কাউণ্ট কোবরা – ৫৪

চুয়ান্ন

আগেও ওই পাথুরে দেয়াল দেখেছে রানা।

ওরা আছে প্রাসাদের অনেক গভীরে। চারপাশে পুরনো আমলের ছাপ। সামনে খিলানযুক্ত সেতুর ওদিকেই বোধহয় ভিডিয়োর সেই মন্দির। রানার ধারণা, একবছর আগে ওখানেই ছবি তুলেছিল অ্যালেক।

ধনুকের মত খিলানযুক্ত সেতু পেরিয়ে ভারী কাঠের দরজার হাতলে হাত রাখল রানা। দরজা লক করা নয়। ধীরে কপাট ঠেলে এগুল ও। পিছু নিয়েছে অন্যরা। ওরা আছে উঁচু একটা গ্যালারিতে। ওরই নিচতলায় থাকার কথা কাউন্ট কোবরার সেই ব্যক্তিগত মন্দির।

রানার কানে ফিসফিস করল ভিটো রেমারিকের গম্ভীর কণ্ঠ: ‘রওনা হয়েছে। যে-কোনও সময়ে পৌঁছে যাবে। আর কাউকে দেখছি না। রিপিট করছি: আর কাউকে দেখছি না।’

অনেক উঁচু ছাতের কাছে ধুলো ভরা কাঁচের জানালা। ওটা ভেদ করে চাঁদের আলো পড়ছে নিচের মেঝেতে। সাধারণ পাথর দিয়ে তৈরি দেয়াল, মেঝে ও ছাত। কোথাও আনুষ্ঠানিকতা নেই। সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রয়াস নেই। ঘরের মাঝে কারুকাজহীন কিছু কাঠের বেঞ্চি। মৃদু আবছা আলোয় কেমন ম্লান লাগছে ওগুলো।

গলা ও মুখের ভেতরটা শুকিয়ে গেল রানার। যা দেখছে বিশ্বাস করতে পারছে না। তবে অবিশ্বাস না করারও কোনও কারণ নেই! এই মন্দির আসলে অ্যালেকের ভিডিয়োর সেই মন্দির নয়!

ওরা আছে সম্পূর্ণ অন্য এক ঘরে!

ব্যস্ত হয়ে নিচে তাকাল রানা।

ওরা যে পথে এসেছে, সেটা ছাড়া এই মন্দিরে ঢোকার আর কোনও দরজা নেই!

পেছনে দলের ছেলেদের উপস্থিতি টের পেল রানা। ওকে খেয়াল করছে ওরা। মুখ ফুটে কিছু না বললেও সবাই বুঝে গেছে, কোথাও বড়সড় কোনও গোলমাল হয়ে গেছে।

ভয় ও আশঙ্কায় বুকটা আঁকড়ে আসছে রানার।

সত্যিই হারিয়ে ফেলেছে ও এডি অ্যামন আর এমিলি কেইলম্যানকে!

কাউণ্ট কোবরা সন্দেহ করেছিল, গোপনে প্রাসাদে ঢুকবে রানা। তাই রাজনীতিকের মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করেছে অন্য কোথাও!

রানাকে ফাঁকি দিয়েছে ক্রিস্টা গুন্থার!

রানার নাকের ডগা দিয়ে এডি অ্যামনকে সরিয়ে নিয়ে

গেছে লুকা ব্রুনারের লোক!

সরাসরি ফাঁদে পা দিয়েছে রানা!

‘কী হলো, মাসুদ ভাই?’ জানতে চাইল জসিম।

চুপ করে থাকল রানা।

নিচে পাথরে পাথর ঘষ্টে যাওয়ার আওয়াজ শুনল ওরা।

দু’সারি বেঞ্চির মাঝে কী যেন নড়ছে!

ঘষা খেয়ে একপাশে সরল চ্যাপ্টা কোনও ভারী পাথর।

মেঝেতে তৈরি গহ্বর থেকে উঠে এল কালো পোশাক পরা এক লোক!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *