কন্ট্রোল – ১০

অধ্যায় ১০ 

রুজানার ফ্ল্যাট থেকে বের হতেই একটা হাউকাউ শুনতে পেলো জেফরি। নিচতলায় নেমে দেখতে পেলো পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত এক লোক। পরনে স্টাইলিস পোশাক, চাল চলনে উদ্ধত ভাব। 

 জেফরি তাকে চেনে। এ হলো ফ্রিল্যান্স সংবাদিক দিলান মামুদ। 

“কী হয়েছে?” সিঁড়ি দিয়ে নেমে লিফটের সামনে এসে জানতে চাইলো সে।

“আরে মি. বেগ!… আপনি এখানে?!” অবাক হলো দিলান। 

সোনিয়ার ফ্ল্যাটের সামনে পাহারারত দুজন পুলিশ কাচুমাচু খেলো। 

“অপঘাতে মারা গেলে তো আমারই আসার কথা, নাকি?” হাত বাড়িয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে করমর্দন করলো। “আছেন কেমন? অনেকদিন পর দেখা হলো।” 

“আছি ভালোই,” তারপর পুলিশ দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল, “এখানে  তো আপনার ডিপার্টমেন্টের লোকজন দেখছি না, কাহিনি কী?” 

“ওরা-ও আছে, তবে লোকাল থানার পুলিশ সবার আগে এসেছে। আমি জগিং করে যাচ্ছিলাম এদিক দিয়ে তখন ওদেরকে দেখি…” একটু থেমে আবার বলল, “কিন্তু এই সাত সকালে আপনি কীভাবে খবর পেলেন? এখন পর্যন্ত কিন্তু কেউ এটা জানে না।” 

কাঁধ তুলল দিলান মামুদ। “এখন খবর নিতে হয় না, সুড় সুড় করে আপনার চোখের সামনে খবর চলে আসে।”

মুচকি হাসলো জেফরি।

“আশেপাশে অনেক ফেসবুক ইউজার আছে, মি. বেগ…তাদের অনেকে আমার লিস্টে আছে।”

কপট প্রশংসায় ভুরু কপালে তুলল ইনভেস্টিগেটর। “আজকাল ফেসবুক থেকেও আপনি আপনার নিউজ সোর্স পাচ্ছেন তাহলে?” 

“তা বলতে পারেন, যেহেতু পুরোপুরি ফ্রিল্যান্সার হয়ে গেছি।” 

“আগে অর্ধেক ছিলেন?” 

মুখ টিপে হাসলো দিলান। “আগে খুঁটি ছাড়া ছিলাম কিন্তু মাঠটা অন্যের ছিল। এখন খুঁটি তো নেই-ই, মাঠটাও আমার নিজের।” 

সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো জেফরি। 

“ইউটিউবে একটা নিউজ চ্যানেল খুলেছি…ক্র্যাকড নিউজ…পুরোপুরি স্বাধীন এখন।” 

“বুঝেছি,” মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলল জেফরি বেগ। 

“শুনলাম এখানে একটা মার্ডার হয়েছে?” 

“এখনও শিওর না, তদন্ত করলে বোঝা যাবে,” কথাটা বলে পুলিশ দুজনের দিকে তাকালো। 

“তাহলে হোমিসাইড কেসটা তদন্ত করছে?” 

“হ্যাঁ।” 

“আচ্ছা। সাসপেক্ট করছেন কাউকে?” 

গাল চুলকালো জেফরি বেগ। “তদন্ত করার আগে এ নিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।” 

দু হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গি করলো দিলান মামুদ। “ওকে…নো প্রবলেম। তাহলে এটুকু অন্তত বলুন, ভিক্টিম কে?” 

“জান্নাতুল ফেরদৌস সোনিয়া। বয়স একুশ-বাইশ হবে। সিঙ্গেল। সম্ভবত পড়াশোনা করে। এর চেয়ে বেশি কিছু জানতে পারিনি।” 

দিলান মামুদ সবগুলো তথ্য মোবাইলফোনে রেকর্ড করে রাখলো। “মামলা হয়েছে? কে করেছে? ভিক্টিমের পরিবারের কেউ?” 

“ভিক্টিমের বড় বোন বনানী থানায় আছেন, মামলা করছেন উনি।”

“মামলাটা কী? উনি কি অভিযোগ করছেন, কাকে সন্দেহ করছেন?”

“আপনি বনানী থানায় গেলে জানতে পারবেন। মামলা তো গোপন কোনো ব্যাপার নয়, থানা থেকে আপনাকে ইনফর্মেশন দিতে বাধ্য। তাছাড়া বাদির সঙ্গেও কথা বলতে পারবেন। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আমার পক্ষে বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।” 

“বুঝতে পেরেছি। তাহলে আমি থানায় যাই, ভিক্টিমের বড় বোনের সঙ্গে কথা বলে বাকিটা জেনে নেই।” 

মাপা হাসি দিলো জেফরি বেগ। 

লিফটের বোতাম টিপে দিলো দিলান মামুদ। একটু পর দরজাটা খুলে গেলে ঢুকে পড়লো তাতে। “থ্যাঙ্ক ইউ, মি. বেগ।”

“দাঁড়ান, আমিও একটু নিচে যাবো,” জেফরিও লিফটে উঠে পড়লো। দরজাটা বন্ধ হতেই হেসে ফেলল সে। “অভিনয়টা কি খারাপ ছিল?” 

মিটিমিটি হাসলো দিলান। “নাহ, একদম পারফেক্ট ছিল।” 

হা-হা করে হেসে ফেলল হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর। একটু আগে সোনিয়ার বোনকে থানায় পাঠিয়ে বেলকনিতে গিয়ে সে নিজেই দিলান মামুদকে ফোন করে খবরটা জানিয়ে দিয়েছিল। যে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক সাপে-নেউলে, যাদেরকে ক্রাইম সিনের ধারেকাছে দেখলে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, আজকে সেই সাংবাদিকদের একজনকে রীতিমতো ডেকে এনেছে। সময়ে সবকিছু বদলে যায়। না জানি ভবিষ্যতে আর কী কী করতে হবে তাকে! 

“জাহান গ্রুপের সিইও হচ্ছে প্রাইম সাসপেক্ট।”

জেফরির কথাটা শুনে বিস্মিত হলো দিলান, হালকা করে শিষ বাজালো সে। “ব্রেকিং নিউজ! ভাইরাল হবে নির্ঘাত।”

“কিন্তু অনেক চাপও মোকাবেলা করতে হবে। এখনও সময় আছে কনসিডার করে দেখতে পারেন।” 

দিলান মামুদ অকৃতদার, বাবা-মা, ভাই-বোন কেউ নেই। কিন্তু জেফরি জানে এটাই তার বেপরোয়া মনোভাব এবং দুঃসাহসিকতার একমাত্র কারণ নয়। মানুষটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরোটাই কলিজা! 

মুচকি হেসে কাঁধ তুলল দিলান। “হোয়েন ইউ গাট নাথিং ইউ গাট নাথিং টু লুজ!” বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে ধরলো সে। লিফটের দরজা খুলে গেলে বিদায় নিয়ে চলে গেল। 

অধ্যায় ১১ 

সোনিয়ার আত্মহত্যার খবরটা শোনামাত্রই জাহান গ্রুপের সিইও আলভী করিমের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ফারহান ওমর বুঝে গেছিল একটা সমস্যার সমাধান হয়ে গেলেও নতুন আরেকটা তৈরি হয়েছে। 

খবরটা এখন পর্যন্ত কোনো মিডিয়াতে আসেনি। সহজে আসবেও না। আগেরকার সময় হলে এটাই স্বাভাবিক ছিল। তখনকার যুগে কোনো নিউজ ছাপা হতে হলে সেটাকে আগের দিন রাত দশটা-বারোটার মধ্যে ঘটতে হতো। এরপর কিছু ঘটলে সেটা পরদিন ছাপার অক্ষরে আসতো না, আসতো তারও পরদিন। 

কিন্তু এখন সেই সীমাবদ্ধতা নেই। ইন্টারনেটের কল্যাণে, ফেসবুক- ইউটিউবের এই যুগে ঘটনা ঘটার কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসে সবার নজরে। কখনও কখনও বাস্তব সময়েও সংবাদ দেখতে পায় মানুষজন। যুগটাই এখন লাইভের। কেউ কেউ তো লাইভে এসে আত্মহত্যাও করে! 

বনানী থানার ওসি যখন সাতসকালে ফোন করে বলল মেয়েটা গলায় দড়ি দিয়েছে, এক ধরণের স্বস্তি পেয়েছিল। ধরেই নিয়েছিল কয়েক দিন ধরে আলভীকে ফোনে না পেয়ে প্রচন্ড অভিমান থেকে এরকম ছেলেমানুষি কাজ করেছে। ল্যাঠা চুকে গেছে তাহলে! 

অখ্যাত একটা মেয়ে, ঢাকায় কেউ নেই, দুয়েকটা ব্যাপার ম্যানেজ করতে পারলে এই আত্মহত্যা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না। সেজন্যেই ওসিকে বলে দিয়েছিল মেয়েটার ফোন থেকে আলভীর সব ছবি আর কলরেকর্ড ডিলিট করে দিলে তার জন্য মোটা অঙ্কের বখশিস থাকবে। বিগলিত হয়ে ওসি তখনই বলেছিল সে নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করবে। 

কিন্তু আধঘণ্টা পর ওই লোক ফোন করে জানায় পুলিশের হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের একজন অযাচিতভাবে ঢুকে পড়েছে এই ঘটনায়। শুধু ঢুকেই ক্ষান্ত হয়নি, ভিক্টিমের বড় বোনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলছে এটা সুইসাইড না, মার্ডার! সেই থেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সে। ফ্ল্যাটটা তো তার নামে ভাড়া নেওয়া, হোমিসাইড তদন্ত করলেই সেটা বের হয়ে আসবে। সঙ্গে সঙ্গে তার পরিচিত ফ্ল্যাট ঔনার মিসেস রুজানাকে ফোন দিয়ে বলে দেয় সে যেন হোমিসাইডকে বলে, সোনিয়া নিজেই ভাড়া নিয়েছে ফ্ল্যাটটা 

আলভীকে এই খবরটা দেবার আগেই ফারহান বুঝতে পারছিল বিপদটা কোনদিক থেকে আসতে পারে। অবশ্য চাইলেও সিইও”কে এখন জানানো যাবে না-সকাল নয়টার আগে ঘুম থেকেই ওঠে না। সেজন্যে ওসির কাছ থেকে সবটা শোনার সিদ্ধান্ত নেয় আগে। আজকাল টেলিফোনে এসব নিয়ে কথা বলা বিপজ্জনক, এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকে সে। তাই সরাসরি কথা বলার জন্য বনানী থানার সামনে চলে এসেছে। 

এখন বনানী থানা থেকে একটু দূরে নিজের গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে ফারহান ওমর। টেনশনের চোটে একটা সিগারেট ধরালো সে। পাঁচ মিনিট পর দেখতে পেলো লোকটা থানা থেকে বের হয়ে এগিয়ে আসছে তার গাড়ির দিকে। ড্রাইভিং ডোরটা খুলে দিলে ওসি ঢুকে পড়লো ভেতরে। 

“সব ভেজাল লাগাইছে হোমিসাইডের ঐ ব্যাটা,” পাশের সিটে বসে বলল ওসি হাসমত। “জেফরি বেগ।”

অবাক হলো ফারহান। এই অফিসার আজকাল বেশ আলোচিত, পত্রিকায় তাকে নিয়ে ফিচারও ছাপা হয়। “ওদেরকে কে খবর দিলো?” 

“থানা থিকা কেউ দেয় নাই, নিজেই আইছে।” 

“নিজে এসেছে মানে?!” অবাক হলো খুব। “হোমিসাইড কিভাবে জানলো এটা?” 

“তা তো কইতে পারুম না, আমি গিয়া দেখি ঐ জেফরি বেগ মাতব্বরি 

করতাছে।” 

“কিন্তু এটা তো আপনার থানার জুরিডিকশনের মধ্যে পড়ে, ওই লোক কিভাবে নাক গলাচ্ছে?” 

“আমারে কী সব আইন-টাইন দেখাইলো…তার নাকি এইটা করার এক্তিয়ার আছে।” 

একটু চিন্তিত হয়ে পড়লো ফারহান। জেফরি বেগ কেন এই ঘটনায় ঢুকে পড়লো? কীসের আলামত এটা? 

“আমার মনে হয় মাইয়াটার বড় বইনে সব ভেজাল লাগাইছে। ওই মহিলা ছাড়া আর কে খবর দিবো?” 

ফারহানের ধারণা, সোনিয়ার যে একটা বড় বোন আছে সেটা সম্ভবত আলভীও জানে না। কোত্থেকে এই মহিলার উদয় হয়েছে কে জানে। “তাহলে ঐ মহিলা কেস করে ফেলেছে?” 

মাথা নেড়ে সায় দিলো ওসি। “কী বলুম, ভাই, মাইয়াটার বড় বইন তো রাইতে-ই ফোন দিছিল থানায়, তার বইনে নাকি কইছে তারে মাইরা ফালাইবো আপনাগো কেউ।” 

বিস্ফারিত চোখে তাকালো ফারহান। “কার কথা বলেছে?” 

“ক্লিয়ার কইরা কিছু কয় নাই, খালি কইছে আপনার বসের লগে কী সব ঝামেলা হইছে তার বইনের। রাইতে তারে ফোন দিছিল তার বইনে, ঘুমায়া ছিল তাই ধরবার পারে নাই, পরে ফোন করলে মাইয়াটা আর ধরে নাই, তাই থানায় ফোন দিয়া খোঁজ নিতে কইছিল।” 

ভুরু কুঁচকে গেল ফারহানের। “এটা কখন?” 

ঠোঁট ওল্টালো হাসমত আলী। “রাইত একটা-দেড়টার দিকে হইবো…মহিলা তো ফোনেই জিডি করতে চাইছিল, আমি বলছি ফোনে জিডি করা যায় না।”

গম্ভীর মুখে কিছু ভেবে গেল ফারহান ওমর।

“এখন তো তার বইন মরছে, মহিলা কেস করছে আলভী স্যারের নামে। ঐ জেফরি বেগ আইস্যা ভেজাল না লাগাইলে ম্যানেজ করতে পারতাম, ভাই।” 

নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। 

“তারপরও আমি তারে কইছিলাম, এইটা সুইসাইড…রিপোর্ট-টিপোর্ট আসার পর যদি দেখা যায় অন্য কিছু তার বাদে কারোর নামে কেস করুক। এখন কেন মানি লোকজনের নামে কেস করবো?” আক্ষেপে মাথা দোলালো ওসি। “কিন্তু হোমিসাইড আইস্যা আমারে পুরা সাইড কইরা দিছে। ওরা-ই মামলাটার তদন্ত করবো।” 

গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো ফারহান ওমর 

“পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে কিন্তু সব বাইর হইয়া যাইবো…ওইটা ম্যানেজ করেন, ভাই।” 

সন্দিগ্ধ চোখে তাকালো জাহান গ্রুপের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। “কী বের হবে, বুঝলাম না?” 

“ঘটনাটা তো সুইসাইড না-ও হইতে পারে?” 

ওসির কথায় নড়েচড়ে উঠল ফারহান। 

“ওই জেফরি বেগ তো আমারে কী একটা স্ক্রু-টুস্ক্রু দেখায়া বুঝাইলো এইটা আসলে মার্ডার।” 

“বলেন কী?” 

“হুম। ঘটনা খারাপ। হেয় নাকি আবার ঘুষটুষ খায় না। ভার্সিটিতে পড়ার সময় ওই লোক লেফটিস্ট পলিটিক্স করতো মনে হয়। খুব আদর্শ মারায়, যেন আসমান থেইকা নাইম্যা আসছে। কুন দ্যাশে আছে ভুইল্যা গেছে!” 

মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো ফারহান। এই লোক বামপন্থীদের চেনে না। বাম হলে খুব সহজেই ম্যানেজ করা যেতো। ওদের মতো সস্তায় আর কাউকে কেনা যায় এই দেশে? 

“পোস্ট মর্টেমের রিপোর্টটা ম্যানেজ করতে হইবো,” কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে ওসি বলল। “মেডিকেলে আমার পরিচিত- 

“থাক, আপনাকে আর কিছু করতে হবে না,” কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বলল সে। 

“ভাই কি আমার উপরে রাগ করলেনি?” 

“আরে না,” ছোট্ট করে বলল ফারহান। 

ওসিকে দিয়ে কাজটা করানোর কোনো ইচ্ছে তার নেই। প্ৰথমত এই লোক অনেক কিছু জেনে যাবে। তাছাড়া নিজেরা করলে আরেকটা বাড়তি সুবিধাও পাওয়া যাবে। এরকম কাজ করার মতো লোকজন তাদের কাছে আছেও। 

অধ্যায় ১২ 

কামারা বিডির মোকারম হোসেন জেফরি বেগের ফোন পেয়ে এতটাই ভড়কে গেল যে সঙ্গে সঙ্গে কলটা কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখলো। 

কিন্তু বেশিরভাগ লোকেই যে ভুলটা করে, এই লোকও সেটা করেছে— সিম খুলে অন্য একটা সিম ঢুকিয়ে ফোনটা ব্যবহার করতে শুরু করেছে আবার। হোমিসাইডের কমিউনিকেশন্স রুম থেকে তার নতুন নাম্বারটা চিহ্নিত করে দশ মিনিট পর কল দিলো জেফরি। এবার শুরুতেই বলে দিলো, কলটা যেন না কাটে। সে এখন কোথায় আছে হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট জানে। ভালো হয় কথা বললে। 

“জ্-জি…বলেন, স্যার?” ওপাশ থেকে বলল মোকারম হোসেন। 

এদেশের বেশিরভাগ নাগরিক এই ভুলটা করে, তারা তাদের ট্যাক্সের পয়সায় যারা বেতন নেয়, যারা আসলে তাদের সেবায় নিয়োজিত, তাদেরকেই “স্যার” বলে ডাকে। এটা বৃটিশ আমলে মানাতো, তখন সরকারি কর্মচারি মানেই শাসকগোষ্ঠি। “শুনুন, স্যার…” জেফরি বলল। “আপনার কামারা বিডি”র বনানীতে একটি ফ্ল্যাট আছে, সেখানে কি গতকাল কোনো গেস্ট ছিল? থাকলে তার ডিটেইল আমাকে দিতে হবে।” 

“জি, স্যার। একজন ছিল। ঐ লোক তিন দিনের জন্য বুক করেছিল অ্যাপার্টমেন্টটা।” 

তিন দিন? খুন করার জন্য এই সময়টা একটু বেশি বলে মনে হচ্ছে তার কাছে। তারপরই চট করে জানতে চাইলো, “আপনার ওখানে মিনিমাম ক- দিনের জন্য রেন্ট নেয়া যায়?” 

“আগে তো স্যার একদিনও দিতাম কিন্তু কাপলদের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে তিন দিনের নিচে আর দেই না।” 

“আচ্ছা,” এবার বুঝতে পারলো জেফরি। খুনি চাইলেও এক-দু দিনের জন্য নিতে পারতো না। 

“যারা সত্যিকারের কাপল তারা তিন দিনই নেবে কিন্তু যারা ডেটিং করার ধান্দা করবে তারা দু-তিন দিনের জন্য নেবে না।”

“হুম, ভালো বুদ্ধি,” সায় দিয়ে বলল হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর। “ঐ লোকের এনআইডি কার্ডের কপি রেখেছেন?” 

“জি, স্যার। আমরা এই ভুল করি না,” একটু সাহস পেয়ে বলল। “পরে কোনো ঝামেলা হলে আমাদেরকেই ধরবে তাই এনআইডি ছাড়া কাউকে অ্যালাউ করি না এখন।” 

“ওকে, ওই লোকের এনআইডির কপিটা আমার এই নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিন।”

“জি, স্যার, এক্ষুণি দিচ্ছি।” 

“ঐ লোকের রেন্ট শেষ হয়েছে আজকেই, তাই না?” 

“জি, স্যার…চলে গেছে, সকালে তার ফ্লাইট ছিল নাকি।”

“ওকে। থ্যাঙ্কস ফর দি কো-অপারেশন।” 

জেফরি বেগের ধারণা, সম্ভাব্য খুনি এই এয়ারবিএনবি ধরণের লোকাল প্রতিষ্ঠানের সুযোগটাই নিয়েছে। তাকে আর কষ্ট করে ডাকাতের মতো ঢুকতে হয়নি সোনিয়ার ফ্ল্যাটে। এ ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নিয়মের আওয়তায় না এলে ভবিষ্যতে আরো অনেক অপরাধী এর সুযোগ নেবে। 

বিপ্ করে শব্দ হতেই জেফরি বেগ তাকালো ফোনের দিকে। ঐ লোক তার হোয়াটসঅ্যাপে কাস্টমারের এনআইডি”র কপিটা পাঠিয়েছে। হতাশ হয়েই দেখলো ছবিটা যথারীতি বাজেভাবে তোলা, খুবই অস্পষ্ট। এনআইডির অ্যাপে নাম্বারটা ইনপুট দিলো। যেমনটা ভেবেছিল, আইডিটা ভুয়া! সম্ভবত ছবির লোকটাও! 

তবে একটা ব্যাপারে সে নিশ্চিত, দোতলার ফ্ল্যাটেই উঠেছিল খুনি! 

অধ্যায় ১৩ 

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ফারহান ওমরের কাছ থেকে সব শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে আলভী। কাউকে কিছু না বলে প্রাইভেট রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে এখন। 

অগত্যা ফারহান ওমর চুপচাপ লিভিংরুমে অপেক্ষা করতে লাগলো। বিষয়টা নিয়ে সিইও”র সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করার দরকার আছে। কী করতে হবে, কিভাবে করতে হবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদেরকে। দরজায় খিল মেরে বসে থাকলে চলবে না। 

প্রায় আধ-ঘণ্টা পর সেখান থেকে আলভী বের হয়ে এলো লাল টকটকে চোখে। ফারহান বুঝতে পারলো, নির্ঘাত কোকেন নিয়েছে। 

“আচ্ছা, ওসি কেন আপনারে জানাইলো এইটা? ওই লোক কি ওর কথা জানতো?” সন্দিগ্ধ চোখে তাকালো জাহান গ্রুপের সিইও। 

“সোনিয়ার বড় বোন রাতে থানায় ফোন দিয়ে বলেছিল তার বোনের জীবন হুমকির মুখে…আপনার সঙ্গে ঝামেলা চলছে।” 

চোখমুখ বিকৃত হয়ে গেল সিইও”র। “মাগি একটা!” 

গালিটা কাকে দিয়েছে ফারহান বুঝতে পারলো না। যে কেস করেছে তাকে নাকি যে মরে গেছে? 

সোনিয়ার সঙ্গে আলভীর সম্পর্কটাও তার কাছে কেমন ধোঁয়াশা লাগে। এমন একটা সাদামাটা মেয়ের সঙ্গে কী করে তার বস জড়ালো ভেবে পায়নি। তাদের গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের স্যানিটারি ন্যাপকিন লঞ্চ করার অনুষ্ঠানে পরিচয় হয়েছিল মেয়েটার সঙ্গে। প্রচুর কলেজ-ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েদেরকে ভলান্টিয়ার হিসেবে আনা হয়েছিল. সোনিয়া ছিল তাদেরই একজন। এমন একটা মেয়ের সঙ্গে পরে কী করে কী হয়ে গেল সে জানে না। শুনেছে, এরপর নাকি ঐ মেয়ে আলভীকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। 

শালার ফেসবুক! 

“হোমিসাইড এনগেজড না হলে ওসিকে দিয়ে আমি সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলতাম।” 

শূন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো আলভী। তাকে কেমন বিপর্যস্ত লাগছে। ফারহান ওমরের এ-ও মনে হলো চাপা এক শোকে আক্রান্ত তাদের সিইও। 

“তবে মিডিয়াগুলো এটা নিয়ে কোনো নিউজ করবে না,” ফারহান আশ্বস্ত করে বলল। “আমি অলরেডি সবগুলো মিডিয়ায় ফোন করে বলে দিয়েছি।” 

“এখন তাইলে কী করতে হইবো?” চিন্তিত মুখে জিজ্ঞেস করলো আলভী। 

“পোস্ট মর্টেম রিপোর্টটা ম্যানেজ করতে হবে, স্যার…নইলে ঝামেলা হবে অনেক।” 

আলতো করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল জাহান গ্রুপের সিইও। ম্রিয়মান কন্ঠে 

বলল, “পুলিশের কাউরে বলতে হইবো?” 

ফারহান ওমর জানে পুলিশ বলতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কথা বলছে তার বস। “না, স্যার। অতো বড় কাউকে এনগেজড করার দরকার নেই। ওদেরকে দিয়ে করালে রিস্ক থেকে যাবে, অনেক বেশি টাকাও খরচ হবে।” 

“হুম।” গম্ভীর মুখে সায় দিলো আলভী। 

“সেজন্যে আমি বনানী থানার ওসিকে দিয়ে কাজটা করাতে চাইনি।” জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো সিইও। 

“এসব কাজ যতো কম মানুষ জানে ততই ভালো। সরাসরি ডাক্তারকে ম্যানেজ করলেই হবে।” 

কথাটা শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্য চুপ করে রইলো আলভী। তার মনে পড়ে গেল আজ থেকে দশ-বারো বছর আগের কথা। বড় ভাই আরাফি এক প্রাইভেট পার্টিতে রাগের মাথায় বেহেড মাতাল হয়ে তাদেরই এক কর্মচারিকে মদের বোতল দিয়ে উপুর্যুপুরি আঘাত করে মেরে ফেলেছিল। সেই কেসটা ধামা চাপা দিতে তখনকার হোমমিনিস্টারকে চল্লিশ কোটি টাকা দিতে হয়েছিল। সেই সময় ঐ টাকা দিয়ে গুলশানে বেশ কয়েকটি প্লট কেনা যেতো। এতগুলো টাকা খেয়েও হারামজাদা তার ভাইয়ের কেস পুরোপুরি ধামা চাপা দেয়নি, ইচ্ছে করে ঝুলিয়ে রেখেছিল। বলতে গেলে ব্ল্যাক মেইল করেছিল। 

ভুল জায়গায় টাকা ঢেলে ছিল তার বাপ। আর ভুল জায়গায় ঢাললে কাজটা যেমন ঠিকঠাক হয় না তেমনি শুধু শুধু বেশি খরচ হয়ে যায়। তখন অবশ্য ফারহান ওমরের মতো অ্যাডভাইজার ছিল না তাদের। এখন আছে, আর সেজন্যেই দরকারের সময় ভালো পরামর্শ পাওয়া যায়। 

“ঠিক আছে,” গম্ভীর মুখে বলল আলভী করিম। “যেমনে ভালো হয় করেন। টাকা-পয়সা নিয়া চিন্তা কইরেন না।”

“জি, স্যার,” ভেতরে ভেতরে খুশি হলেও মুখটা ভার করে বলল লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। 

অধ্যায় ১৪ 

পিঙ্ক প্যালেস নামেই পিঙ্ক, আসলে এর রঙ ধবধবে সাদা। 

তবে আজ থেকে দশ বছর আগে প্রথম যখন এটি নির্মাণ করা হয় তখন গোলাপি রঙটাই ব্যবহার করা হয়েছিল। পরের বছরই এর রঙ পাল্টে সাদা করা হয় কর্ত্রীর নির্দেশে। 

জাহান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শাহজাহান করিম প্রায় ষাট বিঘা জমির উপরে এটা বানিয়েছে তার স্ত্রীর জন্য। আর গোলাপি রঙটা নিছক ভালো লাগা থেকেই করেছিল। ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি এই রঙ আর নামকরণ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে! 

প্যালেসে ওঠার পর একদিন তার স্ত্রী যখন বলল এই রঙ পাল্টাতে হবে, তখন ধরে নিয়েছিল গোলাপি রঙটা পছন্দ হয়নি। পরক্ষণেই বুঝতে পেরেছিল স্ত্রী আসলে কীসের ইঙ্গিত করেছে। 

পিঙ্কি! মুশতারির ডাক নাম ছিল ওটা। 

ব্যবসায়িক সফলতার মতো অনেক কিছুই সে সফলভাবে লুকিয়ে রাখতে পেরেছে বলে মনে করেছিল তখনও অন্তত সেরকমই ধারণা ছিল তার। সন্তানরাও কখনও জানতে পারেনি তাদের বাবা পুরনো প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে গেছে দীর্ঘদিন। তবে তার স্ত্রী এ নিয়ে কখনও কিছু বলেনি। তার ধারণা, সিতারা সব জানলেও চুপ করে ছিল। 

বিশাল এই পিঙ্ক প্যালেসের ভেতরে ঢুকলেই বোঝা যায় নিছক গালভরা নামকরণ করা হয়নি বাইরের চেয়ে ভেতরটাই বেশি প্রাসাদোপম। ফ্লোর টাইল্স থেকে শুরু করে সবকিছুতে সচেতনভাবে বিদেশি সামগ্রি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ট্রিপলেক্স ভবনটিতে একুশটি ঘর আছে কিন্তু বাসিন্দার সংখ্যা মাত্র দুজন! অবশ্য কর্মচারি এবং চাকরবাকরদের হিসেবে ধরলে মোট বাসিন্দার সংখ্যা দশ-বারো জনের মতো দাঁড়াবে। এই প্যালেসে গেস্টরুমের সংখ্যা দশটি। যদিও সারা বছর খুব কম সময়ই এগুলো ব্যবহার করা হয়। বিদেশ থেকে আত্মীয় এবং মেহমান এলে একটু আধটু সদ্ব্যবহার হয় তখন। 

শাহজাহান করিমের অদ্ভুত বাতিক আছে—মোট তিনটা বেডরুম ব্যবহার করে সে। আর এগুলো বেছে নেবার বেলায়ও বাতিকগ্রস্ততার পরিচয় দেয় সব সময় যখন যে ঘরে শুতে মন চায় সেই ঘরই ব্যবহার করে। একটা রুমে 

হয়তো ঘুমাতে শুরু করলো, সকালে দেখা গেল আরেক বেডরুমে শুয়ে আছে। বদমেজাজি আর খামখেয়ালির বাদশাহ শাহজাহান করিম ছাড়া আর কেউ জানে না এর কারণ কী। 

সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করার পর প্যালেসের কর্তা বিশাল বড় লনে একটু হাঁটাহাঁটি করে নিচতলায় সামনের ফয়ারে বসে চা-কফি পান করে। কয়েক বছর ধরে পত্রপত্রিকা পড়ে না সে, টিভির নিউজও দেখে না। তার হয়ে এই কাজগুলো করে এক ছোকরা টাইপের ছেলে। এই ছেলের কাজ হলো সমস্ত খবরগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করা কিছু খবর তার চাকরিদাতাকে পড়ে শোনানো। 

প্যালেসের অনেকেই ফিসফাস করে এ নিয়ে। দেশের প্রধানমন্ত্রি এবং প্রেসিডেন্ট পত্রপত্রিকা পড়ে না, তাদের হয়ে প্রেস সেক্রেটারি সমস্ত খবরের মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু খবর ফাইল আকারে ডেস্কে রেখে দেয়, রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তি আগ্রহি হলে সেই ফাইল নেড়েচেড়ে দেখে এমন কথা শোনার পরই নাকি শাহজাহানের মাথায় এই বুদ্ধিটা এসেছে। সে অবশ্য এককাঠি উপরে, তার এই ছোকরা খবর সংগ্রহ করার পাশাপাশি নিউজ প্রেজেন্টারের কাজও করে প্রতিদিন। 

আজকেও তাই করছে কিন্তু এসব খবরে কোনো আগ্রহ নেই জাহান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতার। ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকক্ষণ তার মধ্যে এমন ঔদাসীন্য ভাব থাকে। কফিতে চুমুক দিতে দিতে বিদেশ থেকে আনা বিশাল লনের টকটকে সবুজ ঘাসের দিকে চেয়ে আছে সে। কয়দিন আগে কেনা নতুন হেলিকপ্টারটি অলস হয়ে বসে আছে হেলিপ্যাডে। 

“স্যার?” 

সম্বিত ফিরে পেয়ে শাহজাহান তাকালো তার ছেলেটার দিকে। “পড়া শেষ?” 

“জি, স্যার। কিন্তু একটা ইম্পর্টেন্ট নিউজ বাকি আছে।” 

“আর ইম্পর্টেন্ট!” হাত নেড়ে তাচ্ছিল্যভরে বলল। “এইগুলা আমার কাছে দুই পয়সারও মূল্য নাই।” 

“কিন্তু এই নিউজটা আপনার জানা দরকার, স্যার।” 

সেক্রেটারির দিকে তাকালো প্যালেসের মালিক। এই ছোকরা কখনও এমনটা করেনি, একান্ত অনুগত আর বাধ্য একজন। মনিবের মেজাজ-মর্জি দ্রুত ধরতে পারে। দুই বছরের চাকরিতে কখনও বিরক্তি তৈরি করেনি এক মুহূর্তের জন্যেও। 

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। “আচ্ছা, শুনি তোমার গুরুত্বপূর্ণ নিউজ!” 

ছেলেটা একটু কেশে হাতের ট্যাবটা দেখে বলল, “আজ সকালে বনানীতে সোনিয়া নামের এক তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ…” 

“এইসব কী পড়তাছো?” এই প্রথম ছেলেটার উপর বিরক্ত হলো শাহজাহান। “এই তোমার ইম্পর্টেন্ট নিউজ?” 

কাচুমাচু খেলো ছেলেটা। 

“কোথাকার কোন মাইয়া সুইসাইড করছে আর তুমি আমারে সেইটা শুনাইতাছো?” 

“স্যার,” একটু সাহস সঞ্চয় করে বিনীতভাবে বলল, “এই ঘটনায় আলভী স্যারের নাম এসেছে, মেয়েটার বড় বোন উনার নামে কেসও করেছে।” 

বিস্ফারিত দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে চেয়ে রইলো শাহজাহান করিম। “পত্রিকাগুলা এই নিউজ ছাপাইলো কোন সাহসে?!” গর্জে উঠল সে। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না দেশের কোনো পত্রিকা এমন নিউজ ছাপাতে পারে। 

খুক খুক করে কাশলো ছোকরাটা। “স্যার, ইউটিউবের একটা নিউজ চ্যানেল…বড় কোনো নিউজ পেপার না।” 

দুচোখ কুঁচকে তাকালো জাহান গ্রুপের মালিক। এবার বোধগম্য হলো তার। এ দেশের বড় কোনো পত্রিকা আর টিভি চ্যানেল এমন সংবাদ ছাপানোর দুঃসাহস করবে না। ওদের কারোর বুকের পাটা এত বড় হয়নি যে লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন হারানোর ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ করবে। 

ডান দিকে বিশাল লনটার দিকে তাকালো শাহজাহান করিম। পিঙ্ক প্যালেসের পাশেই তার ছোটো ছেলের হোয়াইট প্যালেসটা, এরপরই বড় ছেলের অর্কিড প্যালেস। কিন্তু সেটা এখন বিরাণ পড়ে আছে।

একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো তার ভেতর থেকে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *