কতো টাকা জমলে বাঙলাকে ঘৃণা করতে ইচ্ছে হয়?
বাঙলাদেশের ধনীশ্রেণীর মনস্তত্ত্বের দুটি কালো এলাকার নাম বাঙলা ও বাঙলাদেশ। বাঙলা ও বাঙলাদেশ তাঁদের কাছে শ্রদ্ধেয় নয় : তাঁরা প্রকাশ্যে গোপনে ঘৃণাই করেন বাঙলা ও বাঙলাদেশকে। গরিবদের পক্ষে অমন কালো আবেগ বুকের মধ্যে জন্মানো অসম্ভব; কেননা তাঁরা পৃথিবীর সীমা, বর্ণাঢ্যতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন খুবই কম। ধনীরা জানেন সব, তাঁদের কামনাবাসনাও ব্যাপকবিস্তৃত। খাদ্য-বাসস্থান তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়; ওসব আছে তাঁদের অঢেল। তাঁদের কামনাবাসনার বস্তু তা, যা নেই বাঙলাদেশে : ঠিক সাবান শ্যাম্পুটি পাওয়া না গেলে ঘৃণায় কালো হয়ে যায় তাঁদের হৃৎপিণ্ড। এ-শ্রেণীটি বাঙলা ভাষাকে ঘৃণা করেন : বাঙলা তাঁদের সবারির সাথে তাল মেলাতে পারে না ব’লে। বাঙলা ভাষাকে ভালোবাসা বা ঘৃণা করাও মূলত আর্থসূত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত : ধনের প্রাচুর্য ও বাঙলা ভাষাকে ভালোবাসা বিপ্রতীপভাবে সম্পর্কিত। প্রশ্ন : কতো টাকা জমলে বাঙলা ভাষাকে অবহেলা আর ঘৃণা করতে ইচ্ছে হয়, এবং কতো কোটিতে ওই সাধ বাস্তবায়িত হয়? শ্রমিক-চাষীর পক্ষে এমন আবেগ পোষণ করা অসম্ভব। ভিখিরির পক্ষে সম্ভব নয়। পাঁচ শো টাকা বেতনের কর্মচারীর, বিদ্যালয়শিক্ষকের পক্ষে বাঙলাকে অবহেলা-ঘৃণা করা সম্ভব? সম্ভবত নয়। মাসে হাজার টাকা এলে সম্ভব? কারোকারো পক্ষে সম্ভব, যদি তাঁর থাকে অর্থউচ্ছল শ্রেণীতে আরোহণের অভিলাষ। কিন্তু টাকা যতোই জমতে থাকে অবহেলা-ঘৃণাও জমতে থাকে; কালো টাকা বৃদ্ধির সাথেসাথে বাড়িগাড়ি-মর্যাদা-ক্ষমতা যেদিন সম্পূর্ণ আয়ত্তে আসে, সেদিন বাঙলাকে ঘৃণা-অবহেলার প্রক্রিয়াটিও সম্পূর্ণ হয়। এ-শ্রেণীটি তাঁর সমস্ত অনৈতিকতা-দুর্নীতির মধ্যেও কখনো বিস্মৃত হন না যে ইংরেজি শিখতে হবে, কেননা ইংরেজিই জোগায় আর্থ ও অন্যান্য শক্তি।