কথোপকথন

কথোপকথন

গত বছর কলকাতার বইমেলায় আমার আত্মজীবনীর সপ্তম খণ্ড নির্বাসনএর উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। প্রকাশক অডিটোরিয়াম ভাড়া নিয়েছিলেন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সেই উদ্বোধন হতে দেননি। অতঃপর অডিটোরিয়ামের বাইরে রাস্তায় কিছু পাঠকের উপস্থিতিতে প্রকাশক একটা প্রতিবাদী উদ্বোধন করেছিলেন বইটার।

কিছুদিন যাবৎ কথোপকথন নিয়ে ভাবছিলাম। নির্বাসনে কথোপকথন নামে একটা অধ্যায় আছে। অধ্যায়টা আমার খুব প্রিয়। এখনও প্রায় ছ বছর আগের ওই কথোপকথন মনে হয় যেন এই সেদিনের ঘটনা। গা শিউরে ওঠে ভাবলে, কী করে শাসকেরা দুটো ভোটের জন্য, ক্ষমতার গদির জন্য অসহায় আর নিরীহ মানুষদের অত্যাচার করতে একটুও দ্বিধা করে না, এমন কোনও অন্যায় নেই যে তারা করতে জানে না।

যারা নির্বাসন পড়েছে, তারা তো পড়েইছে। আর যারা পড়েনি, কিন্তু পড়তে চায়, তাদের জন্য কথোপকথনের ওই অধ্যায়টা এখানে দিচ্ছি। অনেকে ভাবে ২০০৭ সালের নভেম্বরে পার্ক সার্কাস থেকে কিছু মুসলমান লোক বেরিয়ে মিছিল করেছিল বলে আমাকে তাড়ানো হয়েছে। তা কিন্তু নয়, আমাকে তাড়ানোর পরিকল্পনা অনেক আগেই শুরু হয়েছিল।

বন্দি আমি। ঘরের বাইরে বেরোনো নিষেধ। গায়ে শ্যাওলা পড়ছে। মনে ভুতুড়ে বাড়ির উঠোনের বড় বড় ঘাসের মতো ঘাস। এর মধ্যেই তিনি এলেন। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় এক সন্ধ্যায়। আসার দশ মিনিট আগে ডিসি এসবি বিনীত গোয়েল ফোনে বলে দিলেন সিপি আসছেন। পুলিশ কমিশনারকে সংক্ষেপে সিপি বলা হয়। মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হয় সিএম। চিফ এর প্রথম বর্ণ সি আর মিনি স্টারের প্রথম বর্ণ এম নিয়ে সিএম। পশ্চিমবঙ্গের সিএম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সিপি প্রসূন মুখোপাধ্যায়। প্রসূন মুখোপাধ্যায় আমার বাড়ি আসবেন। কী কান্ড, এত বড় একজন মানুষ আমার বাড়ি আসছেন কেন? এই প্রশ্নের আমি কোনও উত্তর জানি না। উত্তর খোঁজারও চেষ্টা করিনি। হতে পারে এমনি সৌজন্য সাক্ষাৎ! আমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন, আমি তো আর হাবিজাবি কোনও মানুষ নই। দেখা করার ইচ্ছে ওঁর হতেই পারে। পুলিশের বড় দুজন অফিসার এর আগে একবার সৌজন্য সাক্ষাৎ করে গেছেন। বলেছেন, আমি যেন কোনও দুশ্চিন্তা না করি, আমার নিরাপত্তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অফিসার দুজনের মধ্যে একজন ছিলেন শামীম আহমেদ, রীতিমত সুদর্শন। কথায় কথায় বললেন, হায়দারাবাদে যারা আপনার ওপর হামলা চালিয়েছিলো, তারা হেলা করার মতো লোক নয় কিন্তু। সবাই উচ্চশি ক্ষিত। লেখাপড়া করতে বিলেত পর্যন্ত গেছে ওরা। চমৎকার ইংরেজি বলে। ওদের ইংরেজি শুনলে বোঝাই যায় না ওরা ভারতীয়। শামীম আহমেদের চোখে ছিল হায়দারাবাদের ওয়াইসি বংশের লোকদের জন্য সমীহ আর মুগ্ধতা! প্রসূন মুখোপা ধ্যায় এলে মিষ্টি, বিস্কুট, চা, চানাচুর ইত্যাদি নানা কিছু দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এর আগে ফোনে ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। দেখা যদি হয়েও থাকে কোথাও, কেমন। আছেন, ভালো জাতীয় মামুলী কথা ছাড়া বেশি কিছু কথা হয়নি। আলাপচারিতা মোট দুঘণ্টার। মোদ্দা কথাগুলো এরকম।

প্র– অবস্থা তো খুব খারাপ।

 ত– কী রকম খারাপ?

প্র– কিছু নন- বেঙ্গলি মুসলিম তো আপনাকে মেরে ফেলার সব প্ল্যান করে ফেলছে।

ত– তাই নাকি?

প্র– হ্যাঁ তাই। আমি তো আপনাকে সিকিউরিটি দিচ্ছি। আমার ছেলেরা তো সব আছে এখানে। সিকিউরিটি বাড়িয়েছি তো অনেক। জানেন তো?

ত– হ্যাঁ নিশ্চয়ই। অনেক ধন্যবাদ। আমি খুব নিরাপদ বোধ করছি এখন।

প্র– কিন্তু আপনি হায়দারাবাদে না গেলেই পারতেন। হায়দারাবাদে যাওয়াটা উচিত হয়নি আপনার।

ত– আসলে কয়েক বছর থেকেই যেতে বলছিলো। বারবারই না বলে দিয়েছি। কিন্তু এবার আমার বই এর প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করে এমন করুণভাবে। ডাকাডাকি করলো যে, মনে হল, না হয় ঘুরেই আসি। শহরটায় আগে যাইনি কখনও, যাওয়াও হল।

প্র– যাওয়া উচিত হয়নি।

ত– ওখানে যে সিকিউরিটির ব্যবস্থা ছিল না, আমি জানতামই না। আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল যারা, বুঝতে পারেনি এরকম কিছু ঘটতে পারে।

প্র–হুম। খুব ভুল করেছেন।

ত– ভুল করবো কেন? হায়দারাবাদে যে অমন ঘটনা ঘটবে, তা তো আর আমি আগে থেকে জানি না!

প্র– হায়দারাবাদে কেন গিয়েছিলেন?

ত– আমার একটা বই তেলুগু ভাষায় বেরিয়েছে। বইটার উদ্বোধন করতে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন হায়দারাবাদের প্রকাশক।

প্ৰ– আপনার বই? হায়দারাবাদে? কেন? কেন ওরা তেলুগু ভাষায় বের করেছে? কী কারণে?

ত– আমি তো বই লিখি বাংলা ভাষায়। প্ৰ– সেটা জানি।

ত– বাংলা ভাষায় বই বেরোলে সে বই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। তেলুগু ভাষায়ও হয়েছে।

প্র– তাই নাকি?

ত– হাঁ। তেলুগু ভাষা ছাড়াও অন্য ভাষাতেও আছে বই।

প্র– সত্যি বলছেন?

ত– মিথ্যে বলবো কেন?

 প্ৰ– আর কোন ভাষায় বই বেরিয়েছে?

 ত– মারাঠি, হিন্দি, উড়িয়া, অসমীয়া, পাঞ্জাবি, মালায়ালাম..

প্র– তাই নাকি? কেন? কেন ওসব ভাষায় বেরিয়েছে?

ত– বেরিয়েছে কারণ ওসব ভাষার মানুষ আমার বই পড়তে চেয়েছে। তাই পাবলিশাররা ছাপিয়েছে।

প্র– যাই হোক। আপনার হায়দারাবাদে যাওয়াটা উচিত হয়নি।

ত– গিয়েছি তো ভারতের অনেকগুলো রাজ্যে। ওসব জায়গায় সংবর্ধনা দিয়েছে। আমার ভালোও লাগে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মিশতে। আর পাঠকের সঙ্গে কথোপকথন তো ভালো লাগারই কথা।

প্র– হায়দারাবাদ ছাড়াও অন্য জায়গায় গিয়েছেন?

 ত– তা তো গিয়েছিই। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকেই আমাকে ডাকা হয়।

প্র– কেন ডাকে আপনাকে? কে ডাকে?

ত– প্রকাশক আমন্ত্রণ জানান। সাহিত্য সংগঠন থেকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। সব সময় যাওয়া হয় না। মাঝে মাঝে যাই। কখনও তো কোথাও ভালো ছাড়া মন্দ কিছু ঘটে না। সব রাজ্যেই অবশ্য নিরাপত্তার একটা ব্যবস্থা থাকে। দিল্লিতে দুবার গিয়েছি। একবার উইমেনস ওয়ার্ল্ডের আমন্ত্রণে। আরেকবার র‍্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্টদের আমন্ত্রণে। তখন কোনও সিকিউরিটিই ছিল না। কিচ্ছু তো বিপদ হয়নি।

 প্ৰ– তাই নাকি? কেন ডেকেছিল ওরা?

ত– মানবাধিকার নিয়ে বা নারীর অধিকার নিয়ে কিছু বলার জন্য, অথবা নিজের লেখা থেকে পড়ার জন্য, এরকম আমন্ত্রণ তো জানানোই হয়।

প্র– কারা শোনে?

ত–মানুষ।

প্ৰ– ও।

ত– (দীর্ঘশ্বাস)

 প্র– কী বলেছিলেন আপনি হায়দরাবাদে? কেন আপনাকে অ্যাটাক করলো?

ত– শোধ বইটার অনুবাদ হয়েছে ওখানে, একটা মেয়ের জীবনকাহিনী। আমার বক্তব্যে আমি শুধু মেয়েদের নিজের ডিগনিটি নিয়ে, সম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকারের কথা বলেছি।

প্র– ধর্ম নিয়ে কিছু বলেছিলেন?

ত– ধর্মের ধু-ও উচ্চারণ করিনি। ইসলামের ই-ও উচ্চারণ করিনি।

 প্র– তাহলে ওরা ক্ষেপলো কেন?

ত– আমার সম্পর্কে একটা প্রচার হয়েছে চারদিকে, আমি নাকি অ্যান্টি-ইসলাম, সে কারণেই অ্যাটাক। অবশ্য পরে নানা লেখালেখি থেকে যা জানলাম তা হল, মুসলমানদের ভোট পাওয়ার জন্য আমাকে আক্রমণ করে বোঝাতে চেয়েছে ওরা। ইসলামকে আমার হাত থেকে বাঁচাচ্ছে।

প্র– আপনার বিরুদ্ধে কলকাতায় ফতোয়া জারি হয়েছে।

ত– ফতোয়া তো অনেক জারি হয়েছে। এখন তো ফতোয়া নিয়ে তেমন কিছু আর হচ্ছে না। আর আপনি তো টিপু সুলতান মসজিদের ইমামকে ডেকে এনে একবার বোঝাতে পারেন। আগের বার ফতোয়া দেওয়ার পর আপনি তাকে ঘরে ডেকে নিয়ে কথা বলার পর সে বলেছিল, ফতোয়াই নাকি দেয়নি। ওরকম করে এবার তো তাঁকে ডাকতে পারেন।

 প্ৰ– ওই ইমামের কথা বাদ দিন। ইমাম কোনও ভয়ংকর লোক নয়। যারা সামনে আসছে, ফতোয়া দিচ্ছে, ওরা ভালো। খারাপ লোক নয়। খারাপ লোক সব দল পাকাচ্ছে। তারা ডেনজারাস। গোপনে গোপনে সব তৈরি হয়ে আছে। আমাদের কাছে খবর আছে, ওদের প্ল্যান প্রোগ্রাম হয়ে গেছে আপনাকে মারার।

ত- আপনি জানেন কারা ওরা?

 প্র– জানি।

ত– সব খবর যদি জানেন কারা এসব করছে, তাহলে তো অ্যারেস্ট করতে পারেন।

প্র– না, সেটা সম্ভব না।

ত– আমার মনে হয়না কিছু হবে। আমার সঙ্গে তো সিকিউরিটির লোক আছে। মনে হয়না ও এই কলকাতায় একজনকে প্রাণে মেরে ফেলার সাহস পাবে।

প্র– কী করে জানেন আপনি? আমি কি খবর না জেনে বলছি?

ত– কিছু তো ঘটছে না। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীরা বলেছিলো মহাকরণ ঘেরাও করবে। সেই প্রোগ্রামও তো বাদ দিয়েছে।

প্র– (ধমক মেরে, জোরে) আপনি আমাকে ইনফরমেশন দেবেন নাকি আমি আপনাকে ইনফরমেশন দেব?

ত– কাগজে পড়লাম বলে বলছি।

প্ৰ– খবরের কাগজ কিচ্ছু জানে না। আমরা সব জানি। গোপনে কী হচ্ছে শহরে, তা জার্নালিস্টরা কী করে জানবে। (ধমক)

ত–তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু, যারা মেরে ফেলার প্ল্যান করছে, তাদেরকে অ্যারেস্ট করা যায় না? কারণ মেরে ফেলার প্ল্যান করা তো আইনের চোখে অপরাধ, তাই না?

প্ৰ– না, অ্যারেস্ট করা যায় না। বিশেষ করে যখন মাইনরিটির ব্যাপার, তখন যায় না।

ত– এটা কোনও কথা হল? আইন তো সবার জন্য এক হওয়া উচিত।

প্ৰ– রিলিজিয়াস সেন্টিমেন্ট আলাদা জিনিস।

ত– তা ঠিক। কিন্তু এই টেরোরিস্ট, যাদের কথা আপনি বলছেন, তারা কি আমার বই পড়েছে? মনে তো হয় না।

প্ৰ– তা জানি না। তবে ওরা তৈরি আপনাকে মারার জন্য। সব আয়োজন কমপ্লিট। এখন শুধু টাইমের অপেক্ষা। আর নভেম্বরের মাঝামাঝি তো বিরাট করে বন্ধ ডাকা হচ্ছে আপনার বিরুদ্ধে। খুব বিচ্ছিরি কান্ড হতে যাচ্ছে।

ত– কী রকম?

প্র–মব চলে আসতে পারে আপনার বাড়িতে

 ত– তাই নাকি? বাড়ি অবদি চলে আসার আগে নিশ্চয়ই বাধা দেওয়া হবে।

প্ৰ– আমি তো আপনাকে প্রোটেকশান দিচ্ছি। নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন প্রোটে কশান বাড়িয়েছি অনেক। কিন্তু মব চলে এলে যদি আমার ছেলেরা ওদের একটাকে গুলি করে, তাহলেই তো রায়ট লেগে যাবে।

ত– বলছেন কী?

প্ৰ– ঠিকই বলছি।

 ত– রায়ট লাগবে কেন?

প্ৰ– হ্যাঁ রায়ট লেগে যাবে। আপনি চান গুলি চলুক? আপনি চান আপনার কারণে কাউকে গুলি করা হোক?

ত–না আমি চাই না।

প্র– ওদের কারও গায়ে গুলি করলেই রায়ট বাধবেই। মুসলমানদের পাড়ায় খবর হয়ে যাবে। ব্যস।

ত– রায়ট কেন? এখানে কোনও তো হিন্দু মুসলমানের ব্যাপার নেই। এটা ক্রিমিনালিটির ব্যাপার। আইন কি হিন্দু মুসলমান বিচার করে?

 প্র– করতে হয়। আইনের কথা বলছেন? আপনি দেখছেন না আপনার বেলায় কী হচ্ছে। কোনও সাপোর্ট পেয়েছেন কারওর? এই যে হায়দারাবাদে মার খেলেন, কেউ কি আপনাকে সাপোর্ট করেছে? কোনও পলিটিক্যাল পার্টি? সবারই মুসলিম ভোট দরকার। সুতরাং এগুলো আপনাকে বুঝতে হবে। আপনার কিন্তু সোসাইটিতে কোনও সাপোর্ট নেই।

ত– আমি তো সাধারণ মানুষের সাপোর্ট পাই।

প্র– কে বলেছে আপনাকে?

ত– আমি বলছি। মানুষ আমাকে ফোন করছে। চিঠি লিখছে। বলছে, আমার লেখা তাদের ভালো লাগে।

প্ৰ– ওসবে কি হবে না। কোনও পলিটিক্যাল পার্টি আপনাকে সাপোর্ট করছে। না, সেটা বড় কথা। খুব বাজে অবস্থা আপনার।

.

উস্রি মজুমদার বিস্কুট, সন্দেশ, চা দিয়ে গেল ট্রেতে। উর্সি আরও অনেকের মতো ভালোবেসেই আমার কাছে আসে। চা বিস্কুট খেতে খেতে প্রসূন মুখার্জি কথা বলতে থাকেন।

প্ৰ– মাইনরিটি লিডাররা দেখা করবে সিএম-এর সঙ্গে। ওরা তো আপনাকে ডিপোর্টেশনের দাবিতে পথে নামছে। ওরা প্ল্যান করছে সিএমএর কনভয় আটকাবে। আটকালে আমাদের তো লাঠিচার্জ করতে হবে। আর লাঠিচার্জ করার মানে জানেন? খবর হয়ে যাবে। বিরাট রায়ট লেগে যাবে। লাগবেই।

ত– অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

প্ৰ– অবিশ্বাস্য নয়। আপনার জন্য তো রায়ট লাগবে কলকাতায়। আপনি থাকলে রায়ট লাগবেই।

ত– কলকাতায় আমি থাকলে রায়ট লেগে যাবে! এত বছর কলকাতায় আছি আমি, কোনওদিন কিছু হয়নি। আর হঠাৎ করে রায়টের মতো কাণ্ড ঘটবে, এ আমার বিশ্বাস হয় না।

প্ৰ– বিশ্বাস না হলে সেটা আপনার প্রবলেম। তবে ঘটনাটা তাই ঘটতে যাচ্ছে। এখন আপনাকে ডিসিশান নিতে হবে।

ত– কী ডিসিশান?

প্র– আপনি কিছুদিনের জন্য কোথাও চলে যান।

ত–মানে?

 প্র–মানে আপনাকে কিছুদিনের জন্য কলকাতার বাইরে কোথাও যেতে হবে।

 ত– কোথায়?

প্র–ইওরোপে চলে যান না।

 ত– ইওরোপে? কিন্তু ওখানে তো আমার বাড়িঘর নেই।

 প্র- দেখুন, কোথাও থাকার বন্দোবস্ত করুন।

 ত– ফিরবো কবে?

প্র– পরিস্থিতি শান্ত হলে ফিরবেন।

ত– (হেসে) মনে পড়ছে বাংলাদেশ থেকে যখন চুরানব্বই সালে আমাকে প্লেনে তুলে দেওয়া হয়, আমাকেও বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি শান্ত হলে ফিরবেন। আজ তেরো বছর হয়ে গেল, পরিস্থিতি এখনও শান্ত হয়নি।

 প্ৰ– আপনি ফিরে আসতে চাইলে নিশ্চয়ই ফিরে আসবেন।

 ত– কিন্তু আমি তো ইওরোপে যেতে পারবো না। ওখানে সব গুটিয়ে আমি এসেছি। গেলে ওখানে আমাকে হোটেলে থাকতে হবে। সে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর আমার কাছে আমার বোন আসছে দুদিন পর। অনেকদিন থাকবে।

প্র বোনকে নিয়ে চলে যান।

ত– কোথায় যাবো?

 প্র– আমেরিকায় চলে যান।

ত– আমেরিকা থেকেই তো আসছে আমার কাছে। ওকে নিয়ে আমি আমেরিকা যাবো কেন?

প্র– তবে অন্য কোথাও চলে যান।

ত– আমি তো বললাম আপনাকে, ইওরোপ বা আমেরিকায় যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। আমি অত খরচ কুলোতে পারবো না।

প্র– তাহলে ভারতের কোথাও যান।

 ত– কোথায় যাবো?

প্র– সে আপনি খুঁজে দেখুন কোথায় যাবেন। কেউ নেই আপনার চেনা পরিচিত কোথাও ভারতের কোনও রাজ্যে?

ত– আমার চেনা আছে তো অনেকে। আমার পাবলিশার আছে কেরালায়, মহা রাষ্ট্রে, উড়িষ্যায়। কেরালার সরকার আমাকে বেশ ভালোবাসে। এডুকেশন মিনিস্টিার এমএ বেবি আমাকে তাঁর বাড়িতে নেমন্তন্ন করেছেন। ফরেস্ট মিনিস্টারের বাড়িতেও ব্রেকফাস্টের জন্য ডেকেছিলেন। ওঁরা বেশ চমৎকার মানুষ।

প্র– কেরালায় চলে যান। আপনার পাবলিশারকে বলুন আপনার থাকার ব্যবস্থা করতে।

 ত– কিন্তু ওখানে তো মানুষ জেনে যাবে যে আমি গেছি। গতবার কেরালায় কিছু মুসলিম মৌলবাদী আবার আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল।

প্র– কেরালায় জানিয়ে দিন আপনি আসছেন। ওখানে প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করবে, সে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আর কোথায় বললেন, মহারাষ্ট্র?

ত– ওখানে আমার মারাঠী পাবলিশার আছেন। অনিল মেহতা। উনিও খুব ভালো।

প্র–মধ্যপ্রদেশে চলে যান না, ওখানে তো বিশাল জঙ্গল আছে!

ত– আপনি আমাকে জঙ্গলে পাঠিয়ে দিতে চান?

 প্ৰ– (অপ্রস্তুত হেসে) না, আসলে আমি তো জঙ্গল খুব ভালোবাসি, তাই বলছি।

ত– আমার জঙ্গল ভালো লাগে না।

প্র– তাহলে কী ভালো লাগে?

ত– সমুদ্র, পাহাড় এসব ভালো লাগে।

 প্র– তাহলে কেরালায় চলে যান। ওখানে এনজয় করুন সমুদ্র।

 ত– ফিরবো কবে?

 প্ৰ– তিনচার মাস থাকুন। এদিকের আগুনটা কমলে ফিরবেন।

ত– আগুনের তো কিছু দেখছি না।

প্র– আপনি দেখছেন না, আমরা তো দেখছি।

ত– আপনি যে এভাবে বাইরে চলে যেতে বলছেন, কতদিনের জন্য বলছেন যেতে। ফিরবো কবে? ফেরার কথা ঠিক করে তো বলছেন না।

প্র– যান। দুতিন মাস পর ফিরে আসুন।

ত–দুতিন মাসে কি পরিস্থিতি শান্ত হবে বলে আপনার বিশ্বাস?

প্ৰ– হা হয়ে যাবে। কত আর নেবে? কয়েক মাস পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বছর খানেকের মধ্যে তো হবেই মনে হচ্ছে।

ত– পরিস্থিতি তো আমি মোটেও অশান্ত দেখছি না। কিন্তু আমি কলকাতায় থাকলে, যা আপনি বলছেন, পরিস্থিতি অশান্ত হয়। তাহলে তো আমি ফিরে এলে আবার পরিস্থিতি অশান্ত হবে। আমি ফিরে এলে ওরা কি চুপ করে বসে থাকবে? মেনে নেবে?

প্র– এ নিয়ে ভাববেন না। তখনেরটা তখন দেখা যাবে।

ত– তাহলে এখনেরটা এখন দেখাই ভালো। পালিয়ে গিয়ে কোনও সমস্যার কি সত্যিকার সমাধান হয়? ওরা যদি জানে যে আমি ওদের ভয়ে চলে গেছি, তাহলে বিরাট ভিকটরি হবে ওদের।

প্র– আপনার এই ফ্ল্যাটটা কবে নিয়েছেন?

 ত– এই তো বছর তিনেক আগে।

প্র– জায়গাটা ভালো না। মুসলিম এরিয়ার খুব কাছে। যে কোনও সময় অ্যাটাক হতে পারে। দেখি তো ফ্ল্যাটটা, কত স্কোয়ার ফুট?

ত– ঠিক জানি না, মনে হয় সতেরোশ। দুহাজারও হতে পারে। একেকজন একেকরকম বলে।

 প্ৰ– ( উঠে ফ্ল্যাট দেখতে দেখতে) হা এরকমই একটা আমরা দেখে রাখবো। ওদিকে বাথরুম?

ত– হ্যাঁ ওদিকে বাথরুম।

 প্ৰ– (স্টাড়িতে এসে) স্টাডি?

 ত– হ্যাঁ। এখানেই বেশির ভাগ সময় থাকি।

 প্র– এখানেই বেশির ভাগ সময়? কেন, এখানে কী করেন?

 ত– লেখা পড়া করি।

 প্র– (কমপিউটারের কাছে এসে) কমপিউটারে লেখেন?

ত– হ্যাঁ।

 প্ৰ–বাংলায় লেখেন?

ত– হ্যাঁ।

 প্ৰ– আশ্চর্য!

প্র– আর ফিরে এসে আপনি এই ফ্ল্যাটটা পাল্টে নেবেন। সাউথের দিকে কোথাও ফ্ল্যাট নিন। বালিগঞ্জের দিকে নিন। এটা মুসলিম এরিয়ার খুব কাছে।

ত– ফ্ল্যাট খুঁজে পাওয়া এত কষ্টের! প্রচুর ফ্ল্যাট দেখেছি। ভালো জায়গায় ভালো ফ্ল্যাট এখনও পাওয়া হয়নি। এই ফ্ল্যাটটা খুব তাড়াহুড়ো করে নিয়েছিলাম। কোনও উপায় ছিল না। ভাড়া খুব বেশি। একটু কম ভাড়ার ফ্ল্যাট পেলে ভালো হয়।

প্র– কোনও চিন্তা করবেন না। আমরাই খুঁজে দেব।

ত– এই বাড়ি ফেলে এতদিনের জন্য কী করে আমি দুরে থাকবো? আমার তো খুব দরকারি জিনিসপত্র আছে এ বাড়িতে। কত বই। কত সার্টিফিকেট, ডকুমেন্টস। সব কি এভাবে ফেলে চলে যাওয়া ঠিক হবে?

প্র– দামি কী আছে?

 ত– সোনার মেডেল টেডেল আছে…

প্র– শুনুন, ভ্যালুবল জিনিস বরং নিয়ে যান।

ত– নিয়ে যাবো? ওগুলো নিয়ে পথে পথে ঘুরবো? আর ঘর বাড়ি এভাবেই পড়ে থাকবে? আমার বেড়ালটা কোথায় যাবে?

প্র– একটুও চিন্তা করবেন না। আমার ছেলেরা দেখবে আপনার ফ্ল্যাট। বেড়াল নিয়েও দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

ত– আশ্চর্য কেন?

প্র– কী করে লেখেন, দেখান তো।

ত– (বাংলা একটি লাইন আমার পক্ষে কোথাও যাওয়া অসম্ভব। না, এ হতে পারে না –লিখে) এভাবেই বাংলা লিখি।

প্র– (মৃদু হেসে) কী করে জানেন কোন্ কী তে কোন্ বাংলা অক্ষর আছে?

ত– অনেক বছর ধরে লিখছি কমপিউটারে। কোন রোমান হরফের তলায় বাংলা কোন হরফ লুকিয়ে আছে, জানা হয়ে গেছে।

প্র– (দরজার কাছে, চলে যেতে যেতে) আপনার বোন কবে আসছে যেন?

ত–এই তো দুদিন পর। ও অসুস্থ। কিছু ডাক্তার টাক্তার দেখাবে।

প্র– শুনুন। আপনি কিন্তু চলে যান অ্যাজ সুন অ্যাজ পসিবল। কবে যাচ্ছেন এটা আমাকে তাড়াতাড়ি ফোনে জানিয়ে দেন।

ত– আমাকে একটু ভাবতে হবে।

 প্র– ভাবার কিছু নেই। অ্যাজ সুন অ্যাজ পসিবল চলে যেতে হবে।

.

প্রসূন মুখার্জি বেরিয়ে গেলেন। দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশগুলো সব মুহূর্তে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। অসম্ভব সমীহ করে এরা উঁচু পদের কর্মকর্তাদের। আমি দরজা বন্ধ করে স্টাডিতে এসে স্থবির বসে থাকি। কণ্ঠের কাছে থোক থোক কষ্ট এসে জমছে। উস্রি চলে গেল, আমি চরাচর জুড়ে একা। পায়ের তলায় যেন মাটি কঁপছে। সবচেয়ে কাছের যে মানুষের সঙ্গে মনে হল এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি, তিনি মানস ঘোষ। তাঁর পত্রিকায় প্রতি বুধবার আমার কলাম বেরোয়। মানস ঘোষকে ফোনে খবরটা দেবার সঙ্গে সঙ্গে বললেন, সৌগত রায়কে খবরটা জানাবেন তিনি। আমার যে ক্ষুদ্র পরিচয়ের গন্ডি, এর মধ্যে রাজনীতি বোঝার লোক বা দুঃসময়ে উপদেশ দেওয়ার খুব বেশি কেউ নেই। হাতে গোনা কজন ছাড়া বাকি সব চেনা জানা সব আমার মতোই রাজনীতি-না-বোঝা মানুষ। দুজনই, মানস ঘোষ আর সৌগত রায় আমার বাড়ি পৌঁছোলেন। প্রসূন মুখার্জি আমার বাড়িতে এসে ঘণ্টা দুয়েক ছিলেন, আমাকে কলকাতা ছাড়তে বলছেন, শুনে মানস ঘোষ ঠিক কী বলা উচিত কিছু বুঝতে পারছেন না। বারবারই এক কথা বলছেন, খুব খারাপ খুব খারাপ। খুব খারাপের পর যে ঠিক কী, তা অনেকক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে। থেকেও অনুমান করতে পারিনি। সৌগত রায় তো বলেই ফেলতে লাগলেন, হ্যাঁ তুমি ছিলে, ভালোই লাগতো শহরটায়। তোমাকে খুব মিস করবো।

শুনে বুক কেঁপে ওঠে। বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠ আমার। মিস করবেন মানে? আপনি কি সত্যি সত্যি ভাবছেন আমাকে চলে যেতে হবে?

প্রশাসন যখন বলছেন, তোমার নিরাপত্তার কথা ভেবেই বলছেন। এখন তো তুমি, জানি না কোথায় যাবে, ইওরোপে?

না। আমি কোথাও যাবো না।

সৌগত রায় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে ফোন করলেন। ওপার থেকে যা ভেসে এলো তা হল, আমি হায়দারাবাদ থেকে ফেরার পর প্রিয়রঞ্জনবাবু আমার পক্ষে কথা বলে ছিলেন। অপরাধীদের কঠিন শাস্তি দেওয়ার কথাও বলেছিলেন। ছাপাও হয়েছিলো কাগজে। সে কারণে তাঁকে অসুবিধে পোহাতে হয়েছে।

কী অসুবিধে?

উত্তর মেলে না। ধারণা করে নিতে হয় যে তাঁর দলের সদস্যরা অথবা দলের মুসলিমরা আপত্তি করেছেন। আপত্তির কারণে তিনি সিদ্ধান্ত বদল করেছেন।

প্রসূন মুখার্জি যখন বলেছেন, যখন নিজে আমার বাড়িতে এসে বলেছেন, শহর শান্ত থাকলেও, হয়তো কারওরই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিল না যে শহর শান্ত। পুলিশ কমিশনার তো ফাজলামো করতে আসেননি, নিশ্চয়ই আমার নিরাপত্তার এমনই অভাব হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে পুরো রাজ্যের পুলিশ বাহিনী, আমাকে, আমার মতো একলা প্রাণীকে কোনও নিরাপত্তা দিতে অপারগ। অপারগ বলেই তো চলে যাওয়ার কথা বলা। তাঁরা একরকম মেনে নিলেন। এবং মনে মনে আমার দুরবস্থার জন্য দুঃখ করা ছাড়া তাদের খুব বেশি উপায় আছে বলে তারা মনে করলেন না। আমাকে সা না দিতেই হয়তো, বললেন, যে, আজ তো বিশেষ আলোচনা হওয়ার সুযোগ নেই, অনেক রাত হয়ে গেছে, কাল, আগামিকাল, বিকেল তিনটেয় বসা যাবে এখানে, এই ঘরে, আমার লেখার ঘরে, বাঁচার কোনও উপায় আছে কী না তা নিয়ে কথা বলতে।

 সারারাত অস্থিরতায় কাটে। পরদিন দুজন এলেন বটে, কিন্তু কোনও সমস্যার সমাধান হয় না। সিদ্ধান্ত নিই, নিজেই নিই, কোথাও যাবো না আমি।

.

এদিকে একটি ঘটনা আগুনের মতো বড় হচ্ছে কলকাতা শহরে। রিজওয়ান নামের এক গরিব মুসলমান ছেলের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা নামের এক ধনী হিন্দু মেয়ের প্রেম, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে, প্রিয়াঙ্কার বাপের বাড়ি চলে যাওয়া, রিজওয়ানের মৃত্যু। কেউ বলছে আত্মহত্যা। কেউ বলছে খুন। পুলিশের বড় কর্তারা নাক গলিয়ে ছিল প্রাপ্ত বয়স্ক রিজওয়ান আর প্রিয়াঙ্কার ব্যক্তিগত সম্পর্কে, বিয়েতে। লালবাজারে পুলিশ অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল দম্পতিকে। প্রচার মাধ্যম নিরবধি এই গল্পই পরিবেশন করে চলেছে। অভিযোগের আঙুল পুলিশের বড়কর্তাদের দিকে। অবস্থা খুব ভালো নয় প্রসুন মুখার্জিসহ দুজন বড় কর্তার। ভালো অবস্থা না থাকুক, তাতে কার কী! ফোন করলেন প্রসূন মুখার্জি। কী, আমাকে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে।

এবারের কথোপকথন ফোনে।

প্র– হ্যালো।

ত– নমস্কার। ভালো আছেন?

 প্র– ভালো থাকার কোনও উপায় আছে? কী হচ্ছে এদিকে টিভিতে, দেখছেন তো! যত্তসব। তা আপনি এখনও যাচ্ছেন না যে।

ত– কোথায় যাবো?

 প্ৰ– যে কোনও কোথাও চলে যান। আপনাকে কত বার বলবো যে কলকাতায়। আপনি থাকলে গন্ডগোল হবে। রায়ট লাগবে। মুসলিম অরগাইজেশনগুলো খুব বড় প্ল্যান করছে। বুঝতে পাচ্ছেন না আপনি..

ত- আমার তো যাওয়ার কোনও জায়গা নেই।

প্র– কিন্তু কোথাও না কোথাও তো আপনাকে যেতে হবে।

ত– জায়গা যদি না থাকে, তবে যাবো কোথায়?

প্র– কেরালা যাচ্ছেন না কেন?

ত– কেরালাতেও ওই একই ব্যাপার ঘটবে। কেরালা-সরকার আমাকে রাখতে চাইবেন না কেরালায়। ওখানে কিছু যদি একটা ঘটে যায়, সেই ভয় আপনাদের মতো ওঁরাও তো পাবেন। আপনারা নিরাপত্তা দিতে পারছেন না। ওঁরা কী করে দেবেন? আমি পশ্চিমবঙ্গে থাকি, কেরালা সরকার জানেন। কেরালায় কেন ওঁরা আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবেন। মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানে দুতিনদিনের জন্য যাই, সেটা আলাদা কথা।

প্র– হুম। আপনাকে গোপন রাখতে হবে ব্যাপারটা।

ত– কী করে গোপন রাখবো। আমাকে গোপন রাখতে দেবে কে? অন্যরা রাখবে না গোপন।

প্র– গোপন রাখা যাবে না কেন? কাউকে বলবেন না আপনি এসেছেন।

ত– আমি তো ঢোল পিটিয়ে কোথাও কিছু বলে বেড়াই না। কিছু কি আর সত্যি গোপন থাকে? জানাজানি হবেই। আমার মনে হয় না গোপনে গোপনে এত বড় একটা কাজ করা যাবে। গোপনে চলে যাওয়া কেরালায়। এসব তো কেরালা সরকার। মানবেন না। আমার পক্ষে সিকিউরিটি ছাড়া কোথাও থাকা সম্ভব হবে না। এত বড় ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।

প্র– আচ্ছা, আপনি থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুরে কোথাও যেতে পারেন না?

ত– ওখানে কী করে যাবো? ওখানে কাউকে চিনি না আমি। আর কোথায় থাকবোই বা? আমার তো কাড়ি কাড়ি টাকা নেই হোটেলে গিয়ে থাকার।

প্র– আপনি বুঝতে পারছেন না, এখানে বিচ্ছিরি সব বন্দ ট ডাকছে।

ত– আমার মনে হয় না খুব বড় কোনও দল ওরা..

প্ৰ– আপনি না হয় শান্তিনিকেতনেই চলে যান।

ত– শান্তিনিকেতনে?

প্ৰ– ওখানে কেউ নেই আপনার?

ত–না। কেউ নেই।

 প্র– আপনার এত বন্ধু বান্ধর, তাদের বাড়ি টাড়ি নেই ওখানে?

ত–আছে কারও কারও। কিন্তু..কী করে বলবো। আপনারা বলুন না, সুনীলদার বাড়ি আছে, ওখানে থাকার ব্যবস্থা হলে হয়তো থাকতে পারি।

প্ৰ– আপনার তো কলকাতা ছাড়তে হবে। কোথাও যান, বুঝলেন। আমাকে জানাবেন শিগরি। দেরি করাটা ঠিক হবে না।

ত– দেখি। আমি চেষ্টা করবো।

 আমি সত্যি সত্যি ভাবতে বসি, কোথায় যাওয়া যায়! যদিও আমার মনে হচ্ছে। না খুব মন্দ কিছু ঘটবে। কত কত দিন কলকাতার রাস্তায় নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়াই ঘুরে বেরিয়েছি। শহরে অত শত্রু থাকলে কোনও না কোনও একদিন কিছু ঘটতোই। অন্তত আক্রমণের কোনও চেষ্টা হয়তো হতো। ঠিক বুঝে পাই না কী করবো। হাতের কাছে কোনও বন্ধু নেই যে কথা বলবো এ নিয়ে। দু একজন যাদের সঙ্গে কথা বলি, ওরা বোঝে না কী বলছি আমি। অথবা বুঝলেও এ নিয়ে কী মন্তব্য করবে, তা ঠিক জানে না।

কয়েকদিন পর আবার ফোন প্রসূনবাবুর। তিনি এবার প্রথম কথাটাই বললেন এভাবে

প্ৰ– শুনুন, সিএম বলেছেন আপনাকে কেরালা চলে যেতে। খুব শিগরি, পারলে আজই যান।

ত– কেরালা?

 প্ৰ– হা কেরালা। ওখানে সরকারের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। আপনাকে চলে যেতে হবে।

 ত– কেরালায় লোকে যখন জানবে আমি ওখানে? ওখানেও তো মুসলমান মৌলবাদী আছে। ওরা বসে থাকবে? কলকাতায় যারা আমাকে মেরে ফেলবে বলছি লেন। ওরা বসে থাকবে? ওরা তো কেরালায় গিয়ে আমাকে মেরে আসবে।

প্র– আপনাকে যেতে হবে যে করেই হোক, সিএম বলেছেন।

 ত–হাঁ বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাকে তো আমার জীবনটার কথা ভাবতে হবে। আমি তো, আপনি বলবেন, আর, দিব্যি কোথাও মরতে যেতে পারি না। আপনারা যে আমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন কলকাতা ছাড়ার জন্য, তা তো আমাকে জানাতে হবে। তা না হলে আমি যদি কেরালায় গিয়ে মরে যাই, মানে কেউ আমাকে মেরে ফেললে দোষ আমার হবে। লোকে বলবে, হঠাৎ আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো, কলকাতা ছেড়ে কেরালায় চলে গেছি! কেন গেছি, কী কারণে গেছি তা না জেনে, লোকে আমাকেই দোষী করবে। গেলে আমাকে জানিয়ে যেতে হবে। লুকিয়ে পালিয়ে চুপিচুপি কোথাও যাবো না।

প্র– না না না এসব ব্যাপার খুব কনফিডেনশিয়ালি করতে হবে। কেউ যেন না জানতে পারে।

ত– গোপন রাখতে চাইলেই তো গোপন রাখা যায় না। আমার চেহারা তো মানুষ চিনে ফেলে, জানেন তো? চিনে ফেলবে। কোথাও গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখা যাবে না। আর, আমি কেন গোপন রাখবো, বলুন তো। আমি তো মিথ্যে বলি না। আর মুখ বুজে থাকলেও ওরা কারণ বের করে ফেলবে। গোপনে গোপনে রাজ্যের বাইরে যাবো। কেউ জানবে না কী করতে আমি কেরালা গিয়েছি? সবাই ভাববে শখে গিয়েছি, শখে মরতে গিয়েছি। তা কেন, বলুন! তার চেয়ে জানাই সবাইকে যে যাচ্ছি।

প্র– না না। গোপন রাখতে হবে।

ত– আমি তো গোপন রাখতে চাইছি না। আমি তো চাইছি জানাতে হয় আপনি জানাবেন, নয়তো আমি জানাবো। যে কোনও একজনকে তো জানাতে হবে। আপনাকে বলতে হবে, আপনারা আমাকে কলকাতা থেকে চলে যেতে বলছেন, কারণ। আমার নিরাপত্তা দিতে পারবেন না। অথবা আমাকে জানাতে হবে।

প্ৰ– হ্যাঁ আমিই জানাবো। খটাশ করে ফোন রেখে দিলেন।

রেখে দিলেন। কিন্তু মনে আমার অদ্ভুত এক প্রশান্তি। যে কথাগুলো বলা উচিত, সে কথাগুলো বলেছি বলে, বলতে পেরেছি বলে। আমার আর হারানোর কী আছে! জীবনে তো সবই হারিয়েছি। কী দোষ করেছি আমি যে গোপনে আমাকে শহর ছাড়তে হবে, আরেক শহরের গর্তে গিয়ে লুকিয়ে থাকতে হবে।

.

এর কদিন পর ফোন করলেন লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে সবচেয়ে সুসম্পর্ক যে লেখকের। আমার সঙ্গেও ছিল দীর্ঘকালের বন্ধুত্ব।

সু- হ্যালো তসলিমা, আমি সুনীলদা বলছি।

ত– সুনীলদা, ভালো আছেন? কতদিন পর আপনার সঙ্গে কথা হচ্ছে। ভালো আছেন তো সুনীল দা?

সু– হা ভালো। তুমি কেমন আছো?

ত– নাহ, সুনীলদা, ভালো নেই। আমাকে কোথাও বেরোতে দিচ্ছে না।

সু– হুম।

ত– ঘর থেকে বেরোতে চাইলেই বলছে, না সম্ভব নয়। এভাবে ঘরে বসে। থাকাটা ভালো লাগে? আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কী রকম দমবন্ধ লাগছে আমার?

সু– শোনো, তোমাকে যে জরুরি কারণে ফোন করেছি, তা হল, পুলিশের কাছে খবর আছে, তা হল, এখানে কিছু অবাঙালি মুসলমান তোমাকে মেরে ফেলার জন্য তৈরি হয়ে আছে। এখন, সবচেয়ে ভালো, তুমি যদি বিদেশে কোথাও চলে যাও।

 ত– আমি জানি। প্রসূনবাবু আমাকে বলেছেন। তিনিও বলেছেন বিদেশে চলে যাই যেন। কিন্তু সুনীলদা, পৃথিবীর সব জায়গায় মুসলিম মৌলবাদী আছে। ইওরোপে, আমেরিকায়, কোথায় মৌলবাদী নেই? জীবনের ঝুঁকি পৃথিবীর সব জায়গায় আছে। আর আমি এ দেশ ছেড়ে যাবো কোথায়? বাংলাদেশে যদি যাওয়া সম্ভব হত, আজই চলে যেতাম। এত অপমান সয়ে এ দেশে থাকতাম না। আর, সত্যি কথা বলতে কী, আমার যাওয়ার কোনও জায়গা নেই সুনীলদা। ইওরোপের পাট চুকিয়ে এদেশে এসেছি, কলকাতায় থাকবো বলে। ইওরোপ আমেরিকায় আমি তো থেকেছি। ওসব দেশে থাকার কোনও ইচ্ছে আমার নেই। আর, এই কলকাতায় যদি আমাকে মেরে ফেলে কেউ, মেরে ফেলুক। আমি কলকাতা ছেড়ে কোথাও যাবো না।

সু– আমার মনে হয় তুমি আরও ভেবে দেখো।

ত– আমি ভেবে দেখেছি সুনীলদা। আমার কোথাও যাওয়ার নেই। মরলে এ শহরেই মরবো।

 সু– আচ্ছা। কী আর বলবো তবে। রাখছি।

 ত– ঠিক আছে। আপনি ভালো থাকবেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ফোন আমাকে ভেতরে কাঁপায়। মুখ্যমন্ত্রী প্রসূন মুখোপা ধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সবাইকে দিয়ে আমাকে বলাচ্ছেন কলকাতা ছাড়ার জন্য!

.

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ফোনের বেশ কিছুদিন পরে এলো আরও একজন বড় লেখকের ফোন। বুদ্ধদেব গুহ। বললেন, ঐ একই কথা, চলে যাও। কী দরকার কলকাতায় থেকে? কী আছে এখানে। তিনি সরাসরিই বললেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাথে কথা হয়েছে। তিনি চাইছেন আমি কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাই।

এর কদিন পর বাড়িওয়ালার বউ ফোন করলেন। বাড়িওয়ালা ডাক্তার দেবল সেন। কিন্তু যোগাযোগ আমার সঙ্গে রাখেন শর্মিলা সেন, দেবল সেন-এর স্ত্রী। তিনি সবসময়ই খুব আন্তরিক। বাড়ি ভাড়া আঠারো হাজার ছিল, কিন্তু দুমাস পর ওটাকে কুড়ি হাজার করেছিলেন, বলেই নিয়েছিলেন, কুড়ি হাজারের নিচে ও বাড়ি ভাড়া হয় না। আমি একফোঁটা আপত্তি করিনি। এদিকে আবার মেইনটেইনেন্স খরচ দিতে হয় আড়াই হাজারের মতো। সব মিলিয়ে সাড়ে বাইশ হাজারে চমৎকার চলছিলাম। যদিও বাড়িতে থাকার পর থেকে অন্য ভাড়াটেরা যা পায়, তা থেকে আমি বঞ্চিতই হয়েছি। ইন্টারকম কদিন কাজ করে আর করেনি। অভিযোগ করার পরও কেউ ও যন্ত্রটা সারাতেও আসেনি। বাড়িওয়ালার কিছু ছারপোকা-ওয়ালা চেয়ার টেবিল আমাকে পুষতে হয়েছে। আর পুজোর ঘর বলে একটা ঘর আছে, ও ঘরটায় বাড়িও য়ালার কাগজপত্র ঠাসা বাক্সও পুষেছি। না, ও নিয়েও আমি কখনও আপত্তি করিনি। শর্মিল সেন বলেছিলেন, তাঁর বাড়িতে জায়গা নেই বলে এখানেই রেখেছেন। বাড়িটিতে ঢোকার পর অবশ্য বাড়িটিকে বাসযোগ্য করার জন্য পকেটের টাকা খরচ করে বাড়ির ভাঙা অকেজো নানাকিছু সারাতে হয়েছে। এ নিয়েও অভিযোগ করিনি। দেবল সেন খুব বড় কার্ডিওলোজিস্ট, কিন্তু বড় একজন ফটোগ্রাফারও। একদিন তাঁর ফটোগ্রাফির বই দিয়ে গেলেন। বন্য জন্তুর ফটো তোলা তাঁর শখ। তবে একে ঠিক শখের ফটোগ্রাফি বলা যায় না, রীতিমত পাকা হাতের কাজ। সেই ভদ্র বিনীত দেবল সেন-এর কণ্ঠস্বরও বছর তিন পর পাল্টে যেতে দেখলাম। তাঁর বাড়িতে আমি ভাড়া থাকি, এ কথাটা কাগজে লিখে দিতে হয়, ছ মাস পর পর যখন আমার রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ বাড়ানোর সময় আসে। অ্যাড্রেস প্রুফ বলে একটা ব্যাপার আছে, আমি কোথায় থাকি, কোন ঠিকানায়, তা আমার কাছে যখন কোনও প্রমাণ নেই, বাড়ির ইলেকট্রিসিটি বিল যেহেতু দেবল সেন-এর নামেই আসে, তাঁকেই সই করে দিতে হয় কাগজে যে হাঁ ও বাড়িতে আমি থাকি। ওটাই প্রমাণ করে আমি রাস্তাঘা টের ঠিকানাহীন সন্ত্রাসী নই, আমার একটা ঠিকানা আছে। তবে এ বার তিনি কাগজ দেখে আকাশ থেকে পড়লেন, এ কীসের কাগজ তিনি চিনতে পারলেন না, এবং সই করলেন না। এদিকে শর্মিলা সেনও, যিনি আমার বাড়িতে এসে বাড়ি এত সুন্দর সাজানো, এত যত্ন করে রাখা, এত চমৎকার লাগছে বলে প্রশংসা করে যেতেন, একদিন ফোন করে বলেন, এ বাড়ি আমাকে ছেড়ে দিতে হবে। অদ্ভুত শোনায় তাঁর এবারের কণ্ঠস্বর।

শ– আমার বাড়িটা কিন্তু আপনাকে ছাড়তে হবে।

 ত–মানে? বাড়ি ছাড়ার প্রশ্ন উঠছে কেন?

শ–আসলে কী জানেন, খুব বেশি ভাড়া দেবে, এমন একজনকে পেয়েছি। তাঁকে কথাও দিয়েছি। এখন সামনের মাসেই সেই ভাড়াটেকে দিতে হবে বাড়ি।

ত– এরকম বললে তো হয় না। আমার তো কোনও একটা অ্যাপার্টমেন্ট পেতে হবে আগে। তা না হলে কোথায় যাবো।

শ– আপনি যদি এ মাসের মধ্যেই বাড়িটা ছেড়ে দেন, ভালো হয়। আপনার। অনেক বন্ধু আছে। তাদের খুঁজতে বলুন বাড়ি।

ত–ঠিক আছে, আমি বাড়ি খুঁজতে থাকি। পেলে আমি নিশ্চয়ই চলে যাবো।

শ– বুঝলেন তো, যে কম ভাড়ায় আপনি থাকছেন, এরকম ফ্ল্যাটে এত কম ভাড়ায় কেউ থাকে না।

ত– কত টাকা ভাড়া চাইছেন? যদি আমি দিই তত টাকা, তাহলে তো নিশ্চয়ই আমাকে বাড়ি ছাড়তে বলবেন না।

 শ– এ বাড়ির ভাড়া পঞ্চাশ হাজার টাকা। তবে আপনার জন্য পঁয়তাল্লিশে রাজি হতে পারি।

চমকে উঠি। এত টাকা ভাড়া হয় নাকি! কুড়ি হাজার থেকে লাফিয়ে পঁয়তাল্লিশ হাজার! কখনও শুনিনি এমন।

ত– ভাড়া, যতদূর জানি, এক দুহাজার করে বাড়ানো হয়। এভাবে দ্বিগুণের বেশি কেউ কি বাড়ায়?

শ– আমাকে বাড়াতে হবে। আর কোনও উপায় নেই আমার। একজন যখন অত টাকায় ভাড়া নেবে বলেছে, তখন তো বসে থাকতে পারি না। কালই দেখতে আসবে বাড়ি।

ত– তা দেখুন। কিন্তু আমাকে আপনার সময় দিতে হবে, যতক্ষণ না আমি কোনও জায়গা পাচ্ছি।

শ– খুব হারি। ঠিক আছে?

এর কিছুদিন পর আবারও শর্মিলার ফোন। ওই একই কথা। বাড়ি ছাড়ুন। আবারও ফোন। প্রায়ই ফোন। প্রায় প্রতিদিন ফোন। বাড়ি ছাড়ুন।

.

বিনীত গোয়েল এক সময় খুব সমীহ করে কথা বলতেন। এখন ফোন করেন, তবে কণ্ঠস্বর বিনীত নয়, ভাষাও ভিন্ন, স্বর এবং সুর দুই-ই পাল্টে গেছে।

বি– আপনাকে কোথাও তো চলে যেতে হবে।

 ত– মানে?

 বি– শহরের অবস্থা খুব খারাপ। কিছুদিন বাইরে কোথাও থেকে আসুন।

ত–শহর তো ঠিক আগের মতোই। কিছুই তো দেখছি না অন্যরকম।

বি– বড় মিছিল বেরোবে আপনার বিরুদ্ধে।

ত– সে কারণে শহর ছাড়তে হবে কেন? অনেকের বিরুদ্ধে তো মিছিল বেরোয়, তারা কি তাই বলে শহর ছেড়ে চলে যায়?

 বি– দেখুন, আপনার ভালোর জন্য বলছি। আপনি কি চান না আপনাকে আমরা নিরাপত্তা দিই? চারদিকে গণ্ডগোল শুরু হলে আমরা কিন্তু আপনাকে নিরাপত্তা দিতে পারবো না। নিরাপত্তা ছাড়া শহরে কী করে থাকবেন।

. অন্ধকার আমাকে গ্রাস করতে থাকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *