কালী সাধনায় : সাধিকা মা সারদা

কালী সাধনায় : সাধিকা মা সারদা

লোকে আমাকে ভগবতী বলে, আমিও ভাবি—সত্যিই বা তাই হবে। নইলে আমার জীবনে অদ্ভুত অদ্ভুত যা সব হয়েছে! এই গোলাপ, যোগীন এরা তার অনেক কথা জানে। আমি যদি ভাবি—এইটি হোক, কী এইটি খাব, তা ভগবান কোথা হতে সব জুটিয়ে এনে দেন। আহা! দক্ষিণেশ্বরে কি সব দিনই গেছে মা! ঠাকুর কীর্তন করতেন, আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা নহবতের জাফরির ভিতর দিয়ে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতুম, হাতজোড় করে পেন্নাম করতুম, কি আনন্দই ছিল! দিনরাত লোক আসছে, আর ভগবানের কথা হচ্ছে।” কথাগুলি বলেই সারদা মা সম্মুখে বসা মহিলা ভক্তটিকে একদৃষ্টে একটু দেখলেন। চারপাশে আরও ক’জন বসে আছেন। কথা চলছে বাগবাজারে উদ্বোধনের মা’র বাড়িতে। এ যেন সারদা কথামৃত। মা সারদার তখন বয়স হয়েছে। তবু ভক্তদের জন্য দিনরাত চিন্তা—কীসে মেয়েগুলির মন একটু ভগবানের দিকে যায়—কীসে তারা অন্তরে শান্তি, প্রাণে আস্থা ও সুখ পায়—তাই দিবারাত্র মা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সামনের তাপিতা মেয়েটিকে দেখে মা আবার বললেন, ”কত সৌভাগ্য, মা এই জন্ম, খুব করে ভগবানকে ডেকে যাও। খাটতে হয়, না খাটলে কি কিছু হয়? সংসারের কাজ কর্মের মধ্যেও একটি সময় করে নিতে হয়। আমার কথা কি বলব? মা, আমি তখন দক্ষিণেশ্বরে রাত তিনটের সময় উঠে জপে বসতুম। চারিদিক নিস্তব্ধ, কোনো হুঁশ থাকত না। জোছনা রাতে চাঁদের পানে তাকিয়ে জোড় হাত করে বলেছি, তোমার ওই জোছনার মতো আমার অন্তর নির্মল করে দাও।”

ভবতারিণী মা নিশ্চয়ই সারুর প্রার্থনা শুনেছিলেন। নইলে আজ কেন তিনি বিশ্বমাতা সারদা হয়ে গেলেন? হয়ে গেলেন আপন মায়ের চেয়েও এত আপন!

শুধু কি তাই ভাবছেন? রহস্য আরো গভীরে। ব্যাপারটা স্পষ্ট ধরা পড়েছিল ক’মাস আগে। যখন জয়রামবাটীতে মায়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য মাকে প্রণাম করব মন্দিরে। ঘুরে বেড়াব জয়রামবাটী, কামারপুকুরের দেবদেউল প্রাঙ্গণে একা, একমনে। আর করতেও লাগলাম তাই।

সেদিন সকালেই ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম শিহড়ে। জয়রামবাটী, কামারপুকুরে শিহড়ে এই একশো বছর আগেও দেবদেবীরা জীবন্ত হেঁটে বেড়াত। নইলে সারদা মার গর্ভধারিণীকে মা কালী কেন ছোট্ট বালিকা বেশে পিছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরলেন—তা নয় শুধু—আবার আদর করে স্নেহনয়নে মিষ্টি মিষ্টি করে বলা হল—”আমি তোমার মেয়ে হয়ে জন্মাব।”

—আমার! আমার মেয়ে হবে তুমি … কিন্তু …

—কোন কিন্তু নয় … আবার তার খিল খিল হাসি! কচি মুখে দাঁড়িয়ে শ্যামা! আকাশে সবে চাঁদ উঠেছে। স্নিগ্ধ বাতাস বইছে চতুর্দিকে। চারিদিক নিস্তব্ধ। কী ভালো নির্জন স্থানটা। দূরের নানা বুনো ফুলের গন্ধ ভেসে আসে। দু’-চারটি পাখির গৃহে ফেরার ভয়ার্ত চিৎকার। সারদার মা শ্যামাসুন্দরী দেবী ঠাকুর দেখে বাড়ি ফিরছেন। সন্ধে হয়েছে। একাই আছেন। আজ শরীরটা যেন ভালো নয়। ক’দিনই পেটের অবস্থা খারাপ। মাঝে মধ্যেই শৌচে যেতে হয়। শিওড়ের শিবঠাকুর দেখে ফেরার পথে হঠাৎ পেটটা যন্ত্রণায় মোচড় দিয়ে উঠল। ফলে শ্যামাসুন্দরী অন্ধকারে এল্লাপুকুরের পাড়ে চলেছেন। কিন্তু স্থান চিনতে ভুল হল। বসে পড়লেন এক বেলগাছের তলায়। পাশেই কুমোরদের পাড়া। জায়গাটা চেনা। কিন্তু হঠাৎ-ই বড় অচেনা হয়ে উঠল সব। কেমন যেন আনমনা ভাব। শৌচ হয় না। অথচ উঠেও যাওয়া যায় না। একটু আচ্ছন্ন হওয়া। পরক্ষণেই সামান্য ঝোড়ো বাতাস। দু’-চারটি গাছের শুকনো পাতা উড়ে গেল দূরে। হঠাৎ অন্ধকারের নিঃস্তব্ধতা ভেদ করে উঠল ঝনঝন নূপুরের শব্দ। কিন্তু শব্দটা আসছে কোথা থেকে? ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলেন শ্যামাসুন্দরী। এ কী! কে ও লালচেলি পরে—গাছ থেকে হাসতে হাসতে নেমে আসছে কেন আমার দিকে? কে? কে তুমি মা? মেয়েটি কোনো উত্তর দিল না। ধীর পায়ে নেমে এল শ্যামাসুন্দরীর কাছে। তারপর পিঠের দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরল গলাটা। মুখে বলল স্নেহমাখা মায়াবী কণ্ঠে—”আমি তোমার ঘরে এলাম মা।”

মেয়ের আলতো স্পর্শ এবং মধুর বাণীতে এক অসীমের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন শ্যামাসুন্দরী। চোখে তাঁর আবেশ ধরে এল। মনে অনন্তের আনন্দ। এত বিহ্বলতা সহ্য হল না তাঁর। লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। জ্ঞান নেই কোনো। সংজ্ঞাহীন। অন্ধকার রাতে পড়ে রইলেন শ্যামাসুন্দরী। ছোট্ট মেয়ের তত্বাবধানে। অনন্ত আকাশের নীচে। নির্জনে। ভাবছেন—নামটা কি সুন্দর, তাই না? শ্যামাসুন্দরী। আমাদের সারদামায়ের গর্ভধারিণী মায়ের নাম। ‘শ্যামা’ স্বয়ং তাঁর সঙ্গে খেলা করছেন। শ্যামা মায়ের রূপে যিনি সেজেছেন তিনিই তো শ্যামাসুন্দরী—তাই না?

এদিকে খোঁজ খোঁজ রব পড়ে গেল সন্ধ্যাবেলায়। কোথায় গেল শ্যামাসুন্দরী? একথা সেকথা হতে হতেই আলো নিয়ে বেরিয়ে পড়ল স্বজনেরা খুঁজতে। হঠাৎই আবিষ্কার করা হল এক ভগ্ন দেবালয়ের পার্শ্বে বেলগাছের নীচে তিনি শুয়ে আছেন। অচৈতন্য। কিন্তু চোখে মুখে অপার্থিব প্রশান্তি। দূর থেকে কেউ যেন আগলে রেখেছে। গন্ধে ভরপুর চতুর্দিক।

সকলে ধরাধরি করে নিয়ে এল বাড়ির বউকে। চোখে মুখে জল দিয়ে সুস্থ করে তুললেন তাঁকে। জ্ঞান ফিরল শ্যামাসুন্দরীর। বললেন সকলকে ঘটনাটা। কেউ বিশ্বাস করল, কেউ করল না। কিন্তু শ্যামাসুন্দরী অবিশ্বাস করেন কী করে? চোখের সামনে দেখা। ছোট্ট মেয়ের মুখের আদরের ভাষা ‘আমি তোমার ঘরে এলাম মা’—তাহলে কি সে মেয়ে আবার আসবে ফিরে? আসবে আমার মেয়ে হয়ে? নানা প্রশ্ন ভিড় করে মনে তাঁর। শিহরন ওঠে প্রাণে। দেখতে দেখতে গর্ভবতী হয়ে পড়লেন শ্যামাসুন্দরী। পাঁচজনে দেখে কী সুন্দর রূপ হচ্ছে তার দিনে দিনে। মাথায় চুল যেন ধরে না। সারা শরীরে লাবণ্যের ছটা। চোখে মুখে বড় প্রেমের, পবিত্রতার ভাব। কণ্ঠে অমায়িক মধুর বচন। নারী যেন বিশ্বমায়ের অনন্ত উদার আঁচলে পড়েছেন বাঁধা। দেখতে দেখতে প্রসবের দিন এগিয়ে এল। পৌষের এক মিঠা দিনে রাত ২টার সময় জন্ম হল সেই মেয়ের। শ্যামাসুন্দরী মেয়ের মুখ দেখে আনন্দে ভাসেন। আর ভাবেন, এই কি সেই মেয়েটা যে গাছের তলায় গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল—”তোমার ঘরে এলাম মা!” হয়তো বা।

দেখতে দেখতে শ্যামাসুন্দরীর মেয়েটি বেশ বড় হয়ে উঠল। পাঁচজনের কাছে সে সারু। সারদা। সংসারের সারদাত্রী। জ্ঞান ভক্তি ভালোবাসা সেবা রূপ সার জিনিস যিনি মানুষের ঘরে ঘরে বিলিয়ে দেন তিনিই তো সারদা।

মায়ের আজ খুব নামডাক চারদিকে। অথচ তাঁর দেবী ভাব লুকোবার ক্ষমতা ছিল কত! সর্বদা অবগুণ্ঠনবতী। ছোট থেকেই সারদা বড় লজ্জাশীলা। সবৈশ্বর্যময়ী হয়েও যেন তপস্বিনীর বেশে কুণ্ঠিতা। এ ভাব তাঁর বরাবর। ছোট্ট বয়সে সারু কী না করেছেন? গরিবের সংসারে সর্বদা নানা কর্ম করেছেন, তরকারি কুটছেন, রান্না করছেন, ঘর নিকোচ্ছেন, বাসন মাজছেন, কাপড় কাচছেন, পান সাজছেন, গোরুকে খেতে দিচ্ছেন আরো কত কী—দিনরাত কর্ম আর কর্ম। তবু মেয়ে শান্ত, ধীর, স্থির, সর্বদা হাসিমুখ, নম্র স্বভাবা এবং কে যেন সর্বদা তার সঙ্গী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন—তাঁকে অলক্ষ্যে থেকে নানারকম সাহায্য করছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন।

তখন সারুর কত-ই বা বয়স হবে। আট-দশ বছর হয়তো। বাড়ির গাভীটার জন্য ঘাস কাটতে চলেছেন আমোদরের পাড়ে। কিন্তু দেখছেন কি—সঙ্গে সঙ্গে চলেছেন দূর গাঁয়ের অজানা একটা মেয়ে। তার চোখে যেন ভালোবাসা ঝরে পড়ছে! ছোট্ট সারদার প্রতি কি তার মমতা, ভালোবাসা বলে বোঝানো যায়ঃনা।

সারু অনুভব করে সব। মেয়েটির স্বভাব অন্য মেয়েদের মতো নয়। হঠাৎ হঠাৎ তার আবির্ভাব হয়। কখনো বা কর্মে সাহায্য করে সারুকে। কিংবা আমোদে-আহ্লাদে ভরিয়ে দিতে চায় সারুর মন। কিন্তু কে এই মেয়ে? থাকে কোথায়? বিস্ময় জাগে সারদার মনে। কিন্তু জিজ্ঞাসা করতেও তত ইচ্ছা জাগে না। অথচ তাঁকে খুব ভালো লাগে, অনুভবে যেন প্রাণের স্পন্দন।

একদিন সারদা দেখল কি—নিজে জলে নেমে গোরুর জন্য দলঘাস কেটে আঁটি করে পাড়ে রেখে আসার পূর্বেই সে মেয়েটি কোথা থেকে এসে তার কাজের সহায়করূপে লেগে গেল। হাসি হাসি মুখে মেয়ে বলে কি—’সারু, আমি কেটে দি, তুমি আঁটি করে পাড়ে রেখে এসো।’

—কী সুন্দর কথা মেয়েটির। সারদা আনমনা হয়ে পড়ে।

তারপর মাথায় করে ঘাসের গুচ্ছ আঁটি বয়ে সারদা রওনা দেয় গৃহের মুখে। মেয়েটি পিছনে পিছনে আসতে থাকে। কিন্তু হঠাৎই যেন মাঝে মধ্যে কোথায় মিলিয়ে যায়। দেখা যায় না বড়ো।

আস্তে আস্তে বয়স বাড়ল সারদার। স্বামীর বাড়ি কামারপুকুরে গিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। কিন্তু স্বামী যে ভোলানাথ—কোনো ঠিক নেই। পড়ে থাকে দক্ষিণেশ্বরের মায়ের মন্দিরে। মাকে নাকি স্ব-হস্তে ভোগ খাওয়ান। আরো কত কী—লোকমুখে তাঁর কত পাগলামির কথাই না সে শুনেছে! তবু তো স্বামী। শ্রদ্ধা ভালোবাসা কিছু কম পড়ে না সারদার। মনে মনে তাই সর্বদা স্বামী সান্নিধ্য সুখের কথা ভাবেন মেয়ে। এ তো সনাতন বাসনা মেয়ে মানুষের।

অবশেষে বহুদিন পরে তা মিলেও গেল। ঠাকুর তখন স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে কামারপুকুরে এসেছেন। এসেই ভাগ্নে হৃদয়কে পাঠালেন মামীকে জয়রামবাটী থেকে কামারপুকুরে নিয়ে আসার জন্য।

ছোট্ট সারদা বউরূপে এলেন শ্বশুর ঘরে। অতি অল্প বয়স। সর্বদা সলজ্জ ভয়। বয়স ১২/১৩ বৎসর হবে। স্বামী গৃহের সব কিছু তত পরিচিত নেই। একলাটি সব কিছু সামলাতে হয়। কিন্তু মনে ভাবনা একলা কী করে হালদার পুকুরে স্নান করতে যাবেন!

স্নান করার ইচ্ছা নিয়ে পথে নেমেছেন। আর ভাবছেন তো ভাবছেন—কী করে একলা যাওয়া যায় সেখানে? হঠাৎ একি দেখছেন তিনি—আটজন তার বয়সী কিশোরী মেয়ে কোমরে ঘড়া নিয়ে স্নান করতে বেরিয়েছে। সকলেই কত সুন্দরী, সুকেশী। প্রত্যেকের চোখে মুখে পবিত্রভাব। দেবী স্বভাব যেন সকলের চোখে মুখে ফুটে বেরুচ্ছে—বিস্ময়ে সারদা ভাবে এরা সব কারা?

—হ্যাঁগো, তোমরা সব কারা বাছা? আসছ-ই বা কোথা থেকে? প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, সারু।

—আমরা! এই পাড়ার বউসব—আসছি ওখান থেকেই—বলেই হেসে লুটোপুটি খেল মেয়েগুলি। তারপর ওদের মধ্যে চারজন গেল সারদার সামনে। আর চারজন রইল পিছনে। সারদা চলেছে মাঝে। কোথায় যাবে সব? স্নান করতে। হালদার পুকুরে।

ছোট্ট কিশোরী সারদা দেখল মেয়েগুলি আনন্দ করতে করতে তার সঙ্গে স্নান করল এবং যেমনভাবে ছন্দবদ্ধভাবে স্নান করতে নিয়ে গিয়েছিল, তেমনভাবেই তাকে গৃহে পৌঁছে দিয়ে গেল।

যতদিন এ সময়ে সারদা কামারপুকুরে ছিল ততদিনই একই ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু মেয়েগুলি সত্যিই কারা এ বিষয়ে মনে তার প্রবল কৌতূহল থাকলেও তার সমাধান করতে এগিয়ে যায়নি ছোট্ট সারদা। বড় বয়সে আজ তাই আক্ষেপ।

তবে বড়ো বয়সে এসব ঘটনার কথা সারদার বেশ মনে পড়ে। আর মনে মনে বিস্ময়ে হতবাক হন। সর্বাঙ্গে শিহরন খেলে যায়—করুণাময়ী মায়ের এত দয়া তার উপর—অষ্টসখী পরিবৃতা করে মা তাকে এত কৃপা করেছেন! এত ভালোবেসেছেন, আগলেছেন।

আর হবে নাই-বা কেন! বলেই মা সম্মুখের মেয়ে ভক্তগুলিকে বললেন, ”দেখ, আমার শ্বশুর ছিলেন বড় তেজস্বী নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। বড় অপরিগ্রাহী ছিলেন। কারোর দান নিতেন না। কিন্তু দেবদ্বিজে ভক্তি ছিল তাঁর প্রবল। মা শীতলা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে ফিরতেন। প্রত্যহ শেষ রাতে উঠে ফুল তুলতে যাওয়া তাঁর অভ্যাস ছিল। একদিন লাহাদের বাগানে গিয়েছেন। একটি ন’-বছরের মতো মেয়ে এসে তাঁকে বলছে, ‘বাবা, এদিকে এস। এদিকের ডালে খুব ফুল আছে। আচ্ছা নুইয়ে ধরছি তুমি তোল।’ তিনি বললেন, ‘এ সময়ে এখানে তুমি কে মা?’ ‘আমি গো, আমি এই হালদার বাড়ির।’ অমন ছিলেন বলেই ভগবান তাঁর ঘরে এসে জন্মেছিলেন। এ-কথা বলেই মা একটু হাসলেন।

আমাদের মা ব্রহ্মময়ী সারদার ভক্ত নানা দিকে ছড়িয়ে। তার মধ্যে মায়ের এক নামী ভক্ত শ্রীশচন্দ্র ঘটক। মাকে খুব ভালোবাসেন। সারদা মা তখন বেলুড় মঠে এসেছেন। ভক্ত শ্রীশচন্দ্রও এসেছেন। আরও এসেছেন প্রফুল্ল গাঙ্গুলি। ১৯১৬ সাল। বিকালবেলায় মঠের রান্নাঘরে সাধু-ব্রহ্মচারীগণ তখন কুটনা কুটছিলেন। মা মন্দিরে ঠাকুর প্রণাম করে ওদিকে গেলেন। মা গ্রামের মেয়ে। জয়রামবাটী থেকে মঠে এসেছেন দুর্গাপূজা উপলক্ষে। কিন্তু ছেলেরা কুটনা কুটছে দেখে তিনি বিস্ময়ে বলেই ফেললেন, ”ছেলেরা তো বেশ কুটনো কুটে।” জগদানন্দজি তখন কুটনা কোটার দলেই ছিলেন। তিনিই সহসা বলে উঠলেন, ”ব্রহ্মময়ীর প্রসন্নতা লাভই হল উদ্দেশ্য, তা সাধন-ভজন করেই হোক আর কুটনো কুটেই হোক।” এ-সময়ে মায়ের পাশে পাশেই ছিলেন ভক্ত প্রফুল্ল। সে বলে উঠল—”মা, ভয় হয় তোমার মতো মা পেয়েও কিছু যেন হল না মনে হয়।”

মা তৎক্ষণাৎ বললেন—”ভয় কি বাবা! সর্বদার তরে জানবে যে ঠাকুর তোমাদের পেছনে রয়েছেন। আমি রয়েছি—আমি মা থাকতে ভয় কি?”

এই মা যেন সেই মা—সেই মা—সেই শ্যামাসুন্দরীর গলা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাতর কণ্ঠে বলেছিল—”তোমার ঘরে এলাম মা।” কেবল পার্থিব তনুধারণ। অন্তরে ভগবতী, মা মহামায়া।

তা তিন মা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল কলির ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে। এক মন্দিরের মা ভবতারিণী। আর এক নহবতের সহধর্মিণী। তিন গর্ভধারিণী চন্দ্রামণি। জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ স্বামী তাই স্ত্রীকে বললেন—”সত্যি সত্যি তোমাকে আনন্দময়ী মা বলে দেখতে পাই।” দক্ষিণেশ্বরে আনন্দময়ী শ্যামা মা’র নামে গানে বিভোর তখন রামকৃষ্ণ। মা ছাড়া কোনোদিকে মন নেই। এমন আপনভোলা মানুষ ব্রাহ্মধর্ম নেতা কেশবচন্দ্র কখনোই আগে দেখেননি। ব্রাহ্মনেতা ভক্তিভরে কালীতত্ব শুনতে চান ঠাকুরের কাছে। একদিন বললেন, ”আচ্ছা, মা কালী কতভাবে লীলা করছেন, সেই কথাগুলি আর একবার বলুন।”

শ্রীরামকৃষ্ণ সহাস্যে বললেন, ”তিনি নানাভাবে লীলা করছেন। তিনিই মহাকালী, নিত্যকালী, শ্মশানকালী, রক্ষাকালী, শ্যামাকালী। মহাকালী নিত্যকালীর কথা তন্ত্রে আছে। যখন সৃষ্টি হয় নাই চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, পৃথিবী ছিল না, নিবিড় আঁধার, তখন কেবল মা নিরাকার মহাকালী—মহাকালের সঙ্গে বিরাজ করছিলেন।

তবে শ্যামাকালীর অনেকটা কোমল ভাব—বরাভয়দায়িনী। গৃহস্থ বাড়িতে তাঁরই পূজা হয়। যখন মহামারী, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি—তখন রক্ষাকালীর পূজা করতে হয়। শ্মশানকালীর সংহার মূর্তি। শব, শিবা, ডাকিনী, যোগিনী মধ্যে শ্মশানের উপর থাকেন। রুধির ধারা, গলায় মুণ্ডমালা, কটিতে নরহস্তের কোমর বন্ধ। যখন জগৎ নাশ হয়, মহাপ্রলয় হয় তখন মা সৃষ্টির বীজ সকল কুড়িয়ে রাখেন। … দরকার হলে বার করেন। সৃষ্টির পর আদ্যাশক্তি জগতের ভিতরেই থাকেন। জগৎ প্রসব করেন, আবার জগতের মধ্যে থাকেন। কালী কি কালো? দূরে তাই কালো, জানতে পারলে কালো নয়। আকাশ দূর থেকে নীলবর্ণ। কাছে দেখ, কোনো রঙ নাই। সমুদ্রের জল দূর থেকে নীল, কাছে গিয়ে হাতে তুলে দেখ, কোনো রঙ নাই।”

এই পর্যন্ত বলে ঠাকুর যেন উন্মত্ত হয়ে গেলেন। গান ধরলেন

মহানন্দে—

”মা কি আমার কালো রে

কালোরূপ দিগম্বরী হৃদপদ্ম করে আলো রে।” …

ঠাকুরের উদাত্ত কণ্ঠে প্রাণ মাতানো মায়ের গান শুনতে সারদার বেশ ভালো লাগে। থাকেন নহবতে। ১৮/১৯ বছরের কিশোরী। এক মাথা চুল। সর্বাঙ্গে অপরূপ সত্য, প্রেম, শ্রদ্ধা, ক্ষমা, সদাচার, বিনয়—ভূষণের প্রকাশ। পবিত্রতা স্বরূপিণী। সারাদিন নানা কাজকর্মে ব্যস্ত। কিন্তু মনটি সর্বদা মা ভবতারিণী ও স্বামী দেবতার কাছে পড়ে আছে। এঁদের জন্য তাঁর যত চিন্তা। তবে এত কাজ করেও মা ভবতারিণীর জন্য একটি করে মালা গাঁথা তাঁর চাই-ই। সেদিনের গাঁথা মালাটা ছিল বেশ বড়। সাত লহর গড়ে মালা। পরম মমতায় সারদা গেঁথেছে জুঁই আর রঙ্গন ফুল দিয়ে। বিকালের গাঁথা মালা সারারাত পাথরবাটির জলে ডোবানো রইল। তারপর কুঁড়িগুলি ফুটে গেলে ব্যস্ত সারদা পরের দিন সকালে মালাটা মা ভবতারিণীর জন্য মন্দিরে পাঠিয়ে দিলেন। বেশকারী গহনা খুলে বড় মালাটা মায়ের গলায় পড়িয়ে দিয়েছেন। দেখতে বেশ লাগছে!

সত্যি, সর্বাঙ্গে মালা পড়ে মা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছেন আজ। দেখে মনে হচ্ছে একেবারে জীবন্ত। মা ভবতারিণী আজ যেন চঞ্চলা বালিকা। পরনে বারাণসী লাল চেলি। ত্রিনয়নী, শ্রীপাদপদ্মে নূপুর। আর রয়েছে পাঁজেব, চুটকি, জবা এবং বিল্বপত্র। মা’র হাতে সোনার বাউটি তাবিজ। গলদেশে সুবর্ণ নির্মিত মুণ্ডমালা। মায়ের বাম হাত দুটিতে রয়েছে নরমুণ্ড ও অসি। দক্ষিণ হাতে বর ও অভয়দান মুদ্রা। কটিদেশে নরকর-মালা। মুখমণ্ডল আনন্দে উদভাষিত। সদ্য স্নান সেরে ঠাকুর এসেছেন মন্দিরে। এসে প্রণাম করতেই চোখে পড়ল সুন্দর জুঁই-রঙ্গনের গড়ে মালাটি যা শ্রীঅঙ্গে ধারণ করে মা একেবারে পুলকিত হয়ে উঠেছেন। উৎফুল্ল ঠাকুর পূজারিকে জিজ্ঞাসা করে বসলেন, ”আচ্ছা, মালাটি কে গেঁথেছে? আহা! কালো রঙে মালা পরে কি সুন্দর মানিয়েছে মাকে—মা, মা, মা জগদম্বা!”

পাশ থেকে একজন উত্তর দিলেন—এ মালা এসেছে নহবত থেকে। উনিই গেঁথেছেন।

—উনি, আশ্চর্য! ডেকে আনো তাঁকে। একটু দেখে যাক—তাঁর গাঁথা মালা পরে মায়ের কি রূপ খুলেছে!

বৃন্দে ঝি ঠাকুরের কথা শুনে সারদাকে নহবত থেকে ডেকে আনলেন। সারদা মা জগদম্বার অপরূপ প্রাণমাতানো রূপ দেখে বিস্ময়ে হতবাক হলেন। কিন্তু লজ্জাশীলা নারী তিনি। বেশিক্ষণ আর থাকা হল না। নহবতেই ফিরে এলেন। জগতের মার কথাই ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে গেল ক’মাস আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটি। স্মৃতির পথ ধরে সারদা চলে গেলেন—তখন চৈত্রমাস। দারুন গরম চারিদিকে। বাবার সাথে আসছেন দক্ষিণেশ্বরে। সঙ্গে আরও অনেক পাড়া-প্রতিবেশী। সকলেরই ইচ্ছা গঙ্গাস্নান করবেন। কিন্তু তার দক্ষিণেশ্বরে আসার কারণ অন্য। আসলে পাড়ার সকলে দিনরাত বলে শ্যামাসুন্দরীর মেয়ের পাগলা জামাইয়ের সাথে বিবাহ হয়েছে। কিশোরী সারদা স্বামী নিন্দার জন্য বাড়ি থেকে বেরতো পারেন না। মনে কষ্ট হয়। তাই নিজে চোখে একেবারে সব দেখে আসতে চান। সারদার সঙ্গে পিতা রামচন্দ্রও হেঁটে আসছেন। দু’ তিন দিনের পথ। এতটা রাস্তা হাঁটা কিশোরীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই তাঁর শরীর খারাপ করতে লাগল। অবশেষে এল প্রবল জ্বর। আর হাঁটতে না পেরে পিতাপুত্রী আশ্রয় নিলেন এক চটীতে।

জায়গাটা অত্যন্ত নির্জন। মধ্যরাত্রি। পিতা রামচন্দ্র সারাদিনের পথ চলার ক্লান্তিতে ঘুমে আচ্ছন্ন। সারদার গায়ে তখনো খুব জ্বর। একদিকে দৈহিক যন্ত্রণা। অন্যদিকে মনের বেদনা। রাতে এল আবার প্রবল জ্বর। যেন বেহুঁশ অবস্থা হয় আর কী! এমন সময় অন্ধকারের বুক চিরে সেই মেয়ে এলেন আবার। দেখতে কালো। কিন্তু অদ্ভুত লাবণ্যে ভরপুর। সুন্দর চোখ। রূপ যেন ফেটে পড়ছে। চোখের তাকানোতে যেন জগৎটা নড়ছে।

কালো মেয়ে আস্তে আস্তে সারদার যন্ত্রণাবিদ্ধ ক্লান্ত দেহে হাত বোলাতে লাগল। কী সুন্দর ঠাণ্ডা স্পর্শ! গা জুড়িয়ে গেল সারদার। প্রাণটা যেন হালকা হল। মনে এল আনন্দ। কিন্তু কে এটি? সচেতনভাবে সারদা প্রশ্ন করে ওঠে—”হ্যাঁ গা, তুমি কোথা থেকে এসেছো গো?”

মেয়েটি হেসে বলল, ‘আমি! আমি ওই দক্ষিণেশ্বর থেকে এসেছি।’

—দক্ষিণেশ্বর থেকে! বা:—ভাবলুম দক্ষিণেশ্বরে যাবো। তাঁকে দেখব। তাঁর সেবা করবো। কিন্তু পথে এত জ্বর—কিভাবেই-বা যাবো? বোধহয় আমার ভাগ্যে আর সেখানে যাওয়া হল না।

—সে কি! তুমি দক্ষিণেশ্বরে যাবে বৈ কি। ভালো হয়েই সেখানে যাবে। তাঁকে দেখবে। তোমার জন্যই তো তাঁকে সেখানে আটকে রেখেছি।

—বটে! আমার জন্যে আটকে … আচ্ছা, মেয়ে—তুমি আমার কে হও গা?

—আমি তোমার বোন হই।

—ও! সেজন্যই এসেছো—বটে!

বলতে বলতে ঘুমে যেন চোখ জুড়ে আসে সারদার। আর কথা বলতে মন চায় না। একেবারে পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল। অনুভবে গত রাতের সব ঘটনা চোখের সামনে ভাসল। দেহে এল বল, মনে ভরসা। সারদা পিতার সঙ্গে চললেন দক্ষিণেশ্বরে শিব সান্নিধ্যে। ভালোয় ভালোয় সব কাটল।

এ যাত্রায় পরের বারে সারদা পড়লেন ডাকাতের হাতে। সে বারে সঙ্গে পিতা ছিল না। গ্রামের লোকেদের সঙ্গেই তিনি চলেছিলেন দক্ষিণেশ্বরের পথে। সকলে গিয়েছিল এগিয়ে। পিছনে একাকী সারদা।

স্থানটা তেলোভেলোর মাঠ। নির্জন প্রান্তর। অন্ধকার হয়েছে। দু’ চারটে পাখির ক্ষীণ কণ্ঠধ্বনি। ডাকাত সর্দার সাগর সাঁতরা হুঙ্কার তুলে পথ আগলালেন সারদার। কিন্তু যা দেখলেন তাতে বিস্ময়ের তার সীমা রইল না।

—আরে এ তো কোনো মেয়ে না—এ যে দেখছি আমার ইষ্টদেবী মা কালী। ফ্যাল ফ্যাল নয়নে ভয়ে বিস্ময়ে চেয়ে থাকে ডাকাতবাবা। ততক্ষণ ডাকাতবাবার পত্নী এসে গেছে। দু’জনে মিলে তারা সে রাতে সারদাকে আশ্রয় দিলেন। মেয়ে বলে ভালোবাসলেন। পরদিন সারদা আবার দক্ষিণেশ্বরের পথে চলতে লাগলেন।

অবশেষে পৌঁছেও গেলেন শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে। এখানে ঠাকুর তাঁকে পরমযত্নে নহবতে রেখেছেন। মা আপনমনে সর্বদা স্বামীর সেবা করে যান। একদিন কি খেয়াল হল সারদা জিজ্ঞাসা করে বসলেন, ”আমাকে তোমার কি বোধ হয়?” দিব্যজ্ঞানের বারিধারায় স্নাত শ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্গে সঙ্গেই বললেন, ”যে মা মন্দিরে আছেন তিনিই এই শরীরের জন্ম দিযেছেন ও সম্প্রতি নহবতে বাস করছেন এবং তিনি এখন আমার পদসেবা করছেন। সাক্ষাৎ আনন্দময়ীর রূপ বলে তোমাকে সর্বদা সত্য সত্য দেখতে পাই।”

মা সারদা সত্যিই চেতনশরীরে স্বয়ং ভবতারিণী। ঠাকুর তাঁকে ফলহারিণী কালীপূজার রাতে ষোড়শী রূপে পূজা করে নতমস্তকে বলেছিলেন, ”হে সর্বমঙ্গলের মঙ্গল স্বরূপে, হে সর্ব কর্ম নিষ্পন্নকারিনি, হে শরণদায়িনি, ত্রিনয়নি, শিবগেহিনি গৌরি, হে নারায়ণি, তোমাকে প্রণাম করি।”

ঘটনা ঘটে, আবার দূরে সরে যায়। অন্য ঘটনা তখন আসে। প্রকৃতির নিয়মে এভাবেই চলছে জগতের নানা খেলা। জন্মের পর মৃত্যু, ব্যর্থতার পর সাফল্য—আরো কত কী ভাঙা-গড়া, উত্থান-পতন। দেখতে দেখতে শ্রীরামকৃষ্ণ জগত থেকে বিদায় নিলেন। মা সারদাও চলে এসেছেন জয়রামবাটীতে। তাও অনেক বছর হয়ে গেল। সেবার মা জয়রামবাটী থেকে ক’দিনের জন্য কামারপুকুরে এসেছেন। এখন ফিরে যাচ্ছেন জয়রামবাটীতে। ঠাকুরের ভাইপো শিবু রয়েছেন মায়ের সঙ্গে। মায়ের কাপড়ের বোঁচকা তার হাতে। শিবুর তখন বয়স বেশি নয়। মোটের উপর তখনও ছেলেমানুষ। দু’জনেই অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছেন। জয়রামবাটীর গ্রামে ঢোকার পথে শিবু পড়লেন দাঁড়িয়ে। মা কিছুদূর এগিয়ে পিছন ফিরে দেখেন শিবু দাঁড়িয়ে রয়েছে। অবাক হয়ে মা তখন বললেন, ”ও কিরে শিবু, এগিয়ে আয়।”

শিবু বললেন—”মা, তুমি একটি কথা বলতে পার, তাহলে আসতে পারি।”

—কি কথা?

—তুমি সত্যিই কে বলতে পারো? শিবু জিজ্ঞাসা করলেন।

—আমি আবার কে? তোর খুড়ী।

—তবে যাও। এই তো বাড়ির কাছে এসেছ। আমি আর যাব না।

বেলা পড়ে গেছে। শিবুর ছেলেমানুষী বুদ্ধিতে মা বেশ বিব্রত বোধ করে বলতে লাগলেন, ”দেখ তো ছেলের কাণ্ড! আমি আবার কে রে? আমি মানুষ, তোর খুড়ী।”

—তবে তুমি যাও, আমি যাব না।

শিবুর জেদ দেখে মা আর কি করেন—বললেন, ”লোকে বলে কালী।”

—কালী! মা কালী তো? ঠিক?

—হ্যাঁ, ঠিক।

—তবে চল।

দুজনে চললেন সম্মুখের দিকে জয়রামবাটী গ্রামে। সূর্য অস্ত গেছে কিছুক্ষণ আগে। পশ্চিম আকাশের মেঘটা তখনো আগুনে লাল রঙের অপরূপ শোভা ধারণ করে রয়েছে। বিশ্ব প্রকৃতি যেন হাসছে খিলখিল করে। সে হাসি অনন্ত আকাশে যুগ হতে যুগান্তরে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে দিগদিগন্তে, চতুর্দিকে—মহানন্দে মহাকালের বুকে অনুপম স্মৃতির সাক্ষর রাখতে আপনমনে। জয় মা ভবতারিণী! জয় মা সারদা!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *