কাচ
কাচ অতি কঠিন, নির্ম্মল ও মসৃণ পদার্থ এবং অত্যন্ত ভঙ্গপ্রবণ অর্থাৎ অনায়াসে ভাঙ্গে। কাচ স্বচ্ছ, এই নিমিত্ত উহার মধা দিয়া দেখিতে পাওয়া যায়। ঘরের মধ্যে থাকিয়া জানালা ও কপাট বন্ধ করিলে অন্ধকার হয় এবং বাহিরের কোন বস্তু দেখিতে পাওয়া যায় না। কিন্তু সারসী বন্ধ করিলে পূর্ব্বের মত আলো থাকে ও বাহিরের বস্তুও দেখা যায়। তাহার কারণ এই যে, সারসী কাচে নিৰ্মিত; সূর্য্যের আভা কাচ ভেদ করিয়া আসিতে পারে কিন্তু কাষ্ঠভেদ করিতে পারে না।
বালি ও এক প্রকার ক্ষার এই দুই বস্তু একত্র করিয়া অতিশয় অগ্নির উত্তাপ লাগাইলে উভয়ে মিশ্রিত হইয়া গলিয়া যায় এবং শীতল হইলেই কাচ হয়। বালি যত পরিষ্কার, কাচ সেই অনুসারে পরিষ্কার হয়। কাচে লাল, কাল, সবুজ, হলিদা প্রভৃতি রঙ্ করে, রঙ্ করিলে বড় সুন্দর দেখায়। কাচ অনেক প্রয়োজনে লাগে। সারসি, আরসি, সিসি, বোতল, গেলাস, ঝাড়, লণ্ঠন, চসমা,দূরবীক্ষণের মুকুর ইত্যাদি নানা বস্তু কাচে প্রস্তুত হয়।
কাচ কোন অস্ত্রে কাটা যায় না; কেবল হীরাতে কাটে। হীরার সূক্ষ্ম অগ্রভাগ কাচের উপর দিয়া টানিয়া গেলে একটা দাগ পড়ে; তর পর জোর দিলেই দাগে দাগে ভাঙ্গিয়া যায়। যদি হীরার সূক্ষ্ম অগ্রভাগ স্বাভাবিক থাকে তবেই তাহাতে কাচ কাটা যায়। আর যদি হীরা ভাঙ্গিয়া অথবা আর কোন প্রকারে উহার অগ্র ভাগ সূক্ষ্ম করিয়া লওয়া যায়, তাহাতে কাচের গায়ে আঁচড় মাত্র লাগে, কাটিবার মত দাগ বসে না।
কাচ প্রস্তুত করিবার প্রণালী প্রথম কিরূপে প্রকাশিত হয় তাহা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। তব্বি বয়ে অনেকেই অনেক প্রকার কম্পনা করিয়া গিয়াছেন। কিন্তু তাহাতে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করিতে পারা যায় না। প্লীনি নামে এক রোমীয় পণ্ডিত কহিয়াছেন ফিনিসিয়া দেশীয় কতকগুলি বণিক জলপথে বাণিজ্য করিতে যাইতেছিল। সিনিয়া দেশে উপস্থিত হইলে ঝড় তুফানে তাহাদগকে সমুদ্রের তীরে লইয়া ফেলে। বণিকেরা তীরে উঠিয়া বালির উপর পাক করিতে আরম্ভ করিল। সমুদ্রের তীরে কালয় নামে এক প্রকার চার গাছ ছিল; উহারি কষ্ঠ আহরণ করিয়া তাহারা আগুন জ্বালিয়াছিল। বালি ও কালয়ের ক্ষার একত্র হওয়াতে অগ্নির উত্তাপে গলিয়া কাচ হইল। উহা দেখিয়া ঐ বণিকেরা কাচ প্রস্তুত করিতে শিথিল।
যেরূপে যে দেশে কাচের প্রথম উৎপত্তি হউক, উহা বহুকালাবধি প্রচলিত আছে সন্দেহ নাই। প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে কাচের উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। মিসর দেশেও তিন হাজার বৎসর পূর্ব্বে কাচের ব্যবহার ছিল তাহার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে।