1 of 2

কাচপোকার দিন

কাচপোকার দিন

বৈশাখের দুপুরের একটা নিজস্ব গায়ের গন্ধ আছে। সে-গন্ধ সাবান, পাউডার কি আতরের গন্ধের মতো নয়। এ-গন্ধ কোথাও খুঁজে ফিরতে হয় না। এ-গন্ধ আপনিই ভাসে। নিকোনো-দাওয়ার ওপর হলুদ কাঁঠাল-পাতা ঝরে পড়ে। ধুলো ওড়ে। বেতবনে সড়সড় শব্দ ওঠে। বসন্তবৌরি পাখি কচি বাঁশের সবুজ পাতার দোলনা ছেড়ে উড়ে যেতে যেতে ডেকে ওঠে। যখন হাওয়া বয়। টুঙ বাগানে পাতা নড়ে। এমনি করে একটু একটু করে যখন আকাশে, বাতাসে, রোদ্দুরে, বসন্তবৌরী পাখির ডানায় এই গন্ধ ছড়িয়ে যেতে থাকে, ছড়িয়ে যেতে যেতে, এক সময় হঠাৎ সেই সুগন্ধ তখন সমস্ত সত্তাময় মাখামাখি হয়ে যায়।

রাঙামাটি পাহাড়ের উত্তরে, মেচ সর্দারের বাড়ির মাটির ঘরের দাওয়ায় বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসেছিলাম। বিন্তি সখী পাতিয়েছে মেচ সর্দারের মেয়ের সঙ্গে। সখী তো নয়, হাসন-সখী। খালি হাসে। মিটি মিটি হাসে। হাতেবোনা মেখলার নীচে দুটি নরম সুডোল পবিত্র পা দেখা যায়। খয়েরি-রঙা চুল একমাথা। তাতে কাঠের কাঁকই গোঁজা। সমস্ত শরীরের রং তামার মতো। ওর চোখের দিকে চেয়ে, ওর হাসতে-থাকা গালের টসটসে টোলের দিকে তাকিয়ে ভালোলাগায় মরে যাই। অবাক হয়ে বিন্তির হাসন-সখীর দিকে চেয়ে থাকি। বিন্তির কথা মনেও পড়ে না।

মেচ সর্দারের বউ দাওয়ার বাইরে কাঁঠালতলায় বসে সারাদুপুর তাঁত বসিয়ে মেখলা বোনে। আরও কত কী বোনে। মেচ সর্দার পোড়া-মাটির মতো মুখে সহস্র অভিজ্ঞতার ফ্রেসকোর আঁকিবুকি নিয়ে বসে বসে হুরুৎ-গুরুৎ করে হুঁকোয় টান দেয়।

বেলা পড়ে আসে। মেঠো-ইঁদুরের গন্ধ ডানায় মেখে চতুর চিল, চৈতালি ফসলের মাঠের ওপরে ঘুরে ঘুরে ওড়ে। ঝরনাতলার শব্দ মাথার মধ্যে চুড়ির মতো বাজতে থাকে। বিন্তি আর হাসন-সখীকে বাঁশের চিকের চিরুনির আড়ালে চা করতে ব্যস্ত দেখতে পাই।

মেচ সর্দার মজা সুপারি আর পান এগিয়ে দেয় আবার। বিড়বিড় করে বলে গুয়া-পান। আবার বলি, না না। হাসি। হেসে বলি, পরে। আসলে বলতে পারি না যে, মজা-সুপারির গন্ধে বমি আসে।

আজ আমরা সাত-বোশেখির মেলায় গেছিলাম। আজ সাত বৈশাখ। সমস্ত সকালটা চোখের সামনে একটা রঙিন স্বপ্নের মতো ভাসছে।

আলোক-ঝারি পাহাড়ে মায়ের থান। সেখানে পুজো হয়। আগের রাত থেকে সাঁওতাল, মেচ এবং স্থানীয়রা এসে জড়ো হতে থাকে পাহাড়ের নীচে। মায়ের থানের পথে পথে। কেউ কবুতর নিয়ে বসে থাকে, কেউ ছাগল নিয়ে। কেউ বা আনে জবাফুলের মতো ঝুঁটিওয়ালা মোরগ। এই দিনটিতে আলোক-ঝারি পাহাড়ের সমস্ত বন-মোরগেরাও বুঝি বুঝতে পারে যে, দিনটি কোনো বিশেষ দিন। থেকে থেকেই তারা উলু দিয়ে ওঠে। এই পাহাড়েই একদিন আমি একটি পাতা-ঝরা শিমুল গাছে লাল ফুলের মতো অগুনতি মুরগি ফুটে থাকতে দেখেছিলাম। কালো শুকনো ডালে মোরগ-মুরগিদের লাল-হলুদের সমারোহ এমন করে চোখ ও মনকে অবাক করেছিল যে, বলার নয়।

হলুদ শাড়িতে মেয়েরা চলেছে। ওরা সকালে চান করেছে। কলকল করতে করতে বৈশাখের নতুন-পাতা-গজানো জঙ্গলে-পাহাড়ে ওরা কলকল করতে করতে চলেছে। বাচ্চারা চলেছে হইহই করতে করতে। পেছনে পেছনে গাঁয়ের কালো কি লাল কুকুর চলেছে। ওরাও বুঝি পুজো চড়াবে মহামায়ার থানে। সকালের মিষ্টি রোদ এসে ফুলে-পাতায় ভরা আঁকাবাঁকা পথের ফাঁকে ফাঁকে জাফরানি-কালোয় মেশানো গালচে বিছিয়েছে। একটা কুকুর হঠাৎ বাঁ-দিকের খাদে, পাতার সঙ্গে মিশে-থাকা একটি সোনারঙা কোটরা হরিণের বাচ্চার দিকে চোখ পড়তে লাফিয়ে দৌড়ে গেল। মেয়েটি বলল, লালু আ লালু—আ—আ—আ। অমনি লালু সংযমের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে দৌড়ে ফিরে এল। ফিরে এসে লালায়-ভেজা গোলাপি জিভটা বের করে আবার দুলকি চালে চলতে লাগল। জিভ দিয়ে টস টস করে লাল গড়াল।

লালু বলল, হ্যা:—হ্যা:-হ্যা:-হ্যা:।

শিশুগাছের পাতার আড়াল থেকে একটি বাঁদর ছানা হঠাৎ একটি আপেলের মতো মুখ বের করে ভেংচি কাটল, লালুর মালকিন বলল, ম—রণ।

লালু বলল, হ্যা:—হ্যা:-হ্যা:।

এমনি করে ওরা সকলে দুলতে দুলতে, হলুদ শাড়িতে ঢেউ তুলে, খাদে, পাহাড়ে প্রতিধ্বনি তুলে, হাসিতে ফুলতে ফুলতে, ফুল তুলতে তুলতে, উলের বলের মতো মন খুলতে খুলতে, এক সময় মায়ের থানে পৌঁছে গেল।

সে জায়গাটা অমনি যেন সুর-ছড়ানো পাতাবাহারের ঝাড় হয়ে গেল। হাসি, পুরোহিতের গম্ভীর মন্ত্র, কালোপাথরে কবুতরের রক্ত, সাঁওতাল ছেলের নিকষ কালো চুল, মেচ মেয়ের ফিকে-হলুদ, বাতাবি-বুক, পাখির কিচির-মিচির, বাঁদরের হুপহাপ, কুকুরের ভু—ভু—এসব মিলে সমস্ত সকালটা আমার মনে একটা রঙিন ঝুমঝুমির মতো বাজতে লাগল।

হাসন-সখী আর বিন্তি আমার দিকে চেয়ে বলল, বাড়ি যাবি না?

আমি ওদের দুজনকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরে বললাম, আজ বাড়ি যাব না। আজ আমরা এই আলোক-ঝারির বনে ইচ্ছে করে হারিয়ে যাই। চ।

ওদের দুজনকেই বললাম, যাবি? এই, যাবি?

ওরা কেউ কথা বলল না। বিন্তি শুধু ছোঁওয়া-লাগা লজ্জাবতীর লতার মতো ভালো লাগায় বুজে এল। বিন্তি ওর পাখির মতন চিকন মুখ তুলে বলল—উঃ ম-ম-ম। না:। বাড়ি চল।

অতএব আমরা তিনজনে আবার মেচ সর্দারের বাড়ির পথ ধরলাম। বাড়ি ফেরার পথে জংলি কুল পাড়লাম, প্রজাপতি ধরলাম, কাচপোকার পেছনে দৌড়োলাম, ফিঙের পালক কুড়োলাম, তার পর উলের বলের মতো যে-মনটাকে খুলতে খুলতে পাহাড়ে চড়েছিলাম, সেই মনটাকেই গুটোতে গুটোতে ফিরে এলাম। সাত বোশেখির মেলা থেকে ফিরে এলাম।

বিন্তি বলল, নে বুদুস চা ধর। কী ভাবিস আকাশের দিকে চেয়ে? সবসময়? কার কথা ভাবিস?

হাসন-সখী চুল ঝাঁকিয়ে বলল, তোকে বলবে কেন?

তার পর হেসে বলল, তোর নিজের ভাবনা অন্য কাউকে দেখাস না রে বুদুস।

আমি মাথা নাড়লাম।

কেউ কি ইচ্ছে করলেই নিজের ভাবনা অন্যকে দেখাতে পারে?

বিন্তি বলল, তুই ঠিক জানিস যে, তুই মেলার ভিড়ে হারিয়ে যাসনি?

আমি হাসলাম, বললাম কী জানি রে! সেইটেই হয়তো ভাবছিলাম বসে।

বিন্তি বলল, কাব্যি করিস না। চল বিকেলে টুঙ বাগানে বেড়িয়ে আসি। যাবি?

লাফিয়ে উঠলাম। বললাম, সত্যি যাবি? আর তোর সখী?

সখী কথা না বলে আমলকী গাছের মতো সিধে দাঁড়িয়ে বাদামি চুল ঝাড়ল। তার পর, তার বুড়ো বাবার দিকে চাইল। বাবা কথা বলল না। তার হুঁকো বলল, হুরুৎগুরুৎ।

আমরা তিনজনে হাত ধরাধরি করে দৌড়োতে দৌড়োতে চিতল হরিণের তিনটি চঞ্চলছানার মতো লাফাতে লাফাতে লাল মাটির পথে ধুলো উড়িয়ে, ঝরে-পড়া লাল পাতা মাড়িয়ে, হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে একসময় টুঙ বাগানে এসে পৌঁছোলাম।

উঁচু উঁচু টুঙ গাছ। নীচটা অন্ধকার হয়ে আছে। ঝিরঝির করে ঝরনা ঝরছে ছায়ায় ছায়ায়, ছুমুক ছুমুক। এই ঝরনার পাশে রতুকাকা সোনাচিতা মেরেছিলেন। জায়গাটা কেমন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা। পচা-পাতার সোঁদা গন্ধ। জার্মান-জঙ্গলের অসভ্য সুবাস। উঁচু ডালে বসে একটি খয়েরি ঢাব পাখি ডাকছে ঢাব-ঢাব-ঢাব।

ডাকটা শুনে বিন্তি হাসল, বলল, ভাব-ভাব-ভাব।

আমি বললাম, কার সঙ্গে?

ও বলল, তা দিয়ে তোর দরকার কী?

রোদটা পড়ে গেছিল। সমস্ত টুঙ বাগানের উঁচু উঁচু ডালের পাতায় একটা জোলো সোনালি আভা লেগেছিল। দূরে স্নিগ্ধ নীল আকাশে লতাপাতার ফাঁকে ফাঁকে সন্ধ্যাতারার মিষ্টি মুখটি এক এক ঝিলিক দেখা দিয়েই মিলিয়ে যাচ্ছিল।

টুঙ বাগানে হাঁটতে হাঁটতে, সোঁদা মাটির গন্ধ নাকে নিতে নিতে আমার হঠাৎই মন খারাপ হয়ে গেল। মনে হতে লাগল, সমস্ত দিনের হলুদ উষ্ণতাটা কেমন ধূসর শীতে রূপান্তরিত হয়ে গেল।

বিন্তিকে বললাম, এখানে কেন এলি রে?

বিন্তি জবাব দিল না।

বিন্তির মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হল, বিন্তি যেন, কেমন অন্যরকম হয়ে গেছে। কালো ডুরে শাড়িটা টান টান করে পরেছে। গাছ-কোমর করে জড়িয়েছে শাড়িটা। বিন্তির নতুন নরম খোঁপাটা ওর ঘাড়ের ওপর লুটিয়ে আছে। বিন্তি ঘেমে গেছে। বিন্তি জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। বিন্তি কখনো আমার দিকে তাকায়নি। প্রায়ান্ধকারে চিতাবাঘের চোখের মতো জ্বলতে লাগল ওর চোখ।

বিন্তি বলল, এখানে এলাম একটি খেলা খেলব বলে।

হাসন-সখী এগিয়ে এল।

বাধো বাধো বাংলায় বলল, কী খেলা। কী খেলার বিন্তি?

বিন্তি বলল, একটা মজার খেলা। বলেই বিন্তি আমাকে একঠেলা দিয়ে সামনে সরিয়ে ওর সখীর পাশে দাঁড়াল। চোদ্দো বছরের বিন্তি চাবুকের মতো মুখ তুলে আমার দিকে চেয়ে বলল, বুদুস, আমাদের দিকে তাকা।

তাকালাম।

বিন্তি বলল, ভালো করে তাকা।

বললাম, তাকিয়েছি তো।

বিন্তি বলল, কী দেখছিস?

দুজনকেই দেখছি।

না। একজনকে দেখতে হবে।

তার মানে?

বিন্তি চুপ করে থেকে বলল, মানে নেই।

তার পরই বিন্তি বলল, আয় আমরা লুকোচুরি খেলি। তুই হারিয়ে যাবি, আর আমরা তোকে খুঁজব। যে তোকে আগে পাবে, তার হাত ধরে তুই বাড়ি ফিরবি। শুধু তারই হাত ধরে।

আমি বললাম, ভাগ এটা একটা কী খেলা?

বিন্তি বলল, একটা খেলা।

বললাম, আর যাকে খুঁজে পাব না?

সে পেছনে পেছনে আসবে। একা একা।

বললাম, বিন্তি, এখানে চিতাবাঘ আছে।

বিন্তি বলল, আছে তো আছে। তোর তাতে কী? তুই তো লুকিয়ে বসে থাকবি—খুঁজব তো আমরা। মরলে আমরা মরব। তোর তাতে কী?

তার পর বিন্তি আর হাসন-সখী পেছন ফিরে চোখ বন্ধ করে অনেকদূর এগিয়ে গেল বড়োরাস্তা ধরে। তার পর দাঁড়িয়ে পড়ে বিন্তি বলল, বুদুস তুই হারিয়ে যা।

পা-টিপে, পা-টিপে পচা পাতার ওপর পা-ফেলে ফেলে কিছুদূর গিয়ে আমি ঝরনাটার পেছনে একটা বড়ো পাথরের আড়ালে, বালির ওপর মুখ নীচু করে বসে পড়লাম। ওরা তো দূরের কথা, আমি নিজেই নিজেকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। এমন করেও হারানো যে যায়, তা জানতাম না।

দূর থেকে বিন্তির গলা শুনলাম। —আমরা পঞ্চাশ গুনছি। তার পর তোকে খুঁজব।

কখন ওদের পঞ্চাশ গোনা শেষ হল জানি না। হঠাৎ চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে গেল। গাছের নীচে নদীর ধারে অন্ধকার নেমে এল। শুধু ঢাব পাখিটা ডাকতে লাগল ঢাব-ঢাব-ঢাব। মাথা নীচু করে হঠাৎ দেখলাম বালির ওপরে চিতাবাঘের পায়ের দাগ। বেশ ভয় করতে লাগল।

অনেক অনেকক্ষণ কেটে গেল। একটা প্যাঁচা ডাকল টুঙ বাগানের ম্যানেজারের বাংলোর কাছ থেকে। তার পর সব চুপচাপ।

হঠাৎ আমার পেছনের বালিতে-পাতায় একটা মৃদু খসখসানি শুনতে পেলাম।

ভয়ে ভয়ে ঘাড় ফেরাতেই দেখি বিন্তি। বিন্তি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি পড়ে যেতে যেতে সামলে নিলাম। বললাম, এ কী?

বিন্তি আমার বুকের কাছে হামাগুড়ি দিয়ে এসে দু-হাতে আমাকে সমানে কিল-চড়-ঘুসি মারতে লাগল। নি:শব্দে। তার পরই দেখলাম, বিন্তি কাঁদছে। ঘন ঘন নি:শ্বাস পড়ছে ওর। বিন্তি মারতে মারতে বলতে লাগল, পাজি, বদমাইস, অসভ্য।

অবাক হয়ে বললাম, কী করছিস তুই? কী হল?

বিন্তি হাউ মাউ করে কেঁদে আমার দুটো কান দু-হাতে ধরে বলল, তুই আমাকে ভালোবাসিস না কেন, বল? তুই আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারবি না। কাউকে—কাউকে না। বলে, বিন্তি অঝোরে কাঁদতে লাগল। বিন্তি পাগলের মতো হাত পা ছুড়তে লাগল। বিড় বিড় করে বলল, তুই আমায় ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারবি না।

সেই সায়ান্ধকারে ওর দু-কাঁধে হাত রেখে আমার কান থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে ওর মুখের দিকে ভালো করে তাকালাম। হয়তো এই প্রথম ভালো করে ওর দিকে তাকালাম। অবাক হয়ে দেখলাম বিন্তি অনেক বড়ো হয়ে গেছে।

মনে হল, লিচুতলায় আমাদের এক্কা-দোক্কা খেলার দিন শেষ হয়ে গেছে, প্রজাপতি ধরার দিন শেষ হয়ে গেছে, কাচপোকার পেছনে আর দুজনে আমরা কখনো ছুটব না।

আমার ভীষণ খারাপ লাগতে লাগল। আবার ভালোও লাগতে লাগল। নিজেকে সাহসীও মনে হল, আবার ভীষণ ভয়ও করতে লাগল। বিন্তি তখনও কাঁদছিল। বিন্তিকে বললাম, ওঠো বিন্তি।

জীবনে এই প্রথম বিন্তিকে ‘তুই’ বলতে পারলাম না।

বললাম, ওঠো বিন্তি। বাড়ি চলো। বাড়ি যাবে না?

বিন্তির হাত আমার হাতে নিয়ে আমরা ঝরনাতলা থেকে টুঙ বাগানের রাস্তায় এসে পড়লাম।

পেছন থেকে, মনে হল অনেক দূর থেকে, বিন্তির সখী ডাকছিল, বিন্তি—বি—ন্তি। গাছে-পাতায়-হাওয়ায় সেই ডাক কাঁপছিল।

বিন্তি সাড়া দিল না।

হাত ধরে আমরা দুজনে টুঙ ছড়ানো রাস্তায় হাঁটছিলাম। একটি একটি করে ঝিঁঝি ডেকে উঠছিল। অন্ধকারে।

আমি জানতাম, বিন্তি সাড়া দেবে না। বিন্তি নামে যে অভিমানী, ঝগড়াটি, গেছো-মেয়েটি ছিল, যে কথায় কথায় ছেলেদের সঙ্গে মারামারি করত, হাডুডু খেলত, সে ওই নামের ডাকে আর কোনোদিন, কোনোদিনও সাড়া দেবে না।

আমার হঠাৎই মনে হল, কাচপোকার দিনগুলি পেছনে ফেলে আমরা দুজনে এগিয়ে চলেছি।

নতুন কোনো অস্বস্তিভরা দিনের দিকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *