কাকতাড়ুয়া – ৮

অষ্টম অধ্যায়

চরণদাস ক্যাম্পসাইটে পৌঁছে দেখল সেখানে ছোটখাটো একটা মেলা লেগে গেছে। সমস্ত জায়গাটা জুড়ে কিছু উর্দিধারি পুলিশের ভিড়। এদিক ওদিক ঘুরে হম্বিতম্বি করছে তারা। পুকুরের ধার জুড়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একদল মানুষ। তাদের কয়েকজন মাঝে মাঝে পুকুরের তলা থেকে তুলে আনা কাদা আর কচুরিপানার মধ্যে উঁকি দিয়ে কী যেন দেখার চেষ্টা করছে। নিজেদের মধ্যে কীসব যেন গুজগুজ করছে তারা।

পুকুর চাঁছা হচ্ছে। ডুবুরি নামিয়ে পুকুরের তলায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। আসতে আসতে চরণদাসের সঙ্গে নাদু নস্করের একবার চোখাচোখি হয়েছিল। সে ব্যাজার মুখ করে বলল, ‘দেখো দেখি কী বিপদ। মানুষ মরেছে শ্বাসবন্ধ হয়ে আর বড়বাবু খুঁজছেন খুনের অস্তর…কী যে সাহেবের খেয়াল…’

চরণদাস উত্তর করেনি। ওর চোখে মুখে ভয়। এসব ঘটনার আগাপাস্তলা কিছুই জানত না ও। আজ সকালে পুলিশের ফোন পেয়ে জানতে পেরেছে এখানে একটা খুন হয়ে গেছে।

পুকুরেরই একধারে বড়বাবুকে খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হল না চরণদাসকে। ইনস্পেক্টর বিশ্বাসও তাকে দেখেই চিনতে পারলেন। যদিও এখন হাতে দোতারা নেই, তাও চেহারা দেখেই তাকে বাউল বলে চিনে নেওয়া যায়। গায়ে একটা পুরোনো খদ্দরের জামা, সেই সঙ্গে নোংরা নীল লুঙ্গি। পাকিয়ে যাওয়া দড়ির মতো চেহারায় অবিন্যস্ত জটার মতো চুল। বোঝা যায় শরীরের সমস্ত জোর একমাত্র কণ্ঠনালী আর তারের উপর আঙুলের ছটফটানিতে গিয়ে জমা হয়েছে।

ওকে দেখেই বড়বাবু চোখ তুলে তাকালেন। পুকুরে নামা লোকগুলোকে আঙুল তুলে কী নির্দেশ দিলেন, তারপর ওর দিকে ফিরে বললেন, ‘তুমিই তার মানে এখানে গানবাজনা করো?’

‘আজ্ঞে, হ্যাঁ বাবু।’

‘তা কেমন চলছে গানবাজনা?’

চরণদাস মাথা নাড়ে। যার মানে হ্যাঁ বা না দুটোই হতে পারে।

ইনস্পেক্টর বিশ্বাস দ্রুত প্রসঙ্গে চলে আসেন, ‘গত রবিবার তুমি ক্যাম্পে এসেছিলে?’

‘আজ্ঞে, না স্যার। একসপ্তা হয়েছে এমুখো হইনি আমি। ডাকই হয়নি।’

‘ডাক না পেলেও তো আসো শুনেছি।’

‘আজ্ঞে হ্যাঁ। রোজদিন তো কাজ পাই না। আবার গানবাজনা না করলেও চলে না। আমার তো দল-টল নেই। ভাবি যাই একটু মাঠে বসে গানবাজনা করি।’

‘তোমার বাড়ির কাছে মাঠ নেই?’

একটু থতমত খেয়েই ঘাড় নাড়ায় চরণদাস, ‘আজ্ঞে, তা আছে।’

‘ক্যাম্পের আশেপাশে তো কিছুই নেই। তোমার বাড়ি এখান থেকে দশ কিলোমিটার দূরে। এতদূর এসে গান গাও কেন? তাও আবার ডাক না পেয়ে?’

এইবার চরণদাসের মুখে একটা লালচে ভাব ফুটে ওঠে। পরের কথাগুলো যত্ন করে মেপে বলে সে, ‘মাঠঘাট সবই আছে বাবু। কিন্তু তাও আমি ওখানেই যাই।’

‘কেন?’

‘ওই মাঠে বসে গান গাইতে ভালো লাগে। বাউলরা চাইলেই সব জায়গায় মন খুলে গান গাইতে পারে না। ও মাঠে গান গাইলে মনে হয় কে যেন ভিতর থেকে গাইয়ে নিচ্ছে, আমি গাইছি না।’

‘মাঠে তো কেউ থাকে না। তুমি গান শোনাও কাকে?’

‘আজ্ঞে, একটা কাকতাড়ুয়া আছে বাবু। তার সামনে বসেই গান গাইতাম…’ কথাটা বলতে বলতেই বিশ্বাসের কাছে সরে আসে চরণদাস, ফিসফিসে কিন্তু গাঢ় গলায় বলে, ‘আপনাকে কী বলব বাবু, মাঝে মাঝে স্পষ্ট মনে হয় কাকতাড়ুয়াটা যেন মন দিয়ে আমার গান শুনছে। একদম কান খাড়া করে। আমি যখন ওর দিকে দেখছি না, তখন আমার দিকে চেয়ে আওয়াজ করে হাসছে। তাকালেই আবার সেই গম্ভীর মুখ…মাঝে মাঝে সে যেন আমার বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে খড়ের আঙুল নাড়ায়…’

পুকুরের দিক থেকে একবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেন ইনস্পেক্টর বিশ্বাস। শার্টের উপরের বোতামটা খুলে দেন। পকেট থেকে ফোন বের করে তার অন্ধকার স্ক্রিনে একবার চুল ঠিক করে নিয়ে বলেন, ‘তুমি নেশা টেশা করে গান গাও নাকি?’

‘না স্যার। আমি সত্যি বলছি…’

‘মানে তুমি বলছ সেদিন রাতে তুমি ওখানে ছিলে না।’

‘আজ্ঞে না। সেদিন সারাদিন গুপি পোদ্দারের পুকুরের মাছ ধরা হচ্ছিল। সেখানেই ছিলাম। রাতে সেই মাছ ভেজে মদের আসর বসিয়েছিল গুপি। সেখানেই ছিলাম…’

‘সবাই সে রাতে মদ খাচ্ছিল নাকি?’ বিড়বিড় করে বলেন ইনস্পেক্টর বিশ্বাস। তারপর মুখ তুলে বলেন, ‘খুনের দিন এই ক্যাম্পে যে দোতারাটা আছে সেটা কেউ বাজাচ্ছিল। এ এলাকায় আর কে দোতারা বাজাতে পারে জানো?’

চরণদাসের মুখে হাসি ফোটে, ‘এই কথা! আগে বলবেন তো কত্তা। সেদিন রাতে আমি এখানে দোতারা বাজাইনি তা ওর আওয়াজ শুনলেই বুঝবেন।’

‘সে কী! কী করে?’

‘দোতারার রকমফের হয় কত্তা। আমি বাজাই বাংলা দোতারা। আর এখানে যেটা রাখা আছে সেটা ভাওয়াইয়া দোতারা। দুয়ের আওয়াজ আলাদা হয়…যে কেউ শুনলেই বুঝবে…’

ইনস্পেক্টর বিশ্বাসের নির্দেশে ক্যাম্পের দোতারাটা হাজির করতে বেশি সময় লাগল না। হরি ছাউনি থেকে সেটা নিয়ে এসে তুলে দিল চরণদাসের হাতে। সুব্রত ঘোষ একটু দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। দোতারা আসতে দেখে তিনিও ওদের কাছে এগিয়ে এলেন।

দু-একবার কান মুলে দোতারাটা বাজাতে শুরু করল চরণদাস। ইনস্পেক্টর বিশ্বাস সুব্রত ঘোষের দিকে চোখ তুলে বললেন, ‘কী বুঝছেন মিস্টার ঘোষ, সে রাতে এরকম কিছুই বেজেছিল?’

‘আজ্ঞে, হ্যাঁ স্যার…’ ভুরু কুঁচকে তিনি বললেন, ‘অবিকল এই আওয়াজ। সাধারণ দোতারার যেমন আওয়াজ হয় তার থেকে একটু ভোঁতা। আমি ভেবেছিলাম দূর থেকে আসছে বলে হয়তো। এখন বুঝতে পারছি…’

মানিক ইনস্পেক্টর বিশ্বাসের দিকে সরে আসে, ‘মানে সেদিন চরণদাস সত্যি এখানে ছিল না?’

‘সেটা বলা সম্ভব নয়। এও হতে পারে ও বাইরে থেকে এসে বাজিয়েছিল দোতারাটা। তবে সেটা হওয়া একটু অ্যাবসার্ড…’ চরণদাসের দিকে চেয়ে আবার প্রশ্ন করলেন বিশ্বাস, ‘এ জিনিস এখানে তুমি ছাড়া আর কেউ বাজাতে পারে না?’

‘দোতারা আর কেউ বাজায় বলে তো জানি না।’

কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকলেন ইনস্পেক্টর বিশ্বাস। কিছুরই থই পাচ্ছেন না তিনি। আপাতত মনে হচ্ছে সেদিন রাতে বাইরে থেকে বেড়া ডিঙিয়ে কেউ ভিতরে আসেনি। এদিকে এখানে যারা সেদিন ছিল তাদের মধ্যে কেউ দোতারা বাজাতে জানে না। তাহলে হলটা কী?

‘বেশ তুমি এসো এখন। পরে দরকার পড়লে ডাকব।’

ঘাড় নেড়ে সরে পড়ল চরণদাস। বিশ্বাস দেখলেন জল থেকে ডুবুরি উঠে আসছে। তার মুখের দিকে চেয়ে কোনও আশার আলো দেখতে পেলেন না তিনি। বড় কিছু থাকলে এতক্ষণে চোখে পড়ে যেত। হতাশ হলেন তিনি।

মানিক তার পাশে পাশেই হাঁটছিল, সেও পুকুরের দিক থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বলল, ‘মিস্টার ঘোষের স্ত্রী ছেলেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি স্যার। কিছুই বের করতে পারলাম না। সেদিন রাতে ঘুমিয়ে একেবারে সকালে উঠেছে। মাঝে কিছুই দেখেনি, কিছুই শোনেনি। তবে যেমন খাণ্ডার মেজাজ—শালা চাইলে স্বামীকে যেকোনওদিন কেটে ফেলতে পারে…’

‘তবে এখানে কেউ কেটে ফেলেনি। খুন হয়েছে গলা টিপে, ঠান্ডা মাথায়। তাও আবার বাজনা বাজাতে বাজাতে। নাহে, এ জিনিস ও মহিলার কম্মো নয়…’

‘ঠান্ডা মাথায় বলছেন কেন?’

‘খুনের ধরনটা দেখো। কোনও তাড়াহুড়ো নেই। মারামারি নেই। একদম মোক্ষম আঙুলে গলা টিপে ধরে শ্বাস বন্ধ করে পুকুরে ফেলে দিয়েছে। কেউ কোনও আওয়াজ পায়নি, চিৎকার হয়নি, সকালবেলা যে যার মতো শান্তিতে ঘুম থেকে উঠেছে…’

মানিক একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, ‘এইটাই মুশকিল। শালা সবাই হয় ঘুমাচ্ছিল নাহয় মাল খেয়েছিল। কাকে যে বিশ্বাস করব…’

পুকুরের দিকে এতক্ষণ উঁকি দিচ্ছিলেন সুব্রত ঘোষ। এবার সেদিকে এগিয়ে যান ইনস্পেক্টর বিশ্বাস। নাদু নস্করও আসেন ওদের পেছন পেছনে। সুব্রত ঘোষের দিকে চেয়ে একটা নরম হাসি হাসেন ইনস্পেক্টর বিশ্বাস, ‘আপনারা তো আজকেই চলে যাচ্ছেন, নাকি?’

‘হ্যাঁ, আর কী করব? বউ-বাচ্চাও আর থাকতে চাইছে না।’

বিশ্বাসের মুখে হাসি খেলে যায়। নিজের মাথাতেই একবার হাত বুলিয়ে নিয়ে বলেন, ‘আপনার থেকে আর সেরকম কিছু জিগ্যেস করার নেই। শুধু একটা ব্যাপার জানতে ইচ্ছা করছে। অবশ্য তদন্তের কিছু নয়…’

‘বেশ তো, বলুন না…’

দাড়িতে হাত ঘষেন ইনস্পেক্টর বিশ্বাস, ‘আমি ওদের লগবুকটা চেক করছিলাম। তাতে দেখছি গত তিনমাসে এখানে যারা এসেছে তারা সবাই হয় বন্ধু-বান্ধব না হয় প্রেমিক-প্রেমিকা। ভেবে দেখলাম সেটাই স্বাভাবিক। এসব রিমোট ক্যাম্পে লোকে মদ খেয়ে হইহুল্লোড় করতে আসে। আর আপনি এসেছেন রিসার্চ করতে, তাও আবার ফ্যামিলি নিয়ে। কারণটা কী বলুন তো?’

চারপাশটা একবার দেখে নেন সুব্রত। তারপর একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন, ‘আমার বউ একটু স্ট্রিক্ট স্যার। আমাকে একা একা প্রায় কোথাও যেতে দেয় না। ও একটু রিলিজিয়াস ফ্যানাটিক। মন্দির টন্দির না থাকলে খুব একটা বেরোতে চায় না…’ নরম হাসি হাসলেন সুব্রত, ‘গবেষণা করতে করতেই এই জায়গাটার কথা জানতে পেরেছিলাম। এখানে তো হোটেল-টোটেল বলে কিছু নেই, অগত্যা ওই ক্যাম্পেই…’

‘তা গবেষণায় কী পেলেন?’ কথাটা বলেই জিভ কাটেন ইনস্পেক্টর বিশ্বাস, ‘মানে, যদি আপনার বলতে অসুবিধা না থাকে…’

একটু উশখুশ করেন সুব্রত ঘোষ। বোঝা যায় ওর মনের মধ্যে যে কথাগুলো আছে তা এমন হুট করে বলা সম্ভব নয়। তাও মোটামুটি একটা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি, ‘এখানকার লোকেরা ওই বাড়িগুলোকে হানাবাড়ি বলে চালিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। কেউ বলে এগুলো নাকি জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ। তো কেউ বলে ওখানে নাকি কারা আত্মহত্যা করেছিল। তবে একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই আপনি বুঝতে পারবেন এসব একদম বোগাস। আসলে ওই বাড়িগুলো তৈরির পেছনে অন্য একটা কারণ আছে। সেটা অতটা মারকাটারি বা ভূতুড়ে না হলেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ!’

‘কীরকম?’

‘ওগুলো সবই তৈরি হয়েছিল আজ থেকে প্রায় তিনশো বছর আগে। মুর্শিদাবাদের সিংহাসনে তখন আলিবর্দী খান। মানে ধরুন ওই সতেরোশো চল্লিশের গোড়ার দিকে। আপনি বর্গীদের কথা তো জানেন?’

‘মানে মারাঠা আক্রমণ? সেই যে খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গী এল দেশে?’

‘এক্স্যাক্টলি। এই বর্গীরা মোট ছ’বার বাংলা আক্রমণ করে লুটপাট চালায়। লুটপাট বলতে ভয়ঙ্কর লুটপাট। ঘোড়া নিয়ে অতর্কিতে আক্রমণ করে গ্রামের পর গ্রাম লুট করত। ছোট ছোট ঘোড়ায় চড়ে পঞ্চকোট পাহাড় পেরিয়ে বাংলার গ্রামে গঞ্জে আছড়ে পড়ে তারা হাঁক পাড়ত—রুপি লে আও। তারপর সেই রুপি আদায় হলে চলত অত্যাচার। বাচ্চা মেয়ে থেকে বয়স্ক মহিলাদের অবাধে গণধর্ষণ, জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া, বাড়িতে আগুন লাগানো, পরিবারের সামনেই এক এক করে সকলের শিরচ্ছেদ…এও শোনা যায় কোনও যুবতী মেয়ে সম্মান রক্ষা করতে পুকুরে ডুব মেরে লুকিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তাকেও বর্শায় গেঁথে জল থেকে তুলে এনে ধর্ষণ করত বর্গীরা।’

‘অত্যাচার করেছে বলে জানতাম। কিন্তু এতটা ডিটেলে জানতাম না আগে। তারপর?’

‘যেহেতু বর্গীদের মূল লক্ষ্য ছিল টাকাপয়সা তাই কলকাতা বা তার আশেপাশের এলাকার ধনী ব্যবসায়ীরা একটা পন্থা অবলম্বন করলেন। তারা নিজেদের এলাকা ছেড়ে পূর্ববাংলার দিকে সরে আসতে লাগলেন। সেখানে বর্গীদের উৎপাত কম ছিল। আপনি এখনও বাংলাদেশে গেলে এরকম কয়েকশো বছরের পুরোনো পরিত্যক্ত পাড়া দেখতে পাবেন। যার বেশিরভাগই কলকাতার বণিকরা গিয়ে তৈরি করেছিল। পরে মুসলমান আক্রমণের সময় আবার তাড়া খেয়ে ঘর ছাড়তে হয় তাদের। বাড়িগুলো সেই থেকে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে…

‘এখানে আসার আগে এই ভাঙাচোরা বাড়িগুলোর কিছু ছবি দেখেছিলাম আমি। সাধারণত সে সময়ে এই ধরনের বাড়ির বাইরে সাদা শ্বেতপাথরের উপর কালো দিয়ে সন তারিখ আর পরিবারের উপাস্য দেবতার নাম লেখা থাকত। তারিখটা দেখে আমার সন্দেহ হয়। সবই সতেরোশো চল্লিশের আশেপাশে। গঠনগুলো দেখেও বোঝা যায় বাড়িগুলো বিত্তবান বণিকদের তৈরি। কিন্তু একটা খটকা লাগল…’

‘কী খটকা?’

‘এখানে আশেপাশে বনজঙ্গল ছাড়া তেমন কিছু নেই। বর্গীদের হাত থেকে লুকিয়ে থাকার জন্য আদর্শ জায়গা বটে। সত্যি কথা বলতে তখনকার দিনে বর্গীরা পাহাড় থেকে নেমে এসে এরকম ছোটখাটো আস্তানা গড়েই আক্রমণের প্রস্তুতি নিত। কিন্তু সে তো বর্গীরা। বণিকদের নিজেদের রাজ্যে এমন লুকিয়ে পড়ার দরকার পড়ল কেন? পালাতে হলে তার জন্য তো পূর্ববঙ্গ ছিল। এখানে এসেই বাড়ি বানাল কেন? এক হতে পারে তারা ইচ্ছা করেই সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চেয়েছিল। কিন্তু তারই বা কারণ কী?’

ডুবুরিদের মধ্যে একটা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে এতক্ষণে। কিন্তু ইনস্পেক্টর বিশ্বাস গল্পে ডুবে গেছেন। সেদিকে আর কান গেল না তার, ‘মানে আপনি বলছেন তিনশো বছর আগে বণিকরা তৈরি করেছিল এই বাড়িগুলো?’

‘দুর্গা বা কালীর কোথাও কোথাও উল্লেখ থাকলেও বেশিরভাগ ফলকেই সিদ্ধিদাতা গনেশের নাম…’

‘কিন্তু তারা গেল কোথায়?’

সুব্রত একটু হাসলেন। ইনস্পেক্টর বিশ্বাস যে ব্যাপারটায় মনোযোগী হয়ে পড়েছেন সেটা তার মুখ দেখে বোঝা যায়। সামনে হাঁটতে হাঁটতে তিনি বললেন, ‘সেটা আমি বলতে পারব না। তবে একটা ওয়াইল্ড গেস করতে পারি। ইতিহাসের ক্ষেত্রে সাধারণত ওয়াইল্ড গেস জিনিসটা চলে না। আরও রিসার্চ করা দরকার। আপাতত…’

‘আপাতত যা মনে হচ্ছে সেটাই বলুন…’

একটা সিগারেট ধরান সুব্রত, তারপর একটা হাত পকেটে গুঁজে বলেন, ‘এই বর্গীদের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন ভাস্কর পণ্ডিত। নাগপুরের রাজা রঘুজি ভোঁসলের দেওয়ান আর আর্মি কমান্ডার। বেশিরভাগ আক্রমণ তার তত্ত্বাবধানে করত বর্গীরা। ইতিহাসের পাতা জুড়ে বাংলার বুকে তার নৃশংসতার নানারকম উপাখ্যান পাওয়া যায়। তার কিছু সত্যি আর কিছু মিথ্যে।

‘তো সতেরোশো তেতাল্লিশের দিকে এই ভাস্কর পণ্ডিত একবার শ’পাঁচেক বর্গী নিয়ে মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করেন। কিন্তু ঠিক আক্রমণের আগেই পিছু হটে আবার নাগপুর ফিরে যান। পথে কোনও অতর্কিত আক্রমণে বেশ কিছু সৈন্য মারা পড়েছিল। তাই এই অপ্রত্যাশিত পশ্চাদপসরণ। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন আসে। আক্রমণটা করল কে?

‘পঞ্চকোট পাহাড় ডিঙিয়ে যে পথে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করতে হয় তার মধ্যে এমন কোনও আক্রমণ হওয়া সম্ভব নয়। আলিবর্দী নিজেই যদি করে থাকে তাহলে তার ক্রেডিটে সেটা প্রচার হওয়ার কথা। সেটাও হয়নি। তাহলে?

‘তাহলে ভাস্কর পণ্ডিত কি মিথ্যে বলেছিলেন? কোনও আক্রমণ হয়নি? তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে প্রশ্ন হল এতগুলো লোক মারা গেল কেমন করে?’

ইনস্পেক্টর বিশ্বাস হাঁ করে চেয়েছিলেন সুব্রতর মুখের দিকে। তিনি পকেট থেকে ফোন বের করে একটা ম্যাপের ছবি বের করে দেখালেন তাকে, তারপর একটা বিশেষ জায়গায় আঙুল রেখে বললেন, ‘এবার মন দিয়ে দেখুন, আমরা আপাতত যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটা নাগপুর থেকে পাহাড় টপকে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার রাস্তার মধ্যে পড়ে…’

‘মানে আপনি বলতে চাইছেন ভাস্কর পণ্ডিত নিজে আক্রমণ করেছিলেন এখানে। এবং তিনিই এখানকার বণিকদের খুন করেন কোনওভাবে…’

মাথা নাড়েন সুব্রত, ‘ওই যে বললাম ওয়াইল্ড গেস। এরকম গোঁজামিলের অঙ্ক কষতে থাকলে নাইটস টেম্পলাররা এদেশে এসে প্রথম দুর্গাপুজো চালু করেছিল বলেও হিসেব মিলিয়ে দেওয়া যায়…’

দূর থেকে ভেসে আসা একটা ডাক শুনে ফিরে তাকান সুব্রত, ‘ইয়ে, আমার বউ ডাকছে। আমি না হয় একটু পরে…’

সুব্রত দ্রুত পায়ে সরে পড়তে মানিককে সঙ্গে নিয়ে আবার পুকুরের দিকে হাঁটা দেন ইনস্পেক্টর বিশ্বাস। তার মুখেও এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ খেলা করছে। এতক্ষণের গল্পটা মেলানোর চেষ্টা করেও কূল পাচ্ছেন না তিনি।

‘আপনি একটা খুনের মামলায় ইতিহাস নিয়ে ভাবছেন কেন বলুন তো?’ মানিক জিগ্যেস করে।

প্রশ্নটা শুনেই যেন ইতিহাস থেকে আবার পুকুরের দিকে দৃষ্টি ফেরে তার। মানিকের দিকে না তাকিয়েই বলেন, ‘উঁহু, ভাবছিলাম বাইরে থেকে এসেই যদি কেউ খুন করে থাকে তাহলে সেটা কে হতে পারে? মেয়েটার কোনও প্রেমিক…’

‘সে একটা ছিল। মাসছয়েক হল যোগাযোগ নেই। ছেলেটি অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। হালকা কথা কাটাকাটিও হয়েছে। তবে ঘটনার দিন সে কলকাতাতেই ছিল। আমি স্যার ভাবছিলাম…’

‘কী ভাবছিলে?’

‘আচ্ছা ধরুন যে কেয়ারটেকার দুটো ছিল তারাও তো কেউও হতে পারে। গলা টিপে খুন করা এমন আহামরি কিছু কাজ নয়। তারপর জলে ফেলে…’

‘কিন্তু কারণটা কী? সেটাই তো বুঝতে পারছি না। যদি সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট হত তাহলে না হয় বলা যেত যে মদ খেয়ে ঝোঁকের মাথায়…’ প্রবল মাথা নাড়েন বিশ্বাস, ‘কোনও দিকেই কোনও আলো পাচ্ছি না হে…সবই গুলিয়ে যাচ্ছে…’

মানিক কী যেন ভাবছিল, তেমন উদাস গলাতেই সে বলে, ‘ভারী অদ্ভুত একটা রাত, তাই না স্যার? ছোটাছুটি হল, দাপাদাপি হল, একটা মানুষ খুন হল, একটা মানুষ রক্তাক্ত হল, কান্নাকাটি হল আবার সেই একই রাতে কে যেন দোতারা বাজিয়ে গান গাইল। আর সব কিছুর মাঝখান থেকে উধাও হল একটা কাকতাড়ুয়া। আমার কিন্তু মনে হচ্ছে স্যার কাকতাড়ুয়াটাই খুনি…’

ইনস্পেক্টর বিশ্বাস কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় পুকুরের দিক থেকে একটা তুমুল হইচই ভেসে আসে। ভাবসাব দেখে মনে হয় জল থেকে কিছু একটা জিনিস তুলে এনেছে ওরা। মানিক আর ইনস্পেক্টর বিশ্বাস দ্রুত ছুট দেন সেদিক লক্ষ্য করে।

ডুবুরিদের মধ্যে একটা বাচ্চা ছেলে ছিল। সেই কাদামাখা একটা চকচকে কিছু এনে ফেলেছে ডাঙায়। ইনস্পেক্টর বিশ্বাস নিচু হয়ে কাদার মধ্যে থাকা ধাতব জিনিসটা বের করে আনলেন ঘাসের জমির উপরে। হাত দিয়ে জমাট কাদা সরাতেই সকালের রোদে ঝকমক করে উঠল ব্লেডটা। একটা ছ’ইঞ্চি লম্বা ছুরি।

ছুরিটা নাদু নস্করের দিকে তুলে ধরলেন ইনস্পেক্টর, ‘এটা তোমাদের ছুরি?’

নাদু আর হরি দুজনেই দুপাশে মাথা নাড়াল।

‘আগে দেখেছ কেউ এটা?’

‘না স্যার।’

ছুরিটা ভালো করে পরীক্ষা করলেন ইনস্পেক্টর। ‘খুব একটা পুরোনো নয় এটা। দিনতিনেকের বেশি জলের তলায় থাকার কোনও লক্ষণ নেই। ফলাটা যথেষ্ট ধারালো। এমন একটা ছুরি দিয়ে খুন করা আশ্চর্যের কিছু নয়। কিন্তু খুনটা…’

বিশ্বাসের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিল মানিক, ‘কিন্তু ছুরি দিয়ে তো আদৌ খুনটা হয়নি স্যার।’

‘তাও ছুরিটা কেউ এনেছিল…’

‘যদি গলা টিপেই খুন করবে তাহলে ছুরি দিয়ে হলটা কী?’

‘আর যদি কিছু নাই হয়ে থাকে তাহলে সেটা অকারণে জলের তলায় ফেলার দরকার পড়ল কেন?’

ইনস্পেক্টর বিশ্বাসের মুখে ছায়া নামল। প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে সেটা মানিকের হাতে দিয়ে বললেন, ‘এটা ভালো করে পরীক্ষা করে দেখো ছুরিটার ব্যাপারে আর কিছু জানা যায় কিনা…ভালো কথা, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কী বলছে?’

মানিক কাঁধ ঝাঁকায়, ‘তেমন কিছুই না স্যার। স্টমাকে রাতের খাবার আর মদ ছিল। সেই কারণেই খুনের সময়ে খুব একটা বাধা দিতে পারেনি। খুনি পেছন থেকে গলা টিপে ধরে খুন করে তাকে। গভীর রাতের দিকে, আইমিন দুটো থেকে তিনটের মধ্যে হয় খুনটা…’

‘শরীরে মদ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি?’

মনে করার চেষ্টা করে মানিক, ‘অ্যালকোহল ছাড়া ওষুধ পাওয়া গেছে স্যার। অ্যানালজেস্টিক আর ঘুমের ওষুধ। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি মেন্টাল ডিপ্রেশনের জন্য ভিক্টিম অনেকদিন ধরেই ঘুমের ওষুধ খেত। ওটা পাওয়া যাওয়াটা খুব একটা অড নয় স্যার…’

বিশ্বাসের ভুরু কুঁচকে যায়, থেমে থেমে বলেন, ‘অড নয়। কিন্তু সিচুয়েশনটা ভাবলে একটা খটকা লাগছে। যে মেয়ে সেদিন রাতে বান্ধবিদের সঙ্গে অত মদ খাবে, সে হঠাৎ ঘুমের ওষুধ খেতে যাবে কেন? মদ খেয়ে, তারপর ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য তো এই বয়সের ছেলেমেয়েরা ঘুরতে আসে না। সারারাত পার্টি করার প্ল্যান ছিল…’

‘আপনি কী বলতে চাইছেন স্যার? কেউ ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিল ওকে? কিন্তু খুন করার ইন্টেনশন থাকলে ঘুমের ওষুধ খাওয়াবে কেন? ঘরে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়লে পুকুরে ডুবিয়ে মারতে তো সুবিধা হওয়ার কথা নয়…’

‘ঠিকই বলেছ, এক যদি না…’

‘কী?’

‘সেদিন কেয়ারটেকার দুজনও ঢের আগে ঘুমিয়ে পড়েছিল।’ বিশ্বাস দাড়ি চুলকে বলেন, ‘আচ্ছা মানিক, এমনও তো হতে পারে সেদিন ঘুমের ওষুধের টার্গেট ভিক্টিম ছিল না। ছিল অন্য কেউ…’

‘অন্য কেউ বলতে? কে?’

‘সবাই। আসল খুনের প্ল্যানটা এমন কিছু ছিল যাতে সবার মধ্যে একটা ঘুমঘুম ভাবের দরকার ছিল খুনির…’

মানিকের মুখে মুহূর্তে উত্তর শোনা যায়, ‘তা কী করে হবে স্যার? সবার খাবারেই যদি ঘুমের ওষুধ মেশানো হয়ে থাকে তাহলে মিস্টার ঘোষ আর ওর ফ্যামিলিও তো…’

কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেল মানিক। কথার মাঝেই দ্রুত পা চালিয়ে সুব্রত ঘোষের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন ইনস্পেক্টর বিশ্বাস। সুব্রতও ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। বিশ্বাসকে এগিয়ে আসতে দেখে একটু থমকে যান। বিশ্বাস কঠিন গলায় জিগ্যেস করেন, ‘আচ্ছা মিস্টার ঘোষ, আপনি বলছিলেন আপনার স্ত্রী নাকি ভীষণ ধার্মিক। তো তিনি নিশ্চয়ই মাঝে মধ্যে নিরামিষ খান?’

‘হ্যাঁ তা খায়…’ আমতা আমতা করেন সুব্রত ঘোষ।

‘এবং আপনাকেও ওর সঙ্গে তাই খেতে হয়—কী, তাই তো?’

‘ইয়ে…সেটা তো…’

‘তো গত রবিবারও আপনারা নিরামিষ খেয়েছিলেন?’

‘হ্যাঁ, অন্যদের জন্য মাংস হয়েছিল। আমরা তিনজন শুধু…’

ইনস্পেক্টর বিশ্বাসের মাথায় বিদ্যুৎ খেলতে থাকে। মানিকের দিকে ফেরেন তিনি, ‘সেদিন রাতে সবার খাবারেই ঘুমের ওষুধ মেশানো হয়েছিল। তবে রুটিতে নয়, মাংসে। কেবল যে মিশিয়েছিল সে জানত না যে মিস্টার ঘোষ এবং তার ফ্যামিলি সেদিন নিরামিষ খাবেন…’

‘কিন্তু কে মেশাবে?’

‘যার সে রাতে ম্যাজিক দেখানোর ছিল…’

নাদু নস্কর এতক্ষণ বিড়ালের মতো অনুসরণ করছিল ওদের। এবার হুট করেই তার দিকে ফেরেন বিশ্বাস, ‘ভাত আর তরকারি সব এক জায়গাতেই রান্না হয় আপনাদের? নাকি আলাদা আলাদা জায়গায়?’

‘আজ্ঞে, স্যার ভাত, তরকারি সবই ভিতরে হয়। কেবল মাংসটা ক্যাম্পফায়ারে পুড়িয়ে রান্না হয় বলে বাইরে…’

‘সেটা সেদিন সবারই খাওয়ার কথা ছিল, তাই না?’

‘হ্যাঁ…’ সুব্রত ঘোষের দিকে আঙুল দেখায় নাদু নস্কর, ‘ওনারা যে নিরামিশ খাবেন সেটা সন্ধের আগে বলেনি আমাদের।’

‘সেদিন রান্নাটা কে করেছিল?’

নাদু নস্কর একটু থতমত খায়, ‘ইয়ে আমিই করেছিলাম। কিন্তু আমি তো খাবারে কিছু…’

‘সারাক্ষণ আপনারা মাংসটার ধারেই বসেছিলেন?’ শক্ত গলায় প্রশ্ন করেন ইনস্পেক্টর বিশ্বাস, ‘মাঝে উঠে যাননি কোথাও?’

নাদু নস্কর ঝটপট জবাব দেয়, ‘পোড়ার মধ্যে কোথাও যাইনি। কিন্তু বাঁশ থেকে বের করার পর ওতে লেবু মাখাতে হয়। তখন…’

‘তখন কেউ গিয়েছিল, তাই তো?’

কী যেন ভাবার চেষ্টা করে নাদু নস্কর, তারপর বলে, ‘ঠিক মনে পড়ছে না। তবে মনে হয় গিয়েছিল…’

‘কে গিয়েছিল?’

‘ওই যে তিনটে মেয়ের মধ্যে একজন। বলল ও নাকি ভালো রান্না করতে পারে। তখনও পেটে মদ পড়েনি। ওইটুকু মেয়ে আবদার করল মাংসে লেবু মাখাবে। আমি আর না করতে পারিনি স্যার। ও যখন লেবু মাখাচ্ছিল আমি কয়েকবার উঠে গেছিলাম। তখন যদি কিছু…’

নাদু নস্করের চোখের সামনে তিনটে ছবি তুলে ধরেন ইনস্পেক্টর বিশ্বাস, ‘এর মধ্যে কোন মেয়েটা বলতে পারেন?’

আঙুল দিয়ে একজনকে দেখিয়ে দেয় নাদু নস্কর, ‘এই যে…এই মেয়েটি…’

ইনস্পেক্টর বিশ্বাসের মুখটা বুকের উপরে নেমে আসে, চোখে হাসির ঝিলিক খেলে যায় তার। মানিক উঁকি মারে ছবিটার উপরে। তিনটে মেয়ের মধ্যে একজন ভিকটিম। মাঝে ঈশানী প্রামাণিকের ছবির উপরে আটকে আছে নাদু নস্করের আঙুল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *