কাকতাড়ুয়া – ১

প্রথম অধ্যায়

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই নাদু নস্করের মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে গেল। বেড়ার ঘরের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসতেই চোখ কপালে উঠেছে তার। ঘরের উঠোন ছাড়িয়ে বাইরের খোলা বাগানটায় কাল রাতে যেন ছোট একটা যুদ্ধ হয়ে গেছে। কোথাও ছড়িয়ে আছে বিয়ার-হুইস্কির ফাঁকা বোতল, চিপসের প্যাকেট, কোথাও বা চাটের প্লেট গড়াগড়ি খাচ্ছে ঘাসের ফাঁকে। প্লাস্টিকের একটা চেয়ার মরা কুকুরের মতো আকাশের দিকে পা তুলে ছেতরে রয়েছে।

ভোররাতে মুষলধারায় বৃষ্টি নেমেছিল। এখন বাষ্পের একটা মিহি চাদর আকাশ বেয়ে নেমে আসছে এলোমেলো ঘাসের গালিচার উপরে। সেই জল বিন্দু বিন্দু হয়ে জমে আছে প্লাস্টিকের লাল টেবিল, সবজে মদের বোতল, ঝুলন্ত বাঁশপাতার গায়ে।

চাপা স্বরেই একটা খিস্তি করল নাদু নস্কর, ‘হারামির বাচ্চারা…’ তারপর লুঙ্গিটা হাঁটু অবধি তুলে বেঁধে উঠোনের বাইরে বেরিয়ে এল।

বিজলিমারি গ্রামে একটা সামারক্যাম্প চালায় নাদু নস্কর। প্রত্যন্ত গ্রাম্য এলাকায় জঙ্গলের মাঝে ছোট তিনটে কটেজ। শহর থেকে বন্ধুদের গ্রুপ কিংবা ফ্যামিলি নিয়ে এসে প্রকৃতির মাঝে দিন দুয়েকের ছুটি কাটিয়ে যাওয়ার একেবারে আদর্শ জায়গা। তাছাড়া এখানে কাছাকাছি কয়েকটা পুরোনো বাড়ির ধ্বংসাবশেষ আছে। বহুকাল হল পরিত্যক্ত হয়েছে বাড়িগুলো। বিকেল থাকতে থাকতে সেখান থেকেও ঘুরে আসা যায়। মাকড়সার জাল আর ভাঙা সিমেন্টের ফাঁকে জমা অন্ধকারে ভরে থাকে জায়গাটা। গা ছমছম করে।

তবে বিজলিমারি সামারক্যাম্পের ইউএসপি হল নৈঃশব্দ্য। দু’দিক বাঁশবনে ঘেরা। একদিকে ক্যাম্পের গেট ছাড়িয়ে কিছুদূর হেঁটে গেলেই একটা পুকুর গোছের পড়ে। পুকুরটা ছোট নয়। গঙ্গার একটা শাখা এদিকে ঢুকে আটকে গেছে। ফলে স্থির জলের নদীই বলা যায়। সেখানেই সারারাত জাল ফেলা থাকে। ভোরবেলা জাল আঁচিয়ে মাছ তুলে আনে নাদু।

এখন শীত আর বর্ষার মাঝামাঝি। পুকুর ভরাট হয়ে আছে। তবে তিনটে কটেজের মধ্যে একটা কটেজে কাল লোক ছিল না। বাকিদুটোর মধ্যে একটায় তিনটে মেয়ে ছিল। আর একটায় তিনজনের ফ্যামিলি। কাল রাত বাড়তে রুটি তরকারি খেয়ে ফ্যামিলি শুয়ে পড়েছিল, কিন্তু চ্যাংড়া মেয়ে তিনটে সারারাত মদ গিলেছে। তারপর মাতাল অবস্থায় যা করেছে তারই চিহ্ন পড়ে আছে বাইরের বাগান জুড়ে।

‘হরি, এই হরি…’ গলা তুলে ডাক দিল নাদু। পাশের বেড়ার ঘরটাতেই হরি শুয়েছিল। সকালে ঘুম ভাঙতে খানিক দেরি হয় তার। নাদু রোজই সকালে গম্ভীর ঘুমলাগা গলায় হাঁক দেয়। কিন্তু আজ সে ডাকে একটা রাক্ষুসে রাগ মিশেছিল। হরি তড়াক করে লাফিয়ে ছিটকে বাইরে বেরিয়ে এল।

কোনরকমে চোখ মুছতে মুছতে বলল, ‘আজ্ঞে…’

‘কাল কখন ঘুমিয়েছিলি?’ নাদু নস্করের গলায় চাপা রাগটা যেন দুপর্দা বেড়ে উঠেছে।

‘তা তো খেয়াল করিনি বাবু…’

‘সারারাত লণ্ডভণ্ড করেছে হারামির বাচ্চাগুলো…’ কথাটা বলেই উঠনের পাশে চিড়িক করে একদলা থুতু ফেলল নাদু নস্কর, ‘নেহাত ক’টা পয়সা দেয় বলে, নাহলে এ শালাদের…’

‘কী আর করবেন হুজুর…’ হরি কোনরকমে নাদুর রাগ প্রশমিত করার চেষ্টা করে।

‘ভবাকে নিয়ে পরিষ্কার করে দে। তারপর ছিপটা নিয়ে বেরো।’

‘ছিপ কী করব বাবু?’

‘আমার পাছায় ঢুকিয়ে দিবি শালা…’ রাগত গলায় ভর্ৎসনা করে নাদু, ‘মাছ ধরতে হবে। সকালে পুকুরের তাজা মাছ খাওয়ার বায়না আছে মহারানিদের…ধরে আনবি…’

কোমরটা সামনে এগিয়ে আড়মোড়া ভাঙে হরি, আয়েসি গলায় বলে, ‘সে তো দুপুরে, এখনও তো কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি…’

‘যা মদমুদ খেয়েছে তাতে দুপুরের আগে উঠবেও না…’

‘তাহলে একটু পরে যাই…’

নাদু আবার তিরস্কার করতে যাচ্ছিল। কী যেন ভেবে থেমে যায়। দাওয়ার উপরেই বসে পড়ে একটা বিড়ি ধরায়। তারপর একগাল ধোঁয়া ছেড়ে বলে, ‘কাল রাতে মরার মতো ঘুম হল হরি। এরা এত দক্ষযজ্ঞ করল, কিছুই বুঝতে পারলাম না…’

বিড়ির ধোঁয়াটা নাকের ডগা থেকে সরাতে সরাতে হরি বলল, ‘আমিও কখন ঘুমিয়েছি খেয়াল নেই কত্তা, তবে…’

‘তবে কী?’

‘কাল রাতে মনে হল আমার ঘরের পাশ দিয়ে কে যেন দৌড়াদৌড়ি করছে…’

নাদু মুখ বাঁকায়, ‘মদ খেয়ে লোকে কত কী করে। এরা আবার মেয়েছেলে। ছুটোছুটি করছিল হয়তো…’

‘না কত্তা, মেয়েছেলে নয়। একটা ব্যাটাছেলে। একবার ছুটে এদিক যাচ্ছে, একবার ওদিক…এত জোরে হাঁপাচ্ছে যে আমি ভিতর থেকে শুনতে পাচ্ছি…তারপর…’

‘তারপর কী?’ আবার ধোঁয়া ছাড়ে নাদু।

হরির মুখে হুট করেই ছায়া নামে, ‘ঘুম থেকে উঠে মনে ছিল না কত্তা, কিন্তু কাল রাতে কে যেন দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকছিল আমায়…খুব জোরে জোরে ধাক্কা। আমার যে কী হয়েছিল। ভয়ে আর দরজা খুলিনি…’

‘তোর দরজায়?’ নাদু ভুরু কুঁচকে জিগ্যেস করে।

হরি একটুক্ষণ কী যেন ভেবে বলে, ‘তাই তো মনে হল। তবে ঘুমের ঘোরে শুনেছি কত্তা…অন্য কারো ঘরেও হতে পারে। শুধু আমার খুব ভয় করছিল!

‘ভয়! এখানে তোর কীসের ভয়?’

হরির মুখের দিকে চেয়ে আশঙ্কা হয় নাদুর। কাল রাতে কেউ যদি সত্যি ডেকে থাকে, এবং ডাকা সত্ত্বেও হরি উত্তর না দিয়ে থাকে তবে ব্যাপারটা চিন্তার। মেয়েছেলেদের মাঝরাতে নানান রকম দরকার হতে পারে।

হাত বাড়িয়ে হরির কান টেনে ধরে নাদু, ‘তুই ব্যাটা কাল শুকনো টানিসনি তো? অ্যাঁ?’

হরি সজোরে দুদিকে মাথা নাড়ে, ‘না কত্তা, আমার পস্ট মনে আছে। রাতে খেয়ে থেকেই সরিলটা ভালো লাগছিল না। রাতের খাবার দাবার খেয়েই সোজা বিছনা নিয়েছিলুম…’

দুশ্চিন্তাটা মাথা থেকে সরানোর চেষ্টা করে নাদু, ‘তাহলে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখেছিস। নে, কাজে লেগে পড়। মদের বোতল আলাদা রাখবি, আর বাকি যা প্যাকেট-ফ্যাকেট আছে সব ওই ডাস্টবিনের মধ্যে…তারপর ছিপটা নিয়ে…’

বাকি বিড়িটা ওর হাতে গুঁজে দিয়ে উঠে পড়ে নাদু। উঠনের একধারে বেসিনের কাছে গিয়ে মুখে চোখে একটু জল দেয়। তামাটে মুখটা আয়নায় দেখে ভালো করে।

নাদুর বয়স পঁয়তাল্লিশের আশেপাশে। সংসার ধর্ম করেনি, ফলে বউ-বাচ্চার বালাই নেই। আগে কলকাতায় একটা ভাতের হোটেল চালাত সে। সেখান থেকে দু’পয়সা জমিয়ে গ্রামের দিকে এই জমিটা কিনেছিল দাম বাড়লে বেচে দেবে বলে। পুরোনো পরিত্যক্ত বাড়িগুলো নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা ছিল না ওর। লোকে বলত ওখানে নাকি ভূত আছে। নাদু ভূতফুতে বিশ্বাস করে না। দু’পয়সা লাভের মুখ দেখবে, এই ছিল বাসনা। যতদিন না জমির দাম বাড়ছে ততদিন স্থানীয় লোকজন দিয়ে চাষবাস করাবে। বাঁধাকপি, টমেটো, সর্ষে আর আলুর চাষ শুরুও করেছিল। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নতুন খেয়াল চাপল মাথায়। চাষের জমি বাদ দিয়েও আরও পাঁচ ছটাক জমি খালি পড়েছিল নাদুর। ভাবে সেখানে একটা সামারক্যাম্প করলে কেমন হয়?

প্রথমে মাসদুয়েক তেমন লাভ হয়নি নাদুর। হতাশ হয়ে কটেজ বন্ধ করবে ঠিক করেছে এমন সময় শীত পড়তেই লোকজনের আনাগোনা শুরু হল। একে এমন রিমোট লোকেশন, তার উপরে নিস্তব্ধতার বাঁশপাতার হাহাকার শুনতে, খেতের টাটকা সবজি আর পুকুরের তাজা মাছ খেতে উৎসাহী লোকজনের বুকিংয়ে কলে ভরে যেতে লাগল হরির খাতা আর নাদুর পকেট। তবে এখানে ভূতের বাড়ি আর নিরিবিলিতে মদের লোভে চ্যানকা ছেলেমেয়েদের উৎপাতই বেশি। ভাতের হোটেল লিজে দিয়ে আপাতত এখানে এসেই ঘাঁটি গেড়েছে নাদু।

উঠোনের একদিকে একটা লম্বা দড়ি ঝুলছে। রাতে সেই দড়িতেই জামাপ্যান্ট মেলে দিয়ে লুঙ্গি পরে ঘুমাতে যায় নাদু। একবার পেট চুলকে নিয়ে দড়ি থেকে টেনে ফতুয়াটা গায়ে চাপায় নাদু। প্যান্টের জন্য হাত বাড়াতে গিয়েই থেমে যায়। আশ্চর্য! স্পষ্ট মনে আছে কাল রাতে দড়িতেই প্যান্টটা ঝুলিয়ে ঘুমাতে গেছিল, এখন উধাও!

চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েও প্যান্টটাকে দেখতে পায় না নাদু। খানিক বিরক্ত হয়ে হাঁক দেয়, ‘এই হরি…’

বিড়িতে সুখটান দিতে ব্যস্ত ছিল হরি, সে পেছন না ফিরেই উত্তর দেয়, ‘আজ্ঞে বাবু…’

‘আমার প্যান্টটা দেখেছিস? কাল রাতে এইখানে ঝুলছিল…’

হরি দু’দিকে মাথা নাড়ায়, ‘দেখিনি তো বাবু…’

ভুরু কুঁচকে একবার বিড়বিড় করে নাদু নস্কর। তবে কি মদের নেশায় মেয়েছেলেগুলো সেটাও টেনে নিয়েছে? আবার চাপা স্বরে একটা খিস্তি করল নাদু।

ওর দিকে চেয়ে একবার হাসে হরি, হাতের বিড়িটা ছুড়ে ফেলতে ফেলতে বলে, ‘মেয়েছেলে আপনার প্যান্ট নিয়ে আর কী করবে বাবু? দেখুন কুকুর-টুকুরে টেনে নিয়ে গেল কিনা…’

কথাটা মন্দ বলেনি হরি। কিন্তু উঠোনের দড়িটা বেশ উঁচুতে। সাধারণ কুকুরের পক্ষে কি অতটা উঁচুতে নাগাল পাওয়া সম্ভব? অবশ্য কোনওভাবে যদি মাটিতে পড়ে গিয়ে থাকে তাহলে…

‘তুই বোতলগুলো তুলে নিয়ে বাগানটা পরিষ্কার কর, আমি খেতটা একবার দেখে আসি…’

ঘাড় নেড়ে সিঁড়ি থেকে উঠে পড়ে হরি। নাদু নস্কর কপালে ভ্রুকুটি নিয়েই খেতের দিকে এগিয়ে যায়।

চোখ খুলতেই শরীরটাকে অসম্ভব ভারী মনে হল ঈশানীর। মাথার দুপাশ থেকে যেন চেপে ধরে আছে কেউ। উপরে পাখাটা অদৃশ্য হয়ে ঘুরছে অথচ একটুও হাওয়া এসে লাগছে না গায়ে। সমস্ত শরীরে একটা ভিজে অনুভূতি।

দশ সেকেন্ড সেই ভাবেই পড়ে রইল ঈশানী। মাথাটা কাজ করতে সময় লাগবে। একটু জল খাওয়া দরকার। গলাটা শুকিয়ে এসেছে।

কোমরের উপর ভর দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করতেই কাল রাতের ঘটনাটা আবছা ছবির মতো ফুটে উঠল মাথার ভিতর। কোনরকমে খাটের একটা দিক ধরে উঠে বসল।

যদ্দূর মনে পড়ছে কাল রাতে বেহেড হয়ে মদ খেয়েছিল ওরা তিনজন। তারপর কী হয়েছে, কোথায় হয়েছে, কে কী করেছে কিছুই মনে নেই। রয়ে গেছে কেবল মাথা ধরিয়ে দেওয়া অসম্ভব হ্যাংওভার, আর গলার ভিতর একটা বিশ্রী স্বাদ।

মুখের উপর একবার হাত বুলিয়ে নেয় ঈশানী। হুইস্কির গন্ধ ম-ম করছে ঘরের ভিতর। সম্ভবত কোথাও মদের বোতল উলটে রয়েছে। আশেপাশে তাকিয়ে বিছানায় কাউকে দেখতে পেল না ঈশানী। ব্যাপার কী? গার্গী আর অভিরূপার তো এখানেই থাকার কথা। কাল রাতে ওরা বাইরেই ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি? তাহলে তো ঠান্ডা লেগে আর রক্ষা থাকবে না।

মুখ বাড়িয়ে মেঝের দিকে তাকাল ঈশানী, এবং তাকাতেই একটা শরীর চোখে পড়ল। গার্গী উল্টে মেঝের উপর পড়ে রয়েছে। টি-শার্টটা পেট অবধি, মাথার পাশে একটা ফাঁকা বিয়ারের ক্যান গড়াগড়ি খাচ্ছে, এলোমেলো চুল দিয়ে মুখটা ঢাকা। একটা হাত পাশে আর একটা হাত উপরের দিকে করে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। অভিরূপার চিহ্ন নেই।

বালিশটা কোলের উপরে রেখে উঠে বসল ঈশানী। মেয়েটা সাতসকালে উঠে কি বেরিয়েছে কোথাও?

তাই বা কী করে হয়? কাল রাতে ও-ই সব থেকে বেশি মদ খেয়েছিল। এমনিতেই বেলা ন’টার আগে ঘুম থেকে ওঠে না। কাল অমন উদ্দাম একটা রাতের পর…

ঘুম চোখে দরজার দিকে একবার দেখল ঈশানী। নাঃ, কাল রাতে দরজা বন্ধ করেছিল কিনা মনে পড়ল না। সত্যি কথা বলতে কাল রাতের ঘটনা কেবল ক’টা ছেঁড়া ছেঁড়া দৃশ্যের মতো মাথার মধ্যে ভেসে উঠেই মিলিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোর দিকে মন দিতে ইচ্ছা করল না ওর।

কিছুক্ষণ কপালে হাত দিয়ে বসে রইল ঈশানী। ফোনটা চেক করল। নাঃ, বাড়ি থেকে কোনও কল আসেনি। ফেসবুকের কয়েকটা নোটিফিকেশন এসেছে বটে। কিন্তু সেগুলো এখন না দেখলেও চলে।

পা বাড়িয়ে খাট থেকে নেমে এল ঈশানী। ঘুমন্ত গার্গীর কাঁধে পা দিয়ে একটা ঠেলা দিল, ‘ওঠ ভাই, সকাল হয়েছে…’

গার্গী দুবার গোঁ গোঁ করল, তারপর বিড়বিড় করে বলল, ‘মনিশ আমাকে খেয়ে ছেড়ে দিল…’

‘মরে যা শুয়োরের বাচ্চা…’

পায়ের ঠেলায় ওকে মেঝের একদিকে করে দিয়ে দরজাটা খুলে বাইরে এসে দাঁড়াল ঈশানী। চারপাশটা ভালো করে দেখল।

বেলা হতে নরম একটা রোদ উঠেছে। এই শীতকালে সেটা মন্দ লাগছে না। বাইরের বাগানের ধার দিয়ে ফুটে থাকা হলদে ফুলগুলো মাথা দোলাচ্ছে তাতে। বাসি মদের গন্ধটা কেটে যাওয়ায় বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিল ঈশানী। মনের ওজন খানিক হালকা হল তাতে।

উঠোন জুড়ে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কেয়ারটেকার লোকটার ঘরের দরজাটা খোলা। সম্ভবত একটু আগে বেরিয়ে গেছে কোথাও। গাটা শিরশির করল ঈশানীর। সাতসকালে ওরা দুজন ছাড়া সবাই উধাও হল কোথায়?

‘অভি, এই অভি…’ গলা তুলে একবার ডাকল ঈশানী। কোনও উত্তর এল না। রিমঝিম হাওয়া বইছে জায়গাটা জুড়ে। সেই হাওয়ার সঙ্গে মিশে বাঁশপাতার আওয়াজ শোনা গেল কেবল। শির-শির-শির। কে যেন হাহাকার করে কাঁদছে জঙ্গলের মধ্যে থেকে।

ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে আবার ঘরের ভিতর এসে বসে পড়ল ঈশানী। এতক্ষণে তন্দ্রাটা ভেঙেছে গার্গীর। সে হাত দিয়ে চোখ রগড়াতে রগড়াতে বলল, ‘কাল রাতে কি একটু বেশিই বাওয়াল হয়ে গেছে ভাই?’

‘কী করে বুঝলি?’

ফাঁকা বিয়ারের ক্যানটা পরীক্ষা করে ছুড়ে ফেলে দেয় গার্গী, ‘শালা কিছুই মনে পড়ছে না…’

‘মনে যখন পড়ছে না তখন আর চিন্তা কী…’

গার্গী জিভ দিয়ে একটা আওয়াজ করে, ‘আগেই বলেছিলাম বালগুলো, রাম খা, রাম খা। তোর ওই এক জেদ—হুইস্কি ছাড়া খাবি না, আর সকালে হ্যাংওভারে মরবি। তোর দেখাদেখি অভিটাও…’ কথা শেষ না করে ঘরের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় গার্গী, ‘মালটা সাতসকালে গেল কই?’

‘বাইরে তো নেই দেখলাম। ফোনটাও ফেলে গেছে।’

‘ফেলে যায়নি। কাল থেকে ওখানেই রাখা আছে।’

ঈশানীর ভুরু কুঁচকে যায়, ‘ফোন না নিয়ে মাল কোথাও যাবে বলে তো মনে হচ্ছে না। ব্রেক আপ হওয়ার পর থেকেই…’

ভাবনাটা মন থেকে সরানোর চেষ্টা করে ঈশানী, ‘মাথাটা ধরে আছে, চ, বাইরে থেকে ঘুরে আসি একটু…’

গার্গী মেঝে থেকে উঠে পড়ে। কাল রাতে যদ্দূর মনে পড়ছে বাইরের মেঝেতেই শুয়ে পড়েছিল ও। তারপরে ঈশানী না হলে অভিরূপা টানতে টানতে ওকে ঘরের ভেতর নিয়ে এসেছিল। রাতের স্মৃতিগুলো কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আছে। ঠিক কী ঘটেছিল মনে নেই। একটা ছেলের গলা পেয়েছিল কি?

বড় করে নিঃশ্বাস ফেলল গার্গী। কাল সত্যি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে।

ঈশানী গার্গী আর অভিরূপা তিনজনেই একেবারে ছোটবেলার বন্ধু। এমনকী স্কুল আর কলেজও এক। তিনজনেরই বাড়ি উত্তর কলকাতার প্রায় একই জায়গায়। কলেজ থেকে বেরোনোর পর তিনজনের নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হয় না। তাই মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলেই এদিক ওদিক বেরিয়ে পড়ে ওরা।

তবে এবারের অভিযানের অন্য কারণ আছে। ওদের মধ্যে অভিরূপা সব থেকে বড়লোক। বাঁকুড়ার কাছে প্রায় জমিদারি গোছের একটা ব্যাপার আছে ওদের। অঢেল টাকা। আগে বাবা-মাও এখানে থাকত। বছরপাঁচেক আগে তারা বাঁকুড়া চলে যাওয়াতে ও ওর দাদা তন্ময়ের সঙ্গে কলকাতার ফ্ল্যাটে থাকে। ক’দিন আগে হুট করেই মাথায় কী ভূত চাপতে অভিরূপা ঠিক করেছে কলকাতা ছেড়ে বাঁকুড়া চলে যাবে বাবা-মায়ের কাছে। ফলে এরপর দেখা কবে হবে, তার ঠিক নেই। তাই এই ট্রিপটা অভিরূপাই স্পন্সর করেছে।

একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে ঈশানী। হাত দুটো মাথার উপরে তুলে একবার শরীর বাঁকিয়ে আড়মোড়া ভাঙে। যেটুকু মনে আছে তাতে কাল রাতে মদ খেয়ে আগুনের ধারে উদ্দাম নাচছিল ওরা। যত রাত বাড়ছিল তত বাড়ছিল ওদের নাচের ধুম। তারপর কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল…

একসময়ে খোলা মাঠের উপরে শুয়েছিল ঈশানী। শনশন করে হাওয়া বয়ে আসছিল কোথা দিয়ে যেন। তারপর অভিরূপাই বোধহয় হাত ধরে টেনে কোথায় একটা নিয়ে গেল ওকে।

মুখে রোদ লাগতে মনটা একটু হালকা হল গার্গীর। কাল রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করল। সঙ্গে সঙ্গে একটা কথা মাথায় আসতেই অবাক হল ও। যে ছেঁড়া ছেঁড়া ছবিগুলো মাথায় জাগছে তার মধ্যে একটা ছবি ভারি অদ্ভুত। ওর মাথার উপরে খোলা আকাশ। অসংখ্য তারা জেগে আছে সেই আকাশে। দু’একটা বাদুড় উড়ে গেল কি? আকাশটা যেন হঠাৎই চলতে শুরু করল…

মনে মনে ভাবল গার্গী, সোজাসুজি আকাশ দেখতে পাচ্ছে মানে ও মাটির উপরেই শুয়ে আছে। কিন্তু আকাশ কি এভাবে সরে যেতে পারে? মদের ঘোরে এতটা ভুল দেখল ও?

এগিয়ে এসে বেতের ঘরটার সামনে দাঁড়িয়ে উঁচু গলায় ডাক দিল ঈশানী, ‘দাদা, শুনছেন?’

ভিতর থেকে কোনও আওয়াজ আসে না। গার্গী এসে দাঁড়ায় ওর পেছনে, ‘সকাল সকাল সব গেল কোথায়?’

ওর দিকে ফিরে তাকায় ঈশানী, ‘কাল রাতে তুই মেঝেতে পড়েছিলি, আমি কোথায় ছিলাম মনে আছে তোর?’

নিজের মাথার চুল খামচে ধরে গার্গী, ‘কী জানি। সব গুলিয়ে আছে মাথার ভিতর। এটুকু মনে আছে কেউ একটা আমাকে টেনে টেনে ঘরের ভিতর…’

হঠাৎ গার্গীর মাথার ভিতর একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে যায়। কাল রাতে আকাশটা সরে যাচ্ছিল না, ও নিজেই আকাশের দিকে চিৎ হয়ে সরে যাচ্ছিল। অর্থাৎ কেউ ওকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।

কে হতে পারে? অভিরূপা বা ঈশানী এদের দুজনের কারোরই গায়ে এত জোর নেই যে ওকে পাঁজাকোলা করে সরাতে পারে। তাহলে?

‘আমার মনে হচ্ছে কাল রাতে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। আমাদের এতটা নেশা হওয়ার কথা নয় যে সব ভুলে যাব…’ ঈশানীকেও উদ্ভ্রান্ত দেখায়।

‘তোর কী মনে হচ্ছে?’ ঈশানীর দিকে আর একটু সরে আসে গার্গী।

ছিপের ডগায় চার লাগিয়ে পুকুর ধারে বসেছিল হরি। গুনগুন করে হিন্দি ফিল্মের সুর ভাজছে। এ পুকুরে মাছের অভাব নেই। তবে অন্যান্য মাছের সঙ্গে ছোটখাটো মাছও বিস্তর আছে। সেসব উঠে আসলে বঁড়শি খুলে আবার পুকুরে ফেলে দিতে হয়। পুকুরের ধারে ছিপ ফেলে বসে আছে তাও নয় নয় করে মিনিট কুড়ি হয়ে গেছে। এখনও ছোট কী বড় একটাও মাছ ওঠেনি। ব্যাপার কী? পুকুরের সব মাছ গেল কোথায়?

হরির এই খিদমতের কাজ করতে ভালো লাগে না। ওর বাবুর না হয় ঘর সংসার নেই। এই আদাড়েবাদাড়ে ঠাঁইনাড়া হয়ে পড়ে থাকতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু ওর নিজের বউয়ের জন্য মাঝেমধ্যেই মন কেমন করে। সবে বছরখানেকও হয়নি বিয়ে করেছে। ফোনে ফোনে কথা বলে কি আর মনের খচখচানি কমে? হরি ঠিক করেছে আর মাসখানেক এই ঝামেলা সামলে পকেটে দুটো টাকা জমিয়ে শহরে পাড়ি দেবে। তারপর বাবু এক হাতে এই ভূতের বোঝা সামলাক।

গুনগুন করে সুরটা ভাজতে ভাজতে হঠাৎ একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করে হরি। পুকুরের একেবারে ভিতরের দিকে এক জায়গায় যেন অনেকগুলো মাছ একসঙ্গে জড় হয়েছে। বড়বড় ঢেউ খেলছে সেখানে। বুদবুদ উঠছে। অনেক মাছ এক জায়গায় হলে এমনটা হয়ে থাকে।

হঠাৎ মাছগুলো পুকুরের ওখান থেকে জমা হচ্ছে কেন? আছে কী ওখানে? হরির মনের মধ্যে একটা চাপা কৌতূহল হয়। কাল রাত থেকেই কী যেন কারণে ওর মনের ভিতরে একটা আশঙ্কার মেঘ উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। কাল রাতটা যেন অন্য রাতের মতো ছিল না একেবারে।

কৌতূহলটা গলা চেপে ধরতেই জল থেকে ছিপটা তুলে পাশে সরিয়ে রাখে হরি। জামাটা খুলে পাশে রেখে ঘাটের সিঁড়ি ছাড়িয়ে জলের মধ্যে নেমে আসে।

পুকুরের জল খুব একটা গভীর নয়। সোজা হয়ে দাঁড়ালে বড়জোর গলা অবধি আসে। তার ওপর নিচের মাটি শক্ত গোছের। ফলে নির্ভয়ে জল কাটিয়ে ও কিছুদূর এগিয়ে আসে।

দাঁড়িয়ে থাকা জল বলে মাঝে মধ্যেই কচুরিপানা এসে জমা হয় জলের উপর। মাঝে মাঝে আগাছায় পা আটকে যায়। সেসব পাশ কাটিয়ে জল ঠেলে সেই তরঙ্গ লক্ষ্য করে এগিয়ে যায় হরি। ওর ঠোঁটের কোণে গানের সুরটা থেমে গেছে এখন। একটা খাঁ-খাঁ নিস্তব্ধতা খেলা করছে পুকুরের উপরে। যেন এক্ষুনি কিছু একটা হবে।

কাছে আসতেই তরঙ্গগুলো কিছুদূর সরে যায়। অর্থাৎ ওর আসার সংকেত পেয়ে মাছগুলো যে যেদিকে পেরেছে ছুটে পালিয়েছে। কৌতূহলটা বেড়ে ওঠে হরির। সাতসকালে জলের মধ্যে কী থাকতে পারে যার জন্য মাছেদের মধ্যে এমন ছটাফটানি ঘটবে!

জল কাটিয়ে আরও কিছুটা এগোতেই একটা শীতল স্পর্শ লাগে হরির পায়ে। কোনও বড়সড় মাছ এসে ধাক্কা খেয়েছে ওর পায়ে। স্যাঁতস্যাঁতে স্পর্শটা। নিচের দিকে চেয়ে ঘোলাটে জলের ভিতরে কিছু দেখতে পায় না হরি। জলের ভিতর হাত বাড়িয়ে মাছটাকে উপরে তুলে আনবার চেষ্টা করে। কিন্তু মাছের আকৃতি তো এরকম…

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হাতে যেটা উঠে আসে সেটা দেখে আতঙ্কে গলা দিয়ে একটা তীব্র চিৎকারের শব্দ বেরিয়ে যায়। হাতটা অবশ হয়ে আসে হরির।

একটা মানুষের পা! সারারাত জলে ভিজে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। সমস্ত চামড়া কুঁচকে ঠিক মাছের আঁশের মতোই দেখাচ্ছে।

হাতে সাড় ফিরতেই ছিটকে আসে হরি। মস্তিস্কের কুঠুরিতে হঠাৎ করেই আবার রক্ত সঞ্চালন শুরু হয়েছে ওর। মনে হচ্ছে পায়ের সঙ্গে সঙ্গে হাত দুটোও যেন আঁকড়ে ধরবে ওর পা।

‘লাশ…লাশ…’ চিৎকার করে ওঠে হরি। জল থেকে ওঠার শক্তিও লোপ পেয়েছে ওর।

একরকম জোর করেই বুকের ভিতর কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে হরি। আরও দুপা এগিয়ে যায় আসে। ধীরে ধীরে বাকি শরীরটা উঠে আসে জলের উপরে। সারারাত জল খেয়ে ভিতর থেকে ফুলে উঠেছে মানুষটা। তাও টি শার্টের রং আর মুখের অবয়ব দেখে মানুষটাকে চিনতে পারে হরি।

যে তিনটে মেয়ে ওদের ক্যাম্পে আছে তাদের মধ্যে একজন। কোনরকমে বুকে সাহস আনার চেষ্টা করে সে। কাল রাতে মদ খেয়ে কোনওভাবে জলে ডুবে মরেছে মেয়েটা। ওর বুকের ভিতরে শীতল আতঙ্কটা কিছুটা কমে আসে। মেয়েটা মরে গেল! কী হবে এবার? যদি পুলিশ ওকেই…

অবশ্য মেয়েটা তো মদ খেয়ে জলে ডুবে মরেছে। বড়জোর ক’দিনের একটা হুজ্জুতি হবে। বাকি ঝামেলা বাবু বুঝবে।

মেয়েটার শরীরটা ভেসে উঠতেই ওর মুখের দিকে একবার চোখ পড়ে হরির। দুটো চোখ খোলা। তীব্র আতঙ্কে যেন আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটা। নীলচে আকাশে কাউকে বুঝি খোঁজার চেষ্টা করছে। সেই বিস্ফারিত চোখের দিকে চোখ পড়লে ভয় লাগে। হরি চোখ নামিয়ে নেয়। গলার উপর দৃষ্টি নেমে আসে ওর। আর আসতেই ও থমকে যায়…

মেয়েটার গলায় কয়েকটা কালশিটের দাগ। ভালো করে তাকালে বোঝা যায় শক্ত হাতে গলা টিপে খুন করা হয়েছে মেয়েটাকে।

খেতের এদিক-ওদিক বেশ খানিকক্ষণ ধরে খোঁজাখুঁজি করেও প্যান্টের হদিশ পায় না নাদু নস্কর। মাথাটা আরও গরম হয়ে ওঠে ওর। একদিকে সর্ষেখেত হলদে সবুজ রঙে ঢেকে আছে। তার পাশেই বাঁধাকপির চাষ হয়েছে, সেটা পেরোলে টমেটো। সমস্ত জায়গাটা ভরে আছে সকালের ঝকঝকে রোদে। আল ধরে হেঁটে গোটা জমিটার উপরেই একবার টহল দিয়ে আসে নাদু নস্কর।

নাঃ, ও প্যান্ট উদ্ধারের আশা এবার ত্যাগ করা ছাড়া গতি নেই। হতাশ হয়ে একটা দীর্ঘশাস ফেলে এগোতে যাবে নাদু, এমন সময় পুকুরের দিক থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসে। হরি চিৎকার করছে। ব্যাপার কী? বড়সড় কোনও মাছ উঠেছে নাকি!

নাদু হাসে। মেয়েগুলোর ভাগ্য ভালো। ভালো দিনেই মাছ খাওয়ার সাধ জেগেছে ওদের।

খুশি খুশি মনে সেদিকে এগোতে যেতেই একটা অদ্ভুত জিনিস খেয়াল হল নাদুর। কী যেন একটা নেই জায়গাটায়। কালও ছিল অথচ আজ ওর চাষের জমি থেকে কিছু একটা গায়েব হয়েছে।

একটু ভাবতেই জিনিসটার কথা মনে পড়ল নাদুর। ও এখানে চাষবাস শুরু করতেই কাকের উৎপাত হয়েছিল কিছুদিন। খেতের কাঁচা বাঁধাকপি টমেটো মাঝেমধ্যেই ফাঁকা করে দিয়ে যেত তারা। ফলে ক’দিন জোগাড়যন্ত্র করে একটা কাকতাড়ুয়া লাগিয়েছিল।

সেটা লাগাতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়। কাক তো দূরের কথা একটা সাধারণ পোকামাকড় অবধি এ জমির ত্রিসীমানায় আসে না। ফলে সেটার দিকে এতদিন তেমন একটা নজর দেয়নি নাদু। অবহেলায় খেতের মাঝখানে তেমনই ঠায় দাঁড়িয়েছিল।

আজ অবাক হয়ে নাদু নস্কর লক্ষ করল—খেতের মাঝখান থেকে গোটা কাকতাড়ুয়াটা গায়েব হয়েছে। যেন নিজে পায়ে হেঁটেই কোথাও চলে গেছে সে…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *