কাউণ্ট কোবরা – ৫৭

সাতান্ন

জীবনে বেশ কয়েকবার গুলি খেয়েছে মাইক বুচার। ভাল করেই জানে, পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারলে লড়তে পারবে। মেয়েমানুষের ছোট ক্যালিবারের গুলির সাধ্য নেই ওকে ঠেকাবে। এরই ভেতর বুঝেছে, ভেঙে গেছে কলার বোন। তবে এখন যে কাজটা করবে, তাতে এতই মজা পাবে, ব্যথা সহ্য করতেও আপত্তি নেই।

ধুপ-ধাপ শব্দে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে বুচার। রক্তক্ষরণ ঠেকাতে বামহাতে চেপে ধরে আছে ঘাড়। দেখতে না দেখতে তৃতীয়তলায় পৌঁছে গেল সে। একমুহূর্ত রেলিঙে ঠেস দিয়ে দেখে নিল নিচের সিঁড়ি। ওদিক থেকে ঝড়ের বেগে উঠছে কালো টুক্সেডো পরা কেউ। তিক্ত হাসল বুচার। ওর পেছনে লেগেছে মাসুদ রানা। রক্তের ফোঁটা লোকটাকে বলে দিচ্ছে ও কোথায়। আপাতত এ ব্যাপারে কিছুই করার নেই। এখন এ খেলায় এগিয়ে থাকতে হবে। ভুলে যেতে হবে ব্যথা। তারপর প্রথম সুযোগেই খতম করবে বেয়াড়া কালা আদমিটাকে।

আরেকবার হাসল বুচার। ওরা যেন সেই আগের মতই প্রতিযোগিতা করছে কমাণ্ডো ট্রেইনিঙে। সেবার মাত্র কয়েক পয়েন্টের জন্যে রানার কাছে হেরে গিয়েছিল। তবে এবার হারবে না। এখন বুড়ো খচ্চর লুকা ব্রুনারের নির্দেশ শোনার প্রয়োজন নেই। হাতে তুরুপের টেক্কা! সেটা খেললে মাসুদ রানা নয়, সে-ই জিতবে এই লড়াইয়ে।

ছুটতে ছুটতে পঞ্চমতলায় উঠল মাইক বুচার। ঘাম ও রক্তে গোসল হয়ে গেছে। বামে চিলেকোঠার কয়েকটা ঘর। ওখানে খসে পড়েছে দেয়ালের ওয়ালপেপার। মেঝেতে ছেঁড়া কার্পেট। বাড়ির ওপরতলা বেশ ঠাণ্ডা। শীতল ঘামে শিউরে উঠছে শরীর। ডানের একটা দরজা খুলে টলতে টলতে ঘরে ঢুকল বুচার। সময় লাগল না দরকারি জিনিসটা পেতে। বগলের নিচে ছোট্ট চামড়ার কেসটা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল।

‘বস্, ঠিক আছেন?’ জানতে চাইল মাথা-মোটা রাশান। এইমাত্র খেয়াল করেছে বুচারের গায়ে রক্তের দাগ।

ব্যথা চেপে জবাব দিল বুচার, ‘তোমার এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। বেশিরভাগ মানুষের দিকে ওপর থেকে তাকায় সে। কিন্তু আন্দ্রে নিকলভস্কি তার চেয়ে প্রায় পৌনে একফুট উঁচু। বিশাল, তিন শ’ পাউণ্ডের দৈত্য। বুচারের ঊরুর চেয়ে পুরু তার ঘাড়। ওটার ওপরে বসে আছে দুই নম্বর সাইযের ছোট এক ফুটবল। লোকটার মগজ বড়জোর খোসা ছাড়ানো আখরোটের সমান। নিজের দলে এই ধরনের লোক রাখতে পছন্দ করে বুচার। বুদ্ধির দরকার নেই। শুধু নির্দেশ পালন করলেই চলবে। নিকলভস্কির মাংসল হাতের তুলনায় খুব ছোট্ট দেখাচ্ছে বিশাল রুগার রিভলভারটা।

‘নিচে শালারা ভয় পাইসে,’ ভাঙা জার্মান ভাষায় জানাল রাশান দৈত্য। ‘আসলে কী হইসে?’

‘কারা যেন বিরক্ত করছে পার্টিতে এসে,’ বলল বুচার। চোখ থেকে সরাল ঠাণ্ডা ঘাম। নড়ে উঠেছে ঘাড়ের ভাঙা হাড়। যন্ত্রণা সহ্য করতে গিয়ে দাঁতে দাঁত পিষল সে। ‘আমার পেছনে কেউ আসতে পারে। যেভাবে হোক তাকে ঠেকাবে, নিকলভস্কি। তুমি তো জানোই কী করতে হবে। তোমার ওপর ভরসা রাখতে পারি তো?’

ধীরে ধীরে দুই নম্বর ফুটবল নাড়ল দৈত্য। ‘ঠিক আছে, বস্।’ পায়ের ধুপ-ধাপ শব্দ তুলে করিডোরে বেরিয়ে গেল আনমনে হাসল বুচার। নিজেও করিডোরে বেরিয়ে রক্তাক্ত হাতে ঠেলে খুলল এমিলির ঘরের দরজা। এক কোণে চুপ করে বসে আছে মেয়েটা। চোখে ভীষণ ভয় নিয়ে বুচারের দিকে তাকাল। চামড়ার কেস থেকে সিরিঞ্জ নিল ব্রিটিশ স্যাডিস্ট। আঙুল ব্যবহার করে খুলল ছোট্ট ভায়ালের কর্ক। বোতল থেকে সিরিঞ্জে ভরল ভয়ঙ্কর বিষ। হাসতে হাসতে এমিলিকে বলল, ‘ভয় নেই, তোমার চিরকালীন মজার ব্যবস্থা করছে বুচার আঙ্কেল।

সিরিঞ্জ হাতে লোকটা এগিয়ে আসছে দেখে ভীষণ ভয়ে চেঁচিয়ে উঠল এমিলি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *