কালকেতু ও ফুল্লরা – ২৫

২৫.

ঝুলন্ত উদ্যান। এ-গল্পে ইতঃপূর্বে কথিত, সুন্দরবনের যে-স্ট্রিপটি মতিঝিল- দিলখুশাস্থ স্কাইস্ক্র্যাপারদের মাথার উপর দিয়ে চ’লে গেছে, সেখানে, দোঁহে এবে উপনীত। এটি একটি অভয়ারণ্য। জগতের যাবতীয় এনডেনজার্ড স্পিসিজের নিঃশঙ্ক বিচরণের আয়তক্ষেত্র।

ফুল্লরা, কালকেতুকে সবেমাত্র, কী-কী প্রাণী হেথায় বিরাজমান তা বলতে যাবেন, ‘হালুম’ ক’রে একজন বাঘ তাঁদের পথ রোধ ক’রে দাঁড়ান। কালকেতু পদক্ষেপের নিমিত্ত একটা পা তুলেছিলেন—তিনি ঐ অবস্থাতেই পাথর হ’য়ে যান। ফুল্লরা কিন্তু জনাব রয়েল বেঙ্গল ইবনে রয়েল বেঙ্গলের সঙ্গে গররগরর ক’রে আলাপ চালান। তারপর কালকেতুকে বলেন, ‘ডোন্ট টেল মি য়্যু ডিসলাইক দ্য ফিলাইন কাইন্ড অ্যাজ ওয়েল?’ কালকেতু তবু নটনড়নচড়ন, তখন ফুল্লরা বলেন, ‘দ্যাখো, অমন স্থাণু হ’য়ে থেকো না, তোমাকে গাছ ভাবতে পারে—এখানকার বাঘগুলি ভেজিটেরিয়ান।’

শোনা-মাত্র কালকেতু লাফাতে লাগেন, বা ট্যাপ ডান্স নাচতে শুরু করেন। তাঁর মাত্রাতিরিক্ত ট্যাপাটেপিতে, ঘাসের ভিতর থেকে প্রশ্নবোধক মাথা তোলে একটা সরীসৃপাকৃতি বস্তু; দেখে কালকেতু, জ্যাকি চ্যান-ভঙ্গিতে লাফ দিয়ে একটা ডালে ঝুলে প’ড়ে ‘কালী! কালী!’ বলেন।

ফুল্লরা হাসতে-হাসতে ফিট হ’য়ে গিয়ে বলেন, ‘কালকেতু গো, ওটি সাপ নয়–ডেলমা ইম্পার, পা-বিহীন লিজার্ড। ঐ দ্যাখো, ওর জিহ্বা বিভাজিত নয়।’

কালকেতু অগত্যা হাল ছেড়ে দেন, ডাল ছেড়ে দেন, বলেন, ‘পড়েছি মোগলির হাতে—’

তাঁরা অতঃপর প্রায় চৌদ্দ-হাজার সিঁড়ির ধাপ ভেঙে, নেমে আসেন মতিঝিল নদীর তীরে। নদীর নীচ দিয়ে ‘বার্থ-টানেল’-পথে নদী পেরিয়ে যে-স্থানটিতে এসে তাঁরা পঁহুছেন, তার নাম মরো’দ্বীপ। এখানে বিচিত্র সব সঙ্কর প্রাণী, যথা, গিরগিটিয়া, হাঁসজারু, সিংহরিণ, মানুষণ্ড, ইত্যাদি ফ্যা-ফ্যা ঘুরে বেড়ায়। একটা বকচ্ছপকে ফুল্লরা, ডেকে কথা বলার চেষ্টা করলে দেখা যায়, যে, উক্ত প্রাণিটি, বক কিংবা কচ্ছপ কারুর ভাষাই বোঝে না।

(ফুল্লরা, অবশ্য, শেষমেষ আবিষ্কার করেন, যে, এখানকার প্রাণিগণ একটিমাত্র ভাষাই শুধু বুঝতে পারে… কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে, এবং জনাব হকের সম্পাদনার কল্যাণে, উক্ত ভাষাটি কী, এই তথ্যটি পাঠকের গোচরে আনা গেল না ব’লে লেখক দুঃখিত। তবে, মরো’দ্বীপ যেহেতু নিষিদ্ধ সংরক্ষিত এলাকা নয়, পাঠক চাইলে নিজে গিয়েও তথ্যটি উদ্ধার করবার চেষ্টা চালাতে পারবেন। শুধু ফুল্লরার মতো একজন হরবোলার সহযোগিতা তিনি পাবেন কিনা সন্দেহ।)

ক্রমে তাঁরা নালন্দায় চ’লে আসেন। স্থানটির নাম পূর্বে ছিল নারিন্দা ভূতপূর্ব প্রেজিডেন্ট ভুসুকু রাউত-এর আমলে এই স্থান বর্তমান নামটি পরিগ্রহ ক’রে, যদিও অবশ্য অত্র কোনও বৌদ্ধ বিহার স্থাপন করা অদ্যাপি সম্ভবপর হয় নাই। হীনযানীদের চক্রান্তেই এমন হয়েছে ব’লে মায়াকানন জানিয়েছে। হীনযানীরা অবশ্য য়িহুদি রাব্বিদের ঘাড়েই দোষটা চাপাবার চেষ্টা করেছিল প্রথম-প্রথম, কিন্তু পরে হালে পানি না-পেয়ে, রেগেমেগে বলেছে, যে, মহাযানী বণ্ডদের (sic) হাতে আরও একটি বিহার চ’লে যাবার সম্ভাবনাকে অঙ্কুরে নাশ করতে পেরে তারা বরং গর্বিত।

ঐখানে একটি সহস্রাব্দ-পুরাতন শিবমন্দির থাকত। তার চূড়াস্থ ত্রিশূলটি কেবল এখনও বিদ্যমান, বিদ্যুৎ-নিরোধক-রূপে, সরকারি আবগারি বিভাগের নবনির্মিত ভবনটির ছাদে।

দু’জনে একে-একে বাবুন সরণি, রেঙ্গুন সরণি, হযবরি সরণি হ’য়ে দক্ষিণ মহীশূণ্ডী এলাকায় চ’লে আসেন। এই অঞ্চলটিকে বলা যায় ‘আ সিটি ইউদিন আ সিটি’। যেন প্রাগৈতিহাসিক ঢাকার একটা খুদে রেপ্লিকা। রাস্তা, ঘরদোর, সকলই বামনাকার। রাস্তা দিয়ে দু’জন, বা একজনও ঠিকমতো হাঁটতে পারবে না। সকলকেই আড়াআড়ি হাঁটতে হবে, এমন। বাড়িগুলোয় ঢুকতে হ’লেও, হামাগুড়ি দেওয়া-ভিন্ন উপায় নাই। কিন্তু কী নাই সেখানে! ঐ-যে পানশালা একটা, ঐ-যে হাসপাতাল, ঐ-যে মসজিদ, ঐ-যে প্যাগোডা, ঐ-যে মেসনিক টেম্পল, ঐ-যে কম্যুনিটি সেন্টার, ঐ গোরস্তান, ঐ টাওয়ার অব সাইলেন্স, ঐ-যে ক্লাব, ঐ নাইটক্লাব, ঐ বাজার—হেন বিষয় নাই, ব্ৰেড- রোল থেকে রোল্জ রয়েস, যা হোথায় অপ্রাপ্তব্য,—ঐ-যে চার-ফুট-বাই- তিন-ফুট ফুটবল মাঠ, ঐ-যে তার তিন-দিকে ঝুলবারান্দার গ্যালারি, ঐ-যে পুলিস, চোর, উকিল, চামার কামার ঘোষ গোঁসাই কসাই ব্যাপারী কাঠমোল্লা মণিকার গণিকা স্কুল-বালিকা শস্তা-মস্তান, ঐ-যে অবিরল জলদায়িনী হাইড্র্যান্ট—হাইড্র্যান্ট! একটা শহরে আরও কী তোমার চাই? আকাশ? আকাশ চাইলে খ্যাতে যাও, শহরে কী?

দু’জনে এঁকেবেঁকে, সরু হ’য়ে, খাটো হ’য়ে, মহীশুণ্ডী অতিক্রম করেন। একে-একে রোকনপুর, কলতাবাজার, পাতলা খান, সিংটোলা—গলিতে- অলিতে তাঁরা কানাওলা-ধরার মতো ঘোরেন। প্রতিটি অঞ্চলই একেকটা ছোট শহর, প্রতিটি অঞ্চলই হুবহু। বস্তুতঃ অনেক-অনেক পথ হারানো আর তাল হারানোর পরে, অনেক ঘাটে পানি, অনেক আঘাটায় ঘোল খেয়ে তাঁরা ডায়ানা মেমরিয়াল পার্ক, বা তৎকালীন (মানে বিগতকালীন) বাহাদুর শাহ, বা ভিক্টোরিয়া পার্কে এসে হাঁফ ছেড়ে হাঁফান। পার্ক-মধ্যস্থ মসোলিয়ামের গায়ে ফুল্লরা পড়েন :

“To the memory
Of the most beautiful woman
Ever to tread on the surface of the earth,
Diana, Princess of Wales,
The last Anne Boleyn
Of the British Royel Harem?

কালকেতু অকস্মাৎ মাটিতে শুয়ে প’ড়ে ‘ডায়ানা! ডায়ানা! ডাই! ডাই!” ব’লে কেঁদেকেটে হাত-পা ছুঁড়তে আরম্ভ করেন। অল্পক্ষণের মধ্যেই তাঁর হাঁফানি ও অপস্মার দেখা দেয়। তিনি হিক্কা তুলতে-তুলতে নীল হ’য়ে যান। এ-সময় আকাশ থেকে কতক ফোঁটা মৃদুজল তাঁর ব্রহ্মতালুতে ঝ’রে প’ড়ে।

ফুল্লরা, কালকেতুর পানে চেয়ে অশুভ হাসেন। তাঁর (ফুল্লরার) চোখে চোখে আগুন ধ’রে যায়। শীতল আগুন। জনান্তিকে তিনি আওড়ান :

‘নীলোৎপলদলশ্যামাং বিজ্জিকাং মামজানতা
বৃথৈব দণ্ডিনা প্রোক্তং সর্বশুক্লা সরস্বতী।’[৬৯]

কালকেতু কিন্তু ছাট পেড়ে চলেন। গলা-কাটা মুরগির মতো তড়পান। বুকের বসন ছিঁড়ে, কিংকং-এর মতো দমাদম-মস্তকলন্দর মুষ্ট্যাঘাত করেন আপন বক্ষে, নখবিলেখনে বিক্ষত করেন নিজেকে। একটা লোহার তার, বা তত্তুল্য কোনও বস্তুর সন্ধানে ঘাস হাতড়ান, ‘দরবেশ’-দের মতো নিজের গাল ফুঁড়বেন। তাঁর সৌভাগ্যবশতঃ, তেমন-কিছু জোটে না। কিন্তু তিনি খুবলে – খাবলে পোয়াটাক মাটি খান। তারপর জামা-কাপড় ঝেড়ে, থুথু ফেলে, স্বাভাবিক উঠে দাঁড়ান। ‘ফুল্লরা চলো, শোক সমাপ্ত।’

জ্যাগারনট প্যালেস এড়িয়ে, হরপ্পাবাজার (প্রাক্তন শাঁখারিবাজার) পেরিয়ে, দু’জনেতে অবতীর্ণ, আহা, তাঁতিবাজার খালের কিনারে। দ্য গ্রেট ডেলিউজে এই খালকুলতিলকটির পুনর্জন্ম হয়। এই খালেরই উভয়তীরে ঢাকার সম্-ভ্রান্ততম অঞ্চলগুলি অবস্থিত, যথা : তাঁতিবাজার (স্বয়ং), বাবুবাজার, রাজার দেউড়ি, কোর্ট-কাছারি, আরমানিটোলা, জিন্দাবাহার, রথখোলা ইত্যাদি। বিশেষতঃ উলেখ্য রথখোলা, ঢাকার গেইশা রমণীগণের মহনীয় মহাল্লা। উচ্চবংশীয় বালক-বালিকারা এখানে সহবত-শিক্ষার্থে আইসে। তাদিগের কলকাকলিতে দিনে, এবং তাদের পিতা-পিতৃব্যগণের হৈচৈয়ে রাতে এ-স্থান মুখর হয়। কার্যতঃ তাঁতিবাজার খাল ঢাকার মৃতসঞ্জীবনী- স্বরূপিণী। এর পানি-পানে নবযৌবনপ্রাপ্তি অবধারিত। রথখোলায় ঢোকার আগে তাই এ-খালে একটা চুমুক দিয়ে সকলেই যায়।

ফুল্লরাও তাঁর আঁজলা ভ’রে খানিকটা সেই কাজলা জল পান করেন। তারপর তিনি আবৃত্তি করেন :

‘I taste a liquor never brewed-
From Tankards scooped in Pearl-
Not all the vats upon the Rhine
Yield such an alcohol!

Inebriate of Air—am I—
And Debauchee of Dew-
Reeling thro’ endless summer days—
From inns of Molten Blue-

When “Landlords” turn the drunken Bee
Out of the Foxglove’s door—
When Butterflies renounce their “drams”
I shall but drink the more!

Till Seraphs swing their snowy Hats-
And Saints to windows run—
To see the little Tippler
Leaning against the Sun-’[৭০]

মালদ্বীপ-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুতে খাল পেরিয়ে, সুরভিত বসরা- বুলভার ধ’রে তাঁরা গিয়ে পৌঁছেন বংশাল নদীতীরে। তারপর নদীর পাড় দিয়ে চ’লে-যাওয়া, স্ট্র্যান্ড নামক রাস্তাটিতে পৌনে মাইল অরাল গতিতে চলার পর নাগরমহল সিনেমা হল তাঁদের সামনে এসে দাঁড়ায়। এই হল—বা মহলটির বৈশিষ্ট্য এই, যে, এখানে ‘লাইভ’ ছবি দেখানো হয়। দর্শকদেরই মধ্যে থেকে বাছাই-করা পাত্র-পাত্রীদের দিয়ে হলের বেসমেন্টে অভিনয় করিয়ে, সাথেসাথেই তা পর্দায় প্রজেক্ট করা হয়। ছবির গল্পকে, রূপায়ণের সুবিধার্থে, খুবই সাদামাটা রাখা হয়। যেমন :

নায়ক, নায়িকার বাড়ি এলেন;

নায়িকা, নায়ককে চা (বা কফি বা লাসসি বা বিয়ার বা পানি) খেতে দিলেন;

নায়ক চা (বা কফি ইত্যাদি) খেয়ে, ঘড়ি (হাতের বা দেয়ালের) দেখে, উঠে পড়লেন;

নায়িকা, নায়ককে, রাতটা থেকে যেতে অনুরোধ ক’রে এমতো ডায়ালগ দিলেন—’nerves are bad to-night. Yes, bad. Stay with me…’ ইত্যাদি;

নায়ক উত্তর দিলেন (ধরা যাক), ‘I think we are in rats’ alley (বা, the rats are in our alley), where the dead men lost their bones (বা, where the dead bones lost their men)…’[৭১]

সিম্বলিক শট : বাত্যাবিঘূর্ণিত কাকতাড়ুয়া,;

সিম্বলিক শট : ব্রেথলেস-এর শেষ-দৃশ্য থেকে কাট-পিস—’ও কী বললে?’;[৭২]

নায়ক, নায়িকার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং…;
সিম্বলিক শট : ট্রেনের চাকার ঘূর্ণন;
সিম্বলিক শট: স্ক্রিন-জোড়া ম্যাগ্নিফায়েড শুক্রাণুর ছোটাছুটি;
সিম্বলিক শট : চোপসানো বেলুন;
কালো-স্যুট পরিহিত নায়ক বিদায় নেন (ঢুকেছিলেন সাদা স্যুটে);
নায়িকা চুল আঁচড়াতে-আঁচড়াতে গ্র্যামোফোনে রেকর্ড চড়ান, (সচরাচর)
হ্বাগনার: Weialala leia, wallala leialala …।

‘লাক ট্রাই করবে নাকি?’ কালকেতু শুধান।

ফুল্লরা বলেন, ‘তার দরকার নেই। আজকের সিনেমাটা আউটডোর। সম্ভবতঃ এতক্ষণ-যাবৎ আমাদেরকে আড়াল-আবডাল থেকে এমনিতেই “শুট” করা হচ্ছে। আমার সপ্তমেন্দ্রিয় বলছে। বরং এখন গিয়ে টাকাটা নিয়ে আসা যায়।’

কালকেতু মিশ্র-হাসিতে বলেন, ‘আমরাই হয়তো প্রথম, যাদের জীবন উপন্যাস হবার আগেই চলচ্চিত্র হ’য়ে গেল। ‘

‘আরও অনেক বিষয়েই আমরা প্রথম—কেরমে-কেরমে জানতি পারবা,’[৭৩] বলেন ফুল্লরা।

২৬.

‘ফুরু ইকে য়া
কাওয়াজু তোবিকোমু
মিজু নো ওতো’[৭৪]

ফুল্লরা বিমুগ্ধ ভনেন। কেননা, তাঁর (এবং কালকেতুর) চোখের সামনে, সুবিখ্যাত প্রেমকুঞ্জ, হায়াসিন্থ গার্ডেন-এর মধ্যিখানে, নিথর পদ্মপুকুরে হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়েছে একটা ব্যাং, আর… অজস্র হায়াসিন্থ আশেপাশে, ভিতরে বাহিরে। ফুল্লরা প্রজাপতির মতো উড়ে-উড়ে ঘোরেন তাদের ভিতরে বাহিরে, কহেন, ‘দে কলড মি দ্য হায়াসিন্থ গার্ল।’

বংশাল নদী যেখানে অত্তিস মার্গ-র (প্রাক্তন নবাবপুর রোড; অত্তিস, মনে রাখা দরকার, অতীশ দীপঙ্কর ন’ন—তিনি সেই হতভাগ্য ফ্রিজিয় দেবতা) উপর দিয়ে ব’য়ে গেছে (অর্থাৎ, অত্তিস মার্গ, সেতু হ’য়ে নদীর উপর দিয়ে না-গিয়ে, টানেল হ’য়ে নদীর নীচ দিয়ে পার হয়েছে), তার ঈশান কোণে, প্রায় সাত বিঘা জমি জুড়ে এই হায়াসিন্থ গার্ডেন। মহাপ্লাবনে বংশাল নদীর জন্ম হ’লে, তার পলি জ’মে-জ’মে এই জমিটি তৈরি হয়েছিল; ফলে মাটি এর সাতিশয় নরম, এবং সে-কারণেই, প্রেমিক-প্রেমিকা-ব্যতীত অপর কারুর প্রবেশ হেথায় নিষিদ্ধ। এর প্রসূনতোরণে লিপিবদ্ধ :

‘Tread softly because you tread on dreams.’[৭৬]

কালকেতু বলেন, ‘আমি আমার উদ্যানে এসেছি, ও আমার বোন, বধূ আমার! আহরণ করেছি লবঙ্গ আর দারুচিনি। মধুর সঙ্গে আমি ভোজন করেছি মধুচক্র, দুগ্ধের সঙ্গে পান করেছি আমার মদিরা।’

ফুল্লরা বলেন, ‘আমি নিদ্রিতা, কিন্তু জাগ্রত আমার হৃদয়। ঐ আমার প্রিয়ের করাঘাত!’

কালকেতু বলেন, ‘দ্বার করো উদ্ঘাটন, ও আমার বোন, আমার সঙ্গিনী, ঘুঘু আমার, আমার শুদ্ধতমা! কেননা আমার মস্তক শিশিরে সিক্ত, আমার কেশবন্ধ রাত্রিক্ষরা জলে পূৰ্ণ।

ফুল্লরা বলেন, ‘আমি বসন উন্মোচন করেছি, কীভাবে তা পরিধান করি? আমি পদযুগ পরিচ্ছন্ন করেছি, কীভাবে তা মলিন করি? দ্বাররন্ধ্রে আমার প্রিয় হস্তক্ষেপ করল, আর আকুল হ’ল আমার হৃদয়—আমি উত্থিত হলাম, এই আমি, প্রিয়কে দ্বার খুলে দিতে, আর দ্বাররন্ধ্রে আমার হাত সিক্ত হ’ল সুগন্ধিতে, আমার আঙুল আলিপ্ত হ’ল গন্ধতরলে।’

কালকেতু বলেন, ‘আমার বোন এক গরাদে-ঘেরা উদ্যান, বধূ আমার, এক গরাদে-ঘেরা উদ্যান, একান্ত ফোয়ারা। ডুমুরের স্বর্গ তার ত্বক্, স্বাদু ফল যাতে ফলন্ত, হেনাকুঞ্জের পাশে সুগন্ধিবীথি আর জাফরান, বেতস আর দারুচিনি, আর ধূপ, গন্ধচন্দন ও ঘৃতকুমারীর ঝাড়… এসো, ও উত্তুরে হাওয়া, জাগো; এসো, ও দখিনা পবন! নিঃশ্বসিত হও আমার উদ্যানের উপর! প্রবাহিত হোক এর সৌরভ!”

ফুল্লরা বলেন, ‘আমার প্রিয় আমার, আর আমি তার। সে যূথ চড়াচ্ছে লিলির বনে। যতক্ষণ-না দিবস হয় নিঃশ্বসিত আর ছায়ারা পলাতক, তুমি ফিরে এসো, ও আমার প্রিয়; তুমি যূথের যুবাহরিণ হও বিচ্ছেদের পর্বতচূড়ায়।’

কালকেতু বলেন, ‘যতক্ষণ-না দিবস নিঃশ্বসিত আর ছায়ারা পলাতক, গন্ধতরুর পর্বতে আর ধূপের পাহাড়ে আমি যাব।

ফুল্লরা বলেন, ‘যাও পুণ্ড্রের কন্যারা, দ্যাখো কালকেতুর মুকুট, যা তার “মা” বয়ন করেছে লরেল ও মিসেলটো-য়, তার বিবাহের দিনে, তার প্রাণের উৎসবের দিনে।’

কালকেতু বলেন, ‘দ্যাখো, এই কালকেতুর প্রতিরক্ষা। তাকে ঘিরে আছে ষাটজন দেবদূত, ষাটজন নাইট টেম্পার, প্রত্যেকেরই আছে তরবারি, আর আছে রণকুশলতা।’

ফুল্লরা বলেন, ‘হয়তো রয়েছে তোমার ষাটজন রানি, আর ষাট-হাজার সেবাদাসী, তবু একজনই শুধু আছে জননীর আশ্রিতা, কন্যাগণের মাঝে সে-ই শুধু আছে বিশুদ্ধা।’

কালকেতু বলেন, ‘যদি তুমি হও প্রাচীর, আমরা তার উপর গ’ড়ে দেব রুপার গম্বুজ; যদি হও দ্বার, আমরা তোমাকে রুদ্ধ করব দেবদারুর অৰ্গলে।’

ফুল্লরা বলেন, ‘আমি এক প্রাচীর, আমার স্তন যার মিনার। তাই আমি পেয়েছি প্রিয়ের প্রসন্ন চোখের অনুরাগ।’

কালকেতু বলেন, ‘ধূসর কৈশোর-দ্বীপে কালকেতুর ছিল দ্রাক্ষাকুঞ্জ এক সেটিকে সে দিয়েছিল তার রক্ষীদের।’

ফুল্লরা বলেন, ‘এই দ্রাক্ষাকুঞ্জ আমার অধিকার। সহস্র তোমার, ও কালকেতু, আর দুইশত ফলসম্ভারের রক্ষীদের।

কালকেতু বলেন, ‘ও যে-তুমি উদ্যানবাসিনী, তোমার সঙ্গীরা তোমার কণ্ঠস্বরে মোহিত; আমাকেও তা শুনতে দাও!”

ফুল্লরা বলেন, ‘ধাবিত হও, প্রিয় আমার, তুমি হরিণশাবক হও সুগন্ধির পর্বতচূড়ায়।।’[৭৬]

২৭.

অত্তিস মার্গ-পথে তাঁরা হ’ন পুনর্ধাবিত। এইবার, এই প্রথম, যেন কোনও তাড়া, কোনও তারা, কোনও উদ্দেশ্য, কোনও গন্তব্য, কোনও প্রলোভন, প্রয়োজন তাঁদেরকে ঠ্যালে—এবং তাঁরা উদ্বিগ্ন হ’ন, এবং তাঁদের দৃষ্টি হয় সঙ্কুচিত, পদক্ষেপ তৌলীকৃত, এবং অপরাধ-মনোবৃত্তিসমূহের হায়েনারা তাঁদেরকে টিটকারি ক’রে হাসে, আশেপাশে, সামনে পিছনে, ভিতরে বাহিরে।

তাঁরা সতর্ক হ’ন, স্বার্থপর হ’ন, আর তাঁদের হাত জোড়া থাকাতে, বিরক্তিই বোধ করি বোধ করেন। কেননা তাঁদের মনের পশুর অতীন্দ্রিয়ে এসে ততক্ষণে আগাম সুড়সুড়ি জাগিয়েছে চরম; তাঁদের যুগল-শৈশব একটা জাদু- কানাতের মতো এইমাত্র উবে গেছে চোখের পলকে, আর—আহ্!—তাঁরা যেন দেখতে পাচ্ছেন… হয়তো আরেকটুকু সাদা-আলো—কালো-আলো— ছেটাতে পারত যদি ঐ, এইমাত্র-ছলম-ছাড়া, নূতন-দংষ্ট্রা-বাঁকানো, চাঁদ!

একাকী হবার, একাকী লড়ার, একাকী মরার মাহেন্দ্র লগ্ন এবে অযুত চামচিকার কণ্ঠে, দিগদিগন্তপ্লাবী ঝিঁঝিধ্বনির মতো ডেকে চলেছে। কালকেতু এবার ছিঁড়ে ফেলতে চান, তাঁর হাতে জোঁকের মতো সেঁটে-থাকা বাড়তি হাতটিকে। দরকার হ’লে, এমনকি, তাঁর আপন হাতখানিকে খোয়ানোর বিনিময়ে। বিবমিষা বোধ তিনি করেন। আর হাত-দু’টি তবু জোড়া থাকে। দুর্বার আক্রোশে ঐ বন্ধন-চিহ্নের উপর কোপ তিনি বসান; কুচিকুচি, ফালাফালা করেন ঐ তৃতীয় সত্তাকে; ভয়ের ভারি হামানদিস্তায় থ্যাঁতলান। বৃথাই। হাত-দু’টি তেমনি জোড়া থাকে। সময়ের ভিন্ন একটি তলে, নিরাপদ্ অবস্থানে থেকে তারা কালকেতুকে ক’রে উপহাস।

তূণের তাবৎ তির নিঃশেষ হওয়ায়, কালকেতু অতঃপর তাঁর ঢাল, তাঁর বর্ম খুলে তা-সব দিয়েই আক্রমণ করেন, আপন দুর্গের একেকটি ইট- পাথরকে গোলা-রূপে ব্যবহার করেন। তারপর, সমূহ রিক্ততার ব্রাহ্মমুহূর্তে, তিনি তাঁর রক্ষাকবচটিকেও খুলে ছুঁড়ে দেন, বলেন, ‘মা কালীর দিব্যি—’  

ফুল্লরা চকিতে তাকান। ধনুকের মতো ভুরুজোড়া টান-টান হয়; ফুল্লরা তাঁর মুক্ত ভুজসর্পলতাটিতে কালকেতুকে জড়িয়ে ধরেন, তাঁকে গ্রাস করেন আর তাঁর এই সর্বৈব বিজয়ের বাতাবরণ তৈরি করতে, সেই মুহূর্তেই, অত্তিস মার্গ বেয়ে সশব্দ ধেয়ে আসে সিবেলি-র নগ্ন পুজারিরা; ঝাঁজর, ভেরি, ইংলিশ- হর্ন, ব্যাগপাইপ, ট্রম্বোন, গোপিযন্ত্র, কেটল-ড্রাম, গং, জগঝম্পের সমবেত সমুদ্রকল্লোলে কালকেতুর অসঙ্খ্য জন্ম, অসঙ্খ্য মৃত্যু ভেসে যায়—অসঙ্খ্য স্বপ্ন খায় খাবি। সেই মহাবিরুদের মিড়ে-মিড়ে, আকাশে বাতাসে জ্বলে রক্তের আতশ, আর সেই লোহিমার ভিতর—যেথায় পশে না আর এমনকি চাঁদের চতুরাল—কালকেতু দেখতে পান, বা কালকেতুর সারাটা শরীর দু’টি চোখ হ’য়ে দেখতে পায়, ছায়া-মিছিলের পুরোভাগে, আপন কর্তিত শিশ্ন বাঁ-হাতে উঁচিয়ে, বাদবাকি দেহটিকে একটা ঘূর্ণিবাত্যা ক’রে, ঘূর্ণিবাত্যারই মতো ক্ষণে-ক্ষণে স্থান বদলে অগ্রসর প্রধান পুরোহিত।

আর তার পিছনে, যারা রমণী, যারা জায়া-কন্যা-ভগিনী-জননী, তাদের সকলের তিন-তিন স্তন, দরবিগলিত দুগ্ধধারা প্রতিটি দ্বিতীয় স্তনে, প্রতিটি প্রথম ও তৃতীয় স্তনবৃন্তহীন। সকল তত ও সুষির যন্ত্রে নিনাদিত জয়জয়ন্তী, সকল আনদ্ধ যন্ত্রে আদ্ধা।

তারা এই অপূর্ব দয়িতদ্বৈতকে (দ্বৈত বলা যায় না যাঁদেরকে আর, কেননা কালকেতু তখন প্রায় আদ্যোপান্ত ফুল্লরাতে লীন, শুধু কচ্ছপের ভয়ার্ত মাথার মতো যাঁর চোখ-দু’টি মিটমিট বেরিয়ে আসছে ক্ষণে, আবার চকিতে ঢুকে যাচ্ছে পরক্ষণে) অভাবনীয় সম্মান-প্রদর্শন ক’রে, যেন হামাগুড়ি দিয়ে, দু’ভাগে ভাগ হ’য়ে তাঁদেরকে পেরিয়ে যায়—আর কালকেতু, জ্যাক-ইন-দ্য- বক্স-এর মতো ছিটকে বেরিয়ে আসেন ফুল্লরার সহসা-অবাধ্য ছায়ার মতো, তাঁর মুখোমুখি দাঁড়ান, আত্মঘাতী বিদ্রোহে থরথরি কাঁপেন, এবং বলেন, ‘য়্যু আর আ ডায়াবলিকালি সিনিস্টার লায়ার!”

কালকেতুর নাড়িভুঁড়ি, অন্তরাত্মা, তাঁর সমস্ত ভিতর, তাঁর গলা দিয়ে বেরিয়ে আসতে চায়, তিনি প্রায় ইনসাইড-আউট হ’য়ে যেতে-যেতে প্ৰলাপ বকেন—‘ফাম ফাতাল! ফাম ফাতাল! ফাম ফাতল!’

ফুল্লরা অনন্তকাল তাকিয়ে থাকেন। তারপর, এতখানি ভিতর থেকে কাঁদেন, যে, তাঁর অশ্রুকণাগুলি বরফের কুচি হ’য়ে বেরিয়ে আসে, তাঁর চোখ- দু’টিকে ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত ক’রে দিয়ে। অনন্তকাল পরে তিনি বলেন, এত ভিতর থেকে, যে, তাঁর শব্দগুলি অগ্নিশিখা হ’য়ে উল্লোলিত হয়, তাঁর জিহ্বা, ঠোঁট, এমনকি কষ্টের অনুভূতিকে পর্যন্ত দগ্ধ ক’রে দিতে-দিতে—’বুঝতে পেরেছো, কালকেতু! বুঝতে পেরেছো তুমি!’

মুখোমুখি দু’জনে বসেন, প্রত্যালীঢ়। এক অদৃশ্য আলোর অলকানন্দা নেমে আসে আকাশের কোনও গুহ্য-পথে। দু’জনেরে সেই আলো দ্যাখে, জমিয়ে মমি ক’রে রাখে—সময় স্বয়ং ভুলে যায়, কতক্ষণ। বা হয়তো সময়ও সেই হীরক-কঠিন স্তব্ধতাকে নাড়া দিতে ক’রে না সাহস

কী দ্যাখেন ফুল্লরা, কালকেতুর চোখে আর কালকেতু, ফুল্লরার চোখে?

কী দ্যাখে আকাশময় অনন্ত নক্ষত্রবীথি অন্ধকার ব্রহ্মাণ্ডের চোখে?

অথবা কী দ্যাখেন তাঁরা তাঁদের আপন-চোখে, এই অজস্র ভাঙা-আরশি- পানা নিরঞ্জন অরোরা-ধারায়?

কে ব’লে প্রেম ক’রে জন্মদান তৃতীয় সত্তার, সত্য শিব সুন্দর জায়মান ব্রহ্মার নাভিতে?

অনন্তকাল যায় অনন্তকাল আইসে। সময়ের ধৈর্য ফুরায়। ঘড়ির কাঁটার পায়ে সে আবার চ’লে—চালায়। অদৃশ্য আলোর ঝর্না ফেরে উজানে, সাথে কী নিয়ে ফেরে তা আর কোনওদিনই জানতে পাবে না কোনও নশ্বর জীবন। ফুল্লরা উঠে দাঁড়ান, ওঠেন কালকেতু। তাঁদের নশ্বর জীবন আরও একবার হয় প্রস্তুত, আরও একবার শক্তি ক’রে সঞ্চয়,—পায়ে আসে বল—আরও একবার ওঠে যবনিকা, আরও একবার। ব্যতিক্রম শুধু এই, যে, তাঁদের সমূহ চলিষ্ণুতা, তাঁদের হাল এবং পাল এবং দাঁড়, তাঁদেরকে তাঁদের কেবিনে বন্দি ক’রে, নিজেদের অভিমুখ নিজেরাই ক’রে নির্ধারণ। তাঁরা মাত্র ঘটনাক্রমেই চ’লে চলেন, সম্বোধির করুণা-নৌকায়

২৮.

মোড় ঘুরতেই (কালকেতু ও ফুল্লরার) চোখে প’ড়ে, ধুধু আকাশের অস্পষ্ট প্রেক্ষাপটে একটা মর্মন-মন্দিরের অম্বুজাকার গম্বুজ,—মন্দিরটির ভূতপূর্ব বাহাই-সত্তার অন্তিম স্মারক—মহাস্থপতি এফ আর খানের মরণোত্তর কীর্তি। মন্দিরে-তোরণে ভগবান জোসেফ স্মিথ-এর সহস্ত-মুদ্রিত শিরোলিপি :

ROTAS

OPERA

TENET

AREPO

SATOR [৭৭]

ফুল্লরার হাত ধ’রে আগান কালকেতু। চকিতে তাকান তাঁর চোখে মুহূর্তে জ্বলে ওঠে গম্বুজ-চূড়ায়-বসা প্যাঁচার দু’চোখ। জ্বলে ওঠে, যেন, বাতাসে আঁধারের শতকোটি চোখ। গম্বুজের শিরায়-শিরায় অর্বুদ বিদ্যুৎ খেলে যায়। পিছনের আকাশের ঘনায় ধূসরিমা গাঢ়-গাঢ়তর।

কালকেতুর এতক্ষণে ক্লান্তি লাগে বড়। ওজন দ্বিগুণ হয় ফিকদম রক্ত বেরিয়ে আসে ফোঁটায়-ফোঁটায়, ঘাম হ’য়ে, আত্মগ্লানি হ’য়ে। মৰ্ত্যুকাম হৃদ্যন্ত্রটি উবে গিয়ে মেশে তাঁর দীর্ঘবিষনিঃশ্বাসের সাথে। কিন্তু তিনি তবু চলেন, কেননা তাঁর হাত বাঁধা ফুল্লরার হাতে। গাধাবোটে লটকানো ডোঙার মতো তিনি প্রায় অ-তিনি হতে-হতে ফুল্লরার সময়ের পায়ে, ফুল্লরার গূঢ়ৈষার গায়ে, ফুল্লরার গ্রাসের ফোকরে আটকে থেমে চলেন—আর অস্ফুট বলেন- ‘চলো ফিরে যাই…’

ফুল্লরা নিষ্ঠুর হাসেন বলেন, – কিংবা বলেন না, কিন্তু কালকেতু শোনেন (কিংবা শোনেন না) ‘কোথায়?

কালকেতু ভাবেন, পুরো ঢাকা জুড়ে, সত্তার নক্ষত্রবীথি জুড়ে ভাবেন। নিজ জীবনের গলিতে-গলিতে রাস্তায়-রেস্তোরাঁয় মাঠে-ঘাটে তিনি কাপড়ে- আগুন-লাগা হতভাগ্যর মতো ছুটে বেড়ান; কোনও একটি দ্বার, খিড়কি-দ্বার, জানালা, গবাক্ষ, রন্ধ্রও খোলে না। তাঁর আপন শহরের নর্দমা-নয়ানজুলি হাজা-মজা পুকুর-পরিখাগুলি থেকে কুহেলির মতো উঠে আসে :

‘I saw pal Kings and Princes too,
Pale warriors, death – pale were they all;
They cried-’La belle Dame sans Merci
Hath thee in thrall!’[৭৮]

কালকেতু এমনকি ঐ ফুল্লরার চোখে বুকে রোমকূপে-রোমকূপে খোঁজেন, বোধের জটিল জলে খ্যাপা মাঝির মতো লগি চালান—বাঁও মেলে না… তারপর কালকেতু উত্তর দেন—’লোকায়ত পান্থশালায়।”

২৯.

মোড় পান্থশালার স্ফিংক্স-দুয়ার পেরোন তাঁরা হাতে ধ’রে হাত মলমলের পর্দা ঠেলে ঢোকার মুখে কালকেতু বলেন, ‘না!’

‘বলতে নেই—’ ফুল্লরা বলেন। আর ফুল্লরা চলেন—হাতে তাঁর বাঁধা কালকেতু—ভূতপূর্ব, অভূতপূর্ব।

ঢুকতেই, রেস্তোরাঁয়, আগ্নেয়গিরিসম্ভব ওঠে শোর—যার তোড়ে গুঁড়ো হয় রেস্তোরাঁর সব-ক’টি কাচের বাসন। ইচকের হাতে-ধরা সিদ্ধির গেলাস আর মাথার উপরে ভাতিমান সপ্তভুজ বেলোয়ারি ঝাড় মুহূর্তে চূর্ণ হ’য়ে যায়। সমবেত জনতা, হুডর মতো ঝাঁপিয়ে প’ড়ে তাঁদের উপর। বিচ্ছিন্ন তাঁরা হ’য়ে পড়েন।

কতক মুহূর্ত কালকেতু চেতনা হারান। সংজ্ঞা ফিরলে দেখেন, উত্তালতরঙ্গশীর্ষে কেলয়মানা জলবেশ্যার মতো, ফুল্লরা, সেই অলৌকিক জনতার মাথায়-মাথায়, বিবসনা, বত্তিচেলির ভিনাস। কালকেতুর অবশ্য তাঁর পাশে গিয়ে পৌঁছবার উপায় আর নাই। ক্যাসেটে তখন বাজে :

‘I raised you to your feet,
With your hand inside my own
We set off upon a journey,
Each together, each alone,
In the days that followed
Oh, our lives did overlap,
I learned the contours of your body
Like the roads upon a map,
You sweetened every evening,
I savoured every day,
Just when I was certain
It would always be this way
You slipped beyond the reach
Of my outstretched fingertips
With all the kisses
We’d placed upon your lips,
Where are they now?
Where are they now?’[৭৯]

সকলে একটা বৃত্তে দাঁড়িয়ে প’ড়ে, কালকেতুকে তার ভিতরে, ফুল্লরাকে বাইরে রেখে। বৃত্তের একটা-কোনও অনির্দিষ্ট চাপ ভেঙে দিয়ে এগিয়ে আসেন তিন জন : ভবানন্দ মজুন্দার, নেফারটিটি, এবং মহামান্য ইচক। তাঁরা প্রথমে কালকেতুর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে বাও করেন। তারপর ফুল্লরার দিকে ঘুরে তাঁকে বাও করেন।

বৃত্তের বাইরে থেকে ফুল্লরা চিৎকার করেন—’কালকেতু! প্রিয়তম আর্যপুত্র! তোমার অভিজ্ঞানখানি আমি হারিয়ে ফেলেছি! আমাকে চিনতে পারছো? চিনতে পারছো আমাকে?’

এক্সট্যাসি-প্রমত্তার মতো, ফুল্লরা এইমতো আরও অনেক বলেন, আর তাঁর প্রতিটি বাক্যের শেষে জনতার ক্ষিপ্ত হুলুধ্বনি, আর ক্যাসেটে অ্যাল স্ট্যুয়ার্টের কাতরোক্তি :

‘Some of these occurred to me
The time I saw you last,
Your face familiar in a way,
Your voice out of the past—
Every gamut of emotion shared
From tenderness to rage
Fell away between us
In the turning of that page,
It seemed like only yesterday
We swore that we’d be true-
Two innocents,
Believing that they knew—
Where are they now?
Where are they now?
Where are they now?
Oh, where are they now?’[৮০’

কালকেতু নীরব বিড়বিড় করেন, ‘ফুল্লরা, ফুল্ লরা, সব মিথ্যা, সব সত্য, সব মিথ্যা, সত্য—’

আর ফুল্লরা তখন জন্মের হাসি হেসে চলেছেন। আর তার ঝড় সভার সবাইকে ঠেলছে, জলোচ্ছ্বাস সবাইকে ঠেলছে, তার ধ্বস তাদেরকে এগিয়ে দিচ্ছে, ভূমিকম্প তাদেরকে এগিয়ে দিচ্ছে, আর তারা পরস্পর পরস্পরের চক্রব্যূহে প্রবেশ করছে, পরস্পর পরস্পরের রক্তে স্নান করছে, পরস্পর পরস্পরের মৃত্যুর জন্য দায়ী হচ্ছে, পরস্পর পরস্পরের নবজন্মের জন্য দায়ী হচ্ছে …[৮১]

ঐ দ্যাখো, ঐ ফুল্লরা, নৃত্যপরা-উল্লসিতা-ঈশ্বরদূষিতা—তিনি আজ হাওয়ায় মেলাবেন নিজেকে, আকাশে মেলাবেন, সঙ্গীতে, ভঙ্গিতে মেলাবেন! সভার সবাই জানে, তাই তারা প’রে নেয় যার-যার মুখোশ — মায়াদের দেবদেবী, ইঙ্কাদের দেবদেবী, ইস্টারদ্বীপের দেবদেবী, হিত্তিদের দেবদেবী, মিতান্নিদের দেবদেবী—তারপর নীরব হয়। ফুল্লরা নীরব হ’ন

ফুল্লরা ঠোঁট নাড়লে কালকেতু দেখতে পান ফুল্লরা বলছেন, ‘প্রিয়তম’, বলছেন, ‘মন্‌ আমি’। কালকেতুর সকল বেদনা সারে। তাঁর মুখে আভাসিত হয় তাঁর নিহিত শৈশব। কিন্তু তাঁর সশরীরে স্বর্গারোহণের সূচনায়, ফুল্লরা, সহসা তাঁর দিকে তর্জনী তুলে চিৎকার করেন—’অ্যানাইহিলেট দ্যাট ডিমন!!!’[৮২]

এক মুহূর্ত—একটা ধাতব, বেগনি মুহূর্ত, নিষ্কোষিত তরবারির রজত- ঝলকে ধাঁধিয়ে-যাওয়া, ঝলসে-যাওয়া এক মুহূর্ত।

তার পরেই, প্রাচীন পৃথিবীর যাবতীয় দেবদেবী, অর্ধদেবতা ও অপদেবতা, একটিমাত্র চূড়ান্ত শক্তিতে ঘন হ’য়ে ঝাঁপিয়ে প’ড়ে কালকেতুর উপর, এবং নিমেষ ফেলার অনেক আগেই তিনি নিজেকে প্রায় থ্যাঁতলানো দেহে মেঝের উপর খুঁজে পান।

অনন্তকাল পরে, প্রায় উন্মার্গলিপ্সু লতার মতন তিনি লতিয়ে, নেতিয়ে, কখনও বায়ু, কখনও ব্যোম, কখনও নিজেকেই আশ্রয় ক’রে, ঘুরে-ঘুরে দুলে-দুলে উঠে দাঁড়ান। দেবতাবাহিনী আবারও বৃত্তে হয় গোল, ফুল্লরা কেবল এবার বৃত্তের ভিতরে চ’লে এসেছেন।

ভবানন্দ মজুন্দার এগিয়ে আসেন, কালকেতুকে জড়িয়ে ধ’রে তিনি তাঁর চক্ষু-চুম্বন করেন। তারপর, পকেট থেকে একটা ভোজালি বা’র ক’রে, বিদ্যুদ্বেগে, কালকেতুর চোখ-দু’টিকে উপড়ে তিনি নেন।

কালকেতু এতই অবাক্ হ’ন, যে তিনি কোনও বাধাই দেন না, কোনও বেদনাও প্রায় অনুভব করেন না, শুধু অক্ষিহীন কোটরে, বিস্মিত বালকের ন্যায় তাকিয়ে থাকেন।

এখন নেফারটিটি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ান। কালকেতু তাঁর লালায়িত চুম্বন অনুভব করেন স্বীয় অধরোষ্ঠে। অত্যন্ত মোলায়েম নৈপুণ্যে কালকেতুকে বিবসন করেন, এবং জামা-কাপড়, মায় কালকেতুর কুখ্যাত জুতাজোড়া, নানাদিকে দেন ছুঁড়ে নেফারটিটি—নানাদিকে ওঠে হুল্লোড়—তারপর কবোষ্ণ বলেন, ‘দ্যাট টাইম য়্যু ডিডন্ট ওয়েইট টু ল্যর্ন ইয়োর ফ্যর্স্ট লেসন, অ্যান্ড, আই’ম অ্যাফ্রেড, য়্যু হ্যাভ জাস্ট ইনাফ টাইম ফর দ্য লাস্ট ওয়ান ওনলি—’

এই বাক্য পুরাপুরি বোঝা দূরে থাক, শোনার আগেই, কালকেতুর প্রভূত পৌরুষ নেফারটিটির বাঁ-হাতে চ’লে যায়, এবং যুগপৎ তাঁর দাঁত, এবং ডান- হাতে-ধরা কুকরিতে নরকের রোশনাই ঝিলিক মারে। নেফারটিটি হাসি- মুখে, শান্ত-ভাবে, সদ্যোবিজিত শত্রুসম্পদটুকুকে অক্লেশে ফুল্লরাকে ছুঁড়ে দেন। ফুল্লরা সেটিকে ধ’রে বিশদ আদর করেন, যেন সেটি তাঁর পোষা বিড়াল।

এরপর আসেন ইচক স্বয়ং। কালকেতুর করতল চুম্বন ক’রে, খুব হাল্কা- গলায় তিনি বলেন, “উড দ্যাট য়্যু ওয়্যার নট দ্য ওয়ান।’

কালকেতু ফ্যাঁস ফ্যাঁস করেন—’ইচক, তুমিও!’[৮৩]

ইচক, কালকেতুর একটা হাত চেপে ধ’রে একটু চাপ দেন, সমাহিত বলেন, ‘গুডবাই, ইয়োর হাইনেস।’

এই কথা ব’লে তিনি পিছনে স’রে গিয়ে আদেশ করেন—‘দিক আস্তে পবন উত্ৰা!’

বৃত্তস্থ সবাই এক অনিবচনীয় নৃত্যে মত্ত হয়। তারা কালকেতুকে ঘিরে ঘুরে-ঘুরে নাচে—নারীগণ উত্তমাঙ্গের, এবং পুরুষেরা অধমাঙ্গের বসন খুলে, ফলে একই সঙ্গে তাদের ভঙ্গিমায় ইতি—এবং নেতিবাচকতা পরিলক্ষিত হয়। কালকেতুর অবশ্য তা-সব দেখবার উপায় আর নাই। তিনি শুধু শোনেন তাদের স্তোত্র’মিলিপিপ্পিং খ্রুক মিলিপিপ্পিং খ্রুক মিলিপিপ্পিং খ্রুক…’[৮৪]

কালকেতু হাতড়ে-হাতড়ে একটা টেবিলে গিয়ে ওঠেন, দু’টি দীর্ঘ দমের সঙ্গে ঠেলেঠুলে বা’র করেন—‘পা—নি—’

বড়ুবাবু কাউন্টার থেকে শুনতে পেয়ে, (তাবৎ কাপ-গেলাস বিচূর্ণ হওয়ায়) একটা বাসন-মাজা স্পন্জ সিদ্ধির পিপেয় চুবিয়ে, একটা কাবাব- করার শিকে গেঁথে কালকেতুর মুখপানে ঠেলে দেন। কিন্তু টলটলায়মান অবস্থায় থাকবার কারণে, শিকটি তাঁর মুখে না-ঢুকে, বুকে বিঁধে যায়। আর্তনাদ করবার শক্তিও ততক্ষণে নিঃশেষিত কালকেতুর, তাই বড়ুবাবু সহজেই শিকটিকে কালকেতুর বুক থেকে টেনে বা’র ক’রে এনে, এবার ভালোমতো তাক ক’রে মুখে গুঁজে দেন।

কালকেতুর অনন্ত পিপাসিত পরান স্পজ থেকে সিদ্ধি শুষে নেয়। এবার শরীরে তাঁর, একটা ঘোরের সাথে, কোনও বহির্ভূত কিংবা অন্তর্ভূত উৎস থেকে, খানিকটা শক্তি চল্কে আসে। তিনি সহসা সটান টেবিলে দাঁড়ান, আর শোনো! তিনি বলেন, ‘ফুল্লরা! ফুল্লরা! কেন আমায় পরিত্যাগ করছো? ৮৫

আর দ্যাখো! তৎক্ষণাৎ পান্থশালায় শর্টসার্কিট হয়, সবগুলি আলো নিবে গিয়ে লক্ষ-লক্ষ আঁধারের বাতি জ্বলে ওঠে। কোনও সূত্রে, দেয়ালের মহাভারত-এর এক কোণে এক মিনমিনে আগুন ধ’রে যায়, আর, মাত্র ক’এক লহমায়, তুলুজ-লোত্রেক তথা আমানউল্লাহ-র বৎসরব্যাপী পরিশ্রম পণ্ডশ্রমে পর্যবসিত হয়।

কালকেতু যেন শোনেন, কিংবা শোনেন না, কোথায়, কোথাও ‘কালকেতু! কালকেতু!

কালকেতু বলেন (কিংবা বলেন না), ‘কে?’

‘কালকেতু! কালকেতু!’

‘এই-যে আমি!’
‘বৎস উত্তিষ্ঠ!’[৮৬]

কালকেতু টেবিল-সহ উল্টে পড়েন। কিন্তু তিনি টের পেয়েছেন ——হ্যাঁ- মেঝেয় গড়িয়ে-গড়িয়ে, অপোগণ্ডের মতো হামা দিয়ে-দিয়ে তিনি পৌঁছে যান পান্থশালার প্রধান কলামটির কাছে। সেটিকে জড়িয়ে ধ’রে উঠে দাঁড়ান। সভাগৃহ তখন নীরব। কিংবা নীরবতা বাঙ্ময়। কালকেতু দাঁড়িয়ে থাকেন। অপেক্ষা করেন। নৈঃশব্দ্যের ভাষা শোনেন, নৈঃশব্দ্যের পল গোনেন।

তারপর—তারপর ‘জয় মা কালী!’ চিৎকার দিয়েই, কলামে একটা হেঁচকা টান তিনি দেন, আর লোকায়ত পান্থশালা, তার উদরস্থ যাবতীয় ভবলীলা-সহকারে প্রবেশ ক’রে মহাবিশ্বের নিজস্ব বয়সের ব্যাপ্তির ভিতর।

.

পরিশিষ্ট

পরদিন প্রভাতের সোনালি আলোয়, ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে এক সোনালি গুঁইসাপ।৮৭ পথে তাকে দেখতে পেয়ে, প্রাতর্ভ্রমণরত সম্রাট্ ইসপ, কোমরের বেল্টে তাকে বেঁধে নিয়ে যান।

‘ইৎনুৎ! ইৎনুৎ!’ ডাকেন সম্রাট্—‘তোমাকে বলেছিলাম-না, তোমার কোল এবার ভরবে?’

(সম্রাজ্ঞীর প্রত্যুত্তরটি, বাহুল্য-বোধে কেটে দেন সম্পাদক তাজুল হক।)

.

সূত্র

১ From Al Stewart’s song: Where are They Now?

২ From Al Stewart’s song : Café Society

৩ From Eagles’ song: Hotel California

৪ ‘রজনীকান্ত সেন-এর গান থেকে

৫ আব্বাসউদ্দীন-এর ভাটিয়ালি গান থেকে

৬ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-এর “ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে” গান থেকে

৭ ফররুখ আহমেদ-এর “পাঞ্জেরী” কবিতা থেকে

৮ হাসন রাজার গান থেকে

৯ ডব্ল্যু বি ইয়েটস-এর “মোহিনী চ্যাটার্জি” কবিতার মৎকৃত বঙ্গানুবাদ থেকে

১০ হ্বলফগাং ফন গ্যোটে-এর “ফাউস্ট” থেকে

১১ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-এর গান থেকে

১২ রাম সিংহ ঠাকুর প্রণীত ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র রায়-এর ন্যাশনাল আর্মিতে রণসঙ্গীত হিসাবে ব্যবহৃত গান

১৩ From John Keats’ Ode to a Nightingale

১৪ From T S Eliot’s quotation as epigraph to his The Waste Land from Petronius’ Satyricon

১৫ শ্রীরূপ গোস্বামীর, মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য মারফত প্রাপ্ত শ্লোক: যে ছিল আমার কৌমার্যহারী, সে ই আজ স্বামী আমার। সেই একই চৈত্র মাস, মালতীর পরিমল, কদম্বানিল; সুরতলীলায় সেই একই আমি অংশিদার; তবু আমি হাহাকার করছি রেবানদীর তটে সেই বেতসকুঞ্জের জন্য।

১৬ “অমরুশতকম্” থেকে

১৭ বাইবেল (উপদেশক ৯:৪-৫)

১৮ From the English translation of Arthur Rimbaud’s Une Saison en Enfer (A Season in Hell – tr A. S. Kline)

১৯ মাইকেল মধুসূদন দত্ত-র “মেঘনাদবধ কাব্য” থেকে

২০ শামসুল কবির ওরফে ইচক দুয়েন্দে প্রণীত “সখা” গল্প থেকে

২১ “ধর্মবনানী” নামে সাজ্জাদ শরিফের একটা কবিতা আছে।

২২ “From TS Eliot’s The Waste Land

২৩ সাবদার সিদ্দিকীর চৈনিক লিপিরীতিতে লেখা কবিতাগুলির একটা

২৪ From WB Yeats’s The Tower

২৫ From Cat Stevens’s song Moonshadow

২৬ বঙ্কিমচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস “কপালকুণ্ডলা” থেকে

২৭ মাসুদ খান প্রণীত কবিতা “আজ সারা শহর ঘুরে ঘুরে দেখলাম” থেকে; মূল কবিতার ‘ন্যায়’-কে ‘প্রায়’ করা হয়েছে

২৮ From W B Yeats’s The Second Coming

২৯ খোন্দকার আশরাফ হোসেনের একটা কবিতায় ছিল: “আয় রে আমরা ঝাঁপুই খেলি”

৩০ হাসন রাজার গান থেকে

৩১ ড্যু বি ইয়েটস-এর “দ্য থ্রি বুশেজ” কবিতার মৎকৃত বঙ্গানুবাদ থেকে

৩২ “সারেং বউ”-এর সিম্বলিক শট

৩৩ From S T Coleridge’s The Rime of the Ancient Mariner

৩৪ As above

৩৫ From S T Coleridge’s Kubla Khan

৩৬ তু. ‘ফুলদল দিয়া / কাটিলা কি বিধাতা শাল্মলী তরুবরে?” – “মেঘনাদবধ” মাইকেল মধুসূদন দত্ত

৩৭ ফেদেরিকো গারথিয়া লোরকা-র “ছোরাটি”-র বিষ্ণু দে-কৃত অনুবাদ

৩৮ একটা প্রাচীন আইরিশ গানের, ডব্ল্যু বি ইয়েটস-কৃত আধুনিকায়িত রূপ

৩৯ From William Shakespeare’s Sonnet 94

৪০ ল্যুইস ক্যারল-এর “অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড”-এর একটা গানের মৎকৃত বঙ্গানুবাদ থেকে

৪১ গিয়ম আপলিনের-এর “ল্য পুঁ মিরাবো” (মিরাবো ব্রিজ) কবিতার, বিষ্ণু দে-কৃত অনুবাদ

৪২ জীবনানন্দ দাশ-এর “সেই নিদ্রা” কবিতা থেকে

৪৩ From Al Stewart’s song The Little Fruit Song

৪৪ Parody of a part of John Keats’s A Song About Myself

৪৫ সৈয়দ তারিকের “অনুষঙ্গ” কবিতা থেকে

৪৬ Miroslav Holub’s A Boy’s Head

৪৭ জয় গোস্বামী-র কবিতা থেকে

৪৮ A much anthologized, funny epitaph

৪৯ A song from Lewis Carroll’s Alice in Wonderland

৫০ A limerick by Edward Lear

৫১ As above

৫২ সত্যজিৎ রায়-এর “গুপি গাইন বাঘা বাইন” ছবির একটা গান থেকে

৫৩ এমিলি ডিকিনসন-এর একটা কবিতা “সেফ ইন দেয়ার অ্যালাব্যাস্টর চেম্বার”-এর একটা সংস্করণের মৎকৃত বঙ্গানুবাদ

৫৪ উপরের কবিতাটির আর-একটা সংস্করণের মৎকৃত বঙ্গানুবাদ

৫৫ বিশাখদত্ত-র নাটক “মুদ্রারাক্ষস” থেকে

৫৬ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-এর কবিতা “উদ্বোধন” থেকে

৫৭ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর একটি গান থেকে

৫৮ অস্কার ওয়াইল্ড-এর একটি মৌখিক ছোট্ট গল্প, যাকে লিপিবদ্ধ করেছিলেন ইয়েটস, এবং নাম দিয়েছিলেন “পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প”-র একটা অংশের প্যারোডি

৫৯ বলরাম দাস-এর বৈষ্ণব পদ: “তুমি মোর নিধি রাই” থেকে

৬০ Samuel Beckett’s Waiting for Godot

৬১ আমির মিনাই রচিত ও জগজিৎ সিংহ-গীত গজল থেকে

৬২ পার্সি বিশ শেলি-র “ওজিম্যান্ডিয়াস” কবিতার মৎকৃত অনুবাদ থেকে

৬৩ From Robert Frost’s poem The Road Not Taken

৬৪ ইংরেজি নার্সারি রাইম… মূল গানে ছিল মালবেরি বুশ, টি এস এলিয়ট তাঁর “দ্য হল মেন” কবিতায় এর প্যারডি করবার সময় মালবেরি বুশ-কে প্রিকলি পেয়ার ক’রে দেন

৬৫. From Don McLean’s song Vincent

৬৬ কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর “চণ্ডীমঙ্গল” থেকে

৬৭ From James Joyce’s A Portrait of the Artist as a Young Man

৬৮ এইচ জি ওয়েলজ-এর “দি আইল্যান্ড অব ডক্টর মরো” দ্র.

৬৯ প্রাচীন ভারতের “নারী”-কবি বিজ্জিকার শ্লোক

৭০ Emily Dickinson’s poem (poem # 214 )

৭১ From TS Eliot’s The Waste Land (slightly modified)

৭২ Jean-Luc Godard’s film Breathless

৭৩ পরশুরাম-এর গল্প থেকে

৭৪ বাশো মাৎসুয়ো-র হাইকু… “পুরানো দিঘি / হঠাৎ একটা ব্যাঙের লাফ / জলীয় আওয়াজ”

৭৫ From W B Yeats’s He Wishes for the Cloths of Heaven

৭৬ বাইবেল-এর “দ্য সং অব সলোমন”-এর সাজ্জাদ শরিফ-কৃত অনুবাদ থেকে (ঈষৎ পরিবর্তিত) – বন্ধুর ঋণস্বীকার নাজায়েজ… তবু আমি করছি… কেন জানি

৭৭ 99 From a tablet found in the ruins of Pompeii

৭৮ From John Keats’s La Belle Dame Sans Merci

৭৯ From Al Stewart’s song: Where are They Now?

৮০ As above

৮১ বিষ্ণু বিশ্বাসের “আনন্দধ্বনি জাগাও” থেকে

৮২ কামরুল হাসান অঙ্কিত ইয়াহিয়া খানের বিখ্যাত পোর্ট্রেট-এর নাম “অ্যানাইহিলেট দিজ ডিমনজ”

৮৩ et tu Brute (Julius Caesar – William Shakespeare)

৮৪ সত্যজিৎ রায়-এর এক সায়েন্স ফিকশন গল্প থেকে (শঙ্কু?)

৮৫ বাইবেল (নূতন সন্ধি) – মৃত্যুপূর্বে যিশু চিৎকার ক’রে ওঠেন: “পিতা! পিতা! কেন আমায় পরিত্যাগ করছো!”

৮৬ বাইবেল (পুরাতন সন্ধি – স্যামুয়েল) – স্যামুয়েল ঘুমের মধ্যে একদিন শুনতে পান কেউ তাঁকে ডাকছে “স্যামুয়েল! স্যামুয়েল!”

৮৭ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর “চণ্ডীমঙ্গল” দ্র.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *