2 of 2

কালো মেঘের ছায়া – অমরজ্যোতি মুখোপাধ্যায়

কালো মেঘের ছায়া – অমরজ্যোতি মুখোপাধ্যায়

বেলা গড়িয়ে এখন অপরাহ্ন।

ডাকবাংলোর দালানের খুঁটি ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে অনিন্দিতা। উদাস দৃষ্টি ছড়ানো সামনের পাহাড়গুলোর ওপর। পাহাড়গুলো বড় কাছে। প্রতিটা এবড়োখেবড়ো পাথর স্পষ্ট দেখা যায় এখান থেকে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে শালের জঙ্গল। কোথাও তারা ধাপে-ধাপে উঠে গেছে পাহাড়ের মাথা পর্যন্ত। চৈত্রের নতুন পাতায় সূর্যের ঝিকিমিকি।

পাহাড়গুলোকে হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যাওয়া কোনও সমুদ্রের বিশাল ঢেউ বলে মনে হয়। যেন কোন মন্ত্রবলে সিংভূমের এই পাহাড়-বলয় উত্তাল তরঙ্গের মতোই থেমে রয়েছে মহাকালের ইঙ্গিতে। নিজের বুকে হাত বোলায় অনিন্দিতা। বুকের গভীরে উত্তাল হয়ে বয়ে চলা ঢেউগুলোও যেন পাহাড়ের মতো জমাট বেঁধে গেছে। দৈনন্দিন জীবনের অশান্তি, অপমান শাল গাছের মতোই ওর বুক চিরে মনের গভীরে শেকড় চালাবার চেষ্টা করবে। সামনের এই রুক্ষ পাহাড়, শালের জঙ্গল যেন ওরই জীবনের প্রতিচ্ছবি।

অনিন্দিতা আজকাল অনুভব করে যে, ও শেষ হয়ে গেছে। ওর বেঁচে থাকাটা অর্থহীন। জীবনের লক্ষ্য বা ঈপ্সিত জিনিস যখন হাতছাড়া হয়ে যায়, মানুষের তখন উচিত জীবন থেকে বিদায় নেওয়া। কিন্তু তাই বা ও পারছে কোথায়! কলকাতার কলেজ, ইউনিভার্সিটির সেই মুক্ত স্বাধীন জীবন, তার চপলতা, আনন্দ সবকিছুই—ওঁ প্রজাপতি ঋষি… মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে-সঙ্গেই সেদিন হারিয়ে গেছে। বন্দি হয়েছে ও খাঁচায়। মুক্ত জীবন এখন ক্রীতদাসীর জীবন। সেদিনের সে বিভাস আর নেই। গঙ্গার ধার, লেক, বেলুড় এখন সব স্বপ্ন। বাস্তব হচ্ছে, দিলীপ বটব্যাল বলে এক ইতর বর্বর পশুর ক্রীতদাসী সে।

দিলীপ বটব্যাল জিওলজিস্ট। সকালবেলায় জিপে চড়ে পাহাড়ের বাঁকে অদৃশ্য হয়েছে। প্রকৃতির বুকে কোথায় তামা আছে, তার সন্ধানে ব্যস্ত। অথচ এই ডাকবাংলোয় অনিন্দিতা বলে মেয়েটির বুকের কোটরে যে ভালোবাসার ছোট্ট পাখিটা মুক্তির জন্য ছটফট করছে, তার কোনও খবরই সে রাখে না। বরং নিষ্ঠুরভাবে খোঁচা মারতেই তার আনন্দ।

বাবা-মায়ের জবর-দস্তিতে আর দিলীপ বটব্যালের উপরোধ, অনুরোধের বেড়াজাল ভেঙে বিভাসকে নিয়ে পালাতে চেয়েছিল অনিন্দিতা। বিভাসকে বলেছিল সে, এ-বিয়ে আমি করব না। চলো, আমরা কোথাও পালাই।

সদ্য এম এ পাশ করা বিভাসের সে-হিম্মত তখন কোথায়! সংসারের অনেক-গুলো ক্ষুধার্ত মুখ, অনেকগুলো কর্তব্যকর্ম তখন তার দিকে মুখ ব্যাদান করে আছে। বাবার ইনভেস্টমেন্টের মূল্য চোকানো তখনও তার অনেক বাকি। বাধ্য হয়ে বিভাস বলেছিল, অপেক্ষা করো, না হয় বিয়ে করে ফ্যালো। অভাবের মাঝে এনে তোমার ভালোবাসাকে আমি ক্ষুণ্ণ করতে চাই না। আমায় তোমার ভুল বোঝার সুযোগ আছে। কিন্তু আমি নিরুপায়।

দুঃখ হলেও ঠিক রাগ করতে পারেনি ও বিভাসের ওপর। বিভাসকে বোঝার চেষ্টা করেছিল। প্রেম বড়, সন্দেহ নেই। কিন্তু কর্তব্য আরও বড়। অভাব নির্মম ঘাতক। তবে অপেক্ষা? না, তাও সম্ভব ছিল না। বাবার হার্টের রোগ। বেঁচে থাকাটা অনিশ্চিত। তাঁর হাতে সুযোগ্য দিলীপ বটব্যাল। সুতরাং…। দিলীপ বটব্যালও দেরি করেনি তার লোভের হাসিটা গোপন করে মন্ত্রোচ্চারণ করতে—যদিদং হৃদয়ং তব…তদিদং…। অনিন্দিতা ভাবে, দিলীপ ‘হৃদয়’ শব্দটা বাদ দিয়ে ‘দেহ’ শব্দটা ব্যবহার করতে পারত স্বচ্ছন্দে। ভারতীয় মেয়েরা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। অনিন্দিতাও করছিল। কিন্তু বিধি বাম। নইলে বিভাসের একদা মূল্যবান চিঠিগুলো পোড়াতে গিয়ে ধরা পড়ে যাবে কেন দিলীপের কাছে! অসময়ে দিলীপ বাড়ি এসে হাজির। বুঝতেও পারেনি অনিন্দিতা। ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে হাসতে-হাসতেই দিলীপ বলেছিল, নেভার মাইন্ড। দু-একজন বয়ফ্রেন্ড থাকবে না—এ হয় না। ওগুলো না পোড়ালেই ভালো করতে। তোমার অতীতের মালিক আমি নই। বর্তমানের। তোমার বন্ধুটিকে আমি চিনি।

অনিন্দিতা বুঝতে পেরেছিল, এটা প্রচণ্ড শ্লেষ। আর সেই শুরু। ও বুঝত, দিলীপ যতই বিভাসকে আপ্যায়ন করে ডেকে নিয়ে আসুক না কেন, তার একটাই অর্থ—ব্যঙ্গ করা অনিন্দিতাকে। মূর্খ বিভাসটা বুঝতেও পারে না দিলীপের চাল। তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আসলে বিভাসটা বোকা। সরল। দিলীপের নৃশংসতাটুকু চোখে পড়ে না। দিলীপ তার অসহায়তাটুকু তারিয়ে-তারিয়ে উপভোগ করতে চায়। হার স্বীকার করেনি অনিন্দিতা। বিভাস আর দিলীপের কাছে ও স্বাভাবিক ব্যবহার করবার চেষ্টা করে গেছে বরাবর।

ডাকবাংলোর দারোয়ানের আদিবাসী বউটার ডাকে চমক ভাঙল অনিন্দিতার, মাইজি, গোসলমে পানি দে দিয়া।

কুয়ো থেকে ঠান্ডা জল তুলে বাথরুমের চৌবাচ্চাটা ভরতি করে দিয়েছে গুরুবারী। পাহাড়ের বাঁক দিয়ে কোলপথের ধুলো উড়িয়ে দিলীপের জিপ ফিরে আসার আগেই গা-হাত-পা ধুয়ে সেজেগুজে বসে থাকতে হবে অনিন্দিতাকে। নিত্যদিনের রুটিন। স্বামীর আদেশ। না, হুকুম জারি করে না দিলীপ। ঘুরিয়ে বলে হাসতে-হাসতে, বাড়ি ফিরে যদি তোমায় ফিটফাট না দেখি বড় খারাপ লাগে, অনি। বাড়ি একটা বাগান। সেই বাগানের দুর্মূল্য ফুল হচ্ছ তুমি। তোমায় যদি শুকনো দেখি, তাহলে কি ভালো লাগে? হাসে দিলীপ। হাসিটা তার মুখে সবসময়ে লেগে রয়েছে। মুখে উত্তর দেয় না অনিন্দিতা। অহেতুক বিরোধিতা করে না। মনে-মনে ব্যঙ্গ করে, আহা, রাতে বিছানায় সেই ফুলকে যদি না প্রতিদিন বিধ্বস্ত করে ফেলতে! ন্যাকামি! আসলে এটা অত্যাচার। দিলীপ বোঝাতে চায়, তুমি আমার ক্রীতদাসী। তোমাকে আমার মনোরঞ্জনের জন্য হাসিমুখে সবকিছু করে যেতে হবে। তোমার ইচ্ছে-অনিচ্ছের কোনও মূল্য নেই আমার কাছে। আর সেটাই ভালো করে প্রমাণ করার জন্য দিন-দশেক আগে জোর করে সিংভূমের এই জঙ্গলে ধরে আনলে। দিলীপের নাকি একা-একা ভালো লাগছে না। অনিন্দিতার জন্য মন কেমন করে। খাওয়া-দাওয়ার অসুবিধে।

আসল অসুবিধেটা কী, তা জানে অনিন্দিতা। পাছে তার অনুপস্থিতিতে দিনের পর দিন বিভাসের কাছাকাছি থাকে ও। আশ্চর্য, আসবার সময় বিভাসকে একটা খবরও দিয়ে আসতে পারা গেল না। যেমন ঝড়ের মতো এসেছিল, তেমনই ঝড়ের মতোই তাকে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে এল। সময় নেই। ছুটি নেই। অথচ এখানে এসে দু-দিন ঘরে বসে রইল নানা বাহানায়। আর ওকে ভালোবাসার ছলে নিংড়ে নিল।

গুরুবারী তাড়া দিল : মাইজি, সাহাবকে লৌটনে কে ওয়াক্ত হো গয়া।

মুখটা লাল হয়ে উঠল অনিন্দিতার। মেয়েটা পর্যন্ত ওর অবস্থা জেনে গেছে। সেদিন এই নিয়ে ও যখন কথা-কাটাকাটি করছিল, তখন কিছু শুনেছে কি না কে জানে! ভ্রূকুটি করে অনিন্দিতা ঘরে ঢুকল।

ডাকবাংলোর উঠোনে বেতের চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে পাশাপাশি বসেছে অনিন্দিতা আর দিলীপ। বড় থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে পাহাড়ের ধার ঘেঁষে বনের মাথার ওপর। সারা জঙ্গল আলোয় আলো। কেমন যেন স্বপ্নিল। হাওয়া উঠেছে—শালের জঙ্গলে, উঠোনের কৃষ্ণচূড়ায় তারই মাতন।

অনিন্দিতার কাঁধে হাত দিয়ে দিলীপ বলল, কেমন দেখছ? এ-দৃশ্য কি কলকাতায় পেতে?

অস্বীকার করতে পারল না ও। সত্যিই অপূর্ব। মনের জ্বালা-যন্ত্রণা ভুলে মৃদু হাসল অনিন্দিতা।

তুমি তো আসতেই চাইছিলে না।—দিলীপের গলায় খুশির আমেজ। আমি নাকি তোমাকে সবসময় জোর-জবরদস্তি করি।—মৃদু অনুযোগ।

থাক না ওসব কথা!—সন্তর্পণে দিলীপের হাতটা কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে চাঁদের দিকে চেয়ে রইল ও।

ভেবেছিলাম, তোমাকে খবরটা না দিয়ে বরং কাল চমকে দেব।

কী খবর?—সন্দিগ্ধভাবে তাকাল অনিন্দিতা।

কাল বিভাস আসছে। ওকে আমি লিখেছিলাম। খুশি?

খুশি? আমায় খুশি করার জন্যে তোমার এত মাথা-ব্যথা কেন? ওকে আসতে বারণ করে দাও।—চাপা গলায় গর্জে উঠল অনিন্দিতা, তোমার ভালোমানুষির মুখোশটা আমার সহ্য হয় না।

সন্ত্রস্ত হয়ে উঠল দিলীপ : এই দ্যাখো! রেগে উঠলে। এখন কি আর বারণ করা যায়? আসুক না! তুমিও একটা সঙ্গী পাবে। আমারও ভালো লাগে লোকটাকে। কথা বলে সুখ পাওয়া যায়।

অনিন্দিতা দিলীপের মনটা বোঝবার চেষ্টা করল। কী শয়তানির প্যাঁচ কষছে, কে জানে। বিভাসকে নাকি ভালো লাগে ওর! ন্যাকামি! তাও যদি না সবকিছু জানত! চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল অনিন্দিতা : আমায় এভাবে অপমান করার অধিকার তোমার নেই।

আচ্ছা, তুমি এমন আজেবাজে ভাবো কেন? কই, বিভাস তো কিছু মনে করে না!

ও একটা নিরেট বোকা। আর তুমি একটা আস্ত শয়তান। বিভাস এলে আমি এখানে থাকব না।—ঘরের দিকে পা বাড়াল অনিন্দিতা। গুরুবারী নেমে এসেছে উঠোনে। ওকে পাশ কাটিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল ও।

ঘরের মধ্যে থেকে অনিন্দিতা শুনল কিছু অস্ফুট কথা। মৃদু হাসির গুঞ্জন তাড়া করে এল তাকে। ইতর, ছোটলোক! দাঁত দিয়ে ঠোঁট চাপল অনিন্দিতা। চকিতে একটা সম্ভাবনার কথা ওর মনে এল। ও যখন এখানে ছিল না—গুরুবারীর সঙ্গে দিলীপের…অসম্ভব কী? বউটা যা গায়ে পড়া!

নিরুপায় ক্রোধে বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে থাকল অনিন্দিতা। উঠোন থেকে গুরুবারীর চটুল হাসি তখনও ভেসে আসছে।

আদর করার ছলে লোকটা কোনও কথা শোনেনি। নির্লজ্জ দস্যুর মতো রাতভোর তাকে লুঠ করেছে। প্রেমহীন, ভালোবাসাহীন, জৈব ক্ষুধার কাছে আত্মসর্ম্পণ করতে বাধ্য হয়েছে অনিন্দিতা। রতি রভসের তুঙ্গ পর্যায়ও মনে-মনে নিজের মৃত্যু কামনা করেছে ও। রমণ শেষে ছিবড়ের মতো ওকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়েছে লোকটা। আর সারা রাত্রি জাগরণের জ্বালা নিয়ে প্রভাতের অপেক্ষা করেছে অনিন্দিতা।

বনের পাখিরা ডেকে উঠেছে একসময়। সূর্য উঠেছে। বিছানা ত্যাগ করে কুয়োতলায় বালতি-বালতি জল ঢেলে দেহের কলুষ মুক্ত করতে চেয়েছে ও।

জল তুলে দিতে-দিতে মুখ টিপে হাসল গুরুবারী : সাহাব সারে রাত পরেশান কিয়ে হ্যায় ক্যা!

চোখ বড় করে তাকাতে থমকে গেল গুরুবারী : নহী, আপকো বহুত থকা হুয়া মালুম হোতি হ্যায়।

জবাব না দিয়ে হনহন করে ঘরে ঢুকে যায় অনিন্দিতা। অসহ্য এক অপমানবোধ গ্রাস করে ওকে। গুরুবারী এত সাহস পায় কোথা থেকে? এত দুঃসাহস হয় কী করে?

জামাকাপড় ছেড়ে দালানে এসে দেখল, চায়ের কাপ আর রাইফেল নিয়ে বসেছে দিলীপ। রাইফেলটা দেখে এক অশুভ আশঙ্কায় মনটা কেঁপে উঠল। ভ্রূ কুঁচকে বলল, ব্যাপারটা কী? সাতসকালে বন্দুক নিয়ে পড়েছ?

পরিষ্কার করে রাখছি। বিভাস এলে শিকারে বেরোব। একটা পাগলা হাতি বড় উপদ্রব করছে।

নীরবে চায়ের টেবিলে বসল অনিন্দিতা। মনের মধ্যে একটা আতঙ্ক দানা বাঁধতে শুরু করল। কী পরিকল্পনা করছে লোকটা মনে-মনে? একটা কুটিল সন্দেহ ক্রমশ পাক খেতে থাকল মনের মধ্যে। কী চায় ও? গুরুবারী থাকা সত্ত্বেও ওকে টেনে নিয়ে এল কলকাতা থেকে। তারপর বিভাসকে আনছে আপ্যায়ন করে। এসবের উদ্দেশ্য কী? শুধু কি ওকে খুশি করার জন্যই এসব ব্যবস্থা? ওর ইচ্ছে হল চিৎকার করে বলে, তোমার চালাকি ধরতে পেরেছি, শয়তান। কিন্তু কিছু বলতে পারল না। ক্রমশ একটা নির্লিপ্ততা এসে ওকে গ্রাস করতে থাকল। মরুকগে, যা হওয়ার হবে। বেঁচে থেকেই বা কী লাভ!

হাঁ করে কী দেখছ? বিভাসকে আনতে যেতে হবে না?

না। ওকে আনতে হবে না।

এটা তোমার রাগের কথা।—হাসল দিলীপ : আমি মানছি, ওকে আসতে বলার আগে তোমাকে জানাইনি। তোমাকে চমক দেওয়ার ইচ্ছে ছিল।

কপটতায় গা-হাত-পা রিরি করে ওঠে অনিন্দিতার। আদর্শ স্বামী! মুখে বলে, আমার শরীর ভালো নয়, যাব না।

বেশ, আমি একাই যাচ্ছি।—রাইফেল হাতে উঠে দাঁড়াল দিলীপ।

না।—ছোঁ মেরে রাইফেলটা কেড়ে নেয় অনিন্দিতা : এটা নিয়ে কোথায় চললে? এটা রেখে যাও। এটা বিপজ্জনক।

বিস্মিত চোখে তাকাল দিলীপ, কী হল? ওটা দাও। বিপজ্জনক হলেও এটা সময় বিশেষে প্রাণরক্ষা করে।

কীসের বিপদ? পাগলা হাতির? গতকাল তো নিয়ে যাওনি?

আজ জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে হবে।

মিছে কথা।

ছিঃ অনিন্দিতা, ছিঃ। বেশ, আমি খালি হাতেই যাচ্ছি। কিন্তু যদি জিপ অ্যাক্সিডেন্ট হয়?

ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল অনিন্দিতা। তারপর কিছু না বলে টেবিলের ওপর রাইফেলটা নামিয়ে রেখে ঘরে ঢুকে গেল। শুনতে পেল গুরুবারী বলছে, সাহাব, ম্যায় চলুঙ্গি। গাঁওপর উতার জাউঙ্গি। লৌটনে কে সময় উঠা লেনা।

জানলা দিয়ে দেখল অনিন্দিতা, দুজনে বেরিয়ে গিয়ে জিপে বসল। না, গুরুবারী পিছনে। কে জানে, চোখের আড়াল হলেই হয়তো বেরিয়ে সামনের সিটে এসে বসবে। মাঝে তো জঙ্গলের রাস্তা।

বেলা যত বাড়ছিল, ততই উদ্বেগ বাড়ছিল অনিন্দিতার। এখনও ফেরেনি দিলীপরা। তবে কি সত্যিই জিপ অ্যাক্সিডেন্ট হল? ভালোমানুষের আড়ালে শয়তানটাকে চিনতে তার আর বাকি নেই। বেলা দুটো বাজতে ছটফট করে উঠল ও। সেরকম একটা কিছু হলে দিলীপের বিরুদ্ধেই সাক্ষি দেবে ও।

সমস্ত উদ্বেগের অবসান ঘটিয়ে জিপটা একসময় এসে থামল কম্পাউন্ডের ভেতর। ধূলি-ধূসরিত বেশে এক-এক করে নামল তিনজন। নির্লিপ্ত চোখে লক্ষ করল অনিন্দিতা।

ট্রেন লেট ছিল।—দিলীপ জনান্তিকে বলল।

কোনও জবাব দিল না অনিন্দিতা।

তোমায় এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন, অনি? শরীর খারাপ?

হ্যাঁ, শরীরটা ভালো নেই। একটু জিরিয়ে তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নাও। খেতে দেব। বেলা হয়ে গেছে।

বিকেলের দিকে জিপে করে বেরোল অনিন্দিতা, দিলীপ আর বিভাস। ঝরনা আর নদী দেখবে। বিভাস উচ্ছ্বসিত। দিলীপ খুশি-খুশি। অনিন্দিতা শঙ্কাকুল।

ঝরনাটার ধারে জিপটা দাঁড়িয়েছিল। চৈত্রের শেষে ঝরনাটা শুকিয়ে এসেছে। তবু পাহাড়ের গা বেয়ে এক শীর্ণ জলধারা ঝরে পড়ছে। নদীখাত প্রায় শুকনো। একটা ক্ষীণ জলধারা তিরতির করে বয়ে চলেছে। চারপাশে শাল, মহুয়ার জঙ্গল। ঝরনার ধারে মুগ্ধ বিভাস। দলছুট দিলীপ কিছু দূরে পাথর পরীক্ষায় ব্যস্ত। জিপে বিরস মুখে অনিন্দিতা।

বিভাস একসময়ে ফিরল অনিন্দিতার দিকে : তোমার কী ব্যাপার বলো তো? কী হয়েছে?

কিছু না। কিন্তু তুমি কোন আক্কেলে হ্যাংলার মতো ছুটে এলে বলো তো? লজ্জা করে না তোমার?

বিবর্ণ হয়ে গেল বিভাস : এ তুমি কী বলছ, অনি!

হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। যাকে সুযোগ পেয়েও ধরে রাখতে পারোনি, তার পেছনে এত ঘুরঘুর করা কেন?

বিভাসের মুখ থেকে কেউ যেন রক্ত শুষে নিচ্ছিল। দুর্বল কণ্ঠে বলল, আমি ব্যাপারটা এভাবে নিইনি। তা ছাড়া তোমার সঙ্গে যোগাযোগ তো আমি রাখতে চাইনি। তোমার স্বামীই জবরদস্তি করেন। বেশ, কাল সকালেই আমি চলে যাব। কথা দিচ্ছি, তোমার ছায়া মাড়াব না আর কোনওদিন।—পা বাড়াল বিভাস।

শোনো!

বলো।

তুমি কি কিছুই বুঝতে পারোনি? কেন দিলীপ তোমায় এত ঘটা করে এখানে এই জঙ্গলের দেশে ডেকে এনেছে?

না।

তুমি আমার স্বামীকে চেনো না। উদারতার আড়ালে একটা শয়তান। ও উপভোগ করতে চায় তোমার, আমার অসহায়তা। ও ক্রুর, কুটিল এক মধ্যযুগীয় বাদশাহ। ও আমাকে ঘৃণা করে, তোমাকে ঘৃণা করে। খাঁচায় বদ্ধ বেড়ালকে ও ইঁদুর দুলিয়ে লোভ দেখাচ্ছে। যে-মুহূর্তে তুমি বা আমি কেউ ভুল করব—ও আমাদের গুঁড়িয়ে ফেলবে। ও নিশ্চয় কিছু একটা ষড়যন্ত্র করেছে। চলো, আমরা কোথাও পালিয়ে যাই, বিভাস—যেখানে ও নাগাল পাবে না।

ছি, ছি! এসব কী বলছ অনি! এ বিশ্বাসঘাতকতা। এ আমি পারব না।

ঘৃণাভরা মুখ নিয়ে তাকাল অনিন্দিতা : জানি, তুমি একটা ক্লীব, নপুংসক, তুমি…তুমি…।—উত্তেজনায় কথা হারিয়ে ফেলল ও।

অনিন্দিতার প্রতিটি কথা চাবুকের মতো আঘাত করছিল বিভাসকে। তবু সংযতভাবেই সে বলল, তুমি ভুল করছ, অনি। দিলীপবাবু একজন প্রকৃত হৃদয়বান লোক। ভদ্রলোককে আমি যতই দেখি, ততই আশ্চর্য হয়ে যাই।

না, তোমায় কিছু বলা বৃথা। তোমায় কিনে ফেলেছে শয়তানটা। দুঃখ হচ্ছে, যেদিন আমার কথা সত্যি বলে প্রমাণ হবে, সেদিন হয় তুমি না হয় আমি—কিংবা দুজনের কেউই—বোধহয় এ-পৃথিবীতে থাকব না।

অনিন্দিতার আশঙ্কা-ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল বিভাস, কিন্তু বলা হল না। পিছন থেকে দিলীপের গলা পাওয়া গেল চলুন, ফেরা যাক। হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসে জঙ্গলে। পাগলা হাতিটাও থাকতে পারে আশেপাশে।

বিভাসের শরীরে কীসের যেন একটা শিরশিরানির ভাব খেলে গেল। যেন কোনও অমঙ্গলের সূচনা। অনিন্দিতার দিকে তাকাল সে। মুখ ঘুরিয়ে রয়েছে।—কিছু পেলেন নাকি?—দিলীপের হাতে একটুকরো পাথর দেখে এমনি প্রশ্ন করল বিভাস।

মনে হচ্ছে।—মিটিমিটি হাসল দিলীপ।

বিভাসের মনে হল, সেই হাসির ভেতর কেমন যেন রহস্যময়তা।

দুটো দিন অনিন্দিতা নির্বাক হয়ে কাটিয়ে দিল। বিভাস আর দিলীপ জিপে ঘুরে-ঘুরে দিনগুলো কাটাল। অনিন্দিতা সবকিছু জুগিয়ে দিল যন্ত্রের মতো। ও আর কোনও কিছুতে বাধা দেবে না বলে ঠিক করেছে। শুধু একলা থাকলে আন্দাজ করার চেষ্টা করে আঘাতটা কোন দিক থেকে আসবে।

তৃতীয় দিনের সন্ধেবেলায় উঠোনের চায়ের টেবিলে আবার মুখোমুখি হল তিনজন। দিলীপ বটব্যালের কোলের ওপর রাইফেল। চা ঢালছিল অনিন্দিতা।

বিভাস অনিন্দিতার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে দিলীপকে বলল, কাল চলে যাব ভাবছি।

যাবেন, যাবেন, মশাই। অত ব্যস্ত হবার কী আছে? এদিককার সবকিছু আগে ভালো করে দেখে নিন।

কী আর দেখার রইল এই পাহাড় আর জঙ্গলে?

আছে, মশাই, আছে। হাতির পাল দেখেছেন? তাদের জলক্রীড়া দেখেছেন? পশুদের জল খেতে আসা দেখেছেন? দেখেননি।

সত্যি?—অবিশ্বাসীর দৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করে বিভাস।

সত্যি।

বেশ, আজ রাতে দেখাতে পারবেন?

কেন নয়? চলুন, খাওয়া-দাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়া যাক জিপটা নিয়ে। ভালো কথা, রাইফেল চালাতে জানেন?

এন. সি. সি. ট্রেনিংয়ের সময় শিখেছিলাম। দেখি রাইফেলটা?

রাইফেলটা হাতে নিয়ে বিভাস সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছটায় লক্ষ্য স্থির করল।

ফায়ার করুন।

না, থাক।—রাইফেলটা ফিরিয়ে দিল বিভাস : আমরা তো আর শিকার করতে যাচ্ছি না। তা ছাড়া রক্তপাত আমার ভালো লাগে না।

কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়?

আপনি তো আছেন।

তাই বুঝি! পরের ওপর প্রাণ সঁপে দেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাহলে রেডি হওয়া যাক। আমার আর-একটা রাইফেল আছে। ওটা ঠিক করি। আসুন ঘরে।

অনিন্দিতা এতক্ষণ কথাবার্তা শুনছিল চুপ করে। বিভাস আর দিলীপকে উঠতে দেখে হঠাৎ বলে উঠল, না। বিভাস, তুমি যাবে না।

কেন?—অবাক হয়ে দিলীপ প্রশ্ন করল।

এমনি।—দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিল অনিন্দিতা।

এমন সুযোগ জীবনে আসবে না, অনি। তুমিও চলো না।

না, যাবে না। আমার ভয় করছে।

হা-হা করে হেসে উঠল দিলীপ।—থাক তাহলে। আপনার বান্ধবী ভয় পেয়েছে, বিভাসবাবু। আমি একাই যাব।

জ্বলে উঠল বিভাস : ছেলেমানুষি কোরো না, অনি। আমি অবশ্যই যাব। তোমার মেয়েলি ভয় নাই বা দেখালে।

জ্বলন্ত চোখে অনিন্দিতা তাকাল দিলীপের মুখের দিকে : তুমি প্ররোচনা দিচ্ছ।

আমি ছেলেমানুষ নই।—বিভাস বলল।

দিলীপ হাসল : এর পরেও আমায় দোষ দিও না, অনি।

তাহলে আমার কথা তোমরা শুনবে না?

না।—বিভাস বলল, তুমি বড় বেশি বাড়াবাড়ি করছ, অনি।

বেশ।—অনিন্দিতা উঠে গেল।

একজন ডাক্তার দেখান, দিলীপবাবু। ওর মাথায় কিছু গন্ডগোল হচ্ছে।

দিলীপ কথাটা এড়িয়ে বলল, আপনি না গেলেই ভালো করতেন।

দিলীপবাবু!—কঠোরভাবে কথাটা বলে বিভাস তাকাল।

দিলীপ চোখ নামিয়ে নিল।—সরি।

আমিও!—হাসবার চেষ্টা করল বিভাস।—কাল কিন্তু আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন।

ঠিক আছে।—অস্পষ্টভাবে দিলীপ বলল।

জিপটা একরকম অনিন্দিতার মুখের ওপর কালো ধোঁয়া ছেড়ে বেরিয়ে গেল। রাগে, ক্ষোভে, অপমানে ও যেন ভেঙে পড়ল। জীবনটা বড় অর্থহীন হয়ে পড়ল। ও সবকিছু সহ্য করতে রাজি আছে, কিন্তু উপেক্ষা নয়। বিশেষ করে বিভাসের ওপর রাগে ওর সর্বাঙ্গ জ্বলে যাচ্ছে। এমন করেই কি মানুষ মৃত্যুর দিকে ছুটে চলে? সে কি বুঝতে পারছে না দিলীপ বটব্যালের মিষ্টি হাসির অন্তরালে, উদারতার আড়ালে, কীসের শয়তানির চাল! পাহাড়, জঙ্গল, বুনো হাতির পাল, পাগলা হাতি, রাইফেল, জিপ—কীসের জন্য এতগুলো জিনিসের সমাবেশ? না, আর কিছু করার নেই অনিন্দিতার।

যতই নিরুদ্বেগ হওয়ার চেষ্টা করুক অনিন্দিতা—উৎকণ্ঠা যেন ওকে ঘিরে রইল। কখন জিপটা ফিরবে? জিপে কি দিলীপ একা থাকবে, না দুজনেই? নাকি ওর অনুমানই ভুল। মিথ্যে সন্দেহ করছে দিলীপকে?

ডাকবাংলোটা নিথর, নিস্পন্দ। গুরুবারী কোথায় কে জানে? জানবার প্রবৃত্তিও নেই অনিন্দিতার। মাঝে-মাঝে বিচিত্র সব শব্দ ভেসে আসছে। শরীরে ভয়ের শিরশিরানি। তা ছাপিয়েও অনিন্দিতার মনে এখন সন্দেহ, সংশয় আর উৎকণ্ঠার দোলা। একসময়ে চোখদুটো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ওর। কিন্তু হঠাৎ উঠোনে কাদের কথাবার্তা, অস্ফুট আর্তনাদের শব্দে জেগে উঠল অনিন্দিতা। দেওয়ালের অয়েল ল্যাম্পটা কমিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়ল ও। উঠোনে দুটো ছায়ামূর্তি। জড়াজড়ি করে বিভাসের ঘরের দিকে এগিয়ে চলেছে। কারা? একটু অপেক্ষা করে প্রবল উত্তেজনার মাথাতেও আশ্চর্য সন্তর্পণে ঘরের দরজা খুলে দালানে এল অনিন্দিতা। বিভাসের ঘর থেকে টুকরো-টুকরো কথা ভেসে আসছে—সঙ্গে সামান্য কাতরানির শব্দ।

পায়ে-পায়ে এগিয়ে চলল ও। বিভাসের দরজার গোড়ায় রাইফেলটা ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো। দরজার আড়াল থেকে উঁকি মারল দুরুদুরু বক্ষে। কী দৃশ্য দেখবে কে জানে। গুরুবারীর গলা পাওয়া যাচ্ছে। তবে কি বিভাস…? না, বিছানার ওপর দিলীপ শুয়ে। ফার্স্ট-এড বক্সটা খুলে ব্যান্ডেজ বার করে দিলীপের মাথায় বাঁধবার চেষ্টা করছে গুরুবারী। মাথাটা বোধহয় ঘুরে উঠল অনিন্দিতার। দেওয়াল ধরে টাল সামলিয়ে নিল।

ও বাবু কাঁহা?

গুরুবারীর কথা ক’টা কানে যেতেই অনিন্দিতার মনে হল, ও যেন একটা আগ্নেয়গিরি হয়ে যাচ্ছে। বিস্ফোরণ ঘটবে ওর মধ্যে। মুহূর্তের মধ্যে রাইফেলটা হাতে নিয়ে ঝড়ের মতো ঘরের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াল ও : দিলীপ, বিভাস কই? বলো, বিভাস কই?

গুরুবারী আতঙ্কে নীল। বিস্ফারিত চোখে দিলীপ বিছানা ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করল। বাধা দিল অনিন্দিতা। রাইফেলের নল বুকে ঠেকিয়ে তাকে শুইয়ে দিল, বলো শয়তান, বিভাস কোথায়?

দিলীপ বোধহয় সংবিত ফিরে পেল : বিশ্বাস করো, অনি, পাগলা হাতিটা এমনভাবে তেড়ে এল—পথ হারিয়ে ফেলেছে বোধহয়।

দাঁতে দাঁত চেপে অনিন্দিতা বলল, কোথাকার পথ? পৃথিবীর, তাই না? আমি জানি, তুমি খুন করেছ বিভাসকে। এটাই তুমি চাইছিলে। তোমার ভালোমানুষির অন্তরালে একটা খুনে লুকিয়ে আছে। আমি জানতাম, তুমি বলবে এটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট। গুরুবারীর সঙ্গে পিরিতটাও তোমার অ্যাক্সিডেন্ট!—ব্যঙ্গ করে উঠল অনিন্দিতা।

অনি, বিশ্বাস করো, হাতিটাকে আমি গুলি করেছিলাম। আমি আহত, তোমার সামনে দাঁড়াবার সাহস…।

হয়নি…কারণ সে-গুলি ফসকে লাগল বিভাসের গায়ে। চমৎকার!—হো-হো করে উন্মাদের মতো হেসে উঠল অনিন্দিতা। তারপর হঠাৎই স্তব্ধ হয়ে গেল কয়েক মুহূর্তের জন্য : বিভাস কী অপরাধ করেছিল, দিলীপ?—দম নিয়ে কান্নার সুরে বলল অনিন্দিতা।

হঠাৎ আতঙ্কে গুরুবারী আর দিলীপ দুজনেই চিৎকার করে উঠল। অনিন্দিতা রাইফেলটা মেঝেতে দাঁড় করিয়ে নলটা বুকে চেপে ধরেছে। ডানপায়ের বুড়ো আঙুল টিগারের ওপর।

পাগলের মতো ঝাঁপ দিতে গেল দিলীপ : অনি, না…।

কিন্তু দেরি হয়ে গেছে।

ঠিক সেই মুহূর্তে গুলির শব্দে ডাকবাংলোর গেটের কাছে কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল বিধ্বস্ত বিভাস। একটা পা তার তখন উঠোনের ওপর।

মাসিক রোমাঞ্চ

জানুয়ারি, ১৯৮২

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *