ও ঘাটে যেও না বেউলো

ও ঘাটে যেও না বেউলো

আমার উল্টা-রথ তৈরি হচ্ছে। নিশ্চিন্ত থাকুন। পাকা লোক লাগিয়েছি। খাস মার্কিন। ওরা গ্রেতা গার্বো থেকে আরম্ভ করে ডিউক অব উইনজার আলকাপোনি থেকে শুরু করে আর্চবিশপ অব নটিংহাম সক্কলেরই কোরা কাপড় ধুয়ে কেচে মলমল করে তুলতে জানে। ওটা বেরোলে আর কেউ জীবনস্মৃতি পড়বে না।

ইতোমধ্যে ইতোমধ্যে কেন– বহুদিন ধরেই আমি বহু লোকের কাছ থেকে বহু পাণ্ডুলিপি পেয়েছি। প্রেরকদের কেউ কেউ চান আমি যেন তাবৎ বস্তু পড়ে সেটি মেরামত করে দিই। কেউ কেউ অল্পতেই সন্তুষ্ট। বলেন, আমার মতামত জানাতে। আর কেউ-বা সরাসরি শুধান, সার্থক-সাহিত্য কী প্রকারে সৃষ্টি করতে হয়?

উপদেশ-নির্দেশ দিয়ে, রিপুকম-মেরামতি করে যদি লেখক গড়া যেত তা হলে এই যে শান্তিনিকেতন, যেখানে রবীন্দ্রনাথ প্রায় চল্লিশ বছর ওইসব কর্ম লেখক এবং শিক্ষক উভয়রূপেই করে গেলেন, এখান থেকে বেরিয়েছেন ক-টি সার্থক সাহিত্যিক? আমি তো একমাত্র প্রমথনাথ বিশীর নাম জানি। পক্ষান্তরে শরৎ চাটুয্যে তো কারও কাছ থেকে একরত্তি সাহায্য পাননি। তার মতো সার্থক লেখক ক-জন? উত্তরে সবাই বলবেন, উনি একসেপশন– ব্যত্যয়। আমি বলব, সার্থক সাহিত্যিক হওয়া মানেই ব্যত্যয়।

কিন্তু তৎপূর্বে প্রশ্ন, আপনি সাহিত্যিক হতে চান কেন?

 টাকা রোজগার করতে হয় না, তা এদেশে হয় না।

অনুসন্ধান করে দেখুন, এই বাঙলা দেশে ক-জন লোক একমাত্র কলমের জোরে মোটামুটি সচ্ছল অবস্থায় আছেন। অধিকাংশই কোনও না-কোনও ধান্দায় নিযুক্ত থেকে মাসের শেষে পাকা মাইনে পান। লেখার আমদানি ঘুষের মতো। কখন আসে কত আসে তার ওপর কণামাত্র নির্ভর করা যায় না। ঘুষের টাকা থাকেও না।

অর্থাৎ কপালজোরে হয়তো মাসতিনেক আপনি প্রায় পাঁচশো টাকা করে মাসে কামালেন–এর বেশি এদেশে আশা করবেন না কিন্তু তার ওপর নির্ভর করা চলবে না। পাঠকের মতিগতি কোন দিন কোন দিকে মোড় নেবে তার কোনও স্থিরতা নেই। আপনাকে তবু লিখে যেতে হবে, নতুন বই তৈরি করতে হবে, ওই দিয়ে যদি ভাটার টান ঠেকাতে পারেন। ইতোমধ্যে আপনার পুঁজি ফুরিয়ে এসেছে, অর্থাৎ যে অভিজ্ঞতার মূলধন নিয়ে লেখার ব্যবসা আরম্ভ করেছিলেন সেটা তলানিতে এসে ঠেকেছে। নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবেন কী করে? বয়েস হয়ে গিয়েছে বন্ধ প্রেমের হাট। লোটাকম্বল নিয়ে ঘোরাঘুরিও করতে পারেন না কোমরে বাত।

এই অভিজ্ঞতা-সঞ্চয়ের ব্যাপারে আরেকটা জিনিস মনে পড়ল– সে বড় মজার। ইয়োরোপে যে কোনও চিত্রকরের বাড়িতে নিত্যনতুন রমণী মডেল হয়ে আসছে। তারা বিবসনা হয়ে পোজ দেয়। কেউ কিছু বলে না। ওটা নাকি ওদের দরকার। চিত্রকরদের সবাই যে ভীষ্মদেব, শুকদেব ঠাকুর নন সে কথাও সবাই জানে। বস্তুত কোনও চিত্রকর যদি একটুখানি শুকদেবীয় হন তবে তার তাবৎ জীবনীকার সেটা চিৎকার করে বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়ে দিয়ে আমাদের কানে তালা লাগিয়ে দেন। বাদবাকিদের কেউ গালমন্দ করে না। ওই যে বললুম, ওটা নাকি ওদের দরকার।

এদেশে গুরুমহারাজদের এ অধিকার আছে। ভৈরবী, নর্মসখীরূপে এঁরা গুরুমহারাজদের সাধন-সঙ্গিনী হন। এ প্রথা হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই প্রচলিত।

কিন্তু যদি ইয়োরোপের পাদ্রিসাহেব ভৈরবী ধরেন তবে তাকে তিন দিনও সমাজে টিকতে হবে না। এদেশের গেরস্তপাড়ায় কোনও আর্টিস্টকে মডেলসহ বাস করতে দেবে না।

আমি কোনও ব্যবস্থার নিন্দা বা প্রশংসা করছিনে। সাহিত্যিক হিসেবে সে অধিকার আমার নেই। এর বিচার করবে সমাজ। সমাজ গুরু চায়, চিত্রকর চায়, সাহিত্যিক চায়। সমাজই স্থির করবে, কার কোটাতে অধিকার। সমাজ ভুলও করে। সোক্রোতেসকে বিষ, খ্রিস্টকে ক্রুশ দেয়।

এটা কিছু নতুন কথা নয়। সামান্য একটি আলাদা উদাহরণ দিই। বৈজ্ঞানিকদের সাধ্যি নেই জাহাজ জাহাজ টাকা জোগাড় করে এটম বম বানাবার। মার্কিন সমাজের সর্বপ্রধান মুখপাত্র রোজোভেল্ট দেশের টাকা বৈজ্ঞানিকদের পায়ে ঢেলে দিয়ে বললেন, ওটা আমার চাই। বৈজ্ঞানিকরা তৈরি করে দিলেন। ওটা জাপানে ফেলা হবে কি না, সেটা স্থির করলেন ট্রমান বৈজ্ঞানিকদের হাতে সে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত করার ভার দেওয়া হয়নি। তাদের মতামত চাওয়া হয়েছিল মাত্র। এবং শুনলে আশ্চর্য হবেন, বৈজ্ঞানিকদের অধিকাংশই বিপক্ষে মত দিয়েছিলেন।

দার্শনিকদের বেলাও তাই। কেউ হয়তো প্রামাণিক বই লিখে প্রমাণ করলেন, ঈশ্বর নেই। কিন্তু তার সাধ্য কী সে বই স্কুলে স্কুলে কলেজে কলেজে পড়ান! সেটা স্থির করবে সমাজ। কিংবা মনে করুন, বুদ্ধদেব বলেছেন ঈশ্বর নেই। সেটা সিংহল, বর্মার স্কুলে পড়ানো হয়। এদেশে পড়াতে গেলে সমাজ আপত্তি করবে।

কিংবা এই ফিল্মের কথাই নিন। প্রডুসার ডিরেক্টর দর্শক তো স্থির করেন না, কোন্ ফিল্ম দেখানো চলবে আর কোনটা চলবে না। স্থির করে সমাজ সেন্সর বোর্ডের মারফতে। কিন্তু সে আলোচনা উপস্থিত মুলতবি থাক। আপনি কেন সাহিত্যিক হতে চান, সেই কথায় ফিরে যাই।

তা হলে কি আপনি সাহিত্য সৃষ্টি করে খ্যাতি-প্রতিপত্তি সঞ্চয় করতে চান?

 প্রতিপত্তি হবে না। সে-কথা গোড়া থেকেই বলে রাখি।

আমি সামান্য লেখক। দেশে-বিদেশে বইখানা প্রাইজ পেয়েছে। আমি তাই নিয়ে গর্ব করছিনে, ঈশ্বর আমার সাক্ষী। নিতান্ত এই প্রতিপত্তির কথা উঠল বলে সে কথাটা বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে। আমার বন্ধুবান্ধব এবং আপনাদের মতো সহৃদয় পাঠক কেউ কেউ বলেন, কাবুলে তো ছিলে মাত্র দু বছর। তবু বইখানা মন্দ হয়নি। জর্মনিতে তো ছিলে অনেক বেশি। সে দেশ সম্বন্ধে ওইরকম একখানা বই লেখ না কেন? আমি ভাবলুম, প্রস্তাবটা খুব মন্দ নয়। মোটামুটি একটা খসড়াও তৈরি করলুম। কিন্তু বিপদ হল হিটলারকে নিয়ে। বিপদ হল ১৯৩৯-৪৪-এর যুদ্ধ নিয়ে। আমি ১৯৩৮-এর পর সেখানে আর যাইনি। আর আজ হিটলার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাদ দিয়ে জর্মনি সম্বন্ধে লেখা, এ যেন মুরারজি দেশাইকে বাদ দিয়ে চৌদ্দ ক্যারেট গোল্ডের কথা লেখা।

তাই মনে করলুম, আরেকবার না হয় হয়েই আসি। কুড়ি বছরের বেশি হতে চলল, বিদেশ যাইনি। হার্টও ট্রাবল দিচ্ছে। জর্মন ডাক্তাররা যদি কিছু একটা ভালো ব্যবস্থা করে দেয়। পাবলিশারদের বললুম কিছু টাকা আগাম দিতে। যাদের অনুরোধ করলুম তাঁরা সোল্লাসে টাকা পাঠালেন– এঁরা সজ্জন।

এবারে ফরেন এক্সচেঞ্জ বা বিদেশি মুদ্রার পালা।

উত্তর এল, ফেলেট ননা– তিন না চার লাইনে, ঠিক মনে নেই।

কোথায় রইল প্রতিপত্তি? কোথায় রইল খ্যাতির মূল্য? আমি যেতে চাইছিলুম নিজের টাকায় সরকারের টাকায় নয়। বলুন তো, ক-জন বাঙালি লেখক নিজের টাকায় (অবশ্য সেই আগাম টাকা নেওয়ার ফলে নির্ভর করতে হবে আমার চাকরির মাইনের ওপর) বিদেশ যেতে পারে? যে পারল সে-ও সুযোগ পেল না।

পাঠক ভাববেন না, আমি কর্তৃপক্ষকে দোষ দিচ্ছি। মোটেই না। তারা তো আমার দুশমন নন। তাঁরা যা ন্যায্য মনে করেছেন তাই করেছেন।

আমি বলতে চাই, কোথায় রইল লেখকের প্রতিপত্তি! আমি চেয়েছিলুম, কুলে দু হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা। আমার প্রতিপত্তির মূল্য তা হলে দু হাজার টাকাও নয়। অবশ্য এতে আমার দুঃখিত হওয়া অত্যন্ত অনুচিত। স্বয়ং যিশুখ্রিস্টকে ধরিয়ে দিয়েছিল তাঁর শিষ্য জুডা ত্রিশটি মুদ্রার বিনিময়ে!

ঈষৎ অবান্তর হলেও বলি, তবু আমি গিয়েছিলুম। জানেন তো, নেড়ের গো। পকেটে ছিল পঞ্চাশ না ষাটটি জর্মন মুদ্রা। সেখানে চলল কী করে? ওহ! সেখানে আমার কিঞ্চিৎ প্রতিপত্তি আছে। তবে কি জর্মনরা খুব বাঙলা বই পড়ে? মোটেই না। তবে আমার প্রতিপত্তি অন্য বাবদে এবং সেটা এস্থলে সম্পূর্ণ অবান্তর। ধরে নিন, আমি সার্কাসের দড়ির উপর নাচতে পারিনা, সেটা বিশ্বাস হল না, আমার কোমরে বাত বলে?– তা হলে ধরুন, আমি হত্তনের পঞ্জাকে হত্তনের গোলাম বানাতে পারি।

এই তো গেল প্রতিপত্তির কথা। এবারে খ্যাতি। আমার খ্যাতি অত্যল্প, তাই আমার কথা তুলব না। আমার ইয়ার পাহাড়ী সান্যালের (ওহ! বলতে গর্বে বুকটা কী রকম ফুলে উঠেছে!) খ্যাতি সম্বন্ধে তো আপনাদের কোনও সন্দেহ নেই। তাকে গিয়ে শুধান, সে কী আরামে আছে। অত্যন্ত গোবেচারী লোক– অন্তত আমার যদুর জানা– দুটি পয়সা কামিয়ে, কোনও ভালো হোটেলে ইয়ার বক্সিসহ একটুখানি মুর্গি-কারি খেয়ে পান চিবোতে চিবোতে–তার পানের ঝাঁপিটি দেখেছেন তো বাড়ি যাবে। শুধান গিয়ে তাকে, হোটেলে বসামাত্রই আকছারই তার কী অবস্থা হয়।

অটোগ্রাফ, ফটোগ্রাফ, গুষ্টির পিগ্রিাফ কী চায় না লোকে তার কাছ থেকে! গোড়ায় আমি জানতুম না। আমার এক ভাগ্নের জন্য চাইলুম অটোগ্রাফ। সে যা করুণ নয়নে তাকাল– ভাবখানা এ টু ব্রুটি!–যে আমার দয়া হল। তাড়াতাড়ি বললুম, না, না, থাক।

বেশ কিছুদিন তাকে দেখিনি। তার কারণ অবশ্য, আমার নিবাস মফস্বলে। শহরে গিয়েছি। রেস্ত কম। তাই বসেছি তন্দুরি মুর্গির হোটেলে একলা-একলা। মুর্গিটা খেয়ে প্রায় শেষ করেছি এমন সময় গলকম্বল মানমুনিয়া দাড়ি সমেত সমুখে দাঁড়ালেন এক মহারাজ। আমার মুখে বোধহয় কিঞ্চিৎ বিরক্তি ফুটে উঠেছিল। লোকটাও রস্টিক, হোটেলে এত টেবিল খালি থাকতে আমার সামনের চেয়ারখানায় ধপ করে বসে পড়বেন কেন?

শুধাল, কেমন আছ ভাই?

আরে! এ যে পাহাড়ী। দাড়ি-ফাড়ি নিয়ে এদ্দিন বাদে খাঁটি পাহাড়ী বনল। বললুম, খুলে কও।

কাতর কণ্ঠে বললে, আর কী উপায়, বল!

 আমি দরদী গলায় বললুম, বড় পাওনাদার লেগেছে বুঝি?

পাহাড়ী খাসা উর্দু বলে। সে-ও বলে বেড়ায়, আমি ভালো উর্দু বলতে পারি। এই করে আমার নিজের জন্য বেশ একটা সুনাম কিনে ফেলেছি।

পাহাড়ী বললে, তওবা, তওবা। ওয়াস্তা ফিরুল্লা। পাওনাদার হলেও না হয় বুঝতুম। আর সে কি আমার নেই? এন্তের। কিন্তু তারা ভদ্রলোক। খাবার সময় উৎপাত করে না।

বুঝলুম, মামেলা ঝামেলাময়। বললুম, তা তুমি এক কাজ কর না কেন? এডমায়ারারদের কেউ ধরলে বল না কেন, আজ্ঞে হ্যাঁ, মিলটা ধরেছেন ঠিকই। তবে আমি পাহাড়ী সান্যাল নই, আমি তার ছোট ভাই, আমার নাম জংলী সান্যাল। দাড়িটাই অবশ্য জংগলীর ইন্সপিরিন জুটিয়েছিল।

ঠাণ্ডি সাঁস লেকর অর্থাৎ দীর্ঘশ্বাস ফেলে– পাহাড়ী ফরাসিতে বলল, সা না ভা পা, শের– না, ডিয়ার সে হয় না।

আমি বললুম, কেন? তুমি কি আডোনিসের মতো খাবসুরত?

তেড়ে বলল, কামাল কিয়া, ইয়ার। নামে কী আপত্তি? তা নয়। একবার তাই করেছিলম। ফল কী হল, শোনো। এই হোটেলেই, যা, এই হোটেলেই একদিন বসে আছি, একলা। এমন সময় কে এক অচেনা লোক এসে শুধাল, আপনি কি পাহাড়ী সান্যাল? আমিও তোমারই মতো– গ্রেট মেন থিঙ্ক এলাইক– একগাল হেসে বললুম, আজ্ঞে, মিলটা ধরেছেন ঠিকই, তবে আমি পাহাড়ী সান্যাল নই, আমি তার ছোট ভাই। লোকটা খানিকক্ষণ ইতিউতি করে বলল, কী করি বলুন তো! ম্যানেজারবাবু আমাকে তার কাছে পাঠালেন তিনশো টাকা দিয়ে যেতে। তাঁকে পাই কোথায়? তার পর আমি তাকে যতই বোঝাই

আমিই পাহাড়ী সান্যাল, সে আর মানতে চায় না।

আমি ভেবে বললুম, তা তো বটেই। আমিই সে অবস্থায় মানতুম না। সোত্সাহে বলল, ইয়ে। তার পর আরও ঠাণ্ডি সঁস লেকর বলল, ভাই, সে টাকাটা আর কখনও পাইনি। ম্যানেজার লোকটা ছিল ভালো। অন্তত আমার টাকাটা শোধ করে লাটে উঠতে চেয়েছিল– আমি কি আর জানি! পরদিন সেখানে গিয়ে দেখি সব ফর্সা।

হ্যাঁ! একটা কথা বলতে ভুলে গেলুম। আমার মুর্গির বিলটা পাহাড়ীই দিয়েছিল। কিন্তু এটা বলে কি পাহাড়ীর দুশমনি করলুম না? এ যাবৎ তো লোকে শুধু অটোগ্রাফ চাইত, এখন যদি

আরেকটি কথা। আমাদের এত দোস্তি কেন? সে আমার বই পড়ে না, আমি তার অভিনয় দেখি না। একেবারে খাঁটি হল না কথাটা। আমি বড়দিদি দেখেছি– সে বোধহয় দেশে-বিদেশের পাঁচ পাতা পড়েছে।

পাঠক সর্বশেষে অবশ্য শুধাবেন, আমি এত বাখানিয়া আপনাদের সাহিত্যিক হতে বারণ করছি কেন। তার কারণ সোজা। আমার বিশ্বাস একমাত্র জিনিয়াসরাই আমার লেখা পড়ে। অর্থাৎ আপনারা। বাজারে নামলে আমার রুটি মারা যাবে বলে।

আচ্ছা, আমার কথা ছাড়ন। স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র কী বলেছেন

অস্য দন্ধোদরস্যার্থে কিং কিং ন ক্রিয়তে ময়া।
 বানরীমিব বাগদেবীং নয়ামি গৃহে গৃহে ॥
ওরে পোড়া পেট, কত না কিছুই করি আমি তোর তরে।
বাদরীর মতো সরস্বতীরে নাচাচ্ছি ঘরে ঘরে —
 (লেখকের অনুবাদ)

 পেটের জন্যই হোক, আর খ্যাতির জন্যই হোক, সরস্বতাঁকে বানরের মতো নাচাবেন না। আপনারা বলবেন, এটা তো বড় সিরিয়াস কথা হয়ে গেল। সে-ই তো চেষ্টা করছি গত চৌদ্দ বছর ধরে। সিরিয়াস কথা হেসে হেসে বলার।

কিন্তু পারলুম কই? এখন আবার বৃদ্ধ বয়সে ধাতই-বা যায় কী করে?

উম্র সারি তো কটি ইশকে বুতা মে, মোমিন!
 আখেরি ওয়ক্ত সেঁ ক্যা খাক মুসলমা হোংগে?
সমস্ত জীবন তো কাটালে মিথ্যা প্রতিমার প্রেমে,
হে মোমিন!
 এই শেষ সময়ে আর কি ছাই মুসলমান হব?

বরঞ্চ লেখা বন্ধ করাই ভালো। উৎসও শুকিয়ে এসেছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *