1 of 2

কলকাতার হাসপাতাল ও চিকিৎসালয়

কলকাতার হাসপাতাল ও চিকিৎসালয় 

১৮৩৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রস্তাবিত হয়ে ১৮৩৬ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে কলকাতায় মেডিকেল কলেজের উদ্বোধন হয়। তা থেকে অনেকেরই ধারণা হতে পারে যে তার আগে কলকাতায় কোন হাসপাতাল ছিল না। কলকাতায় দুটো হাসপাতাল ছিল, একটা সাহেবদের জন্য ও আর একটা দেশীয় লোকদের চিকিৎসার জন্য। সাহেবদের জন্য হাসপাতাল প্রথম স্থাপিত হয়েছিল ১৭০৭ খ্রীষ্টাব্দে। ওই সময় কোম্পানির গোরা সৈন্য ও জাহাজের নাবিকদের মধ্যে মড়কের বহর দেখে বর্তমান গারষ্টিন প্লেসে কলকাতার প্রাচীন কবরখানার ঠিক পূর্ব-দক্ষিণ কোণে একটা হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। এটা মাত্র সাহেবদের চিকিৎসার জন্য সংরক্ষিত ছিল, যদিও এই হাসপাতাল সাহেব ও দেশীয় জমিদার ও ব্যবসায়ীদের চাঁদায় কোম্পানির বকসী মিঃ আদামের তদারকে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু এর চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে আলেকজাণ্ডার হ্যামিলটান লিখে গেছেন—‘কলকাতায় কোম্পানির একটা ছোটখাটো সুন্দর হাসপাতাল আছে। সেখানে অসুস্থতার জন্য অনেকেই যায়, কিন্তু অল্পলোকই সেখানকার চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে বলবার জন্য সেখান থেকে ফিরে আসে।’ পরে এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘প্রেসিডেন্সী জেনারেল হাসপাতাল’। ১৭৬৮ খ্রীষ্টাব্দে এই হাসপাতালটিকে ভবানীপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। ‘প্রেসিডেনসী জেনারেল হসপিটাল’ নামেই এটা ইংরেজ আমলে পরিচিত ছিল। পরে এর নামকরণ করা হয় ‘শেঠ সুখলাল কারনানি হাসপাতাল’। কিন্তু সাধারণের কাছে এটা পি. জি. হাসপাতাল নামে পরিচিত! ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে এই হাসপাতালের গবেষণাগারে রোনালড্ রস আবিষ্কার করেন মশকের দ্বারা ম্যালেরিয়া কিভাবে সংক্রমিত হয়। 

তারপর পুরা ৮৫ বছর কেটে যাবার পর কলতায় দেশীয় লোকদের চিকিৎসার জন্য প্রথম হাসপাতাল স্থাপিত হয়। ১৭৯২ খ্রীষ্টাব্দে এটা স্থাপিত হয়েছিল। (কিন্তু কাজ আরম্ভ হয়েছিল ১৭৯৪ খ্রীষ্টাব্দে), এবং এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘A hospital for the relief of natives requiring the assistance of surgeons’. এই হাসপাতাল পরিচালনের ভার সাহেব ও দেশীয় লোক নিয়ে গঠিত এক কমিটির উপর ন্যস্ত হয়েছিল। আটাশ জন লোকের অর্থানুকূল্যে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। গভর্ণর-জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিস তিন হাজার টাকা দিয়েছিলেন। গঙ্গানারায়ণ দাস ও কৃষ্ণকান্ত সেন নামে দুই বাঙালী প্রত্যেকে পাঁচশ টাকা করে দান করেছিলেন। 

তবে সেকালে এদেশীয় লোকেরা বিলাতী ওষুধ খেত না। খুব কম লোকই সাহেব ডাক্তার দেখাত। মধ্যবিত্ত ইংরেজদেরও সেই দশাই ছিল। সেকালের ইংরেজ ডাক্তাররা পালকী চেপে রোগী দেখতে আসতেন। ডাক্তারের ভিজিট ছিল এক সোনার মোহর। যদি কোন বাড়ীতে একাধিক রোগী থাকত তা হলে প্রত্যেক রোগীর জন্য স্বতন্ত্র দর্শনী দিতে হত। ওষুধের দামও অত্যধিক ছিল। ওয়ারেন হেষ্টিংস-এর আমলে কোম্পানি সুবিধা দরে ওষুধ বিক্রির জন্য পুরানো কেল্লার মধ্যে একটা ডাক্তারখানা খুলেছিল। কিন্তু সেখানে কোন কিছু ভেষজ দ্রব্যের ছালের দাম ছিল প্রতি আউন্স তিন টাকা। কোনরূপ বিরেচক শোধিত লবণের মূল্য প্রতি আউন্স এক টাকা। একটা বেলেস্তারার দাম দুই টাকা ইত্যাদি। 

দেশীয় লোকদের চিকিৎসার জন্য যে নেটিভ হাসপাতালটি স্থাপিত হয়েছিল, সেটাই পরবর্তীকালে মেয়ো হাসপাতালের রূপ নিয়েছিল। ১৭৯২ খ্রীষ্টাব্দে প্রস্তাবিত হয়ে, ১৭৯৪ খ্রীষ্টাব্দে এর উদ্বোধন হয়। নেটিভ হাসপাতাল প্রথম স্থাপিত হয় ফৌজদারী বালাখানায় এক ভাড়া বাড়ীতে। কিন্তু বছর দুয়েকের মধ্যেই হাসপাতালটি স্থানান্তরিত হয় ধর্মতলার চাঁদনী চকে। হাসপাতালটি যে গোড়া থেকেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, তা প্রথম দিকের কয়েক বছরের চিকিৎসিত রোগীর সংখ্যা থেকে বুঝতে পারা যায়। ১৭৯৪ খ্রীষ্টাব্দে এখানে চিকিৎসিত হয়েছিল ২৪৭ ব্যক্তি, ১৭৯৫ সালে ৪২০ ব্যক্তি, ১৭৯৬ সালে ৪৯৫ ব্যক্তি, ১৭৯৭ সালে ৬১৬ ব্যক্তি, ১৭৯৮ সালে ৬৭৩ ব্যক্তি, ১৭৯৯ সালে ৮২৫ ব্যক্তি, ১৮০০ সালে ২০২৪ ব্যক্তি, ১৮০১ সালে ২৪৪৫ ব্যক্তি, ১৮০২ সালে ৪৯৪৯ ব্যক্তি, ১৮০৩ সালে ৬১১২ ব্যক্তি, ১৮০৪ সালে ৪৩২৮ ব্যক্তি, ১৮০৫ সালে ৪৩৮০ ব্যক্তি, ১৮০৬ সালে ৩৭৪১ ব্যক্তি, ১৮০৮ সালে ৭০৭৮ ব্যক্তি, ১৮০৯ সালে ৮৯২৬ ব্যক্তি, ১৮১০ সালে ৭৩৭৬ ব্যক্তি, ১৮১১ সালে ১১,৭৬৪ ব্যক্তি, ১৮১২ সালে ১২,৮৩২ ব্যক্তি, ১৮১৩ সালে ১৪,৪৬৩ ব্যক্তি, ১৮১৪ সালে ১৩,৭৫৩ ব্যক্তি, ১৮১৫ সালে ১৫,৬৫৯ ব্যক্তি, ১৮১৬ সালে ১৬,৫৩১ ব্যক্তি, ১৮১৭ সালে ২০,৪১১ ব্যক্তি, ১৮১৮ সালে ২৩,৫৬৮ ব্যক্তি, ১৮১৯ সালে ২৮,১৯৩ ব্যক্তি, ১৮২০ সালে ২৯,১৩৭ ব্যক্তি, ১৮২১ সালে ৩২,১৩২ ব্যক্তি, ১৮২২ সালে ৩৯,৭২৬ ব্যক্তি, ও ১৮২৩ সালে ৪১, ১৬৬ ব্যক্তি। একুনে ৩,৫৮,৮৬৫ ব্যক্তি। এই সংখ্যাগুলো সমসাময়িক সংবাদপত্র থেকে নেওয়া হয়েছে। 

সেকালের কলকাতায় বসন্ত ও ওলাউঠার প্রকোপই ছিল সবচেয়ে বেশী। কিন্তু ১৮২৪ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ এই দুই রোগ ছাড়া, এক নূতন রোগের আবির্ভাব হয়। এটা জ্বর রোগ। সমসাময়িক সংবাদপত্রে পড়ি——মোকাম কলকাতায় সাহেব লোকদের মধ্যে অতিশয় জ্বরে অনেকে মরিয়াছে।’ কিন্তু জ্বর মহাশয় শীঘ্রই সাহেবদের ছেড়ে দেশীয় লোকদের ওপরেই হামলা চালালেন। ১৮২৫ খ্রীষ্টাব্দের ৬ আগস্ট তারিখের ‘সংবাদ চন্দ্রিকা’য় পাড়ি— ‘এ স্থানে সর্বসাধারণ জ্বরোৎপন্ন হইয়াছে। কিন্তু অদ্যাবধি কেবল দেশীয় লোক বিনা অন্যের ওপর আক্রমণ করে নাই। প্রথমতঃ সর্বাঙ্গ বেদনা ও অসহিষ্ণু শিরোবেদনার সহিত জ্বরের আরম্ভ হয়, কিন্তু তিন চারদিনের অধিক থাকে না। জ্বর ত্যাগ হইলেও রোগী অত্যন্ত ক্ষীণ থাকে।’ সংবাদপত্রে আরও পড়ি—শহর কলিকাতায় জ্বররাজ রাজ্য করিবার বাসনায় সমাগমন করিয়াছেন। কিন্তু তাহার সমভিব্যাহারে অধিক সৈন্য নাই। কেবল প্রবল এক সৈন্য আছে যে শরীর মধ্যে প্রবেশ করিয়া স্বীয় ক্ষমতাতে অস্থি চূর্ণ করে। তাহাতেই জ্বররাজ অতি সন্তুষ্ট আছেন। ইহার আগমনের তাৎপর্য এই বুঝা যাইতেছে যে পূর্বে ওলাওঠা রোগরাজ এই রাজধানীতে স্বীয় সৈন্য সন্নিপাতাদি সঙ্গে লইয়া আসিয়াছিলেন এবং রাজ্যও বিলক্ষণ করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহার প্রবল প্রতাপে ভীত হইয়া অনেক প্রজা জীবনরূপ রাজস্ব দিয়াছে। তাহাতে নির্দয়তা প্রকাশ হইয়াছিল। এক্ষণে কালবলে তিনি কালগ্রস্ত হইয়াছেন। অতএব জ্বররাজ বিরাজমান হইয়া স্বীয় শীলতা প্রচারে রাজ্য করিতে আসিয়াছেন। ইহা কিছুদিন স্থিতি হইবে তাহার কারণ এই যে এই নগরে অনেক দেশীয় অনেকের বসতি আছে। সকলে এক্ষণ পর্যন্ত তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে পারেন নাই, ক্রমে ক্রমে সাক্ষাৎ করিতেছেন এবং করিবেন।’ 

এই পটভূমিকাতেই নেটিভ হাসপাতালের সম্প্রসারণ ঘটে। ১৮২৫ খ্রীষ্টাব্দে ‘আউটডোর’ রোগীদের জন্য দুটি ডিসপেনসারী’ খোলা হয়, একটি পার্ক স্ট্রীটের নিকট সুরতীবাগানে (১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে এর নূতন নামকরণ হয় ‘রিপন স্ট্রীট ডিসপেনসারী’ কিন্তু অর্থাভাবের জন্য ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে এটা তুলে দেওয়া হয়) ও আর একটি শোভাবাজারের নিকট গরাণহাটায় এটাই তুলে দেওয়া হয় এবং ১নং গৌর লাহা স্ট্রীটস্থ জমিটা বিক্রি করে দেওয়া হয়)। ১৮৩২ খ্রীষ্টাব্দের নেটিভ হাসপাতালের পরিচালকরা বেলিয়াঘাটার কুষ্ঠ আশ্রমটি অধিগ্রহণ করে, কিন্তু ১৮৩৪ খ্রীষ্টাব্দে এর পরিচালন ভার ডিস্ট্রিকট চ্যারিটেবল সোসাইটির ওপর ন্যস্ত হয়। ১৮৩৯ খ্রীষ্টাব্দে নেটিভ হাসপাতালকে সম্প্রসারিত করা হয় ও ১৮৪১ খ্রীষ্টাব্দে চিৎপুরে একটি নূতন ডিসপেনসারী খোলা হয়। ১৮৪৭ খ্ৰীষ্টাব্দে নেটিভ হাসপাতালের পরিচালকরা মতী ক্যামারূন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত গার্ডেন রীচ ডিসপেনসারীর পরিচালন ভার গ্রহণ করে। কিন্তু ১৮৬২ খ্রীষ্টাব্দে এই ডিসপেনসারীটাও তুলে দেওয়া হয়। মেয়ো মেমোরিয়াল ফাণ্ড থেকে ৫০,০০০ টাকা পাবার পর ১৮৭৭ খ্রীষ্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে ষ্ট্রাণ্ড রোডে বর্তমান জমির ওপর মেয়ো হাসপাতাল স্থাপিত হয়। 

মেয়ো হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপন করেন ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড নর্থব্রুক ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারী তারিখে। এই হাসপাতালের জন্য অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল ডাঃ ম্যাকনামারার ওপর। একদিন ধর্মদাস সুর শ্যামবাজারের রাজেন্দ্রনাথ পালকে সঙ্গে নিয়ে ডাঃ ম্যাকনামারার সঙ্গে দেখা করে হাসপাতালের সাহায্যার্থে টাউন হলে ন্যাশনাল থিয়েটারের অভিনয় করার প্রস্তাব দেন। ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৯ মার্চ তারিখে টাউন হলে নেটিভ হাসপাতালের সাহায্যে ধর্মদাস বাবুর দল কর্তৃক ‘নীলদর্পণ’ অভিনীত হয়। এখানে উড সাহেবের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও সৈরিন্ধ্রীর চরিত্রে ডাঃ রাধাগোবিন্দ কর ( যাঁর নামে আর. জি. কর মেডিকেল কলেজ)। আরও যাঁরা এই অভিনয়ে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন মতিলাল সুর, মহেন্দ্র বসু, অবিনাশ কর, গোপালচন্দ্র দাস প্রমুখ। ১১০০ টাকার টিকিট বিক্রয় হয়েছিল। খরচ বাদে ৭০০ টাকা হাসপাতাল তহবিলে দান করা হয়। ডাঃ ম্যাকনামারা নিজে এই অভিনয়ে উপস্থিত ছিলেন। (ইংলিশম্যান’ ৩১ মার্চ ১৮৭৩)। 

১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দে মেয়ো হাতপাতাল ষ্ট্রাণ্ড রোডে স্থাপিত হবার পর, নেটিভ হাসপাতালের চাঁদনী শাখার নাম রাখা হয় চাঁদনী হাসপাতাল। ওই ১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দেরই ফেব্রুয়ারী মাসে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বাঙলা সরকারের কাছ থেকে সুকিয়া স্ট্রীট ডিসপেনসারীর পরিচালন ভার নেয়। ১৯২৮ খ্রীষ্টাব্দে এ ডিসপেনসারীটা তুলে দেওয়া হয়। 

১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দে মতী রাজরানী দাসী প্রদত্ত দানের সাহায্যে চাঁদনী হাসপাতাল পুনর্নির্মিত হয়। ১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দে ২৬ জুলাই তারিখে তৎকালীন ছোটলাট ৪ ও ৫ নং টেম্পল স্ট্রীটে অবস্থিত পুনর্নির্মিত চাঁদনী হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। ১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দের ১ এপ্রিল তারিখে চাঁদনী হাসপাতালের ইনডোর’ বিভাগ তুলে দেওয়া হয়। ও ১৯১৮ খ্রীষ্টাব্দে ৭০,০০০ টাকায় বিক্রী করে দেওয়া হয়। তবে একটা ‘আউটডোর’ বিভাগ এখনও আছে। বোধ হয়, সপ্তাহে দুদিন এখানে রোগী দেখা হয়। 

১৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দে মেয়ো হাসপাতালে একটি স্বতন্ত্র ‘আউটপেসেন্ট’ বিভাগ খোলা হয়। ১৯৩৭ খ্রীষ্টাব্দে বাগবাজারের প্রখ্যাত ব্যবসায়ী হরিদাস সাহা কর্তৃক প্রদত্ত ২০,০০০ টাকা দানের সাহায্যে চিৎপুর ডিসপেনসারীটি (৬৯৬ রবীন্দ্র সরণী) নূতন ভাবে নির্মিত হয়। ১৯৬৬ খ্রীষ্টাব্দের জুন মাসে ওখানে নাক, গলা ও কান সম্বন্ধে চিকিৎসার জন্য মেয়ো হাসপাতালের শাখারূপে ‘হরিদাস সাহা ইনষ্টিটিউট অভ্ ওটোল্যারিংগোলজী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।। 

যে সকল দানশীল ব্যক্তির অর্থানুকূল্যে নেটিভ হাসপাতাল ও তার উত্তরসংস্থা মেয়ো হাসপাতাল পুষ্ট হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েক জনের নাম করা যেতে পারে—যোসেফ ও জন ব্যারেটো, রাজা বৈদ্যনাথ রায়ের পরিবার, মহারাজ যতীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার, মেয়ো মেমোরিয়াল ফাণ্ড, রাজা কৃষ্ণদাস লাহার পরিবার, হায়দারাবাদের নিজাম, রেলী ব্রাদারস, প্রিয়নাথ দত্ত, ক্ষেত্রমণি দত্ত, ডবলিউ. সি. বোনারজি, টরনার মরিসনের উইলসন সাহেব, বিলাতের মিষ্টার রস্ হিলডাব্রাণ্ড, মতী জে. সি. দত্ত, মতী এন. এন. দে, লীলাবতী দাস প্রমুখরা 

ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজ ১৮৩৫ খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে প্রস্তাবিত হয়ে, ১৮৩৬ খ্রীষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে উদ্বোধন হয়। তখন এর সঙ্গে দুটা হাসপাতাল সংযুক্ত ছিল। একটার নাম ‘ওলড ফিভার হসপিটাল’ ও আর একটার নাম ‘নিউ ফিভার হসপিটাল।’ বর্তমান হাসপাতালের (৮৮ নং কলেজ স্ট্রীটে) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১৮৪৮ খ্রীষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে মারকুস অভ ডালহাউসী কর্তৃক। বাড়িটি তৈরী করে বারন্ অ্যাণ্ড কোম্পানি। এর নির্মাণের জন্য ওল্ড অ্যাণ্ড নিউ ফিভার হসপিটালস্- এর সঞ্চিত অর্থ, লটারী কমিটির তহবিলের অবশিষ্টাংশ ও রাজা প্রতাপচন্দ্ৰ সিংহ কর্তৃক ৫০,০০০ টাকা অনুদান ব্যয়িত হয়েছিল। ভূমি দিয়েছিলেন মতিলাল শীল। হাসপাতালটি আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয় ১৮৫২ খ্রীষ্টাব্দের ১ ডিসেম্বর তারিখে। মূল হাসপাতালেই মেয়েদের প্রসব ও চিকিৎসার জন্য একটা স্বতন্ত্র বিভাগ ছিল। পরে হাসপাতালটিতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মেয়েদের প্রসব ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ইডেন হাসপাতাল তৈরী করা হয়। ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দের জুলাই মাসে এর উদ্বোধন হয়। এর সঙ্গে নারদের বসবাসের জন্য দুটি অতিরিক্ত ভবনও তৈরী করা হয়। শ্যামাচরণ লাহার অর্থানুকূল্যে উত্তর-পূর্বদিকে একটি চক্ষু হাসপাতালও নির্মিত হয়। ১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দে মতী এজরার অর্থানুকূল্যে ইহুদীদের চিকিৎসার জন্য মূল হাসপাতালের উত্তরে একটি নূতন বিল্ডিং তৈরী করা হয়। প্রিন্স অভ্ ওয়েলস্ এর নামে আর একটি নূতন ওয়ার্ডও তৈরী করা হয়। আরও পরে রাজা দেবেন্দ্রনাথ মল্লিকের অর্থানুকূল্যে পশ্চিমদিকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভেন্যুর ওপর একটি নূতন ভবন তৈরী করা হয়। বিংশ শতাব্দীর ৩০-এর দশকে স্যার জন অ্যাণ্ডারসন যখন বাঙলার গভর্ণর ছিলেন, তখন বর্তমান ইমারজেনসী ওয়ার্ডটি নির্মিত হয়। সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক ও আই ব্যাঙ্ক ((Eye Bank) মেডিকেল কলেজের মধ্যেই অবস্থিত। 

১৮৬৭ খ্রীষ্টাব্দের জুলাই মাসে ক্যাম্পবেল সাহেব কর্তৃক ক্যাম্পবেল হাসপাতাল স্থাপিত হয়। ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুলের সহিত এই হাসপাতালকে সংযুক্ত করা হয়। প্রখ্যাত চিকিৎসক স্যার নীলরতন সরকার ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুলের ছাত্র ছিলেন। তাঁরই নাম অনুযায়ী ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দের ১ জুলাই তারিখ থেকে এর নামকরণ হয় নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ। এই হাসপাতালের গবেষণাগারে গবেষণা করে ডাক্তার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী কালা জ্বরের ওষুধ ইউরিয়াষ্টিবামাইন আবিষ্কার করেন। 

আগেই বলেছি যে মেয়ো হসপিটালের সাহায্যার্থে ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে টাউন হলে ‘নীলদর্পণ’ নাটকের যে অভিনয় হয়েছিল, তার অভিনেতাদের মধ্যে ছিলেন শ্যামবাজারের ডাক্তার রাধাগোবিন্দ কর। এই রাধাগোবিন্দ কর-ই ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল অভ্ মেডিসিন নামে চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেবার জন্য একটি শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম ১৭ বৎসর স্কুলটি একটি ভাড়াটিয়া বাড়ীতে অবস্থিত ছিল। ১৮৯৫-৯৬ খ্রীষ্টাব্দে ৫ নং বেলগাছিয়া রোডে বর্তমান ভূমিখণ্ড ক্রয় করে ওখানে অ্যালবার্ট ভিকটর হসপিটাল নামে একটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দে ওখানে স্কুলটিকে স্থানান্তরিত করা হয়। শীঘ্রই হাসপাতালটিকে দ্বিতল করা হয় এবং ১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যেই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১০০-তে গিয়ে দাঁড়ায়। ওই বৎসরের এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায় যে ডাঃ আর. জি. কর ওই হাসপাতালের অবৈতনিক সম্পাদক হিসাবে সাধারণের কাছে আবেদন করছেন, ওই হাসপাতলে ১২টি শয্যাবিশিষ্ট সংক্রামক ব্যাধিগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য একটি স্বতন্ত্র ‘ওয়ার্ড’ খোলবার নিমিত্ত সাহায্যের জন্য। ইতিমধ্যে ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দতেই আর. জি. করের স্কুলের সঙ্গে কলেজ অভ্ ফিজিসিয়ানস্ অ্যাণ্ড সারজানস (১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত) সম্মিলিত হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালটির নূতন ভবনের উদ্বোধন করেন তৎকালীন বাঙলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দের ৫ জুলাই তারিখে। তখন এর নামকরণ করা হয় কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ। এই নাম পরিবর্তন করে ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে এর নাম রাখা হয় আর. জি. কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। 

ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল গঠিত হয় ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনষ্টিটিউট কর্তৃক স্বদেশী আন্দোলনের সময়। ডঃ সুন্দরীমোহন দাশ কর্তৃক ইহা প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্যালকাটা মেডিকেল ইনষ্টিটিউট ইহার সহিত সম্মিলিত হয়। হাসপাতালটি ৩২নং গোরাচাঁদ রোডে অবস্থিত। 

এগুলি ছাড়া কলকাতায় আরও হাসপাতাল আছে। যথা ৭৩নং চিত্তরঞ্জন অ্যাভেন্যুতে অবস্থিত ইসলামিয়া হসপিটাল (এদের আর একটা শাখা আছে ৯৪ নং পার্ক স্ট্রীটে), ২৪ সি ও ডিডাক্তার সুরেশ সরকার রোডে অবস্থিত এণ্টালী গভর্নমেন্ট হসপিটাল, ১১ নং লালা লাজপৎ রায় রোডে অবস্থিত শম্ভুনাথ পণ্ডিত হসপিটাল, ৯৯ নং শরৎ বোস রোডে অবস্থিত রামকৃষ্ণ সেবা প্রতিষ্ঠান, ৩৭ নং শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রোডে অবস্থিত চিত্তরঞ্জন সেবাসদন, ৮২নং কাশীপুর রোডে অবস্থিত নর্থ সুবারবান হসপিটাল, ৭/২/ডি ডায়মণ্ড হারবার রোডে অবস্থিত ক্যালকাটা হসপিটাল, টালিগঞ্জে দেশপ্রাণ শাসমল রোডে অবস্থিত মাগনিরাম বাঙ্গুর হসপিটাল, ১২৮ নং রাজা রামমোহন সরণীতে অবস্থিত অগজিলিয়ারী গভর্নমেন্ট হসপিটাল, আলিপুরে ১১ নং জেল রোডে অবস্থিত আলিপুর পুলিশ হসপিটাল, ৩/এ বেলভেডিয়ার রোডে অবস্থিত আলিপুর পুলিশ কেস হসপিটাল, ৫৫ নং কালীকৃষ্ণ ঠাকুর ষ্ট্রীটে অবস্থিত আশারাম ভিয়ানীওয়ালা হসপিটাল, ২৪ নং শুরা থার্ড লেনে অবস্থিত উপেন্দ্রনাথ মুখার্জি মেমোরিয়াল হসপিটাল, ১৪৫/এ শরৎ বসু রোডে অবস্থিত ক্যালকাটা ভলান্টারী হসপিটাল, ২৪ নং গোরাচাঁদ রোডে অবস্থিত চিত্তরঞ্জন হসপিটাল, ১০৫/২, রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রীটে অবস্থিত বালানন্দ ব্রহ্মচারী সেবায়তন, শিয়ালদহ কোর্টের পেছনে বি.আর.সিংহ রেলওয়ে হসপিটাল, মাঝেরহাটে পোর্ট কমিশনারস্ হসপিটাল, ১৫১ নং ডায়মণ্ড হারবার রোডে অবস্থিত বেহালা হসপিটাল, ৩নং ভবানীপুর রোডে অবস্থিত ভলান্টারি জেনারেল হসপিটাল, ১২৮ নং মহাত্মা গান্ধী রোডে অবস্থিত মাড়োয়ারী হিন্দু হসপিটাল, ৩৯২ নং রবীন্দ্র সরণীতে অবস্থিত মারয়ারী রিলিফ সোসাইটি হসপিটাল, ১০৪ নং আশুতোষ মুখার্জি রোডে অবস্থিত রামরিকদাস হরলালকা হসপিটাল, ৩৬ নং গণেশচন্দ্র অ্যাভেনিউতে অবস্থিত রেহমতবাই ভাডনগরওয়ালা হসপিটাল, ১১৮ নং রাজা রামমোহন সরণীতে অবস্থিত বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতী মারয়ারী হসপিটাল ইত্যাদি। ১৪৫ নং মুক্তারাম বাবু স্ট্রীটে অবস্থিত ইউনিভারসিটি কলেজ অভ্ মেডিসিনের সঙ্গে সংযুক্ত একটা হাসপাতাল আছে, নাম গোয়েনকা হাসপাতাল। এখানে স্নাতকোত্তর ছাত্রদের প্রশিক্ষণ (ক্লিনিক্যাল) দেওয়া হয়। 

মেয়েদের চিকিৎসা ও প্রসবের জন্য কলকাতায় কতকগুলি স্বতন্ত্র হাসপাতাল আছে। যথা ১ নং রাজা রামমোহন সরণীতে অবস্থিত ডাফরিন হসপিটাল, ৮৩ নং রবীন্দ্র সরণীতে অবস্থিত লোহিয়া মাতৃ সেবাসদন, মেডিকেল কলেজের অন্তর্ভুক্ত ইডেন হসপিটাল, ৩৭ নং শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে অবস্থিত চিত্তরঞ্জন সেবাসদন, ১৪ নং ব্ৰাইট রোডে অবস্থিত পূর্ব কলিকাতা প্রসূতি সদন, ১৩ নং শরৎ ঘোষ গার্ডেন রোডে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম প্রসূতি আগার, ৫১ নং রবীন্দ্র সরণীতে অবস্থিত মাতৃমঙ্গল প্রতিষ্ঠান, ৮৩ নং রবীন্দ্র সরণীতে অবস্থিত মাতৃ সেবাসদন, ৭/এ মোহন লেনে অবস্থিত রামকৃষ্ণ সারদা মিশন মাতৃভবন, ও ১৩৯ নং রামদুলাল সরকার স্ট্রীটে অবস্থিত হিন্দু শিশু প্রসূতি সেবা ভবন ইত্যাদি। এ ছাড়া আরও প্রসূতি সদন আছে। যথা, ১২ নং প্যারীমোহন রায় রোডে অবস্থিত চেতলা প্রসূতি সদন, ৩৫/১ নং একবালপুর রোডে অবস্থিত খিদিরপুর প্রসূতি সদন, ২৩৭ জে মানিকতলা রোডে অবস্থিত মানিকতলা প্রসূতি সদন, ১২নং নীলমনি স্ট্রীটে বলদেওদাস প্রসূতি সদন, ইত্যাদি। কতকগুলি প্রসূতি সদন ইউনিটও আছে। সেগুলি ৯/এ পিয়ারী রো-তে, ২৬/৯/১ মহাত্মা গান্ধী রোডে, ১৩ নং গিরিশ বোস রোডে (ইন্টালী), ৪৭/১ সি হাজরা রোডে, ৫/ডি কালী টেম্পল রোডে, ১০/২ মাইকেল দত্ত স্ট্রীটে, ৬৭/১ বারাকপুর ট্রাঙ্ক রোডে, ২৪/সি নারিকেলডাঙ্গা মেন রোডে, ১৯/১ উল্টাডাঙ্গা মেন রোডে ও ১৮০ নং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস রোডে অবস্থিত। 

সংক্রামক ব্যাধি (যেমন কলেরা, ডিপথিরিয়া ইত্যাদি) চিকিৎসার জন্য কলকাতায় স্বতন্ত্র হাসপাতাল আছে। নাম ইনফেকশাস ডিজিজেস হসপিটাল। হাসপাতালটি ৫৯ নং বাহির শুঁরা রোডে অবস্থিত। এ জায়গাটা বেলিয়াঘাটায়। 

প্রাচ্যদেশীয় নানারূপ রোগ ও কুষ্ঠ ব্যাধি চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজের পিছনে চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনর ওপর ‘স্কুল অভ্ ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর কারমাইকেল হসপিটাল ফর ট্রপিক্যাল ডিজিজেস আছে। এছাড়া, ১৮ নং গোবরা রোডে কুষ্ঠ চিকিৎসা জন্য অ্যালবার্ট ভিক্টর লেপার হসপিটাল আছে। 

.

যক্ষ্মা চিকিৎসার জন্য আছে যাদবপুরে কুমুদশঙ্কর টিউবারকিউলোসিস হসপিটাল, ১৮০ নং মানিকতলা মেন রোডে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনফারমারী, ৬৯ নং বাহির শূরা রোডে অবস্থিত বেলিয়াঘাটা টি. বি. হলপিটাল, ও ২০ নং এস. কে. দেব স্ট্রীটে (পাতিপুকুরে) অবস্থিত অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ যক্ষ্মা হাসপাতাল। এ ছাড়া আছে ৭৩ নং লেনিন সরণীতে অবস্থিত টিউবারকিউলোসিস রিলিফ এসোসিয়েশন ও ৮৪ নং জে. সি. বোস রোড ও ৩৫/এ বিপ্লবী বারীন বোস রোডে অবস্থিত ক্যালকাটা চেষ্ট হসপিটাল ও ১০৫ নং রাজা দীনেন্দ্র ষ্ট্রীটে কিরণশশী সেবায়তন। ক্যানসার চিকিৎসার জন্য আছে ৩৭ নং শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে অবস্থিত চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হসপিটাল ও ১৪৫/এ শরৎ বসু রোডে বেঙ্গল ক্যানসার ইনষ্টিটিউট ও হসপিটাল। 

চক্ষু চিকিৎসার জন্য আছে ২৯৫/১ আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোডে ডাঃ এন. এন. চ্যাটার্জি হসপিটাল। দাঁতের জন্য আছে ১১৪ নং আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস রোডে ডাঃ আর- আমেদ ডেণ্টাল হসপিটাল ও ২৪১ বি. বি. গাঙ্গুলী ষ্ট্রীটে সিটি ডেন্টাল কলেজ হসপিটাল। মানসিক ব্যাধির জন্য আছে ১১৫ নং গিরীন্দ্র শেখর বসু রোডে লুম্বিনী পার্ক মেণ্টাল হসপিটাল, ৩১এ, আলিপুর রোডে মেন্টাল হসপিটাল, ১৩৩ নং বিবেকানন্দ রোডে মেন্টাল হসপিটাল, ৮ নং গোবরা রোডে মেন্টাল হসপিটাল, ৫২/১এ, শম্ভুনাথ পণ্ডিত ষ্ট্রীটে বাঙ্গুর ইনষ্টিটিউট অভ্ নিউরোলজি ও দমদম দত্তনগরে বঙ্গীয় উন্মাদ আশ্ৰম। 

শিশুদের চিকিৎসার জন্য আছে ১১১ নং নারিকেলডাঙ্গা মেন রোডে বি. সি. রায় মেমোরিয়াল হাউস ফর চিলড্রেন, ৩৮ নং বদন রায় লেনে বি.সি.রায় পোলিও ক্লিনিক, ৩৫ নং দিলখুসা ষ্ট্রীটে ইনষ্টিটউট অভ্ চাইল্ড হেলথ ও ১নং নরেশ মিত্র সরণীতে চিত্তরঞ্জন শিশুসদন। 

পশু চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আছে ৩৭নং বেলগাছিয়া রোডে বেঙ্গল ভেটেরিনারি কলেজ অ্যাণ্ড হসপিটাল, ৮নং অভয় বিদ্যালঙ্কার রোডে ষ্টেট ভেটেরিনারী হসপিটাল, ১৪৪ নং ঝাউতলা রোডে পার্ক ভেটেরিনারী হসপিটাল, ১৯ নং ব্রড স্ট্রীটে গভর্নমেন্ট ভেটেরিনারী হসপিটাল ও ২৭৬ নং বি. বি. গাঙ্গুলী, ষ্ট্রীটে C.S.P.C.A. হসপিটাল। 

কলকাতায় কয়েকটি হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল আছে যথা ২৩৫ নং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে ক্যালকাটা হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হসপিটাল, ৬৫ নং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে ডানহাম হোমিও কলেজ ও হসপিটাল, ১৪/১ নং নারিকেলডাঙ্গা মেন রোডে প্রতাপচন্দ্র হোমিও হসপিটাল, ১৯নং বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রীটে বেঙ্গল অ্যালেন হোমিও মেডিকেল কলেজ হসপিটাল। প্রথম দুটি হাসপাতাল পশ্চিমবঙ্গ সরকার অধিগ্রহণ করবার সিন্ধান্ত নিয়েছেন। 

আয়ুর্বেদ হাসপাতালের মধ্যে আছে ১৭০ নং রাজা দীনেন্দ্র ষ্ট্রীটে অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ বিদ্যালয় ও হাসপাতাল, পাতিপুকুরে অষ্টাঙ্গ যক্ষ্মা হাসপাতাল (আগে দেখুন), ৯৩ নং অরবিন্দ সরণীতে বিশ্বনাথ আয়ুর্বেদ কলেজ ও হাসপাতাল, ২৯৪/৩/১ নং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে বৈদ্যশাস্ত্রপীঠ হাসপাতাল। কলকাতায় কলকাতা করপোরেশনের অনেকগুলি দাতব্য চিকিৎসালয় আছে। এ ছাড়া, ছয়টি প্রসূতি আগার (আমার ‘কলকাতা’ বই দেখুন) আছে। 

সাম্প্রতিককালে কলকাতায় অনেকগুলি ভাল নার্সিংহোম গড়ে উঠেছে। যাদের পয়সা আছে, তারা এ সব নার্সিংহোমে সুচিকিৎসা ও সেবাশুশ্রূষা পেতে পারেন। কতকগুলি নার্সিংহোমের নাম এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে—উডল্যাণ্ড, অকল্যাণ্ড, পার্ক, বেলেভু, হ্যারিংটন, সেন্ট মেরীজ, অ্যাভেন্যু, প্রিনসেপ, ক্যাপিটল, পপুলার, নিউল্যাণ্ড, হারমনি (মানসিক চিকিৎসার জন্য,), নর্থল্যাণ্ড সেবায়ন, বেঙ্গল, ক্যালকাটা মেটারনিটি, নর্থ ক্যালকাটা নার্সিংহোম, কাশীপুর নার্সিংহোম ইত্যাদি। 

মাত্র চার-পাঁচ বৎসর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও ইদানিংকালে একটা হাসপাতাল বেশ সুনাম অর্জন করে প্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু সম্প্রতি শ্রমিক বিরোধে এটা বিপর্যস্ত। এ হাসপাতালটা হচ্ছে ২/সি ক্যামাক স্ট্রীটে অবস্থিত অ্যাসেমব্লিজ অভ্ গড় হসপিটাল। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *