পঞ্চম অধ্যায়
বাইরে দরজায় বৃষ্টির করাঘাত শোনা যেতেই চমকে ওঠে ঈশানী। দুপুরবেলা একগাদা জামাকাপড় ছাদে মেলে দিয়ে এসেছিল। বিকেলের আগেই সেগুলো তুলে ফেলার কথা। কিন্তু কথাটা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। এমনিতেই রবিবার একটা ছুটির দিন পায়, সেদিন আর বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছা করে না। এগারোটার সময় ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কিছু কাজকর্ম করে তারপর দুপুর গড়ানোর আগেই খেয়ে দেয়ে কিছু একটা সিনেমা বা সিরিজ নিয়ে বিছানা নেয়।
আজও তেমনি প্ল্যান ছিল। সকাল সকাল মায়ের ঠেলা খেয়ে পুরোনো জামাগুলো কেচে শুকোতে দিয়েছিল, হুট করে কখন আকাশ মেঘে ভরে এসেছে খেয়াল করেনি। এক্ষুনি জামাকাপড় ভিজে সপসপে হল বলে।
তড়িঘড়ি দরজা খুলে ছাদের দিকে দৌড় দিল সে। আকাশে গড়গড় করে মেঘ ডাকতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝে আকাশ চিরে বাজ পড়ছে। এই ঝামেলার মধ্যেও মনটা ভালো হয়ে গেল ঈশানীর। বাজপড়ার গড়গড় আওয়াজ ওর চিরকাল খুব ভালো লাগে।
একসঙ্গে তিন চারটে সিঁড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে যখন ছাদে উঠে এল তখন বৃষ্টির তোড় খানিকটা বেড়েছে। একদিকের আকাশ ডিমের কুসুমের মতো লালচে হয়ে আছে। অন্যদিকে গাছপালার সার জোলো বাতাসে মাথা দোলাচ্ছে।
দ্রুত জামাকাপড়গুলো টেনে আড় করা হাতের উপরে জড় করতে লাগল ও। একটা ফিনফিনে সাদা বাটিকের পাঞ্জাবিতে এসে আটকে গেল। এটা বাবার প্রিয় পাঞ্জাবি ছিল। বাড়িতে থাকলে কিংবা সামনে বাজারে দোকানে যেতে হলে এটাই পরে যেতেন। বাবা চলে যাওয়ার পরেও এটা হাতের কাছে রাখে ঈশানী। পাঞ্জাবিটা এতটাই পাতলা যে কাচতে বা শুকোতে কিছুতেই বেশি সময় লাগে না।
পাঞ্জাবির কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে একবার গন্ধ নিল ঈশানী। হ্যাঁ, বাবার গন্ধটা এখনও রয়ে গেছে বুকের কাছে। এতবার কাচলেও গন্ধটা কিছুতেই হারাতে চায় না। মুখ সরিয়ে একটানে পাঞ্জাবিটা দড়ি থেকে টেনে নিতেই সামনের দৃশ্যটা ওর চোখের সামনে খুলে গেল; ঈশানী থমকে দাঁড়াল।
কাকতাড়ুয়াটা ছাদের একপাশে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
ক্যাম্প থেকে ফেরার পর প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে গার্গীর সঙ্গেও আর সেভাবে কথাবার্তা হয়নি ঈশানীর। ওকে বাড়ি থেকে খুব একটা বেরোতে দিচ্ছে না ওর বাড়ির লোকজন। ঈশানী নিজে থেকে দু’একবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।
সেদিন বাড়িতে ঢোকার আগে ওদের বাড়ির সামনে গাড়িটা পার্ক করিয়েছিল তন্ময়। তখনই কালো হাঁড়ি, বাঁশ দুটো আর হাবিজাবি খড়কুটোগুলো একরকম মনের খেয়ালেই বাড়িতে এনে তুলেছিল ঈশানী। গোটা কাকতাড়ুয়ার ব্যাপারটা খানিক রহস্যজনক লেগেছিল বলেই বোধহয়। তবে ঘরের ভেতর তো আর কাকতাড়ুয়া রাখা যায় না, তাই ছাদে বসিয়ে দিয়েছে।
মা পায়ের ব্যথায় খুব একটা ছাদে আসতে পারে না। তবে ওদের বাড়ির অন্যদিকেই গুপ্ত’দারা থাকে। তাদের মধ্যে একজনই মাকে গিয়ে ফেচকেছিল, ‘হ্যাঁগো, তোমাদের মেয়েটার কি মাথা খারাপ হয়েছে? খামোখা ছাদে একটা কাকতাড়ুয়া এনে রেখেছে কেন?’
ঈশানী তেমন কিছু উত্তর দেয়নি। দেওয়ার দরকারও পড়েনি। এ বাড়ির লোক তেমন একটা ছাদে আসে না।
তাও মা একবার আপত্তি জানিয়েছিল, ‘ছাদে কাকতাড়ুয়া এনে তুলেছিস কেন?’
‘ছাদে গাঁজা চাষ করেছি। সেই গাছ পাহারা দিচ্ছে। খুশি?’
ঈশানী সত্যি সত্যিই আর সেরকম কোনও উত্তর খুঁজে পায়নি।
এখন ও ভালো করে তাকাল সেটার দিকে। কেমন যেন সরল সাদাসিধে একটা ভাব আছে কাকতাড়ুয়াটার মধ্যে। খানিকক্ষণ চেয়ে থাকলে মনটা নরম হয়ে আসে। সেদিন রাতে কি গাড়ির ডিকি থেকে বেরিয়ে এসে এই কাকতাড়ুয়াটাই ওর জীবন বাঁচিয়েছিল? কিন্তু তা কী করে সম্ভব!
ভালো করে কালো হাঁড়িটার দিকে তাকায় ঈশানী। গোল গোল চোখ দুটোর মাঝে ছোট্ট চোখের মণি। মুখটা অনেকটাই ঝাপসা হয়ে এসছে। তাও মনে হয় ওর দিকেই যেন ঠায় তাকিয়ে আছে কাকতাড়ুয়াটা।
আগ্রহটা বেড়ে উঠতে কাকতাড়ুয়াটার মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে ও। কোনওরকম দায়সারা করে মুখ এঁকে একটা চেহারা ফোটানোর চেষ্টা হয়েছে। সে কারণেই খানিক অসহায় দেখাচ্ছে মুখটা। হাঁড়ির পেছন দিকটা একবার দেখল ও। তারপর বাঁশের মাথা থেকে খুলে নিয়ে ভিতরটা দেখার চেষ্টা করল। ছাদে আলো কমে এসেছে। তাও খুদে খুদে দুটো নকশা চোখে পড়ল ওর। হাঁড়ির একবারে ভিতর দিকে খোদাই করে একটা ঘুড়ি আর একটা ডানা মেলা ঈগল আঁকা আছে। ভারি মজা লাগল ঈশানীর। রান্নার হাঁড়িতে এমন অদ্ভুত ছবি খোদাই করা একটু বিচিত্র বটে।
টুপটুপ করে জল পড়ছে হাঁড়ির উপর। চকের দাগ আরও আবছা হতে হতে মিলিয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন মায়া লাগে ঈশানীর। হাড়িটা খুঁটির উপর বসিয়ে ও গোটাটা শক্ত করে ধরে সাবধানে ছাদের এক দিকের শেডের তলায় নিয়ে আসে। ছোটবেলায় এখানে পাখিদের একটা ঘর ছিল। এখন সেসব পাখি উড়ে যাওয়ায় ফাঁকা পড়ে আছে শেডটা।
একটা শুকনো জায়গা খুঁজে নিয়ে হাতের জামাকাপড়গুলো নামিয়ে রাখে ঈশানী।
কাকতাড়ুয়াটাকে সেখানেই দাঁড় করিয়ে দেয় ও। একটু হেসে হাঁড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘নিজে নিজে কবে হাঁটতে চলতে শিখবি বল তো?’
কথাটা বলেই নিজের মনেই হাসে ঈশানী, ‘কীরে? তুই শুনতে পাচ্ছিস আমার কথা? হুম?’
টুকটুক করে কালো হাড়ির গায়ে দুবার নিজের মনেই টোকা মারে সে। তারপর ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে কোথাও কোনও আস্বাভাবিক কিছু আছে কিনা। নাঃ, নেই।
‘সেদিন আমাকে বাঁচালি কী করে বলত?’
একইরকম ঘোলাটে মুখে দাঁড়িয়ে থাকে কাকতাড়ুয়াটা। ঈশানী ওর মাথায় হাত রেখে বলে, ‘আবার বিপদে পড়লে আবার বাঁচাবি আমাকে?’
একটু সরে এসে হাঁড়িটা দেখে ঈশানী। মুখটা ঝাপসা হয়ে এসেছে। ও কি নিজেই এঁকে দেবে কিছু একটা? ভাবতে ভাবতে একটা আইডিয়া খেলে যায় ওর মাথায়।
কী মনে হতে এক দৌড়ে নিচে গিয়ে চকের বাক্সটা নিয়ে আসে সে। তারপর হাতের ঘষায় পুরোনো দাগটা তুলে দেয় হাঁড়ি থেকে। অন্য একটা মুখ আঁকতে হবে এখানে। কী আঁকা যায়?
আঙুল কামড়ে কিছুক্ষণ ভাবল ঈশানী। একটা ভাবনা মাথায় আসতেই মনটা খুশি হয়ে উঠল। ও শেষ কার্টুন এঁকেছিল আজ থেকে প্রায় মাসছয়েক আগে। তারপর থেকে রং পেন্সিল তুলি সব থেকে দূরেই থাকে।
এগিয়ে এসে কালো হাঁড়ির মুখে খসখস করে চক চালাল ঈশানী। কয়েক সেকেন্ড পরেই সে হাঁড়ির গায়ে একটা মানুষের মুখ ফুটে উঠল। নিজেকেই এঁকেছে ঈশানী। চোখের চশমাটা থেকে শুরু করে মাথার ব্যান্ডটা অবধি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অনেকদিন পর নিজেকে ছেলেমানুষ মনে হল ওর। হাসি পেয়ে গেল।
পাখির শেডটার পেছনেই ছাদের পাঁচিল। হাতের উপরে ভর দিয়ে সেটার উপরে উঠে বসল। কয়েক সেকেন্ড অপলকে তাকিয়ে রইল নিজের কাকতাড়ুয়াটার দিকে। তারপর একটা হাত বাড়িয়ে দিল তার দিকে, ‘হেল্লো মিস প্রামাণিক। নাইস টু মিট ইউ…’
বৃষ্টির তোড় বাড়ছে। জলের ধারার মধ্যে থেকে একটা অপরিচিত ঘষটানো আওয়াজ কানে আসছে। ঈশানীদের বাড়ির আশেপাশে বেশ কয়েকটা নারকেলগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সেগুলোও যেন উৎসুক হয়ে তাকিয়ে জীব আর জড়ের এই বিচিত্র কথোপকথন মন দিয়ে লক্ষ করছে।
‘আমিও আপনার মতো, কার্টুন…’ ঈশানী বাড়ানো হাতটা নামিয়ে নিয়ে বলে, ‘জোক…’
বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়ে ঈশানীর শরীরে। ও যেখানে বসেছে সেটা শেডের বাইরে। মুখের উপর হাত বুলিয়ে একবার সেই জল মোছার চেষ্টা করে ও, তারপর হাল ছেড়ে দেয়।
কাকতাড়ুয়ার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ছাদের বাইরে তাকায় ঈশানী, ‘জীবনের গাঁড় মেরে আছে ভাই তোর। খাদ্য আন্দোলন করা বাপের মেয়ে হয়ে কর্পোরেটের খিস্তি আর লাথি ঝাঁটা খাচ্ছিস…’
কাকতাড়ুয়াটা কিছু শুনতে পায় না মনে হয়। কানদুটো আঁকা হয়নি। হাত বাড়িয়ে দুপাশে দুটো কান এঁকে দেয় ঈশানী।
বৃষ্টির আওয়াজ এখন ধুয়ে দিচ্ছে আশেপাশের সমস্ত শব্দ। তাও ও যেন নিজেকেই বলে চলে, ‘বিশাল বড় বড় স্বপ্ন ছিল, বুঝলি? বিশাল বড় একটা চোপা ছিল, কিন্তু কিছু ছিঁড়তে পারিসনি। হ্যাঁ, চাইলে হয়তো বাবাকে বাঁচাতে পারতিস, দুটো পয়সা রোজগার করতে পারতিস…’ কথাগুলো বলতে বলতেই আবার সেদিকে ঘুরে তাকায় ঈশানী, ‘দেখ, তোর ব্যাপারে এত কিছু জানি আমি। আমার ব্যাপারে কিছু বল…জানিস না?’
মুখ নামিয়ে নিয়ে হাসে ঈশানী, একটু দম নিয়ে বলে, ‘আমি একটা ন্যাকা মেয়েছেলে, জানিস। জানি, দেখে মনে হয় না, কেউ জানে না, কিন্তু বিশাল ন্যাকা…এক একটা ঝামেলায় পড়ি আর মনে হয় কেউ এসে উদ্ধার করবে আমাকে। কেউ এসে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে…শালা সব ঝামেলায়…’
পাঁচিল থেকে নেমে আসতে যাচ্ছিল ঈশানী। এমন সময় ওর পকেটের মধ্যে ফোনটা বেজে ওঠে। আননোন নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করে কানে চেপে ধরে ও। ওপাশ থেকে একটা আধা পরিচিত গলা ভেসে আসে, ‘কী রে, আছিস কেমন?’
‘কে বলছেন?’
‘শুনলাম নাকি ছেলে দেখা হচ্ছে?’ ওপাশের গলাটার মধ্যে কী যেন আছে। ঈশানী একটু অবাক হয়। মা সাধারণত ওর নম্বর পাত্র-পাত্রী বিজ্ঞাপনে দেয় না। তাহলে এই নাম্বার লোকটা পেল কী করে?
‘আপনি ভুল নম্বরে কল করেছেন। আমি একটু…’
‘তা আপনি পার ঘণ্টা কীরকম চার্জ করেন?’ ওপাশের গলার মধ্যে এবার একটু ব্যঙ্গ এসে মেশে। ঈশানীর মাথাটা দপ করে জ্বলে ওঠে, দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘হোয়াট দা ফাক ডু ইউ মিন বাই দ্যাট? কে বলছেন আপনি?’
‘কেন রে রেন্ডি, যার সঙ্গে এতদিন শুয়েছিস তার গলা চিনতে পারছিস না?’
এতক্ষণে গলাটা চিনতে পারে ঈশানী। এই খিস্তিটা দেওয়ার একটা বিশেষ ধরন আছে। জীবনে এতবার শুনেছে খিস্তিটা কিন্তু এরকম বুকে এসে ছুলে দিতে পারেনি কেউ। চার বছর এই মানুষটার সঙ্গে প্রেম করেছিল ও। ফোনের উপর ওর হাতের চাপ আরও শক্ত হয়।
‘আমি তোর সঙ্গে কোনও কথা বলতে চাই না। ফোনটা রাখি ব্লাডি মাদারফাকার…’
‘চোপ! তোর মতো রেন্ডির সঙ্গে কথা বলার এমনিতেও কোনও শখ নেই আমার। তোর বেশ্যাবৃত্তির জন্য আমি কেস খাচ্ছি সেটা জানাতেই কল করেছিলাম…’
‘বলে যা, তারপর রেখে দে…’
ওপাশের মানুষটা একবার গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে শুরু করে, ‘শোন। আমার ফোনটা খারাপ হয়েছিল বলে সার্ভিসিংয়ে দিয়েছিলাম। তো ফেরত নিতে গিয়ে দেখি ছেলেটা বলছে ফোনটা সারাতে দেড় লাখ টাকা লাগবে…’
টাকার অঙ্কটা অবিশ্বাস্য লাগে ঈশানীর কানে। কিন্তু কিছু বলতে পারে না।
‘আমি বললাম, বাঁড়া ফোনের দামই হাজারকুড়ির বেশি হবে না সেটা সারাতে দেড় লাখ লাগবে কেন? শুয়োরের বাচ্চা বলে ফোনের মেমোরিতে নাকি কীসব লোচা রয়েছে। আমি বললাম কীসের লোচা। তো সে দাঁত কেলিয়ে আমাকে কিছু ছবি খুলে দেখালো…’
হুট করেই থেমে যায় ওপাশের ছেলেটা। ঈশানী এবার অধৈর্য হয়, ‘ছবি? কীসের ছবি?’
‘তোর, আমার। আর আমাদের ন্যাংটো বডির…ছবিগুলো শালা ফোনে রয়ে গেছে আমার খেয়ালই ছিল না ল্যাওড়া। তো আমাকে বলল সে ছবিগুলো নাকি ও শালা কপি করে নিয়েছে। এখন টাকাক’টা পেলে ছবিগুলো ডিলিট করে দেবে। আর না পেলে তো বুঝতেই পারছিস মাইরি…’
ঈশানী কোনও কথা বলে না। বাইরে বৃষ্টির আওয়াজ ওর কানে প্রবেশ করে না। ফোনটা ভীষণ রকম গরম হয়ে ঠেকছে ওর কানে।
‘বিশ্বাস কর ভাই, আমি অনেক তেন্ডাইমেন্ডাই করলাম। মাল কিছুতেই শুনতে রাজি নয়। শেষে একলাখ তিরিশে রফা হয়েছে। এবার তুই তো বুঝতেই পারছিস পাপ তো একা আমার নয়…’
‘আমি কী করব?’ ঈশানীর গলার স্বর শান্ত শোনায়।
‘পর্নস্টার হতে চাইলে কিছুই করবি না। যদি না চাস তাহলে টাকাটা তোকেই দিতে হবে। অত কিছু যায় আসে না। এবার তুই ভেবে দেখ…’
কথা শেষ হওয়ার আগেই ফোনটা রেখে দেয় ঈশানী। একবার ঠোঁট কামড়ে বাইরের দিকে তাকায়। ওর মুখে ঠিক কী অনুভূতি খেলা করছে তা বোঝা যায় না। কিছুক্ষণ স্থির হয়ে সেদিকে চেয়ে থেকে সরে আসে ও।
মাথাটা ঘোরাতে গিয়ে কাকতাড়ুয়াটার দিকে চোখ পড়ে যায়। ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, ‘কী দেখছিস বল তো?’
উত্তর আসে না। তেমন হাসিমুখেই কাকতাড়ুয়াটা চেয়ে আছে ওর দিকে। ঈশানী কাঁধ ঝাঁকায়, ‘আমারও এসবে কিছু যায় আসে না। বাড়ির সামনে গিয়ে দুটো খিস্তি দিলেই…’
থেমে যায় সে। গলকণ্ঠটা একটু ওঠানামা করে। ছাদের পাঁচিলটাই একবার শক্ত করে ধরে, ‘আসলে মোটামুটি সালটেই নিতাম যদি আমার বাপটা…’
কাকতাড়ুয়ার দিকে আবার তাকায় ঈশানী, ‘কিছু বলতে পারতাম না হয়তো…কিন্তু জীবনে শালা যতই কষ্টে থাকি, যতই প্রবলেমে থাকি, বাপের কাছে গিয়ে বসলে সব ঠিক হয়ে যেত। বাবা চলে যাওয়ার পর থেকেই কেমন যেন…কেমন…’ পরের শব্দগুলো অনেকক্ষণ পর উচ্চারণ করে, ‘অসহায় লাগে…’
কয়েক সেকেন্ড ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকে ঈশানী। বৃষ্টি এখন মুষলধারে পড়তে শুরু করেছে। ওর বলা কথাগুলো বৃষ্টির আওয়াজের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। আর ছাদের পাঁচিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ওর শরীরটাও সেই বৃষ্টির ছাটে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। এই কাকতাড়ুয়াটা ছাড়া পৃথিবীর অন্য সমস্ত প্রাণীর কাছে ওর সব অস্তিত্ব মুছে গেছে এই মুহূর্তে। ওর মাথাটা নিচের দিকে নেমে আসে, শরীরটা কেঁপে ওঠে একবার।
‘আমি আর পারছি না…আমি সত্যি পারছি না আর…’ ফুঁপিয়ে ওঠে ঈশানী। অনেক দিন পর শক্ত মেয়েটার চোখ ফেটে জল আসে। পিঠটা দুমড়ে বেঁকে যায়। দুটো হাত দিয়ে কাকতাড়ুয়ার একটা খুঁটি খামচে ধরে ও, ‘আমি আর কত কিছু সহ্য করব, আর কত…আমিও তো মানুষ একটা…’ অবোধ শিশুর মতো ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে ঈশানী। বহু বছর পর।
রাতে একটা খটখট আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল ঈশানীর। ছাদের দিক থেকে আসছে আওয়াজটা। আড়চোখে একবার ঘড়ি দেখে নিল সে। আড়াইটে বাজে। ছাদের দরজা ও নিজে বন্ধ করে এসেছে। কে আছে ছাদে? এক যদি বাইরে থেকে কেউ…
হাত বাড়িয়ে ফোনটা একবার দেখে নেয় ঈশানী। একটা মিসড কল ফুটে আছে সেখানে। গার্গী ফোন করেছিল মিনিট খানেক আগে। ও রিং করতে ওপাশ থেকে তার উদ্বিগ্ন গলা শোনা যায়, ‘ভাই তুই ঠিক আছিস তো?’
‘আছি মোটামুটি, তোর বাড়ির কী অবস্থা?’
‘আগের থেকে বেটার। দু-একদিনের মধ্যে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে মনে হয়। তবে আমি তোকে…’
একটু ইতস্তত করে গার্গী। কী যেন বলতে চেয়েও নিজেকে আটকাচ্ছে সে। ঈশানী তাড়া দেয় তাকে, ‘রাতবিরেতে কী ছেনালি করছিস শালা। বল না কী বলবি?’
‘তোর সেদিন রাতের কথা আর কিছু মনে পড়েনি?’
‘উঁহু…’
‘আমার অল্প অল্প মনে পড়েছে।’
‘কী মনে পড়েছে?’
আবার ওপাশ থেকে গার্গীর কাটাকাটা গলার আওয়াজ পাওয়া যায়, ‘তুই শিওর তোর শরীরে কোনও মেজর ক্ষত নেই? মানে কোনও শুকনো রক্তের দাগ…’
‘না তো, কেন?’
‘আমার স্পষ্ট মনে পড়ছে তোকে সে রাতে ছুরি মেরেছিল কেউ। ঠিক ছুরি কিনা মনে পড়ছে না, কিন্তু কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে…’
‘কী বলছিস শালা! মাথা খারাপ নাকি? ছুরি খেলাম আমি আর গলা টিপে খুন হল অভি?’
‘অভির কথা কিছু মনে পড়ছে না। কিন্তু তুই মাটির উপর পড়েছিলি। তোকে কে ছুরি মেরেছে জিগ্যেস করেছিলাম আমি। তুই কথা বলতে পারছিলিস না। কোনরকমে আঙুল তুলে মাঠের একটা জায়গা দেখিয়েছিলি…’
‘কী ছিল সেখানে?’
‘কিছু ছিল না।’ গার্গীর গলা এবার ফিসফিসে শোনায়, ‘মানে তখন কিছু ছিল না। কিন্তু একটু আগেই ছিল। একটা কাক…কাক…’
‘কাকতাড়ুয়া?’ ঈশানীর মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে আসে শব্দটা।
‘তোর মনে আছে ওটার কথা? সেদিন রাতে ওই কাকতাড়ুয়াটা নিয়েই কিছু ঘটেছিল…’
ঈশানী অস্থির হয়ে ওঠে। দু’হাত দিয়ে মাথার চুল খামচে ধরে সে। প্রথম থেকে ধীর গলাতে বলে, ‘তারপর কী হল?’
‘তারপর…তারপর…তুই…মরে গিয়েছিলি…’
হেসে ওঠে ঈশানী। এতক্ষণ গার্গীর কথায় একটা হালকা আগ্রহ জাগছিল ওর মনে। কিন্তু এই শেষ কথাটায় মেজাজটাই কেমন ফুরফুরে হয়ে গেল ওর, ‘আচ্ছা কাল দেখা কর অফিসের আগে। ফুলমালা আনিস মনে করে…’
ফোনটা রাখতে রাখতে একবার থমকাল ঈশানী। ছাদের দিক থেকে একটু আগের আওয়াজটা আবার এসেছে। চোরছ্যাঁচড় এল নাকি?
কিন্তু ওদের বাড়ির যে অবস্থা ভালো নয় তা বাইরে থেকে বাড়িটা একবার দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যায়। সেখানে কে চুরি করতে আসবে?
নাহ্, ছাদে কী হচ্ছে সেটা নাহয় একবার দেখেই আসা যাক।
মোবাইলে আলোটা জেলে ও বাইরে বেরিয়ে আসে। এত রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চয়ই। মায়ের ঘরে একবার উঁকি দিয়ে দেখে মশারির মধ্যে মা পাশ ফিরে শুয়ে আছে। বাইরে থেকে ল্যাম্পপোস্টের আলো এসে পড়েছে তার গায়ে।
একবার আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসে ছাদে। মনটা একটু হালকা হয়ে আসে। দূরের আকাশে চাঁদ ঝুলে আছে। কয়েকটা বাদুড় মাঝে মধ্যে ওড়াউড়ি করছে তার পাশ দিয়ে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল ঈশানী। এবং নিতেই বুঝতে পারল কাল রাতে যে ক’টা রজনীগন্ধা ফুটেছিল তার থেকে আজ কয়েকটা কম ফুটেছে।
ফাঁকা ফুলের টবগুলো পড়েছিল একপাশে। সেদিকেই এগিয়ে যায় ঈশানী। কাল অফিস থেকে ফেরার সময় অন্য কোনও গাছ কিনে আনবে।
বৃষ্টির জলে ভরে আছে টবটা। নিচের দিকটা এবড়ো খেবড়ো থাকায় সেটা হালকা টোকাতেই নড়াচড়া করে। সম্ভবত এতক্ষণ কোনও পাখি এসে বসেছিল তার উপর। ফলে নড়ছিল টবটা। ভারী টব নড়ার ফলে যে আওয়াজটা হচ্ছিল সেটাই নিচ থেকে শুনতে পাচ্ছিল ও!
একটু নিশ্চিন্ত হয়ে আলোটা নিভিয়ে দেয় ঈশানী। এবং সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল করে ছাদে আরও একটা আলো জ্বলছে। গত মাসেই গুপ্তদার বউ সন্ধেবেলা ছাদে জামাকাপড় মেলতে এসে পা ঠুকে পড়েছিলেন। তারপর থেকে ওরাই দায়িত্ব নিয়ে পাখির শেডের তলায় লাগিয়ে দিয়েছিল আলোটা। সেই আলোতেই ছাদটা অর্ধেক আলোকিত হয়ে থাকে।
হঠাৎ একটু বিরক্ত লাগে ঈশানীর। চরাচর ডুবে আছে অন্ধকারে। কোথাও কেউ নেই। কেবল মাঝে একটা ক্যাটক্যাটে এল.ই.ডি লাইট জ্বলছে।
কী মনে হতে ও এগিয়ে এসে আলোটা নিভিয়ে দেয়। শেডের নিচে এখন ঘন অন্ধকার। চাঁদের আলো পড়ছে না সেখানে। কাকতাড়ুয়ার মুখ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। সেদিক থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিয়ে আবার ছাদের সিঁড়ির দিকে পা বাড়াচ্ছিল ঈশানী। পেছন থেকে হঠাৎ একটা খসখসে আওয়াজ পেয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে।
খুব নরম অথচ স্পষ্ট আওয়াজ। যেন অন্ধকারের মধ্যে আওয়াজ না করে সাবধানে চলতে গিয়ে কিছু মাড়িয়ে ফেলেছে কেউ।
‘কে?’
ঈশানী জানে ছাদে এই মুহূর্তে ও ছাড়া আর কেউ নেই। তাও প্রতিবর্তক্রিয়ার মতোই বেরিয়ে আসে প্রশ্নটা।
আবার একটা আওয়াজ আসে শেডের তলার অন্ধকার থেকে। এবার যেন ইচ্ছা করেই করা হয়েছে আওয়াজটা। ঈশানী সাহসে ভর করে এক পা এগিয়ে যায় সেদিকে, ‘কে দাঁড়িয়ে আছে?’ তার গলার স্বরে আত্মবিশ্বাস মেশে এবার।
‘আপনি চলে যাবেন না প্লিজ…’
অন্ধকার থেকে ভেসে আসা গলাটা একটা শিরশির অনুভূতি খেলিয়ে দেয় ঈশানীর বুকে। হাতটা অবশ হয়ে আসে ওর। স্পষ্ট দেখেছে শেডের নিচে কাকতাড়ুয়াটা ছাড়া আর কিচ্ছু ছিল না। তাছাড়া এই গলাটাও ওর চেনা…
‘কে আপনি? ছাদে কী করছেন?’ ঈশানী বোঝে ওর গলা কাঁপছে। উত্তেজনাটা কিছুতেই লুকাতে পারছে না ও।
‘আপনি আলো জ্বালাতে পারেন। আমি ভূত-প্রেত নই…শুধু ভয় পেয়ে চলে যাবেন না…’
কাঁপাকাঁপা হাতেই মোবাইলের আলোটা জ্বালায় ঈশানী। তারপর ফোনটা তুলে ধরে সামনের দিকে। সে আলো গিয়ে পড়ে শেডের তলায় একটা অবয়বের উপরে। আধো অন্ধকারে একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।
একটু আগে কাকতাড়ুয়াটা যেখানে দাঁড়িয়েছিল এখন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা সম্পূর্ণ মানুষ। এবং সে মানুষ ঈশানীর চেনা—সে মানুষ ঈশানী নিজে।
ঈশানীর মনে হয় ওর সামনে যেন কেউ একটা আয়না এনে রেখেছে। ওর হাতের আলোটা কেঁপে যায়। বাঁ হাত দিয়ে চোখ কচলে নেয় একবার। বিড়বিড় করে বলে, ‘আজ রাতে কি তাহলে গাঁজাটা…’ একপা পিছিয়ে গিয়ে বলে, ‘আপনি…আপনি আমার মতো…’
ওর উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার মুখে বিড়ালের মতো সতর্কতা। সেই সঙ্গে খানিকটা ভয়, ‘আমি আপনি নই। কেবল ওই মুখটা আপনি নিজের মতো করে এঁকেছিলেন বলে…’
‘কে…কে আপনি?’ এতক্ষণে শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে চিৎকার করে ওঠে ঈশানী।
‘আমি কাকতাড়ুয়া…’
রাতের হাওয়া যেন আচমকাই বেগ বাড়িয়ে ঝাপটা মারে ঈশানীর মুখে। ওর চুল উড়ে এসে পড়ে মুখের সামনে। আকাশে উড়ন্ত বাদুড়গুলো মুহূর্তে কোথায় যেন গায়েব হয়ে যায়। চরাচর গ্রাস করে নেমে আসে নিস্তব্ধতা।
‘মানে আপনি সেদিন…কী চান আপনি?’ ঈশানী আবার সাহস জড়ো করার চেষ্টা করে।
‘উত্তর। আপনার মতোই। আমি কে, কোথা থেকে এলাম, কেন এলাম…কেন সবকিছু আমার চোখের সামনে…আর তারপর…’
‘তারপর কী?’ ঈশানী থমথমে গলায় জিগ্যেস করে।
‘আপনি একটা কাজ করে দিতে পারবেন আমার?’
‘কী?’
‘আমাকে মেরে ফেলতে পারবেন?’
কথাগুলো ঈশানীর মাথায় ঢোকে না। সত্যি নেশার ঘোরে দেখছে না তো এসব? অবিকল ও নিজে দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। গায়ে সেই কাকতাড়ুয়ার ছেঁড়া জামা আর একটা ছিটের প্যান্ট। ও কিছুই উত্তর দিতে পারে না।
কাকতাড়ুয়াকেও বিভ্রান্ত দেখায়। দুহাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে ছাদের একদিকে সরে আসে সে। বাইরের অন্ধকারে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িগুলোর দিকে চেয়ে কী যেন খুঁজতে থাকে ক্রমাগত।
‘কিন্তু আপনি কাকতাড়ুয়া থেকে মানুষ হলেন কী করে?’ ঈশানী এগিয়ে যায় মানুষটার দিকে।
‘অন্ধকারে। আমার শরীরের উপর শুধুমাত্র অন্ধকার থাকলেই আমি বদলে যেতে পারি। কাকতাড়ুয়া থেকে মানুষ আর মানুষ থেকে কাকতাড়ুয়ায়…’
সেদিন গাড়ির ডিকির কথা মনে পড়ে যায় ঈশানীর। ডিকি বন্ধ করতেই অন্ধকারে ঢেকে যায় ভিতরটা।
অবিকল নিজের মতো দেখতে মানুষটার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় ঈশানী। রাতের শান্ত হাওয়া এতক্ষণে ওদের ঘিরে বইতে শুরু করেছে। কয়েক সেকেন্ড স্থির চোখে সেই মুখটার দিকে চেয়ে থাকে সে। আয়নায় কিংবা ছবিতে নিজেকে এমনটাই দেখেছে এতদিন। ভারি অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয় ওর। ধীরে সুস্থে বলে, ‘জানি না স্বপ্ন দেখছি কিনা। কিন্তু যদি সত্যি হয় তাহলে নিশ্চয়ই সাহায্য করব আপনাকে…’
কাকতাড়ুয়া এবার মিষ্টি করে হাসে। ওর দিক থেকে মুখ না ফিরিয়েই বলে, ‘আমার আগে তোমার নিজের সাহায্য দরকার।’
ঈশানী প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে যায়, ‘ওঃ, তুমি শুনেছ সব…’
‘আমার তো শোনা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। তাছাড়া আমাদের দুজনের পরিস্থিতি একই, তাই না?’
‘মানে?’
‘জীবনে কোথায় যাব, কী করব কিছুই জানি না। শুধু পাগলের মতো উত্তর খুঁজে চলেছি…’ কথাটা বলে মেয়েটা পাঁচিলের উপরে উঠে বসে। পা দুটো ঝুলিয়ে দেয় বাইরের দিকে। ঈশানী ওর পেছনে এসে দাঁড়ায়।
দূরে কলকাতা শহর ঝিমিয়ে আছে। ভালো করে কান পাতলে শোনা যায় কোথা থেকে যেন একটা বিড়ালের কান্না ভেসে আসছে…নাকি গাড়ির আওয়াজ! রাস্তা দিয়ে কেউ কি হেঁটে চলে গেল? কটা বাজে আন্দাজ করা যাচ্ছে না।
একসময় ঈশানী ওর আরও কাছে সরে এসে বলে, ‘আমার অনেক কিছু জিগ্যেস করার আছে তোকে…সেদিন রাতে…’
‘হবে সব…’ মেয়েটা স্থির চোখে চায় ওর দিকে, ‘সময় আছে অনেক। তার আগে শুধু বল…’
‘কী?’
‘ভয় পেয়ে চলে যাবি না কোথাও…’
‘যাব না…’
রাতের হাওয়া ওদের ছুঁয়ে বইতে থাকে। কখন যেন চাঁদের বুক থেকে মেঘ সরে গেছে…