কালিন্দী – ২৬

২৬

হাউইয়ে আগুন ধরিলে সে যেমন আত্মহারা উন্মত্ত গতিতে ছুটিয়া চলে, ইন্দ্র রায়ও ইহার পর তেমনি দুরন্ত গতিতে ধাবমান হইলেন। রাধারাণীর নিরুদ্দেশের ফলে যে অপমান বারুদের মত সর্বনাশা ক্ষোভ লইয়া বুকের মধ্যে পুঞ্জীভূত হইয়াছিল, সে অপমানের বারুদস্তূপকে ভস্মীভূত করিয়া ইন্দ্র রায়ের বংশকে অগ্নিশুদ্ধ করিয়া লইবার উপযুক্তমত নিষ্কলুষ অগ্নিকণা দিতে পারিত একমাত্র চক্রবর্তী-বংশই, সেই পরম বাঞ্ছিত অগ্নিকণার সংস্পর্শ পাইয়া ইন্দ্র রায়ের এমনি ভাবে অপূর্ব আনন্দে বহ্নিমান হইয়া দশ দিক প্রতিভাত করিয়া তোলাই স্বাভাবিক। সংসারে স্বভাবধর্মের বিপরীত কিছু কদাচিৎ ঘটিয়া থাকে, ইন্দ্র রায় স্বভাবধর্মের আবেগেই ছুটিয়াছিলেন। অগ্রহায়ণের আর ছয়টা দিন মাত্র অবশিষ্ট ছিল, ইহারই মধ্যে তিনি পাত্র-কন্যা আশীর্বাদ-অনুষ্ঠান শেষ করিয়া ফেলিলেন। সুনীতির নাম দিয়া অহীন্দ্রকে টেলিগ্রাম করা হইল, ইন্দ্র রায় নিজে টেলিগ্রাম করিলেন অমলকে, “অবিলম্বে উমাকে সঙ্গে লইয়া চলিয়া এস।”

সেই দিনই গভীর রাত্রে অহীন্দ্র এবং উমাকে সঙ্গে করিয়া অমল আসিয়া উপস্থিত হইল। দুই বাড়িই প্রতীক্ষামান হইয়া ছিল, অহীন্দ্র ডাকিবামাত্র মানদা ছুটিয়া গিয়া দরজা খুলিয়া দিয়া হাসিমুখে বলিল, দাদাবাবু!

অহীন্দ্র উৎকণ্ঠিত হইয়া প্রশ্ন করিল, বাবা কেমন আছেন মানদা?

ভাল আছেন গো দাদাবাবু, সবই ভাল আছে। মানদার মুখে কৌতুক-সরস হাসি ঝলমল করিতেছিল।

তবে? এমনভাবে টেলিগ্রাম কেন করলে মানদা?

আপনার বিয়ে গো দাদাবাবু, উ-বাড়ির উমাদিদির সঙ্গে।

অহীন্দ্রের সর্বাঙ্গে একটা অদ্ভুত শিহরণ বহিয়া গেল, বুকের ভিতরটা এক অপূর্ব অনুভূতিতে চঞ্চল অস্থির হইয়া উঠিল। মুহূর্তে অনুভব করিল, উমাকে সে ভালবাসে-হ্যাঁ, সত্যিই সে ভালবাসে।

ঠিক এই সময়েই সুনীতি আসিয়া দাঁড়াইলেন, অতি মিষ্ট মৃদু হাসি হাসিয়া বলিলেন, আয়, বাড়ির ভেতরে আয়, আমরা জেগেই বসে আছি তোর জন্যে।

মায়ের মুখের দিকে চাহিয়া অহীন্দ্রের মনে পড়িয়া গেল দাদাকে; সুনীতির সুন্দর মুখখানির উপর তাঁহার জীবনের মর্মন্তুদ দুর্ভাগ্যগুলি কেমন একটি পরিস্ফুট বেদনার্ত সকরুণ ভঙ্গির ছাপ রাখিয়া গিয়াছে। সুনীতির মুখে বর্তমানের দীপ্ত আনন্দের উজ্জ্বলতা জ্বলজ্বল করিলেও তাঁহার মুখের দিকে চাহিলেই অতীত দুঃখের স্মৃতিগুলি মুহূর্তে জাগিয়া উঠে। বেদনার আবেগে অহীন্দ্রের বুক ভরিয়া উঠিল, সে কাতর স্বরে বলিয়া উঠিল, ছি ছি, এ করেছ কি মা? না না না, এ যে হয় না, হতে পারে না।

সুনীতি আশঙ্কায় চকিত হইয়া উঠিলেন, শঙ্কাতুর কণ্ঠে বলিলেন, কেন হয় না অহি? আমরা যে কথা দিয়েছি বাবা।

অহীন্দ্রের চোখ হইতে জল ঝরিয়া পড়িল, সে বলিল, দাদার কথা কি ভুলে গেলে মা?

সুনীতির মুখে একটা সকরুণ হাসি ফুটিয়া উঠিল, গাঢ় শীতের জোৎস্নার মত সে-হাসি- তীক্ষ্ণ কাতর স্পর্শময়ী অথচ উজ্জ্বল রূপ সে-হাসির, অহীন্দ্রের মাথাটি গভীর স্নেহে বুকে চাপিয়া ধরিয়া বলিলেন, তবু তোকে বিয়ে করতে হবে, উপায় নেই। এ তোর বাপ-মায়ের আজ্ঞাপালন ; কোন অপরাধ তোকে স্পর্শ করবে না বাবা।

অহীন্দ্র মুখে কোন প্রশ্ন করিল না, কিন্তু সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে মায়ের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। সুনীতি বলিলেন, ঘরে আয়।

বাড়ির ভিতর উপরে অহীন্দ্রের ঘরে বসিয়া সুনীতি সমস্ত বুঝাইয়া বলিয়া বলিলেন, তোর বড় মা- আমার দিদি, আমি স্থির জানি অহীন, তিনি বেঁচে নেই। কোন দুরন্ত অভিমানে তিনি আত্মহত্যা পর্যন্ত গোপন করেছেন, যার আঘাতে তোর বাপ এমন করে পাগল হয়ে গেছেন অহি। কিন্তু কলুষের কালি এ ওর মুখে মাখিয়ে, মানুষ ভগবানের পৃথিবীকে করে তুলছে সঙ-সার। সেখানে মানুষ তো রেয়াত কাউকে করে না, তারা তাঁর স্মৃতির ওপর কালি বুলিয়ে দিয়েছে বাবা। এ কালি তোমাকে আর উমাকেই মুছে তুলতে হবে।

অহীন্দ্র স্তব্ধ হইয়া অভিভূতের মত মায়ের কথা শুনিতেছিল। সুনীতি আবার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া আবার বলিলেন, সেদিন উমার মা বললেন, তোর বড় মায়ের নাম করে যে, এ বিয়ে না হলে তিনি শান্তি পাচ্ছেন না, তাঁর গতি হচ্ছে না; এত বড় সত্যি কথা আর হয় না।

প্রথমেই পাত্র-আশীর্বাদ শেষ হইল। ইন্দ্র রায় সমারোহ করিয়া অহীন্দ্রকে আশীর্বাদ করিয়া গেলেন। তিনি রায়-বংশের প্রত্যেককে তাঁহার সঙ্গে পাত্র আশীর্বাদ করিতে চক্রবর্তী-বাড়ি যাইবার নিমন্ত্রণ জানাইলেন। চক্রবর্তী-বাড়িতে আহারের আয়োজন হইয়াছিল। ইন্দ্র রায়ের নায়েবের ভাইপো চক্রবর্তী-বাড়ির নূতন নায়েব; ইন্দ্র রায়েরই আদেশ অনুযায়ী সে সমস্ত বন্দোবস্ত করিতেছিল। সেই নায়েবই একদিন যোগেশ মজুমদারকে সুনীতির নাম করিয়া সাদর আহ্বান জানাইয়া আসিল, কর্তাবাবুর অবস্থা তো জানেন, গিন্নীমা বললেন, এ বাড়ির মর্যাদা জানেন এক আপনি, আপনি না গেলে এ-সব কাজ কি করে হবে?

মজুমদার কিছুক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রহিল, তারপর বলিল, যাব আমি, বলবেন, আমার ক্ষমতায় যা হবে, তার কসুর আমি করব না।

আর ও-বাড়ির রায় মশায়ও একবার দেখা করবার জন্যে বার বার করে বলেছেন।

কে, ছোট রায় মশায়?

আজ্ঞে হ্যাঁ। তিনি তার ছেলেকেই পাঠাতেন, তা-

বাধা দিয়া মজুমদার বলিল, না না না, আমি নিজেই যাব।

মজুমদার আসিতেই সাদর আহ্বান করিয়া রায় বলিলেন, তোমার মনটা সেদিন বড় পবিত্র ছিল যোগেশ, কথাটা মা তারা সত্যি প্রমাণ করে দিলেন। তোমাকে আমি বলেছিলাম, সত্যি হলে তুমি জানবে সর্বাগ্রে, সেটা আমার মনে আছে। এখন তোমাকে কিছু ভার নিতে হচ্ছে ভাই, চক্রবর্তী-বাড়ি তোমার পুরানো বাড়ি। ওখানকার কাজকর্মের ভার তোমাকেই নিতে হবে। আর কন্যা-আশীর্বাদ করতে রামেশ্বর তো আসতে পারছেন না, আশীর্বাদ করবেন ও বাড়ির কুলগুরু, তা সেদিন তুমি আসবে ও-বাড়ির প্রতিনিধি হয়ে।

মজুমদার মুখে কিছু বলিতে পারিল না, কিন্তু রায়ের কথা প্রাণপণে পালন করিবার চেষ্টা করিল এবং অকপট অন্তরেই চেষ্টা করিল।

কলের মালিক বিমলবাবুকে সাদরে আহ্বান করা হইয়াছিল। তিনিও পাত্র আশীর্বাদের আসরে উপস্থিত হইয়াছিলেন। ইন্দ্র রায় অকস্মাৎ একটা কাজ করিয়া বসিলেন; বিমলবাবুকে দেখিবামাত্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাহিয়া কি ভাবিয়া লইলেন, তারপর ব্যস্তভাবে তাঁহার হাতে গোলাপজল-ভরা গোলাপপাশটি ধরাইয়া দিলেন এবং আতরদানবাহী চাকরটাকে তাঁহার সঙ্গে দিয়া বলিলেন, আপনি হলেন চক্রবর্তী-বাড়ির লোক, আমরা আজ আপনাদের কুটুম্ব এসেছি। আপনি আজ আমাদের খাতির করুন, আপনার খাতির করব আমি আমার বাড়িতে।

বিমলবাবু প্রত্যাখ্যান করিলেন না, করিবার যেন উপায় ছিল না।

বাহিরে বিস্তৃত প্রাঙ্গনে সাঁওতালেরা মাদল বাজাইয়া মহা আনন্দে গান গাহিয়া নাচ জুড়িয়া দিয়াছিল। এই উপলক্ষে বাগদীপাড়ার লাঠিয়াল দলের প্রত্যেকে হাত দশেক লম্বা এক গজ চওড়া একফালি করিয়া লাল শালু ও একটি করিয়া ফতুয়া পাইয়াছিল; নতুন ফতুয়া গায়ে লাল পাগড়ি মাথায় তাহারা লাঠি হাতে মোতায়েন ছিল। তাহারা এবং সাঁওতালেরা মদ খাইয়াছে প্রচুর। নবীন বাগদীর স্ত্রী মতি এখন বাগদীদের সর্দারনী, সে নূতন কাপড় পাইয়াছে, গাছকোমর বাঁধিয়া আঁট-সাঁট করিয়া কাপড় পরিয়া সে লাঠি হাতে অন্দরের দরজায় মোতায়েন থাকিয়া হাঁক-ডাক জাহির করিতেছে।

আশীর্বাদের অনুষ্ঠানের শেষ হইতেই অহীন্দ্র অমলের সঙ্গে সাঁওতালদের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল।

পরস্পরে কোমরে জড়াইয়া ধরিয়া সাদা ধবধবে কাপড়-পড়া কালো মেয়েগুলি অর্ধচন্দ্রাকারে সারি বাঁধিয়া জলের ঢেউয়ের মত হিল্লোলিত ভঙ্গিতে দুলিয়া দুলিয়া নাচিতেছে, সম্মুখে পুরুষেরা মাদল, নাগরা, বাঁশী ও নিজেদের তৈয়ারি সারঙ্গ বাজাইয়া ঝড়ের দোলায় আন্দোলিত শালের মত দীর্ঘ আন্দোলিত ভঙ্গিতে দীর্ঘ দৃঢ় পদক্ষেপে ঘুরিয়া ঘুরিয়া নাচিতেছে। মেয়েরা গাহিতেছিল বড় মজার গান, উহাদেরই নিজেদের রচনা করা বাংলা ভাষার গান-

রাজা যাবে সোরানে সোরানে (পাকা রাস্তা)

রাণী আসছে ডুলির উপর চেপ্যে,

রাঙাবাবুর বিয়া হবে;

লাল ফুলের মালা কুথা পাব গো-

পাল্‌তে পোলাশ জবাফুলের মালা গো!

গান শুনিয়া সকৌতুকে অমল হাসিয়া বলিল, বাঃ!

অহীন্দ্র হাসিমুখে দলটির এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত প্রত্যেককে লক্ষ্য করিয়া দেখিতেছিল। দেখিয়া মুখের হাসি তাহার মিলাইয়া গেল। কমলকে এবং সারিকে না দেখিয়া তাহার মন সপ্রশ্ন বিস্ময়ে ভরিয়া উঠিল। গানটি শেষ হইতেই মেয়েগুলি কলকল করিয়া অহীন্দ্র ও অমলের দিকে আঙুল দেখাইয়া কলরব জুড়িয়া দিল, কালো মুখের মধ্যে সাদা চোখগুলি উজ্জ্বলতর হইয়া অহীন্দ্রের মুখের উপর অসঙ্কোচে নিবদ্ধ হইল। চূড়া মাঝি মাদলটা গলায় ঝুলাইয়া আসিয়া নত হইয়া প্রণাম করিয়া বলিল, গড় করছি গো বাবাঠাকুর রাঙাবাবু! প্রণাম করিয়া উঠিয়া হাতজোড় করিয়া বলিল, আপনার বিয়াতেই গানটি আমি করলম। আমি নিজে। আপনি শুধাও উয়াদিগে।

অমল বিস্ময় প্রকাশ করিয়া বলিল, বাঃ বাঃ, খুব ভাল গান হয়েছে।

চূড়া উৎসাহিত হইয়া বলিল,–আমি-বুঝলি বাবু, এই আমি। -বুকে হাত দিয়া সে নিজেকে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করিয়া দেখাইয়া বলিল, আমি মন্তর জানি, ভূত তাড়াতে জানি, গান বানাতে জানি, বুঝলি বাবু, অ্যানেক জানি আমি। তা-তা-কি বুলব আর? বলিয়া সে খানিকটা চিন্তা করিয়া লইয়া বলিল, আমাদিগে আরও হাঁড়িয়া দিতে হবে বাবু, আপনারা যা দিলি, উই মেয়েগুলো সব বেশী খেয়ে লিলে; দেখ কেনে, চুরচুর করছে সব।

মেয়েগুলি এবার খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। অহীন্দ্র একটু মৃদু হাসিয়া বলিল, আচ্ছা সে হবে। কিন্তু তোদের সর্দার কই? কমল মাঝি? আর সেই তীরন্দাজ শিকারী মাঝি, যে সাপ মারলে, কমলের নাতজামাই, সেই লম্বা মেয়েটির বর। তারা আসে নি কেন সব?

সমস্ত সাঁওতালের দলটি এ প্রশ্নে এক মুহূর্তে নীরব হইয়া গেল। বার বার অকারণে গলা ঝাড়িয়া, চূড়া মাঝি হাতজোড় করিয়া অত্যন্ত বিনয় করিয়া বলিল, আপনাকে আমরা বুলছি বাবাঠাকুর রাঙাবাবু, আপুনি আমাদের রাজা বটে। সি রাঙাঠাকুরের লাতি বট আপুনি। তেমনি আগুনের পারা রং! বাব্বা রে! আপনাকে মিছা বুলতে নাই। হল কি-উয়ারা করলে কি-উয়ারা-

অহীন্দ্র ভ্রু কুঁচকাইয়া প্রশ্ন করিল, কি করলে ওরা?

চূড়া হাত তুলিয়া অত্যন্ত বিজ্ঞভাবে বলিল, তাই থো বুলছি বাবু। উয়ারা-পাপ করলে? আমাদের ‘পঞ্চ’ বুললে, তুদের সাথে আমরা খাব না, তুদের সাথে করুন-কাম করব না, বিয়া শাদি দিব না। হুঁ, ভিনু করে দিলে উয়াদিগে! ঘেন্না করলে। তাথেই বুড়ার শরম লাগল, ইখানে থাকতে লারলে। চলে গেল, পালিয়ে গেল। লাজের কথা কিনা।

অহীন্দ্র বলিল, তারা করেছিল কি?

অত্যন্ত লজ্জা প্রকাশ করিয়া চূড়া জিভ কাটিয়া বলিল, ছি! উটি লাজের কথা বটে, খারাপ কথা বটে। উ আপনাকে শুনতে নাই। ছি! বাবা রে!

অহীন্দ্র আর প্রশ্ন করিতে পারিল না। কিন্তু ইহাদিগের কথাবার্তাগুলি অমলের বড় ভাল লাগিতেছিল, সে বলিল, তা হলে এখন সর্দার কে? তুমি?

চূড়া পরম বিনয় প্রকাশ করিয়া বলিল, আপনি উয়াদিগে শুধাও, আমি বুলি নাই। উয়ারাই বুললে, আমি অনেক জানি কিনা, আমি লোকটি খুব বিদ্যে জানি। ওস্তাদ বেটে আমি। বোঙার পূজা জানি-মরং বোঙা, মরং বোঙা বুঝছ তো। ভগোবান। উয়ার মন্তর জানি আমি। ভূত তাড়াতে জানি, ওষুধ জানি। অনেক বিদ্যে জানি, হুঁ। তা সোবাই বুললে, আমি বুলি নাই। ছি, লিজে থেকে বুলতে নাই। শরমের কথা, ছি। উয়াদিগে শুধান আপুনি।

অমল হাসিয়া বলিল, ব্যাপারটা একটু জটিল মনে হচ্ছে অহীন। এতখানি বিনয় তো ভাল নয়।

অহীন্দ্র বলিল, হুঁ। পরে জানতে হবে, ব্যাপারটা কি। এখন নাচাগানা করছে করুক।

তাহাদের মৃদু স্বরের কথা ভাল বুঝিতে না পারিলেও চূড়া এটুকু বুঝিয়াছিল যে, কথাটা তাহাদের সম্পর্কেই হইতেছে। সে আবার বিনয় করিয়া বলিল, উই চরাটোতো সিটল-পিন্টি (সেটেল্‌মেন্টের জরিপ) যখন হল, রাঙাবাবু গেল, মোড়লেরা গেল, তখুনি আমি হিসাব করলম, মাপের দাঁড়া ধরলম। আমি সকুলই জানি কিনা। তাথেই আমাকে উয়ারা মোড়ল করলে।

অহীন্দ্র বলিল, বেশ বেশ। এখন তোরা নাচগান কর্‌। তুইও তো খুব ভাল লোক, তুই মোড়ল হয়েছিস, সেও বেশ ভালই হয়েছে।

চূড়া খুশী হইয়া মাদলটা দুই হাতে চাপিয়া ধরিয়া লাফ দিয়া মেয়েদের সম্মুখীন হইয়া মাদলে ঘা দিল ধি-তাং-তাং, ধি-তাং-তাং। বাঁশী, সারঙ্গ, নাগড়া আবার বাজিতে আরম্ভ করিল। মেয়েরা আবার সারি বাঁধিয়া দাঁড়াইল

অহীন্দ্র সমস্ত দলটির দিকে চাহিয়া দেখিয়া একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস না ফেলিয়া পারিল না। সেই সচল পাহাড়ের মত কমল মাঝি, বাবরি চুলওয়ালা সেই শিকারী বংশীবাদক তরুণটি না হইলে পুরুষের দলটি যেন মানায় না, আর মেয়েদের ওই শ্রেণীটির ঠিক মধ্যস্থলে থাকিত দীর্ঘাঙ্গিনী সারী; তাহার মাথাটা ঠিক মধ্যস্থলে সকলের চেয়ে উঁচু হইয়া থাকিত, মুকুটের মাঝখানের কালো পাখীর উজ্জ্বল পালকের মত।

পরদিন সন্ধ্যাতেই উমাকে আশীর্বাদ করিয়া আসিলেন চক্রবর্তী বাড়ির কুলগুরু। ইন্দ্র রায় সমারোহ করিলেন প্রচুর; রায়-বংশের সকলকেই নিমন্ত্রণ করিয়া খাওয়াইলেন। অনুষ্ঠানের শেষে তিনি যোগেশ মজুমদারকে ডাকিয়া একখানি দামী ধুতি ও গরদের চাদর হাতে দিয়া বলিলেন, তুমি আজ আমার বেয়াইয়ের তুল্য মাননীয় ব্যক্তি, কর্মচারী হলেও রামেশ্বর তোমাকে ভাইয়ের মতই স্নেহ করেন, অহীন্দ্র তোমাকে বলে -কাকা। বেয়াই-বাড়ির এ সম্মান তোমার প্রাপ্য।

বিমলবাবু আজ আর আসেন নাই। শরীর খারাপ বলিয়া সবিনয়ে মার্জনা ভিক্ষা করিয়া পাঠাইলেন। ইন্দ্র রায় তাঁহাকে গোলাপপাশ বহন করাইয়াই ক্ষান্ত হন নাই, সামাজিক ভোজনে পংক্তির মধ্যেও পর্যন্ত বসিতে দেন নাই। তাঁহাকে স্বতন্ত্রভাবে খাইতে দেওয়া হইয়াছিল। রায় চেয়ার-টেবিলের বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন। হাসিয়া টেবিলের উপর একটি বিলাতী মদের বোতল নামাইয়া দিয়া বলিয়াছিলেন, আপনার জন্যেও হাঁড়িয়ার বন্দোবস্ত আমরা রেখেছি।

সাঁওতালি ভাষায় মদের নাম হাঁড়িয়া।

* * *

পরদিন অপরাহ্নে হেমাঙ্গিনী উমাকে লইয়া রামেশ্বরের সহিত দেখা করিতে আসিলেন। রামেশ্বরকে প্রণাম করাইবার জন্যই উমাকে লইয়া আসিলেন। উমা রামেশ্বরকে প্রণাম করিয়া সলজ্জভাবে সঙ্কুচিত হইয়া বসিল।

রামেশ্বর সস্নেহে হাসিয়া বলিলেন, প্রথমে যেদিন মাকে আমার দেখেছিলাম, সেদিন কুমার সম্ভবের উমার বাল্যরূপের বর্ণনা মনে পড়েছিল; আজ মনে পড়ছে উমার ভাবী বধূরূপ। মহা কবি কালিদাস, তিনি বলেছেন-

সা সম্ভবদ্ভিঃ কুসুমৈর্লতেব জ্যোতির্ভিরুদ্যদ্ভিরিব ত্রিযামা।

সরিদ্বিহঙ্গৈরিব লীয়মানৈ রামুচ্যমানাভরণা চকাশে।।

অর্থাৎ উমা অলঙ্কার পরিধান করলে কেমন শোভা হল, না-কুসুমিতা লতার মত, জ্যোতির্লোক উদ্ভাসিত রাত্রির মত, আশ্রয়ার্থী হংস- বলাকাশোভিত নদীর মত। তা হ্যাঁ মা উমা, তুমি আমার মা হতে পারবে তো? দেখছ তো আমি ব্যাধিগ্রস্থ, আমার পুত্রবধূ হতে তোমার কোন দ্বিধা নেই তো?

উমা মুখে কিছু বলিতে পারিল না, কেবল গভীর বেদনায় কাতর দৃষ্টিভরা চোখে রামেশ্বরের মুখের দিকে চাহিল; কিন্তু সেও মুহূর্তের জন্য, পরক্ষণেই লজ্জিত হইয়া দৃষ্টি নত করিল। হেমাঙ্গিনী কাতরভাবে বলিলেন, কেন আপনি বার বার ও-কথা বলেন চক্রবর্তী মশায়? কোথায় আপনার ব্যাধি? এই সেদিনও তো আপনার রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে, তারা তো বলেছে, আপনার কোন ব্যাধি নেই। ও আপনার মনের ভ্রম।

রামেশ্বর বলিলেন, রায়-গিন্নী, ভগবানের শাস্তি, মৃত্যু, ব্যাধি এগুলোর নির্ণয় হয় না, চিকিৎসা-বিজ্ঞানেরও জ্ঞানের বাইরে এগুলো। কিন্তু ও তর্ক থাক। মা আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। আমি ধন্য হয়েছি রায়-গিন্নী। হ্যাঁ, আর একটা কথা। মা উমা, আমি দরিদ্র, লক্ষ্মী আমাকে পরিত্যাগ করেছেন। আর তার জন্যে আমার দুঃখ নেই। জান মা, দারিদ্রকে প্রণাম করে আমি বলি-

দারিদ্র্যায় নমস্তুভ্যং সিদ্ধোহহং তৎপ্রসাদতঃ!

জগৎ পশ্যামি যেনাহং ন মাং পশ্যন্তি কেচন।।

বলি হে দারিদ্র্য, তোমাকে নমস্কার, তোমার প্রসাদে আমি সিদ্ধ হয়েছি, যেহেতু কেউ আমার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে না, আমি জগৎকে দেখি, আমি দ্রষ্টা হতে পেরেছি। তবে মা, তোমার আগমনে লক্ষ্মীকে আবার ফিরতে হবে, তবু কথাটা তুমি জেনে রাখ।

উমা এবার চুপ করিয়া থাকিতে পারিল না, সে একে সপ্রতিভ মেয়ে, তার উপর কলিকাতার স্কুলে পড়াশুনা করিয়াছে এবং রামেশ্বর তাহার অপরিচিত তো নন-ই, বরং কাব্যালাপের মধ্য দিয়া একটি হৃদ্য আত্মীয়তার স্মৃতিই তাহার মনে জাগরূপ ছিল। সে মৃদুস্বরে বলিল, কবিতাটি ভারী সুন্দর!

হেমাঙ্গিনী হাসিয়া বলিলেন, নিন, এবার বেটার বউকে সংস্কৃত শেখান।

পরম উৎসাহে রামেশ্বরের চোখ দুইটি উজ্জ্বল হইয়া উঠিল, বলিলেন, নিশ্চয় শেখাব। মা আমাকে পড়ে শোনাবেন, আমি শুনব। জান মা, তোমার সেই বাঙালী কবি, রবীন্দ্রনাথের বই আমাকে অহীন্দ্র এনে দিয়েছে, কিন্তু চোখের জন্য পড়তে পারি না; তুমি আমায় শোনাবে মা? ওই দেখ, আন তো মা, তোমার কণ্ঠে কবির কাব্য সুর লাভ করে সঙ্গীত হয়ে উঠবে। শোনাও তো মা আমাকে কিছু। বহুদিন কিছু শুনিনি।

উমা দেখিল, সে আমলের পুরানো টেবিলের উপর একখানি ‘চয়নিকা’ সযত্নে রাখা রহিয়াছে; সে বইখানি আনিয়া বসিল। হেমাঙ্গিনী বলিলেন, আমি নীচে সুনীতির কাছে যাচ্ছি চক্রবর্তী মশায়, আপনারা শ্বশুর-পুত্রবধূতে মিলে কাব্য করুন বসে বসে।

হেমাঙ্গিনী চলিয়া গেলেন। রামেশ্বর বলিলেন, পড় তো মা, মৃত্যু সম্বন্ধে তোমাদের কবির কোন কবিতা যদি ত্থাকে, তবে তাই পড়ে আমাকে শোনাও।

উমা বাছিয়া বাছিয়া বাহির করিল-

অত চুপি চুপি কেন কথা কও

ওগো মরণ, হে মোর মরণ।

প্রথমে লজ্জায় সঙ্কোচে ঈষৎ মৃদু সুরেই উমা আরম্ভ করিল, কিন্তু পড়িতে পড়িতে কাব্যের প্রভাবে অভিভূত হইয়া স্থানকালকে অতিক্রম করিয়া সে স্বচ্ছন্দ হইয়া উঠিল, কণ্ঠস্বরে সঙ্কোচের জড়তা রহিল না, আবেগপূর্ণ অকুণ্ঠিত কণ্ঠে ছন্দে ছন্দে তালে তালে সঙ্গীতের মাধূর্য্য ফুটাইয়া তুলিয়া আবৃত্তি করিয়া চলিল-

তবপিঙ্গল ছবি মহাজট

সে কি চূড়া করি বাঁধা হবে না।

তববিজয়োদ্ধত ধ্বজপট

সে কি আগে-পিছে কেহ ববে না!

তবমশাল-আলোকে নদীতট

আঁখি মেলিবে না রাঙাবরন

ত্রাসেকেঁপে উঠিবে না ধরাতল,

ওগো মরণ, হে মোর মরণ?

বিস্ফারিত চক্ষে রামেশ্বর স্তব্ধ হইয়া শুনিতেছিলেন, আবেগে নাকের প্রান্তভাগ বার বার ফুলিয়া ফুলিয়া উঠিতেছিল। কবিতা শেষ হইয়া গেল, উমা নীরব হইল। কিন্তু সমস্ত ঘরখানা তখনও যেন আবৃত্তির ঝঙ্কারে পরিপূর্ণ বলিয়া বোধ হইতেছিল। অকস্মাৎ রামেশ্বর বলিলেন, ওখানটা আর একবার পড় তো মা, ওই যে- তবে শঙ্খে তোমার তুলো নাদ, তারপর কি মা?

উমা পড়িয়া বলিল-

তবে শঙ্খে তোমার তুলো নাদ

করিপ্রলয়শ্বাস ভরণ,

সঙ্গে সঙ্গে রামেশ্বর আবৃত্তি করিলেন-

তবেশঙ্খে তোমার তুলো নাদ

করি প্রলয়শ্বাস ভরণ,

আমি ছুটিয়া আসিব ওগো নাথ,

ওগো মরণ, হে মোর মরণ।।

ইহার পর রামেশ্বর যেন কাব্যের মোহে স্তব্ধ হইয়া রহিলেন, উমার উপস্থিতি পর্যন্ত ভুলিয়া গেলেন। কিছুক্ষণ পর হাত দুইটি তুলিয়া ঘুরাইয়া ফিরাইয়া দেখিতে আরম্ভ করিলেন। মৃদুস্বরে বলিলেন, তোমার শঙ্খনাদ আমি শুনতে পাচ্ছি, প্রলয়শ্বাসের ঢেউ আমার অঙ্গে এসে লাগছে। এঃ, একেবারে জীর্ণ করে দিয়েছে আঙুলগুলো!

উমা শঙ্কিত হইয়া উঠিল, সে ঘর হইতে বাহির হইয়া যাইবার জন্য সন্তর্পণে উঠিয়া দাঁড়াইল। ঘরের প্রদীপের আলোয় তাহার ছায়াখানি দীর্ঘ হইয়া মেঝের উপর চঞ্চল হইয়া জাগিয়া উঠিল।

রামেশ্বর চমকাইয়া উঠিয়া বলিলেন, কে?

উমা শঙ্কিত ও কুণ্ঠিত স্বরে বলিল, আমি।

তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রামেশ্বর যেন স্মরণ করিয়া বলিলেন, ও, মা, আমার মা জননী। তোমাকে আশীর্বাদ করি মা-

আখণ্ডলো সমো ভর্তা জয়ন্ত প্রতিমঃ সুতঃ

আশীরণ্যা ন তে যোগ্যা পৌলমী মঙ্গলা ভব।।

উমা আবার তাঁহাকে প্রণাম করিয়া পায়ের ধূলা লইয়া সন্তর্পণেই ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।

রামেশ্বরের ঘর হইতে বাহির হইয়া অন্দর-মহলের দিকে টানাবারান্দা দিয়া উমা সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হইল। খানদুয়েক ঘর পার হইয়াই সে দেখিল, অহীন্দ্র আপনার ঘরে খোলা জানালার ধারে বাহিরের দিকে চাহিয়া বসিয়া আছে। এদিকে ওদিকে চাহিয়া উমা মৃদুস্বরে বলিল, গুড-আফ্‌টারনুন সায়েব।

অহীন্দ্র চকিত হইয়া হাসিমুখে দৃষ্টি ফিরাইয়া বলিল, নমস্কার শ্রীমতী উমা দেবী।

তাহাদের উভয়ের এই সম্বোধনের একটু ইতিহাস আছে।

কয়েক বৎসর পূর্বে এই চক্রবর্তী-বাড়িতেই বালিকা উমা একদিন অহীন্দ্রকে বলিয়াছিল, আপনাকে দেখলেই লোকে চিনতে পারবে এ-ই স্কলারশিপ্‌ পেয়েছে। যে সায়েবদের মত ফরসা রং!

তারপর অহীন্দ্র কলিকাতায় গেলে অমল উমাকে প্রশ্ন করিয়াছিল, কে বল্‌ দেখি?

উমার স্কুলের তখন বাস দাঁড়াইয়া, সে দীর্ঘ বেণীটি দোলাইয়া বলিয়াছিল, সায়েব। পরক্ষণেই খিলখিল করিয়া হাসিয়া বলিয়াছিল, জিজ্ঞেস করনা সায়েবকে, রায়হাটে ওঁদের বাড়িতেই ওঁর নাম দিয়েছি সায়েব। গুড-মর্নিং সায়েব।

অহীন্দ্র হাসিয়া বলিয়াছিল, নমস্কার শ্রীমতি উমা দেবী। আমি কিন্তু তোমাকে বাঙালিনীই দেখতে চাই।

উমা মাথাটি ঈষৎ নত করিয়া বলিয়াছিল, বাঙালী কালো মেয়ের স্কুলের দেরী হয়ে যাচ্ছে, অতএব-। বলিয়াই বেণী দোলাইয়া ছুটিয়া বাহির হইয়া গিয়াছিল।

আজ উমা বলিল, এমন ধ্যানমগ্নের মত বসে যে?

অহীন্দ্রের জানলা হইতে চরটা স্পষ্ট দেখা যায়, সে চরটার দিকে আঙুল দেখাইয়া বলিল, চরটাকে দেখছি। ইন্দ্রজালের মত ময়দানবের পুরী গড়ে উঠল। এই এবার পূজোর সময়েও দেখেছি, সবুজ ঘাসে ঢালা শান্ত এক টুকরো ভূখণ্ড, মধ্যে ছোট্ট একটা সাঁওতাল-পল্লী। একেবারে এক প্রান্তে কটা ইঁটের ভাটি।

উমা বলিল, চরটা তো তোমাদের?

অহীন্দ্র হাসিয়া বলিল, হ্যাঁ, তোমাদের?

উমার মুখ লাল হইয়া উঠিল, লজ্জায় এবার আর সে জবাব দিতে পারিল না। অহীন্দ্র বলিল, জান, ওই চরের ওপর আমার এক দল পূজারিণী আছে। তারা আমাকে দেখে লজ্জায় রাঙা হয় না, অসঙ্কোচ আনন্দে একেবারে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে।

উমা বলিল, জানি, একটি মেয়ে আজ আমাকে দেখতে এসেছিল। আমাকে বললে- রাঙাঠাকরুণ। বললে, বাবুকে বলি রাঙাবাবু, তোমাকে বলব-রাঙাঠাকরুন।

অহীন্দ্র একটু উচ্ছ্বসিত হইয়াই বলিল- চমৎকার নাম দিয়েছে।

উমা বলিল, তার নিজের নামটিও বেশ-সারী, সারী।

সবিস্ময়ে ভ্রুকুঞ্চিত করিয়া অহীন্দ্র বলিল, সারী? খুব লম্বামত মেয়েটি?

হ্যাঁ। একটু বেশী লম্বা। কিন্তু আর নয়, চললাম। মা-রা হয়তো এক্ষুনি ওপরে চলে আসবেন। পালাচ্ছি আমি। সে আর উত্তরের অপেক্ষা করিল না, ঘর হইতে বাহির হইয়া পড়িল।

কয়েক মিনিট পরেই অহীন্দ্র নীচে নামিয়া আসিয়া এদিক ওদিক চাহিয়া মানদাকে ডাকিয়া বলিল, আমি চরের দিকে বেড়াতে যাচ্ছি। অমল এলে বলিস, দাদাবাবু আপনাকে যেতে বলে গেছেন।

অহীন্দ্র চলিয়া যাইতেই মানদা উচ্ছ্বসিত হইয়া সুনীতি ও হেমাঙ্গিনীর নিকট আসিয়া বলিল , শাশুড়িকে দেখে দাদাবাবুর লজ্জা হল, আমাকে ডেকে চুপিচুপি-। বলিতে বলিতে সে হাসিয়া গড়াইয়া পড়িল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *