কাকতাড়ুয়া – ১৮

অষ্টাদশ অধ্যায়

‘এই, এই, ওখান থেকে কী একটা মুখ বাড়াচ্ছে! জঙ্গলের ভিতরে…’ গার্গী টেবিল থেকে কোনরকমে মাথা তুলে বলে। তারপর আবার নেতিয়ে পড়ে গোল টেবিলটার উপরে।

‘ওখানে তোর শ্বশুর আছে বে। দেখতে এসেছে মাল খেয়ে কোনও পরপুরুষের গায়ে পড়ছিস কিনা…’ অভিরূপা হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলে।

‘চুপ কর মাগি…’ টেবিলে মাথা রেখেই ধমকে ওঠে গার্গী, ‘আমার শ্বশুর তোর বাপ হয়…’

গার্গীর নেশাটাই এদের মধ্যে সবথেকে বেশি চড়েছে। আর একটা গ্লাস মুখে তুলতে যাচ্ছিল সে, তার আগেই ঈশানী থামিয়ে দিল তাকে, ‘আর খাস না, এবার বমি করবি।’

‘তুই কে বে আমাকে বারণ করার?’ গার্গী গর্জে ওঠে, তারপর হুইস্কির গ্লাসে আবার মদ ঢালতে ঢালতে বলে, ‘শালা মদ খাব, বমি করব তারপর দেখতে যাব জঙ্গলে কী আছে…’

‘আমিও যাব…’ অভিরূপা ওর কাঁধে আলগা হাত রেখে বলে।

‘তোদের কি মাথা খারাপ?’ ঈশানী মদের গ্লাস নামিয়ে রাখে টেবিলের উপরে, ‘এত রাতে আর কিছু না থাক সাপখোপ কামড়ে দিলে কী হবে?’

এতক্ষণে আবার মাথা তোলে গার্গী, ওর চোখদুটো ঢুলুঢুলু লাগছে, ঠোঁটের কষ বেয়ে তরল গড়িয়ে পড়ছে, ‘দেখ, বেশি জ্ঞান মারাবি না। অত যখন উচিত অনুচিত বোধ তখন নিজের লাইফটার এমন পোঙ্গা মেরে রেখে দিয়েছ কেন?’

অভিরূপা সায় দেয় ওকে, ‘ঠিকই তো, সারাক্ষণ শুধু বিধবা পিসিমাদের মতো ঘ্যানঘ্যান…’

একটা হাত বাড়িয়ে ওর টি-শার্টের কলার খামচে ধরে ঈশানী, ‘বেহায়া কোথাকার? লজ্জা করে না বলতে? আমি যা করেছি সেটা অন্তত বলতে পেরেছি তোদের। তোর মতো লুকিয়ে রাখতে হয়নি…’

অভিরূপার মুখ নেমে আসে বুকের উপরে, ‘লোককে বলে বেড়ানোর মতো কাজ করিনি তাই বলতে পারিনি…’

‘যে বন্ধুত্বের মধ্যে শুধু বলে বেড়ানোর মতো কথাই বলা যায়, সেটা বন্ধুত্ব নয়।’

অভিরূপা বিরক্ত হয়, ‘দেখ, মাল খেয়ে তোর এই জীবনদর্শন মারানো আমার সহ্য হচ্ছে না…’

শেষ কথাগুলো মাথায় ঢোকে না গার্গীর। সে নেশাতুর চোখে মুখ তুলে বলে, ‘তোরা শালা কী নিয়ে বাওয়াল করছিস আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’

‘তোর নেশা চড়ে গেছে। বলে লাভ নেই, খিস্তিখামারি করবি। কাল সকালে বলব।’ ঈশানী অন্যমনস্কভাবে বলে।

‘হ্যাঁ, আমাকে তো এখন মাতাল বলবিই। শালারা নিজেরা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মেছিস। একজনের বাপের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আর একজনের রূপের বাহার। আমাকে বানানোর সময়ই শালা ভগবান চসমখোর হয়ে গেছিল…’

অভিরূপা হুইস্কির গ্লাসে আরেকটা চুমুক মারে, ‘তোর একটা স্টেবল সম্পর্ক আছে। রোজ রাতে কান্নাকাটি করে ঘুমোতে হয় না তোকে…’

‘চুপ কর। সম্পর্ক না, রাখতে জানতে হয়। সবকিছু তোদের মতো ফোকটে পাওয়া যায় না। আমি চাইলে আমার প্রেমটা দুদিনে কেটে যেত…’ কথাটা বলে আবার ঈশানীর দিকে দৃষ্টি পড়ে তার, ‘আর এই আবালটাকে দেখ। একটা কুকুরের জন্য নিজের চারটে বছর বরবাদ করল…’

বিরক্ত লাগে ঈশানীর। মদের বোতলটা টেবিলের উপরেই রেখে সে উঠে পড়ে, ‘তোরা এখানে কামড়াকামড়ি কর। আমি একটু আসছি…’

‘আসছিস মানে? কোথায় যাবি তুই?’

‘তোদের এই ফালতু ক্যাচাল আমার ভালো লাগছে না। একটা দিন একটু শান্তিতে কাটাতে এসেছি। নিজের জীবনের রিগ্রেট নিয়ে বিটি খেতে নয়…’

গার্গী আর কিছু বলে না। নেশার ঘোরে আপাতত সবকিছুই ঝাপসা দেখতে শুরু করেছে। ঈশানী উঠে পড়ে। অভিরূপাও ওর পেছন পেছন আসে।

‘তুই আবার চললি কোথায়?’ ঈশানী জিগ্যেস করে।

‘জানি না, ফ্রাস্ট্রেটেড মাতালের খিস্তি খেতে ইচ্ছা করছে না।’

দুজনে মিলে পুকুরের দিকে পা বাড়ায়। একটু খোলা হাওয়া না খেলে নেশাটা ভালো চাগাবে না। উপরের আকাশে চাঁদ ঝুলে আছে। এ জায়গাটায় আলো কম, তাও কড়া অভিভাবকের মতো জ্যোৎস্নাকে এখানে আসতে দিতে চাইছে না সে।

‘গার্গী ভুল বলেনি, বুঝলি?’ ঈশানী হাঁটতে হাঁটতেই বলে।

‘কী?’

‘ওই যে, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়। রেড ফ্ল্যাগকে জীবনে জায়গা দিয়ে, ছোটখাটো ইস্যু নিয়ে বাচ্চামি করে “আমারটা কেন টিকলো না” বলে বেফালতু কাঁদুনি করে কোনও লাভ নেই।’

‘দেবুটা আমায় খুব ভালোবাসত রে, একটা হারামির বাচ্চার জন্য ছেলেটাকে কষ্ট দিলাম…’ সজল চোখে ঈশানীর দিকে তাকায় অভিরূপা, ‘আচ্ছা রুনু, তুই আমার জায়গায় থাকলে কি এখন ফোন করতিস ওকে?’

‘করতাম। কিন্তু তার আগে অন্য একটা কাজ থেকে যায়…’

পুকুরের পথ ছেড়ে আবার দুজনে এগিয়ে যায় ক্যাম্পের দিকে। ওদের কটেজটা ফেলে অন্য কটেজটার দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়। জানলাটা এই মাত্র বন্ধ করে দিয়েছে কেউ। দরজাটাও আঁটসাঁটো করে বন্ধ। সে দরজায় একবার সজোরে টোকা মারে অভিরূপা, ‘এই ছোটলোকের বাচ্চা…’

ভিতর থেকে কোনও আওয়াজ আসে না। অভিরূপা ক্ষিপ্র হাতের আবার ধাক্কা মারে, ‘তোর সঙ্গে আমার কথা আছে। বাইরে আয়…’

 ভিতর থেকে আবারও কোনও আওয়াজ আসে না।

‘বউয়ের কোলে বসে আছিস নাকি রে শালা…বেরো, না হলে আমি তোর…’

খিস্তিটা দিতে গিয়েও অভিরূপার গলার স্বর হঠাৎ করে কমে আসে। মাটিতে পড়তে পড়তেও নিজেকে সামলে নেয় ও। ঈশানী বসে পড়ে ওর পাশে। ওর বুকে মুখ গুঁজে আচমকাই ককিয়ে ওঠে অভিরূপা, ‘নিজের লাইফটা নিজেই শেষ করে ফেললাম আমি রুনু। আমার নিজের লাইফটা…’ বন্ধ দরজাটার দিকে দেখায় সে, ‘আমি তো এরকম নই, বল?’

ঈশানী ধীরে ধীরে ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকে, ‘দুঃখ পাওয়া মানুষ এরকম-ওরকম হয় না পাগলি। আগে দুঃখটা সামলে নে তারপর বিচারসভা বসাবি…’

‘সবাই আমাকে ঘেন্না করবে বল? আমার মতো একটা মেয়ে মরে গেলেই সবাই খুশি হবে…’ অভিরূপার গলা দিয়ে কান্নার স্রোত নামে।

‘আমি সবাই নই, আমি রুনু…’

‘তুইও করবি। তুই সব জানিস না।’ অভিরূপা ওর দিকে তাকিয়েই ফোঁপাতে থাকে। তারপর কোনরকমে কান্নার বেগ আটকে ছেঁড়াছেঁড়া শব্দে উচ্চারণ করে, ‘আমি তোর এক্সের সঙ্গে শুয়েছি। অনেকবার…’

ঈশানী চুপ করে থাকে। কেবল অভিরূপার মাথায় ওর হাতটা থেমে যায়। মুখ তোলে অভিরূপা, ‘তুই আমাকে খারাপ মেয়ে ভাবছিস, না?’

‘না, তুই না। তবে তোর রুচিটা আমার থেকেও খারাপ…’ কথাটা বলে আবার সচল হয় ওর হাতটা, ‘আমরা সবাই জীবনে এমন কাজ করেছি, যা করা উচিত ছিল না। অত ঘেন্না করতে গেলে বাকি অনুভূতিগুলো জায়গাই পাবে না।’

‘শালা সব কিছুর ম্যানুয়াল থাকে, জীবনের কোনও ম্যানুয়াল থাকে না…’ অভিরূপা রাগত গলায় বলে।

‘কারণ জীবনটা অনলাইনে অর্ডার দেওয়া প্রডাক্ট নয়। জীবনটা কলেজ প্রোজেক্টের মতো। সেটাকে ধীরে ধীরে তৈরি করতে হয়। ম্যানুয়াল থাকে না, বন্ধু থাকে…’

থেমে যাওয়া কান্নাটা আবার ধাক্কা দিয়ে যায় অভিরূপার বুকে, ‘সবাই কেন তোর মতো হয় না রুনু?’

ঈশানীর মুখে একটা হাসি খেলে যায়, ‘যখন দুঃখ হয় তখন সবার এটা মনে হয়। তারপর আবার আগের মতো…ওঠ এখন। একটা ওষুধ দিচ্ছি, ঘুমিয়ে পড়…’

‘তুই আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবি না?’ অসহায় শিশুর মতো বলে অভিরূপা।

‘দেব, কবে দিইনি? শুধু…’ একটু থেমে বলে ঈশানী, ‘আজ আমার একটু কাজ আছে রে।’ কথাটা বলে ভিতরের দিকটা একবার দেখে নেয় ও। কেয়ারটেকার দুটো নিজেদের ঘরে ঢুকে দরজা দিয়েছে। ওরা আজ রাতে আর বাইরে বেরোবে না।

‘আমার খুব ভয় করছে রুনু। ওর বউটা যদি জেনে গিয়ে থাকে…’

পকেট থেকে একটা ছুরি বের করে ওর হাতে দিয়ে দেয় ঈশানী। তারপর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে, ‘এসব বড়বড় কাকিমাদের অনেক দেখা আছে আমার। এটা দেখালেই সায়া ভিজিয়ে ফেলবে। ভয় পাস না…’

ওকে নিয়ে নিজেদের কটেজের দিকে এগিয়ে আসে ঈশানী। আর একবার ভালো করে কেয়ারটেকারদের ঘরের দিকটা দেখে আসে। নাহ্, কেউ জেগে নেই। আজ রাতে এখানে যাই হোক না কেন তাতে ঝামেলা পাকানোর উপায় নেই তাদের।

অভিরূপাকে কটেজের বিছানায় শুইয়ে দেয় ঈশানী। গার্গী পড়েছিল টেবিলের উপরেই। আরেকটু হলেই মাথাটা খসে মাটিতে পড়ত। ওকে টানাটানি করে কোনও লাভ হয় না। মুখ দিয়ে গোঁগোঁ আওয়াজ করে আবার ঘুমে ঢলে পড়ে সে।

অগত্যা কটেজের দরজার দিকে সরে আসে ঈশানী। চাবিটা খুঁজে পায় না সে। এতক্ষণ উত্তেজনার মধ্যে সেটা কোথায় রেখেছে মনে পড়ে না। অভিরূপার কাছে গিয়ে ওর মাথায় একটা হাত রাখে ঈশানী। ঘুমের মধ্যেও ও ঈশানীর হাত টেনে ধরার চেষ্টা করে, ‘কোথায় যাচ্ছিস রুনু? যাস না, আমার ভয় করছে…’

ঈশানী হাসে, ‘ভয়ের কিচ্ছু নেই। চলে আসব এক্ষুনি।’

ওকে ওষুধটা খাইয়ে শান্ত করে দরজাটা টেনে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে রুনু। রান্নাঘরের এককোণে দোতারাটা আগেই দেখেছিল। দরজাটা আলতো ফাঁক করে ঢুকে সেটা হাতে তুলে নেয়।

চারপাশটা আরেকবার ভালো করে দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে হাঁটতে থাকে খেতের দিকে।

অন্ধকারে কুপকুপ করছে জায়গাটা। ফাঁকা মাঠ জুড়ে অসংখ্য জোনাকি জ্বলছে টিমটিম করে। যেন পথ দেখিয়ে একটা বিশেষ দিকে নিয়ে যেতে চাইছে ওকে। সেই পথ ধরেই মিনিটখানেক হেঁটে একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ায় সে।

মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইটের আলো যেখানে গিয়ে পড়েছে সেখানে জমির একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে একটা ফুট ছয়েক লম্বা কাকতাড়ুয়া। কালো মাটির হাঁড়ি দিয়ে মাথাটা বানানো হয়েছে। মুখে চকের দাগ প্রায় উঠে গেছে, তার মাঝেও একটা কান অবধি মুচকি হাসি চিনে নেওয়া যায়। দুটো খড়ের হাত দুদিকে মেলে দিয়েছে সে। আঙুলের মতো খড়গুলো মাতাল হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে। যেন সেই হাত নেড়েই ঈশানীকে কাছে ডাকতে চাইছে সে।

হাতের দোতারাটা নিয়ে কিছুক্ষণ তারের উপর টুংটাং করে আওয়াজ করে ঈশানী। তারপর বিরক্ত হয়ে সেটা পাশে রেখে দেয়। মেঠো জমির উপরেই পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ে সে। বিড়বিড় করে যেন নিজের মনেই বলে, ‘আমার কথা বলার মতো কেউ নেই জানেন…আপনার আবার শোনার অঢেল সময়, তাই না?’

হুট করেই উঠে দাঁড়ায় ঈশানী, ‘আসলে পেটে মদ পড়েছে তো। সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে…আপনি শুনবেন আমার সব কথা? শুনতে শুনতে কোথাও চলে যাবেন না তো?’ কথাটা বলে নিজেই হেসে ফেলে ঈশানী, ‘অবশ্য আপনি যাবেনই বা কোথায়? কিন্তু…’ ঠোঁট কামড়ে কী যেন ভাবে ঈশানী, ‘আমি নিজেকে ছাড়া আর কাউকে কিছু বলিনি কোনওদিন। ঠিক আমার বাপের মতো…উঁহু…’

ঈশানী একবার হাসিমুখে চায় কাকতাড়ুয়াটার দিকে। তারপর এগিয়ে এসে রুমাল দিয়ে মুখের দাগগুলো পরিষ্কার করে মুছে দেয়। জমি থেকেই একটা ইটের ঢ্যালা কুড়িয়ে নিয়ে নিজের মুখের মতো একটা মুখ এঁকে দেয় হাঁড়ির উপরে। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে বসে পড়ে তার পাশে।

রাতের হাওয়া ঝাপটা মেরে যায় ওদের শরীরে। দূরদূরান্ত অবধি কেবল মিটমিটে জোনাকির আলো ছাড়া আর কোনও স্পন্দন নেই। ওদের ঘিরে পাক খেতে শুরু করেছে মেঠো হাওয়াটা। সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেটা।

‘হ্যাল্লো মিস প্রামাণিক…’ সিগারেটে একটা বড় টান দিয়ে কাকতাড়ুয়ার দিকে তাকায় ঈশানী, ‘নিশ্চয়ই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোর লেগে গেছে আপনার? আপনি শুনবেন আমার কথা? আমার দুঃখের কথা, ছোটবেলার কথা, বাবার কথা, আমার শরীরের সব দাগের কথা?’

হাসিমুখেই দাঁড়িয়ে থাকে কাকতাড়ুয়াটা। ঈশানী তার পায়ের কাছেই বসে পড়ে। তারপর দু’হাতে তার শরীর জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করে কী যেন বলতে শুরু করে…

আধঘণ্টা পরে একটা শব্দে ঘুম ভেঙে যায় অভিরূপার। ওদের ঘরের দরজাটা কেউ খুলছে। ও আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায় না। ধীরে ধীরে ও উঠে বসে। ঘরে ঢুকে আসা লোকটাকেও চিনতে পারে। শরীরটা ককিয়ে ওঠে ওর।

‘তুমি! তুমি এখানে এসেছ কেন? ঈশানী কই? ঈশানী?’ চাপা গলায় চিৎকার করে অভিরূপা।

‘চুপ কর। কেউ নেই এখানে। আমার তোর সঙ্গে কথা আছে…’

‘আমার কোনও কথা নেই। তুমি যা ইচ্ছা করো। আমার আর তোমার কিছুতে কিচ্ছু এসে যায় না…’

‘তুই কেন এরকম সর্বনাশ করছিস আমার?’ লোকটা এগিয়ে এসে ওর ঘাড়ের উপর হামলে পড়ে, ‘আমার ঘরের দরজায় গিয়ে ওভাবে চিৎকার করে…’

অভিরূপার মুখ বুকের উপর নেমে আসে, ‘ভুল হয়ে গেছে। নেশায় আছি, অতটা…’

‘আমার বউ যদি জানতে পারলে কী হবে ভাবতে পারছিস?’ ওর কলার খামচে ধরে গালে একটা চড় মারে লোকটা।

দু’হাতে ধাক্কা মেরে ওকে সরানোর চেষ্টা করে অভিরূপা, ‘তো যাও না শালা, আমার পেছনে লাগতে এসেছ কেন?’

একহাতে ওর মুখ চেপে ধরে লোকটা, ‘এটা চিৎকার করার জায়গা নয়। আয় আমার সঙ্গে…’ কথাটা বলে হাত ধরে টান দেয়। মদ আর ওষুধের ঘোরে বাধা দিতে পারে না মেয়েটা। সুব্রত ওকে বাইরের ফাঁকা জায়গাটায় বের করে আনেন। তারপর টেনে আনে পুকুর পাড়ে। হাতে ব্যথা লাগে ওর। কবজির কাছে অসহ্য যন্ত্রণায় ও ককিয়ে ওঠে, ‘ঈশানী, কোথায় তুই?’

পুকুরপাড়টা ফাঁকা। স্থির শান্ত জলের উপরে চাঁদ পড়ে আছে। তারই একধারে ওকে নিয়ে আসেন সুব্রত, ‘তুই কী চাস? আমি সুইসাইড করি?’

‘তুই যা খুশি কর। ঈশানী কোথায় গেল…ঈশানী…’ ডাকতে যায় অভিরূপা। ওর মুখ চেপে ধরেন সুব্রত।

‘মদের ঘোরে আছিস তুই, তোকে বিশ্বাস করি না আমি।’ ওর মুখটা চেপে ধরেই গড়গড়ে গলায় বলেন সুব্রত।

‘আমাকে কেউ বিশ্বাস করে না। আমার কেউ নেই…’ অগোছালো গলায় কথাগুলো বলে একটু সরে আসার চেষ্টা করে মেয়েটা। নিজের মাথার চুলগুলো খামচে ধরে ও, ‘ছেড়ে দাও আমাকে, আমি আর তোমাকে জ্বালাব না…’

মেয়েটার মুখের দিকে ভালো করে তাকান সুব্রত। চাঁদের নরম আলোয় একটা শিশুর মতো দেখাচ্ছে ওকে। ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদবে বুঝি এক্ষুনি। এদিক-ওদিক চেয়ে ওর মাকে খোঁজার চেষ্টা করে চলেছে।

ওর হাতটা ছেড়ে দেন সুব্রত। মেয়েটা আর না দাঁড়িয়ে ছুটে যেতে চায় কটেজের দিকে। হঠাৎ করেই পেছন থেকে কে যেন ওর গলা চেপে ধরে। নড়াচড়ার শব্দ করেও পারে না অভিরূপা। ওর পা টলছে। মাথার ভিতরের অনুভূতিগুলো নিভে আসছে একটু একটু করে।

‘খানকি মাগি, আমার জীবনটা শেষ করে বেঁচে ফিরবি ভেবেছিস?’ পেছন থেকে হিসহিসে গলার আওয়াজটা ভেসে আসে।

জামার হাতায় মুখটা মুছে নিয়ে যখন মুখ তোলে ঈশানী ততক্ষণে ওর চারপাশটা বদলে গেছে। একটু আগের হাওয়াটা এখন আরও জোরে দিচ্ছে। অন্ধকারটা মনে হয় আরও ঘন হয়ে এসেছে ওর চারপাশে।

মুখ তুলে সামনের দিকে তাকায় ও। চোখের কোল থেকে জলটা মুছে নেয়। বুঝতে পারে ওর সামনের অন্ধকারটা জীবিত। একজোড়া চোখ সেই অন্ধকার থেকে চেয়ে আছে ওর দিকে। তাও না বোঝার ভান করে।

ঘাসের উপরে পায়ের আওয়াজ হয়। ও উঠে দাঁড়িয়ে কাঁপা গলায় হাঁক দেয়, ‘কে?’

‘আমি।’ মেয়েলি গলা ভেসে আসে।

‘কাকতাড়ুয়া কথা বলছে?’ নেশাতুর গলায় বলে ঈশানী, ‘মনে হয় একটু বেশি চড়ে গেছে…’

দোতারাটা মাটি থেকে তুলে নেয় কেউ। তারপর অন্ধকার গায়ে মেখে মাঠেরই একধারে বসে পড়ে। কিছু একটা সুর ধরে সে। পরিচিত সুর। ফিনফিনে গলায় কোনও গান গাইতে থাকে মেয়েটা। ঈশানী একমনে শুনে যায়।

অদ্ভুত একটা গান গাইছে মেয়েটা। ফাঁকা মাঠের উপর দিয়ে নতুন ফলা ফসলের গন্ধ মেখে ভেসে যায় ওর গান। দূর প্রান্তে একটু পরেই ভোর নামবে। যেন দিগন্তের কাছ দিয়ে গিয়ে সেই ভোরের অপেক্ষাতেই বাজতে থাকে গানটা। মদের থেকেও গভীর কোনও নেশায় ডুবে যায় ঈশানী। বিস্তীর্ণ ফসলের খেত উধাও হয়ে যায় কোথায়।

গানটা শেষই হয়ে এসেছিল এমন সময় দূর থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসে। চাপা একটা যন্ত্রণামাখা চিৎকার। গান গাইতে গাইতে মেয়েটা সতর্ক হয়ে ওঠে। খানিকটা যেন ভয় পায় সে। ঈশানীরও ভুরু কুঁচকে যায়।

পুকুরের দিক থেকে এসেছে আওয়াজটা। কিছু একটা মিশে ছিল সেই আওয়াজে। মেয়েটার কী যেন খেয়াল হয়। ভয় পেয়ে সে ছুটে যায় অন্ধকারে। কোনদিকে যাবে বুঝতে পারে না। কোণঠাসা বেড়ালের মতো পালাতে থাকে। একবার কটেজের কাছে এসে পড়ে। একটা ওরই বয়সি মেয়ে টেবিলের উপরে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। উঠোনের তারে ঝুলছে একটা প্যান্ট। সেটা টেনে নিয়ে পরে ফেলে সে। ঈশানী পেছন থেকে একবার ডাকে তাকে, কথাটা কানেও যায় না তার।

কটেজ ফেলে ঝোপঝাড় পার করে এগিয়ে চলে মেয়েটা। এখনও কাকতাড়ুয়ার লম্বা ছেঁড়া জামাটা ওর গায়ে। জামাটা শরীরের তুলনায় বড় হওয়ায় হাঁটু অবধি ঢেকে আছে সেটা। তার নিচে প্যান্টটা দেখা যায় না।

দ্রুত পা চালিয়ে মেয়েটা পুকুরের দিকে় চলে আসে। এবং আসতেই দুটো মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। একজন পুরুষ অন্যজন মহিলা। নিজেদের মধ্যে চাপা স্বরে কী যেন বলছিল তারা। ঝোপের মধ্যে পায়ের আওয়াজ হতেই সতর্ক হয়ে এদিকে তাকায়। মেয়েটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করে ওদের।

লোকটা আচমকাই হিংস্র ভঙিতে এগিয়ে আসে ওর দিকে। মুখে চাঁদের আলো পড়ে খুদার্ত নেকড়ের মতো দেখায় তাকে। মেয়েটা ছুটে পালিয়ে আসতে যায়, কিন্তু তার আগেই লোকটা ধরে ফেলে ওকে। গড়গড়ে গলা শোনা যায়, ‘তুই খুন করেছিস ওকে, তুই খুন করেছিস…কাল পুলিশ এসে তোকেই…’

ছটফটিয়ে ওঠে মেয়েটা। লোকটার হাতে একটা কিছু চকচক করছে। ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এক দৌড়ে পালাতে যায় মেয়েটা। উপায়ান্তর না দেখে লোকটা ওর পিঠে সজোরে বসিয়ে দেয় ছুরিটা।

যন্ত্রণামাখা শব্দ করে ঘাসের উপরে পড়ে যায় মেয়েটা। লোকটা আবার ছুরি চালায় ওর পেটে। বারবার ছুরির আঘাতে কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে ওর শরীর। একসময় ঝিমিয়ে আসে শরীরটা। দেহটা ওইভাবেই ফেলে রেখে উঠে দাঁড়ায় লোকটা।

সঙ্গের সেই মহিলা পেছনেই এসে দাঁড়িয়েছিলেন। ছুরিটা ছুড়ে পুকুরে ফেলে দিয়ে দুজনেই দৌড় দেয় কটেজের দিকে।

মিনিটখানেক পর আধমরা অবস্থাতেই উঠে দাঁড়ায় মেয়েটা। বড় করে কয়েকটা নিঃশ্বাস নেয়। সমস্ত শরীরময় যন্ত্রণা। দুহাতে নিজের মাথাটা চেপে ধরে যেন যন্ত্রণাটাই কমিয়ে আনতে চায়। সারা শরীর থেকে টপটপিয়ে রক্ত পড়ছে ওর।

ও ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় কটেজের দিকে। এই যন্ত্রণার স্রোত আপাতত একজনই উপশম করতে পারে…

চাপা চিৎকারের শব্দটায় তন্দ্রা ভাঙে গার্গীর। উঠে দাঁড়িয়ে চারপাশটা ভালো করে দেখে নেয়। পুকুরের দিক থেকে একটা আওয়াজ এল না?

নেশার ঘোরের মধ্যেও ও বুঝতে পারে চিৎকারটা অভিরূপার। টলতে টলতে কোনরকম এগিয়ে যায় সেদিকে। এবং যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। একটা ছায়া মূর্তি টলমল পায়ে এগিয়ে আসছে ওর দিকে।

মূর্তিটাকে দেখেই আঁতকে ওঠে ও। মেয়েটার গোটা শরীর ভেসে যাচ্ছে রক্তে। ছুরির আঘাত সমস্ত শরীরে।

‘এ…এ কী করে হয়েছে তোর রুনু?’

মাটির উপরেই পড়ে যায় মেয়েটা। শরীরটা ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে আসছে ওর। এই মুহূর্তে ওকে একজনই বাঁচাতে পারে। পারে ওর শরীরটাকে পাল্টে দিয়ে। ও কাতর চোখে কিছু বলার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। আঙুল তুলে মাঠের দিকে দেখায়…

কী করবে বুঝতে পারে না ঈশানী। মেয়েটা ভয় পেয়ে হুট করে কোথায় পালিয়ে গেল? এখন কেউ ওকে দেখতে পেলেই মুশকিল। অবশ্য এখন কারো জেগে থাকার কথা নয়…

সাতপাঁচ ভেবে পুকুরের দিকে পা বাড়ায় ঈশানী। পাড়ে পৌঁছে দেখে পুকুরপাড় ফাঁকা। কোথাও কেউ নেই। চারপাশটা একটু আগের মতই খাঁ খাঁ করছে।

ও দ্রুত দৌড়ে আসে কটেজের দিকে। মেয়েটা কি তবে এখানেই এসেছে? মনের ভিতরে একটা মেঘ জমা হয় ওর। চিৎকারটা শুনে আগেই এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল ওর। ভেবেছিল কেউ মদের ঘোরে চিৎকার করছে। কিন্তু…

ছুটে ক্যাম্পের সামনে এসেই থমকে দাঁড়ায় ঈশানী। ক্যাম্পের উঠোনের এক পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে গার্গী। অন্য দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় শুয়ে আছে ওর মতোই দেখতে মেয়েটা। গোটা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার।

ঈশানীর মাথায় বোধ আসতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। ছুটে এসে পাঁজাকোলা করে কোনরকমে তুলে নিয়ে যায় গার্গীকে। ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে টেনে দেয় দরজাটা। তারপর আবার ছুটে আসে মেয়েটার কাছে…এতক্ষণে মেয়েটা মাটির উপরেই হাতড়ে হাতড়ে একটা ফাঁকা কটেজের উঠোনে গিয়ে উঠেছে। এখানে চাঁদের আলো এসে পড়ছে না।

ক্যাম্পের ভিতরে একটা অজানা বাতাস খেলছে। দূর থেকে কীসের যেন আওয়াজ ভেসে আসছে ক্রমাগত। মেয়েটার মুখের উপরে ঝুঁকে পড়ে ও, ‘বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও…অন্ধকার…আলোগুলো নিভিয়ে…’

হাতের ইশারায় ঈশানী বুঝতে পারে মেয়েটা ওকে ক্যাম্পের আলোগুলো নিভিয়ে দিতে বলছে। ও এক ছুটে গিয়ে সবক’টা আলো নিভিয়ে দেয়। কুপকুপে অন্ধকারে ঢেকে যায় সমস্ত চত্বরটা। একটা জোনাকিও আসেনি এখানে।

আবার ফোনের ফ্ল্যাশলাইটটা জ্বালায় ঈশানী। তার আলো গিয়ে পড়ে উঠোনের উপর। একটু আগে যেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় শুয়েছিল মেয়েটা সেখানটা এখন ফাঁকা। কেবল একটা কালো মাটির হাঁড়ি, দুটো ফুট ছয়েকের বাঁশ আর কিছু ছেঁড়া ছেঁড়া খড় পড়ে আছে সেখানে।

ধীরে ধীরে সেটার দিকে এগিয়ে যায় ঈশানী। নরম একটা হাসি খেলে ওর মুখে। কিছুক্ষণ থম মেরে সেই হাঁড়িটার দিকে চেয়ে থেকে বলে, ‘তোমার মুখে যা আঁকব তুমি তাই হয়ে যাবে, তাই না?’

কথাটা বলে হাঁড়িটা কোলের উপরে তুলে নেয় ঈশানী। তারপর আরেকটা ইটের টুকরো জোগার করে হাঁড়ির উপরে কী যেন আঁকতে থাকে।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেখানে একটা মানুষের মুখ ফুটে ওঠে। ফোনের আলোটা নিভিয়ে দেয় ঈশানী।

নিস্তব্দ কয়েকটা মুহূর্ত কেটে যায়। কিছুক্ষণ পর ফ্ল্যাশলাইটটা আবার জেলে দেয় ঈশানী। সেটা গিয়ে পড়ে একটা বছর ষাটেকের মানুষের শরীরে। রোগাটে রুগ্ন চেহারা। দুগালে হাড় উঠে এসেছে বাইরে। সতর্ক বিড়াল চোখে ঈশানীর দিকে তাকায় লোকটা। বোঝা যায় ভয় পেয়েছে সে। একটু আগে তার উপর আক্রমণটা ঠিক কেন হয়েছে সে এখনও বুঝতে পারেনি। অন্ধকারে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করে সে…

ঈশানীর নরম স্বর শোনা যায়, ‘তুমি আমাকে গল্পটা বললে না বাবা…যেটা শুনলে আমার সব ঠিক হয়ে যাবে?’

লোকটা ভিতু চোখ তুলে ওর দিকে তাকায়। মেয়েটা কী বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না ও। কয়েক সেকেন্ড নেয় ওকে বিশ্বাস করতে। চোখের মণিটা আগের তুলনায় শান্ত হয়ে আসে। মনের ভিতর কেউ বুঝি বলে দেয় মেয়েটা ওর কোনও ক্ষতি করবে না। মেয়েটা হাত বাড়িয়ে ওর হাতটা ধরে ফেলে শক্ত করে।

‘এসো আমার সঙ্গে…’ হাত ধরে টান দেয় ঈশানী। লোকটা কিন্তু নড়তে চায় না। এখনও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি সে।

ঈশানী ফিরে তাকায়, একটা বিচিত্র হাসি খেলে যায় ওর মুখে, ‘ভয় পেয়ো না। আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না…’

একটু দূরে ওদের গাড়িটা পার্ক করে রাখা ছিল। দুজনে দৌড়ে সেটার কাছে চলে আসে।

চাবি দিয়ে গাড়ির ডিকিটা খুলে তুলে ধরে ঈশানী। তারপর ইশারা করে ভিতরে।

‘আপনি ঢুকে পড়ুন এর মধ্যে। কেউ কিছু বুঝতে পারবে না।’ লোকটা ভিতরে ঢুকে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়তে গাড়ির ডিকিটা এক টানে বন্ধ করে দেয় ঈশানী।

নরম একটা হাসি খেলে যায় ওর মুখে। কিছুক্ষণ গাড়িতে হেলান দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে সে। চারদিকের সমস্ত আওয়াজ নিভে গেছে। দৃশ্য হারিয়ে গেছে অন্ধকারের গভীরে। শুধু দূরে টিমটিমে আগুন জ্বালিয়েছে কয়েকটা জোনাকি। ইতস্তত উড়ে যাচ্ছে এদিক-ওদিক। কে জানে কাকে অক্ষম আলো দেখিয়ে কাছে টানতে চাইছে ওরা। সেদিকে কিছুক্ষণ স্থির চোখে চেয়ে থাকে ঈশানী। তারপর দুহাতে মুখ ঢেকে ভেঙে পড়ে কান্নায়…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *