতেও আপত্তি নেই ওর, বুঝলে? নিজের মুখে কালি লেপে আমাকে খুব জব্দ করবে ভেবেছে। কেটে কুচি কুচি করে ওকে ওই বাগানে পুঁতে রেখে আসব তবে আমার নাম—করাচ্ছি আপত্তি!
প্রবল উত্তেজনার মুখেই চারুদি ভেঙে পড়লেন আবার। অবসন্ন ক্ষোভে খাটের রেলিংয়ে মাথা রেখে বাহুতে মুখ ঢেকে ফেললেন। ধীরাপদ বিমূঢ়, দরজার দিকে চোখ গেল, মনে হল পার্বতী বুঝি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। নেই কেউ। আর একদিন স্বর্ণসিন্দুর হাতে ধরে ঢুকেছিল, আজও সেই রকমই একটা আশঙ্কা ধীরাপদর।
উঠে চারুদির সামনে এসে দাঁড়াল। তাঁর হাতখানা আস্তে আস্তে মুখের ওপর থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করল। চমকে উঠে চারুদি নিজেই হাত সরালেন।
পার্বতী কি করেছে?
কিছু না। চারুদি এবারে বিদায় করতে চান ওকে, আজ যাও তুমি, আর একদিন এসো, কথা আছে—
কি হয়েছে বলো না?
আঃ! আজ যাও বলছি, আর একদিন এসো…
চারুদি তাড়িয়েই দিলেন যেন। ঘর ছেড়ে ধীরাপদ বারান্দায় এসে দাঁড়াল। এদিক-ওদিক তাকালো, কান পাতল। পার্বতী এই বাড়িতেই নেই যেন। অথচ মনে হচ্ছে সমস্ত বাড়িটা জুড়ে শুধু পার্বতীই আছে, আর কেউ নেই।
ধীরাপদ বেরিয়ে এলো।
অবাঞ্ছিত লাগে নিজেকে, পরিত্যক্ত মনে হয়। কার্জন পার্কের লোহার বেঞ্চির ধীরাপদ আজ অনেক উঠেছে, অনেক পেয়েছে। কিন্তু অঙ্কের বাইরেও অনেক রকমের হিসেব আছে। তেমনি কোনো একটা হিসেবে সে যেন অনেক নেমেছে, অনেক হারিয়েছে। সেই ওটা-নামা আর পাওয়া-হারানোর একটা শূন্য ফল অষ্টপ্রহর হাউইয়ের মত জ্বলে জ্বলে উঠতে চায়।
যে অসহিষ্ণু তাড়না তাকে চারুদির বাড়িতে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল সেটাই তাকে সুলতান কুঠির দিকেও ঠেলে পাঠাতে চেয়েছে বার বার। সেখানে যাওয়ার পথ বন্ধ ভাবছে কেন, গেলে কে বাধা দেবে? তার ঘর আছে সেখানে, যাবার অধিকারও আছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে শূন্য ঘরে ঘণ্টা দু-চার মুখ বুঝে বসে থেকে অধিকার দেখিয়ে আসবে?
যাবার মত একটা উপলক্ষ হাতড়ে পেল। পেল যখন সেটাকে একেবারে তুচ্ছ ভাবা গেল না। একাদশী শিকদারকে কাগজের দামটা দিয়ে আসা দরকার। একখানা কাগজের গোটা বছরের টাকা আগাম দেওয়া আছে। গদার অফিস থেকে যে কাগজ আসত সেটাও রাখার পরোয়ানা দিয়ে এসেছিল তাঁকে, কিন্তু দাম দেওয়া হয়নি। দিয়ে আসা দরকার।
বাস থেকে নেমেই ধাক্কা খেল একটা। কুঠি এলাকা খুব কাছে নয় সেখান থেকে। সামনের অপরিসর চার রাস্তা পেরিয়ে সাত-আট মিনিটের হাঁটাপথ। রাস্তাটা পেরুতে গিয়ে পা থেমে গেল। পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে গণদা কথা কইছে কার সঙ্গে। লোকটা গণুদার মুখোমুখি অর্থাৎ এদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছে বলে গোটাগুটি দেখা যাচ্ছে তাকে। চকচকে চেহারা, পরনে ঝকঝকে স্যুট, হাতে ঘাস-রঙা সিগারেটের টিন, চঞ্চল হাবভাব, কথা কইছে আর কোটের হাতা টেনে ঘড়ি দেখছে। দেখা মাত্র একটা অজ্ঞাত অস্বস্তি ছেঁকে ধরার উপক্রম। এ রকম একজন লোককে ধীরাপদ কোথায় দেখেছিল? কবে দেখেছিল? এ রকম একজনকে নয়, এই লোককেই। কিন্তু কোথায়? কবে? চেষ্টা করেও মনে করতে পারল না কোথায় দেখেছে, কবে দেখেছে? যেখানেই দেখুক, সেই দেখার সঙ্গে কোনো শুভ স্মৃতি জড়িত নয়-চেতনার দরজায় শুধু এই বার্তাটাই ঘা দিয়ে গেল বারকতক।
একটা লোককে পথের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতে দেখলে সেদিকে চোখ যাবেই। লোকটাও দেখল, দেখে ভুরু কোঁচকালো। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে গণূদা ঘাড় ফেরাল। এবারে গণুদাকেই দেখল ধীরাপদ। পরনের জামা-কাপড় আধময়লা, শুকনো মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ফর্সা রঙ তেতেপুড়ে তামাটে হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
এক মুহূর্তে যতখানি ঘৃণা আর বিদ্বেষ বর্ষণ করা যায় গণদা তা করল। তারপর একেবারে পিছন ফিরে ঘুরে দাঁড়াল।
ধীরাপদ পাশ কাটিয়ে গেল। সঙ্গের ওই ঘাস-রঙা সিগারেটের টিন হাতে লোকটাকে কোথায় দেখল? কবে দেখল?
সুলতান কুঠি যত কাছে আসছে পা দুটো ততো ভারী লাগছে। মজা পুকুরের অনেকটা এধারেই পা দুটো অচল হয়ে থেমেই গেল শেষে। কোথায় যাচ্ছে সে? কি দেখতে যাচ্ছে? গণুদার ওই মূর্তি, যাচ্ছে যেখানে সেখানকার চেহারা কেমন দেখবে? দুটো মাস কেটে গেল এরই মধ্যে, কিন্তু এখানে এই দুটো মাসের প্রত্যেকটা দিন কিভাবে কেটেছে? ওকে দেখেই হয়ত উমা বেরিয়ে আসবে, তার পিছনে হয়ত ছেলে দুটোও বেরিয়ে আসবে-এলে ধীরাপদ কি দেখবে ঠিক কি!
দম বন্ধ হয় আসছে, একটা অব্যক্ত যাতনা শুধু দুই চোখের কোণ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ধীরাপদ হন হন করে ফিরে চলল। একাদশী শিকদারের খবরের কাগজের টাকা মনি অর্ডার করে পাঠালেই হবে। তারপর আর একদিন প্রস্তুত হয়ে আসবে। সব দেখার মত, সব সহ্য করার মত, আর সব কিছুর চূড়ান্ত বোঝাপড়া করে নেবার মত প্রস্তুত হয়ে।
চার রাস্তার মোড়ে গদা বা সেই লোকটা নেই। আরো একবার মনের তলায় ডুব দিয়ে লোকটাকে আঁতিপাতি করে খুঁজল। পেল না। লোকটাকে দেখেছিল কোথাও ভুল নেই। অশুভ দেখা, অশুভ স্মৃতি কিছুর…এই লোক গণুদার সঙ্গে কেন? কিন্তু কে লোকটা?
রাজ্যের ক্লান্তি। থাক, মনে পড়বে’খন যখন হয়।…
ক’টা দিন না যেতে মনটা আবার যে স্রোতের মুখে গিয়ে পড়ল তার বেগ যত না, আবর্ত চতুর্গুণ। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে সেটা প্রবল নয় খুব, প্রত্যক্ষগোচরও নয় তেমন।
অমিতাভ ঘোষের রিসার্চের প্ল্যান নাকচ হয়ে গেল।
বিয়েটা করে ফেলার পর ছোট সাহেব সিতাংশু মিত্র হৃতক্ষমতা ফিরে পেয়েছে। শুধু ফিরে পাওয়া নয়, ওই এক কারণে তার আধিপত্যের দাবি আগের থেকেও বেড়েছে যেন। বড় সাহেব বিদেশযাত্রা করলে ব্যবসায়ের সর্বময় কর্তৃত্বের দখলও সে-ই নেবে এও প্রায় প্রকাশ্যেই স্পষ্ট। তার চালচলন ঈষৎ উগ্র, কাজকর্মে দৃষ্টি প্রখর।
কারখানার কর্মচারীদের অনেকে শঙ্কা বোধ করেছে। গত উৎসবে বড় সাহেবের ঘোষণা অনুযায়ী তাদের পাওনাগণ্ডা মেটেনি এখনো। অনেক কিছুই প্রতিশ্রুতির সুতোয় ঝুলছে। কেউ কেউ ধীরাপদর কাছে প্রস্তাব করেছে, বড় সাহেবকে বলুন না, যাবার আগে এদিকের যদি কিছু ব্যবস্থাপত্র করে যেতেন…। তানিস সর্দার পরামর্শ করতে এসেছিল, সদলবলে বড় সাহেবের কাছে এসে তারা একটু সরব আবেদন পেশ করে যাবে কি না। হাসি চেপে ধীরাপদ আশ্বাস দিয়ে নিরস্ত করেছে। বড় সাহেবের সঙ্গে ভার কথা হয়েছে, ছেলের সঙ্গে আর লাবণ্যের সঙ্গে পরামর্শ করে আপাতত যতটা সম্ভব তিনি করতে বলেছেন।
সিতাংশু দিনের অর্ধেক প্রসাধন বিভাগের কাজ দেখে। সেখানে সে নতুন ম্যানেজার নিযুক্ত করেছে একজন। বেলা দুটোর পর এই অফিসে আসে। লাবণ্যর ঘরে নিজের সেই পুরনো টেবিলেই বসে। বড় সাহেবের কোনো কিছুতেই আপত্তি নেই আর। হুকুমমত বিয়ে করে ছেলে যে গুণের পরিচয় দিয়েছে, আপাতত সেটা সব কিছুর ঊর্ধ্বে। তাছাড়া, তাঁর অনুপস্থিতিতে মালিক তরফের প্রধান একজন দরকার চেক-টেক সই করা আছে, আরো অনেক রকমের দায়িত্ব আছে। ভাগ্নের ওপর এ দায়িত্ব দেওয়া চলে না ধীরাপদও বোঝে। নিজের কাজকর্ম দেখাই ছেড়েছে সে। সেখানে এখন সিনিয়র কেমিস্ট জীবন সোম সর্বেসর্বা।
অমিতাভ মামাকে কড়া নোটিস দিয়েছিল, বাইরে পা বাড়াবার আগে তার গবেষণা বিভাগ চালু করে দিয়ে যেতে হবে। মোটামুটি স্কীমও একটা দিয়েছে সে, কিন্তু সেটা খুঁটিয়ে দেখার অবকাশ কারো হয়েছে বলে ধীরাপদর মনে হয় না। কাগজগুলো বড় সাহেব তার কাছে চালান করেছেন, বলেছেন, দেখো কিভাবে মাথা ঠাণ্ডা করবে, সতুর সঙ্গেও পরামর্শ করে নিও।
সিতাংশু পরামর্শ কিছু করেনি, ভালমন্দ একটা কথাও বলেনি। কাগজপত্রগুলো নিজের হেপাজতে রেখে দিয়েছে। মনে মনে বেশ একটা অস্বস্তি নিয়েই দিন কাটাচ্ছিল ধীরাপদ, অনাগত দুর্যোগের ছায়া দেখছিল। অমিতাভর এই প্রেরণার সবটাই একটা সাময়িক খেয়াল বলে মনে হয়নি তার, একেবারে তুচ্ছ করার মত মনে হয়নি। সে বিজ্ঞান বোঝে না কিন্তু সত্তার তাগিদ বোঝে। এই দুর্দম দুরন্ত লোকের মধ্যেই সাধনার ক্ষেত্রে যে সমাহিত তন্ময়তা নিজের চোখে দেখেছে, তা উপেক্ষার বস্তু নয়। কিন্তু এ নিয়ে ধীরাপদ ভাবনাচিন্তার অবকাশও পায়নি, অফিসের কয়েক ঘণ্টা বাদে সর্বদাই বড় সাহেবের প্রবাসের প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত সে।
ধূমকেতুর মত অমিতাভ সেদিন তার অফিসঘরে এসে হাজির। মারমুখো মূর্তি।
আপনি মস্ত অফিসার হয়ে বসেছেন, কেমন?
আগে হলে ধীরাপদর হাত থেকে কলম খসে যেত। এখন অতটা উতলা হয় না। মানুষটার প্রতি তার আকর্ষণ কমেনি একটুও, কিন্তু মুখোমুখি হলে এক ধরনের প্রতিকূল অনুভূতিও জাগে।
বসুন। কি হয়েছে?
মামার কাছ থেকে আমার কাগজপত্র নিয়ে আপনি কোন সাহসে চেপে বসে আছেন? এ পর্যন্ত কি অ্যাকশন নিয়েছেন তার? অমিতাভ বসেনি, সামনের চেয়ারটায় হাত রেখে ঝুঁকে দাঁড়িয়েছিল, ক্রুদ্ধ প্রশ্নটার সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারটাতেও ঝাঁকুনি পড়ল।
অ্যাকশন নেবার মালিক আমি নই। আপনার কাগজপত্র সব সিতাংশুবাবুর কাছে।
মুহূর্তের জন্য থমকালো অমিতাভ, তার কাছে কে দিতে বলেছে?
আপনার মামা।
রাগে ক্ষোভে নীরব কয়েক মুহূর্ত। ডাকল, আমার সঙ্গে আসুন একটু।
পাশের ঘরে গিয়ে ঢুকল। লাবণ্য আর সিতাংশুর ঘরে। পিছনে ধীরাপদ। দুই টেবিল থেকে দুজনে একসঙ্গে মুখ তুলল। অমিতাভ সোজা সিতাংশুর টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াল।
ইনি বলছেন আমার কাগজপত্রগুলো সব তোর কাছে?
কোন্ কাগজপত্র?
রিসার্চ স্কীমের?
ও, হ্যাঁ।
সরোষে ধীরাপদর দিকে ফিরল অমিতাভ, কবে দিয়েছেন আপনি?
দিন পাঁচ-ছয়-
ধীরাপদর জবাব শেষ হবার আগেই সিতাংশুর দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিল। —ওগুলো আমার চাই, এক্ষুনি।
সিতাংশুর ঠাণ্ডা উত্তর, ওগুলো এখন আমার কাছে নেই, ওপিনিয়নের জন্য এ লাইনের দুজন এক্সপোর্টকে দেখতে দিয়েছি।
রাগে অপমানে নির্বাক খানিকক্ষণ। চেয়ে আছে। ঘাড় ফিরিয়ে সেই চোখেই ওধারের টেবিলের সহকর্মিণীটিকেও বিদ্ধ করে নিল একবার। ফেটে পড়ার বদলে প্রথমে ব্যঙ্গ করল একপশলা।—তোর একজন এক্সপার্ট তো সামনেই দেখছি, আর একজন কে?
না, রমণী-মুখ একটুও আরক্ত হয়ে উঠল না। আরও বেশি স্থির, নির্বিকার মনে হল! সিতাংশু রূঢ় জবাব দিতে যাচ্ছিল কিছু কিন্তু তার আগেই অমিতাভ গর্জে উঠল, কেন আমাকে না জানিয়ে সেটা বাইরের লোকের কাছে দেওয়া হয়েছে? হোয়াই?
চেঁচিও না। এটা অফিস। তোমার জিনিস বলেই ওপিনিয়ন চেয়ে পাঠানো হয়েছে, অনোর হলে ছিঁড়ে ফেলা হত। টাকা তোমারও না আমারও না, তুমি চাইলেই লিমিটেড কোম্পানীর টাকায় রাতারাতি রিসার্চ বিলডিং গজাবে না!
প্রতিষ্ঠানের ভাবী প্রধানের মতই কথাগুলো বলল বটে, ধীরাপদ মনে মনে তা স্বীকার না করে পারল না। অমিতাভ ঘোষ আর দাঁড়ায়নি, ঘর থেকে বেরিয়ে দোতলা কাঁপিয়ে নিচে চলে গেছে।
দিনকয়েকের মধ্যেই বাবার অফিসঘরে সিতাংশু আলোচনার বৈঠক ডেকেছে। কিন্তু অমিতাভ সেটা মিটিং ভাবেনি, তার অপমানের আসর ভেবেছে। তার থমথমে মুখের দিকে চেয়ে ধীরাপদর সেই রকমই মনে হয়েছে। চশমার পুরু কাচের ওধারে দুই চোখ থেকে সাদাটে তাপ ঠিকরে পড়েছে একে একে সকলের মুখের ওপর —বড় সাহেবের, ছোট সাহেবের, লাবণ্যর, সিনিয়র কেমিস্ট জীবন সোমের- ধীরাপদরও।
বৈঠক দশ মিনিটও টেকেনি, তার মধ্যেই ওলট-পালট যেটুকু হবার হয়েছে। আলোচনাটা আনুষ্ঠানিক গাম্ভীর্যে শুরু বা সম্পন্ন করার ইচ্ছা ছিল হয়ত সিতাংশুর। অন্যথায় বাকি কজনকে ডাকার কারণ নেই। কিন্তু হিমাংশুবাবু সে অবকাশ দিলেন না, ভাগ্নের মুখ দেখেই তিনি বিপদ গনেছেন। ঘরোয়া আলাপের সুরে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি করতে চাস না চাস এদের বুঝিয়ে বলেছিস?
স্বভাব অনুযায়ী লোকটা ক্ষেপে উঠলেও হয়ত কিঞ্চিৎ আশ্বস্ত বোধ করত ধীরাপদ। কিন্তু তার বিপরীত দেখছে, চোখের পলক পড়ে না এমনি ধীর, শান্ত।
এঁদের বোঝার দরকার নেই। তুমি কি বুঝেছ?
বড় সাহেবের হাতের পাইপটা অনেক গোলযোগের সহায় বটে। পাইপ পরখ করলেন, একটা কাঠি বার করে খোঁচালেন একটু, তারপর দাঁতে চালান করলেন। এই ফাঁকে হাসছেন অল্প অল্প।—যে তাড়া তোর আমি আর সময় পেলাম কোথায়?
আপাতত যাতে হাত দিতে চাস সেটা কতদিনের ব্যাপার?
সেটা তোমার ছ মাসে এক চক্কর য়ুরোপ ঘুরে আসার মত ব্যাপার নয় কিছু, ছ দিনে হতে পারে, ছ মাস লাগতে পারে, ছ বছরেও কিছু না হতে পারে। তোমাকেও পারমানেন্ট রিসার্চ ডিপার্টমেন্টের কথা বলা হয়েছিল।
তা তো হয়েছিল। পাইপটা এবারে ধরানো দরকার বোধ করলেন তিনি, তারপর বললেন, সেভাবে ফেঁদে বসতে গেলে টাকা তো অনেক লাগে।
যেখানে যাচ্ছ ভাল করে দেখে এসো রিসার্চে তাদের টাকা লাগছে কিনা।
প্রচ্ছন্ন বিদ্রূপের আঁচে সিতাংশু উক্তিটা সমর্থন করল যেন। বলল, ওদের কোন একটা কোম্পানী রিসার্চে চল্লিশ লক্ষ টাকা খরচ করে বছরে শুনেছি।
আশ্চর্য, এবারও অমিতাভ ঘোষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল না। কঠিন সংযমের বাঁধন টুটল না। ফিরে তাকালো শুধু, চশমার কাচ আর একটু বেশি চকচকে দেখল। রসিকতাটা শুধু জীবন সোমই যা একটু উপভোগ করেছেন, তবে স্পষ্ট করে হাসতে সাহস করেননি তিনিও। আড়চোখে ধীরাপদ লাবণ্যের দিকে তাকালো একবার, মনে হল সেই মুখেও চাপা অস্বস্তির ছায়া।
বাবার বাক্যালাপের এই আপসের সুরটা আদৌ পছন্দ নয় সিতাংশুর। পাছে তিনি গণ্ডগোল বাধান সেই আশঙ্কায় অপ্রিয়ভাষণের দায়টা সে নিজের কাঁধেই ভুলে নিল। বেশ স্পষ্ট করে ঘোষণা করল, রিসার্চে কি সুফল হবে না হবে সেটা পরের কথা, আনপ্রোডাকটিভ ইনভেস্টমেন্টে টাকা ঢালার মত অবস্থা নয় কোম্পানীর এখন।
কথাগুলো ঘরের বাতাস শোষণ করতে থাকল খানিকক্ষণ ধরে। বড় সাহেব শব্দ না করে ডান হাতের পাইপটা বাঁ হাতের তালুতে ঠুকলেন কয়েকবার। লাবণ্য টেবিলের কাচের ওপর তর্জনীর আঁচড় কাটতে লাগল। জীবন সোম চিবুক বুকে ঠেকিয়ে নিজের পরিচ্ছদ দেখছেন। ধীরাপদর মুক দ্রষ্টার ভূমিকা।
অমিতাভ চেয়ার ঠেলে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল। তারপর ঘর ছেড়ে চলে গেল। এর আধ ঘণ্টা বাদে ধীরাপদ নিজের ঘরের জানলায় দাঁড়িয়ে বড় সাহেবকে গাড়িতে উঠতে দেখেছে, সঙ্গে ছোট সাহেবকেও। তারও ঘণ্টাখানেক বাদে লাবণ্য এলো তার ঘরে। বর্তমানে তার সঙ্গে বাক্যালাপের ধারণাটা নিছক প্রয়োজনের আঁট- সুতোয় বাঁধা। সপ্তাহে ক’টা কথা হয় হাতে গোনা যায়।
লাবণ্য বসল না, ধীরাপদও বলল না বসতে। লাবণ্য বলল, ব্যাপারটা খুব ভালো হল না বোধ হয়…। একেবারে বাতিল না করে ছোট করে আরম্ভ করা যেত।
ধীরাপদ হাসতেই চেষ্টা করল, আপনার মতটা কাউকে জানাতে বলছেন?
মিস্টার মিত্রকে জানাতে পারেন।
তার থেকে আপনি সিতাংশুবাবুকে বললে কাজ হতে পারে মনে হয়।
চোখে চোখ রেখে লাবণ্য সায় দিল, হতে পারে। কিন্তু এরপর এক মিস্টার মিত্র ছাড়া আর কেউ কিছু করলেও কাজ হবে না।
অর্থাৎ অমিতাভ ঘোষের মাথা ঠাণ্ডা হবে না। লাবণ্য আসার আগের মুহূর্তেও ধীরাপদর দুশ্চিন্তার অবধি ছিল না। কিন্তু সেই দুশ্চিন্তার সঙ্গিনী লাভ করে তুষ্ট হওয়া দূরে থাক, উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। একটু থেমে বজ্র-গাভীর্য্যে জিজ্ঞাসা করল, কোম্পানীর ছোটখাটো রিসার্চ ইউনিট একটা দরকার ভাবছেন, না ব্যক্তিগতভাবে অমিতবাবুর দিকটা চিন্তা করে বলছেন?
ডাক্তার হিসেবে তাঁর কথা চিন্তা করেই বলছি।
আবির্ভাবের থেকেও প্রস্থানের গতি আরো মন্থর। ধীরাপদ ঘাড় ফিরিয়ে দেখছে। কার্জন পার্কের লোহার বেঞ্চির ধীরাপদ চক্রবর্তী এতখানি ভাগ্যের প্রসন্নতা সত্ত্বেও আজ নিজের নিভৃতে যতখানি দেউলে, তার সবটার মূলে এই একজন। তাই তার এ দেখাটা সহজ নয়, সুস্থও নয়।
তবু সুযোগমত বড় সাহেবের কাছে প্রস্তাবটা উত্থাপন করবে ভেবেছিল। কিন্তু যাবার আগে হিমাংশুবাবু ভাগ্নের মাথা ঠাণ্ডা রাখার যে নিশ্চিন্ত হদিস দিয়ে গেলেন, শুনে ধীরাপদর মুখে কথা সরেনি। হদিস দেওয়া নয়, পরোক্ষ তিনি তাকে নিগূঢ় দায়িত্ব দিয়ে গেলেন একটা।
-তোমার দিদিকে বুঝিয়ে বলো। সবদিক ভেবেচিন্তে দেখতে বলে তাঁর মত করাও। এই কাজটা করো দেখি-ডু ইট। তা বলে তাড়াহুড়ো করে গোল বাধিয়ে বসো না। রাদার টেক ইউওর টাইম অ্যান্ড গো স্লো। তিনি রাজি হলে আমাকে জানিও, একটা টেলিগ্রাম করে দিও না হয়, সম্ভব হলে কিছু আগেই চলে আসতে চেষ্টা করব।
ভাগ্নের জন্যে আর একটু উতলা নন তিনি। ছেলের বিয়েটা দিয়ে ফেলতে পেরেই তিনি একেবারে নিশ্চিন্ত। দু দিন আগে হোক দু দিন পরে হোক, ভাগ্নে শেকল পরবে। লাবণ্য সেই শেকল, তাঁর মনের মত জোরালো শেকল। বাধা এখন চারুদি। বাধাটা হিমাংশুবাবুর কাছে অন্তত উপেক্ষা করার মত তুচ্ছ নয়।
তুচ্ছ না হলেও দুরতিক্রমণীয় ভাবছেন না। তার ওপর ধীরাপদ আছে যোগ্য চক্রী।