ক’জনা হৃদয় দিয়ে গাইতে জানে – হৈমন্তী শুক্লা

ক’জনা হৃদয় দিয়ে গাইতে জানে – হৈমন্তী শুক্লা

প্রিয়জন চলে গেলে তাঁর স্মৃতিকথা গুছিয়ে বলা রীতিমতো কঠিন কাজ৷ পেশাদার বলিয়ে বা লিখিয়েরাও সমস্যায় পড়েন বলে শুনেছি৷ আমার জীবনে সৌভাগ্যের অন্ত নেই৷ বাংলা গানের দুই দিকপাল ব্যক্তিত্ব, অর্থাৎ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও মান্না দে— দু’জনেরই অপার স্নেহ-ভালবাসা আমি পেয়েছি৷ কোনওদিন মুহূর্তের জন্যও তা ভুলতে পারি না৷ মান্নাদার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ ও পরিচয় হয়েছিল হেমন্তদার জন্যেই৷ দেখতে দেখতে এতগুলো বছর কেটে গেছে, কিন্তু এখন, এই লেখাটা লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে যেন কয়েকদিন আগের ঘটনা৷ সেটা ছিল ১৯৭৪৷ দিল্লির ‘ত্রিমূর্তি ভবন’-এ একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুদিনে একটা অনুষ্ঠান৷ সেখানে হেমন্তদা ও মান্নাদার গাইবার কথা৷ সেই সময়ের দিনগুলোয় আমি হেমন্তদার প্রায় নিত্যসঙ্গী৷ কী করব, কোথায় গাইতে যাব— সব কাজেই হেমন্তদার পরামর্শ আমার প্রয়োজন৷ দিল্লির সেই অনুষ্ঠানে আমার গাইবার কোনও প্রশ্নই ছিল না৷ কিন্তু যে কথা প্রথমেই লিখেছি, এঁদের স্নেহ-ভালবাসার কোনও শেষ ছিল না৷ মৃদু হেসে হেমন্তদা হঠাৎ বললেন— ‘তুই দিল্লি যাবি?’ তখন ছোট ছিলাম, জীবনের অভিজ্ঞতা বলতে কিছুই ছিল না৷ সুতরাং খুব স্বাভাবিক উচ্ছ্বাসে বলেছিলাম— ‘হ্যাঁ, দাদা, নিশ্চয় যাব৷’ তার পরে যা ঘটেছিল, তা-ও বোধহয় ওঁদের মতো মানুষদের কাছ থেকেই শিখতে হয়৷ খুব সহজ ভঙ্গিতে হেমন্তদা বলেছিলেন— ‘দিল্লি তোকে আমি নিয়ে যাব ঠিকই, কিন্তু তার আগে তোর নামে একটা আমন্ত্রণের চিঠি পাওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে৷’ বুঝলাম শিল্পীর যথাযোগ্য সম্মানের প্রশ্নে হেমন্তদা কতদূর সচেতন৷ যেমন কথা তেমন কাজ৷ দিল্লির সেই অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিলেন শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু৷ কয়েকদিনের মধ্যেই আমার কাছে চিঠিটা পৌঁছল, দিল্লিতে আমাকেও গাইবার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন একদা রাজ্যপাল স্বয়ং পদ্মজা নাইডু৷ সেই চিঠিটা এখনও আমার কাছে সযত্নে রাখা আছে৷

একে দিল্লি, তার ওপর বাংলার দু’জন কিংবদন্তি শিল্পীও গাইবেন, সুতরাং খুবই সতর্ক ছিলাম৷ অনুষ্ঠান শুরু হবে৷ ততক্ষণে মান্নাদাও সেখানে পৌঁছে গেছেন৷ মাথায় টুপি, দূর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম৷ মনে আছে সেই অনুষ্ঠানে আমি প্রথমে একটা ভজন গেয়েছিলাম— ‘তু বামন ম্যায় জাতি জুলহা/ শুন লে মেরা গানা৷’ গানটা আমি বিজনবালা ঘোষদস্তিদারের কাছ থেকে শিখেছিলাম৷ পরে হেমন্তদার সঙ্গে দুটো ডুয়েট এবং শেষে হেমন্তদার সঙ্গেই ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু’-তে গলা মেলালাম৷ মঞ্চ থেকে নামার পরে ঘটনাটা ঘটল৷ দেখি স্বয়ং মান্নাদা এগিয়ে এসে আমায় বললেন— ‘বাঃ তুমি খুব সুন্দর গেয়েছ, তোমার গলাটিও ভারী মিষ্টি৷’ উত্তরে আমি কী বলব বুঝতে না পেরে চুপ করে রইলাম৷

এরপর বছর দুয়েক কেটে গেছে৷ মান্নাদার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই, দেখাও হয়নি৷ ততদিনে আমার রেকর্ড বেরিয়েছে, সামান্য নামও হয়েছে৷ আর মান্নাদা, সকলেই জানেন, সেই সত্তর দশকে মান্নাদা ভয়ঙ্কর রকমের ব্যস্ত৷ আর জনপ্রিয়তার কথা তো কারও জানানোর অপেক্ষা রাখে না৷ সেই সময়ে শালকিয়ায় পুলকদার পাড়ায় একটা অনুষ্ঠান, সেখানে মাত্র দু’জন শিল্পী, মান্নাদা আর আমি৷ বলাই বাহুল্য, সেই অনুষ্ঠানটার আয়োজক বিখ্যাত গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুতরাং বিরাট সংখ্যক শ্রোতারা এসেছেন৷ কারণ তাঁদের প্রত্যাশা, সেখানে শিল্পীরা একটু অন্য মেজাজে গাইবেন৷ এখানে একটু আগের কথাও বলে রাখা দরকার৷ সকলের মতো আমিও মান্নাদার অসংখ্য গানের মুগ্ধ শ্রোতা৷ মান্নাদার সঙ্গে গান নিয়ে, গান গাওয়া নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার ইচ্ছেও রয়েছে৷ ওঁর কাছে পৌঁছনোর বন্দোবস্ত করে দেওয়ার জন্য পুলকদাকে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেছিলাম৷ একগাল হেসে পুলকদাও বলেছিলেন— ‘দাঁড়াও না, তোমাকে আমি মান্নাদার সঙ্গে একই আসরে গান গাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি৷’ সুতরাং সেই শীতকালের অনুষ্ঠানটা নিয়ে আমার প্রবল আগ্রহ ছিল৷ কলকাতা বা এই বাংলার কোনও জলসা যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা সকলেই জানেন প্রধানত বিখ্যাত শিল্পীদের জন্যই শ্রোতারা অপেক্ষা করেন৷ উদ্যোক্তারাও সেটা নিজেদের অভিজ্ঞতায় জানেন এবং সেই মহার্ঘ যুক্তিতে শালকিয়ার সেই অনুষ্ঠানে মান্নাদা শেষে গাইবেন৷ মাত্র দু’জন শিল্পীর অনুষ্ঠান, সুতরাং আমি গাইছিলাম আগে৷ সেটা সম্ভবত ১৯৭৫ (বা ১৯৭৬)-এর শীতকাল৷ আমার তখন দু-তিনটে রেকর্ড বেরিয়েছে৷ কিছু শ্রোতা হয়ত চেনেন৷ অনুষ্ঠানে তখন বেছে বেছে হেমন্তদার সুরে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া বাংলা গান, আমার গান দু-একটা, একটা গজল, হয়ত ছোট্ট করে একটা ঠুংরি— এই সব গান গাইতাম৷ কারণ, নানা ধরনের গান গেয়ে শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করতে হত৷ সেদিনও সেই একই কৌশলে বিভিন্ন রকমের গান গাইছিলাম৷ গাইছি, হঠাৎ দেখি মান্নাদা আসছেন৷ তাঁকে দেখে আমি যে গানটা গাইছিলাম সেটা শেষ করে শ্রোতাদের নমস্কার করে স্টেজ থেকে নেমে আসছিলাম৷ কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, মান্নাদা সোজা গট গট করে স্টেজে উঠে এলেন, এসেই আমাকে সহজ, স্বাভাবিক অভিভাবকের মেজাজে বললেন— ‘একী! তুমি গান বন্ধ করে দিলে, আমি শুনছিলাম, খুবই এনজয় করছিলাম, আপনারাও শুনুন, বড্ড ভাল গাইছে৷ গাও গাও, আরও আধ ঘণ্টা অন্তত গাও৷’ সবার সামনেই কথাগুলো বলছিলেন৷ মান্নাদা-র হুকুম, সুতরাং আমাকে সত্যিই আরও আধ ঘণ্টার মতো সময় নিয়ে গাইতে হয়েছিল৷ মান্নাদা স্টেজের সামনেই বসে শুনছেন— সেই দৃশ্যটা যেন আজও চোখের সামনে দেখতে পাই৷

কী কী গান সেদিন গেয়েছিলাম তা আর আজ মনে নেই৷ তবে মান্নাদার মতো শিল্পী শুনতে চেয়েছিলেন বলে শেষের দিকে রাগাশ্রয়ী বাংলা গানই গেয়েছিলাম৷ এ কথা মনে আছে যে তার মধ্যে একটা ছিল কৃষ্ণাদির (কৃষ্ণা দাশগুপ্ত) গান— ‘কে ভুলালে বারে বারে’৷ আমার সেই বয়সে ঘটনাটা অদ্ভুত লেগেছিল৷ একটা ছোট মেয়ে, নতুন গাইছে, সে যত ভালই গান করুক, মান্নাদার মতো অতবড় গায়ক সেই গানের অত প্রশংসা করতে পারেন— এ আমি ভাবতেই পারিনি৷

মান্নাদা চিরকালই বাংলা কথার মধ্যে ইংরেজি বলতেন, আর খুব তাড়াতাড়ি কথা বলতেন৷ অনুষ্ঠানের শেষে নানা কথা হচ্ছে৷ প্রধান বক্তা মান্নাদা৷ আমি একবার সুযোগ পেয়ে বললাম— ‘মান্নাদা আপনার বাড়ি একদিন যাব৷’ উনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন— ‘এই পুলকবাবু, হৈমন্তীকে আমার ওখানে নিয়ে আসবেন৷’ মান্নাদার কাছে যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ওঁরই সুরে গান গাওয়া৷ সারা জীবন ওঁর গান শুনেই বড় হয়েছি৷ পুলকদাও আমার ইচ্ছের কথা জানতেন৷

সকলের কণ্ঠ ও গায়নভঙ্গিতে মান্নাদার গান ঠিক মানায় না৷ এখন মনে হয়, ওঁরাও বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন আমার কণ্ঠে মান্নাদার তৈরি গান মানাবে৷ পুলকদা কথা রেখেছিলেন৷ পরের দিনই সকালে পুলকদা যোগাযোগ করতে আমি মান্নাদার বাড়িতে পৌঁছে গেলাম৷

মেজাজে থাকলে মান্নাদা যেন তাঁর নিজস্ব উচ্চতা থেকে নেমে একেবারে পাশের বাড়িরই কেউ হয়ে যান৷ আজ ওঁরা দু’জনেই নেই, কিন্তু স্মৃতি উজ্জ্বল হয়ে বেঁচে আছে৷ পুলকদা কী করে, কোন বিশ্লেষণে মান্নাদার মেজাজ, পছন্দের গান অত ভাল করে বুঝতে পারতেন তা তিনিই জানেন৷ তবে পুলকদা না থাকলে, অমন করে উদ্যোগ না নিলে মান্নাদার সুরে গান গাওয়া আমার কপালে ঘটত না৷ গানটা লিখেই পুলকদা নিজের উচ্ছ্বাসেই বলেছিলেন— ‘হৈমন্তী গানটা তোমার গলায় যা মানাবে না…৷’

আমিও তখন প্রাণপণে ভাল গান খুঁজছিলাম৷ এমন মানসিক অবস্থায় আশার কথা শুনলে যা মনে হয়, তা-ই হচ্ছিল৷

পুলকদা সকাল ৯টার মধ্যে পৌঁছে যেতে বলেছিলেন, উনি নাকি তার আগেই পৌঁছে যাবেন৷ তাই-ই ঘটেছিল৷ মান্নাদা যথারীতি নিজের মেজাজে— ‘এই যে হৈমন্তী, সেদিন কী ভাল যে গেয়েছিলে, এই এক্ষুনি চা আর শিঙাড়া নিয়ে আয়৷’ মান্নাদা যত প্রশংসা করছেন, আমি ততই সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছি৷ কিন্তু উনি তো ওঁর মতো করে কথা বলেই যাচ্ছেন৷ একজন অত বড় গাইয়ে নিজের মতো করে কথা বলতে থাকলে আমি কী বলতে পারি! পরিবেশটাও ছিল সহজ ও ঘরোয়া৷ উনি লুঙ্গি পরে, চাদর গায়ে৷ সামনে চা-শিঙাড়া ও হারমোনিয়াম৷

‘আচ্ছা হৈমন্তী, তোমার বাবা তো অত বড় একজন গুণী মানুষ ছিলেন, তুমি তোমার বাবার কাছে ক্লাসিক্যাল গানটা ভাল করে শিখেছ, না?’ আমি কী বলব, উনি অত সহজ মনে প্রশ্ন করলে আমাকেও উত্তর দিতে হয়, বললাম— ‘হ্যাঁ, বাবা খুব খোলা মনের মানুষ ছিলেন, আমাকে খেয়াল-ঠুংরি-ভজনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা গান গাইতেও শিখিয়েছিলেন৷ রেডিওতে আমি খেয়াল-ঠুংরিও গাই৷’

— বাঃ, খুব ভাল, দেখ তোমার জন্য আমি এই গানটা বেছেছি, ‘যোগিয়া’-তে তৈরি৷’

মান্নাদা গাইলেন— ‘কেন নয়নে আবির ছড়ালে’৷ নিজের মেজাজে স্বয়ং মান্না দে এই ধরনের গান গাইলে যেমন হওয়া উচিত, তেমনই হল৷ ‘ছড়ালে’ শব্দটাকে আদর করে নানারকম ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গাইলেন, সুরটাও যেন নিজের আনন্দে গড়িয়ে নেমে আসছে৷ গায়কী ও মেজাজে ‘যোগিয়া’ বার বার সেজেগুজে সামনে এসে দাঁড়াচ্ছিল৷ বেশ কয়েকবার গাওয়ার পর গানটা আমার গলায় বসে গেল৷ আরও কয়েকটা গান চাই৷

এই সময় পুলকদা দেখি খালি উসখুস করছেন— ‘মান্নাদা, ওই গানটা৷’ মান্নাদা যেন শুনেও শুনছেন না৷ পরের গানটার জন্য মান্নাদা গাইলেন— ‘মন তুমি পারবে না দিতে’৷ কিন্তু গানটা শেষ হতেই পুলকদা আবার মান্নাদাকে ‘সেই গানটা’ ‘সেই গানটা’ বলে খুঁচিয়েই যাচ্ছেন৷ শেষ পর্যন্ত মান্নাদা খানিকটা যেন বিরক্ত হয়েই বললেন— ‘দূর মশাই, একটা অল্পবয়সী মেয়ে আমার সুরে পুজোর গান গাইবে, ওকে অত দুঃখের গান দেওয়ার কী আছে?’ পুলকদার এক কথা— ‘ঠিক আছে, আপনি ওকে গানটা অন্তত একবার গেয়ে শোনান৷’ মান্নাদাও দেখলাম এক মুহূর্ত ভেবে গানটা ধরলেন— ‘আমার বলার কিছু ছিল না’৷ শুধু নিজের কথাই লিখে যাচ্ছি, দয়া করে এমন ভাববেন না৷ গানটা শুনতে শুনতেই আমার শরীর-মনে একটা শিহরণ খেলে গেল৷ মান্নাদা গাওয়া শেষ করে আমায় জিজ্ঞাসা করলেন আমার গানটা ভাল লাগছে কিনা৷ আমি তো ততক্ষণে মুগ্ধ হয়ে গলে গেছি, বললাম— ‘কী বলছেন মান্নাদা, এমন গান পছন্দ হবে না, তা কি কখনও হয়!’ মান্নাদা এক মুহূর্ত আমার দিকে তাকিয়ে বললেন— ‘ঠিক আছে, গাও দেখি৷’ ওঁর মতো শিল্পীরা বোধহয় আশ্চর্য কোনও এক ক্ষমতায় বুঝতে পারতেন কাকে দিয়ে কী হবে, কে কীভাবে গানের সেন্টিমেন্টটা ঠিকঠাক ধরতে পারছে৷ শেষ পর্যন্ত উনি নিজেও খুব খুশি হয়েছিলেন৷ সহজ-সরল মানুষ ছিলেন, ঘাড় ঘুরিয়ে পুলকদার দিকে তাকিয়ে বললেন— ‘গানটা ওর গলায় বেশ ম্যাচ করে গেছে, তাই না?’ এবার পুলকদার পালা, উনিও মুচকি হেসে মাথা নাড়লেন৷ হয়ত একটু অপ্রাসঙ্গিক, তবুও লিখতে বাধ্য হচ্ছি, আমার এই সামান্য শিল্পী-জীবনে গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও অনেক অবদান আছে৷

সকাল ৯টায় গিয়েছিলাম, উঠলাম বেলা আড়াইটেয়৷ প্রবল গানের আড্ডায় চা-শিঙাড়া-মিষ্টিরা এসেছে আর গেছে৷ কত কথাই যে সেদিন বলেছিলেন৷ অমুকের গান-তমুকের গান, তালের প্রয়োগ, সঙ্গীত শিক্ষার কোনটা কতটুকু প্রয়োজন ইত্যাদি৷ কথা বলতেও খুব ভালবাসতেন বলে কোনও একটা বিষয়ে স্থির থাকতেন না৷ ততদিনে ওঁর সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ৩৫-4০ বছর গান গাওয়া হয়ে গেছে৷ অভিজ্ঞতার থলি ভর্তি৷ আর সেই ঘরোয়া আড্ডায় ওঁর গান শোনাও একটা অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা৷

গান ঠিক হওয়ার পর আমরা আরও তিনদিন বসেছিলাম৷ কোথাও কোনও ফাঁকির প্রশ্ন ছিল না৷ শেষ পর্যন্ত কবে মান্নাদা কলকাতায় থাকতে পারবেন সেটা জেনে রেকর্ডিং-এর দিন ঠিক হল৷ এইচ এম ভি-তে রেকর্ডিং চলছে, সেখানেও একটা ঘটনাতে মান্নাদার গানের প্রতি ভালবাসা যেন নতুন করে বুঝতে পেরেছিলাম৷ ‘কেন নয়নে আবির ছড়ালে’ গানটির ‘ছড়ালে’-টা একবার এত সুন্দর হয়ে গিয়েছিল যে উত্তেজিত মান্নাদা হারমোনিয়ামের ওপর হাতটা এত জোরে ফেলেছিলেন যে হারমোনিয়ামের কোনাটায় লেগে হাতের কবজির নিচের দিকটায় কেটে রক্ত পড়তে শুরু করেছিল৷ আমি ঘাবড়ে গিয়ে বলছি— ‘মান্নাদা রক্ত পড়ছে, রক্ত পড়ছে’, ওঁর কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই, উনি উল্টে আমাকে ধমকে বলেছিলেন— ‘ও ঠিক আছে, তুমি আগে টেকিংটা শেষ কর৷’ সকলের মতো আমিও অবাক৷

কোন গান কেন জনপ্রিয় হয়, তার বোধহয় কোনও নির্দিষ্ট ফর্মুলা নেই৷ অন্যদের কথা জানি না, আমি অন্তত এতদিন পরেও তা ঠিক বুঝিনি৷ সেদিন স্টুডিওর ফ্লোরে যাঁরা ছিলেন তাঁদের অধিকাংশের উচ্ছ্বাস ছিল ‘কেন নয়নে আবির ছড়ালে’ ও ‘মন তুমি পারবে না দিতে’— এই গান দুটো নিয়ে৷ তাঁদের কাছে ‘আমার বলার কিছু ছিল না’ গানটা নাকি ‘কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে’৷ পরের ঘটনা তো ইতিহাস৷

মান্নাদা কলকাতায় এলেই আমি খবর পেয়ে যেতাম৷ এবং সদলবলে ওঁর বাড়ি পৌঁছে যেতাম৷ বুঝতে পারতাম উনি আমাদের গানের আড্ডা খুব পছন্দ করতেন৷ গান গাওয়ার কতদিকই যে ওঁর কাছে দেখেছি, শুনেছি ও শিখেছি তা লিখতে গেলে ছোট্ট একটা মহাভারত হবে যাবে বোধহয়৷ একদিন ওঁর বাড়িতে আমাদের সেই আড্ডায় মান্নাদা শোনাচ্ছেন— ‘আমি আজীবন শুধু ভুল করে গেছি/লেখা স্বরলিপি আশা করে গেছি/ছিন্নবীণার কাছে হায় হৃদয় চেয়েছি/ তোমার মতো হৃদয়হীনার কাছে৷’ গানটা শুরু করতেই আমি ‘আহা’ বলে কেঁপে উঠেছিলাম দুটো ‘নিখাদ’ লাগানোর অসাধারণ নৈপুণ্যের জন্য৷ মান্নাদাও সঙ্গে সঙ্গে গান থামিয়ে বলেছিলেন— ‘এই কেঁপে ওঠার জন্যই না আমার দুটো ‘নিখাদ’ লাগানো, আর গান গাওয়া’৷

অকারণ উচ্ছ্বাসে কত গানের মুখড়া, কত গজল-এর টুকরো আমাদের শোনাতেন, সেই কথা ভাবলে আজ নিজেদের সৌভাগ্যকেই যেন হিংসে করতে ইচ্ছে হয়৷ গানের কথায় নিজে সুর দিয়ে কীভাবে সেটাকে বলতে হবে, তা-ও দেখিয়ে দিতেন৷ আমরা প্রাপ্তির আনন্দে মুগ্ধ, আর উনি গোটা আসর নিজেও রীতিমতো উপভোগ করতেন৷ শুধু উস্তাদের মতো সুর লাগানোই নয়, উনি যখন গাইতেন, তখন শ্রোতাদের বুঝিয়ে ছাড়তেন গানের কথাটাও ওঁরই নির্ভুল আনন্দ বা দুঃখের প্রকাশ৷ আমাকে যখন গান শেখাতেন তখন বলতেন— ‘হৈমন্তী তুমি যেটা গানে বলছ, মনে রাখবে সেটা তোমারই কথা৷’ একেবারে খাঁটি উপলব্ধি৷ উনি গাইলে সত্যিই মনে হত উনি যেন কোনও হৃদয়হীনার কাছেই হৃদয় চাইছেন৷ এসব কথার কথা নয়, সারা জীবনই তো ওঁর গান শুনে গেছি, একই গান কতবার যে শুনেছি তার কোনও হিসেব নেই৷ পরবর্তীকালে মনে হয়েছে উনি শুধু একজন বিরাট মাপের গাইয়ে নন, উনি একজন বড় অভিনেতাও৷ যাকে বলে সিঙ্গিং-অ্যাকটিং তা উনি একেবারে নিখুঁতভাবে আয়ত্ত করেছিলেন৷

রসিক মানুষ ছিলেন৷ কোনও কথা ঠিক ঠিক না বুঝলে মুখ টিপে হাসতেন, বলতেন— ‘হৈমন্তী, শুধু শুধু গান গেও না৷’ এই কথাটা যদি কেউ সাধারণভাবে শোনেন, তাহলে মনে করবেন, একজন গায়ক অন্য একজন গায়ককে গান গাইতে বারণ করছেন৷ ওঁর সুরে আমি যে বেশ কিছু গান গেয়েছি, তাতে শিখতেও পেরেছি প্রচুর৷ একবার একটা গান শিখছি, সেখানে গানের কথাটা আমি নির্ভুল এক্সপ্রেশান-এ গাইতে পারছিলাম না৷ গানের কথা বলা হচ্ছিল কৃত্রিম ভাবে৷ মান্নাদা হারমোনিয়াম থামিয়ে আমার গাওয়াটাও থামিয়ে দিলেন৷ বললেন— ‘তুমি সংলাপ বলার মতো করে আগে গানের কথাটা বলো দেখি৷’ আমি বেশ খানিকটা লজ্জা পেয়ে বললাম— ‘আমি সুখী হলে দুঃখ যদি পাও তুমি, তবে সে সুখ আমি চাই না৷’ শুনে উনি বললেন, ‘এইটাই তোমাকে গানে বলতে হবে, যাতে শ্রোতারা গানের অন্তর্নিহিত বক্তব্যটা অনুভব করতে পারে৷’ গান গাওয়ার এইসব একান্ত প্রয়োজনীয় দিকগুলো আমি মান্নাদার কাছেই শিখেছি৷ সঙ্গীত শিক্ষার ক্ষেত্রে মান্নাদাকে আমি আমার বাবার পরেই গুরু হিসেবে মানি৷ কোনও স্মৃতিকথা লিখতে গেলে শুধু আমার কেন, প্রত্যেকেরই বোধহয় জীবনের নানা ঘটনা ফিরে ফিরে আসে এবং সব হিসেব গুলিয়ে দেয়৷ আমাদের বাড়ির সকলেই গান-বাজনাকে পেশা হিসেবে না নিলেও গান সকলেরই আলোচনার বিষয় ছিল৷ হয়ত রক্তের মধ্যে গান আছে বলেই এমন ঘটেছিল৷ ছোটবেলা রেডিওতে অনুরোধের আসর শোনা থেকেই বাড়িতে গান আর প্রিয় শিল্পী নির্বাচন নিয়ে লড়াই শুরু হত৷ কথা উঠত হেমন্তদা আর মান্নাদা নিয়ে, কে বড় শিল্পী? আমি কোনও দলেই নেই, কারণ দুজনেই আমার প্রিয়, আর উভয়েরই ভাল গান মানে ভাল গান৷ মান্নাদা নিজে আমায় বহুবার বলেছেন, ‘আমার যদি হেমন্তবাবুর মতো কণ্ঠ থাকত৷’ আমি নিজে গান করলে কী হবে, ভাইদের সঙ্গে তর্কে পেরে উঠতাম না৷ আমার কাছে তার চেয়ে জরুরি ছিল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকা, কখন শনি-রবিবার দুপুরের ১টা ৪০ মিনিট বাজবে৷ সেই অনুরোধের আসরে কোনওদিন হয়ত শোনা যেত— ‘একই অঙ্গে এত রূপ দেখিনি তো আগে’ বা ‘সেই তো আবার কাছে এলে’৷ কত গানের কথা লিখতে পারি? আসলে সেই সময়ের সব গানই কী ভালবেসে যে শুনতাম! ‘তীরভাঙা ঢেউ’, ‘এই ক্ষণটুকু কেন এত ভাল লাগে’— সব গানগুলোই আমাকে পাগল করে দিত৷ একটা ক্ল্যাসিকাল গানের মুখড়া নিয়েই তো তৈরি এই গানটা, যেটা আমার খুবই প্রিয়— ‘কী দেখলে তুমি আমাতে’৷ মান্নাদার কত গানই তো কত লোকে গায়, সেই সব গাওয়া শুনলে আমার মাঝে মাঝে খুব অসুবিধে হয়, মনে মনে ভাবি— ঠিক মান্নাদার মতো হচ্ছে না, পরের মুহূর্তে ভাবি— মান্নাদার মতো হবেই বা কী করে! যেমন একটা গানের এই লাইনটা— ‘কত সহজ কথা জানানো’ অর্থাৎ মিষ্টি করে বলা মা পা ধা গা মা, ওই গা মা-টা ছোট করে লাগানো— গানটার চলনটাই অন্যরকম হয়ে গেল৷ আমি যেন আজও, এই লাইনটা গাইছেন মান্নাদা, তাঁর হাতটা নাড়ানো— সবই চোখের সমানে এখনও দেখতে পাচ্ছি৷

কাব্যপ্রধান সুখ-দুঃখের বাংলা গানে কালোয়াতি একদম পছন্দ করতেন না মান্নাদা৷ যেখানে যতটুকু অলঙ্কার লাগালে ভাল লাগবে, ততটুকুই, ব্যস৷ ‘কেন নয়নে আবির ছড়ালে’-তে দু-একটা জায়গায় উনি নিজেই কালোয়াতি চালের সুর লাগিয়েছিলেন, আমিও উৎসাহে সেই কালোয়াতি কাজগুলো করে ফেলেছিলাম, শেষে উনি নিজেই তা বাতিল করেছিলেন৷

হিন্দি ছবির গানে মান্নাদার গাওয়ার বৈচিত্র্য চিরকাল আমাকে মুগ্ধ করে এসেছে৷ আমাদের বাড়িতে যে কেউ যখন-তখন ‘লাগা চুনরি মে দাগ’-এর রেকর্ডটা চালিয়ে দিত৷ ‘মধুশালা’-র ওপর মান্নাদার নিজের বিশেষ দুর্বলতা ছিল, আমাদের বার বার শুনতে বলতেন৷ আরও একটা কথা, মান্নাদার মতো বাংলা-প্রেমিক বাঙালি গায়ক আর দুটো দেখিনি৷ অবাঙালি স্ত্রী, মেয়েরা বাড়িতে সর্বদা ইংরেজিতে কথা বলেন, মান্নাদা সেই পরিবেশ থেকে কলকাতায় এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচতেন৷ বাংলায় সত্যিকারের প্রেমের গান মান্নাদার মতো কেউ আর গেয়েছেন বলে মনে করি না৷ বাংলা গানের পক্ষে সেরা উকিলও বোধহয় মান্নাদা৷ আবার বলছি, ওঁর বাড়িতে গিয়ে আমি যে কত গান শিখেছি তার হিসেব গুছিয়ে লিখতে পারব না৷ ‘ঠিকানা না রেখে ভালই করেছো বন্ধু’ শিখছি৷ পাশে বসে আছেন পুলকদা, মান্নাদার নিজেরই গানটা খুব পছন্দ হয়েছিল৷ সেদিন একটা অদ্ভুত কথা বলেছিলেন৷ স্মৃতি থেকে লিখছি, দু-একটা শব্দ এদিক-ওদিক হতে পারে৷ মান্নাদা বলেছিলেন— ‘জানো বম্বের অবাঙালিরা কী করে? যদি কোনও আসরে বাংলা গান করি, তাহলে গান শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট পরে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করে৷ অথচ সেই তারাই হিন্দি গান গাইলে একেবারে চুপ করে শোনে, শুনতেই থাকে৷ অথচ দেখ, আমরা কিন্তু কখনও হিন্দি গান শোনার সময় এমন করি না৷ আমি তোমার এই গানটা এবার বম্বের কোনও আসরে গাইব, দেখি অবাঙালি শ্রোতারা কী করে!’ একজন মানুষ চরিত্রগতভাবে সহজ, সরল না হলে এমন কথা বলতে পারেন!

মান্নাদাকে নিয়ে কত রকমের কত কথা যে আলোচনা হয়েছে৷ সেই সব আলোচনা ওঁর গান, ওঁর অভিজ্ঞতা ইত্যাদি নিয়ে৷ জানি না কতজন গাইয়ে ৯০ বছর বয়সেও অনুষ্ঠানে গাইতে পেরেছেন বা পারবেন৷ আমি ঠিক জানি না সেটাই কলকাতায় মান্নাদার শেষ অনুষ্ঠান ছিল কিনা৷ কয়েক বছর আগে নিজের জন্মদিনে (১লা মে) মহাজাতি সদনে গাইছিলেন, সঙ্গে ছিলাম আমি ও অভিজিৎদা (সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার-গীতিকার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়)৷ দেখলাম মান্নাদা অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানত খাদের দিকের সুরে বাঁধা গানগুলো গাইছেন৷ অভিজিৎদা আমাকে বললেন— ‘দেখ হৈমন্তী, আগে এই ধরনের কয়েকটা গান গেয়ে গলা গরম করে নিচ্ছেন, এটাও কিন্তু শেখার৷’ খাঁটি কথা, দেখলাম দু-তিনটে গানের পর গলা গরম করে পরে দিব্যি উঁচুপর্দার গানেও চমৎকার সুর লাগাচ্ছেন৷

মান্নাদার গাওয়া কোন গানটা আমার সবচেয়ে প্রিয় সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর খুঁজে পাইনি৷ কিন্তু খানিকটা ছেলেমানুষী হলেও মনে মনে কথাটা ঘুরে বেড়িয়েছে বারবার৷ একটা দুটো-তিনটে করে ভাবতে গিয়ে দেখেছি বাংলা ও হিন্দি মিলে প্রিয় গানের তালিকা লম্বা হয়েই যাচ্ছে৷ কিন্তু হঠাৎ সেদিন, মহাজাতি সদনের সেই অনুষ্ঠানে শেষ গান হিসেবে যখন ‘ডাক হরকরা’ ছবির সেই বিখ্যাত ‘ওগো তোমার শেষ বিচারের আশায়/আমি বসে আছি রাজ-কাছারির দেউড়িতে হে/শেষ বিচারের আশায়’, তখন মনে হল এরপরে আর কোনও গান হয় না৷ কেউই আর এই গান মান্নাদার মতো করে গাইতে পারবেন বলে মনে করি না৷ আর সেই সব প্রেমের গান-এর প্রেমিক সর্বদা রক্তমাংসের স্বাভাবিক মানুষ৷ সুরকার-গায়ক মান্নাদার চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে চমৎকার বোঝাপড়া ছিল বলেই পুলকদাও ওই সব গান লিখতে উৎসাহিত হয়েছিলেন বলে আমি মনে করি৷ উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি— ‘ও কেন অত সুন্দরী হলো’ বা ‘চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি৷’

গায়ক মান্নাদার ওপরে কোনও বিশেষ ধরনের গানের গায়ক বলে কেউ স্ট্যাম্প মেরে দিতে পারবে না৷ উনি অনায়াসে ভীমসেন যোশীর সঙ্গে যেমন গেয়েছেন, তেমনি অসামান্য দক্ষতায় কিশোরকুমারের সঙ্গেও গেয়েছেন৷ এবং সেই সব গান গাওয়া একেবারেই সহজ কাজ নয়৷ ‘পড়োশান’ ছবির গানটা (‘এক চতুর নার’) শুনতে যতটা মজার, গাওয়া ততটাই কঠিন৷ লতাজি যে বলেছেন হিন্দি ছবিতে মান্নাদার মতো আর কেউ ক্ল্যাসিকালঅঙ্গের গান গাইতে পারেনি, আমি তাঁর সঙ্গে সম্পূর্ণ এক মত৷ এই গাইছেন দরবারি কানাড়া আশ্রিত ‘ঝনক ঝনক তোরি বাজে পায়েলিয়া’, তো অন্য ছবিতে গাইছেন খাম্বাজ নির্ভর ‘আয়ো কাঁহা সে ঘনশ্যাম’৷ এবং সেই সময় গানেও তাঁর কন্ট্রোল সত্যিই অবাক করে৷

মান্নাদা রসিকতা করে বলতেন— ‘যে গানটা আর কেউ গাইছে না, গাইবে না, সেটাই আমার জন্য পড়ে থাকত বুঝলে৷’ আজ সকলেই জেনে গেছেন আসল সত্যি ঠিক উল্টোটা, সেই বিশেষ গানটা উনি ছাড়া আর কেউ গাইতে পারবে না বলেই পড়ে থাকত৷

মান্নাদাকে নিয়ে লেখা সহজে শেষ হওয়ার নয়৷ খেলাধুলো, খাওয়া, সিনেমা, অভিনয়— নানা ক্ষেত্রে আগ্রহ ছিল৷ খোলা মনের মানুষ৷ কোনও কথা গোপন করতে পারতেন না, চাইতেনও না৷ ছোটদের মতো হাসি-মজা ভালবাসতেন৷ এবং গানের ক্ষেত্রে শতকরা ২০০ ভাগ সিরিয়াস, সেখানে কোনও ফাঁকি ছিল না৷ চিরকালের প্রেমিক শিল্পী মান্নাদার গাওয়া গানের লাইন দিয়েই লেখা শেষ করি, সেটা চিরকালের সত্যি কথাটাও বলে— ‘হৃদয়ের গান শিখে তো গায় গো সবাই/ক’জনা হৃদয় দিয়ে গাইতে জানে?’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *