কার্তিক

দেবগণের সেনাপতি। অগ্নি ও দক্ষকন্যা স্বাহার ছয়-মস্তক বিশিষ্ট পুত্র। সপ্তর্ষিদের হোমকুণ্ড থেকে উত্থিত হয়ে অপরূপ সুন্দরী ঋষিপত্নীদের সন্মুখে দেখে অগ্নি কামাবিষ্ট হন। কিন্তু তাঁরা অলভ্য জেনে দেহত্যাগের সংকল্প করে বনে চলে যান। দক্ষকন্যা স্বাহা ছিলেন অগ্নির অনুরাগিনী। তিনি এই সুযোগ নিয়ে মহর্ষি অঙ্গিরার ভার্যা শিবার (অন্যত্র এঁর নাম শ্রদ্ধা বলা হয়েছে) রূপ ধরে অগ্নির কাছে গিয়ে তাঁর সঙ্গে মিলিত হলেন। অগ্নির শুক্র নষ্ট না করে স্বাহা সেটি কৈলাস পর্বতের এক কাঞ্চনকুণ্ডে নিক্ষেপ করলেন। এরপর আরও পাঁচবার সপ্তর্ষিগণের অন্যান্য ঋষিপত্নীর রূপ ধারণ করে অগ্নির সঙ্গে স্বাহার মিলন হল। শুধু বশিষ্ঠপত্নী অরুন্ধতীর তপস্যার প্রভাবে তাঁর রূপ ধারণ করতে পারলেন না। প্রতিবারই অগ্নির শুক্র স্বাহা সেই কাঞ্চনকুণ্ডে নিক্ষেপ করলেন। সেই স্খলিত শুক্র থেকে ছয়-মস্তক নিয়ে স্কন্দ (কার্তিকেয় বা কার্তিক) উত্পন্ন হলেন। ত্রিপুরাসুরকে বধ করে মহাদেব যে ধনু রেখে দিয়েছিলেন,সেই ধনু কার্তিক তুলে নিলেন। বালক কার্তিকের বলের কথা শুনে দেবতারা তাঁকে বধ করার জন্য লোকমাতাদের (শিবের অনুচরী) পাঠালেন, কিন্তু তাঁরা কার্তিককে পুত্র-জ্ঞান করলেন। তখন ইন্দ্র স্বয়ং কার্তিকের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এলেন, কিন্তু বজ্র নিক্ষেপ করেও তাঁকে বধ করতে পারলেন না। তাতে ভীত হয়ে ইন্দ্র কার্তিককে দেবসেনাপতির পদ দিলেন। সুবর্ণমালা পরিয়ে কার্তিককে অভিনন্দিত করলেন পার্বতী আর মহাদেব (রুদ্ররূপে মহাদেব অগ্নিতে অবস্থান করেন বলে কার্তিক মহাদেবেরও পুত্র)। কেশী নামক এক দানবের হাত থেকে ইন্দ্র এক সময়ে প্রজাপতির কন্যা দেবসেনাকে উদ্ধার করেছিলেন। ব্রহ্মা বলেছিলেন যে, দেবসেনার পতি জন্ম নিলে তিনি দেবসেনাপতি হবেন। সেই কথা স্মরণ করে ইন্দ্র দেবসেনাকে কার্তিকের হাতে সম্প্রদান করলেন। এদিকে নিরপরাধী হওয়া সত্বেও সপ্তর্ষিদের ছয় ঋষি পত্নীদের ত্যাগ করেছিলেন তাঁরা কার্তিকের জননী সন্দেহে। সেই ঋষিপত্নীরা এসে কার্তিককে সে কথা জানাতে, কার্তিক তাঁদেরও নিজের মাতার সন্মান দিলেন। স্বাহা এসে অকপটে কার্তিককে তাঁর জন্মকাহিনী জানিয়ে বললেন যে, তিনি অগ্নির অনুরাগিনী, কিন্তু অগ্নি তা জানেন না। এখন থেকে তিনি অগ্নির সঙ্গে বাস করতে চান। কার্তিক বললেন যে, দ্বিজগণ অগ্নিতে হব্য কব্য অর্পণ করবার সময়ে স্বাহা বলবেন – তার ফলেই অগ্নির সঙ্গে ওঁর সর্বদা বাস হবে। কার্তিকেয় জন্মের অন্য গল্প হল, দেবতারা তারকাসুরকে বধ করার জন্য অগ্নিকে পুত্র উৎপাদন করতে অনুরোধ করেছিলেন। অগ্নি গঙ্গা কমনাগ্রস্থ না হওয়া সত্বেও গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হন। অকামা মিলনের জন্য অগ্নির তেজ গঙ্গা গর্ভে বেশিদিন ধরে রাখতে পারলেন না, তিনি সুমেরু পর্বতে গিয়ে গর্ভত্যাগ করলেন। কিন্তু তাঁর পরিত্যক্ত গর্ভ অগ্নির মতই তেজস্বী হল। সেই অগ্নিসম্ভূত তেজ গঙ্গাতে প্রবাহিত হয়ে একটি শরবনে সংলগ্ন হয়ে যখন শিশুতে পরিণত হল। কৃত্তিকাগণ তাঁকে পুত্রসম বড় করলেন। তাই ওঁর নাম হল কার্তিকেয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *