কানা নাকি?

কানা নাকি?

আমাদের গল্প, মাঝরাতের গল্প৷ দেশসুদ্ধ স্বাভাবিক মানুষ যখন গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে, তখন শুরু হয় আমাদের গল্প৷ তবে সবাই কিন্তু ঘুমায় না; কেউ-কেউ আবার রাত হলেই বেরিয়ে পড়ে অভিযানে৷ ঘুমন্ত পাড়া, ন্যাড়া ছাদ, আকাশছোঁয়া গাছের ডাল—কোথায় যায় না! আর এই সারারাত অভিযানেই এমন অনেক কিছু এদের চোখে পড়ে, যা আমাদের ধারণারও বাইরে৷

একটা নার্সারি রাইম মনে পড়ছে—

A wise old owl lived in an oak

The more he heard, the less he spoke.

The less he spoke, the more he heard.

Why can’t we all like that wise old bird.

ভাবুন এমন একটা প্রাণী, যে আপনার-আমার জানলার বাইরে দিয়ে সারারাত সবই লক্ষ রাখে; আমাদের জীবনে কোনও ভূমিকা নেই, তবু দূর থেকে আমাদের কষ্ট ঘৃণা যন্ত্রণা প্রতিহিংসা—মন দিয়ে দেখে যায়৷ হয়তো লিখেও রাখে কোথাও! কিন্তু কেন? কী উদ্দেশ্য তার?

এই যে আপনি৷ হ্যাঁ আপনাকেই বলছি, চোখে দেখেন না নাকি? মানে কতবার স্বচক্ষে দেখেছেন আমাকে? তাও যে দিবারাত্র আমার নামে গালাগালি রটাচ্ছেন, কুৎসা করছেন, এর কারণটা ঠিক কী বলুন তো? ভারী হিংসা হচ্ছে বুঝি? এমন ডাগর চোখদুটি আপনার নেই বলে? নাকি কারণটা অন্য? ওই সুয্যিমামাটি ডুবলেই তো আপনারা বেবাক কানা৷ তখন আর আলো ছাড়া চোখে দেখবারটি জো নেই৷ নিজেদের জন্য একটুখানি আলো জ্বালালেন সে না হয় মেনে নেওয়া গেল; কিন্তু তাই বলে রাস্তাঘাটে এমনকি বনে বাদাড়ে অবধি আলো জ্বেলে রাখবেন! চারিদিকটা এমন ঘুটঘুটে আলোতে ভরে থাকে যে চোখ খুলেছ কি ধাঁধিয়ে গেল৷ গা-পিত্তি জ্বলে যায় আদিখ্যেতা দেখলে৷

আজ্ঞে ঠিকই ধরেছেন৷ আমি হলাম স্ট্রিগিফরমেস৷ বুঝলেন না? তা বুঝবেন কেন? বিজ্ঞানসম্মত জিনিস তো আপনাদের পছন্দ নয়৷ এদিকে দিব্যি উল্লু-টুল্লু বলে গাল দিয়ে যাচ্ছেন সর্বক্ষণ৷ যাই হোক, আমি হলুম পেঁচা৷ দিনের বেলা আমি থাকি গাছের কোটরে; আর রাত হলে এই মাদার গাছের ডালে এসে বসে আমার বাইনোকুলার ভিশনে ইঁদুর-ছুঁচোর খোঁজ করি৷

তবে শুধু যে খাদ্যের খোঁজে পেটুকবৃত্তি করে আমার দিন… থুড়ি, রাত কাটে তা ভাববেন না৷ আমি হলুম যাকে বলে রীতিমতো পরিদর্শক৷ সব কিছুর উপর অবাধ জিজ্ঞাসু দৃষ্টি আমার৷ আর মানুষের গোপন কথা তো আমার থেকে ভালো কেউ জানেই না৷ আসলে সব মানুষই দিনের বেলা মুখোশ পরে থাকে৷ রাত হলে তাদের আসল চাঁদবদনখানা বের হয়ে আসে৷

যেমন ধরুন, যে মাদার গাছে আমি থাকি তার পাশের বাড়িতেই থাকেন কবি নিত্যমোহন দাম৷ বেশ ধুতিপাঞ্জাবি পরা বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক৷ ছড়া-টড়াকে বালখিল্য ও টিভিকে অপসংস্কৃতি মনে করেন৷ এদিকে রাত হলে দরজা বন্ধ করে হিন্দি গান চালিয়ে নিত্যমোহন দাম এমন দমাদ্দম নৃত্য করেন যে দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়; মানে এমনিই ছানাবড়া থাকে আরকি৷

তারপরে ধরুন সে বাড়ির দোতলায় পালেদের ছোটছেলে৷ সে জন্মানোর সময় গুরুজি পুঁথিপত্র ঘেঁটে বলেছিলেন এ ছেলের নাম হওয়া উচিত— শশাঙ্ক৷ কিন্তু ছেলের বাপের আবার স-এর দোষ৷ ফলে আবার গুরুজি, আবার পাঁজি৷ এইবার স ছাড়া নাম হল—প্রদ্যোত৷ কিন্তু এখানেও গেরো৷ ছেলের মায়ের জিভে আবার র-ফলা আসে না৷ অবশেষে সবাই মিলে নাম রাখল তমোজিৎ৷ সেখানা ভালোই চলছিল কিন্তু ছেলে বড় হতে দেখা গেল তার আবার ট-এর দোষ৷ সেই থেকে নাম নিয়ে খালি টানা-হেঁচড়া চলছে৷ এখন অবধি কোন নাম স্থির হয়েছে তা আমার জানা নেই৷ তবে তার ডাকনাম কাদু৷ ভারি নচ্ছার ছেলে৷

ইদানীং কোথেকে একটা ট্যারা গুলতি জোগাড় করেছে কে জানে, রাত হলেই জানলায় দাঁড়িয়ে বাদুড় মারার তাল করে৷ তা মার—আমার কী তাতে? বাদুড় আমি পছন্দ করি না, অমন উলটো হয়ে বেখাপ্পা ঝুলে থাকা কার পছন্দ হয় বলুন দেকিনি? কিন্তু তার গুলতি ট্যারা বলে প্রতিবার ঝুলন্ত বাদুড়ের পাঁচইঞ্চি বাঁদিক দিয়ে ঢিল উড়ে চলে যায়৷ তো কাদু বাদুড়ের দেখা না পেলে আমার দিকে তাক করেই গুলতি হাঁকড়ে দেয়; প্রথম ক-দিন ব্যাপারটা হতে আমি সতর্ক হয়ে গেছি৷ পাতার আড়ালে থাকি যাতে সহজে চোখে না পড়ে৷

যাই হোক এইসব পাঁচকথা শুনিয়ে আপনাদের কান পাকিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য আমার নেই মশাই৷ আর আমার কথা আপনাদের ভালো লাগবেই বা কেন? আপনাদের আদিখ্যেতা কোকিল নিয়ে, বুলবুলি নিয়ে, কাকাতুয়া নিয়ে… কে আপনাদের গায়ক বলে গেছেন—ও কোকিলা তোরে শুধাই রে/ সবারই তো ঘর রয়েছে, কেন রে তোর বাসা কোথাও নেই রে?

তা মশাই অন্যের বাসায় ফোঁপরদালালি করে যার দিন কাটে সে নিজের বাসা বানাতেই বা যাবে কোন দুঃখে? এই আমাকেই দেখুন না, বাসা-ফাসার ধার ধারি না—কোটরে ঘাপটি মেরে থাকি৷ তাই বলে অন্যের বাসায় গিয়ে ডিম পাড়া? ছ্যা ছ্যা….

যাই হোক, আসল কথায় আসা যাক৷ গেল সপ্তাহের শনিবার রাতে ঘোষেদের দিদিমা মারা গেছেন৷ বুড়ি রাত আটটা নাগাদ দোতলার ব্যালকনিতে বসে মনের সুখে দোল খাচ্ছিলেন, এমন সময় পড়ে গিয়ে ভাঙা ইটে মাথায় আঘাত লাগে৷ নীচ থেকে ছানাপোনা ও নাতি ছুটে আসে৷ এবং এসে দেখেন বুড়ি মেঝেতে মরে পড়ে রয়েছেন৷ তারপরেই বাড়িতে ডাক্তার আসেন, তিনি বুড়িকে মৃত ঘোষণা করেন এবং কী যেন একটা লিখে দেন… কী যেন বলে সেটাকে আবার… অ্যাঁ… মনে পড়েছে—ডেথ সার্টিফিকেট৷

কী জ্বালা বলুন দেকিনি! মানুষ যে একটু শান্তিতে অক্কা পাবে তার জো নেই৷ মরতে গেলেও দলিল-দস্তাবেজ ধরে টানাটানি করবে৷ যাক গে, বুড়ির কাগজপত্র কিছুই ছিল না৷ পাড়ার লোকে মতিপিসি বলে ডাকত৷ তবে সে নামটা বুড়ি ধুমসো মোটা ছিলেন বলে কোনও হিন্দুস্থানি ফক্কর ছেলে দিয়েছিল৷ বুড়ির আসল নামটা বোধহয় দাঁতের সঙ্গেই ঝরে গেছিল৷ ফলে ‘মতিপিসি ঘোষ’ নামেই তার ডেথ সার্টিফিকেট লেখা হয়৷

বড়ছেলে নীলাম্বর মতিপিসির গতি করেন৷ খানিক কান্নাকাটি হয়; তার তুরন্ত পরেই সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে আকচা-আকচির শুরুয়াত৷ বুড়ি নাকি সব সম্পত্তি ছোটছেলে পীতাম্বরকে দিয়ে গেছেন৷ বড়ছেলের ভাগ্যে কাঁচকলা৷ উকিল একথা ঘোষণা করার পরে বড়ছেলে ও তার স্ত্রী আবার মাতৃশোকে মরাকান্না শুরু করে৷

তারপর সবাই মিলে (পীতাম্বর বাদে) চোখের জলে ভাসতে-ভাসতে দুটি কিছু মুখে দেয়৷ দুটির মধ্যে একটি হল হালকা করে নিরামিষ পোলাও ও অপরটি পাতলা করে মুর্গির ঝোল৷ তারপর যে যার নিজের ঘরে গিয়ে তেমনই চোখের জলে বালিশ ভেজাতে-ভেজাতে ঘুমিয়ে পড়ে৷ ফেলে দেওয়া মাংসের হাড়গোড় পাড়ার ঘেয়ো কুকুর ভুলু এসে মেরে দেয়৷ মোটামুটি শান্তিতেই মতিপিসি স্বর্গের পথে সেট আউট করেন৷

এখন কথা হল এসব কথা খামোখা আমি আপনাদের কাছে ফ্যাচকাচ্ছি কেন? আজ্ঞে কারণ আছে, এই স্ট্রিগিফরমেস অকারণে বকে মরে না, কুহু- কুহু ডেকে মাথা খায় না, শেখা বুলি না জেনে আউড়ে বীরত্ব জাহির করে না৷ সতর্ক সজাগ দৃষ্টি মেলে থাকে সারারাত, সবদিকে তার অতন্দ্র প্রহরা৷ এই ডাগর স্টিরিওস্কোপিক চোখে এমন অনেক কিছু ধরা পড়ে যা আপনাদের খুদে চিনা চোখে ফাঁকি দিয়ে যায়৷

মন দিয়ে শুনুন তবে—মতিপিসির মৃত্যু স্বাভাবিক মনে হলেও আসলে মাটিতে পড়ে মাথা ঠুকে মারা যাননি তিনি৷ তাকে খুন করা হয়েছে, পরিকল্পিত—ঠান্ডা মাথার খুন৷ যার একমাত্র আই উইটনেস এই শর্মা৷ এবং এই মার্ডার মিস্ট্রির জটই একটু-একটু করে খুলব আমি৷ দেবীও অর সাজ্জানও, দিল থামকে বইঠিয়ে—আউর শুনতে রহিয়ে, মতিপিসির মৃত্যু রহস্য৷

এবারে দেখুন—যে-কোনও খুনে তিনটে দরকারি এসপেক্ট থাকে; খুন কীভাবে হল, কেন হল এবং কে করল? ইংরেজিতে বললে হাউ, হোয়াই অ্যান্ড হু৷

চাইলে এই তিনটে প্রশ্নের উত্তর আমি এখনই আপনাদের বলে দিতে পারি; ওই যে বললাম, আমার চোখে সবই জলের মতো পরিষ্কার৷ কবে আপনি স্কুল থেকে ফেরার পথে চাপতে না পেরে প্যান্টে ইয়ে করে ফেলেছিলেন, কবে আলসেমি লাগছিল বলে দাঁত মাজেননি, শীতকালে কবে চান না করেই গায়ে জল ছিটিয়ে বেরিয়ে এসেছেন বাথরুম থেকে—সব, সবই চাইলে ফাঁস করে দিতে পারি; কিন্তু না, ডাগর চোখের মতো নধর পেটও আছে আমাদের৷ ভেবেছেন ইঁদুর সাবড়ে ফুলেছে? উঁহু… আপনাদের সব খতরনাক সিক্রেট লক করা আছে ওখানে৷ একটু পিছনে লেগেছেন কী নাগাড়ে উগড়ে দেব—এই বলে রাখলাম৷

গল্পের শেষে এই মার্ডার মিস্ট্রির সমাধান আমিই বলে দেব, তবে তার আগে একটু সুযোগ দেব আপনাদের৷ মাথাটা খেলান, দেখা যাক বুদ্ধির দৌড়ে আপনি এগিয়ে নাকি এই উল্লু…

আগেই বলেছি মতিপিসির দুই ছেলে—নীলাম্বর ও পীতাম্বর, তাদের আবার দুই স্ত্রী মানসী ও কণিকা৷ এই রইল চার মার্ডার সাসপেক্ট৷ এছাড়া রয়েছে বাড়ির কাজের লোক নিমাই, গদাধর ও বাসন্তী৷ বাসন্তী রান্নাবান্নার কাজে সাহায্য করে, ঘরদোর ঝাঁট দেয়, পাখা পরিষ্কার করে ও দুপুরবেলা ছাদে উঠে পায়রাদের খেতে দেয় (গা জ্বলে যায়)৷

নিমাই লোকটা মন্দ নয়, সবসময় মাথা হেঁট করে থাকে, চোখে খুব একটা ভালো দেখে না (হেঁহেঁ), তবে বাজারে গিয়ে দরাদরিটা ভালো বোঝে, যাকে বলে বারগেন৷ এছাড়াও সে নীলাম্বর ও পীতাম্বরের খিদমত খাটে৷ মতিপিসি বেঁচে থাকতে দরকারে-অদরকারে তাকেই ডেকে পাঠাতেন৷ সেদিন রাতে (মানে যেদিন মতিপিসি বেবাক মরে গেলেন আরকী) সেদিনও তিনি এক গ্লাস জল চেয়ে পাঠিয়েছিলেন নিমাইকে৷ সে জল নিয়ে এসে পিসির সামনের টুলে রেখে চলে যায়৷ কথা কিছু হয় না৷ আধঘণ্টা পরে উপর থেকে ভারী কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে সেও সবার সঙ্গে দৌড়ে উপরে আসে৷

এরপর হল গদাধর৷ তাগড়াই পেটানো চেহারা৷ প্রধান কাজ বাড়ি আর গ্যারেজ পাহারা দেওয়া, মাঝেমধ্যে গাড়ি চালিয়ে বাবু-বিবিদের এদিক- ওদিক ঘুরতে বা কাজে নিয়ে যায় সে৷ মতিপিসির মৃত্যুর সময় একতলায় গাড়ির পাশে বসে ওয়াকম্যানে কালোয়াতি গান শুনছিল বলে কোনও শব্দ শুনতে পায়নি সে৷

মতিপিসি যে সমস্ত সম্পত্তি পীতাম্বরকে দিয়ে গেছেন সেকথা একমাত্র উকিল ছাড়া আর কেউ জানত না৷ ফলে মোটিভ যদি সম্পত্তির লোভও হয় তাহলেও কড়া কোনও সাসপেক্ট পাওয়া যাচ্ছে না৷ দুই বউয়ের সঙ্গে পিসির সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না৷ তবে আমার নিশাচর চোখের অভিজ্ঞতা বলে এই গল্প প্রায় সব সংসারেই; এমনকি আপনাদের মেগাসিরিয়ালের সংসারেও চলে৷

(এইখানে একটা কথা জানিয়ে রাখি, এই ঘটনাটা যে আমি দেখতে পেয়েছি তার একটা কারণ ওই মেগাসিরিয়াল৷ সন্ধে সাতটা থেকে মিত্রদের দোতলার পাশে আতা গাছে বসে আমি জানলা দিয়ে ‘রাত জাগা চোখ’ সিরিয়ালটা দেখে থাকি৷ কিন্তু সেদিন মিনসেগুলো জানলা বন্ধ রেখেছিল বলে আমি ঘোষেদের জানলায় চোখ রাখি৷ মহা-পর্ব বলে কথা, না দেখলে চলে? তবে মহা-পর্বের বদলে মড়াপর্ব চোখে পড়বে তা আর কে জানত!)

যাই হোক, সাতজন সাসপেক্ট ছাড়া বাড়িতে আর ছিল বলতে নীলাম্বরের ছেলে অনির্বাণ৷ তার বয়সে সবে বারো পেরিয়েছে৷ তবে সে নেহাতই ছোকরা এবং ঠাকুমার চোখের মণি বলে সাসপেক্ট লিস্ট থেকে তাকে বাদ দিলেও চলে৷

এবার আসি সেদিন রাতের কথায়৷ মানে যেমন-যেমন দেখেছিলাম তেমনই বলে যাচ্ছি৷ মন দিয়ে শুনুন৷

সন্ধে ঠিক সাড়ে সাতটা নাগাদ গাড়িতে করে বাড়ি ফেরে নীলাম্বর৷ সে দরজায় গিয়ে বেল বাজায়, গাড়ি চালিয়ে খিদে পেয়েছিল বলে মোড়ের দোকানে কচুরি-জিলিপি খেতে যায় গদাধর৷ দরজা খুলে দেয় অনির্বাণ, তারপর ক্যাপ বন্দুক ও বাইনোকুলারের (সবার তো আর বাইনোকুলার ভিশন হয় না) জন্যে বাপের কাছে বায়না করে৷ ভুলভাল বুঝিয়ে ম্যানেজ করে নীলাম্বর৷ তারপর ঘরে ঢুকে মানসীর সঙ্গে দু-চারটে কথা বলে বাথরুমে ঢুকে যায়৷

বাথরুম থেকে বেরোয় আটটা বাজতে দশ নাগাদ৷ ঠিক সেই সময়েই গদাধর জিলিপিতে কামড় দিতে-দিতে গাড়ির কাছে ফিরে আসে ও কালোয়াতি গান চালিয়ে শুনতে থাকে৷ নীলাম্বর ততক্ষণে খেতে বসেছে৷ একটা রুটি হাতে তুলে মানসীকে দেখিয়ে সে বলে, ‘এঃ! একি! তেকোনা রুটি! গোল হয়নি৷’

মানসী মুখ বেঁকিয়ে বলে, ‘পরোটা ভেবে খেয়ে নাও৷’

নীলাম্বর আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়ায় মন দিতে যায় এবং ঠিক সেই সময়ে দোতলার বারান্দায় কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পায়৷ খাওয়া ফেলে ‘কী হল, কী হল’ বলতে বলতে দু-জনে তড়িঘড়ি উপরে ছুটে যায় এবং গিয়ে দেখে মতিপিসি দোলনার নীচে পড়ে আছে৷ নাকের তলায় হাত রেখে মানসী বুঝতে পারে বুড়ি খতম৷ মা-বাবাকে উপরে যেতে দেখে অনির্বাণও দৌড়ে উপরে চলে আসে ও দরজার কাছে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে৷

যে চারজনের কথা বললাম তার মধ্যে তিনজনের স্পষ্ট অ্যালিবাই আছে, মানে করসপনডেন্ট অ্যালিবাই আরকী৷ নেই শুধু গদাধরের৷ সে কচুরি খেয়ে এসে গান শুনছিল—এই বয়ানটা তার নিজের৷ সত্যি বলেছে কি না তা জানে শুধু উপরওয়ালা৷ উপরওয়ালা বলতে এই শর্মা আরকী… গাছের মগডালে বসেছিলাম কিনা…

এরপর আসছে পীতাম্বর ও তার স্ত্রী কণিকা৷ পীতাম্বরের সরকারি অফিস শনিবার ছুটি থাকে৷ বিকেল সাড়ে চারটেয় সে ক্লাব থেকে তাস খেলে ফেরে৷ সেইসময়ে কণিকা ছাদে গিয়ে হাওয়া খাচ্ছিল এবং গালে সিঁদুর মেখে পাউট করে সেলফি তুলছিল—ক্যানডিড শট৷ ছাদ থেকে পীতাম্বরকে ফিরতে দেখে সে নীচে নেমে আসে৷ নামতে-নামতে যে সেলফিগুলোতে তাকে খেদি-পেঁচি বা মোটা দেখাচ্ছিল সেগুলো ডিলিট করে৷

বাড়ি ফিরে পীতাম্বর কম্পিউটারে গেম খেলে, অনির্বাণ এসে পাশে বসে থাকে৷ কণিকা রান্নাঘরে গিয়ে মানসীকে রুটি বানাতে সাহায্য করে৷ সাতটা দশ নাগাদ কম্পিউটার বন্ধ করে দেয় পীতাম্বর এবং নিমাইকে খুঁজতে বের হয়৷ সাতটা দশ থেকে সাড়ে সাতটা অবধি পীতাম্বর ও নিমাই কোথায় ছিল তা আমি জানি না৷ তবে হ্যাঁ, সওয়া সাতটা নাগাদ বাড়ির ভিতর থেকে সুপুরি কাটার আওয়াজ আসে৷ আমি অতটা মন দিয়ে শুনিনি৷ আপনারা হলে শুনতে পেতেন না৷ তবে যেহেতু আপনাদের থেকে আমার শোনার ক্ষমতাও দশগুণ বেশি তাই কানে এসেছিল আরকী৷

সারা দুপুর ঘুমিয়ে ছ-টা নাগাদ ঘুম থেকে ওঠে বাসন্তী৷ তারপর তার নিজস্ব সেলাই মেশিনে সেলাই করতে বসে৷ সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ মতিপিসির চিৎকার শুনে থতমত খেয়ে তার আঙুলে সুচ ঢুকে যায়৷ তারপর বুঝতে পারে পিসি নিমাইকে ডাকছে জলের জন্যে৷ ফলে সেই ডাকে কান না দিয়ে কণিকার কাছে যায় ব্যান্ডেড চাইতে৷ কণিকা তখন রান্নাঘর থেকে সবে বের হচ্ছে, কণিকার সঙ্গে ঘরে ঢুকে সে হাতে ব্যান্ডেড লাগায় এবং সেইখানেই বসে গল্প করতে থাকে৷

পীতাম্বর তখনও ফেরেনি৷ নিমাই সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসে৷ তাকে নীচে নামতে কণিকা ও বাসন্তী দু-জনেই দেখে৷ আটটা বাজার দশ মিনিট আগে আবার কণিকার ঘরে পীতাম্বরকে দেখা যায়৷ মাথা যন্ত্রণা করছে বলে সে পাশের ঘরে গিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে৷

এই সাতজনের মধ্যে ছ-জন ঠিক আটটার সময় দোতলার বারান্দা থেকে একটা শব্দ শুনতে পায়৷ সেটা যে মতিপিসির পড়ে যাওয়ার শব্দ তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷ শুনে প্রায় একসঙ্গেই সবাই উপরে ছোটে৷ বাসন্তীর চেহারা রোগাপাতলা বলে সেই সবার আগে উপরে পৌঁছায়৷ তারপর নীলাম্বর ও মানসী, তারপর কণিকা ও অনির্বাণ৷

হইচই শুনে বিছানা থেকে উঠে আসে পীতাম্বর, নীচ থেকে ‘কী হয়েছে’ বলে হাঁক পাড়ে৷ কিন্তু উপরে উঠতে খানিক দেরি হয় তার৷ এরপর উপরে আসে নিমাই৷ সে চোখে কম দেখে বলে ধরে-ধরে সিঁড়ি দিয়ে ওঠে৷

পীতাম্বরের পরে সব শেষে গদাধর উপরে আসে৷ তখনও মেঝে থেকে তোলা হয়নি পিসিকে৷ সে উপরে এসে শোনে দোল খেতে-খেতে উৎসাহের বশে একটু বেশি দোল খেয়ে দোলনা থেকে ছিটকে পড়েন মতিপিসি, এবং সঙ্গে-সঙ্গে কপালে চোট পেয়ে পিসিমার পঞ্চত্বপ্রাপ্তি হয়েছে৷ গদাধর পিসির মোটা দেহখানি তুলে ধরে, দেবালয়ে প্রদীপ না করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল তার৷ কিন্তু নীলাম্বর তাকে থামিয়ে দিয়ে হালকা কাঁদো-কাঁদো গলায় বলে, ‘মা আর নেই৷’

অমনি হুলস্থুল কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়৷ এ ওর ঘাড়ে ঢলে পড়ে৷ অনির্বাণ কারওর ঘাড় না পেয়ে মাটিতেই বসে পড়ে৷

বারান্দাটা মোটামুটি অন্ধকারই ছিল বলা যায়৷ বারান্দার ঠিক পাশেই সোডিয়াম ভেপারের ল্যাম্প খাড়া ছিল৷ তার আলো দোলনার খানিকটা পাশ অবধি এসে পড়েছিল৷ দোলনাটা দূর থেকে অন্ধকারে দেখা যাচ্ছিল না৷ তাও একমাত্র আমি বলেই দেখতে পেয়েছিলাম আততায়ীকে৷ সে শক্ত কিছু দিয়ে মতিপিসির কপালে আঘাত করে এবং তার ফলেই মাটিতে পড়ে গিয়ে মারা যান পিসি৷

এই হল সমস্ত ঘটনার বিবরণ৷ মানে আমি যতটুকু দেখেছি বা শুনেছি আরকি৷ একফোঁটা জল মেশাইনি৷ যেটুকু আমার দেখা-শোনার বাইরে আগ বাড়িয়ে সেটা বলতে যাইনি৷ খুনি একজন হতে পারে, আবার সাসপেক্টদের মধ্যে থেকে দু-জন যুক্তি করে খুন করেছে তাও হতে পারে৷ তবে সেক্ষেত্রে দু-জনেরই ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকতে হবে৷

ভালো করে মনে রাখবেন—আটটার সময় উপর থেকে আওয়াজ শোনা গেছিল৷ তার মানে এই নয় যে, খুনটা আটটাতেই হয়েছে৷ এমনও হতে পারে আততায়ী খুন করেছে অনেক আগে৷ যারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল তাদের কেউই ডাক্তার নয়, এবং ডাক্তার আসার পরেও মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছে বলে পোস্টমর্টেম হয়নি৷

বুড়ি দুপুরে দোতলার ঘরেই ঘুমিয়েছিলেন৷ সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নিমাইয়ের আনা চা খেতে-খেতে বিছানায় বসেই সকালের কাগজ পড়েন৷ আগে ছাদে গিয়ে হাওয়া খাওয়ার শখ ছিল৷ পায়ে বাত ধরতে ইদানীং ছাদে যেতে পারেন না৷ বারান্দায় বসেই দোল খান৷ সেভাবেই দোল খাচ্ছিলেন ছ-টা থেকে৷

অন্তত সাড়ে সাতটা অবধি যে তিনি বেঁচেছিলেন সেটা জলের জন্যে চিৎকারে স্পষ্ট৷ অর্থাৎ সাড়ে সাতটা থেকে আটটায় শব্দ শোনা যাওয়ার আগে অবধি আধঘণ্টায় কেউ মাথায় বাড়ি মেরে খুন করে তাকে৷ এবং আমরা আবার এসে উপস্থিত হই সেই পুরনো প্রশ্নে—হাউ, হোয়াই অ্যান্ড হু?

আপনারা যদি এর মধ্যে উত্তর পেয়ে গিয়ে থাকেন তাহলে তো কথাই নেই৷ এই স্ট্রিগিফরমেস আপনাদের কাছে হার স্বীকার করছে৷ কিন্তু তা যদি না হয়, তাহলে এরপর থেকে আর উল্লু-ফুল্লু বলে গালি দেবেন না৷ সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মীর বাহন বলে কথা৷

গোটা মানব সমাজের পতনের মূল কারণ হল, কাকে সম্মান দেওয়া উচিত আর কাকে না, সেটা বুঝতে না পারা৷ বা বুঝেও না বোঝার ভান করা৷ এই যেমন পায়রাকে আপনারা দানা খাওয়ান, টিয়াপাখিকে ছোলা খাওয়ান, বাদুড়— যে কিনা পাখিই নয়—তাকে নিয়েও সুপারহিরো বানিয়ে ফেলেন; কাকাতুয়া দেখলে ‘সোনা বল, হরি বল, হ্যানা বল, ত্যানা বল’ বলে এমন আদিখ্যেতা শুরু করেন যে গা জ্বলে যায়৷

এদিকে আমরা পেঁচারা, যারা কিনা আপনাদের থেকে কুড়িগুণ বেশি দেখি, দশগুণ বেশি শুনি, নিজেরা না ঘুরেই দুশো সত্তর ডিগ্রি পিছনে মাথা ঘোরাতে পারি, দিনের বেলা ডেকে-ডেকে জ্বালাই না, ইঁদুর খেয়ে আপনাদের অন্ন আর কাগজপত্র রক্ষা করি, তাদের বেলা উদাস অবজ্ঞা!

যাকগে, এসব কথা বলতে শুরু করলে ভোর হয়ে যাবে আর তখন আমাকেও কোটরে ঢুকতে হবে, তাই এইবেলা শেষ করি আমার মার্ডার মিস্ট্রি৷ আপনাদের বুদ্ধিতে কুলায়নি মুখ দেখেই বুঝতে পারছি৷ অগত্যা এই পেঁচার রাত জাগা চোখই ভরসা৷

আপনারা খুনিকে ধরতে পারেননি তার বেশ কয়েকটা কারণ আছে৷ প্রথম কারণ হল আপনাদের ঘুরতে না পারা মাথায় এটা আসেনি যে ঠিক কোন জায়গাটায় আলো ফেললে রহস্যের উন্মোচন হবে৷ এখনও বুঝলেন না? হ্যাঁ, বারান্দায় আলো কীভাবে পড়েছিল সেটাই এই ঘটনার চাবিকাঠি৷

ভেবে দেখুন, বলেছিলাম দোলনার উপরে কোনও আলো ছিল না, ভেপারের আলো তার ঠিক পাশে এসে পড়েছিল৷ বুড়ি এমন ভাবেই দোলনা টাঙিয়েছিলেন যাতে দোল খেলে চোখে আলো না লাগে৷ ভাবছেন আলো পড়ার সঙ্গে খুনের কী সম্পর্ক? বলছি, তিষ্ঠ….

আপনাদের দ্বিতীয় ভুল হল এটা ভেবে নেওয়া যে খুনটা আটটার আগে হয়েছে৷ আজ্ঞে না, রাত আটটায় প্রায় সবার অ্যালিবাই থাকলেও খুন ঠিক আটটাতেই হয়েছে৷ কিন্তু সেই সঙ্গে এও সত্যি যে খুনের সময় খুনি বারান্দায় উপস্থিত ছিল না৷ ছিল উলটো দিকের বাড়ির ব্যালকনিতে৷ লোকটাকে দেখেই হুট করে আমার মুখ দিয়ে হুট (hoot) বেরিয়ে যাচ্ছিল৷ কোনওরকমে নিজেকে সামলে নিই, কান খাড়া করে স্পষ্ট শুনতে পাই সে বিড়বিড় করে বলছে, ‘‘অনেকদিন আমার হাট টেকে বেঁচেছিস, আজ টোর নিস্টার নেই…’’

হ্যাঁ, কাদু৷ মানে আমাদের সেই শশাঙ্ক, প্রদ্যোত এবং তমোজিৎ—অল ইন ওয়ান৷ হাতের গুলতিতে শক্ত ঢিল বেঁধে সে সজোরে ছুঁড়ে মারে উলটোদিকের বারান্দা লক্ষ করে৷ এবং সেই ঢিলই গিয়ে লাগে পিসির কপালে৷ ঢিলের বাড়ি খেয়ে পিসি দোলনা থেকে পাকা ফলের মতো খসে পড়েন ও মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা ইটের উপরে সজোরে মাথা ঠুকে যায়৷ যাকে বলে দুই ঢিলে একপাখির প্রাণ বেরিয়ে যায়৷ পিসি অক্কা পান ও নীচ থেকে আওয়াজ পেয়ে তার নাতি ও ছানাপোনারা ছুটে আসেন৷

কিন্তু এটা কীরকম হল? কাদু কেন খুন করল পিসিকে? তার নিজের কী স্বার্থ ছিল পিসির মৃত্যুতে? বুঝলেন না? বেশ বুঝিয়ে দিই৷

আজ সন্ধেয় ‘রাত জাগা চোখ’ দেখার আগে আমার বেজায় খিদে পেয়েছিল৷ চারপাশে তাকিয়ে দেখি (চারপাশ বলতে পৌনে এক কিলোমিটার আরকী…) একটা চামচিকে গাছের ডালের ভিতরে লটকে রয়েছে৷ আমরা পেঁচারা সাধারণত খাবার-দাবারের কোনও অংশ ফেলি না৷ আস্ত খেয়ে ফেলি৷ কিন্তু এ চামচিকেটাকে আমি খাই না৷ ঘাড় মটকে মুখে করে নিয়ে কোটরের ভিতরে এনে রাখি৷

ওই রাত আটটা নাগাদ কাদু বাদুড় মারতে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়৷ বুড়ি উলটোদিকের বারান্দায় তখন আরামসে দোল খাচ্ছেন৷ আমি ধীরে-সুস্থে চামচিকেটাকে বের করে আনি, তারপর নখে ধরে সেটাকে নিয়ে যাই সোডিয়াম ভেপারের আলোটার কাছে৷ তারপর চামচিকে ব্যাটাকে আলোর সামনে উলটো করে ধরে ঝুলিয়ে দিই৷ সেই ছায়া গিয়ে পড়ে ঘোষেদের বারান্দায় দোলনার ঠিক পাশে৷ আরও প্রিসাইসলি বলতে গেলে, ঠিক পাঁচ ইঞ্চি পাশে৷

অল্প আলোতে কাদু ছায়াকে বাদুড় বলে ভুল করে ও গুলতি হাঁকড়ে দেয়৷ ট্যারা গুলতিতে ঢিল পাঁচ ইঞ্চি বেঁকে যায় আগেই বলেছিলাম৷ কাদু দেখতেও পায়নি বুড়ি পাশেই দোল খাচ্ছে; কিন্তু আমি পেয়েছিলাম—এমনি-এমনি তো আর নিশাচর হইনি! ঢিল সটান গিয়ে লাগে বুড়ির কপালে৷ বুড়ির রামনাম সত্য হ্যায় হয়ে যায়৷ আওয়াজ শুনে কাদু বুঝতে পারে কিছু একটা ঘটেছে৷ সে জলদি ঘরে ঢুকে পড়ে৷ ছানাপোনারা অন্ধকারে ওইটুকু ঢিল খেয়াল করে না৷ তারা ভাবে দোলনা থেকে পড়ে বুড়ি টেসে গেছে—দি এন্ড৷

হেঁহেঁ—প্ল্যানখানা মন্দ নয়, কী বলুন? কিন্তু মুশকিল হল আবার সেই মোটিভ৷ দেখতে পাচ্ছেন না মোটিভ? কানা নাকি? শনিবারের পর থেকে আর কাদুকে ট্যারা গুলতি নিয়ে হামলা করতে দেখেছেন? এখন সে সন্ধেবেলা চুপচাপ ঘরে বসে বায়োলজি পড়ে৷

কী বলছেন? এইসব কথা পুলিশকে জানিয়ে দেবেন? হেঁহেঁ, ওই যে বললাম, আপনাদের সব সিক্রেট আমার পেটের ভিতরে চামচিকের বডির সঙ্গে লক করা আছে৷ মুখ খুলেছেন কী সব ফাঁস করে দেব৷ সুতরাং নিজের দায়িত্বে পুলিশের কাছে যাবেন৷

নাঃ, এতক্ষণ বকতে-বকতে খিদে পেয়ে গেল৷ ওই দেখুন, দেড় কিলোমিটার দূরে কলুপাড়ার নর্দমার পাশ দিয়ে এক ব্যাটা ইঁদুর পার হচ্ছে৷ ওহো! দেখবেন কী করে! আপনাদের তো আবার নাইট ভিশন নেই৷ যাই, গিয়ে ধরি ব্যাটাচ্ছেলেকে৷ ঘাড়টা মটকে দিই৷ ততক্ষণ আপনারা লক্ষ রাখুন আবার কেউ ঢিলটিল ছোঁড়ে কি না৷ কী বললেন? পারবেন না? কেন, কানা নাকি? হুঁহ…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *