৪. আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি
‘আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি!’ পশ্চিম দিক থেকে চেঁচিয়ে বলল পিণ্টো। ‘তুমি ভেবেছ, তুমি খুব চালাক, আসলে তা নও!’
বনের আরও গভীরে ঢুকল পাশা। এত ঘন, ভাবছে, ভোজালি আনলে ভাল হতো।
‘কি, শুনতে পাচ্ছ আমাকে, সেনিয়র পাশা?’ আবার চিৎকার করল পিন্টো। ‘মনে মনে তোমার স্রষ্টাকে ডাকো, মাই ফ্রেণ্ড, কারণ আর বেশিক্ষণ এই পৃথিবীতে থাকবে না তুমি। এব্রো ডুয়েরোর পিছনে লেগেছিলে, কিন্তু দাবার দান উল্টে দিয়েছে ও। ক্রমেই ফাঁদে আটকে যাচ্ছ তুমি। শীঘি মারা যাবে। খুব শীঘি!’
শুনতে ভাল লাগল না পাশার। বড় বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে পিণ্টোকে। কেন? কেউ কি সাহায্য করতে আসছে ওকে? ইতিমধ্যেই সশস্ত্র ভাড়াটে গুণ্ডাদের দ্বীপে পাঠিয়ে দেয়নি তো ডুয়েরো?
নিঃশব্দে বনের ভিতর দিয়ে এগিয়ে চলল পাশা। ভীষণ সতর্ক। এম-১৬ রাইফেলের সিলেক্টর লিভার ঘুরিয়ে ‘অটো’ থেকে ‘সেমি’তে নিয়ে এল ও। দেখে গুলি করতে হবে এখানে, টানা গুলি করে জঙ্গল ছিন্নভিন্ন করে দেয়ার প্রয়োজন নেই।
কথা বলা থামিয়ে দিয়েছে পিন্টো। মট করে একটা ডাল ভাঙার শব্দ কানে এল পাশার।
রাইফেল উঁচু করল পাশা। কিন্তু লোকটা ঠিক কোথায় আছে, বুঝতে পারল না। পশ্চিমে এগিয়ে এক টুকরো লম্বা ঘাসের চাপড়ার মধ্যে চলে এল ও। উপুড় হয়ে শুয়ে বুকে হেঁটে এগিয়ে চলল, ঘাসের ডগাকে যতটা সম্ভব কম নাড়িয়ে। হঠাৎ সামনে একটা পায়েচলা পথ খুলে গেল, উত্তর থেকে দক্ষিণে গেছে। থেমে গিয়ে দু’পাশ দেখল ও।
পানিতে পড়ার শব্দ কানে এল সি কুইনের দিক থেকে। পাশা অনুমান করল, বোটে ফিরে যাচ্ছে পিন্টো। উঠতে গেল ও, তারপর জমে গেল বরফের মত, ডান পা বেয়ে পিছলে সরে যাচ্ছে কী যেন। আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে কাঁধের ওপর দিয়ে তাকাল ও।
বড় একটা সাপ। পাশার নড়াচড়া টের পেয়ে থেমে গিয়ে ফণা তুলেছে। অন্ধকারে শুধু ওটার সর্পিল দেহটার অবয়ব অস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ও, আর চেরা জিভটার ঘন ঘন ঢোকা-বেরোনো, মাথাটা এপাশ-ওপাশ করে বাতাসে বোধহয় বিপদের অস্তিত্ব খুঁজছে।
কী ধরনের সাপ, বুঝতে পারছে না পাশা। জানে না, ফ্লোরিডার এসব দ্বীপে কোরাল কিংবা কটনমাউথের মত বিষাক্ত সাপ আছে কি না। কিছুদিন আগে একটা গুজব শুনেছে, দক্ষিণ ফ্লোরিডার বনে নাকি গোখরো সাপও দেখা গেছে। কোন এক বোকা লোক কিছু গোখরো সাপ পুষতে এনে কিছুদিন পর শখ মিটে যাওয়ায় সেগুলো নাকি বনের ভিতর ছেড়ে দিয়েছে। ক্রমশ বংশ বৃদ্ধি করছে সেই সাপগুলো, তার প্রমাণও নাকি পাওয়া গেছে।
যাই হোক, ক্রুদ্ধ ফেঁসফোঁস শব্দ করে পাশার পা বেয়ে কয়েক ইঞ্চি ওপরে উঠে এল সাপটা। তারার ফ্যাকাশে আলোয় ওটার তির্যক চোখ দুটোকে কেমন পৈশাচিক মনে হচ্ছে, যেন ভিতরের আগুন চোখ দিয়ে ফুটে বেরোচ্ছে। দুলতে শুরু করল ভয়ঙ্কর প্রাণীটা। পাশার কাঁধের কাছে এসে মাথা নামাতে লাগল। কামড় খাওয়ার ভয়ে আপনাআপনি কাঁধের পেশি শক্ত হয়ে গেল পাশার। কিন্তু শেষ মুহুর্তে ওকে নিরীহ ভেবে আচমকা পাশ কেটে গা থেকে নেমে পড়ল, হারিয়ে গেল উঁচু ঘাসের ভিতরে।
রাস্তাটা ধরে দক্ষিণে এগোল পাশা। তিরিশ গজ মত এসে, বড় একটা গাছের নীচে থামল। মোটা কাটার মাথায় গাটওয়ালা বড় বড় ডালের দিকে তাকাল। জায়গাটা সুবিধেজনক মনে হওয়ায় ব্যাগটা নামিয়ে রাখল মাটিতে। এম-১৬ রাইফেলটা ঝুলিয়ে নিল বাঁ কাঁধ। গাছ বেয়ে প্রথমে সবচেয়ে নীচের ডালটায় উঠল। সেটা থেকে এ-ডাল ও-ডাল করতে করতে উঠে এল মগডালে, মাটি থেকে অন্তত তিরিশ ফুট ওপরে। সাগরের দিকে তাকাল।
সি কুইন চলে যায়নি, বরং আরেকটা বোট এসে নোঙর ফেলেছে ওটার পাশে। অস্পষ্ট মূর্তিরা নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে। দ্বিতীয় বোটটার ফ্লাইং ব্রিজে দাঁড়ানো গাট্টাগোট্টা একজন লোক। চেঁচিয়ে হুকুমের পর হুকুম দিয়ে চলেছে। নিশ্চয় ডুয়েরো।
তাকিয়ে আছে পাশা। আধ ডজন কালো পোশাক পরা মূর্তি নেমে এল ডুয়েরোর বোটের পিছন দিয়ে, তীরে উঠল। ছড়িয়ে গিয়ে বনে ঢুকল।
কাজ করেছে পাশার পরিকল্পনা। গোপন আস্তানা থেকে বের করে এনেছে ডুয়েরোকে, কিন্তু প্রচণ্ড ঝুঁকির বিনিময়ে। ডুয়েরোর সশস্ত্র খুনে বাহিনীর ছয়জন লোক এখন আটোম্যাটিক অস্ত্র নিয়ে খুঁজতে বেরিয়েছে পাশাকে। নিশ্চয় ওরা এর আগেও দ্বীপটাতে এসেছে, ভাল করে চেনে, এর কোথায় কী আছে জানে। তাই এখানে চলাফেরা করা ওদের জন্য সুবিধেজনক, পাশার চেয়ে।
যতটা সম্ভব পাতা না নড়িয়ে, ডাল থেকে ডালে নেমে এল পাশা। ছয় ফুট ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ল মাটিতে, নিঃশব্দে। ব্যাগটা তুলে নিয়ে প্রায় দৌড়ে চলল দক্ষিণে। কোথাও না কোথাও গিয়ে শেষ হয়েছে এই পথ। কোথায়, সেটা জানতে চায় ও। আরও একশো গজ সামনে এগিয়ে পাতলা হয়ে এল বন। তার ওপাশে খোলা জায়গা।
এম-১৬টা কাঁধ থেকে খুলে নিল ও। নলের মুখটা এপাশ ওপাশ নড়াতে নড়াতে এগিয়ে চলল সামনের একটা ছোট কুঁড়ের দিকে। ওটার পাশে একটা অদ্ভুত ঢিপি চোখে পড়ছে। কাছে এসে বোঝা গেল, পানি নিরোধক তেরপল দিয়ে চারটে বাক্স ঢেকে রাখা হয়েছে। পকেট থেকে পেন্সিল টর্চ বের করে বাক্সগুলোতে কী আছে দেখল ও। তিনটেতে অস্ত্র আর গুলি, চতুর্থটাতে খাবার।
তক্তা দিয়ে বানানো হয়েছে কুঁড়েটা। দরজার পাল্লা নেই, সেখানে একটা কাপড় ঝুলিয়ে নেয়া হয়েছে। রাইফেলের মাথা দিয়ে কাপড়ের একপাশ সরিয়ে ঘরের ভিতরে টর্চের আলো ফেলল পাশা। একবার তাকিয়েই নাক কোঁচকাল ও। ঠুনকো দেয়ালে কাত করে রাখা ভাঙা চারপায়া, এক কোণে একটা মরচে পড়া কেরোসিনের স্টোভ। খালি, ফেলে দেয়া টিনের ক্যান, উয়িস্কির বোতল আর দোমড়ানো বিয়ারের ক্যান, এঁটো মুরগির হাড় ছড়িয়ে আছে মাটিতে। ভয়াবহ নোংরা।
পুরো ধুলোর আস্তর বুঝিয়ে দিল, বহুকাল ব্যবহার করা হয় না জায়গাটা। কোন কারণে যদি মাদক-কারবারিদের কারও দ্বীপে থাকার প্রয়োজন পড়ে, সেজন্য কুঁড়েটা বানানো হয়েছে। তবে থাকা হয় নিশ্চয় কালেভদ্রে।
প্যান্টের এক পকেট থেকে একটা এম-৬৭ ফ্রাগমেনটেশন গ্রেনেড বের করল পাশা। আরেক পকেট থেকে বের করল এক বান্ডিল সরু তার। হাঁটু গেড়ে বসে, দরজার ঠিক ভিতরে, বাঁ পাশে ছোট একটা গর্ত করল, তার ভিতরে ঢুকিয়ে দিল গ্রেনেডটা। তারের এক মাথা গ্রেনেডের সেফটি পিনের পুল রিঙের ভিতরে ঢুকিয়ে শক্ত করে আটকে দিল। মাটির গোড়ালি সমান উঁচু দিয়ে তারটা টেনে দরজার পাশের একটা পেরেকের মাথায় ভালমত পেঁচাল। কা-বার নাইফ দিয়ে ওখান থেকে বাকি তারটুকু কেটে বান্ডিলটা পকেটে রেখে দিল।
উত্তেজিত ডাক ছেড়ে বনের ভিতর থেকে উড়ে গেল একটা পাখি। ওটার বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে কেউ, সেটা মানুষও হতে পারে, কিংবা অন্য কিছু।
কুঁড়ের কাছ থেকে দ্রুত সরে এসে পুবের জঙ্গলে ঢুকে পড়ল পাশা। ব্যাগটা রাখার একটা উপযোগী জায়গা খুঁজল। একটা গাছের গোঁড়ার খোড়ল দেখে সেটাতে ঢুকিয়ে রাখল।
পুবমুখো এগিয়ে চলল পাশা, যতক্ষণ না গাছপালার ভিতর দিয়ে সৈকত চোখে পড়ল। উত্তরের সৈকতের তুলনায় এখানে পাথরের চেয়ে বালি বেশি, আশি-নব্বই ফুট চওড়া, তার ওপাশে ঢেউ আছড়ে পড়ছে।
কোনও বোট দেখা গেল না। কেউ আছে কি না ভালমত দেখে নিয়ে বন থেকে বেরোল ও। বনের কিনার ধরে দৌড়ে চলল আবার উত্তরে, দ্বীপ ঘুরে ফিরে যাচ্ছে মৃদু ঢেউয়ে যেখানে দোল খাচ্ছে সি কুইন ও অন্য বোটটা। দ্বীপের উত্তর-পূর্ব কোণায় এসে গতি কমাল, যতটা সম্ভব মাথা নুইয়ে দেহটাকে নিচু করে এগিয়ে চলল।
অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে আছে ডুয়েরো আর তার বাহিনী। উজ্জ্বল স্পটলাইটের আলো ফেলে দিনের মত আলোকিত করে রেখেছে বাটের কাছের তীরভূমি। পিন্টোর সঙ্গে নিজের বোটের ফ্লাইং ব্রিজে রয়েছে ডুয়েরো। ককপিটে পাহারা দিচ্ছে দুজন গানম্যান। আরও দুজন পায়চারি করছে তীরে।
সি কুইনে কেউ নেই।
হামাগুড়ি দিয়ে পানির কিনারে চলে এল পাশা। পানিতে নামল। যাতে না ভেজে সেজন্য এম-১৬টাকে উঁচু করে ধরে রেখে এগিয়ে চলল সি কুইনের দিকে। পানির ওপরে রয়েছে শুধু ওর মাথা আর রাইফেলটা। পায়ের নিচে প্রচুর পাথর, এবড়োখেবড়ো, যে কোন মুহূর্তে পা পিছলানোর ভয়। এক পা বাড়িয়ে কোথায় রেখেছে, ঠিকমত রেখেছে কি না, নিশ্চিত না হয়ে আরেক পা বাড়াচ্ছে না।
তীরে নেমে বনে ঢুকেছে যে চারজন গানম্যান, পানির দিক থেকে আক্রমণ আশা করছে না ওরা। পিন্টোর ওপর মোটেও সন্তুষ্ট নয় ডুয়েরো, ওর ভাবভঙ্গি আর বার বার তর্জনী তুলে ঝাঁকানো দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
ক্রমশ গভীর হয়ে আসছে পানি। বোটের কাছ থেকে চল্লিশ ফুট দূরে থাকতে হঠাৎ প্রায় খাড়া হয়ে নেমে গেল ঢাল। অনেকখানি পাশে সরেও মাটি ঠেকল না পায়ে। সাঁতরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। খুব ধীরে ধীরে, এমনভাবে সাঁতরে চলল ও, যাতে ঢেউ বেশি না ওঠে, শব্দ না হয়। রাইফেলটা না ভিজিয়ে আর পারল না। প্রয়োজনের সময় এটা ঠিকমত কাজ করবে কি না আর, জানে না। স্থির বাতাসে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে পিন্টো আর ডুয়েরোর কণ্ঠ। কথা বেশির ভাগ ডুয়েরোই বলছে।
‘ইচ্ছে করছে তোমাকে হাঙরের মুখে ছুঁড়ে দিই, র ্যামন! ওই টিকটিকিটাকে শেষ করে দেয়া উচিত ছিল তোমার, যেভাবে আমি বলে দিয়েছিলাম!’
‘চেষ্টা করেছি,’ ভীত কুকুরের মত কুঁই-কুঁই করে বলল পিন্টো। ‘কিন্তু লোকটা মানুষ নয়, শয়তানের চ্যালা। গায়ে এত জোর, আর এত ক্ষিপ্রতা, চিতাবাঘেও ওর সঙ্গে পারবে না। হাসি আর টনির মত আমাকেও যে মেরে ফেলেনি, এটা আমার ভাগ্য!’
‘ওই দুটো তো গাধা। আমাকে বলা হয়েছে, কী-ওয়েস্টে ওদের চেয়ে দক্ষ আর কেউ নেই। দক্ষতার নমুনা তো দেখলাম। এখন আর কারও ওপর ভরসা না করে যা করার নিজেকেই করতে হবে আমাকে।’
‘এত চিন্তা করছেন কেন? আমাদের এতজনকে মেরে এখান থেকে বেরোনোর সাধ্য হবে না শয়তানটার,’ হাসি হাসি কণ্ঠে বলল পিন্টো।
যেন ওর কথা ভুল প্রমাণ করতেই ঠিক এ সময় বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল জঙ্গল। তীক্ষ্ণ আর্তনাদ শোনা গেল।
‘ওই যে!’ চেঁচিয়ে উঠল পিন্টো। ‘দিয়েছে খতম করে!’
‘চুপ, গাধা কোথাকার!’ গর্জে উঠল ডুয়েরো। ‘ওদের কাছে গ্রেনেড নেই!’ চিৎকার করে গানম্যানদের হুকুম দিল ও।
ততক্ষণে সি কুইনের কাছে পৌঁছে গেছে পাশা, কিনার ধরে ঝুলে পড়েছে। স্পটলাইটগুলো সব তীরের দিকে ফেরানো, তাই প্রায় অন্ধকারের মধ্যেই বোটের সামনের ডেকে উঠে এল ও। মাস্তুলের দিকে এগোচ্ছে, এ সময় ধুপ করে ভারী একটা জিনিস পড়ল বোটে, প্রচণ্ড ঢেউয়ে যেন দুলে উঠে গড়ান খেল বোট।
অন্য বোটটা থেকে ককপিটে লাফিয়ে পড়েছে পিন্টো। বিড়বিড় করে কিছু বলতে বলতে মই বেয়ে ব্রিজে উঠল। চেঁচিয়ে বলল, ‘আমি আপনার পিছন পিছন আসছি, বস। ‘
খোলা জায়গায় দাঁড়ানো পাশা। লুকানোর জায়গা নেই। রেলিঙের ওপর দিয়ে উঁকি দিলে এখন চমকে যেত পিন্টো। কিন্তু এদিকে নজর নেই ওর, নোঙর তোলায় মনোযোগ, তাই পাশাকে দেখল না। এই সুযোগে হামাগুড়ি দিয়ে একটা বরগার কাছে সরে গেল পাশা। নিঃশব্দে মাথা তুলে, খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে ককপিটের ওপর দিয়ে তাকাল।
তীরের গানম্যান দুজন ফিরে এসেছে ডুয়েরোর বোটে। খোলা সাগরের দিকে চলতে শুরু করল বোটটা।
বোটেও গ্রেনেড ছোঁড়া হতে পারে, এই ভয় পাচ্ছে হয়ত ডুয়েরো, ভাবল পাশা। ওর অনুমান সত্যি, বুঝল, যখন দেখল তীর থেকে পঞ্চাশ-ষাট গজ দূরে গিয়ে থেমে গেল বোটটা।
সারাটাক্ষণ বিড়বিড় করছে পিন্টো। ডুয়েরোর বোটের পিছন পিছন চলছিল। কয়েক গজ এগিয়ে এসে ওটার পাশে রাখল সি কুইনকে। ইঞ্জিন বন্ধ করে বোটের পাশে এসে দাঁড়াল। ‘মালগুলো আসতে কতক্ষণ লাগবে?’
‘কেন, তাড়া আছে তোমার?’ খেঁকিয়ে উঠল ডুয়েরো।
‘না না, তাড়া কীসের?’ তাড়াতাড়ি বলল পিন্টো।
চারজন গানম্যানের অবস্থান দেখল পাশা। কিছু একটা করার সময় হয়েছে ওর। প্ল্যানমাফিক সব ঘটলে, শুধু বন্দুকবাজগুলোকে শেষ করবে। আর আহত করে হলেও ডুয়েরোকে জ্যান্ত ধরতে চায় ও। রিং লিডারের কাছ থেকে তথ্য আদায় করা দরকার।
কিন্তু ঠিক এই সময় ঘটল অঘটন। কালো পোশাক পরা দুজন গানম্যান এসে দাঁড়াল সৈকতে; দুজনের মধ্যে লম্বা লোকটা চিৎকার করে বলল, ‘মিস্টার ডুয়েরো! ডেভি আর ক্রুড মারা গেছে! ফাঁদ পাতা গ্রেনেডে পা দিয়েছিল!’
মইয়ের মাথায় সরে এল ডুয়েরো। ‘অসাবধান হলে তো মরবেই। রিকো, আবার যাও তোমরা। ওদের মত ভুল কোরো না। আর সারারাত লাগিয়ে দিয়ো না।’
ঘুরতে গিয়েও দাঁড়িয়ে গেল রিকো। সি কুইনের দিকে তাকিয়ে দ্রুত এগোল দুই কদম। লোকটা কথা বলার আগেই পাশা বুঝে গেল, ওকে দেখে ফেলেছে রিকো।
‘মিস্টার ডুয়েরো! মনে হচ্ছে পিন্টোর বোটে আরও কেউ আছে!’
ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই নড়ে উঠেছে পাশা। একটা জিন পোল টেনে নিয়ে, সেটার লম্বা ডান্ডার মাথায় ভর দিয়ে লাফিয়ে উঠল ককপিটে, ফাইটিং চেয়ারটার কাছে। ডেকে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে এম-১৬টা কাঁধ ঠেকিয়ে ডুয়েরোর বোটের একজন গানম্যানকে গুলি করল তিনবার। পড়ে গেল লোকটা। গোড়ালিতে ভর দিয়ে সামান্য ঘুরে আবার ট্রিগার টিপল। খুলি উড়িয়ে দিল আরেকজন গানম্যানের।
হঠাৎ জ্যান্ত হয়ে উঠল যেন বাকি সবাই। ডুয়েরোর বোটের ককপিটে দাঁড়ানো দুজন, আর তীরে দাঁড়ানো দুজন-সবাই একসঙ্গে গুলি শুরু করল। মাথা নিচু করে ফেলল পাশা। ওর কানের আশপাশ আর মাথার ওপর দিয়ে গুঞ্জন তুলে চলে গেল যেন এক ঝাঁক ভীমরুল। গুলি বিধল বরগা, ফাইটিং চেয়ার, আর ককপিটের সামনের স্লাইডিং ডোর-এ। পাশার মাথার ওপরে রাগে চিৎকার করে উঠল পিন্টো, ওর প্রিয় বোটটাকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখে।
ভুল করল গানম্যানরা। শত্রুকে খতম করার উত্তেজনায় ওদের ম্যাগাজিনের সমস্ত গুলি শেষ করে ফেলল ফিশিং বোটটাকে টার্গেট করে।
ততক্ষণে পাল্টা গুলি চালানোর জন্য তৈরি হয়ে গেছে পাশা। এম ১৬-এর সিলেক্টর আবার ‘অটোফায়ার’-এ ঘুরিয়ে নিয়েছে। তীরের দিকে তাক করে ট্রিগার টিপল। ঝাঁঝরা হয়ে গেল রিকো আর ওর সঙ্গী। বুলেটের আঘাতে বিচিত্র ভঙ্গিতে ঝাঁকি খেতে খেতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। কী ঘটেছে, দেখার অপেক্ষা করল না পাশা। পাক খেয়ে ঘুরে গেল ডুয়োরের বোটের দিকে। মরিয়া হয়ে এসএমজি-র চেম্বারে নতুন ম্যাগাজিন ঢেতে ব্যস্ত ওরা। দেরি করে ফেলল। কোমরে বাঁট ঠেকিয়ে গুলি করল পাশা। ফেলে দিল দুজনকে।
বোটের কিনারে ছুটে এল পাশা। রাইফেলের নল উঁচু করল। কিন্তু ডুয়েরোকে দেখল না। রিং লিডারকে পালাতে দিতে রাজি নয় ও। বোটের কিনারে পা রেখে অন্য বোটটাতে ওঠার জন্য লাফ দিতে যাবে, থেমে গেল ভয়ঙ্কর এক খেপা চিৎকার শুনে। মুখ তুলে তাকাল সি কুইনের ফ্লাইং ব্রিজের দিকে।
উড়ে আসছে পিন্টো। মাঝপথে রয়েছে। ডান হাতে চকচকে ছুরি, সেই বাটারফ্লাই নাইফ। প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ চিতাবাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়ল পাশার ওপর। কোনমতে রাইফেলের নল ঘুরিয়ে ছুরির প্রথম আঘাতটা ঠেকানোর সুযোগ পেল পাশা। উল্টে পানিতে পড়ে গেল। ওপরে রয়েছে পিন্টো। পাশার মুখ আর গলায় পোঁচ মারার চেষ্টা করছে। পানিতে ডুবে ডান পাশে সরে গেল পাশা। একই সঙ্গে ভুস সরে পানিতে মাথা তুলল দুজনে। ততক্ষণে কাবার ফাইটিং নাইফটা হাতে চলে এসেছে পাশার। পিন্টো আবার ওকে ছুরি মারতে আসতেই ফাইটিং নাইফের ফলা পুরোটাই ওর বুকে ঢুকিয়ে দিল পাশা।
ব্যথায় চিৎকার দিয়ে চিত হয়ে গেল পিন্টো। একবার ডিগবাজি খেয়ে তলিয়ে গেল পানিতে। আর উঠল না। ডিগবাজি খাওয়ার সময়ই মরে গেছে।
এরপর দুটো ঘটনা একসঙ্গে ঘটল। প্রথমটা হলো, ডুয়েরোর বোটের টুইন ইঞ্জিন খকখক করে কাশি দিল, ফুটফুট করে বন্ধ হয়ে গেল; তাড়াহুড়ো করে স্টার্ট দিতে যাওয়ায় নিশ্চয় বেশি তেল ঢুকে ডুবিয়ে দিয়েছে ফিউল-ইনটেক ভালভ। পাগলের মত স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করছে ও। আর দ্বিতীয় ঘটনা, জঙ্গল থেকে তীরে বেরিয়ে এসেছে বাকি দুজন গানম্যান। পানির কিনারে দৌড়ে আসছে ওদের ‘বস’কে সহযোগিতা করার জন্য।
পাশার আশেপাশে ছোট ছোট প্রস্রবণ যেন লাফিয়ে উঠছে বুলেটের আঘাতে। সি কুইনের পাশে সরে গেল ও। গুলি থেকে আড়াল করল নিজেকে। অতি উত্তেজনায় কী করছে ভুলে গিয়ে খোলা জায়গায় চলে এসেছে। তার ওপর আবার পানি ভেঙে বোটের দিকে এগোচ্ছে। ওদের বোকামির সুযোগটা কাজে লাগাল পাশা।
লোকগুলো বিশ ফুট দূরে থাকতে গুলি করল ও। হাঁটু পানিতে রয়েছে ওরা। প্রথমজন কোন সুযোগই পেল না। দ্বিতীয়জন পাশাকে লক্ষ্য করে গুলি করেই চলেছে। পাশার কিছু করতে পারল না, তবে পাল্টা গুলিতে নিজের মুখটাকে রক্তাক্ত করে পড়ে গেল পানিতে।
এতক্ষণে ডুয়েরোর দিকে নজর দেয়ার সুযোগ পেল পাশা। কিন্তু সে ঘুরতেই ডুয়েরোর বোটটার ইঞ্জিন চালু হয়ে গেল। দ্রুত দুই কদম এগিয়ে এসে হাত সামনে বাড়িয়ে ঝাপ দিল ও। কিনারা স্পর্শ করল আঙুলগুলো। ধরে রাখতে পারল না। পিছলে গেল। লাফ দিয়ে আগে বাড়ল বোটটা। প্রপেলারের ঢেউ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল ওকে।
পিছনে তাকাল পাশা। হাসি ফুটল মুখে।
একটা সেকেন্ড সময় নষ্ট করল না ও। সি কুইনে উঠে পড়ল। মই বেয়ে প্রায় উড়ে চলে এল যেন ফ্লাইং ডেকে। বিশ গজও এগোতে পারেনি তখনও দ্বিতীয় বোটটা। পিন্টো আবার আগের মত সুইচ বন্ধ না করে রাখলেই হয়, ওটা খুঁজতে গেলে অনেক সময় লাগবে, বহুদূরে চলে যাবে ততক্ষণে ডুয়েরো। কিন্তু চাবিতে এক মোড় নিতেই চালু হয়ে গেল ইঞ্জিন। টুইন থ্রটল পুরোটা খুলে দিয়ে ডুয়েরোর পিছু নিল। গাছের খোড়লে ফেলে আসা ব্যাগটার কথা ভাবল একবার। ওটা যে কোন সময় ফিরে এসে বের করে নিতে পারবে।
ইঞ্জিনকে যতটা সম্ভব খাটাচ্ছে পাশা, সর্বোচ্চ গতিবেগ তুলে দিল। ডুবোপাহাড়ে ধাক্কা খাওয়া এড়ানোর জন্য সরে এসেছে পশ্চিমে। বাতাস স্থির হয়ে থাকায় সুবিধে হয়েছে, ঢেউ উঠছে না তেমন, কর্কের মত দুলতে দুলতে ছুটে চলেছে বোট দুটো। কনসোলে নিজের সামনে এম-১৬টা রেখে এক ঝাঁক গুলি বর্ষণ করল পাশা। ডুয়েরোর বোটের আগে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
শীঘ্রি বুঝতে পারল, সমান হর্সপাওয়ারে চলছে দুটো বোট। থ্রটল পুরো খুলে দিয়েও দূরত্ব কমাতে পারছে না পাশা। কী করা যায় ভাবছে, এ সময় অদ্ভুত একটা কাণ্ড করল ডুয়েরো।
হঠাৎ বোটের গতি কমিয়ে দিল ও। ডান হাতে রেডিওর মত একটা জিনিস ধরে রেখে অন্য হাতটা বারবার তুলছে সি কুইনের দিকে, যেন কাউকে বোটটা দেখাচ্ছে।
অবাক হয়ে, পাশাও গতি কমাল। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছে ডুয়েরো, হয়তো কাছাকাছি থাকা অন্য কোন বোটের সঙ্গে। চারপাশে তাকাল পাশা। একটা বোটও চোখে পড়ল না, শুধু অস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে উত্তর-পশ্চিমে একটা ডুবোপাহাড়ের পিঠ উঁচু হয়ে আছে। ওকে আরও অবাক করে দিয়ে চোখের সামনে নড়ে উঠল পিঠটা।
চোখের পাতা সরু করে আনল পাশা। প্রথমে মনে হলো, ভুল দেখছে। কিন্তু কয়েক সেকেণ্ড পরেই পানিতে মৃদু ঢেউ দেখে নিশ্চিত হলো, পাহাড়টা সত্যিই নড়ছে, আর ওটার সামনে থেকে আরেকটা জিনিস-তীরের মাথার মত দেখতে ছুটে আসছে সি কুইনের দিকে।
ডুয়েরোর খলখল হাসি ভেসে এল পানির ওপর দিয়ে, আত্মতৃপ্তির হাসি। বোট থামিয়ে দিয়ে পিছনের রেলিঙের ওপর দিয়ে তাকিয়ে আছে।
বহু বছরের অভিজ্ঞতা আর ক্রমাগত এ ধরনের বিপজ্জনক কাজ সাধারণ মানুষের চেয়ে পাশার ইন্দ্রিয়কে অনেক বেশি ধারাল করে তুলেছে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়র ভিতরেও আরেকটা ইন্দ্রিয় রয়েছে ওর, একটা ইন্টারনাল অ্যালার্ম সিস্টেম, যেটা ওকে সাবধান করে দিয়ে কত অসংখ্যবার যে ওর প্রাণ বাঁচিয়েছে, তার কোন হিসেব নেই। এখনও আবার বেজে উঠল সেই ঘণ্টাটা। ভিতর থেকে যেন মৃদু একটা কণ্ঠ ডেকে ওকে সাবধান করে দিল।
সঙ্গে সঙ্গে কাজে লেগে গেল পাশা। হুইল ঘুরিয়ে, গতি বাড়িয়ে ছুটতে শুরু করল দক্ষিণ-পশ্চিমে, জুবোপাহাড়ের পিঠের মত জিনিসটার দিকে। বুঝতে পারছে ওটা বিপজ্জনক, কিন্তু তারচেয়েও বেশি বিপজ্জনক এখন ছুটে আসা জিনিসটা।
ক্রমেই গতি বাড়ছে ছুটন্ত জিনিসটার। দ্রুত কাছে আসছে। তবে এখনও এতটাই দূরে রয়েছে, পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে না।
সাঁই করে ডানে কাটল পাশা, তারপর বায়ে। যা সন্দেহ করেছে জিনিসটা যদি তা-ই হয়ে থাকে তো এভাবে এঁকেবেঁকে চললে কাটানো যেতে পারে। হঠাৎ সি কুইনের পাশ দিয়ে পানিতে প্রচণ্ড আলোড়ন তুলে চলে গেল জিনিসটা। কোন শব্দ করল না, কিংবা করলেও সেটা এতই কম যে বোটের ইপ্তিনের শব্দে ঢাকা পড়ে গেল। পাশার ধারণই ঠিক হয়েছে, সে ঠিকই চিনেছে। ও ডানে কেটে জিনিসটা থেকে যতটা সম্ভব দূরে সরাল বোট, চূড়ান্ত অঘটন ঘটে যাওয়ার আগেই। পিন্টোর বোটটা ভাল, চমৎকার সাড়া দেয়।
প্রচণ্ড বিস্ফোরণ যেন চুরমার করে দিল অন্ধকারকে। কনসোলের ওপর ঝুঁকে থেকে পিছনে ফিরে তাকাল পাশা। একটা ডুবোপাহাড়ে আঘাত হেনে চূড়ো উড়িয়ে দিয়েছে ছুটন্ত জিনিসটা।
বিস্ময়কর যে সচল ডুবোপাহাড়টা, ওটা আসলে একটা জলযান, মিনি-সাবমেরিন। আর ওটা থেকে যে জিনিসটা ছোঁড়া হয়েছে, সেটা টর্পেডো। সাবমেরিনটাকে খুঁজল পাশার চোখ। উধাও হয়েছে রহস্যময় জলযানটা। তবে পাশা নিশ্চিত, চলে যায়নি ওটা, ডুব দিয়েছে, কাছে এসে নতুনভাবে টর্পেডোের আক্রমণ চালাবে।
এ সময় অন্য আরেকটা বিপদ দেখা দিল। সামনে তাকিয়ে পাশা দেখে, বোটের হুইল ডানে ঘোরানোয় সোজা ডুয়েরোর বোটের দিকে চলেছে সি কুইন, এ পথে এগোতে থাকলে মুখোমুখি গুঁতো লাগবে।
রেডিওতে আবার কথা বলছে ডুয়েরো, নিশ্চয় পাশার নতুন অবস্থান জানাচ্ছে।
একটা বুদ্ধি এল পাশার মাথায়। পানির নীচ থেকে যে-ই ওকে উড়িয়ে দিতে চাইছে, কাছাকাছি ডুয়েরো থাকলে নিশ্চয় সে-চেষ্টা আর করবে না। গতি কমাল পাশা। নিখুঁতভাবে গুঁতো বাঁচিয়ে সি কুইনকে দ্বিতীয় বোটটার পাশে নিয়ে এল। দুটো বোটের ঘষা লাগার শব্দ হলো।
রেডিওতে কথা বলায় মনোযোগ ডুয়েরোর, তাই লক্ষ্য করেনি এতক্ষণ, ঘষার শব্দে চমকে গিয়ে চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে তাকাল। ইঞ্জিন নিউট্রালে রেখে দৌড়ে এসে রেলিং ডিঙিয়ে লাফ দিল পাশা। একটা মুহূর্তের জন্য মনে হলো, মিস করবে, শূন্য থেকে পানিতে পড়ে যাবে। কিন্তু ওর পা বাঁধল বোটের হ্যান্ডরেইলে, থাবা দিয়ে ফ্লাইং ব্রিজের কিনারা ধরে ফেলে দোল দিয়ে উঠে গেল ওপরে।
চালকের সিটের পাশে রেডিও রেখে দিয়ে ডান কোমরে ঝোলানো খাপে রাখা পিস্তলের বাঁটে হাত দিল ডুয়েরো। দুই পা বাড়িয়ে দিয়ে উড়ে গিয়ে পড়ল পাশা। ডুয়েরোর বুকে আঘাত হানল টান টান করে দেয়া পা দুটো। প্রথমে সিটের ওপর পড়ল ডুয়েরো, সেখান থেকে ডিগবাজি খেয়ে ডেকে। চার হাতপায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াল। কোণঠাসা চিতাবাঘের মত দাঁত খিচাচ্ছে। আবার পিস্তল খুলতে হাত বাড়াল। বের করে ফেলেছে, এ সময় পাশার ডান পায়ের প্রচণ্ড লাথি লাগল ওর চোয়ালে, আবার পড়ে গেল ও।
ডুয়েরোর হাতের পিস্তলটা কেড়ে নিয়ে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলল পাশা। ওর ডান হাতটা ধরে মুচড়ে নিয়ে এল পিঠের ওপর। আরেক হাতে ঝাঁকড়া চুল খামচে ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে বলল, ‘ওদের বলো, কিছু না করতে!’
লাথি খেয়ে কাবু হয়ে গেছে ডুয়েরো। ঘোলাটে ভাবটা কাটাতে মাথা ঝাড়ছে। ছটফট করছে পাশার হাত থেকে ছোটার জন্য। কিন্তু ইস্পাতের ভাইসের মত কঠিন হাতে ধরে রেখেছে পাশা। ছুটতে না পেরে ডুয়েরো বলল, ‘বোকামি কোরো না, গ্রিংগো! সময় থাকতে ছেড়ে দাও আমাকে। তাহলে বাঁচার একটা সুযোগ করে দিতে পারি তোমাকে। তোমাকে অনেক টাকার ব্যবস্থা করে দেব আমি, এত টাকা, জীবনে যা চোখেও দেখনি।’
‘ওদের ধমতে বলো,’ কঠিন কণ্ঠে আদেশ দিল পাশা।
‘কেন ভয় পাচ্ছ? আমি না বলা পর্যন্ত কিছু করবে না ওরা,’ গোঁ-গোঁ করে বলল ডুয়েরো।
পানির দিকে তাকাল পাশা। চোখের কোণে দেখল, পানির নিচ দিয়ে তীব্র গতিতে বোট দুটো লক্ষ্য করে ছুটে আসছে কী যেন।
ডুয়েরোর চোখে পড়তেই চেঁচিয়ে উঠল, ‘আরে, করছে কী ওরা! আমার প্রাণ চলে গেলেও মুখ খুলব না, সেটা তো জানে!’