কন্ট্রোল – ২৫

অধ্যায় ২৫ 

জেফরি বেগ অনেকটাই নিশ্চিত ছিল ওসি হাসমত তার সঙ্গে অচিরেই দেখা করবে। 

একই পেশায় আছে বলে একটু ছাড় দিয়েছে তাকে। সরাসরি বলেওনি ইন্টেরোগেশন করবে। পুলিশে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে, বিপুল অভিজ্ঞতা আছে লোকটার, ইঙ্গিতটা বুঝে নিতে পেরেছিল। 

“কফি না কি চা দিতে বলবো?” নিজের ডেস্কে বসে জানতে চাইলো জেফরি। তার সামনেই বসে আছে বনানী থানার ওসি। 

“না, স্যার…থাক,” ম্রিয়মান কণ্ঠে বলল হাসমত আলী। 

লোকটার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলো হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর। “আমি একটু কফি খাবো এখন, চাইলে আপনিও খেতে পারেন।” 

একটু ভাবলো ওসি। “তাইলে দিতে বলেন, স্যার।” 

স্মিত হাসলো জেফরি। এখন প্রতিটি কথার আগে পিছে তাকে “স্যার” বলবে এই লোক। ইন্টারকমটা তুলে আরদার্লিকে দুই কাপ কফি দিতে বলল। ঠিক করলো কোনো রকম ভণিতা ছাড়া সরাসরি যা বলার বলবে। “আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আপনাকে এখানে কেন আসতে বলেছিলাম?” 

বিমর্ষ মুখে মাথা নাড়লো বনানী থানার ওসি। “জি, স্যার।” ভয়ার্ত আর কোণঠাসা বলে মনে হচ্ছে তাকে। 

“আপনি আমি দুজনেই একই পেশার লোক, বয়সে আপনি আমার সিনিয়র…” একটু গুছিয়ে নিলো এরপর কী বলবে। “কথাটা আমি সরাসরিই বলি, এই ঘটনায় আপনি কতোটুকু জড়িত?” 

ওসি হাসমত বিস্ফারিত চোখে তাকালো, তারপর ঢোক গিলল আস্তে করে। “স্যার, বিশ্বাস করেন আমি এইসবের লগে ইনভল্ভ না… প্ৰশ্নই ওঠে না।” 

লোকটাকে ভালো করে লক্ষ্য করতে লাগলো জেফরি বেগ। “আপনি বুঝতে পারছেন সোনিয়ার মার্ডার কেসটার তদন্ত এগোলে আপনার কী হবে?” 

বিমর্ষ মুখে তাকালো হাসমত আলী। 

“ভিক্টিমের বড় বোন আপনার থানায় ফোন দিয়ে বলল তার বোনের জীবন হুমকির মুখে, জাহান গ্রুপের লোকজন তাকে মেরে ফেলতে পারে…আপনার থানার ডিউটি অফিসার বেশ ভালো কাজ করেছিল, সঙ্গে সঙ্গে সেখানে একটা পেট্রল টিমকে যেতে বলে, ওরা সেখানে যাবার পরই আপনি নিজে অতো রাতে ফোন করে ওদেরকে চলে আসতে বলেছেন।” 

বনানী থানার ওসি ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার দিকে। 

“আমরা মোটামুটি নিশ্চিত, ঐ সময় খুনি সোনিয়ার ফ্ল্যাটেই ছিল…খুনটা করেছে এরপরই।” 

ঢোক গিলল হাসমত আলী। 

“এখান থেকে কী ধরে নেবো আমি?” 

“কিন্তু স্যার…বিশ্বাস করেন…” কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল থানার ওসি।

“আমার জায়গায় আপনি হলে কী মনে করতেন, বলুন?” 

মাথা নাড়লো ওসি হাসমত। “জি, স্যার…বুঝতে পারছি ঘটনা প্যাঁচ খাইয়া গেছে।” 

নিজের চেয়ারে হেলান দিলো জেফরি বেগ। “তাহলে সেই প্যাঁচটা এখন খুলে ফেলুন।” স্থিরচোখে সামনের লোকটার দিকে চেয়ে রইলো। এফবিআইয়ের লাই ডিটেক্টিং কোর্সটা করা আছে তার, মেশিন ছাড়াও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে বেশ ভালোভাবেই মিথ্যে ধরতে পারে। তার কেনজানি মনে হচ্ছে ওসি হাসমত এখন পর্যন্ত সত্যিই বলেছে। 

এমন সময় আরদার্লি দু কাপ কফি নিয়ে ঢুকলো। ছেলেটা চলে যাওয়ার পর একটা কাপ হাতে তুলে নিলো জেফরি, ওসিকে ইশারা করলো তারটার জন্য। 

“কফিটা নিন।” 

অগত্যা বিরসমুখে কফির কাপটা তুলে নিলো হাসমত আলী।

“আপনার কর্মকাণ্ড যে কারোর চোখেই সন্দেহজনক মনে হবে। পেট্রল- টিমটাকে ফিরে আসতে বললেন কেন? আপনি জানলেনই বা কেমন করে সোনিয়ার ফ্ল্যাটে খোঁজ নেবার জন্য একটা পেট্রল টিম গিয়েছে?” 

আবারো ঢোক গিলল অফিসার। “স্যার, গুলশান-বনানীর কোন বাড়িতে কোন ভিআইপি থাকে সেইটা জানা খুব মুশকিল। আমি ভাবছি, একটা ফোন পাইয়া অতো রাইতে ওই বিল্ডিংয়ে গিয়া ডিস্টার্ব করাটা ঠিক হইবো না…” 

দীর্ঘশ্বাস ফেলল জেফরি বেগ। ওসির ব্যাখ্যায় মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারছে না। “আপনি আপনার কথার ফাঁকফোকরটা ধরতে পারছেন না?” 

করুণ দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে রইলো হাসমত সাহেব। 

“অতো রাতে আপনি নিজের বাসায় বসে কিভাবে জানলেন আপনার থানার একটি টহল দল খোঁজ নিতে গেছে?!” 

ভারি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কফির কাপটা রেখে দিলো বনানী থানার ওসি। “আবু হাসান এমপি আমারে রাইতে ফোন দিছিল…উনি-ই আমারে বলছেন পেট্রল টিমটারে যেন চইল্যা যাইতে বলি।” 

যারপরনাই অবাক হলো জেফরি। “মাই গড! বলেন কী! ঐ লোক কিভাবে জানলো ওখানে লোকাল থানার পেট্রল টিম গেছে?” 

ওসি মাথা দোলালো। “না, স্যার। এমপি সাহেব তখন ঐ বিল্ডিংয়ে-ই আছিলেন!” 

নড়ে চড়ে বসলো জেফরি বেগ। 

অধ্যায় ২৬ 

কয়েক মুহূর্তের জন্য জেফরি বেগের মনে হলো, বিরাট বড় একটি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করছে সে! কিন্তু তখনও ওসি তার কনফেশন শেষ করেনি। বাকিটা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে রইলো। 

“উনি ওখানে ছিলেন মানে?” 

“রুজানা আপার ফ্ল্যাটে ছিলেন।” 

“হ্যাঁ, ঐ মহিলা আমাকে বলেছেন এমপি সাহেব তার কেমনজানি কাজিন হয়। কিন্তু উনি টহল টিমটাকে চলে যেতে বলেছিলেন কেন?” 

“বুঝলেন না, স্যার?” 

সত্যি বলতে জেফরির মাথায় ঢুকছে না ব্যাপারটা। 

গাল চুলকালো ওসি। “এমপিসাব মাঝেমইদ্যেই ওইখানে নাইট স্টে করেন।” 

তারপরও কথাটার মানে ধরতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো হোমিমসাইডের তুখোড় ইনভেস্টিগেটরের। রোগাপটকা এক স্বামী, জাঁদরেল তার স্ত্রী এবং প্রভাবশালী একজন এমপি-জম্পেশ কাহিনি। 

“বিল্ডিংয়ের সামনে পুলিশের গাড়ি আসতেই দারোয়ান ইন্টারকমে জানাইছিল রুজানা আপারে, এমপিসাব তখন তার সঙ্গেই ছিল।” 

“বুঝেছি,” মাথা নেড়ে সায় দিলো জেফরি। 

“টহল টিমের এএসআই সুজন বিল্ডিংয়ের দারোয়ানের লগেও কথা বলছিল, ওইখানকার কোনো ফ্ল্যাটে সমস্যা আছে কি না… দারোয়ান বলছে কোনো সমস্যা নাই। তারপরও আমার থানার ঐ অফিসার ভিতরে গিয়া চেক করতে চাইছিল কিন্তু গেট খোলে নাই…এরপরই আমারে ফোন দেয় এমপিসাব, আমি তখন পেট্রল টিমটারে ওইখান থিকা চইল্যা আসতে বলি।”

বিভ্রান্তকারী! মনে মনে বলল জেফরি বেগ। গভীর করে শ্বাস নিলো সে। অনেক সময়ই কাকতালীয়ভাবে এরকম দুটো ঘটনা ঘটে একই সঙ্গে কিংবা একই জায়গায়। আর সেটা যখন হয় তখন কেবলই কনফিউশন তৈরি হয়। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এমপি রাত্রিকালীন অভিসারে মত্ত ছিল, পুলিশের আগমণে নিশ্চয় ভড়কে গেছিল পুরোপুরি। 

চোরের মন পুলিশ পুলিশ! মুচকি হাসলো জেফরি। “এমপি সাহেব কি আপনাকে বলেছিলেন এই ঘটনাটার কথা কাউকে যেন না বলেন?” 

“জি, স্যার। বার বার বলছেন…সোনিয়ার ঘটনার কথা জানবার পর আবারো বলছেন আমি যেন সেইটা কাউরে না বলি।” 

মাথা নেড়ে সায় দিলো জেফরি বেগ। 

“বিশ্বাস করেন, যা কইতাছি সব সত্যি।” অবশেষে কফির কাপটা তুলে নিলো 

“ঠিক আছে, সেটা না হয় বিশ্বাস করলাম কিন্তু সোনিয়ার ঘটনাটাকে আপনি সুইসাইড হিসেবে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলেন কেন?” 

ওসি থতমত খেলো। 

“আমার ধারণা জাহান গ্রুপের কেউ আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল…আপনি কি এটা অস্বীকার করবেন?” 

কফিতে চুমুক দিতে গিয়ে থমকে গেল ওসি হাসমত। পোস্ট মর্টেমের ডাক্তারকে ঘুষ দিতে গিয়ে জাহান গ্রুপের একজন যে হাতে নাতে ধরা পড়েছে সে খবর জানা আছে তার। ভালো করেই জানে, এ কাজটা করেছে টেলিফোনে আড়ি পেতে। এই লোক কি তার ফোনটাও টেপ করেছে?! 

“ওরা যোগাযোগ করতেই পারে…” আস্তে করে বলল জেফরি। “..সেটাদোষের না, দোষ হবে যদি ওদের হয়ে কাজ করেন।” 

“স্যার, আমি ওগোর জন্য কিচ্ছু করি নাই, বিশ্বাস করেন।” জোর দিয়ে বলল বনানী থানার ওসি হাসমত। 

“কিন্তু ওরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তাই না?” 

ঢোক গিলে মাথা নাড়লো লোকটা। 

“কে করেছিল যোগাযোগ?” 

“ফারহান ওমর।”

“এই লোক কে?” 

“জাহান গ্রুপের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। 

“ওই লোক আপনাকে বলেছিল ঘটনাটা সুইসাইড হিসেবে দেখানোর জন্য?” 

মাথা দোলালো ওসি। “না, স্যার…এইটা বলে নাই।”

“তাহলে?” 

“আমারে বলছিল সোনিয়ার ফোন থিকা আলভী সাহেবের কল-টল আর মেসেজগুলা ডিলিট কইরা দিতে।” 

অবাক হলো হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর। এ কাজটা খুনি বেশ সফলভাবেই করেছে বলে তার ধারণা। সোনিয়ার ফোনে আলভীর কোনো কিছুই খুঁজে পায়নি সে। ফারহান ওমর সেটা জানতো না?! এটা কী করে সম্ভব! তাহলে কাজটা করিয়েছে কে? 

কারা! 

অধ্যায় ২৭ 

জেফরি বেগ জানে তাদেরকে সার্ভিলেন্স করা হচ্ছে। 

কোনো কথা না বলে চুপচাপ অপেক্ষা করছে সে। সহকারি ইনভেস্টিগেটর জামান দীর্ঘদিন ধরে তার সঙ্গে কাজ করতে করতে বুঝে গেছে কখন মুখ বন্ধ রাখতে হবে আর কখন খুলতে হবে। তাকে কিছু বলা না হলেও সে চুপ মেরে আছে। 

সোনিয়া হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত যেসব সাক্ষি-প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে করে সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ না করার কোনো কারণ নেই। এটা যদি জাহান গ্রুপের মতো বড় এবং ক্ষমতাবান প্রতিষ্ঠানের সিইও না হয়ে সাধারণ কোনো মানুষ হতো তাহলে যেটা করতো এখন সেটাই করছে। অন্যদের মতো জাহান গ্রুপের ক্ষমতা আর টাকার গরম আমলে নেবে না সে। তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে, এ দেশে এমন মানুষও আছে, এমন ডিপার্টমেন্টও আছে যারা তাদের ক্ষমতাকে আমলে না নিয়ে কাজ করে যেতে পারে। 

সত্যি বলতে তার এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে খোদ হোমিসাইডের লোকজনও চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। 

“ডিজি স্যারকে জানিয়েছেন?” বলেছিল অভিজ্ঞ রমিজ লস্কর। 

“হুম।” 

“এই দেশে এমন কোনো ম্যাজিস্ট্রেট আছে যে আলভীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে?” 

মুচকি হেসে বলেছিল সে, “আমি তাকে অ্যারেস্ট করতে যাচ্ছি না, শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এটা করতে ওয়ারেন্ট লাগে না।” 

জিভে কামড় দিয়েছিল রমিজ। “সরি, স্যার… আমার খেয়াল ছিল না।”

জেফরি বুঝতে পারছিল একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কতোটা সর্বগ্রাসী ক্ষমতা প্রদর্শন করলে দেশের প্রায় সব মানুষই তাদেরকে অপ্রতিরোধ্য ভাবে। জনগণকে অবশ্য দোষ দিয়ে লাভ নেই, এর মূল কারণ ক্ষমতার শীর্ষে বসে থাকা লোকগুলোর নতজানু মনোভাব। তারা দেখে মহাক্ষমতাধরেরাও এদের বিরুদ্ধে যায় না, যেতে সাহস দেখায় না। প্রকাশ্যে এমপি-মন্ত্রিদের ধমক দেয়, বড় বড় অপরাধ করার পরও পুলিশ তাদের কিছু করে না, আদালতও নিশ্চুপ থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের হয়ে কাজ করে-এসব দেখতে দেখতে স্বাভাবিকভাবেই জনগণও ওদেরকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভাবতে শুরু করে। 

“আপনি কি তাকে ডাকবেন এখানে?” জানতে চেয়েছিল জামান। 

“আমি তাকে একটু ছাড় দেবো, এখানে ডেকে না এনে নিজেই যাবো তার ওখানে।” 

জেফরি বেগ সেটাই করেছিল, ফোনে যোগাযোগ করে জাহান গ্রুপের সিইও”র সঙ্গে। তার পরিচয় পেয়ে আলভীর সেই লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের কাছে ফোনটা দেয়া হয়। সোনিয়ার কেস নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত আছে তারা, সুতরাং এটা অনুমেয়-ই ছিল। অ্যাডভাইজার ভদ্রলোক আগেই বুঝতে পেরেছিল তার বসকে সোনিয়া মার্ডার কেসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। 

“আপনার কাছে ওয়ারেন্ট আছে?” একেবারে জাত উকিলের মতোই জানতে চেয়েছিল তার কাছে। 

প্রশ্নটা শুনে মুচকি হেসেছিল জেফরি। “আপাতত আমি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছি, গ্রেফতার করতে না…এক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট দেখতে চাওয়াটা হাস্যকর।” 

সঙ্গত কারণেই লিগ্যাল অ্যাডভাইজার চুপ মেরে যায়। যেন ইঞ্জিনিয়ারের ভুল ধরে ফেলেছে মিস্ত্রিগোছের কেউ! 

“আইনজীবী হিসেবে আপনার এটা জানা উচিত তদন্তকারী কর্মকর্তা দরকারে যে কাউকে ইন্টেরোগেট করতে পারে,” লোকটাকে আরেকটু সবক দিয়েছিল সে। “এই পার্টিকুলার কেসে আলভী সাহেব শুধু আমার সাসপেক্টই নন, এই মামলারও একমাত্র আসামি। তাকে ইন্টেরোগেশন করার পূর্ণ ক্ষমতা এবং অধিকার আমার আছে।” 

“মি. আলভী একটা কাজে ঢাকার বাইরে আছেন,” অ্যাডভাইজার বলেছিল। “পরশু ফোন দিন, দেখি অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়া যায় কি না।”

কথাটা শুনে হেসেছিল জেফরি বেগ। “মি. অ্যাডভাইজার, আপনি আপনার বসকে এর চেয়ে ভালো পরামর্শ দিতে পারেন। উনাকে বলবেন, আজকাল-পরশু করে করে বেশি সময় নষ্ট করলে আমি সোজা প্রেস কনফারেন্স করে জানিয়ে দেবো, জাহান গ্রুপের আলভী সাহেব সোনিয়া হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন আসামি, তার নামে ভিক্টিমের বড় বোন মামলা করেছে আর সে হোমিসাইডের জিজ্ঞাসাবাদের হাত থেকে বাঁচতে চোরের মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছে।” ইচ্ছে করেই খোঁচাটা দিয়েছিল। “সেক্ষেত্রে আমি ওয়ারেন্ট জারি করবো…ইন্টারপোলেও রেড নোটিশ জারি করার ব্যবস্থা করবো।” 

“আপনি কি হুমকি দিচ্ছেন?” কাটাকাটাভাবে জানতে চেয়েছিল অ্যাডভাইজার ফারহান ওমর। 

“ওটা আমাদের কাজ না। আপনাকে শুধু জানিয়ে দিচ্ছি কোনটার পর কোনটা করা হবে।” 

“আচ্ছা!” তীর্যক স্বরে বলেছিল লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। “আপনার এই প্রেস কনফারেন্স কাভার করার মতো পত্রিকা-টিভি চ্যানেল এ দেশে কয়টা আছে?” 

লোকটার পুরো কথা শোনার জন্য চুপ মেরে ছিল জেফরি। 

“অনেকেই হয়তো তাদের এম্প্লয়ি পাঠাবে কিন্তু এডিটোরিয়াল বোর্ড কি লক্ষ-কোটি টাকার বিজ্ঞাপন হারাতে চাইবে?” জবাব না পেয়ে নিজেই আবার বলেছিল, “আই ডোন্ট থিঙ্ক সো। আর ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি করার কথা বলছেন? ওটা করার এক্তিয়ার আপনার না, হোমমিনিস্টারের…তাকে ম্যানেজ করা যাবে।” 

“আরে, আপনি কেন টিভি-চ্যানেল আর বড় বড় পত্রিকার কথা ভাবছেন? আমি তো নিউজ পোর্টাল আর ইউটিউব চ্যানেলগুলোর বাইরে কিছু ভাবছি না। আজকাল ছোটোখাটো নিউজ পোর্টাল, ফেসবুকই যথেষ্ট। সোনিয়ার মার্ডার কেসটা কিন্তু ওরাই ভাইরাল করেছিল,” একটু থেমে আবার বলে, “হোমমিনিস্টারকে আপনারা সামলাবেন কি সামলাবেন না সেটা আপনাদের সমস্যা। আমাকে সামলানোর চেষ্টাও করতে যাবেন না।” 

অ্যাডভাইজার চুপ মেরে ছিল কয়েক মুহূর্ত। 

“আমি জানি মি. আলভী আপনার সামনেই আছেন, উনাকে জানিয়ে দিন আগামিকাল সকাল দশটায় আমি উনার অফিসে আসছি, ঠিক আছে?” 

“ওয়েট অ্যা মিনিট,” লিগ্যাল অ্যাডভাইজার এরপর কলটা হোল্ড করে রাখে প্রায় পাঁচ মিনিট। 

জেফরি আশা করছিল এই সময়ের মধ্যে ভদ্রলোক নিশ্চয়ই তার কর্তাকে সুপরামর্শই দেবে। 

“অফিসে না, আপনি উনার বাসায় আসুন,” অ্যাডভাইজার ফিরে এসে বলেছিল তাকে। 

এখন জাহান গ্রুপের সিইও আলভী করিমের প্রাসাদোপম হোয়াইট প্যালেসের মেইন গেটের পাশে রিসেপশন রুমে বসে আছে সহকারি জামানকে নিয়ে। এখানে আসার পর দশ মিনিট অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছে না। রিসেপশনের লোকটা অনেক আগেই ইন্টারকমে তাদের আসার কথা জানিয়ে দিয়েছে ভেতরে। 

কিছুক্ষণ পর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার এলো সেখানে। লোকটার ঘাম ছুটে গেছে যেন, তবে সেটা এই গরমে সুট-টাই পরার কারণে নাকি কর্তাকে বোঝাতে গিয়ে, নিশ্চিত হতে পারলো না জেফরি। 

“স্যার একটা কাজে বিজি আছেন,” বলল অ্যাডভাইজার কিন্তু ভদ্রতাসূচক “সরি” শব্দটা ব্যবহার করলো না। সম্ভবত জাহান গ্রুপ এতটাই বড় যে তাদের কেউ সরি বলতে পারে না! “আরেকটু ওয়েট করতে হবে।” 

মুচকি হাসলো জেফরি। এটা হলো মাইন্ড গেম- কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে এগুলো বেশ চলে। হয়তো ডিপ্লোম্যাটদের কাছ থেকে রপ্ত করেছে। অপেক্ষায় রাখার মানে “তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো—এমন একটা বার্তা দেয়া। প্রকারান্তরে অবচেতন মনে প্রভাব ফেলে এটা। 

“আমি এখানে আর দশ মিনিট অপেক্ষা করবো, আপনি আমাদের দুজনের জন্য কফি দিতে বলুন, ঠিক আছে?” জেফরিও সামান্য কফি চাওয়ার মাধ্যমে প্রকারান্তরে কমান্ড করলো লোকটাকে মনস্তাত্বিক খেলা! 

লিগ্যাল অ্যাডভাইজার সম্ভবত বুঝতে পারলো, মুচকি হেসে মাথা নেড়ে সায় দিলো সে। “ঠিক আছে, কফি দিতে বলছি।” 

ভদ্রলোক ভেতরের বাড়িতে চলে যাবার কিছুক্ষণ পরই দু কাপ কফি নিয়ে এলো একজন। সেই কফিতে চুমুক দিয়ে প্রশংসায় ভুরু সামান্য কপালে উঠে গেল জেফরির। বেশ ভালোমানের কফি। অবশ্যই পৃথিবীর সেরা কোনো ব্র্যান্ডের হবে। এরা সম্ভবত দেশিয় কোনো কিছু ব্যবহার করে না। রিসেপশন রুমের দিকে তাকালো। ফ্লোর টাইল্স থেকে শুরু করে চেয়ার সোফা-সবই বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। দৃশ্যমান কোনো সিসিক্যাম নেই। কিন্তু সে জানে শব্দ এবং ছবি দুটোই রেকর্ড করা হচ্ছে, সার্ভিলেন্স করা হচ্ছে। দুদিকের কাচের দেয়ালটা বেশ পুরু। বুলেটপ্রুফ নয় অবশ্যই, তবে কোনো কিছু ছুঁড়ে মারলে সহজে ভাঙবেও না। 

তাদের কফি শেষ হবার একটু পরই লিগ্যাল অ্যাডভাইজার আবার হাজির হলো। “আপনি আসুন…একা।”

অবাক হলো হোমিসাইড ইনভেস্টিগেটর। “ও আমার সহকারি।”

“এখানকার সিকিউরিটি চিফ দুজনকে অ্যালাউ করছে না। এক্ষেত্রে আমার কিচ্ছু করার নেই,” দৃঢ়তার সঙ্গে বলল অ্যাডভাইজার। “আপনার আসটাও রেখে আসতে হবে, ওটা নিয়ে ভেতরে যেতে পারবেন না।”

একটু ভেবে নিলো জেফরি বেগ। চাইলে তর্ক করতে পারে এ নিয়ে কিন্তু বাকবিতণ্ডা করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার ইচ্ছে তার নেই। অগত্যা জামানের কাছে অস্ত্রটা রেখে সবুজ ঘাসের বিশাল লনটার ডানপাশে থাকা টাইল্স বিছানো রাস্তা দিয়ে চলে গেল প্যালেসের ভেতরে। 

প্রাসাদের ভেতরে ঢুকে আরেক বার অবাক হলো সে। এত জাঁকজমক, এত ব্যয়বহুল! পরক্ষণেই মনে পড়ে গেল, হাজার কোটি টাকার মালিকের প্রাসাদ, শতকোটির না হলে স্ট্যাটাস থাকে? এটা অবশ্যই অন্যসব ধনীদের কাছে প্রদর্শন করার জন্য করা হয়েছে। 

প্রাসাদের সদর দরজাটা কমপক্ষে বিশ ফুটের মতো চওড়া হবে। পুরোটাই সেগুন কাঠের আর তাতে সূক্ষ্ম নক্সা করা। সেই দরজা খুলে জেফরিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। 

হোয়াইট প্যালেসের বিশাল লিভিংরুমে রাজকীয় এক সোফায় চোখে সানগ্লাস পরে জাহান গ্রুপের আলভী করিম বসে আছে। সেই তুলনায় তার সামনের সোফাগুলো দেখতে একটু সাধারণ 

“স্যার, ইনি হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট থেকে এসেছেন। 

“আমি জেফরি বেগ, হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর,” নিজের পরিচয়টা দিলেও সব সময়ের মতো হাত বাড়ালো না। ভালো করেই জানে, আলভীর মতো ধনী কী করতে পারে বাড়িয়ে দেয়া হাত মেলাবে না সে। এই তাচ্ছিল্যটুকু করার মধ্য দিয়ে শুরুতেই বুঝিয়ে দেবে পরিস্থিতিটা কার নিয়ন্ত্রণে আছে। 

জেফরিকে সোফায় বসতে বলল না অ্যাডভাইজার, তবে সে অপেক্ষাও করলে না, বসে পড়লো আলভীর সামনের সোফায়। দুজনের মধ্যেকার দূরত্ব প্রায় দশ ফিটের মতো। 

“চিফ ইনভেস্টিগেটর?!” আলভী বলল আস্তে করে। “রাঙ্কটা কী?”

“অ্যাডিশনাল ডিআইজি।” 

তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো আলভী। “অ্যাডিশনাল! আমি ভাবলাম আরো বড় পদের কেউ!” 

গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো জেফরি বেগ। কাজের সূত্রে এ পর্যন্ত যতো বড়লোকের সঙ্গে মোলাকাত হয়েছে তাদের বেশিরভাগ শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছে কতোটা ছোটোলোক হতে পারে তারা। 

“আমি জান্নাতুল ফেরদৌস সোনিয়ার মার্ডার কেসটা তদন্ত করছি, কাজের কথায় চলে এলো সরাসরি। “এজাহারে আসামি হিসেবে আপনার নাম আছে।” জেফরি লক্ষ্য করলো আলভীর চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। “আপনিই এই কেসে একমাত্র আসামি … আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো এখন, ঠিক আছে?” 

নাকের পাটা ফুলে উঠল আলভীর করিমের। কাটাকাটাভাবে বলল, “বলুন।” 

“সোনিয়াকে আপনি কবে থেকে চিনতেন?” 

“মনে নাই,” চট করেই জবাব দিলো। “এত বেশি মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়…সবার কথা মনে থাকে না।” 

“একটু মনে করার চেষ্টা করুন। আনুমাণিক হলেও হবে। বছরখানেকের বেশি হবে কি?” 

বাঁকা হাসি দিলো আলভী। “হতে পারে।” 

“কোথায় কিভাবে পরিচয় হয়েছিল?” 

লম্বা করে শ্বাস নিয়ে নিলো জাহান গ্রুপের সিইও। “মনে নাই।”

“ওর সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা কী ছিল?” সরাসরিই বলল এবার, কোনো রকম ভণিতায় গেল না। 

 সানগ্লাসের আড়ালে জাহান গ্রুপের সিইও জেফরির দিকে স্থিরচোখে চেয়ে রইলো কয়েক মুহূর্ত। “ওকে আমি চিনতাম…আমার চেনা-জানা আর কী। মনে হয় সাহায্য-টাহায্য চাইতে এসেছিল…এরকম অনেকেই আসে আমর কাছে।” 

জেফরি বুঝতে পারলো লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের শিখিয়ে দেয়া বুলি কপচাচ্ছে লোকটা। ভদ্রলোক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। “আপনি তাহলে সাহায্য চাইতে এলে অভিজাত এলাকায় লাখ টাকার ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেন?” 

আলভীর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমন করলো সে। “ফালতু আলাপ বাদ দিয়ে দরকারি কথা বলেন। বিদেশ থেকে কিছু গেস্ট এসেছে, ওদের সঙ্গে মিটিং আছে একটা।”

সায় দিলো জেফরি। “ঠিক আছে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন সোনিয়ার পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বদলে দেবার জন্য ঘুষ দিতে গিয়ে আপনাদের ঘনিষ্ঠ এক লোককে হাতেনাতে ধরে ফেলেছি আমরা?” 

ভুরু কুঁচকে গেল আলভীর। “না, ওই লোককে চিনি না।”

মুচকি হাসলো জেফরি বেগ। “আমি তো নামই বলিনি… নাম বলার আগেই না চেনার কথা বলছেন কেন? আগে নামটা শুনুন?” 

কারো কাছে জব্দ হতে আলভীর ভালো লাগে না, মাথায় রক্ত চড়ে যায়। এখন সেটাই হয়েছে। যদিও লিগ্যাল অ্যাডভাইজার তাকে বার বার বলেছে রেগে গেলে হবে না, শান্ত থাকতে হবে। 

“লোকটার নাম আকবর হাসান, সে আপনাদের গ্রুপের একজন কর্মকর্তা।” 

“বললাম তো চিনি না!” চেঁচিয়ে বলল জাহান গ্রুপের সিইও। “আমাদের আন্ডারে কতো লোক কাজ করে আইডিয়া আছে আপনার?” 

“কয়েক হাজার?” 

“হ্যাঁ… হাজার হাজার লোক কাজ করে।”

“তাহলে ঐ আকবর হাসান আপনাদের গ্রুপেই কাজ করে?” 

“আমি জানি না, চিনিও না।” সাহায্যের জন্য লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ফারহান ওমরের দিকে তাকালো। 

“এ নামে আমাদের গ্রুপে কোনো এম্প্লয়ি নেই।” 

“শুনলেন তো?” 

মাথা নেড়ে সায় দিলো জেফরি। “কিন্তু আপনার সঙ্গে তার ছবি আছে, আপনার বাবার সঙ্গেও?” 

“মি. বেগ, “ লিগ্যাল অ্যাডভাইজার বলল। “উনাদের মতো বিরাট বড় শিল্পপতি, ব্যবসায়িদের সঙ্গে অনেকেই ছবি তোলে, এটা তো উনাদের অপরাধ হতে পারে না।”

“আমি অপরাধের কথা বলছি না, বলছি লোকটাকে চেনে কি না।” লিগ্যাল অ্যাডভাইজার চুপ মেরে গেল। 

“পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট মতে সোনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে,” বলল জেফরি। “হত্যার আগে ধর্ষণ করেছে খুনি।” 

আলভীর চোখের মণিদুটো অস্থির হয়ে উঠল কথাটা শোনার পর। লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ফারহান ওমরের দিকে তাকালো সে কিন্তু ভদ্রলোক অভিব্যক্তিহীন থাকার চেষ্টা করছে। 

“সোনিয়ার বোন মামলার এজাহারে বলেছে তার বোনের গর্ভে যে সন্তান সেটা মি. আলভী করিমের। উনি যদি এটা অস্বীকার করেন তাহলে বিষয়টা খতিয়ে দেখা হবে, উনার ডিএনএ-এর সঙ্গে ম্যাচ করানোর জন্য ব্লাড স্যাম্পল নেওয়া হবে।” 

“ওকে, অনেক হইছে!” রেগেমেগে উঠে দাঁড়ালো আলভী। “আপনি এখন আসতে পারেন।” সানগ্লাসটা এক ঝটকায় খুলে ফেলল। লাল টকটকে চোখে চেয়ে রইলো জেফরির দিকে। 

মনে মনে প্রমাদ গুনলো লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। সকাল সকাল কোকেন নিতে নিষেধ করেছিল আজ, সে কথা কানে তোলেনি। লাল টকটকে চোখ ঢেকে রাখার জন্য সানগ্লাস পরে থাকারও পরামর্শ দিয়েছিল, এখন সেটাও ভেস্তে দিয়েছে। 

“মি. আলভী, আমি একটা মার্ডার কেসের তদন্তের কাজে এসেছি, আপনার প্রাসাদে দাওয়াত খেতে আসিনি।” 

“উনার একটা ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে…” ফারহান ওমর বলল এবার। “আপনাকে আর সময় দেয়া সম্ভব নয়। আমাদের ল-ইয়ার আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনার প্রশ্নের আনুষ্ঠানিক জবাব দেবে।” 

“আমার ইন্টেরোগেশন এখনও শেষ হয়নি,” শান্ত কণ্ঠে বলল জেফরি বেগ। সন্দেহভাজনের অস্বাভাবিক লালচে চোখ দেখে অবাকই হলো। “আপনি বসুন।” 

আলভী আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারলো না। “মাদারচোদ! কত্তো বড় সাহস আমারে অর্ডার দেয়! বের হ আমার এইখান থেইকা! তোর ইন্টেরোগেশরে চোদার টাইম নাই আমার!” চলে যেতে উদ্যত হলো সে। 

“চুপচাপ সোফায় বসুন, মি. আলভী,” শক্ত করে বলল জেফরি বেগ, সেই সাথে নিজেকে শান্ত রাখারও চেষ্টা করলো। “আর দয়া করে অভদ্র আচরণ করবেন না। আপনার নোংরা শব্দগুলো কাছের লোকজনদের জন্য সেভ করে রাখুন।”

“তুই নিজেরে কী মনে করোস, বানচোদ?” আরো বেশি চটে গেল জাহান গ্রুপের সিইও। “ওঠ!” তুড়ি বাজালো সে। “বের হ এইখান থিকা!”

“আবারো বলছি, মুখ খারাপ করবেন না,” যথেষ্ট ধৈর্যের সঙ্গে বলল।

হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর। লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের দিকে তাকালো। লোকটা না পারছে আলভীকে কিছু বলতে না পারছে চুপ থাকতে। কেমন ছটফট করছে। দুর্জনের চাকরি করার দুর্ভোগ সম্ভবত এটাই। 

“আরে ব্যাটা, আমার প্যালেস থিকা বের হ তুই! কথা কানে যায় না?!” বিচ্ছিরিভাবে আলভীর মুখটা বিকৃত হয়ে গেল। থর থর করে কাঁপছে সে। 

জেফরি বেগ উঠে দাঁড়ালো আস্তে করে। 

“তোর বাপ হোমমিনিস্টারকে গিয়া বলবি আমি তোরে ঘাড় ধাক্কা দিয়া বাইর কইরা দিছি…কোন বালটা ফালায় দেখুম!” এবার জেফরির খুব কাছে এসে পড়লো। তার ভাবভঙ্গি মারমুখি। 

“হোমমিনিস্টার আমার বেবি সিটার নন, তার কাছে গিয়ে নালিশ করবো কেন? আপনি আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে আমি নিজেই সেটা সামাল দিতে পারবো।” 

“কী সামলাবি তুই, অ্যাঁ?” আগ্রাসি ভঙ্গিতে জেফরির দিকে তেড়ে গেল এবার। 

“আবারো বলছি, মুখ খারাপ করবেন না। চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসুন, আমার কাজ এখনও শেষ হয়নি।” 

“বানচোদ!” আকাশ থেকে পড়লো যেন। “তোর কত্তো বড় সাহস! তোর বাপ হোমমিনিস্টারও তো আমার সঙ্গে এইভাবে কথা বলে না!” 

“হোমমিনিস্টার আপনার সঙ্গে কীভাবে কথা বলেন সেটা আমাকে বলার দরকার নেই। ধরে নিচ্ছি আপনাদের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে কিন্তু তিনি ঠিক করে দেন না কোন কেসের তদন্ত কিভাবে করতে হবে! আমি স্রেফ খুঁজে বের করি খুনটা কে করলো, তারপর খুনিকে পাকড়াও করি। সেই খুনি যতো বড়ই হোক না কেন, আমার কিছু করার নাই,” এক নিশ্বাসে বলে গেল সে। “আর একটা কথা মনে রাখবেন, আমি আপনার কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেইনি, আমার সঙ্গে কথা বলার সময় এটা মাথায় রাখবেন।” 

জেফরি বেগ দেখলো লিগ্যাল অ্যাডভাইজার মহা ফাঁপড়ে পড়ে গেছে, সে মৃদু বাধা দিতে গেল আলভীকে, অমনি চোখ কটমট করে বলল, “চুপচাপ এইখানে দাঁড়ায়া থাকেন! কোনো কথা বলবেন না!” তারপর জেফরির দিকে ফিরলো। “শোন, মাদারচোদ, আমারে লেকচার দিবি না! আমি লেকচার শুনি না, দেই! লেকচার চোদাবি তো চড়ায়া তোর সব কয়টা দাঁত ফালায়া দিমু!” জেফরির গালের সামনে হাতটা এনে বলল। “আমার হাতে থাপ্পড় খাওনের আগে চুপচাপ এখান থেইকা চইলা যা!” 

রাগের চোটে আলভীর প্রমিত বাংলা বাষ্পীভূত হয়ে গেছে পুরোপুরি।

এমন আগ্রাসি আচরণেও জেফরি বেগ নির্বিকার থাকার চেষ্টা করলো। “আপনার কি ধারণা, আমাকে থাপ্পর দিলে আমি চুপচাপ হজম করবো? মাথা নিচু করে এখান থেকে চলে যাবো?” 

“মাদার চোদ!” আলভী এমন জবাব আশা করেনি, রেগেমেগে জেফরির গালে থাপ্পড় মারতে উদ্যত হলো, আর তখনই বাঁ-হাতটা সামনে বাড়িয়ে অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ ঘুরিয়ে ব্লক করলো প্রথমে, সঙ্গে সঙ্গে কব্জিটা ধরে একটা মোচড় মারলো। 

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উন্মাদের মতো হয়ে গেল আলভী, বাঁ-হাত দিয়ে মারার চেষ্টা করলো এবার। কিন্তু উদ্যত সেই হাতটাও ধরে ফেলল জেফরি বেগ, তারপর স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ায় একটা চড় মেরে বসলো আগ্রাসি লোকটার গালে! 

লিগ্যাল অ্যাডভাইজার বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইলো, নড়াচড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে যেন। 

চড় খেয়ে কয়েক মুহূর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গেল আলভী। রাগে থর থর করে কাঁপতে লাগলো সে। “ফকিন্নির পুত! দুই পয়সার পুলিশ! তোর কত্তো বড় সাহস!” অ্যাডভাইজার সম্বিত ফিরে পেয়ে তাকে ধরতে গেলে লোকটাকে ধাক্কা মেরে চিৎকার করে বলল, “সের্গেই! বোগদান!” 

জেফরি বেগ অবাক হলো। কাকে ডাকছে এই লোক?! এরপরই দেখতে পেলো বিরাটাকায় দুই শ্বেতাঙ্গ বডিগার্ড অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে হাজির। 

“শুট হিম!” রেগেমেগে হুকুম করলো তাদেরকে। 

গার্ড দুজন বুঝতে না পেরে একটু ইতস্তত করলো, একে অন্যের দিকে তাকালো তারা। 

“শুট হিম!” আবারো গর্জে উঠল আলভী। “রাইট নাও!” 

গার্ডদের একজন দ্বিধার সঙ্গে রাইফেলটা তাক্ করলো জেফরির বুক বরাবর। 

“কিল হিম লাইক অ্যা ডগ! আই সে কিল হিম!” প্রায় উন্মাদগ্রস্ত হয়ে গেছে আলভী। 

নিরস্ত্র অবস্থায় সে বিদেশি বডিগার্ডের দিকে চেয়ে রইলো একদৃষ্টিতে। 

অধ্যায় ২৮ 

এভাবে কাচের ঘরে বসে থাকতে জামানের একটুও ভালো লাগছে না। ঘরটা অনেক বেশি জমকালো, অনেক বেশি দমবন্ধকর, যেন চারপাশ থেকে চেপে ধরে আছে! 

আধুনিক। ব্যয়বহুল। কিন্তু মোটেও অভ্যর্থনা জানায় না। অথচ এই প্রাসাদে ঢোকার মুখেই এটা। এখানে যারা আসে তাদেরকে প্রথমে এই ঘরেই বসতে হয়। যে আর্কিটেক্ট ডিজাইন করেছ সে সম্ভবত এই ব্যাপারটা বাদে বাকি সবকিছুই মাথায় রেখেছিল। 

পরক্ষণেই ভুল ভাঙলো তার। এই ঘরটা হোমড়া চোমড়াদের জন্য বানানো হয়নি, বানানো হয়েছে স্বল্পপরিচিত কিংবা বহিরাগতদের জন্য। এই প্রাসাদের মালিকের ঘনিষ্ঠ যারা এখানে আসে তাদেরকে সরাসরিই প্রাসাদের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। হয়তো রাঘব বোয়াল হলে প্রাসাদের “রাজা” স্বয়ং মেইনগেটের সামনে এসে হাসিমুখে অভ্যর্থনাও জানায়। 

সত্যি বলতে জামানের আসলে আরেক কাপ কফি খেতে ইচ্ছে করছে। এমনিতেই এরা সাধারণ মানুষজনকে ছোটোলোক ভাবে, দ্বিতীয় বারের মতো কফি চাইলে নির্ঘাত ফকিন্নি ভাববে তাকে। অগত্যা পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফেসবুকে ঢুঁ মেরে বিরক্তিকর সময়টা পার করতে চাইলো। যতোই সমালোচনা হোক, ফেসবুক আর ইউটিউব হলো সময় কাটানোর সবচেয়ে সহজ উপায়। 

সময় নষ্ট আসলে! 

মুচকি হেসে এই বিশাল চিড়িয়াখানায় কে কোন বাঁদরামি করছে দেখতে লাগলো স্ক্রল করে করে। বাইরে থেকে এক কর্মচারি এসে রিসেপশনে একটা পার্সেল দিয়ে গেল এ সময়। লোকটা কাচের দরজা খুলে বের হয়ে গেল। অটোমেটিক ডোর ক্লোজারটা খুব বেশি ধীরগতির এবং স্মুদ। অনেকটা স্লো-মোশনে বন্ধ হচ্ছে সেটা। পুরোপুরি বন্ধ হবার আগেই বাইরে থেকে একটা গুলির শব্দ শোনা গেল! 

নড়েচড়ে উঠল জামান। কী হয়েছে বুঝতে পারলো না। গুলির শব্দটা যে প্রাসাদের ভেতর থেকে এসেছে এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত। রিসেপশনিস্ট ছেলেটার দিকে চোখ গেল, গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। অজ্ঞাত ভয় আর আতঙ্ক তার চোখেমুখে। 

“এটা কী হলো?” জানতে চাইলো জামান। “ভেতর থেকে গুলির শব্দ হয়েছে…ঘটনা কী?” উত্তেজনার চোটে উঠে দাঁড়ালো। 

“বুঝতে পারছি না…” অপারগতা জানালো রিসেপশনিস্ট। 

“ইন্টারকম তো আছেই, ভেতরের কারোর কাছ থেকে জেনে নিন কী হয়েছে!” উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল হোমিসাইডের সহকারি ইনভেস্টিগেটর। 

একটু দ্বিধা থাকলেও ইন্টারকমটা তুলে নিলো রিসেপশনিস্ট। কানে রিসিভারটা চাপতেই অবাক হয়ে তাকালো সে। 

“কী হয়েছে?!” 

“লাইন তো দেখি ডেড!” 

“বলেন কী!” অজানা আশঙ্কায় ছটফট করতে লাগলো জামান। কাচের দরজাটার কাছে দৌড়ে গেল কিন্তু আশ্চর্য হয়েই দেখলো ওটা লক্ড হয়ে আছে, অথচ একটু আগে এক লোক বের হয়ে গেছে এটা খুলে। “দরজা বন্ধ করলো কে?!” চেঁচিয়ে বলল। 

“ওটা সিকিউরিটি থেকে লক করা যায়,” ঢোক গিলে বলল রিসেপশনিস্ট। 

“সিকিউরিটি মানে?” ভুরু কুঁচকে গেল তার 

“সিকিউরিটি সিস্টেম থেকে অপারেটর বন্ধ করতে পারে।” 

বুঝতে পারলো জামান আর সেটা তাকে আরো বেশি চিন্তায় ফেলে দিলো। কাচের দেয়াল দিয়ে বাইরের লন আর প্রাসাদের দিকে তাকালো। পুরো প্যালেসে চাপা আতঙ্ক। লনের উপর দিয়ে সুট-টাই পরা এক লোককে হন হন করে প্রাসাদের দিকে এগিয়ে যেতে দেখলো। মেইন গেটের সামনে যে দুজন সিকিউরিটি আছে তারা কিছু বুঝতে না পেরে প্রাসাদের দিকে বার বার তাকাচ্ছে, নিচু কণ্ঠে কথা বলছে। 

“আপনি বসুন।” 

জামান ফিরে তাকালো ডেস্কের দিকে। রিসেপশনের লোকটাও দাঁড়িয়ে পড়েছে। “বসবো মানে?!” রেগেমেগে বলল। “ভেতরে গুলি হয়েছে, আমার স্যার আছেন ওখানে…আমি হাত-পা গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকবো?!” 

রিসেপশনিস্টের মুখে কোনো রা নেই। 

কিছু একটা করতে হবে তাকে কিন্তু কী করবে বুঝতে পারছে না। তাকে একটা কাচের খাঁচায় রীতিমতো বন্দি করে ফেলা হয়েছে। ভেতরে কোথাও থেকে সিকিউরিটির লোকজন এই ঘরের দরজা লক করে ফেলেছে গুলির শব্দ হবার পর পর। তার কাছে দুটো পিস্তল আছে, একটা জেফরি বেগের, অন্যটা তার নিজের। দুটোই কোমরে গুঁজে রেখেছে। কিন্তু পিস্তল দিয়ে কী করবে সে? গুলি করে কাচের দরজা ভেঙে বাইরে যাবে? সশস্ত্ৰ সিকিউরিটিদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ করবে সিনেমার মতোন? সেটা যদি করেও তারপর কী করবে? প্রাসাদের বিশাল দরজাটাও নিশ্চয় ভেতর থেকে লক করা? 

সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলো এ মুহূর্তে সবার আগে ব্যাপারটা জানানো দরকার। পকেট থেকে ফোন বের করে হোমিসাইডে কল দিলো জামান। একেবারে সরাসরি ফারুক স্যারকেই! সাধারণত তার মতো অধস্তনরা কখনও এ কাজটা করেনি এর আগে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে এটা না করেও উপায় নেই। 

“বাল!” রেগেমেগে বলল সে। ডিজি স্যারের ফোনটা এনগেজ্ড। “আপনি শান্ত হয়ে বসুন, প্লিজ,” রিসেপশনিস্ট তাকে অনুরোধের সুরে বলল। 

“আপনি বসুন! ভেতরে আমার স্যার…গুলির আওয়াজ পেয়েছি… কাহিনি কী জানতে হবে না?! বসে বসে আঙুল চুষবো?” 

লোকটা কোনো জবাব দিলো না। 

পর পর দু বার এনগেজ্ড পেয়ে রমিজ লস্করকে ফোন দিলো সে। কলটা রিসিভ হতেই হর বর করে বলল, “ভাই, জেফরি স্যার আর আমি আলভীর বাসায় আসছি, স্যার ভিতরে ঢোকার পর গুলির শব্দ হয়েছে…আমার মনে হয় খারাপ কিছু হয়েছে!” 

“সর্বনাশ!” রমিজ লস্কর বলল ওপাশ থেকে। 

“ফারুক স্যারকে কল দিয়েছিলাম…এনগেজড! আপনি স্যারকে গিয়ে বলেন, কিছু একটা করতে হবে নইলে…” 

“লাইনে থাকো আমি স্যারের রুমে যাচ্ছি…” 

জামান উদগ্রীব হয়ে কানে ফোন চেপে রাখলো। সে শুনতে পাচ্ছে করিডোর দিয়ে রমিজ লস্কর ছুটে যাচ্ছে ডিজি স্যারের রুমের দিকে। দরজায় টোকা দিলো। একটু পর ভেতর থেকে ফারুক স্যার বলল “ভেতরে আসো”…তারপরই রমিজের উদ্বিগ্ন কণ্ঠটা শোনা গেল : “স্যার, জামান আপনাকে ফোন দিয়েছিল…এনগেজড পাচ্ছে…” 

“একটা কলে ছিলাম, কী হয়েছে?” ফারুক আহমেদও উদ্বিগ্ন স্বরে জানতে চাইলো। 

“আলভীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য বেগ স্যার জামানকে নিয়ে জাহান সিটিতে গেছে…জামান বলছে ওখানে একটা খারাপ ঘটনা ঘটে গেছে…এই নিন, কথা বলুন ওর সঙ্গে…লাইনে আছে…” 

“বলো কি!” আতঙ্কিত কণ্ঠ ডিজি স্যারের। “হ্যালো, জামান… কী হয়েছে?” 

“বেগ স্যার প্যালেসের ভিতরে ঢোকার একটু পর গুলির শব্দ হয়েছে ভেতর থেকে…এখানে ফোর্স পাঠান! স্যারের সঙ্গে খারাপ কিছু হয়ে গেছে, আমি শিওর!” 

“মাই গড! তুমি কোথায়?” 

“স্যার, আমি রিসেপশন রুমে…আমাকে আটকে রাখা হয়েছে। জলদি ফোর্স পাঠান! নইলে “ জামান আর বলতে পারলো না, ছোঁ মেরে তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো কেউ, চেয়ে দেখলো পেটানো শরীরের তিন- চারজন অস্ত্রধারী কখন যে কাচের দরজা খুলে রুমের ভেতরে ঢুকে পড়েছে, খেয়ালই করেনি। 

“চুপচাপ বসে থাকুন!” ফোনের কলটা কেটে দিয়ে পকেটে ভরে রাখলো সেই লোক। 

“স্যারের কী হয়েছে? আপনারা তার কী করেছেন?” অসহায়ের মতো বলল হোমিসাইডের সহকারি ইনভেস্টিগেটর। 

“বললাম তো, চুপচাপ বসে থাকুন…সময় হলেই জানতে পারবেন।”

অমনি আরেকজন গার্ড এসে জামানকে অস্ত্রের মুখে হুকুম করলো : “হাত তুলুন মাথার উপরে!” 

ভ্যাবাচ্যাকা খেলো জামান। 

“হাত তুলুন!” আবারো নির্দেশ দিলো তাকে। 

বাধ্য হয়ে হাত তুলল জেফরি বেগের সহচর। সঙ্গে সঙ্গে তৃতীয় গার্ড তার কোমর আর হোলস্টার থেকে পিস্তল দুটো নিয়ে নিলো। জামান কিছুই বুঝতে পারলো না, শুধু বুঝতে পারলো খারাপ কিছু হয়ে গেছে! নিজেকে আর কখনও এতটা অসহায় লাগেনি তার। দুচোখ ঠেলে কান্না বেরিয়ে এলো। 

অধ্যায় ২৯ 

একটা গুলি কাঁপিয়ে দিয়েছে হোয়াইট প্যালেসের বিশাল আকারের হলরুমটি। 

গুলি হবার আগে জেফরি বেগ যে বিদেশি বডিগার্ডের চোখে চোখ রেখে চেয়ে ছিল সেটা মোটেও বিস্ময় থেকে নয়। যন্ত্রের মতো নিরেট চোখদুটোতে কোনো অভিব্যক্তি দেখতে পায়নি সে। 

নাম শুনে আর চেহারা-সুরুত দেখে বুঝতে পেরেছিল ওরা সম্ভবত রাশান। এ দেশে এরকম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিদেশি দেহরক্ষি রাখার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এটা জাহান গ্রুপ, রাষ্ট্রের শত শত আইন ভেঙেই আজ তারা হাজার কোটি টাকার মালিক। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনযুগ পার করে দিয়েছে যারা তাদের কাছে এরকম বেআইনি কাজ করা মামুলি ব্যাপার। 

জেফরির সঙ্গে অস্ত্র নেই কিন্তু ওটা রিসেপশনে রেখে আসার জন্য তার মধ্যে যে অনুশোচনা তৈরি হয়েছিল এখন আর সেটা নেই। বরং অস্ত্রটা সঙ্গে থাকলে বিপদ বাড়তো বৈ কমতো না। ভালো করেই জানে, তখন খুব সহজেই একটা নাটক তৈরি করা যেতো-অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল সে, মারমুখি হয়ে এক পর্যায়ে আলভীকে গুলি করতে গেলে তার দেহরক্ষিরা তাকে নিরস্ত করার জন্য গুলি করতে বাধ্য হয়। 

পরিস্থিতিটা এমনই, বিদেশি দেহরক্ষির চোখে চোখ রাখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। এফবিআই”র কমব্যাট ট্রেইনিং থেকে জানে আক্রমণকারীর অস্ত্রের দিকে নয়, তার চোখের দিকে তাকাতে হয়। আর সেটাই করেছিল সে। মনে মনে একটা কামনাই করেছিল তখন, এরা যেন মার্সিনারি না হয়ে পেশাদার বডিগার্ড হয়! 

বোগদান নামের শ্বেতাঙ্গ দেহরক্ষিটি তার নিয়োগকর্তার হুকুম শুনেও ট্রিগারে আঙুল চাপতে দ্বিধান্বিত ছিল। দেহরক্ষি হিসেবে তার কাছে এটা ঠাণ্ডা মাথায় খুন করার-ই শামিল। যাকে রক্ষা করার জন্য তারা কাজ করে তার জন্য জেফরি বেগ মোটেও কোনো হুমকি ছিল না। সে নিরস্ত্র একজন। এরকম কাউকে গুলি করার কোনো যুক্তি খুঁজে পায়নি। 

“শুট হিম!” উন্মাদগ্রস্তের মতো চিৎকার করে বলেছিল আলভী। 

বোগদান অসহায়ের মতো তাকিয়েছিল সের্গেই নামের সহযোগির দিকে, সে-ও ব্যাপারটা পছন্দ করছিল না। 

আলভী বুঝতে পারে তার হুকুম তামিল করা হচ্ছে না। রেগেমেগে সে অস্ত্রটা চায় এবার। “গিভ ইট টু মি! গিভ মি ইওর ফাকিং গান!” দাঁতে দাঁত পিষে বলে শেষ কথাটা। 

বোগদান যখন সেটাও করছিল না তখন আলভী অস্ত্রটা কেড়ে নিতে উদ্যত হয়। 

“স্যার, প্লিজ!” এরপর ভাঙা ইংরেজিতে বোগদান বলেছিল, “দিস ম্যান আনআর্মড…সি নো থ্রেট।” 

“শা-ট-আ-প!” চিৎকার দিয়ে বলেছিল জাহান গ্রুপের সিইও। 

“নো, স্যার!” অপর দেহরক্ষি সের্গেই মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছিল তখন। 

“শাটআপ!” তাকেও রেগেমেগে ধমক দেয় আলভী। “গিভ ইট টু মি!” রীতিমতো অস্ত্রটা কেড়ে নিতে উদ্যত হয় বোগদানের হাত থেকে। “গিভ ইট টু মি!” আবারো চেঁচিয়ে বলে। 

দৃশ্যটা দেখে জেফরি বেগের শিরদাড়া বেয়ে শীতল একটি প্রবাহ বয়ে গেছিল। দেহরক্ষিদের বেলায় তার মনের একটা অংশ বলছিল, নিরস্ত্র কাউকে গুলি করবে না কিন্তু আলভীর বেলায় সেটা ভাবার উপায় নেই। এই মাথা গরম লোক অস্ত্র হাতে পেলে কী করবে ভালো করেই জানতো। সেজন্যে চট করেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। 

বোগদান তার নিয়োগকর্তাকে সর্বশক্তি দিয়ে বাধা দিতে পারেনি, আলভী তার হাত থেকে রাইফেলটা রীতিমতো কেড়ে নিয়ে নেয়। 

জেফরি বেগ আর দেরি করেনি, তার দিকে অস্ত্রটা তাক্ করার আগেই দ্রুত কয়েক পা এগিয়ে যায়, বাঁ-হাতটা অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ ঘুরিয়ে রাইফেলের নলটা ধরে ফেলে, সঙ্গে সঙ্গে একটা গুলি প্রকম্পিত করে হলরুম। 

গুলিটা দরজার কাছে ফ্লোরে লেগে ঘ্যাচাং করে একটা শব্দ সৃষ্টি করে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আলভী। এই সুযোগে একটা মোচড় মেরে তার হাত থেকে অস্ত্রটা ছিনিয়ে নেয়। বাঁ-চোখের কোণ দিয়ে দেখতে পেয়েছিল আরেক বডিগার্ড সের্গেই সতর্ক হয়ে গেছে, মনিবকে রক্ষা করার জন্য তার দিকে তাক্ করে ফেলেছে অস্ত্রটা। জেফরি বেগ জানতো প্রশিক্ষিত দেহরক্ষি হিসেবে খুব বেশি সময় নেবে না গুলি করতে, সেজন্যেই রাইফেলটা মিরর পলিশ টাইসের উপর ছুঁড়ে মারে, অস্ত্রটা গড়িয়ে মেইন গেটের কাছে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে জেফরি বেগ দু হাত মাথার উপরে তুলে পরিষ্কার একটা বার্তা দিয়ে দেয় সের্গেইকে : তার দিক থেকে কোনো হুমকি নেই। 

“গাভোনো!” মাতৃভাষায় বলে ওঠে বোগদান। প্রচণ্ড রাগে চেয়ে থাকে নিয়োগকর্তার দিকে। 

সের্গেইরও একই অবস্থা। সে অস্ত্রটা নামিয়ে রাখে রেগেমেগে। কিন্তু আলভী তখন উন্মাদগ্রস্ত একজন। দাঁতমুখ খিঁচে চিৎকার দিয়ে রাইফেলটা কুড়িয়ে আনতে উদ্যত হলে বোগদান তার আগেই দৌড়ে গিয়ে অস্ত্রটা ফ্লোর থেকে তুলে নেয়। 

রেগেমেগে জাহান গ্রুপের সিইও তেড়ে আসে বোগদানের দিকে আর তখনই একটা কণ্ঠ বলে ওঠে : “প্লিজ স্যার!” 

জেফরি বেগ দেখে দেশিয় একজন এগিয়ে আসছে তাদের দিকে। লোকটাকে দেখে যারপরনাই অবাক হয়। 

এই লোককে সে চেনে! 

লোকটার দিকে রেগেমেগে তাকায় জাহান গ্রুপের সিইও। “আপনি জানেন এই বানচোদটা কী করছে?!” চিৎকার করে বলে। “ও আমারে…!” কথাটা আর শেষ করতে পারে না, রাগে থর থর করে কাঁপতে থাকে। 

“জানি, স্যার কিন্তু আপনি এটা করতে পারেন না,” লোকটা শান্তকণ্ঠে বলেছিল। 

“কী করা যাবে না যাবে আপনি ঠিক কইরা দিবেন?!” চেঁচিয়ে বলে আলভী। 

“আপনার নিরাপত্তার ব্যাপার হলে আমার কথাই ফাইনাল, স্যার।” 

“দেন ইউ আর ফায়ার্ড! রাইট নাও!” 

শান্তভাবে গভীর করে শ্বাস নিয়ে নেয় লোকটা। তাকে দেখে মনে হয়েছিল সে এরকম কথা শুনে অভ্যস্ত। “ওরা আমার আন্ডারে কাজ করে, আমি ফায়ার্ড মানে ওরা-ও ফায়াড়।” একটু থেমে আবার বলেছিল, “আপনার জন্য হুমকি না হলে কাউকে গুলি করবে না ওরা।” 

“বাল!” উদভ্রান্তের মতো বলেছিল আলভী। 

“আপনি ওদেরকে অর্ডার দিতে পারেন না। আপনাকে রক্ষা করার জন্য কী করতে হবে না হবে সেটা ওরা ভালো করেই জানে। ওরা মার্সিনারি না, স্যার।” 

বিস্ফারিত চোখে তাকায় আলভী। তারপর অধৈর্য হয়ে বলেছিল, “আরে রাখেন আপনার লেকচার!” 

গভীর করে শ্বাস নিয়ে নেয় লোকটা। “আপনি বড় স্যারের সঙ্গে কথা বলুন, প্লিজ।” 

যারপর নাই অবাক হয়েছিল জাহান গ্রুপের সিইও। 

“এ ব্যাপারে উনি আমাকে স্পেশাল ইন্সট্রাকশন দিয়েছেন, “ কথাটা বলেই বিদেশি গার্ডদের ইশারা করে ঘর থেকে চলে যেতে। গার্ড দুজন সুবোধ বালকের মতো চলে যায় সেখান থেকে। এরপর অ্যাডভাইজারকে ইশারা করে সে। “উনাকে ভেতরে নিয়ে যান।” 

“স্যার, আসুন?” লিগ্যাল অ্যাডভাইজার মৃদূ কণ্ঠে বলে। 

লাল টকটকে চোখে তাকায় আলভী। 

“প্লিজ, স্যার…আপনি ভেতরে যান, আমি দেখছি এদিকটা,” আবারো বলে চিফ সিকিউরিটি অফিসার। তারপর জেফরিকে বলে, “আমার সঙ্গে আসুন, স্যার।” 

অপার বিস্ময় নিয়ে তাকায় আলভী। “স্যার বলতাছে বানচোদটারে?!”

সিকিউরিটি চিফ কথাটা আমলে নেয়নি, হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটরকে নিয়ে মেইন দরজার দিকে এগিয়ে যায়। 

এদিকে ধাতস্থ হতে সময় নিয়েছিল জেফরি বেগ। একটু আগে তার সঙ্গে যা হয়েছে সেটা পুরোপুরি হতবিহ্বল করে ফেলেছিল তাকে। আপাতত এখান থেকে বের হতে হবে, তারপর বাকিটা দেখবে সে। 

এখন দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালো তারা। 

“আমাকে চিনতে পেরেছেন, স্যার?” 

চট করেই নামটা মনে পড়ে গেল জেফরির। “তুমি কায়সার না?!” অবাক হলো খুব। 

“জি, স্যার…চিনতে পেরেছেন তাহলে। অনেকদিন পর দেখা, একটুও বদলাননি আপনি।” 

“তুমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছো?” প্রশংসাটা এড়িয়ে জানতে চাইলো। পুলিশে যখন ঢুকেছিল তখন এই ছেলে তার দুই বছরের জুনিয়র ছিল। এরকম মেধাবী অফিসারের তো চাকরি ছাড়ার কোনো কারণ নেই। 

“জি, স্যার, একটু থেমে আবার বলল, “ভাগ্যিস আমি ছিলাম এখানে!”

জেফরির বলা উচিত থ্যাঙ্কস কিন্তু সে কিছুই বলল না। যে ঘটনা ঘটে গেছে সেটা তাকে একেবারে নাড়িয়ে দিয়েছে। এক সন্দেহভাজন আসামি হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটরকে নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছিল! পুরো ব্যাপারটা এখনও তার কাছে পরাবাস্তব বলে মনে হচ্ছে। 

“চাকরি ছাড়লে কেন?” প্রসঙ্গ পাল্টে জানতে চাইলো কায়সারের কাছে।

“আসলে সরকারি চাকরি করলে ঘুষ না খেলে বিরাট সমস্যা।” 

সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর। 

“আপনার হিসেব আলাদা… বিয়ে করেননি, কোনো পিছুটান নেই। কিন্তু আমার নিজের পরিবার আছে, যে বেতন পেতাম সেটা যথেষ্ট ছিল না। 

গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো জেফরি। 

“রিটায়ার্ডের পর ঢাকায় থাকতে পারবো না, বাড়ি-গাড়ি তো দূরের কথা। আবার চাকরি করতে হবে প্রাইভেট কোনো ফার্মে কিন্তু এখানে দশ বছর চাকরি করেই ওসব হয়ে গেছে আমার।” 

“বাড়ি-গাড়ি সব?” 

মুচকি হাসলো কায়সার। “জি, স্যার। জাহান সিটিতে আমার পাঁচ কাঠার প্লট আছে, গাড়িও আছে। সেই প্লটে বিল্ডিং উঠছে এখন।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলল জেফরি। “এরকম ম্যানিয়াককে সার্ভ করার চেয়ে ঘুষ খাওয়াটাকে আমি কম অপরাধ মনে করি।” 

লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখলো সাবেক পুলিশ অফিসার। “এখানে আমি খারাপ কিছু করি না, স্যার। বলতে পারেন খারাপ কিছু মানুষকে সিকিউরিটি দেই, আর মাঝেমধ্যে নিরপরাধ লোকজনকে তার হাত থেকে বাঁচাতেও পারি।” 

“একটু আগে আমাকে যেভাবে বাঁচালে?” বাঁকাহাসি দিয়ে বলল হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর। 

সিকিউরিটি চিফ কায়সার বিনয়ী হাসি দিলো। “আমি আরেকটু দেরি করলে অঘটন ঘটে যেতে পারতো।” 

গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো জেফরি বেগ। সিদ্ধান্ত নিতে সামান্য দেরি করলে আজ সে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো না। তারপরই মনে পড়ে গেল ওকে একটা ধন্যবাদ দেয়া উচিত। “থ্যাঙ্ক ইউ, কায়সার।”

“এভাবে বলবেন না, স্যার, “ লজ্জা পেলো খুব। “যা ঘটে গেছে তার জন্য আমি খুবই লজ্জিত।” 

“ঐ লোক কী ভেবেছে, এভাবে আমাকে খুন করলে সে পার পেয়ে যেতো?” 

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা দোলালো কায়সার। “সত্যি বলতে, কিচ্ছু হতো না তার।” কথাটা বলে দূরে, কাচের ওয়েটিং রুমে বসে থাকা জামানের দিকে তাকালো। “এমন কি ঐ ছেলেটাও বেঘোরে মরতো।” 

বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকালো জেফরি বেগ। রিসেপশন রুমের কাচের দেয়ালের ওপাশে জামানকে দেখতে পেলো। মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছে, তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুজন সশস্ত্র সিকিউরিটি। 

“ওরা প্যালেসের বাইরের সিকিউরিটি,” কায়সার বলল। “গুলির শব্দ শুনে অ্যালার্ট হয়ে গেছে। রিসেপশন রুমে যেহেতু একজন লোকের কাছে অস্ত্র আছে, সবার আগে তাকে কন্টেইন করার জন্য ওখানে গেছে তারা।” 

বুঝতে পারলো জেফরি বেগ। 

“আপনি এদের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা রাখেন না, স্যার। আপনাকে গুলি করে মারার পর ঐ ছেলেটাকেও মেরে ফেলতো, তারপর দুটো লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে…” কথাটা আর শেষ করলো না। “জামাল খাশোগির কেসটার কথা তো জানেনই…ওরকম কিছুই করতো।” 

জেফরি বেগ বুঝতে পারছে একটুর জন্যে কতো বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছে তারা দুজন। 

“আপনি যে এখানে এসেছিলেন তার কোনো প্রমাণই রাখতো না এরা, সব ভ্যানিশ করে দিতো। পরে যদি এটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাতো কেউ, সরকারের উপর মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে, প্রচুর টাকা ঢেলে ম্যানেজ করে ফেলতো।” 

কায়সারের কথা শুনে পরিহাসের হাসি হাসলো জেফরি বেগ। কথাগুলো নির্মম সত্য আর এই সত্য তাকে আরো বেশি হতাশায় নিমজ্জিত করলো। 

“আপনার কি মনে হয়, আপনাদের মেরে ফেলার পর কেউ এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলতো? আপনাদের কী হয়েছে, খোঁজ নেবার চেষ্টা করতো? হত্যার বিচার চাইতো?” জবাবটা সে নিজেই দিলো, “এরকম কিছুই হতো না, স্যার।” একটু চুপ করে থেকে সাবেক পুলিশ বলল, “আপনি এখানে এসে ভুল করেছেন, অনেক বেশি রিস্ক নিয়ে ফেলেছেন।” 

জেফরি বেগও বুঝতে পারছে, কায়সার ভুল বলছে না। এই প্রাসাদে এসে অনেক বড় ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছে। তার চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হয়ে গেছে আলভীকে চড় মারাটা। কিন্তু তার গায়ে যদি হাত তোলার চেষ্টা না করতো কখনওই পাল্টা কিছু করতো না। সত্যি বলতে চড়টা দিয়ে ফেলেছে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ায়। তার কমব্যাট ট্রেইনিংয়ে অবশ্য নাকে একটা ঘুসি মেরে কুপোকাত করার কৌশল শিখিয়েছিল। 

“রাশান বডিগার্ড কী করে রাখে এরা? দেশে এমন কোনো আইন নেই যে বিদেশি—” 

“ওরা ওদের আইনে চলে,” কথার মাঝখানে বলল কায়সার। “এ দেশের আইন ওদের মতো কারোর জন্য না, এতদিনেও আপনি এটা বুঝতে পারেননি, স্যার?” 

জেফরি বেগ এসব ভালোমতোই বোঝে। একজন তদন্তকারী অফিসার হিসেবে অনেক বাধার মুখোমুখি হয় সে। দেশটা কিভাবে চলে, আইনের শাসনের কী দুরাবস্থা, তার চেয়ে ভালো কে জানে! সাধারণ জনগণের কোনো ধারণাই নেই, দেশটা কাদের হাতে চলে গেছে। নিজেরা সরাসরি বিপদে না পড়লে এই দুরাবস্থার সত্যিকারের চিত্র বোঝা সম্ভব হয় না। 

কায়সারের সঙ্গে লনটা পেরিয়ে মেইন গেটের সামনে চলে এলো জেফরি। তাকে অক্ষত দেখে কাচের ওয়েটিং রুমে বসে থাকা জামান লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, পারলে যেন কেঁদেই দেবে ছেলেটা। হাত তুলে দীর্ঘদিনের সহকারিকে আশ্বস্ত করলো সে। 

“আপনার নাম্বারটা দিন, স্যার।” 

কায়সারকে ফোন নাম্বারটা বললে সে নিজের ফোনে সেভ করে রাখলো।

“আপনি একটু সাবধানে থাকবেন। হাজার কোটি টাকার মালিক এভাবে চড় খাওয়াটা সহজে হজম করতে পারবে না। 

“তুমি কী বলতে চাচ্ছো?” ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলো জেফরি। 

“স্যার, সাবধানে থাকবেন, এর বেশি কিছু বলতে পারছি না। আমি উনাদের সিকিউরিটি অফিসার, রাশানগুলো আমার আন্ডারে কাজ করে বলে আজকে আপনি বেঁচে গেছেন।” 

কিন্তু জেফরি বেগ বুঝতে পারছে না কী সাবধানতা অবলম্বন করবে সে! 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *