চতুর্থ অধ্যায়
মুখে বিড়ি গুঁজে দেওয়ালে রং চড়াচ্ছিল ঈশানী। রঙের বালতির মধ্যে ব্রাশ ডুবিয়ে রংটা মেশাচ্ছিল ভালো করে। সেই টকটকে লাল রং তুলে ব্রাশ বুলাচ্ছিল দেওয়ালে। ওর পাশেই দাঁড়িয়েছিল অভিরূপা। বাঁশের কঞ্চির ডগায় পতাকার ফিনফিনে কাপড় জড়াচ্ছিল সে। ঝান্ডাগুলো বানিয়ে নামিয়ে রাখছিল পাশে।
এমন সময় পেছনে একটা বাইক এসে থামতে ও মুখ তুলে তাকাল। তারপর বিড়িতে আর একটা টান দিয়ে আবার দেওয়ালে রং চড়াতে লাগল। লোকটাকে ও চেনে। কঞ্চিদা, ভালো নাম কৃষ্ণেন্দু। পাড়ার বখাটে ছেলে, ছেলেবেলায় ঈশানীকে কয়েকবার প্রোপোজ-টোপজ করেছিল। বাপের মোটামুটি পয়সা ছিল বলে পড়ালেখা তেমন করার দরকার হয়নি। তবে একবার কীসব সোনা লেনদেনের কেসে ফেঁসে গিয়ে গয়নার দোকানের মালিকের কাছে উত্তাল ক্যালানি খেয়েছিল। শুধু তাই নয়, কঞ্চিকে ভিতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে নাকি নিজের পেছন চাটিয়েছিল। সেই থেকে পেছন চাটা একরকম নেশা হয়ে গেছে কঞ্চির।
সেই গয়নার কেসে ফেঁসেই পার্টি করা শুরু করেছিল কঞ্চি। তারপর থেকে সেই গরু দুইয়ে দুইয়েই মালামাল হয়ে গেছে। মেজাজ বদলে গেছে তখন থেকেই। কঞ্চি কম বয়সেই বুঝেছিল চারপাশের যা পরিস্থিতি তাতে মাথার বদলে জিভ চালানোই ভালো। আগের বছর ভোটে জিতে এলাকার কাউন্সিলর হয়েছে।
চোখ থেকে সোনালি ফ্রেমের চশমাটা খুলে বুকের কাছে গুঁজে নেয় কঞ্চি, তারপর একটু ভারিক্কি গলায় বলে, ‘তুই আজকাল সিগারেট ছেড়ে বিড়ি খাচ্ছিস কেন রে?’
‘পয়সা নেই, তাই।’ ঈশানী মুখ না ঘুরিয়েই বলে।
‘সারাদিন পড়াশোনা, কাজকর্ম ছেড়ে, ভোটের আগে দেওয়াল লিখলে কি আর পকেটে পয়সা আসে?’
ঈশানী মাথা নাড়ে, ‘না, না পয়সা আসে না। উটকো লোক আসে ফোকোটের জ্ঞান দিতে…’
কঞ্চিদা বাইক থেকে নেমে পড়ে। বাইকের সিটের উপরে হাত বুলিয়ে ধুলো ঝেড়ে বলে, ‘ফোকোটের জ্ঞান নয়, তবে একটা চাকরি দিতে পারি তোকে। করতে চাস তো বল…’
ঈশানীর মুখে একটা বাঁকা হাসি ফোটে, ‘তোমার বাপ ঠাকুরদার ব্যবসা চলছে লোকের চাকরি মেরে, আর তুমি এসেছ চাকরি দিতে? ফোটো তো এখান থেকে!’
‘সেই বাপ ঠাকুরদারই বাড়িতে চাকরির কথা বলছি…’ কঞ্চি বাইকের আয়নায় একবার মুখটা দেখে নেয়, ‘বাপিদার মেয়েটা আছে না? ক্লাস ফোরে পড়ে। ইংলিশ মিডিয়াম।’
‘তো আমি কী করব তাতে?’
‘আঁকা শেখাবি। উইকে চারদিন গিয়ে আঁকা শিখিয়ে আসবি। মাস গেলে দশহাজার টাকা। রাজি থাকলে বল…’
‘রাজি নেই।’ ঈশানী ব্রাশে ঘন করে রং লাগিয়ে কপাল থেকে চুল সরায়। একটু আগের কথাগুলো যেন শুনতেই পায়নি সে।
‘তা কেন থাকবি? ওই তো একটা সেক্টর ফাইভের চাকরি করিস। কত মাইনে পাস জানা আছে। আজ কিছু জমানো টাকা পয়সা থাকলে তো বাপটাকে বাঁচাতে পারতিস। কাল যদি মায়ের কিছু হয়, কী হবে?’
‘মরে যাবে…’ এতক্ষণে দেওয়ালের দিক থেকে ওর দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকায় ঈশানী।
‘তাও তুই বাপিদার মেয়েকে আঁকা শেখাবি না?’ কঞ্চির মুখটা একবার কঠিন হয়ে ওঠে। বাপিদাকে মনে হয় কথা দিয়ে এসেছে সে। ঘ্যাসঘ্যাসে গলায় বলে, ‘এত অহঙ্কার কোত্থেকে আসে তোর…’ তারপর দেওয়ালে আঁকা চিহ্নটার দিকে চেয়ে একটা বাঁকা হাসি হাসে কাঞ্চি বলে, ‘যে পার্টি জিরো হয়ে গেচে তার দেওয়াল লিখে কী লাভ কে জানে…’
অভিরূপা এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল। এই কথাটা কানে যেতেই ঈশানীর একটা হাত চেপে ধরল ও, ‘ছেড়ে দে রুনু, মাথা গরম করিস না…’
কিন্তু ততক্ষণে আগুনে ঘি পড়ে গেছে, হাতের ব্রাশটা পাশে রেখে কঞ্চির দিকে এগিয়ে এল ঈশানী, ‘লাভ? তোমার মুখ দেখে তো মনে হয় না তোমাদের আদৌ দাঁড়ায়-টাড়ায় বলে। তাও বাচ্চামেয়েদের দিকে তাকিয়ে তোমাদের যা লাভ হয়, ঠিক তাই…’
‘মানে! কী বলতে চাইছিস কী তুই?’
‘মানে ওটা ভিতর থেকে আসে। ইন্সটিঙ্কট বলে। বাপ ঠাকুরদার থেকে পেয়েছ শুধু আলুর দোষ আর এই এত্ত বড় একটা জিভ। যেটা দিয়ে যখন তখন যার তার পোঁদ চেটে দেওয়া যায়…’
কঞ্চির মুখটা একবার শ্বাপদের মতো ফুঁসে ওঠে। চোখদুটো মুহূর্তে হলদে হয়ে যায়, ‘আরও খারাপ দিন আসবে তোর রুনু। সেদিন দেখব এত চোপা কোথায় যায় শালা…হ্যাট…’ হাতের এক ঘুষিতে ঈশানীর স্কুটির একটা আয়নার ডান্ডা বাঁকিয়ে দেয় কঞ্চি। যেন মনের আক্রোশ ঝেড়ে ফেলতে চায়।
মাটির উপর থুতু ফেলে বাইকে উঠে স্টার্ট দেয়। মালিকের মন বুঝেই হিংস্র ঘড়ঘড় শব্দ করে রাস্তা দিয়ে ছুটে চলে যায় সেটা।
অভিরূপা ওর চলে যাওয়া পথের দিকে চেয়ে নিভে আসা গলায় বলে, ‘চাকরিটা করতে পারতিস। সকালের দিকটা তো ফাঁকাই থাকিস। উপরি কিছু আয় হত। টাকাটা এই মুহূর্তে কতটা দরকার তোর ভুলে যাচ্ছিস?’
উঠে গিয়ে আয়নাটা সোজা করে ঈশানী, তারপর সেটা পরিষ্কার করতে করতে বলে, ‘পারতাম। কিন্তু এই আয়নাগুলোই শালা যত নষ্টের গোড়া। আমি যদি কোনওদিন মুখ্যমন্ত্রী হতাম না, আগে নিয়ম করে সব আয়না ভেঙে ফেলতাম…’
অভিরূপা তাও তেমন মুখ ফুলিয়েই দাঁড়িয়ে থাকে, ‘বাড়িতে দুটো মানুষ একা থাকিস। বিপদে পড়লে আজকাল লোকে পাশে এসে দাঁড়ায় না। তাও আবার মিডল ক্লাসের। রাস্তাঘাটেও গন্ডগোল করতে পারে। আমার চিন্তা হয় তোর জন্য…’
অভিরূপার গালে হাত রাখে ঈশানী, ‘মাঝে মাঝে ভাবি পয়সাকড়ি হলে ভালোই হত। বড় গাড়ি, বড় বাড়ি…তারপর মনে হয়…’
‘কী?’
ঈশানী কাঁধ ঝাঁকায়, ‘বেশি পয়সা হলে দেখতে খারাপ হয়ে যাব। ভালো ছেলে পটবে না। চ, বাড়ি যেতে হবে…’
অভিরূপা স্কুটিতে উঠতে উঠতে বলে, ‘তুই এদের অপমান করে ঠিক করিস না। রুলিং পার্টির লোক হাতে রাখা দরকার…’
বিড়িটা রাস্তার ধারে ফেলে দেয় ঈশানী, তারপর ওর হাত থেকে ঝান্ডাটা নিতে নিতে বলে, ‘বেশ তো, তুই হাতে রুলিং পার্টির লোক রাখ। আমি ঝান্ডা রাখছি…’
পতাকাটা স্কুটির সামনে গুঁজে নেয় ঈশানী। তারপর স্কুটিটা ছুটিয়ে দেয় রাস্তার উপর দিয়ে। এখান থেকে অভিরূপার বাড়ি যেতে গেলে ওর বাড়ি পেরিয়ে যেতে হয়। তার আগে একটা ছোট বাজার পড়ে। খুব ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে বাজারে আসত ঈশানী। মা যখন মাংস কিনত ও কিছুটা সরে দাঁড়াত। মুরগি কাটা দেখতে অস্বস্তি হত ওর। বিশেষ করে কাটার ঠিক আগে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার মুহূর্তে মুরগিগুলো যে চিৎকারটা করত সেটা খুব চেনা মনে হত। কে জানে কোথায় শুনেছে, মাঝে মাঝে মনে হয়, হয়তো পৃথিবীর সব প্রাণীর মরতে না চাওয়ার চিৎকার একই রকম…
সেই দোকানটা পেরিয়ে গেলেই একটা মাছের বাজার। মাছের গন্ধ একদম সহ্য হয় না ঈশানীর। ও জায়গাটায় এসে অজান্তেই ওর চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
স্কুটি চালাতে চালাতেই পেছন ঘোরে ঈশানী, ‘আমার পয়সা হলে শুধু এইটুকু শখপূরণের আছে, বুঝলি?’
‘কী শখ?’
‘একদিন স্কুটি করে বাড়ি ফিরব। আর এই মাছমাংসের গন্ধের মধ্যে দিয়ে ফিরতে হবে না। শুধু এইখানটায় এসে চোখ বন্ধ করলে ভেজা মাটির গন্ধ পাওয়া যাবে…’
‘এ বাড়িতে যতদিন আছিস ততদিন সেটা সম্ভব নয়।’
‘পালিয়ে যাব বলছিস?’
যে রাস্তাটার উপর দিয়ে চলেছে স্কুটিটা তার বেশিরভাগটা জুড়ে মাটির উপর আলপনা আঁকা আছে। রংবেরঙের নকশায় সেজে আছে রাস্তাটা। সরস্বতী পুজোর আগে গোটা রাস্তা জুড়ে এক দল ছেলেমেয়ে সারা রাত জেগে আলপনা দিত। গোটা ব্যাপারটার দায়িত্ব পড়ত ঈশানীর ঘাড়ে। কাজটা ভালোবেসেই করত ও। সরস্বতী পুজো হয়েছে তাও অনেকগুলো মাস হতে চলল। এতদিনে সে আলপনা কিছুটা ফিকে হয়ে গেলেও একেবারে উঠে যায়নি। তার উপর দিয়েই আপাতত ঈশানীর স্কুটির চাকা ছুটে চলেছে। সেদিকে চেয়ে থাকতে থাকতেই অভিরূপা বলে, ‘তুই কবে প্রথম কার্টুন এঁকেছিলি মনে আছে?’
হেলমেটটা মাথার উপর ঠিক করে বসাতে বসাতে ঈশানী মনে করার চেষ্টা করে। তারপর ঠোঁট উল্টে বলে, ‘উঁহু…কী জানি, মনে পড়ছে না…’
‘মাঝে মাঝে আমার মনে একটা প্রশ্ন আসে, জানিস?’
‘কী প্রশ্ন?’
‘তুই তো সত্যিই ছোটবেলা থেকে এত রকমের আঁকা আঁকতে পারতিস। রিয়েলিস্টিক ড্রইং, পোট্রেট, ল্যান্ডস্কেপ। সেসব এঁকে পয়সাকড়িও ছিল। সব কিছু ছেড়ে কার্টুন কেন?’
ঈশানী হাসে, ‘ছোটবেলা থেকে ওই একটা জিনিসই অস্ত্র ছিল আমার, সারকাজম। জীবনে আর কিছু তো করতে পারিনি। তাই শেষ পর্যন্ত ব্যঙ্গটাকেই হাতিয়ার করে নিলাম…’
‘উঁহু এটা তুই বলে বেড়াস। আসল কারণ অন্য কিছু…’
‘তোকে কে বলল?’
ঈশানীর দু’কাঁধে হাত রাখল অভিরূপা, ‘তোর এই উপর উপর কঠিন হয়ে থাকা পারসোনাটা আর কেউ না জানুক আমরা ভালো করে জানি…একদিন কেউ এসে এটা ঠিক ভেঙে দেবে, দেখে নিস তুই…’
‘ভেঙে দেবে বলতে?’ ঈশানী অবাক চোখে আয়নার দিকে চায়। অভিরূপা ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়—
‘কেন জানি না মনে হয় সেই যে ছোটবেলায় যেরম ভাবতাম—আমাদের জীবনে একটা স্যাঠাভাঙা প্রেম আসবে। সর্ষে খেতের মধ্যে বসে ম্যান্ডোলিন বাজাবে কেউ, কারও জন্য খুব কাঁদতে ইচ্ছা করবে, কারও জন্য হাসতে ইচ্ছা করবে, এক ঝলক দেখার জন্যও কোচিনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা করবে, কারোর বুকে মাথা দিয়ে ঘুমোতে ইচ্ছা করবে নিশ্চিন্তে…বড় হতে হতে আর মনে হয় ওসব কোনওদিন আর হবে না…ওসব ছোটবেলার খেয়াল হিসেবে ঠিক আছে…’
ঈশানী রাস্তার উপর চোখ রেখেই একটার পর একটা গাড়ি পাশ কাটিয়ে যেতে থাকে, ‘তোর প্রেমটা তো ঠিকই ছিল। কেটে গেল কেন বল তো?’
‘গেল না, দিলাম। আমার আর ভালো লাগছিল না।’
‘কেন?’
‘আমাকে ধরে রাখা অত সহজ নয় রে রুনু। আমার মাথাটা খুব গোলমেলে। কখন কী যে করি…আমিও কাউকে ধরে রাখতে পারি না…’
‘আপাতত আমাকে ধরে রাখ, নাহলে উল্টে পড়বি।’ একটা ইউটার্ন নিতে নিতে ঈশানী বলে। অভিরূপা হেসে ওর কাঁধ খামছে ধরে।
এরপর থেকে রাস্তাটা ফাঁকা। স্কুটির বেগ বাড়িয়ে দেয় ও। উদাস হয়ে কী যেন ভাবতে ভাবতে বলে, ‘আমার এক মামা একবার ক’টা জ্যোতিষীর বই কিনেছিল, বুঝলি? বেয়াড়া শখ চড়েছিল মাথায়। কিছুদিন সেইসব বই চর্চাটচ্চা করে সে শালা বলেছিল, বাইশ বছরের পর থেকে আমার ভাগ্য নাকি সুপ্রসন্ন হবে। আমার জীবনে এমন একজন আসবে যে জীবনের সব কালো ছায়া দূর করে দেবে। জীবনের মানে খুঁজে দেবে। প্রাণ দিয়ে রক্ষা করবে আমাকে। তোর ওই সিনেমার হিরোদের মতো…’
‘তোর তো বাইশ পেরিয়ে গেছে। তেমন কেউ কখনও আসেনি?’
স্কুটির জোর বাড়ায় ঈশানী, ‘এসেছিল। তবে বাইশ বছরে নয়। জন্ম থেকে। আমার বাপ…’
‘গোস্বামী স্যার তোমাকে ডাকছেন ওনার ঘরে…’
ল্যাপটপের স্ক্রিনে মুখ গুঁজেছিল ঈশানী। গার্ডদাদার কথাটা শুনে মুখ তুলল সে, ‘আমাকে! কেন? আমি আবার কী করলাম?’
‘তা তো বলতে পারব না। তুমি নিজেই গিয়ে দেখো। তবে মনে হল স্যারের মেজাজটা আজ ভালো নেই…’
সামনে মেলে থাকা কাগজগুলো একদিকে সরিয়ে রাখল ঈশানী। তারপর এক গ্লাস জল খেয়ে কিউবিকল ছেড়ে উঠে আইল দিয়ে হেঁটে এগিয়ে গেল কাচের ঘরটার দিকে।
হোসেন ওর পাশের চেয়ারে বসেছিল, সহানুভূতিমাখা গলায় বলল, ‘হাওয়া ভালো না। আজ গাঁড় ফাটল তোর।’
টিম লিডারের ঘরের দিকে হেঁটে যাওয়াটা মাঝেমধ্যে ওয়াক অফ সেম মনে হয় ওর। যেন ফাঁসির মঞ্চ অবধি ও হেঁটে যাচ্ছে আর বাকি কয়েদিরা ওর দিকে তাকিয়ে করুণার হাসি হাসছে। কিংবা থালা বাসন বাজিয়ে ফুর্তি করছে। তফাত কেবল একটাই, এখানে ফাঁসির পর আবার ফিরে আসতে হয়।
স্লাইডিং ডোরটা ঠেলে ঘরের মধ্যে মুখ বাড়াল ঈশানী। এই ঘরটার মধ্যে কেমন একটা টর্চার চেম্বারের গন্ধ আছে। এসিটা স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশি কমানো। বেশিক্ষণ দাঁড়ালেই কেমন গা শিরশির করে।
‘আমি আসতে পারি স্যার?’ ঈশানী একটু গলা খাঁকারি দিয়ে জিগ্যেস করে।
উত্তর না পেয়ে আবার গলা তোলে, ‘মে আই কাম ইন স্যার?’
‘ইউ শুড…’
সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে দিলেন গোস্বামী, ‘ইউ লুক এক্সজস্টেড। জল খাবে?’
প্রশ্নটার মধ্যে যে বক্রোক্তি মিশে ছিল সেটা বুঝতে পারল ঈশানী। টেবিলের উপর ঝুঁকে পড়ে একটু হাসলেন গোস্বামী, ‘বা ধরো চা, কফি, বা বন্ধুবান্ধব মিলে যেগুলো খাও। এই ফেসবুকে ছবি দেখি আর কী…’
ঈশানী মুখ সরিয়ে নেয় সেদিক থেকে, ‘ওসব আগের ছবি। বাবা মারা যাওয়ার পর ছেড়ে দিয়েছি। আপনি আমার প্রোফাইল স্টক করছিলেন নাকি?’
প্রশ্নটায় পাত্তা দিলেন না গোস্বামী, ‘তা ছেড়ে দিয়ে কী করছ এখন? মানে অফিস ছাড়া?’
‘চেষ্টা করছি কিছু করার। বাড়ি ফিরে এত ক্লান্ত থাকি যে আর নতুন করে কিছু…’
‘এই অফিসে কাজ করার পরেও বাড়ি ফিরে যদি তোমার কিছু করতে ইচ্ছা করে বুঝবে অফিসটা ঠিকঠাক করছ না…’
ঈশানীর মাথাটা গরম হয়। কোনরকমে হাতের মুঠো শক্ত করে কাঁধ ঝাঁকায় সে, ‘আমি বুঝতে পারছি না আপনি কী বলছেন? আমার টার্গেট ফুলফিল করা…’
‘টু হেল উইথ ইয়োর টার্গেট। তোমার কি মনে হয় কর্পোরেট সেক্টরে টার্গেট ফুলফিল করতে পারলেই তোমার সাতখুন মাফ হয়ে যাবে?’
ঈশানী একটা বাঁকা হাসি হাসে, ‘আমি ইচ্ছামতো খুন করতে পারলে আর মাফ চাওয়ার দরকারই হত না…’
টেবিলে হালকা একটা চাপড় মারেন গোস্বামী, ‘এই, তোমাদের জেনারেশনের এই মুখটার জন্যেই যত সমস্যা। যাদবপুর কি জেএনইউতে বসে দু চারটে ব্রা প্যান্টি আন্দোলন আর বড় বড় ভাষণ ছাড়া কোনও অউকাত নেই তোমাদের…’
‘ঠিক যেমন অউকাত শব্দটা নেই, বাংলায়…’ ঈশানী মুখ ফিরিয়ে একবার নাক চুলকে নেয়, ‘হঠাৎ আমার উপর এত রেগে গেলেন কেন? হয়েছেটা কী?’
‘উই হ্যাভ রিপোর্টস, তোমার আচার-আচরণ ঠিক নেই…’
‘ঠিকই বলেছেন। আমার কাছের কেউ না হলে এত ভালো করে চিনত না। দাবিটা কী?’
‘মিস্টার সোনাল ফ্রম গুজরাট তোমার সঙ্গে আলাদা করে কন্টাক্ট করেছিল প্রজেক্টের ব্যাপারে। তুমি তাকে ডিনাই করেছ কেন?’
‘প্রজেক্ট!’ ঈশানী ঝাঁঝিয়ে ওঠে, ‘কীসের প্রজেক্ট? কফি খাওয়ার? হেই ওয়ানা হ্যাভ সাম কোল্ড কফি উইথ ক্রিম? বাঞ্চত শালা…’
‘তুমি খাও না কফি?’
একটু পিছিয়ে বসে ঈশানী, ‘খাই। ওনার চেহারাটা দেখেছেন? আরে শুয়োরের বাচ্চা ওই চেহারায় ক্রিম খেলে ডায়াবেটিসে মরবি…’
‘শাট ইয়োর ফাকিং মাউথ আপ…’ টেবিলের উপর আক্রোশে পেনটা ছুড়ে ফেলেন মিস্টার গোস্বামী, ‘আর একটা কথা বললে কুত্তার মতো লাথি মেরে বের করে দেব অফিস থেকে। আমার অফিসে থাকতে গেলে তোমার উপর তলার কথা তোমায় শুনতে হবে। আর এই এটিটিউডটা বাইরের পাপোষে রেখে আসবে। মাসের শেষে স্যালারিটা এমনি এমনি ঢোকে না…’
ঈশানী কিছু বলে না। একটানা চেয়ে থাকে নিচের দিকে। ঘরের কনকনে এসিটার হাওয়া গরম হয়ে ওর গায়ে লাগে।
‘আর নিচে তাকিয়ে কী দেখছিস বাঁড়া? তাকা…’ গোস্বামীর কথাগুলো থুতুর মতো আছড়ে পড়ে ওর মুখে।
মুখ তুলে তাকায় ঈশানী।
‘ভালো করে মনে রাখ। তোকে কিনে রেখেছি আমরা। সেভেন হান্ড্রেড ফিফটি রুপি আ ডে। আমাদের কথায় তুই স্ক্রিনের দিকে তাকাবি, মেইল করবি, ঘাড় নিচু করে কাজ করবি। ইউ উইল ওয়াক দ্যা ওয়ে উই ওয়ান্ট, স্পিক দ্যা ওয়ে উই ওয়ান্ট, এন্ড ফাক দ্য ওয়ে উই ওয়ান্ট…’
ঈশানীর হাতে মুঠো খুলে যায়, বাবার কথা মনে পড়ে যায় ওর। একাত্তরের দশকে লাল ঝান্ডা নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়া বাবা। চাষির গান, বারুদের গন্ধ, ধানের খেতে লুকিয়ে থাকা রক্তের দাগ, পুলিশের এনকাউন্টার, ব্যারিকেড…
উঠে এসে ওর একটা হাত চেপে ধরেন গোস্বামী, ‘বুঝিস না কেন বল তো, তুই তো আমার মেয়ের মতো…খারাপের জন্য বলি?’
ঈশানীর মুখে কোনও কথা ফোটে না। এসির ঠান্ডা হাওয়ায় কয়েক সেকেন্ড পর সেই লাল রঙ নিজে থেকেই হালকা হয়ে আসে।
‘আমাকে ক্ষমা করো বাবা…’ বিড়বিড় করে উচ্চারণ করে সে।
‘কী বললে?’ গোস্বামী ফিরে তাকান ওর দিকে।
‘ওই যে আপনি মেয়ের মতো ভাবেন বললেন। তাই ক্ষমা চাইলাম। আর হবে না এরকম…’
গোস্বামীর ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই ঈশানী দেখল গার্ডদাদা দাঁড়িয়ে আছে ঘরের ঠিক বাইরেটায়। ওকে দেখে তার চোখ মুখ কেমন যেন নিভে এল।
‘তুমি একবার ওয়াশরুমে যাও দিদি। মুখটা কেমন যেন দেখাচ্ছে…’
‘লাগবে না। প্রেশার আছে কাজের…’ কথাটা বলে একরকম তাকে পাশ কাটিয়েই নিজের কিউবিকলের দিকে এগিয়ে গেল ঈশানী।
‘কী বলল রে তোকে?’ পাশ থেকে কে যেন জিগ্যেস করল। মানুষটাকে দেখতে পেল না ঈশানী।
নিজের কিউবিকলে এসে আবার ল্যাপটপ গুছিয়ে বসল সে। সামনের ছড়িয়ে থাকা কাগজগুলোর উপর কী যেন খুঁজতে থাকল মন দিয়ে। কালকের লগবুকের আপডেটটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না। ওটাকেই অ্যাটাচ করে একটা মেইল করতে হবে…
একটা সাদা পাতা খসে পড়ল ঈশানীর পায়ের কাছে। সেটা তুলে নিল। নাঃ, নিতান্ত অদরকারি কাগজ। ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দিতে যাচ্ছিল, থেমে গেল। ফেলেই তো দেবে কাগজটা।
ফাঁকা সাদা দিকটা উল্টে তার ওপরে বড় করে একটা বাক্য লিখল ঈশানী, ‘ক্ষমা করো বাবা…’
তারপর কী মনে হতে আবার লিখল। আবার, আবার…
ছোটবেলায় হাতের লেখা প্রাকটিস করার মতো লিখেই চলল ঈশানী…
‘আশেপাশে যা দেখতে পাচ্ছ তাই আঁকো।’ মুকুন্দ স্যার এই কথাটা রোজই বলেন। আর ক্লাস ভর্তি ছেলেমেয়েরা হাঁ করে স্যারের মুখের দিকেই চেয়ে থাকে। স্যার ওদের আপেল, আম আর কুঁড়েঘর আঁকতে শিখিয়েছেন। দুটো লাইন টেনে আকাশে উড়ন্ত পাখি আঁকতে শিখিয়েছেন। কিন্তু ওদের চারপাশে সেসব কিছুই নেই। যা আছে সেগুলো আঁকা ভারি শক্ত। সেগুলো মোটেই শুধু লাইন দিয়ে তৈরি নয়।
আজও কথাটা শুনে ক্লাসের বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোর মধ্যে তেমন কোনও হেলদোল দেখা গেল না। কেউ কেউ সাদা পাতার ওপরে আঁক কাটল। কেউ কুঁড়েঘরের চালা বানাতে বসল।
রুনু যেখানে বসে আছে তার পাশেই একটা খোলা জানলা। আঁকার ক্লাসে এটাই ওর জায়গা। যখন এখানে ভর্তি হয়েছিল তখন গরমকাল ছিল। জানলা দিয়ে রোদ আসত বলে এ সিটে কেউ বসতে চাইত না। রুনুই ওখানে গিয়ে বসে। আপাতত শীতকাল আসবে আসবে করছে। রোদের আমেজটা মন্দ লাগে না রুনুর। সকাল সকাল স্নান করে চুল আঁচড়ে মা ওকে স্কুলে পাঠিয়ে দেন। হিহি করে কাঁপতে কাঁপতে রোদের তাপ গায়ে মাখতে ভালোই লাগে।
কিন্তু ইদানীং এই জানলাটা ওকে টানে অন্য একটা কারণে। এই আঁকার স্কুলটা একতলা। জানলার ঠিক লাগোয়া একটা গাছপালার ঝোপ। রোজই জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সেই ঝোপে একটা সাপকে দেখতে পায় রুনু। বেশ বড়সড়ো চেহারা। ঝোপের মধ্যে থেকে সরসর করে সরে একদিক থেকে অন্যদিকে চলে যায়। মাঝে ওদের আঁকার স্কুলের জানালাটার কাছে এসে একবার থমকে দাঁড়ায়। আচ্ছা সাপটা ছেলে না মেয়ে? কে জানে, মনে মনে ওর একটা নাম দিয়েছে ঈশানী—চারু। ছেলেদেরও হতে পারে, মেয়েদেরও হতে পারে।
রুনু খেয়াল করে দেখেছে চারু রোজ ঠিক ওই জায়গায় এসে একইভাবে মাথা তুলে জানলা দিয়ে কী যেন দেখে। মনে হয় ওকেই দেখে। খয়েরি ডোরাকাটা গায়ের রং। খুদে খুদে চোখ দুটো যেন সারাক্ষণ জলে ভরে থাকে। ভারি মায়া লাগে ওই চোখের দিকে চেয়ে থাকলে।
সাপেদের এরকম অদ্ভুত স্বভাব আছে বলে রুনু আগে শোনেনি। প্রথমদিন অমন করে ঘাসের ভিতর থেকে মাথা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভয়ই লেগেছিল। কিন্তু রোজ একই ঘটনা ঘটতে ঘটতে ওর ভয়টা কেটে গেছে। বরঞ্চ এখন মনে হয় চারুর সঙ্গে যেন বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ওর।
সাপেদের তো হাত-পা নেই, তাই মাথা তুলেই ওর সঙ্গে গল্প করতে চায় সাপটা। মাঝে মাঝে জিভ বার করে। ভাবখানা এমন যেন একটু কথা বলতে পারলেই কত কী বলে ফেলত!
রুনু ভেবেছে একদিন চারুকে খেতে দেবে। সাপেরা কী খায়? ব্যাঙ খায় নিশ্চয়ই। কিন্তু ব্যাঙ পাবে কোথায়? আচ্ছা চারুর কি বিষ আছে? নিশ্চয়ই নেই। বাবা বলেছে, ফনাওয়ালা সাপেদের কেবল বিষ থাকে। আমাদের আশেপাশে যেসব সাপ ঘুরে বেড়ায় তাদের বিষ থাকার কথা নয়।
‘কী হল, তুমি আঁকছ না কেন? জানলার বাইরে তাকাও আর যা দেখছ তাই আঁকো।’
স্যারের ধমক খেয়ে আবার বাইরে তাকায় রুনু। চারু এখন ওর দিকে চেয়ে আছে। যেন চোখে চোখে কত কথা বলতে চাইছে ওর সঙ্গে। ভারি মিষ্টি একটা অনুভূতি হয় রুনু। ওর মনে হয় সাপটা চাইছে রুনু ওর একটা ছবি এঁকে দিক। বড় বড় আঁকিয়েদের যেমন মডেল হয়, সাপটা ওর মডেল হতে চাইছে।
জানালার দিকে এগিয়ে বসে রুনু। কী মনে হতে একবার সেদিকে তাকিয়ে হাত নাড়ে। ও স্পষ্ট বুঝতে পারে সাপটা যেন খুশি হয়। অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। আরও কয়েকবার জিভ বের করে কী যেন বলতে চায়…
ঠিক সেই সময় একটা থান ইট সজোরে এসে পড়ে সাপটার শরীরের ঠিক মাঝবরাবর।
বাইরে গার্জিয়ানরা এসেছিল বাচ্চাদের নিতে। তাদের মধ্যেই কয়েকজন দেখতে পেয়েছে সাপটাকে। তারপরে ছুড়ে মেরেছে ইটটা।
‘ওকে মারছ কেন?’ রুনু চিৎকার করে ওঠে। কিন্তু বাইরে ততক্ষণে হট্টগোল শুরু হয়ে গেছে।
‘কোনও আক্কেল নেই এদের! এত বাচ্চা আসে তার দরজার বাইরেই এত বড় সাপ!’
‘আর একটু হলেই কামড়ে দিত…মেরে দিন অজয়দা…’
ইটের ঘা খেয়ে সাপটা ঝোপের মধ্যেই পড়ে গেছে। খুব কি আঘাত লেগেছে ওর? রুনু জানলা ধরে দাঁড়িয়ে আবার চিৎকার করে ওঠে, ‘ওকে মেরো না, ওর বিষ নেই, ওর বিষ নেই…’
অভিভাবকদের মধ্যে কয়েকজন হট্টগোল করে এগিয়ে আসে। পাশের ঝোপ থেকে কয়েকটা লাঠি কুড়িয়ে নিয়েছে ওরা। আঘাত পেয়ে আর নড়তে পারেনি সাপটা। তেমন করেই আলগা হয়ে পড়ে আছে ঝোপের মধ্যে। হাত নেই, পা নেই, পলক নেই বলে যন্ত্রণাও বোঝা যায় না তার…
ঘাসের উপর একটু চলার চেষ্টা করে আবার ঘাসের উপরেই নেতিয়ে পড়ে সে। অভিভাবকের দল ততক্ষণে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেছে সাপটাকে। বারবার আঘাত হানছে ওর মাথা বরাবর। সাপটা মরে যাবে এবার।
রুনুর চোখ ছাপিয়ে জল আসে, ‘ও আর আসবে না, ও আমার বন্ধু, মেরে ফেলো না ওকে, মেরো না, মেরো না…’
সাপটা কি চাইল ওর দিকে? একবার শেষ দেখা দেখে নিল বাচ্চা মেয়েটাকে? চোখে পলক নেই বলে বোঝা যায় না।
দেহটা ক্রমশ ঝিমিয়ে আসছে ওর। লোকগুলো বীরবিক্রমে পা দিয়ে থেঁতলে দিয়েছে ওকে। তাদের মধ্যেই একজন আরও সাহস দেখিয়ে এগিয়ে আসে। দড়ির মতো তুলে ধরে মৃতপ্রায় সাপের দেহটা। তারপর অবলীলায় মাঝখান থেকে চিরে ফেলে সাপটাকে।
‘যা দেখতে পাচ্ছ তাই আঁকো, অত ভাবতে হবে না…’ মুকুন্দ স্যার আবার হাঁক দিয়ে ওঠে।
লোকগুলো ততক্ষণে সাপের শরীরটাকে লাঠির ডগায় তুলে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে। এখনও কি বেঁচে আছে ও? চোখে কি একই রকম জল টলটল করছে?
চোখের জল মুছে দ্রুত সাদা পাতার উপরে কয়েকটা আঁক কাটে রুনু। তারপর খাতার পাতাটা জানলার ঠিক সামনে তুলে ধরে। যেন ওই মৃত চোখদুটোকেই শেষ বারের মতো দেখাতে চায় তার ছবি। সাপটা সে ছবি দেখে কিনা আর বোঝা যায় না।
‘এ কী! এর মধ্যেই তোমার আঁকা হয়ে গেল?’
ওর হাত থেকে কাগজটা ছিনিয়ে নেন মুকুন্দ স্যার। রুনু ফিরেও তাকায় না সেদিকে। মাটির দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে আর একবার চোখের জল মোছে সে। তারপর স্তব্ধ হয়ে যায়।
কাগজটা ভালো করে দেখেন মুকুন্দ, মুখে চোখে বিরক্তির রেখা ফোটে তার, ‘সাপই যখন আঁকবে তখন ঠিক করে আঁকো! সাপ এরকম থ্যাঁতলানো আর মাঝখান থেকে চেরা হয় নাকি?’
কাগজটা ছুড়ে মেয়েটার সামনে ফেলে দেন মুকুন্দ স্যার, ‘ছবি আঁকতে বলেছিলাম তোমায়। কার্টুন এঁকেছ কেন?’