ঊনত্রিশ
ডিটেকটিভ সার্জেন্ট লুদভিগ কেইলম্যানের বুক থেকে নেমে গেছে ভারী পাথর। এখন আর অনিরাপদ নয় তার একমাত্র কন্যা এমিলি। চাইলেও ওকে আর কিডন্যাপ করতে পারবে না ওরা। কেউ জানে না এমিলি এখন আছে সুপিরিয়র মাদারের ওখানে।
ওই বদমাশের দল ভেবেছে মেয়েকে কিডন্যাপের ভয় দেখালেই ঠেকাতে পারবে কেইলম্যানকে। কিন্তু এবার নব উদ্যমে লাগবে সে, পেটের গ্যাস তুলে দেবে হারামিগুলোর মাথায়। বিশালদেহী হলেও ঝড়ের বেগে হাঁটতে পারে লুদভিগ। এখন চলেছে চওড়া করিডোর ধরে। চোখে কঠোরতার ছাপ। উল্টো দিক থেকে যারা আসছে, তার গম্ভীর চেহারা দেখে বুঝে যাচ্ছে, খুব জরুরি কাজে চলেছে ডিটেকটিভ সার্জেন্ট। আগে কখনও তার চেহারায় এত দৃঢ়তা দেখেনি পরিচিতরা। ঝামেলা এড়াতে গিয়ে পথ ছেড়ে দিচ্ছে তারা।
গতি না কমিয়েই চিফের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল কেইলম্যান। আগেও হাজারবার বসের মুখোমুখি হয়ে ঝগড়ার সুরে তর্ক জুড়েছে সে। বরাবরের মত ডেস্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে অসংখ্য কাগজ, ফাইল ও ফোল্ডার। ঘরের শতখানেক কাপ থেকে আসবে বাসি কফির বাজে গন্ধ। নিজের ডেস্কের পেছনে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকবে ব্রিত চেহারার বৃদ্ধ চিফ। মানুষটা যেন এ ঘরের আসবাব- পত্রেরই একটা অংশ। কোনদিন তাকে ওই চেয়ারে না দেখলে ভীষণ অবাক হবে কেইলম্যান।
কিন্তু আজ অফিসে ঢুকে সত্যিই বিস্মিত হলো। একেবারেই বদলে গেছে ঘরের সবকিছু।
ডেস্কে যে বসে আছে, তার বয়স বড়জোর পঁয়ত্রিশ। তেল দেয়া কালো চুল পরিপাটিভাবে আঁচড়ে রাখা। নাকের ওপর সোনার রিমের চশমা। পরনে ইস্ত্রি করা সুট। গলা থেকে ঝুলছে নিখুঁত টাই। হালকা শরীরের লোকটা নিপাট ও পরিচ্ছন্ন। একেবারেই তার সঙ্গে মেলানো যাবে না চিফকে।
ঘরের সবকিছু গুছিয়ে রাখা। বাতাসে এয়ার ফ্রেশনারের মিষ্টি সুবাস। টেবিলের ওপর একটা কাগজও নেই। একপাশে মৃদু খির-খির শব্দ তুলছে ছোট নোটবুক কমপিউটার। ঘরের কোণে কাগজে উপচে পড়া আগের সেই জংধরা বিক্ষত ক্যাবিনেটের জায়গায় নতুন ক্যাবিনেট। নতুন করে পরিষ্কার করা হয়েছে চিরকালের ধুলো ভরা জানালার কাঁচ।
‘চিফ লিয়ন এবিল-ফিটসচ কোথায়?’ থমকে গিয়ে জানতে চাইল লুদভিগ।
চোখ তুলে তাকে দেখল কমবয়সী লোকটা। তার দৃষ্টি ঠিক ইস্পাতের মতই কঠিন। নিচু গলায় জানতে চাইল, ‘তুমি কে?’
‘কেইলম্যান। আপনি?’
‘আমি ডেভিড। তোমার কাছে আমি চিফ ডেভিড ব্যাযিন, গাধা কোথাকার! আবারও এই অফিসে এলে আগে দরজায় নক করে তারপর ঢুকবে। আমার কথা মগজে ঢুকেছে?’
চুপ করে থাকল লুদভিগ কেইলম্যান।
‘তো কী চাও তুমি?’
‘চিফ লিয়ন এবিল-ফিটচ্ কোথায়?’ দ্বিতীয়বারের মত জানতে চাইল কেইলম্যান।
‘বিদায় হয়েছে,’ বলল যুবক।
‘কোথায় গেছেন?’
নাকের ডগা থেকে চশমা খুলে লুদভিগের চোখে তাকাল নতুন চিফ। ‘আমাকে তোমার ট্র্যাভেল এজেন্ট বলে মনে হচ্ছে? ওই লোক কোথায় গেল তা জানাবার এজেন্সি নিয়েছি? হয়তো দক্ষিণের কোনও সাগরতীরে বরফের মত ঠাণ্ডা ড্রিঙ্ক হাতে বসে আছে। খুশিমনে দেখছে আশপাশ দিয়ে যাওয়া সুন্দরী তরুণীদেরকে। অবসর নিলে মানুষ আবার কী করে, অ্যা?’
‘তিনি অবসর নিয়েছেন? কিন্তু আমি তো মাত্র গতকাল তাঁর সঙ্গে কথা বললাম! তিনি তো আমাকে কিছুই বলেননি! জানতাম কিছু দিন পর অবসর নেবেন, কিন্তু…
বিরক্তির সঙ্গে বলল চিফ ব্যাযিন, ‘প্রথম সুযোগেই অবসর নিয়েছে। এবার বলো, ডিটেকটিভ, কী এমন ঘটে গেছে যে ঝড়ের বেগে ঢুকলে আমার অফিসে? … জরুরি কাজ না থাকলে আমাকে কখনও বিরক্ত করবে না! ভাল কোনও কাজও তো খুঁজে নিতে পারো।’ তিক্ত হাসল নতুন চিফ। ‘তোমার মগজে ঢুকেছে আমার কথা?’