৬. ঘুরতে শুরু করল পাশা
ঘুরতে শুরু করল পাশা। কিন্তু দেরি করে ফেলেছে। পিছন থেকে দু’তিন জন ভারী শরীরের লোক ওর গায়ের ওপর এসে পড়ল। ধাক্কা দিয়ে ফেলল পাকা রাস্তায়।
পড়ে যাওয়ার ধকল কাটানোর আগেই কাঁধে ও পিঠে বেশ কিছু ঘুসি খেল পাশা। একজন লোক ওকে ঘুরিয়ে চিত করল। প্রচণ্ড এক ঘুসি মারল চোয়ালে।
পাল্টা আঘাত হানল পাশা। লোকটা আবার ঘুসি তুলতেই এক পায়ের গোড়ালি দিয়ে ওর তলপেটে লাথি মারল। অন্য পা দিয়ে লাথি মারল আরেকজনকে। তৃতীয় আরেকজন পকেট থেকে একটা ব্ল্যাকজ্যাক বের করে বাড়ি মারার জন্য উঁচু করল। মুহূর্তে গড়িয়ে একপাশে সরে গেল পাশা, কানের পাশ দিয়ে চলে গেল ব্ল্যাকজ্যাকটা। পরক্ষণে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল ও। জঙ্ঘায় লাথি খেয়ে সামনে ঝুঁকে পড়ল লোকটা, ওর চোয়াল পাশার নাগালে চলে এল, থুতনির নিচে প্রচণ্ড ঘুসি খেয়ে ঝাঁকি দিয়ে আবার পিছনে সরে গেল মাথাটা।
কয়েক সেকেণ্ডের জন্য মুক্ত হলো পাশা। চোখের কোণ দিয়ে দেখল আরও দুজনের সঙ্গে লড়াই করছে পিরানো। রুক্ষ চেহারার লোকগুলোর সবার পরনেই নাবিকের পোশাক। পিরানোকে সাহায্য করতে যাবার আগেই আবার পাশাকে ঘিরে ফেলল বাকি তিনজন। কঠিন হয়ে গেছে চেহারা। নীরবে ছড়িয়ে পড়ে সাবধানে এগোচ্ছে। ব্ল্যাকজ্যাকওয়ালা লোকটা উঁচু করে ধরেছে মারাত্মক অস্ত্রটা।
গলির মুখে আরও একজনকে ঢুকতে দেখা গেল এ সময়। ক্যাপ্টেন ফার্নান্দো। মুখে বিকৃত হাসি। দুই হাত পকেটে। নিজের লোকদের উদ্দেশ্যে ধমকে উঠল, ‘কী, কাজ সারতে পুরো রাত কাবার করবে নাকি!’
পিস্তল বের করল না পাশা। লোকগুলো ওকে খুন করতে আসেনি, শুধু কাবু করতে চায়। খুন করতে চাইলে পিস্তল কিংবা ছুরি বের করত। পিরানোকে পিটিয়ে আধমরা করে একটা শিক্ষা দিতে চায় ফার্নান্দো। পাশা যেহেতু পিরানোর সঙ্গে রয়েছে, তাই ওকেও পেটাচ্ছে।
সমানে হাত-পা ব্যবহার করছে পিরানো। পাশাকে আক্রমণ করেছে যে তিনজন, পরস্পরের দিকে তাকাল একবার ওরা, তারপর আবার হামলা চালাল। একজন ওকে ঘুসি মারল। সেটা ঠেকিয়ে পাল্টা ঘুসি মারল পাশা। ওর চাঁদি লক্ষ্য করে শিস কেটে ছুটে আসছে ব্ল্যাকজ্যাকটা। হাত তুলে বাহু উঁচু করে ওটা ঠেকাল পাশা। প্রচণ্ড এক ঘুসি মারল লোকটার কানে। চিৎকার দিয়ে পিছিয়ে গেল লোকটা।
তৃতীয় লোকটা দুজনের মধ্যে চালাক। পাশার নজর সামনের দুজনের ওপর থাকতে থাকতে পিছনে চলে এল ও। পিছন থেকে গলা পেঁচিয়ে ধরে এত জোরে হ্যাচকা টান মারল, পাশার মনে হলো ওর ঘাড় ভেঙে যাচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে গেল। শ্বাস নিতে। পারছে না।
‘এবার কোথায় যাবে, দোস্ত!’ কানের কাছে হাসি হাসি কণ্ঠে বলল লোকটা। কিন্তু পাশাকে চেনে না ও। জুডোর সাধারণ এক প্যাঁচেই সামনে চলে এল পিছনের লোক, পরক্ষণে উড়ে গিয়ে পড়ল রাস্তায়।
সামলে নিয়েছে ব্ল্যাকজ্যাকওয়ালা লোকটা। হাতের অস্ত্র তুলে এগোল। আবার বাড়ি মারল পাশার মাথা সই করে। পাশে সরে গেল পাশা। লোকটার কব্জি চেপে ধরে জুডোর প্যাচ কষল। ডিগবাজি খেয়ে গিয়ে দেয়ালে বাড়ি খেল লোকটা। প্রায় জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে গেল রাস্তায়।
এরপর সাবধান হয়ে গেল বাকি দুজন। পাশাকে সহজ টার্গেট ভাবল না আর। ওর ক্ষমতা জানা হয়ে গেছে ওদের। দ্বিতীয়বার আর ওর ঘুসির স্বাদ গ্রহণের ইচ্ছে নেই। দেয়ালের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়াল পাশা। বাধা দিতে প্রস্তুত। ঠিক এ সময় খসখসে কণ্ঠের আদেশ শুনে স্থির হয়ে গেল।
‘অনেক হয়েছে, ফেড, ফার্নান্দোও পাশাকে ফেডারেল গভর্নমেন্টের লোক ভেবেছে। এবার থামো, যদি তোমার সঙ্গীকে ওর স্রষ্টার কাছে পাঠাতে না চাও।’
গলির মুখ থেকে সরে এসেছে ফার্নান্দো। এক হাঁটু চেপে রেখেছে রাস্তায় চিত হয়ে পড়া পিরানোর বুকে। দুদিক থেকে দুহাত ধরে রেখেছে গ্রিফিথের দুজন নাবিক। একটা ছোরার মাথা পিরানোর গলায় ধরে রেখেছে ফার্নান্দো। চামড়া কেটে রক্ত বেরোচ্ছে। নড়ছে না পিরানো। বেঁহুশ হয়ে গেছে বোধহয়।
দুই হাত উঁচু করল পাশা। পিস্তলটা বের করার কথা ভাবছে। কিন্তু এখন আর সুযোগ নেই। ছোরাটা যেভাবে ধরেছে ফার্নান্দো, পাশা পিস্তল বের করার আগেই পিরানোর গলার শিরা কেটে দেবে। একজন নিরপরাধ মানুষের খুনের দায় নিতে রাজি নয় পাশা।
‘বুদ্ধিমান লোক তুমি,’ ক্যাপ্টেন বলল। পাশার কাছে দাঁড়ানো দুজন লোকের দিকে তাকিয়ে ইশারা করল। একটা ছুরির মাথা ঠেসে ধরা হলো পাশার পাঁজরে। ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে রইল পাশা। ওর দেহতল্লাশী করে বেরেটা আর এক গোড়ালির ওপরে বাঁধা থ্রোইং নাইফটা বের করে নেয়া হলো। তারপর ওর পিস্তল তাক করেই ওকে কথা শুনতে বাধ্য করা হলো।
ব্ল্যাকজ্যাকওয়ালার গোঙানি শোনা গেল। ওকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করতে এগোল ওর একজন সঙ্গী। পিরানোর হাত ধরে রেখেছিল যারা, তারাও উঠে পিছিয়ে গেল।
তবে, ফার্নান্দো উঠল না। ঠাস করে চড় মারল পিরানোর এক গালে। ‘এই, চোখ মেলো, তাকাও এদিকে! দেখো, তোমাকে কী করি!’
‘না!’ চেঁচিয়ে উঠে লাফ দিতে গেল পাশা।
নড়ে উঠল পিস্তলটা। নলের মুখ ওর দুই চোখের মাঝখানে স্থির হলো। থেমে গেল পাশা।
‘এসব থেকে সরে থাকো, ফেড,’ ভোতাস্বরে বলল ফার্নান্দো। ‘এটা আমাদের দুই দোস্তের ব্যাপার। এর মাঝে আর তুমি ঢুকো না। আবার পিরানোর গালে চড় মারল ও।
কয়েকবার চোখ মিটমিট করে পাতা মেলল পিরানো। কী ঘটছে, বুঝতে পেরে হিসিয়ে উঠল, ‘সরো আমার ওপর থেকে, শয়তান কোথাকার! তোমার মত শুয়োরের ছোঁয়া গায়ে লাগাতেও ঘেন্না করে!’
বদলে গেল ফার্নান্দোর চেহারা। ভয়ঙ্কর এক শয়তানে রূপ নিল যেন। ‘আবর্জনা ছুঁয়ে হাত ময়লা করার কোন ইচ্ছে আমারও নেই!’
‘তোমার মত কাপুরুষের সঙ্গে কথা কী! যে নিজে মুখোমুখি না হয়ে মানুষের ওপর তার কুত্তা লেলিয়ে দেয়!’ গলায় চেপে থাকা ছোরার নিচ থেকে গলা সরানোর চেষ্টা করল পিরানো। না পেরে থুতু দিল ফার্নান্দোর মুখে। ‘নাও! এতে তোমার ময়লা সামান্য সাফ হলেও হতে পারে!’
‘চিরকালই তুমি বোকা থেকে গেলে, পিরানো,’ বলেই ছুরি দিয়ে ওর গলায় পোঁচ মারল ফার্নান্দো।
কয়েকবার ঝাঁকি দিয়ে স্থির হয়ে গেল পিরানোর দেহ। ছোরার রক্ত ওরই কাপড়ে মুছে নিয়ে পকেটে ঢোকালো ফার্নান্দো। পাশার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার কথা না শুনলে তোমারও এই অবস্থাই করা হবে। এখন জাহাজে চলো।’
ইশারা করল ফার্নান্দো। চারপাশ থেকে পাশাকে ঘিরে ফেলল নাবিকেরা। পিস্তলের নলের মুখ ওর মেরুদণ্ডে ঠেসে ধরা হলো। যে লোকটা ওর পিঠে পিস্তল ধরেছে সে ওর গলা পেঁচিয়ে ধরল। পাশা কী রকম বিপজ্জনক, বুঝে গেছে ওরা। তাই কোনরকম ঝুঁকি নিল না। কয়েকটা ছুরি বিভিন্ন দিক থেকে ওর গায়ে চেপে ধরা হলো।
গলি থেকে বেরিয়ে এল ওরা। আগে আগে চলেছে ফার্নান্দো। গলি থেকে মূল রাস্তায় বেরিয়ে পাশার গা ঘেঁষে এল নাবিকেরা। উঁচু স্বরে গান গাইতে গাইতে জড়াজড়ি করে চলল। লোকে ভাববে, মাতাল হয়ে জাহাজে ফিরে যাচ্ছে নাবিকের দল। চালাকিটা কাজে লাগল। গ্রিফিথে যাওয়ার পথে দ্বিতীয়বার কেউ ওদের দিকে নজর দিল না। পানির কিনারে জাহাজের কাছাকাছি এসে একজন দাড়িওয়ালা লোক ফার্নান্দোর পথ আগলে দাঁড়াল। গল গল করে পাইপের ধোঁয়া ছেড়ে জানতে চাইল, মালবাহী এই জাহাজটা কখন ছাড়বে, আর কখন পৌঁছবে দক্ষিণ আমেরিকায়। জবাব দেয়ার সময় সামান্যতম গলা কাঁপল না ফার্নান্দোর। লোকটা কি বরফের টুকরো নাকি-অবাক হয়ে ভাবল পাশা-এত শীতল থাকে কী করে! গ্যাংওয়ে দিয়ে ঠেলে পাশাকে ফোরডেকে নিয়ে আসা হলো। ও বুঝতে পারল, জাহাজের সব নাবিক না হলেও অনেকেই মাদচক্র দলের লোক। ডেকের নিচে এনে, সরু একটা কম্প্যানিয়নওয়ে দিয়ে ওকে ছোট একটা ঘরের সামনে আনা হলো। কালো চামড়ার একজন নাবিক ওকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে দড়াম করে দরজা লাগাল। বাইরে থেকে তালায় চাবি লাগানোর শব্দ কানে এল পাশার।
নাবিকরা চলে যেতেই এক মুহূর্ত দেরি না করে এই বন্দিশালা থেকে বেরোনোর পথ খুঁজতে শুরু করল ও। কিন্তু কোন উপায়ই দেখল না। বাল্কহেড তৈরি হয়েছে নিরেট ধাতব চাদর দিয়ে-সাধারণত যা করা হয়। বাজুকা ছাড়া অন্য কোন কিছু দিয়ে ওটাতে চিড় ধরানোও কঠিন। তালা দেয়া দরজাটা আর ছোট একটা পোর্টহোল বাদে আর কোন ধরনের ফোকর নেই।
ঘরে আসবাব বলতে একটা বিছানা, একটা টেবিল আর একটা চেয়ার। বিছানার কিনারে বসে পুরো পরিস্থিতিটা খতিয়ে দেখল পাশা। বন্দরের মাটিতে ওকে খুন করেনি ফার্নান্দো, কিন্তু খোলা সাগরে নিয়ে গিয়ে যে করবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তার আগেই মুক্তির উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
এক ঘণ্টা পেরোল। মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে বিছানায় চিত হয়ে আছে পাশা। আর দু’ঘণ্টার মধ্যেই হান্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা ওর। পাশার তরফ থেকে কোন সাড়া না পেলে সন্দিহান হয়ে উঠবে ও, তখন হয়তো উদ্ধারকারী দল পাঠাবে। কিন্তু পাশার দুর্ভাগ্য, ও কোথায় গেছে, কিছুই বুঝতে পারবে না। ওরা, কারণ কোন সূত্র রেখে আসেনি ও। অনন্তকাল খুঁজেও কোনই হদিস করতে পারবে না ওরা।
আবার তালায় চাবি ঢোকানোর শব্দ হলো। জোরে ঠেলা লেগে ভিতরের দিকে সরে এল দরজার পাল্লা, দড়াম করে বাড়ি খেল পাশের দেয়ালে। ফার্নান্দো ঢুকল ঘরে। সঙ্গে দুজন পিস্তলধারী বডিগার্ড, পাশার বেরেটাটা একজনের হাতে।
চেয়ারের পায়ায় জুতার ডগা বাঁধিয়ে কাছে টেনে নিল ক্যাপ্টেন। বসতে বসতে বলল, ‘তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে আমার।’
‘বলো।’ স্বর নরম করল না পাশা, যতই আন্তরিক ভঙ্গিতে কথা বলুক না কেন ফার্নান্দো ও জানে, সব ভণ্ডামি। আগে হোক পরে হোক, ফার্নান্দো ওকে খুন করবে।
‘তোমাকে ফেড বলে ডাকলে কেমন হয়?’ হাসল ফার্নান্দো। দুই হাত হাঁটুতে রাখা। ‘আমার হাতে সময় বেশি নেই। জাহাজ ছাড়ার পর অবশ্য কথা বলার প্রচুর সময় পাব। আর তখন তুমি তোমার সব কথা বলবে আমাকে, ইচ্ছেয় হোক, অনিচ্ছেয় হোক।’
‘অত শিওর হয়ো না,’ পাশা বলল।
না শোনার ভান করল ফার্নান্দো। ‘এখন বলো, কোন এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত তুমি? আমাদের কথা জানল কী করে ওরা? কতখানি জেনেছে?’
পিরানোর কথায় যতখানি আন্দাজ করেছে, তার ওপর ভিত্তি করে ধোঁকা দেবার চেষ্টা করল পাশা, ‘সব জানি। গ্রিফিথের নতুন মালিক কে, পুরো একটা মাস জাহাজটা কোথায় গায়েব হয়ে ছিল, আর্জেন্টিনা থেকে এসেছিল যে লোকটা, তার কথা, সব জানি।’
দম বন্ধ করে ফেলল এক পিস্তলধারী।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত একেবারে চুপ করে রইল ক্যাপ্টেন, মুখের একটা পেশিও নড়াল না। ওর ধোঁকাবাজিটা বোধহয় বিফলে গেল, ভাবতে আরম্ভ করল পাশা। হঠাৎ কথা বলে উঠল ফার্নান্দো, ওর কণ্ঠে সামান্য উত্তেজনার আভাস, ‘তাই। তাহলে তো আমি যা অনুমান করেছি, তারচেয়ে বেশি জানো তুমি। ফেলিডাই শুনলে ভীষণ রাগ করবে। ল্যানোসার খুন আর অন্যান্য যে সব তথ্যর কথা বলছ, নিশ্চয় কোনও ইনফর্মারের কাছে শুনেছ। ওকেও ছাড়বে না ফেলিডাই।’
ফেলিডাই। নিশ্চয় এই মাদকচক্রের রিং লিডারের ছদ্মনাম, কিংবা ডাক নাম। এক ধোঁকাতেই এত তথ্য পেয়ে যাবে কল্পনাই করেনি পাশা। মালবাহী জাহাজটা মাসখানেক গায়েব থাকার কারণ নিশ্চয় কোনও গোপন ডকে তোলা হয়েছিল ওটাকে, ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য। আর ওই আর্জেন্টিনীয় যুবক ল্যানোসা দুর্ঘটনায় মারা যায়নি, ওকে খুন করা হয়েছে। সাবধানে কথা বলতে হবে এখন। মুখ ফসকে বেফাঁস কিছু বলে বসলে সব ভেস্তে যাবে। বলল, ‘ওই খুনের তদন্ত করতে করতেই তোমাদের কাছে পৌঁছে গেছি আমরা।’
‘তাই?’ জোরে নিঃশ্বাস ফেলল ফার্নান্দো। ‘আমি ভেবেছিলাম ওর কব্জির সামান্য দাগগুলো কারও চোখে পড়বে না। ওকে মাস্তুলে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়ার আগে তোয়ালে ছিড়ে ফালি করে ওর কব্জি বেঁধেছিলাম।’ কঠিন হয়ে গেছে ক্যাপ্টেনের মুখ। ‘গাধা কোথাকার! আমাকে বলা হয়েছিল ওকে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু আমাদের সম্পর্কে সব জানার সঙ্গে সঙ্গে পরের বন্দরে নেমে পুলিশকে জানানোর বোকামিটা করে বসল।’
পাশা বুঝল, বেশির ভাগ নয়, এই জাহাজের সব নাবিকই মাকদচক্রের সঙ্গে জড়িত। তারমানে মুক্তি পেতে চাইলে বিশবাইশজন মানুষের মুখোমুখি হয়ে ওদের পরাস্ত করতে হবে ওকে, যাদের কাউকেই নিরীহ ভেবে অবহেলা করা চলে না। এভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
‘তবে তোমার ব্যাপারে এই বোকামিটা করব না আমরা। সাবমেরিনটাকে তুলে নেয়ার পর তোমাকে কয়লার বস্তার সঙ্গে বেঁধে পানিতে ফেলে দে হাঙরে খেয়ে ফেলবে। কিছুদিন অন্তত ফেডারেলদের উৎপাত থেকে রেহাই পাব।’
‘কিন্তু আমাকে মেরে তোমাদের সমস্যার সমাধান হবে না,’ পাশা বলল। ‘খুব শীঘ্রি ফেলিডাইকে ধরে জেলে পোরা হবে।’
ঠোঁট কোঁচকাল ফার্নান্দো। ‘আমার তা মনে হয় না। সাব-পেনের খোঁজ যদি পেয়েও যায় তোমাদের সরকার, ফেলিডাইকে জেলে ঢোকানো এত সহজ হবে না। জায়গাটা একটা দুর্গ। আর আমেরিকান মিলিটারীকে কোনমতেই নিজের দেশে ঢুকতে দেবে কলাম্বিয়ান সরকার।’
তথ্যের পর তথ্য, মনে মনে চমৎকৃত হচ্ছে পাশা। এখন সমস্যাটা হলো, এগুলো হান্টারের কাছে পাচার করা নিয়ে। কীভাবে করা যায়? ফার্নান্দোর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ও নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। জানো তো, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।’
উঠে দাঁড়াল ফার্নান্দো। কুঁচকে গেছে ভুরু। ‘তুমি আমাকে ভাবনায় ফেলে দিলে, ফেড, স্বীকার করতে লজ্জা নেই। আবার কথা বলব আমরা। ততক্ষণ কোন ধরনের বোকামির চেষ্টা কোরো না। তোমার নিজের ভালর জন্যই বলছি।’
আবার দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল পাল্লাটা। একা রেখে যাওয়া হলো পাশাকে। গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত। ধীরে ধীরে মাদক চোরাচালান চক্রের পুরো ব্যবস্থাটা পরিষ্কার হয়ে আসছে ওর কাছে।
বিড়াল পরিবারের প্রাণীকে ফেলিডাই বলে। রিং লিডারের ছদ্মনাম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আসল নাম প্রচার করে বেড়াবে না। সে যে-ই হোক, সারা দুনিয়াটাকে মাদক দিয়ে সয়লাব করে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে।
নিজের সংগ্রহে অন্তত দুটো মিনি-সাবমেরিন যে রয়েছে ওর, ইতিমধ্যেই এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। আকারের কথা যা শোনা গেছে, তাতে অনুমান করা যায়, প্রতিটিতে কম করে হলেও দুই টন কোকেইন বহন করতে পারে।
প্রতি তিরিশ দিনে আমেরিকায় দু’বার যাতায়াত করে গ্রিফিথ। একেকবারে একেকটা সাবমেরিন থেকে দুই টন করে কোকেইন নিলে মাসে হয় চার টন, আর দুটো থেকে ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে রেখে আসে কম করে আট টন পাউডার; নিয়মিত মাদকের সরবরাহ পেতে থাকে ওখানকার মাদকসেবীরা। ভয়াবহ ব্যাপার।
এখনই ফেলিডাইকে ঠেকাতে না পারলে আরও মারাত্মক হয়ে উঠবে পরিস্থিতি। সাব-পেন। পাশার মনে হচ্ছে, শুধু দুটো নয়, আরও মিনি-সাবমেরিনকে মাদক পাচারে লাগানো হতে পারে, যদি ইতিমধ্যেই লাগিয়ে ফেলা না হয়ে থাকে। মিনি-সাব বাহিনী!
সমস্ত সাবমেরিনগুলোকে ওরা কাজে লাগাতে পারলে কোকেন বন্যা ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। দুনিয়ার সব দেশের সরকারই অসহায় হয়ে যাবে। বাংলাদেশের অবস্থাও ভাল কিছু হবে না। কারণ এখানেও নেশায় আসক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়বে, রেহাই পাবে না কিশোর ছেলেমেয়েরাও, বিশেষ করে ছেলেরা।
মনে মনে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ফেলল ও, ফেলিডাইকে ঠেকাবেই। জাহাজ থেকে নেমে যেতে হবে ওকে, যে কোনভাবেই হোক, তারপর হান্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব কথা জানাবে ওকে।
নতুন কোন ঘটনা ছড়ই পার হলো রাতটা। আর কেউ দেখা করতে এল না পাশার সঙ্গে। সূর্য ওঠার সামান্য পরে সাদা অ্যাপ্রন পরা একটা লোক ট্রে-তে করে খাবার নিয়ে এল। পিস্তলধারী দুজন বডিগার্ড এল ওর সঙ্গে, যাতে পাশা পালানোর চেষ্টা না করতে পারে। টেবিলে খাবার রাখল অ্যাপ্রন পরা লোকটা।
না খেয়ে থাকার কোন মানে হয় না। বরং পালাতে চাইলে শক্তি বজায় রাখা দরকার। নির্দ্বিধায় খেতে শুরু করল পাশা।
খাওয়া শেষ হলে ট্রে নিয়ে চলে গেল লোকগুলো। একটু পরেই দরজাটা খুলে গেল আবার। ঘরে ঢুকল ফার্নান্দো। এবার বাইরে দাঁড়িয়ে রইল অস্ত্রধারী বডিগার্ড দুজন।
‘গুড মর্নিং, ফেড,’ হাসি হাসি কণ্ঠে বলল ক্যাপ্টেন। ‘আশা করি খাবার ভাল লেগেছে।’
‘মৃত্যুদণ্ড দেয়া মানুষকে শেষ আনন্দ দিলে নাকি?’ পাশা প্রশ্ন করল।
‘নাহ্, এতটা বর্বর নই আমরা। তোমাকে সাগরে ডোবাতে আরও চার-পাঁচ দিন বাকি আছে। অকারণে এ কটা দিন তোমাকে না খাইয়ে রাখার কোন যুক্তি নেই।’
এটাই কি আসল কারণ? পাশা ভাবছে। নাকি খাবার খাইয়ে খাইয়ে অভ্যাস করে ওকে অসতর্ক করে তুলছে, যাতে সময়মত ঘুমের বড়ি কিংবা দেহ অবসকারী কোনও ওষুধ মিশিয়ে দিলেও সন্দেহ না করে খেয়ে ফেলে ও? পানিতে মিশিয়ে দিতে পারে। পানি না খেয়ে পারবে না। তৃষ্ণা মেটানোর জন্য খেতেই হবে। তবে পানিতে গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। তাই কফিতে মেশানোর কথাই ভাববে প্রথমে ওরা। কফির তেতো স্বাদ ওষুধের স্বাদকে সহজেই ঢেকে দেবে।
‘বিশ মিনিটের মধ্যেই রওনা হব আমরা,’ ফার্নান্দো বলল।
এমনিতে লোকটার সঙ্গে কথা বলারই রুচি নেই পাশার। কিন্তু বললে হয়তো কাজ হবে। ফার্নান্দো যদি ভাবে, পাশা একেবারে পোষা বিড়াল ছানা হয়ে গেছে, কথা বলে ওকে নরম করে এখান থেকে বেরোতে চায়, লোকটাকে অসতর্ক অবস্থায় পাওয়ার সম্ভাবনা আছে পাশার। ‘আশা করি ভুলটা বুঝতে পেরেছ, তাই না? অহেতুক ঝামেলা না করে পুলিশে ধরার আগেই নিজেকে ওদের হাতে তুলে দিতে চাও।’ হাসল ফার্নান্দো। ‘তুমি আমাকে অবাক করছ, ফেড। জেরা করে তোমার মুখ থেকে কথা আদায়ের সময়ও এমন রসিকতার মেজাজে থাকতে পারবে কি না, ভাবছি।’ যাওয়ার জন্য ঘুরল ও।
‘শোনো, ইচ্ছে করলে সরকারের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসতে পারো,’ পাশা বলল।
থেমে গেল ফার্নান্দো। একবার দরজার দিকে তাকিয়ে কণ্ঠস্বর নামিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী ধরনের সমঝোতা?’
শ্রাগ করল পাশা। ‘সেটা তো আমি বলতে পারব না। তবে ফেলিডাইয়ের বিরুদ্ধে যদি কথা বলো, কর্তৃপক্ষ হয়তো তোমার শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে দিতে পারে; হয়তো মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করে সাধারণ জেল দিতে পারে।’
‘ফেলিড়াইয়ের সঙ্গে বেইমানি?’ মাথা নাড়ল ফার্নান্দো। ‘নো, থ্যাংকস, ফেড, এত তাড়াতাড়ি মরার কোনও ইচ্ছেই আমার নেই।’
দড়াম করে লেগে গেল পাল্লাটা। কান পেতে রয়েছে পাশা। ওপরের ডেকে নাবিকদের নড়াচড়া আর ব্যস্ততা বোঝা যাচ্ছে শব্দ শুনেই। জাহাজ ছাড়তে তৈরি ওরা। কর্কশ কণ্ঠে হুকুম শোনা গেল। নোঙর তোলার সময় শিকলের ঝনঝনাৎ শব্দ। কিছুটা সময় ওর কথা নিশ্চয় একেবারেই ভুলে গেছে স্মাগলাররা, পাশা ভাবল। মেঝেতে চিত হয়ে শুয়ে বিছানার নিচটা পরীক্ষা করল ও। রাতে যতবারই পাশ ফিরতে গেছে, ক্যাঁচকোচ আওয়াজ করেছে বিছানা। গদির নিচে বক্স স্প্রিং লাগানো রয়েছে, আগেই সন্দেহ করেছিল।
ওকে একেবারে বাড়ির আরাম দেয়ার ব্যবস্থা করেছে ওরা, অবাক হয়ে ভাবতে ভাবতে একটা স্প্রিঙের কয়েলের ভিতর আঙুল ঢুকিয়ে দিল ও। মোটা, শক্ত স্প্রিং, আঙুল দিয়ে বাঁকানো অসম্ভব। মোড়ামুড়ি করে দেহটাকে বিছানার আরেকটু নিচে নিয়ে এল ও। বক্স স্প্রিঙের ধারগুলোয় আঙুল চালিয়ে ভালমত দেখল। ঠিক মাঝখানে যেখানে চাপ সবচেয়ে বেশি পড়ে সেখানে দুই টুকরো হয়ে গেছে একটা স্প্রিং। প্রচুর কসরত আর টানাহেঁচড়া করে ওটাকে ভেঙে খুলে নিয়ে এল। তারপর সোজা করায় মনোেযাগ দিল।
ইস্পাতের শক্ত স্প্রিঙের কয়েল খুলে সোজা করা খুবই কষ্টকর কঠিন কাজ। প্রচুর সময় দরকার। সময়ের অভাব নেই আমার, নিজেকে বোঝাল ও। কাজ করে গেল। যখনই কাছাকাছি পায়ের শব্দ শোনে, থেমে যায়।
সেদিন দুপুরের কিংবা সন্ধ্যার খাবার নিয়ে এল না কেউ। পরদিন সকালে নাস্তা দিয়ে গেল সেই একই বাবুর্চি। বিকেলের দিকে এল ফার্নান্দো। ততক্ষণে কয়েলটা সোজা করে ফেলেছে পাশা। দুই ফুট লম্বা একটা তার লুকানো আছে এখন ওর গদির নিচে।
চিন্তিত দেখাচ্ছে ক্যাপ্টেনকে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পাশার দিকে তাকিয়ে থেকে চেয়ারে বসল। ‘আমি ভেবেছিলাম, তুমি মিথ্যে বলছ।’
‘কোন ব্যাপারে?’ পাশার প্রশ্ন।
‘সব ব্যাপারেই। আমাদের নেটওঅর্কের সঙ্গে ল্যানোসার মৃত্যুটাকে কোনভাবেই যুক্ত করতে পারার কথা নয় সরকারি কর্তৃপক্ষের। বড় জোর, সাধারণ একটা হত্যাকাণ্ড হিসেবে ধরে নিতে পারে। তার বেশি না।’
চুপ করে রইল পাশা। লোকটা আর কী বলে, শোনার অপেক্ষা করছে।
‘কিন্তু এখন আমি আর ততটা শিওর নই,’ ফার্নান্দো বলল। ‘আমি জেনেছি, আমাদের একজন স্থানীয় অপারেটরকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে…’
দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে বলে উঠল পাশা, ‘কী-ওয়েস্টে।’
রীতিমত চমকে গেল ফার্নান্দো। ‘তুমি জানো? তারমানে যতটা ভেবেছি, অবস্থা তারচেয়েও খারাপ।’
‘সমঝোতায় আসার সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি।’ পাশা বলল। যদিও লোকটা ওর প্রস্তাব মেনে নেবে, আশা করছে না। তবে ওকে কিছু করার আগে দ্বিতীয়বার ভাববে এখন লোকটা। যত দেরি করবে, যত সময় নেবে ও, পাশার জন্য ততই ভাল।
উঠে দাঁড়িয়ে দরজার সামনে পায়চারি শুরু করল ক্যাপ্টেন। দুই হাত পিছনে, ‘শেষ পর্যন্ত হয়তে,’ পাশাকে নয়, নিজেকেই বোঝাচ্ছে ও, ‘নিজেকে আর আমার অধীনে যারা কাজ করে তাদের বাঁচাতে এই পদক্ষেপই নিতে হবে আমাকে।’
বাংকের কিনারে পা ঝুলিয়ে বসল পাশা। ফার্নান্দো ওর দিকে পিছন হলে গদির নিচ থেকে তারটা বের করে ব্যবহার করার কথা ভাবল একবার, পরক্ষণেই বাতিল করে দিল চিন্তাটা। ক্যাপ্টেনের কাছে পৌঁছানোর আগেই ওকে ঝাঁঝরা করে দেবে গার্ডরা।
পোর্টহোলের দিকে ইশারা করল ফার্নান্দো। ‘মাত্র পাঁচ থেকে সাত নট গতিতে চলেছি আমরা, নিশ্চয় খেয়াল করেছ। রাত যখন নামবে, তখনও কী-এর সীমানার মধ্যেই থাকব।’ পায়চারি থামাল ও। ‘সারাদিন চুপচাপ থেকে ব্যাটারি রিচার্জ করছে সাবমেরিনটা, যাতে সন্ধ্যার পর আমাদের সঙ্গে দেখা করতে পারে।’ এক মুহূর্ত ভেবে নিয়ে যোগ করল, ‘ভাগ্যিস, দিনটা আজকে রোদেলা।
কথাটার মানে বুঝতে পেরে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল পাশা, ‘তারমানে মিনি-সাবগুলো সোলার পাওয়ার ব্যাবহার করে?’
আত্মতৃপ্তির হাসি হাসল ফার্নান্দো। ‘বাহ্, এমন তথ্যও আছে তাহলে যেটা তুমি জানো না। হ্যাঁ, ফেড। কোটি কোটি ডলার খরচ করে সাবগুলোতে রিট্র্যাক্টেবল সোলার প্যানেল লাগিয়েছে ফেলিডাই। স্পেশাল ব্যাটারির ব্যাংকে এনার্জি জমা করে রাখার ব্যবস্থা আছে। এ সব ব্যাপারে আমি বিশেষজ্ঞ নই, তারপরেও বলতে পারি, ওরকম সিস্টেম এর আগে আর কোথাও ব্যবহার করা হয়নি।’
সাবমেরিন টেকনোলোজির এই অভিনব উন্নতি সাধনে ফেলিডাইয়ের ইঞ্জিনিয়ারদের কৃতিত্বে মুগ্ধ না হয়ে পারল না পাশা। সোলার পাওয়ার এনার্জি ব্যবহার করায় অনেক ধরনের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পেয়েছে সাবমেরিনগুলো, যখন-তখন, যেখানে ইচ্ছে রিফিউয়েল করে নিতে পারে, তবে তাতে চোখে পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
এ সময় মাথার ওপরে মৃদু গুঞ্জন শোনা গেল। প্লেনের ইঞ্জিনের শব্দ।
ফার্নান্দোও লক্ষ্য করেছে সেটা। ‘নিশ্চয় তোমার বন্ধুরা খোজাখুঁজি করছে, তাই না? আজ তিন-তিন বার আমাদের জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে একটা সিপ্লেন। খুব নিচু দিয়ে। দরজায় থাবা দিল ও। বাইরে থেকে খুলে দিল একজন গার্ড। তবে অকারণ সময় নষ্ট করছে। কাল সকাল নাগাদ সাগরের তলায় চলে যাবে তুমি।
পাল্লা লাগিয়ে দিয়ে গেল ফার্নান্দো। দড়াম করে শব্দ হলো। শব্দটাকে মৃত্যুঘণ্টার মত লাগল পাশার কাছে। বাইরে পায়ের শব্দ মিলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করল ও। তারপর গদির নিচ থেকে বের করল তারটা। প্রচুর পরিশ্রম করে তারের দুই মাথায় দুটো আংটা বানাল, যাতে আঙুল ঢোকানো যায়। হাতে বানানো গ্যারট এটা, ব্যবহার করতে জানলে একটা ভয়ঙ্কর অস্ত্র। তারের এক মাথা বগলের নিচে ঢুকিয়ে তারটা হাত বরাবর লম্বা করে সোজাসুজি রাখল।
আক্রমণের জন্য প্রস্তুত এখন ও। শুধু হাতটায় সামান্য একটু ঝাকি, সঙ্গে সঙ্গে হাতের তালুতে চলে আসবে তারের একটা মাথা।
গড়িয়ে কাটছে সময়। বিকেলটা যেন ক্লান্তিতে স্থির হয়ে আছে। পাশার মনে হলো, অনন্তকাল পরে মলিন হতে শুরু করল পোর্টহোলের আলো। গতি একেবারেই কমে গেছে গ্রিফিথের, হামাগুড়ি দিয়ে যেন এগোচ্ছে। মিনিটখানেক পর পায়ের শব্দ কাছে আসতে শুনল ও। দরজায় চাবি ঢোকানোর শব্দ হলো।
সেই দুজন বডিগার্ড, প্রথম থেকেই যাদের নিয়ে আসে ফার্নান্দো। একজনের হাতে পাশার বেরেটা পিস্তলটা এখনও আছে। ওর দিকে পিস্তল তাক করে ধমকে উঠল লোকটা, ‘এই, ওঠো। এখানে আরামে থাকা-খাওয়ার বিল মেটাতে যেতে হবে এখন তোমাকে।’