কঙ্কগড়ের রহস্য
০১.
অনেক রাতে কোথায় একটা চ্যাঁচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।
বালিশের পাশে টর্চ এবং মাথার দিকে গুলিভরা রাইফেল ছিল। টর্চ ও রাইফেল নিয়ে মশারি থেকে বেরিয়ে দরজা খুলতে যাচ্ছি, পাশের খাট থেকে আমার সঙ্গী ভদ্রলোকের গলা শোনা গেল-রাতদুপুরে কোথায় চললে জয়ন্ত?
ব্যস্তভাবে বললুম–বাইরে গণ্ডগোল হচ্ছে শুনতে পাচ্ছেন না?
-হুঁ, পাচ্ছি। চৌকিদার আর তার বউ ভালুক ভালুক বলে চ্যাঁচাচ্ছে।
এবার কান করে শুনি, সত্যি তাই। এই বনবাংলোর উঠোনে একটা প্রকাণ্ড মহুয়া গাছ আছে। এখন মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত গাছটায় প্রচুর মহুয়া ফল পাকে। ভালুকের প্রিয় খাদ্য তো। কাজেই ভালুক আসাটা অস্বাভাবিক নয়।
কিন্তু চৌকিদার তার বউয়ের এত ভয় পেয়ে চ্যাঁচামেচির কী আছে! ওরা এই বনজঙ্গল এলাকারই লোক। ভালুক দেখতে অভ্যস্ত। অথচ এমন গণ্ডগোল জুড়ে দিয়েছে, যেন ডাকাত পড়েছে বাড়িতে।
বললুম-মনে হচ্ছে, ওরা বেজায় ভয় পেয়ে গেছে। ওদের সাহস দেওয়া উচিত, কী বলেন?
-তা দিতে পারো। তবে সাবধান, বেরিয়ো না। বুঝতে পারছ না, ওরাও ঘরের ভেতর থেকে চ্যাঁচাচ্ছে।
এবার খুব অবাক হয়ে বললুম-ভালুককে এত ভয় পাওয়ার কী আছে!
–আছে ডার্লিং, আছে। ওই শোনো, ওরা এবার চুপ করে গেল। অতএব তুমি চুপচাপ শুয়ে পড়ো। সারাদিন ট্রেন আর জিপগাড়িতে যে ধকল গেছে, তা সামলাতে আমাদের লম্বা একটা ঘুম দরকার।
আমার এই সঙ্গী ভদ্রলোকের হরেকরকম বিদঘুটে আচরণ আমার দেখা আছে বহুদিন থেকে। কিন্তু কঙ্কগড় বনবাংলোয় এসে অবধি যা বলছেন, তাতে আমার ভয় হচ্ছে যে নির্ঘাত ওঁর খুলির ভেতরকার নরম জিনিসটি এতদিনে কেঁসে গেছে!
অর্থাৎ যাকে বলে বাহুরে দশা! আরও সোজাসুজি বললে ভীমরতি ধরা।
সেটাও খুব স্বাভাবিক। বয়স পঁয়ষট্টি পূর্ণ হয়েছে। গত ক্রিসমাসে নিজের পঁয়ষট্টিতম জন্মদিন মহাসমারোহে পালন করেছেন। বলেছেন–ডার্লিং জয়ন্ত, আমার টাক এই শীতে রাতারাতি আরও এক ইঞ্চি বেড়ে গেছে লক্ষ্য করেছে কি? এবং দাড়ির সর্বশেষ গোপনতম অংশও সাদা হয়ে গেছে দেখতে পাচ্ছ কি? জয়ন্ত, এতদিনে আমি প্রকৃত বুড়োমানুষ হলুম। এবার আমার সন্ন্যাস ধর্ম অবলম্বন করা উচিত।
ডিসেম্বরের শীতে একথা বলার পর মার্চের শেষ দিকে মনোরম এই বসন্তকালে হঠাৎ যখন আমাকে টেনে নিয়ে কঙ্কগড় জঙ্গলে এলেন, আমার ভয় হচ্ছিল–সত্যি সন্ন্যাসী হয়ে দুর্গম বনের ভেতর একটা পাহাড়ি গুহায় বুঝি ঢুকে পড়বেন তপস্যা করতে এবং আমাকে বিষণ্ণভাবে কলকাতা ফিরে যেতে হবে একা।
কিন্তু বিকেলে এখানে পৌঁছোনো অবধি তেমন কোনও সন্ন্যাসীভাব তো দেখছিই না, বরং চপলমতি ছেলেপুলের মতো প্রজাপতির পেছনে দৌড়ুচ্ছেন–কিংবা চোখে বাইনোকুলার রেখে পাখপাখালি দেখছেন। কখনও বা হঠাৎ মাটির দিকে ঝুঁকে হেঁটমুণ্ডে কী সব খুঁজছেন! ওঁর উদ্ভুটে কাণ্ডকারখানা দেখলে তাক লেগে যায়। যাই হোক, আমি সত্যি ক্লান্ত। টর্চ ও রাইফেল যথাস্থানে রেখে মশারির ভেতর শুয়ে পড়লুম। তারপর বললুম-হেঁয়ালি না করে আসল কথাটা বলুন তো কর্নেল!
আশ্চর্য! আমার বৃদ্ধ বন্ধু কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের নাক ডাকছে! বিরক্ত হয়ে বললাম কর্নেল! আপনি কি আজকাল আফিং খাওয়া ধরেছেন?
নাকডাকা থামল। –জয়ন্ত, আফিংখোরদের নাক ডাকে না।
-জেনে খুশি হলুম। কিন্তু আমার জিজ্ঞাস্য, ভালুককে এত ভয় পাবার কী আছে–বিশেষ করে সঙ্গে যখন গুলিভরা রাইফেল রয়েছে?
–এ ভালুক সে-ভালুক নয়।
তার মানে!
–ওটা ভালুক কিনা, সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে, জয়ন্ত।
–বাঃ! যে-ভালুক এইমাত্র এসেছিল এবং যাকে দেখে চৌকিদার ও তার বউ চাঁচাচ্ছিল, তাকে আপনি বুঝি মশারির ভেতর শুয়ে মনশ্চক্ষে দেখলেন?
-না ডার্লিং! ওই আজব প্রাণীটিকে আমি সন্ধ্যায় দেখেছি একবার। আমি যখন ঝরনার ধারে ক্যামেরা পেতে রেখে ফিরে আসছিলুম, সে আমার পিছু নিয়েছিল। সে মানুষের মতো দুপায়ে হাঁটতে পারে।
অবাক তো বটেই, অস্বস্তিতে অস্থির হয়ে বললুম–সে কী! কই তোমায় তো বলেননি!
-বললে তুমি ভয় পেতে।
–কেন?
আবার নাক ডাকা শুরু হল হঠাৎ। কয়েকবার ডেকেও সাড়া পেলুম না। জানি, বুড়োর এই হেঁয়ালির স্বভাব বরাবর। এখন মাথা ভাঙলেও প্রশ্নের জবাব পাব না। তাই চুপচাপ শুয়ে রইলাম। কিন্তু কী এক অজানা ভয়ে বুক টিপটিপ করতে থাকল।
বাইরে জ্যোৎস্নার বান ডেকেছে। জানলাগুলোর ওপরকার পাল্লা খোলা। এলোমেলো বাতাস বইছে শুনতে পাচ্ছি। বারবার জানলার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে, হঠাৎ দেখতে পাব কালো এক রস্যময় প্রাণীকে–যে সন্ধ্যাবেলায় কর্নেলের পিছু নিয়েছিল এবং মানুষের মতো দু-পায়ে হাঁটে।
অবশ্য ভালুকেরও এখন দু-পায়ে দাঁড়ানোর অভ্যাস আছে। কিন্তু কর্নেল বললেন ওটা ভালুকই নয়! তাহলে ওটা কী? তাকে ভয় পাবারই বা কী আছে?
আতঙ্ক বেড়ে গেল। কিন্তু উঠে গিয়ে যে জানালা বন্ধ করব, সে সাহসও নেই। তাছাড়া জানলা বন্ধ করলে বন্ধ ঘরে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে, এমন অভ্যাস।
সে-রাতে রাইফেলের বাঁটে হাতে রেখে সাতপাঁচ ভাবতে-ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলুম। সেই ঘুম ভাঙল চৌকিদারের ডাকে। সে বেড-টি এনেছে।
বাইরে কুয়াশা জমে আছে তখনও। কিন্তু পাখপাখালির ডাক শোনা যাচ্ছে। উঠে বসে হাত বাড়িয়ে চা নিলুম। তারপর ডালুম-কর্নেল! উঠলেন নাকি?
চৌকিদার বলল–বড়াসাব অনেক আগে উঠেছেন স্যার। উঠে জঙ্গলে গেছেন। আমি বারণ করলুম, শুনলেন না।
হুঁ, ঝরনার ধারে ওঁর আজব ক্যামেরাটি আনতে গেছেন নিশ্চয়। ক্যামেরাটি এমন আজব যে। ওতে অদৃশ্য আলোয় ছবি ওঠে। ক্যামেরা গাছের ডালে ঝুলিয়ে শাটারের সঙ্গে আটকানো একটা তার মাটিতে নিচে পুঁতে রাখাই যথেষ্ট। লেন্সের সামনে ১৮০ ডিগ্রি এবং তিরিশ মিটার অবধি মাটিতে কিছু চলাফেরা করলেই সেই সূক্ষ্ম স্পন্দন তার বেয়ে শাটারে চলে যাবে এবং শাটার ক্লিক করবে। ছবি উঠে যাবে। তারপর ফিল্মের রিলও অটোমেটিক পদ্ধতিতে গুটিয়ে পরবর্তী ছবি ওঠার ব্যবস্থা করবে।
বললুম-ওহে চৌকিদার, রাতে তোমরা এত চ্যাঁচামেচি করছিলে কেন?
চৌকিদার ভয় পাওয়া গলায় বলল–স্যার, রাতে বাংলোয় ফের টোনাবাবা এসেছিল। আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে খুব চ্যাঁচামেচি করে ওকে তাড়িয়ে দিলুম।
–টোনাবাবা মানে? তোমরা তো বারবার ভালুক ভালুক বলে চাঁচাচ্ছিলে!
চৌকিদার চাপা গলায় বলল-স্যার, ভালুকের নাম না করলে টোনাবাবা পালিয়ে যেত না। ও ভালুককে খুব ভয় পায়।
ওর কথা শুনে অবাক হয়ে মশারি তুলে বেরুলুম। চৌকিদার এবার মশারিটা খাটের মাথার ওপর গুঁজে দিতে ব্যস্ত হল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললুম-ওহে, তোমাদের এই টোনাবাবাটি কী জিনিস বলো তো!
চৌকিদার মাথা নেড়ে বলল–তা তো আমি জানি না হুজুর। সবাই ওকে টোনাবাবা বলে। তবে এই পরপর দু-রাত্তির হল সে বাংলোয় কেন হানা দিচ্ছে বুঝতে পারছি না।
-টোনাবাবা মানুষ, না জন্তু?
–তাও জানি না হুজুর।
–দেখতে কেমন?
চৌকিদার ভয় পাওয়া চোখে তাকিয়ে বলল–দেখতে কতকটা ভালুকের মতো বটে, তবে দু-পায়ে হাঁটে। ধুকুর পুকুর করে ওকে দৌড়ে যেতেও দেখেছে এলাকার লোকে। একবার কাঠুরেরা ওকে তাড়া করেছিল। তাদের কাছে শুনেছি, টোনাবাবার গায়ে কুড়ুলের কোপ বসে না-যেন পাথর! কঁপডিহির সাঁওতালরা নাকি তীর ছুঁড়ে দেখেছে, সব তীর ডকাস করে পড়ে যাচ্ছে গা থেকে আর ভেঙে দুমড়ে যাচ্ছে।
.
চৌকিদার নিশ্চয় বাড়াবাড়ি করছে ভেবে বললুম–যতসব গাঁজাখুরি গল্প। ঠিক আছে, আজ রাতে তোমাদের টোনাবাবা হানা দিক, তখন দেখব তার গায়ে রাইফেলের গুলি বেঁধে নাকি?
চৌকিদার বড়োসড়ো চোখে তাকিয়ে জোরে মাথা দুলিয়ে বলল-খবরদার স্যার, খবরদার! কক্ষনো গুলি ছুঁড়বেন না। গত শীতে এক শিকারিবাবু এসেছিলেন এই বাংলোয়। তিনি জঙ্গলে গিয়ে আর ফেরেননি। কাঠুরেদের কাছে পরে জানা গেল, তিনি টোনাবাবাকে গুলি করেছিলেন। আর টোনাবাবা তাঁর বন্দুক কেড়ে টুকরো করে ফেলেছিল। তাকেও এক থাপ্পড় মেরেছিল। তাতে উনি একেবারে দলাপাকানো লাশ হয়ে জঙ্গলে পড়েছিলেন। বরং টোনাবাবাকে দেখতে পেলে ভালুক বলে চাঁচাবেন-দেখবেন তক্ষুনি পালিয়ে যাবে।
জংলি এলাকার লোকেদের কুসংস্কার বা অন্ধ বিশ্বাসের ব্যাপারটা আমার জানা আছে। তাই চৌকিদারের কথায় অবাক হলাম না। কিন্তু স্বয়ং বিচক্ষণ কর্নেল নীলাদ্রি সরকারও এমন কিছুর। ইশারা দিচ্ছিলেন গতরাতে। সেটাই আমার ভাবনার কথা! একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
চৌকিদার এরপর টোনাবাবার এককাহন গল্প শুনিয়ে ছাড়ল। গল্পগুলো প্রায় একই রকম। কিন্তু। একটা অদ্ভুত মিল সব গল্লেই রয়েছে। টোনাবাবার আবির্ভাব দিনে হয় না। সে আসে অন্ধকারে। আরও মজার কথা, কেউ সাড়া পাবার আগে বাচ্চা ছেলেমেয়েরা যেন তার আসাটা টের পায়। কারণ তারা আচমকা ঘুম ভেঙে বেজায় কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। গতরাতে চৌকিদারের বাচ্চাটা আচমকা কেঁদে উঠেছিল বলেই না ওরা টের পেয়ে গিয়েছিল টোনাবাবা আসছে।
গল্প শুনতে শুনতে দেখি, এতক্ষণে আমার বৃদ্ধ বন্ধুবর ফিরে আসছেন। টুপিতে শুকনো পাতা, মাকড়সার জাল আটকে আছে। কাঁধে সেই বিদঘুটে ক্যামেরা আর দূরবিন যন্ত্রটি ঝুলছে। পিঠে রাইফেল বাঁধা আছে। বারান্দায় উঠে টুপিটা ঝেড়ে সাফ করে বললেন-সুপ্রভাত জয়ন্ত। আশা করি, ক্লান্তি দূর করার মতো সুনিদ্রা হয়েছে।
হয়েছে। কিন্তু, হাই ওল্ড ম্যান! আপনার ক্যামেরার রাতের ফসল টোনাবাবার একটি ছবি নয় তো!
কর্নেল হাসতে হাসতে বললেন–তুমি কি টোনাবাবার কাহিনি শুনছিলে চৌকিদারের কাছে? জয়ন্ত, এ-কাহিনি যতই অবিশ্বাস্য হোক, তোমার দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকায় সত্যি ছাপার যোগ্য। অতএব, একজন রিপোর্টার হিসেবে তোমার কর্তব্য, টোনাবাবা সম্পর্কে আরও খবর জোগাড় করে কলকাতায় তোমার কাগজের অফিসে পাঠানো। হিড়িক পড়ে যাবে ডার্লিং! সত্যসেবকের বিক্রি ঝটপট বেড়ে যাবে।
-তাতে আর সন্দেহী কী? তবে বুঝতেই পারছেন, একালের পাঠক টোনাবাবার চেয়ে রাজনীতিবাবার খবরেই বেশি আসক্ত। বরং যদি টোনাবাবার ছবি দিতে পারেন, চেষ্টা করব খবর পাঠাতে। ছবিসহ খবর ছাপলে তবে লোকে বিশ্বাস করবে।
কর্নেল ঘরে ঢুকে ক্যামেরা নিয়ে সটান বাথরুমে ঢুকলেন। বুঝলাম, আপাতত ওটাই ওঁর ডার্করুম। ক্যামেরা খুলে ফোটো রিল বের করে ডেভেলপ এবং প্রিন্টের কাজে ব্যস্ত হবেন। কুড়ি-পঁচিশ মিনিটের মধ্যেই ওঁর রাতের ফসলের নমুনা চাক্ষুষ করতে পারব।
চৌকিদার চলে গেল। আমি বারান্দায় গিয়ে কিছুক্ষণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখলুম। পাহাড় ও জঙ্গল জুড়ে শেষরাতের কুয়াশা সবে মিলিয়ে যাচ্ছে এবং ঝকমকে রোদ ফুটেছে। এই বাংলোটা একটা টিলার ওপর। উত্তরে আবাদি এলাকা বাংলোর নীচেই শেষ হয়েছে। দক্ষিণ থেকে শুরু হয়েছে কঙ্কগড় ফরেস্ট ব্লক। পঞ্চাশ বর্গমাইল জুড়ে ঘন জঙ্গল। কদাচিৎ ফাঁকা এলাকায় একটা করে আদিবাসী গ্রাম।
নিচে গাছপালার ফাঁকে ঝরনা সরু সাদা ফিতের মতো যেন বাতাসে তিরতির করে কেঁপে উঠছে। তার ওপাশে একটা ন্যাড়া পাহাড়ের মাথায় সেকালের কঙ্কগড় দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে। শুনেছি, কয়েকটা ঘর এখনও নাকি টিকে আছে। কিন্তু শঙ্খচূড় সাপের ভয়ে কেউ ওদিকে পা বাড়ায় না।
আমি টোনাবাবার কথা ভাবছিলুম। ব্যাপারটা সত্যি রহস্যজনক। কিন্তু…
আমার ভাবনায় বাধা পড়ল কর্নেলের চাপা উত্তেজনাপূর্ণ কণ্ঠস্বরে। -জয়ন্ত, জয়ন্ত! চলে এসো!
ঘরে ঢুকে দেখি, টেকো দাড়িয়াল বুড়ো প্রায় ধেই ধেই নাচার ভঙ্গিতে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দুই ঠ্যাং ফেলছেন। পাশে গিয়ে উঁকি মেরে আঁতকে উঠলুম।
প্রিন্টগুলো ছোট্ট সাইজের। কিন্তু এ যে সেই প্রখ্যাত সিনেমা কিং কং-এর একটা রিল!
ঝরনার ধারে অবিকল কিং কং-এর মতো একটা বিদঘুটে গোরিলা জাতীয় প্রাণী হাত-পা ছড়িয়ে বসে যেন স্নান করছে জল ছড়িয়ে। আশপাশের গাছ, ঝোপ বা পাথরের সঙ্গে তুলনা করে মনে হল, প্রাণীটা অন্তত ফুট ছয়েকের বেশি উঁচু নয় এবং ছাতির মাপ প্রায় পঞ্চশ ইঞ্চি! হাত দুটো গোরিলার মতোই লম্বাটে।
হতভম্ব হয়ে বললুম–সর্বনাশ! এ যে দেখছি একটা গোরিলার ছবি!
কর্নেল একটু হেসে বললেন–কঙ্কগড়ে গোরিলা! অসম্ভব জয়ন্ত। গোরিলা আফ্রিকার প্রাণী। অবশ্য একসময় মালয়ের জঙ্গলে একধরনের গোরিলা বাস করত শুনেছি। কিন্তু তারা ওরাংওটাং-এরই একটা শ্রেণি। আশা করি, তুমি জানো ওরাংওটাং ওই এলাকারই প্রাণী।
–তাহলে কী এটা!
কর্নেল রহস্যময় হেসে বললেন-বড়োজোর এটুকুই বলতে পারি যে ইনিই হলেন কঙ্কগড়ের আতঙ্ক সেই টোনাবাবা এবং যার খোঁজে আমি তোমাকে নিয়ে এখানে পাড়ি জমিয়েছি।
অবাক হয়ে বললুম–সে কী! আপনি তো এসব কিছু বলেননি! শুধু বলেছেন, জঙ্গলে বেড়াতে যাচ্ছি। বেড়াব এবং সুযোগ পেলে দু-চারটে শিকারটিকারও করব।
–ডার্লিং, সব কথা খুলে বললে তুমি এমন হুট করে এ বুড়োর সঙ্গে বেরিয়ে পড়তে না।
–কেন? আমাকে অত ভিতু ভাবছেন কেন?
কর্নেল আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন-জয়ন্ত, আগেই যদি সব কথা তোমাকে জানিয়ে দিতুম, তাহলে তুমি আসার আগেই তোমার দৈনিক সত্যসেবকে ফলাও করে ছেপে দিতে এবং হইচই পড়ে যেত। তাতে আমার তদন্তের প্রচুর অসুবিধা ঘটত।
-বুঝলুম। কিন্তু আপনি কীভাবে টোনাবাবার কথা জানলেন?
–আমার এক বন্ধুর ছেলে অসীম ছিল দুরন্ত প্রকৃতিব পিকারি। ফরেস্ট দফতরের অনুমতির তোয়াক্কা করত না। লুকিয়ে চোরা শিকারিদের সাহায্যে জঙ্গলে ঢুকে শিকার করত. সম্প্রতি কঙ্কগড়ে সে লুকিয়ে শিকার করতে ঢুকেছিল। তারপর আর ফেরেনি। আমার বন্ধু রিটায়ার্ড ডাক্তার মেজর শঙ্করনাথের অনুরোধেই আমি তাই খোঁজখবর নিতে শুরু করেছিলুম। তারপর হঠাৎ টোনাবাবার কথাটা জানতে পারি। যাই হোক, বাকিটা বুঝতেই পারছ! এবার এসো, আমরা ব্রেকফাস্টে বসি। ডার্লিং, সবার আগে সবসময় উদরটা পূর্ণ করা দরকার। শূন্য উদরে কোনও কাজ করা যায় না।
ঘুরে দেখলুম, চৌকিদার ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। হুঁ, বুড়োর নাকের বাহাদুরি! আগেই টের পেয়ে গেছেন। এজন্যেই সবাই ওঁকে বলে বুড়ো ঘুঘু..
.
০২.
চৌকিদার টোনাবাবার হাতে খুন হওয়া এক শিকারির কথা বলেছিল। কর্নেলকে কথাটা জানিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু উনি তেমন কান করে শুনলেনই না। শুধু বললেন–এমন ঘটনা আরও ফুটেছে শুনেছি।
কিছুক্ষণ পরে আমরা ঝরনার ধারে গেলুম। ছবিতে জায়গাটা যেমন দুর্গম দেখাচ্ছিল আদতে অতটা নয়। কর্নেল সেখানে হেঁটমুণ্ডে ঘুরে কী যেন খুঁজে বেড়ালেন কতক্ষণ। আমি গুলিভরা রাইফেল হাতে চারদিকে কড়া নজর রাখলুম। ঘন ঝোপজঙ্গল আর গাছপালার মধ্যে ছোটোবড়ো অজস্র পাথর পড়ে আছে। পাথরের আড়ালে টোনাবাবা ওত পেতে বসলে দেখা যাবে না। সেই সময় হঠাৎ চোখ পড়ল, ওপর দিকে একটা সাদা পাথরের খাঁজে কালো কী একটা পড়ে আছে! জিনিসটা চৌকো মতো এবং কালো।
এখানে ঝরনার ধার থেকে ধাপেধাপে পাথরের সিঁড়ির মতো যে ন্যাড়া টিলাটা আকাশে মাথা তুলেছে, সেখান দিয়ে উঠলে জিনিসটা কুড়িয়ে আনা যায়। কিন্তু টোনাবাবার ভয়ে আমার এক পা বাড়ানোর সাহস নেই। মুখে তো একথা স্বীকার করা যায় না! বললুম-কর্নেল! মনে হচ্ছে একটা কিছু পড়ে আছে ওখানে। চলুন না, দেখে আসা যাক কী ওটা।
কর্নেল তখন হাঁটু দুমড়ে বসে মাটি থেকে কী খুঁটিয়ে হাতের চেটোয় তুলে রাখছেন। মুখ না ঘুরিয়ে বললেন-তুমিই দেখে এসো।
আমি দ্বিধায় পড়ে গেলুম-কালো চৌকো মতো জিনিসটা পাথর হতেও পারে। কর্নেল অমনি মুচকি হেসে বললেন–ভয় নেই জয়ন্ত, টোনাবাবার আবির্ভাব দিনের বেলা হয় না। তুমি স্বচ্ছন্দে যেতে পারো।
রাগ দেখিয়ে বললুম–আমি ভিতু নই, তার প্রমাণ কতবার পেয়েছেন।
–বিলক্ষণ পেয়েছি। তাই তো বলছি ডার্লিং, কালো মতো যে জিনিসটা দেখেছ, নিয়ে এসো।
বলে কর্নেল নিজের কাজে মন দিলেন। আমি রাইফেল বাগিয়ে পা বাড়ালাম। কয়েকটা ঝোপ ঠেলে এগিয়ে ন্যাড়া টিলার পাথুরে ধাপে যেই উঠতে শুরু করেছি, হঠাৎ ওপর দিকে খুট করে একটা শব্দ হল। চমকে উঠে মুখ তুলে যা দেখলুম, আমার তাজ্জব লাগল কয়েক মুহূর্তের জন্যে। তারপর চেঁচিয়ে উঠলুম-কর্নেল! কর্নেল!
কর্নেল সাড়া দিলেন–কী হল জয়ন্ত?
-বেড়াল! একটা বেড়াল!
–বেড়াল দেখে চ্যাঁচামেচির কী আছে ডার্লিং? বেড়াল বাঘের মাসি হলেও অতি নিরীহ প্রাণী।
–আহা, বেড়ালটা সেই কালো জিনিসটা নিয়ে পালাচ্ছে। দেখুন, দেখুন!
–তাড়া করা জয়ন্ত, তাড়া করো।
পাথরের ধাপ বেয়ে যত জোরে পারি উঠতে শুরু করলুম। কালো রঙের বেড়ালটা কিন্তু আস্তে সুস্থে পাথরের ওপর বা রেখে ওপর দিকে উঠছে। আমার দিকে ঘুরে যেন একবার বাঁকা হাসলও। তার মুখে অবশ্য সেই কালো জিনিসটা রয়েছে। তাই হয়তো পুরো হাসি হাসতে পারল না।
এই বনজঙ্গলে বনবেড়াল থাকতে পারে। কিন্তু এ বেড়াল সে বেড়াল নয়! আমি বেড়াল চিনি। আমার মাসিমার ছেলেপুলে ছিল না। এক দঙ্গল বেড়াল নিয়ে জীবন কাটাতেন। সত্যি বলতে কী, সেই মাসির বাড়ি থেকেই আমি লেখাপড়া শিখেছি। বড়ো হয়েছি। কাজেই বেড়ালের খবর আমার নখদর্পণে। কালো জিনিসটা নিয়ে যে বেড়ালটা গদাইলশকরি চালে পাহাড়ে চড়ছে, সে যে গৃহপালিত বেড়াল তাতে কোনও ভুল নেই।
ন্যাড়া টিলার চুড়োয় উঠে বেড়ালটা অদৃশ্য হল। টিলাটা বড়োজোর একশো ফুট উঁচু। হাঁপাতে হাঁপাতে সেখানে পৌঁছে দেখি বেড়ালটা ওপাশে নেমে যাচ্ছে। তখন মরিয়া হয়ে ভাবলুম, গুলি ছুঁড়ে ওকে ভয় দেখালে নিশ্চয় জিনিসটা মুখ থেকে ফেলে দেবে।
কিন্তু আমার বরাত, বেড়ালটাকে আর দেখা গেল না। আমারই বুদ্ধির ভুল! তখনই যদি গুলি ঘুড়তুম, নিশ্চয় কাজ হত।
নিচের দিকে ঝোপজঙ্গল তো আছেই, অজস্র পাথরও পড়ে আছে ধ্বংসাবশেষের মতো। বেড়ালটা খুঁজতে খুঁজতে চোখের ব্যথা হয়ে গেল। তারপর এতক্ষণে ঠাহর করলুম, যা ঘটেছে ভারী বিস্ময়কর! ওই কালো চৌকো জিনিসটা কী হতে পারে! আর এই দুর্গম জঙ্গলে একটা কালো বেড়ালই বা তা মুখে করে নিয়ে গেল কেন?
জিনিসটা যে প্রাণীর খাদ্য নয়, তা আমি হলফ করে বলতে পারি।
নিচের জঙ্গলটা একটা ছোট্ট উপত্যকা। তার ওধারে সেই ঐতিহাসিক কঙ্কগড় দুর্গ পাহাড়। সেদিকে তাকিয়ে আমার ফের চমক লাগল।
দুর্গের ওখানে একটা লোক চুপচাপ বসে আছে। শঙ্খচূড় সাপের ভয় তুচ্ছ করে ওখানে কেউ গিয়ে বসে আছে, কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু তারপর আরও যা দেখলুম, আমার বুদ্ধিশুদ্ধি ঘুলিয়ে গেল।
সেই কালো বেড়ালটা দুর্গ-পাহাড়ে উঠেছে ইতিমধ্যে এবং সেই লোকটার কাছে পৌঁছেছে। আর লোকটা তার মুখ থেকে কালো জিনিসটা নিয়ে তাকে আদর করছে।
আমি চাপা গলায় ডাকতে থাকলুম-কর্নেল! কর্নেল! শিগগির আসুন!
সাড়া এল আমার পিছন থেকে দেখতে পাচ্ছি, জয়ন্ত।
ঘুরে দেখি, বুড়ো ঘুঘুমশাই কখন চুপিচুপি ঝরনার ধার থেকে উঠে এসেছেন এবং একটা পাথরে ঠেস দিয়ে বসে চোখে বাইনোকুলার রেখে কঙ্কগড় দুর্গের ওই বিচিত্র দৃশ্য মন দিয়ে উপভোগ করছেন।
কাছে গিয়ে বললুম-এ তো ভারি তাজ্জব ব্যাপার!
কর্নেল বাইনোকুলার নামিয়ে রেখে বললেন, তাজ্জব তাতে সন্দেহ কী! লোকটা আমাদের দেখতে পেয়েই আড়ালে লুকিয়ে গেল। জয়ন্ত, আমারই বুদ্ধির ভুল। ওই কালো বেড়ালটার কথা আমিও শুনেছিলুম। কঙ্কগড় জঙ্গলে অনেকেই নাকি ওকে দেখেছে। কিন্তু তাতে অবাক হবার কিছু ছিল না। অনেক সময় গৃহপালিত প্রাণী জঙ্গলে এসে বুনো হয়ে স্থায়ী ডেরা গাড়তে পারে সেখানে। অথচ যা দেখলুম, তাতে মনে হল-বেড়ালটা দস্তুরমতো ট্রেন্ড এবং তার মালিকও রয়েছে।
-কালো চৌকো জিনিসটা কী হতে পারে অনুমান করতে পারছেন কর্নেল?
–অনুমান হয়। বাইনোকুলারে জিনিসটা দেখলুম, জয়ন্ত। ওটা একটা নোটবই ছাড়া কিছু নয়।
–বলেন কী!
-তোমার কথার গুরুত্ব না দিয়ে ভুল করেছি ডার্লিং! যাই হোক, এখন আর পস্তিয়ে লাভ নেই। চলো, আমরা ওই দুর্গ হানা দিই। মনে হচ্ছে, ওই রহস্যময় লোকটা যেভাবেই হোক এখানে একটা নোটবই ফেলে গিয়েছিল কখন! পোষা বেড়ালকে সেটা খুঁজতে পাঠিয়েছিল।
কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। দুজনে নিচের উপত্যকায় নামতে থাকলুম।
খুব সাবধানে আমরা এগোচ্ছিলুম। কখনও ঝোপের আড়ালে কখনও পাথরের পাশ দিয়ে গুঁড়ি মেরে কতক্ষণ পরে কঙ্কগড় দুর্গ-পাহাড়ের ধারে পৌঁছেলুম। তারপর পাহাড়ে চড়া শুরু হল।
পাহাড়ের এদিকটা ঢালু। কাজেই তত বেশি কষ্ট করতে হল না। কিন্তু শেষ পঁচিশ ফুট একেবারে খাড়া দেয়াল। সমস্যায় পড়া গেল দেখছি। বেড়ালটা তখন কোন পথে উঠেছিল, চিনতে পারছি না আমরা।
কর্নেল বললেন–এক কাজ করা যাক। পাঁচিলের ধারে-ধারে এগিয়ে ঝরনার মাথার দিকে যাই, এসো। কাল সন্ধ্যার একটু আগে দেখে গেছি ওদিকটা। পাঁচিলটা ওদিকে ভেঙে গেছে। নিশ্চয় ওঠার রাস্তা পেয়ে যাব।
পাঁচিলের নিচে পা ফেলার জায়গা খুব সামান্যই। অতি কষ্টে এবং সাবধানে এগোতে হল। কিছুক্ষণ পরে আমরা ঝরনার মাথায় গিয়ে পৌঁছোলুম। এখানে একটা চওড়া চত্বর থেকে প্রস্রবণ জলপ্রপাতের মতো পাঁচশো ফুট নিচে সশব্দে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। জলের গর্জনে কান পাতা দায়!
হঠাৎ কর্নেল থমকে দাঁড়ালেন। তারপর ফিশফিশ করে বললেন–সাপ! নোড়ো না।
দেখেই আঁতকে উঠলুম। মাত্র পনেরো-কুড়ি ফুট দূরে একটা পাথরের খাঁজে লম্বা হয়ে বিশাল একটা সাপ মনের সুখে জল খাচ্ছে। তার জিভটা লকলক করছে। সাপটা যে শঙ্খচূড়, তাতে ভুল নেই।
একটু পরে সাপটা ঘুরে পাথর বেয়ে উঠতে থাকল।
তারপর হঠাৎ বিকট হিসহিস শব্দ করে মাথা তুলল। তার প্রকাণ্ড ফণা অন্তত পাঁচ ফুট খাড়া হয়ে রইল। কর্নেল ফিশফিশ করে বললেন-কিছু দেখেছে সাপটা!
কী দেখেছে, সেটা আমাদেরও চোখে পড়ল। সেই কালো বেড়ালটা! একটা পাথরের ফাটল থেকে রুক্ষ একটা গাছ মাথা তুলেছে। মনে হল গাছে পাখির বাসা আছে। বেড়ালটা নিশ্চয় ছানাগুলো চুরি করে খেতে এসেছে। সাপটার গর্জন শুনেই সে থমকে গেছে এবং জুলজুলে চোখে তাকিয়ে আছে। দাঁতগুলো বেরিয়ে পড়েছে তার।
সাপের সঙ্গে বেজির লড়াই দেখেছি। কিন্তু বেড়ালের সঙ্গে সাপের লড়াই কল্পনা করে দম আটকে এল উত্তেজনায়। আমি রাইফেল বাগিয়ে ধরলুম। হতচ্ছাড়া শঙ্খচূড় যদি বেড়ালটাকে মেরে ফেলে আমার কষ্ট হবে। অমন শিক্ষিত বেড়াল সচরাচর দেখা যায় না!
শঙ্খচূড় কয়েকফুট এগিয়ে হিস করে ফণা ঝাড়ল। আর বেড়ালটা এক লাফে পিছিয়ে গিয়ে গররর গ্যাঁও করে উঠল। মনে হল, বেড়ালটা খুব ফিচেল। সাপটার সঙ্গে সে তামাশা করছে। সাপটা এইতে বেজায় রেগে গেল। সে ফের চক্কর তুলে লাফ দেবার ভঙ্গিতে আরও কয়েক ফুট এগিয়ে গেল। তার চক্করটা এখন প্রায় ফুট পাঁচেক উঁচু। এপাশ-ওপাশে দুলছে। বেয়াদব প্রাণীটাকে চরম দণ্ড দেবার জন্যে সে যেন অস্থির! রাগে অপমানে ক্রমাগত ফুঁসছে।
কিন্তু ব্যাপারটা আর এগোল না। হঠাৎ ওপারে কোথাও কার গলা শোনা গেল-মহারাজ! মহারাজ! পালিয়ে আয়!
কর্নেল এক ঝটকায় আমাকে টেনে প্রকাণ্ড একটা পাথরের আড়ালে নিয়ে গেলেন। আমরা লুকিয়ে পড়লুম। সেখান থেকে উঁকি মেরে দেখলুম, সেই লোকটা দুর্গের ওপর থেকে ঝুঁকে হাত নেড়ে বেড়ালটাকে ডাকছে। মহারাজ! অ্যাই হতভাগা! মারা পড়বি যে! পালিয়ে আয় বলছি!
বেড়ালটার নাম তাহলে মহারাজ! সে মুখ তুলে লোকটাকে দেখল। তারপর দ্বিধার সঙ্গে আস্তে আস্তে রণস্থল ত্যাগ করল। তবে যাবার আগে সাপটাকে ধমক দিতে ভুলল না। পাথরের ধাপে লাফ দিতে দিতে ওপরে অদৃশ্য হলে সাপটা ফণা গুটিয়ে চলতে শুরু করল।
কর্নেল লোকটাকে দেখছিলেন। ফিশফিশ করে বললেন–সাবধান জয়ন্ত, নড়ো না। দেখতে পাবে!
মহারাজ লোকটার কাঁধে গিয়ে চড়েছে। সে ওকে আদর করতে করতে সরে গেল ধ্বংসাবশেষের আড়ালে। আমরা উঠলুম।
কর্নেল বললেন–থাক জয়ন্ত। এখন আর ওপরে গিয়ে কাজ নেই। লোকটাকে ভালোভাবে দেখে নিয়েছি। মুখটা চেনা মনে হল! কিন্তু কিছুতেই স্মরণ করতে পারছি না। এসো ফেরা যাক।
বললুম–এমন দুর্গম জায়গায় ও কী করে? ভারি আশ্চর্য তো!
কর্নেল কোনও কথা না বলে আমার হাত ধরে টানলেন। আমরা আগের পথে নামতে শুরু করলুম….
.
০৩.
দুপুরে খাওয়ার পর বিছানায় গড়াচ্ছি। সেই সময় দেখি, কর্নেল টেবিলে একটুকরো কাগজে কীসব রেখে আতশ কাচ দিয়ে দেখছেন। জিজ্ঞেস করলুম-ওগুলো কী?
কর্নেল একটু হেসে জবাব দিলেন–টোনাবাবার নোম।
-তাই বলুন! আসা অবধি দেখছি, মাটির ওপর ঝুঁকে হামাগুড়ি দিয়ে কী খুঁজছেন। তাহলে টোনাবাবার লোম খুঁজতেই হন্যে হচ্ছিলেন কাল থেকে?
-হ্যাঁ ডার্লিং।
–লোম ইজ লোম। আতশ কাচ দিয়ে অত খুঁটিয়ে দেখার কী আছে!
–আছে বৎস। একসময় ট্যাক্সিডার্মি অর্থাৎ চামড়াবিদ্যায় কিছু জ্ঞানগম্যি ছিল। তখন শিকারের নেশা ছিল। তাই শিকার-করা জন্তুর চামড়া কীভাবে অবিকৃত রাখা যায়, তার হদিস পেতে ওই বিদ্যার চর্চা করেছিলুম! দেখা যাক, সেই জ্ঞান কাজে লাগাতে পারি নাকি!
-কী কাজে লাগাতে চান, শুনি?
–প্রথম কথা, এ লোম কোন্ জন্তুর জানতে চাইছিলুম। জানলুম। দ্বিতীয় কথা, এ লোম যে-জন্তুর গা থেকে খসে পড়েছে, সে জীবিত না মৃত, সেটা জানার দরকার ছিল। জেনে গেলুম।
-বাঃ! তাহলে ওই জ্ঞান দুটো আমাকেও বিতরণ করুন। জ্ঞানী হই আপনার মতো।
কর্নেল আমার তামাশায় কিন্তু হাসলেন না। গম্ভীর মুখে বললেন–আশ্চর্য, বড়ো আশ্চর্য জয়ন্ত! এ লোম নিতান্ত ভালুকের। অথচ আমি জানি, টোনাবাবা মোটেও ভালুক নয়। তাছাড়া সে ভালুক ভালুক বলে চাঁচালে ভয় পেয়ে পালায়। আর তার চেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার এ লোম মরা ভালুকের।
হতভম্ব হয়ে বললুম–ওরে বাবা! তাহলে কি ওটা একটা ভালুকের প্রেতাত্মা?
–তাহলে ভালুক বলে চাঁচালে ভয় পাবে কেন ডার্লিং?
পাবে এজন্যে যে সে একটা ভূত। মানুষের ভূত শুনেছি জ্যান্ত মানুষকে ভয় পায় অনেক সময়। ভালুকের ভূত জ্যান্ত ভালুকের কথায় ভয় পাবে, এতে অবিশ্বাসের কী আছে!
-হুম! কিন্তু এ লোম ভালুকের–অথচ টোনাবাবা ভালুক নয়, গোরিলা জাতীয় প্রাণী। তুমি তো ওর ফোটো দেখেছে। ভালুক বলে মনে হয়? অবিকল যেন সেই সিনেমায় দেখা কিংকং!
এ রহস্যের মাথামুণ্ডু নেই! অগত্যা আমি ঘুমোবার তালে থালুম। দুপুরে খেয়ে ভাতঘুমের বাঙালি অভ্যেস আমার বরাবর।
সেই ঘুম ভাঙার পর দেখি, ঘরে আমি একা। আলো ধূসর হয়ে গেছে। কঙ্কগড় দুর্গপাহাড়ের আড়ালে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। পাহাড়ের মাথা লাল হয়ে গেছে। বাংলোর লনে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে বৃদ্ধ সঙ্গীটির কথা ভাবলুম। নিশ্চয় কোথাও সেই বিদঘুটে ক্যামেরার ফাঁদ পাততে গেছেন। এ বয়সে অমন সাহসের বাড়াবাড়ি না দেখালেই পারতেন!
চৌকিদারকে ডেকে একটা চেয়ার আনতে বললুম। চায়েরও ফরমাশ দিলুম। একটু পরে চেয়ারে বসে চা খেতে-খেতে চমকে দেখি, সেই মহারাজ অর্থাৎ কালো বিড়ালটা চৌকিদারের ঘরের বারান্দায় পা টিপে টিপে উঠছে। বারান্দায় একটা দোলনা টাঙানো। তাতে চৌকিদারের বাচ্চাটা ঘুমোচ্ছ। মহারাজ করল কী, একলাফে দোলনায় উঠে পড়ল। অমনি বাচ্চাটা বেজায় চ্যাঁচামেচি করে কান্নাকাটি জুড়ে দিল। চৌকিদারের বউ রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এল খুন্তি হাতে। চৌকিদারও দৌড়ে গেল।
তারপর যা দেখলুম, কয়েক মুহূর্তের জন্যে আমার বুদ্ধিশুদ্ধি ঘুলিয়ে গেল।
ঘরের পেছনদিক থেকে দুলতে দুলতে মূর্তিমান কিংকং বেরুল যেন! হ্যাঁ, এই সেই টোনাবাবা তাতে কোনও ভুল নেই। সে দু-ঠ্যাঙে হেঁটে বারান্দায় পা দিতেই চৌকিদার ভিরমি খেয়ে গোঁ গোঁ করে পড়ে গেল। তার বউ দুর্বোধ্যভাষায় চিৎকার করে উঠেছিল। কিন্তু তার মায়ের মন। প্রথমেই সে বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিয়েছে। কালো বেড়ালটা দোলনার কিনারায় আরামে বসে দুলছে। আর টোনাবাবা দরজায় ঘুষি মারছে দমাদম।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এসব ঘটে গেল। তারপর আমার সংবিৎ ফিরে এল। কিন্তু রাইফেলের। জন্যে দৌড়ে বাংলোয় ঢুকতে গেলে যদি টোনাবাবা আক্রমণ করে? আমি অসহায় হয়ে পড়লুম কয়েক মুহূর্তের জন্যে। তারপর হঠাৎ মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল–ভালুক! ভালুক!
অমনি টোনাবাবা থমকে দাঁড়াল। আমি আরও বাজখাই গলায় চেঁচিয়ে উঠলুম–ভালুক! ভালুক!
টোনাবাবা দুলতে দুলতে নামল বারান্দা থেকে। তারপর যেই ঘরের পিছন দিকে জঙ্গলে ঢুকতে গেছে, হঠাৎ কোত্থেকে তার সামনে আবির্ভূত হলেন স্বয়ং কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। টোনাবাবা তাকে যেন ঘুষি মারবার জন্যে মুঠো তুলল। আমি আঁতকে চোখ বন্ধ করলুম।
তারপর শুনলুম কর্নেল হাসতে হাসতে বলছেন–গুড ইভনিং টোনাবাবা! গুড ইভনিং!
টোনাবাবা থেমে গেছে।
কর্নেল বললেন–হাঁ করে কী দেখছেন মশাই! আসুন, চা খাওয়া যাক। তারপর অন্য কথা।
টোনাবাবা চুপ। দোলনা থেকে বেড়ালটা দৌড়ে গিয়ে তার কাঁধে চাপল।
এবার কর্নেল খপ করে তার একটা হাত ধরে ফেললেন। টোনাবাবা ছাড়াবার চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। আমি কি স্বপ্ন দেখছি? কর্নেলের গায়ে এমন দানবের জোর আছে কখনও দেখিনি। এমন একটা কিংকংকে হিড়হিড় করে টেনে আনছেন!
লনের মাঝামাঝি এসে টোনাবাবা মানুষের ভাষায় এবং খাঁটি বাংলায় বলে উঠল-আঃ! ছাড়ুন মশাই! এ হাতের হাড় ভাঙা যে! হারামজাদা ভালুক আমার ডানহাতটা অকেজো করে দিয়েছে ছেলেবেলায়।
কর্নেল বললেন-জয়ন্ত, চৌকিদারের জ্ঞান ফেরাও। ওর বউকে বেরুতে বলো। আমাদের অতিথির জন্যে চা-ফা দরকার। তাছাড়া রাতেও ইনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন। বলে দিয়ো।
যেতে যেতে ঘুরে দেখি, টোনাবাবা আমার খালি চেয়ারটাতে বসে পড়ল। …
ভালুকের চামড়া খুলে রেখে টোনাবাবা আমাদের সঙ্গে পরম আনন্দে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন–আহা, কতকাল পরে এমন সুস্বাদু চা খাচ্ছি। তবে শুনুন মশাই, আমি কিন্তু স্রেফ নিরিমিষ খাই। চৌকিদারকে বলে দেবেন। তবে আমার মহারাজের জন্যে বিশেষ ভাবতে হবে না। একবাটি দুধ হলেই চলবে। বেচারা বহুকাল দুধ খেতে পায় না। সেই লোভেই তো ও বাচ্চাদের বিছানায় গিয়ে দুধের শিশি হাতড়ায়। বাচ্চাগুলো এমন হিংসুটে! চ্যাঁচামেচি করে হইচই বাধায়।
কর্নেল মিটিমিটি হেসে বললেন–মহারাজ না হয় দুধ চুরি করতে হানা দেয়, আপনি কী চুরি করতে চান টোনাবাবা?
টোনাবাবা লাজুক হেসে বললেন-আমি বাচ্চাদের খুব ভালোবাসি। একটু আদর করতে সাধ যায়। কিন্তু আমার এমনি কপাল! আজ অবধি একটা বাচ্চাও হাতাতে পারলুম না। যেমনি চুপি চুপি হানা দিই, আমার মহারাজ হারামজাদা ঘুম ভাঙিয়ে দেয় ওদের। তারপর লোকেরা ভালুক ভালুক বলে ভয় দেখায়। আমার মশাই ওই একটা আতঙ্ক। ছেলেবেলায় সেই যে ভালুকের পাল্লায় পড়েছিলুম, উঃ! সে আতঙ্ক আর কাটল না বুড়ো বয়সেও।
–হুম। কিন্তু বাচ্চা চুরি করার ইচ্ছে কেন আপনার?
টোনাবাবা খিকখিক করে হাসলেন। চোখ নাচিয়ে বললেন–পুষব। মহারাজকে যেমন পুষেছি, তেমনি পুষব, তত দিনদুপুরে বাচ্চা চুরি করা কি সহজ কাজ! লোকেরা বেদম ঠ্যাঙানি দেবে যে! তাই টোনাবাবা সেজে রাতবিরেতে হানা দিই! হি হি হি হি!
আমি এসব কথাবার্তার মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছি না। চুপচাপ শুনে যাচ্ছি। শুধু টের পাচ্ছি, এই টোনাবাবা ভদ্রলোকের খুলির ভেতরকার নরম বস্তুটিতে নিশ্চয় কোনও গণ্ডগোল ঘটেছে।
হ্যাঁ, ঠিক তাই। আমাদের খাওয়াদাওয়া শেষ হবার পর ফের লনে গিয়ে বসে আছি, এমন সময় একটা জিপ এসে উপস্থিত হল। কয়েকজন অফিসার গোছের ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বললেন–নমস্তে কর্নেলসাব! কই, আমাদের পেশেন্ট ভদ্রলোক কোথায়?
অবাক হয়ে দেখি, টোনাবাবা কখন চেয়ার থেকে ছিটকে গেছেন এবং আলোছায়ায় ভরা লনে ফুলগাছের আড়ালে হামাগুড়ি দিচ্ছেন এবং কাঁধে মহারাজও রয়েছে।
টর্চের আলো পড়তেই উঠে দাঁড়িয়ে বিকট চেঁচিয়ে বললেন-যাব না। কিছুতেই যাব না।
অফিসাররা তাকে ধরে ফেললেন। তারপর টানতে টানতে জিপের দিকে নিয়ে গেলেন। বেড়ালটা ওঁর কাঁধ আঁকড়ে বসে রইল।
টোনাবাবাকে নিয়ে জিপ চলে গেলে এতক্ষণে বললুম-হে বৃদ্ধ ঘুঘুপাখি! এসবের অর্থ কী?
কর্নেল হোহো করে হেসে বললেন–এখনও বোঝোনি জয়ন্ত! টোনাবাবা কিছুদিন আগে রাঁচির পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে এসেছেন। আজ দুপুরে আমি প্রতাপগড়ে গিয়ে ট্রাংক কল করে এসেছিলুম।
-এবার বুঝলুম। তবে অর্ধেক বুঝিনি। কে টোনাবাবা?
–ভদ্রলোকের নাম দিবাকর মুখুজ্জে। নামকরা উকিল ছিলেন রাঁচি আদালতে। একমাত্র পুত্র ট্রাক দুর্ঘটনায় মারা যাবার পর ক্রমশ মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটেছিল। তারপর…বাধা দিয়ে বললুম-ভালুকের চামড়া পেলেন কোথায় উনি?
–তোমাকে আমার বন্ধু মেজর শংকরনাথের কথা বলেছি। তাঁর ছেলে অসীম বিনা লাইসেন্সে কঙ্কগড় জঙ্গলে শিকারে এসে বাড়ি ফেরেনি, তাও বলেছি। কাল সন্ধ্যাবেলা ঝরনার ওখানে হঠাৎ অসীমের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সে একটা বাঘ না মেরে কিছুতেই বাড়ি ফিরবে না। কোন পাহাড়ি গুহায় সে লুকিয়ে আছে বলল।
যাই হোক, কথায়-কথায় অসীম বলল, সে একটা প্রকাণ্ড ভালুক মেরে চামড়া ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে শুকোতে দিয়েছিল। সেই চামড়াটা হারিয়ে গেছে। তা এই শুনেই আমার কেমন সন্দেহ হল। তারপর অসীমের কাছেই শুনলুম, ভাঙা দুর্গে বেড়াল কাঁধে নিয়ে একটা লোককে বেড়াতে দেখেছে। লোকটা গুনগুন করে গানও গাইছিল। গানটা শোনো।
বলে কর্নেল সুর ধরে গাইতে লাগলেন :
টানা বাবা টানা, ভূতানিকে টানা
টানা বাবা টানা, টান টোন টানা…
বললুম-এ আবার কিসের গান?
কর্নেল বললেন–১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে যাত্রা নামে একজন ওরাওঁ টানা ভগত নামে এক আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল ওরাওঁ জাতির কুসংস্কার দূর করা। অথচ আশ্চর্য, সেই টানা ভগতআন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যায়। টোনাবাবা নামে এক ভূতের সৃষ্টি হয়। কুসংস্কারের শক্তি এমনি! এক ভূত তাড়ালে আরেক ভূত এসে জোটে। যাই হোক, সম্ভবত কাঠুরেরা ওই গান শুনেই ভেবেছিল জঙ্গলে টোনাবাবার আবির্ভাব ঘটেছে। দিবাকরবাবুও সুযোগ বুঝে নিজেকে টোনাবাবা করে তুলেছিলেন।
এসব শোনার পর কঙ্কগড়ের রহস্য আমার কাছে মুছে গেল। তাই বললুম–আর কী হবে এখানে থেকে? যেখানে রহস্য নেই, সেখানে তো আপনারও মন বসে না।
কর্নেল হাসলেন-রহস্য নেই কে বলল! জঙ্গল, পাহাড়, দুর্গের ধ্বংসাবশেষ–এ সবে রহস্যের শেষ নেই। এক রহস্যের পর্দা তুলে দেখি সামনে আরেক রহস্যের পর্দা দাঁড় করানো। তুমি জানো, আমি ওই ঝরনার ধারে একটা শিলালিপি আবিষ্কার করেছি। আমার ধারণা ওই দুর্গে খুঁজলে অনেক বিস্মৃত ইতিহাস উদ্ধার করা সম্ভব হবে। ডার্লিং! আগামী প্রত্যুষে আমরা দুর্গে অভিযান করব।
আঁতকে উঠে বললুম-রক্ষে করুন! শঙ্খচূড় সাপের কথা ভেবে এখনও বুক কাঁপছে।
কর্নেল আমার একটা হাত নিয়ে সস্নেহে বললেন-বৎস জয়ন্ত, কঙ্কগড়ের ওই আতঙ্ক আছে বলেই আমাদের অভিযান রীতিমতো অ্যাডভেঞ্চার হয়ে উঠবে। চলো, শুয়ে পড়া যাক। সকাল-সকাল উঠতে হবে। …