কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৪

১৪

কোথাও যেন কোনও শান্তি নেই। কোথাও যেন কোনও সান্ত্বনাও নেই। শুধু অলস অকর্মণ্য দেহটাকে কোনও রকমে বয়ে বেড়ানো। এমন করে এত আগ্রহ করে কার ভালো সে চেয়েছিল? কার মঙ্গল সে কামনা করেছিল? কার ভালোর জন্যে সে দিনরাত নিজের বিশ্রাম, নিজের স্বাচ্ছন্দ্যকে জলাঞ্জলি দিয়েছে? সে কি সতী? সে কি সেই ঈশ্বর গাঙ্গুলী লেনের সেই প্রথম দেখা মেয়েটি?

রাস্তায় ব্ল্যাক-আউটের অন্ধকার। কোথায় কত দূরে যুদ্ধ বেধেছে টাকার, যুদ্ধ বেধেছে প্রতিষ্ঠার, যুদ্ধ বেধেছে অস্তিত্বের, যুদ্ধ বেধেছে প্রতিযোগিতার, দম্ভের আর ক্ষমতার। এখানে এই ভারতবর্ষের কলকাতা শহরেও তার ছোঁয়াচ এসে লেগেছে। ট্রামে-বাসে তারই নিলর্জ্জ প্রমাণ। কলকাতা থেকে পালতে হবে। এখানে জাপানীরা বোমা ফেলবে। শহর ভাঙবে, গুঁড়ো হয়ে যাবে। অস্বাস্থ্যকর গুজবে ভরে গেছে কলকাতার বাতাস। কোথাও শান্তি নেই। কোথাও সান্ত্বনাও নেই। সমস্ত পৃথিবীটাই যেন দীপঙ্করের অন্তরাত্মার মত বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।

লক্ষ্মীদির কথা মনে পড়লো।

সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে লক্ষ্মীদিই যেন কেবল এ-অবস্থায় তাকে একটু সান্ত্বনা দিতে পারে। সত্যিই তো, লক্ষ্মীদি ছাড়া আর কে আছে তার? গাঙ্গুলীবাবু নেই, মিস্ মাইকেল নেই, মা ছিল, তাও নেই। সতীর চিন্তা ছিল—তাও মুছে গেল। এখন আছে শুধু লক্ষ্মীদি।

লক্ষ্মীদি হয়ত এখন এই মুহূর্তে খুব ব্যস্ত। এখন সেই তারা সব এসে হয়ত জড়ো হয়েছে লক্ষ্মীদির ঘরে। সেই গভর্নমেন্ট অফিসার সুধাংশু, সেই চৌধুরী। সকলের নাম জানে না দীপঙ্কর। হয়ত সেদিনকার মত ফাউল-রান্না হচ্ছে, মাংসের গন্ধে ভরে গেছে বাড়ি। আর সেই দাতারবাবু হয়ত পাশের ঘরে কোট-প্যান্ট পরে সেজে-গুজে পুতুলের মত বসে আছে।

তা হোক, তবু আজকের সতীর এই ঘটনাটা লক্ষ্মীদিকে বলা ভাল। লক্ষ্মীদিকে খবরটা দেওয়া উচিত।

সেই গড়িয়াহাট লেভেল-ক্রসিং। সেই ভূষণ গেটম্যান। লাল সিগন্যালটা জ্বালিয়ে গেটটা বন্ধ করে জানলায় দাঁড়িয়ে আছে। হয়ত সেভেনটিন আপ আসবে। এই তো সেভেনটিন আপ আসবার টাইম হয়ে গেছে।

কিন্তু লক্ষ্মীদির বাড়ির সামনে যাবার আগেই দূর থেকে জায়গাটা দেখে দীপঙ্কর থমকে দাঁড়াল। এত লোক সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কী হলো ওখানে? কী হলো? কোনও বিপদ হলো নাকি? কোনও দুর্ঘটনা? যাবে কি যাবে না দ্বিধা হতে লাগলো। যদি দাতারবাবুর কোনও দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। যদি লক্ষ্মীদির কোনও বিপদ হয়ে থাকে। যদি…..

—দীপু!

ভিড়ের মধ্যে থেকে এগিয়ে এল লক্ষ্মীদি! দীপঙ্কর অবাক হয়ে গেল লক্ষ্মীদিকে দেখে! যেন আর চেনা যায় না। আবার যেন সেই আগেকার মত চেহারা হয়ে গেছে। সেই কলেজে পড়বার সময়কার মত। শাড়িতে গয়নায় ঝল্‌মল্ করছে লক্ষ্মীদি। পান খেয়েছে জর্দা দিয়ে। হাতের কব্জিতে ঘড়ি। খোঁপায় ফুল, ঠোঁটে রঙ।

—আর একটু পরে এলেই দেখা হতো না!

তারপর পাশের একজনকে ডেকে বললে—এই দেখ, কে এসেছে দেখ—

—আরে দীপুবাবু!

একেবারে হাত জড়িয়ে ধরেছে দাতারবাবু। দীপঙ্করও দাতারবাবুকে দেখে অবাক হয়ে গেল। এই সেই দাতারবাবু। এমন চেহারা হয়ে গেছে। কোর্ট, প্যান্ট, টাই— সিগারেট খাচ্ছে দাতারবাবু সেই আগেকার মত!

দাতারবাবু বললেন—কী হয়েছে তোমার দীপুবাবু?

লক্ষ্মীদিও একেবারে ঘনিষ্ঠ হয়ে দীপঙ্করের দুটো কাঁধে হাত রেখে বললে—কীরে, কী হয়েছে তোর?

অন্য যারা দাঁড়িয়ে ছিল পাশে তারাও একদৃষ্টে দেখতে লাগলো দীপঙ্করের দিকে। দীপঙ্করের যেন কেমন অস্বস্তি লাগলো।

সুধাংশু এগিয়ে এল দীপঙ্করের দিকে। হাতের সিগারের টিনটা এগিয়ে দিলে দীপঙ্করের দিকে। বললে—নিন মিস্টার সেন—

লক্ষ্মীদি বললে—আরে, তুমি কাকে কী দিচ্ছ, দীপঙ্কর স্মোক করে না—

সবাই অবাকই হয়ে গেছে। সিগারেট খায় না! এমন ভদ্রলোকও আছে নাকি এ- যুগে।

সুধাংশু বললে—আমিও আগে খেতুম না মিসেস দাতার—কিন্তু যেদিন থেকে ড্রিঙ্ক করছি, সেইদিন থেকেই স্মোক করতে আরম্ভ করলুম—

দাতারবাবু বললেন—দীপুবাবু বরাবর গুড বয়—

লক্ষ্মীদি বললে—তুমি তো জানো না, দীপু এখন রেলওয়ের মস্ত অফিসার— সুধাংশু বললে—আপনি মিস্টার ঘোষালকে চেনেন মিস্টার সেন? আমার ফ্রেন্ড— আমরা কন্টিনেন্টে একসঙ্গে ছিলুম—শেষে —

দীপঙ্কর বললে—আমি এখন আসি লক্ষ্মীদি—

লক্ষ্মীদির শাড়িতে দামী সেন্টের গন্ধ বেরোচ্ছে। বললে—তুই যাবি?

দীপঙ্কর বললে—হ্যাঁ, আর একদিন আসবো—

লক্ষ্মীদি বললে—কিন্তু একটু সকাল-সকাল আসিস, আজকাল সন্ধ্যেবেলা রোজ বাড়িতে থাকি না। এই দেখ, এই গাড়িটা কিনলুম—

গাড়ি! দীপঙ্কর আকাশ থেকে পড়লো।

লক্ষ্মীদি বললে—পনেরো হাজার টাকা পড়লো। কিনলে ভালো জিনিসই কেনা উচিত, কী বল্? দেখ না নাইনটিন ফর্টি মডেল, সুধাংশুর এই মডেলটাই পছন্দ হলো—

সুধাংশু বললে—কী বলেন মিস্টার সেন, মিসেস দাতার বলছিলেন মেরুন কালারটাই ভাল, আমি বললাম বটল-গ্রীন—গ্রীনটাই মিসেস দাতারকে মানায় না? আপনি কী বলেন?

দীপঙ্কর একটু হাসলো। তারপর বললে-আমি তাহলে আসি লক্ষ্মীদি—

—তুই যাবি?

লক্ষ্মীদি দীপঙ্করের সঙ্গে একটু এগিয়ে এল। দল ছাড়িয়ে একটু দূরে। বললে—কিছু কন্ট্রাক্ট পেয়েছি, মিলিটারি কন্ট্রাক্ট জানিস—সুধাংশু এখন সাপ্লাই ডিপার্টমেন্টের ডাইরেক্টর হয়েছে। যত কন্ট্র্যাক্ট পাচ্ছে, সব আমাকে দিচ্ছে, টাকা আসছে তাই গাড়িটা কিনলুম, আর দেখলি তো দাতারবাবুও কেমন ভালো হয়ে গেছে—

—আমি তাহলে আসি লক্ষ্মীদি—

—কিন্তু আসিস তুই আবার। আজকে তোর সঙ্গে আর কথাই হলো না। নাইট- শো’তে সিনেমায় যাচ্ছি এখন সবাই মিলে, টিকিট কাটা হয়ে গেছে তা না-হলে তোকেও নিয়ে যেতুম!

দীপঙ্কর বলল—তাতে কী হয়েছে, আমি যাই—

—মাসীমা কেমন আছেন?

দীপঙ্কর বললে—মা নেই—

—সে কীরে? কবে? কী হয়েছিল?

অনেক কথা! অনেক কথা জিজ্ঞেস করলে লক্ষ্মীদি। অনেক সহানুভুতি, অনেক সান্ত্বনা, অনেক বাঁধা বুলি। দীপঙ্কর সব কথার জবাব দিলে সংক্ষেপে। বললে-আমি যাই তাহলে লক্ষ্মীদি

—হ্যাঁ, ভালো কথা, সতীর খবর কী?

দীপঙ্কর তখন যাবার জন্যে পা বাড়িয়েছে। পেছন থেকেও সুধাংশুর দল তখন তাগাদা দিচ্ছে। দীপঙ্কর যেন সে-কথার উত্তর না দিতে পেরে বেঁচে গেল। সিনেমার টিকিট কাটা হয়ে গেছে ওদের। দেরি হয়ে যাচ্ছে। দীপঙ্কর তাড়াতাড়ি পা বাড়িয়ে দিলে।

খানিক পরেই লক্ষ্মীদির নতুন-কেনা নাইনটিন ফর্টি মডেলের গাড়িখানা দীপঙ্করের পাশ কাটিয়ে সোঁ-সোঁ করে চলে গেল। ভালোই হলো। সতীর কথা শোনবার মত সময় লক্ষ্মীদির তো এখন নেই। আর শুনলেও তো কোনও প্রতিকার করতে পারবে না।

.

অনেক রাত্রে বাড়িতে গিয়ে কড়া নাড়তেই দরজা খুলে গেল ভেতর থেকে।

সাধারণত কাশী এসেই দরজা খুলে দেয়। বেশি রাত হলেও কাশীই খোলে। ঘুমিয়ে পড়লেও জেগে উঠে দরজা খুলে দেয়।

আজ কিন্তু দীপঙ্কর লজ্জায় পড়ে গেল।

সন্তোষ-কাকার মেয়ে নিজে দরজা খুলে দিয়ে পাশে মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

দীপঙ্কর কী করবে বুঝতে পারলে না। আস্তে আস্তে ওপরে গেল। ওপরে গিয়ে নিজের জামা-কাপড় বদলালে। তারপর নীচেয় কলতলায় এসে হাত-মুখ ধুয়ে আবার ওপরে উঠে গেল। সবাই ঘুমোচ্ছে। অন্ধকার সারা বাড়িটা। কাশীটা একতলার বারান্দায় পড়ে পড়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। সন্তোষ-কাকারও নাক-ডাকার শব্দ আসছে একতলার ঘর থেকে। দীপঙ্কর কি নীচেয় যাবে? নীচেয় গিয়ে খাবার দিতে বলবে? সমস্ত বাড়িটাতে কেউ জেগে নেই। হয়ত কাশীকেই ডাকবে সন্তোষ-কাকার মেয়ে। কাশীকেই ডেকে তুলবে। সাধারণত কাশীই খেতে ডাকতে আসে। দীপঙ্কর খাবার জন্যে তৈরি হয়ে চুপ করে টেবিলের সামনে বসে রইল।

—আপনার খাবার কি এখানে এনে দেব?

বড় মিষ্টি গলা। দীপঙ্কর পেছন ফিরে দেখলে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সন্তোষ- কাকার মেয়ে তাকে লক্ষ্য করেই কথাগুলো বলছে।

দীপঙ্কর তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে উঠে বললে—না, না, আমি নীচেই খাবো—ওপরে আনবার দরকার নেই—

তারপর তাড়াতাড়ি নীচেয় এসে দেখলে এখনও খাবার দেওয়া হয়নি। দীপঙ্কর সেখানে দাঁড়িয়েই কী করবে ভাবতে লাগলো। সন্তোষ-কাকার মেয়ে ততক্ষণে তাড়াতাড়ি ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে জায়গাটা মুছে দিয়েছে। একটা আসন পেতে দিয়েছে। তারপর একগ্লাস জলও দিলে। দীপঙ্কর লক্ষ্য করলে সন্তোষ-কাকার মেয়ে যেন থর থর করে কাঁপছে। তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে যেন আর সামলাতে পারছে না নিজেকে।

তারপর ভাতের থালাটা এনে রাখতে গিয়েই কী যে হলো। হাত থেকে থালাটা পড়ে গিয়ে ঝন্ ঝন্ করে একটা শব্দ হলো। আর থালার অর্ধেক ভাত ছড়িয়ে ছিটকে ছত্রখান হয়ে গেল চারিদিকে।

এক মুহূর্তে যেন বিপর্যয় ঘটে গেল হঠাৎ।

আর সন্তোষ-কাকার মেয়ে সেই দৃশ্য দেখে একেবারে লজ্জায় সঙ্কোচে এতটুকু হয়ে গেছে।

দীপঙ্কর দেখলে—সন্তোষ-কাকার মেয়ের চোখ দিয়ে ঝর্ ঝর্ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।

আর সেই শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে কাশীর। ঘুম ভেঙে গেছে সন্তোষ-কাকার। সন্তোষ-কাকা ঘর থেকে চিৎকার করে উঠেছে—কে রে? কে রে? কী পড়লো ওখানে?

কাশীও উঠে এসেছে। সন্তোষ-কাকাও কাছা-কোঁচা সামলাতে সামলাতে একেবারে সামনে এসে হাজির। এসে একবার দীপঙ্করের মুখের দিকে, আর একবার ক্ষিরির মুখের দিকে চাইলে।

—কী হলো? ভাত পড়লো কী করে?

তারপর দীপঙ্করের মুখের দিকে চেয়ে কী যেন সন্দেহ করলে। বললে—কী করেছ, বলো? তুমি মেরেছ ক্ষিরিকে? তুমি মারলে আমার মেয়েকে?

ক্ষিরি তাড়াতাড়ি গিয়ে বাবার হাতটা ধরলে। বললে—না বাবা, না, আমার হাত থেকে পড়ে গেছে থালাটা—

—কিন্তু পড়লো কেন?

—এমনি পড়ে গেছে বাবা, আমি বুঝতে পারিনি।

সন্তোষ-কাকা দীপঙ্করের মুখের দিকে চাইলে আবার। তারপর বললে—এখন কী খাবে?

দীপঙ্কর চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। এবার ওপরের সিঁড়ির দিকে উঠে গেল। বললে—আপনি ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? আমার খিদে নেই—

ব্যস্ত হচ্ছি কেন? বেশ তো কথা, আমার মেয়ে রান্না-বান্না করলে, খালে খুলে, আর তুমি খেতে পেলে না, আমি ব্যস্ত হবো না? আমি ভাববো না তো কে ভাববে, শুনি? আমার মেয়ে যে দিনরাত ঝি-এর মত খাটছে, রাঁধুনির মত উনুনের ধোঁয়ায় দেহ কালি করে ফেলছে—তার বেলায়? তার বেলায় তো তুমি ভাবছো না? এই যে রান্না-বান্না করে এত রাত ওবৃদি ভাত আগ্‌লে বসে থাকে—তার বেলায় তো আমি ছাড়া ভাববার আর কেউ নেই?

—আঃ—

ক্ষীরোদা বাবাকে জোর করে থামিয়ে দেয়। সন্তোষ-কাকা তখন গজ্ গজ্ করতে করতে গিয়ে আবার নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। শুতে শুতেই আবার নাক ডাকতে শুরু করে সন্তোষ-কাকার। কাশীটাও ঢুলছিল। সে-ও খানিক পরে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলে না। ক্ষীরোদা তখনও কী করবে বুঝতে পারলে না। একটা বেড়াল পাঁচিল টপ্‌কে এসে দাঁড়াল উঠোনের মধ্যে। তারপর ক্ষীরোদাকে দেখে যেন একটু সঙ্কোচ করতে লাগলো। তারপর আরো একটু এগিয়ে এলো। তারপর আরো। ক্ষীরোদা চুপ করে সেখানে দাঁড়িয়ে নিজের কথাই ভাবছিল। হঠাৎ নজর পড়লো বেড়ালটার দিকে। বেড়ালটা আরো এগিয়ে এল। একেবারে ভাতের কাছাকাছি। আস্তে আস্তে পা বাড়িয়ে ভয়ে ভয়ে এগোতে লাগলো। ক্ষীরোদা তখনও একদৃষ্টে দেখছে। বেড়ালটা ভাতগুলো খাচ্ছে। ভয়ে ভয়ে। ক্ষীরোদার মতই ভীতু বেড়ালটা।

নিজের ঘরে গিয়েও দীপঙ্করের মনে হলো সন্তোষ-কাকার মেয়েও বোধহয় তখন না-খেয়ে আছে। হয়ত সে-ও খাবে না আজ। দীপঙ্করের খাওয়া হলো না বলে, সে-ও হয়ত সারারাত না খেয়ে কাটাবে। কী করবে বুঝতে পারলে না দীপঙ্কর। শুতে গিয়েও শোওয়া হলো না। আবার উঠলো। আবার বারান্দায় বেরিয়ে এলো সন্তোষ-কাকার মেয়ে হয়ত শুয়ে পড়েছে এতক্ষণে। কিন্তু নিচের বারান্দায় তখনও আলো জ্বলছে। নিঃশব্দে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে দীপঙ্কর দেখলে-আশ্চর্য কান্ড। সন্তোষ-কাকার মেয়ে তখনও ঠিক সেই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে-আর একটা বেড়াল আরাম করে তার সেই পড়ে যাওয়া ভাতগুলো খাচ্ছে এক মনে নির্ভয়ে। কেউ বাধা দিচ্ছে না, কেউ আপত্তি করছে না। নিস্পন্দ নিথর পাথরের মত দাঁড়িয়ে রয়েছে সন্তোষ-কাকার মেয়ে।

দীপঙ্করের পায়ের শব্দ পেতেই সন্তোষ-কাকার মেয়ে চমকে উঠে পেছন ফিরেছে।

হয়ত দেখতে পেয়েছে দীপঙ্করকে। কিংবা হয়ত দেখতে পায়নি। কিন্তু দীপঙ্কর তার আগেই গিয়ে নিজের ঘরের দরজায় খিল বন্ধ করে দিলে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *