উপন্যাস
বড় গল্প
সংকলন
রচনা

ওষ্ঠাধরে রাজদণ্ড

ওষ্ঠাধরে রাজদণ্ড

তো মরা অনেকেই হাসান-হুসেনের নাম শুনেছ, কিন্তু তাঁদের করুণ কাহিনি তোমাদের সকলেই জানো না বোধ হয়।

হাসান আর হুসেন হচ্ছে দুই সহোদর, হজরত মহম্মদের দুই দৌহিত্র। চতুর্থ খলিফা আলি তাঁদের পিতা। আলির পরলোকগমনের পর হাসান অধিষ্ঠিত হন তাঁর আসনে। মুসলমানদের মধ্যে খলিফাই হচ্ছেন সর্বপ্রধান ব্যক্তি।

হজরত মহম্মদের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলেন হাসান। এবং তাঁর চেহারাও ছিল অনেকটা হজরত মহম্মদের মতন দেখতে। প্রকৃতিতেও তিনি ছিলেন ন্যায়নিষ্ঠ, দয়ালু ও ধার্মিক। যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত পছন্দ করতেন না।

এমন লোকের খলিফার উচ্চাসন ভালো লাগতেই পারে না। কিছুদিন পরেই তিনি স্বেচ্ছায় সে আসন ত্যাগ করলেন। নতুন খলিফা হলেন মোয়াউইয়া।

নতুন খলিফার পুত্রের নাম এজিদ। তিনি হাসানকে প্রীতির চোখে দেখতেন না। এজিদের ভয় ছিল, তাঁর পিতার মৃত্যুর পর হাসান আবার খলিফার আসন দাবি করতে পারেন। তাঁর ষড়যন্ত্রে অবশেষে হাসানকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হল (৬৬৯ খ্রিস্টাব্দ)।

খলিফা মোয়াউইয়ার মৃত্যুকাল আসন্ন।

পুত্র এজিদকে ডেকে তিনি বললেন, ‘বাছা, হুসেন হচ্ছে তোমার প্রধান প্রতিযোগী। কিন্তু সে সরল আর ন্যায়পরায়ণ—বিশেষ, সম্পর্কে তোমার ভাই হয়। অতএব যদি কখনও তাকে হাতের মুঠোর ভিতরে পাও, তার সঙ্গে সদয় ব্যবহার কোরো।’

৬৮০ খ্রিস্টাব্দে এজিদ লাভ করলেন খলিফার উচ্চাসন। তিনি কবিতা রচনা করতে পারতেন বটে, কিন্তু মানুষ হিসাবে খাঁটি মানুষ ছিলেন না। তাঁর বিলাসিতা ছিল যথেষ্ট।

প্রথমেই তাঁর জানবার আগ্রহ হল, হুসেন বিশ্বস্তভাবে তাঁর অধীনতা স্বীকার করবেন কিনা?

হুসেন তখন মদিনা নগরে বাস করছেন। সেখানকার শাসনকর্তা ছিলেন ওয়ালেদ। তিনি এজিদের হুকুম পেয়ে স্থির করলেন, হুসেন যদি নতুন খলিফার অধীনতা স্বীকার না করেন, তাহলে তাঁর মুণ্ডপাত করা হবে।

সৌভাগ্যক্রমে সময় থাকতেই হুসেন জানতে পারলেন এই চক্রান্তের কথা। সপরিবারে তিনি মক্কা শহরে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং প্রকাশ্যে প্রচার করে দিলেন যে, খলিফার আসনের উপরে তাঁরই দাবি সব চেয়ে বেশি, সুতরাং কোনওমতেই তিনি এজিদের অধীনতা স্বীকার করতে পারেন না।

একদিক দিয়ে বড় ভাই হাসানের সঙ্গে তাঁর কোনওই মিল ছিল না। হাসান যুদ্ধবিরোধী, হুসেন বিখ্যাত যোদ্ধা। রণক্ষেত্রে বহুবার পরীক্ষিত হয়েছে তাঁর দুর্দমনীয় বীরত্ব।

কিউফা শহর থেকে এল অত্যন্ত সুখবর। সেখানকার বাসিন্দারা হুসেনকে সাদরে আহ্বান করতে চায়। তারা বলে পাঠালে, খলিফার আসনের ন্যায্য অধিকারী হচ্ছেন হুসেন, সুতরাং তিনি যদি সেখানে গমন করেন, তাহলে বাবিলনের সমস্ত লোক তাঁর জন্যে করবে অস্ত্রধারণ।

খবরটা কতখানি সত্য তা জানবার জন্যে হুসেন তাঁর ভ্রাতৃসম্পর্কীয় মুসলিমকে কিউফায় পাঠিয়ে দিলেন। ইরাকের দুর্গম মরুভূমি পার হয়ে মুসলিম প্রায় একাকী বহুকষ্টে হাজির হলেন গিয়ে কিউফা শহরে। তারপর ক্রমে ক্রমে তাঁর কাছ থেকে যেসব খবর আসতে লাগল তা হচ্ছে এই :

কিউফায় হুসেনের পক্ষপাতীরাই দলে ভারী। প্রথমে, সেখানে তাঁর জন্যে হাসতে হাসতে প্রাণ দিতে পারে এমন সশস্ত্র লোকের সংখ্যা ছিল আঠারো হাজার। তারপর, দিনে দিনে হাজার হাজার লোক এসে যোগ দিচ্ছে তাদের সঙ্গে। অবশ্য সংখ্যায় তারা হয়ে উঠল এক লক্ষ চল্লিশ হাজার! এমন সঙ্গোপনে সমস্ত কাজ করা হচ্ছে যে, শহরের উপরওয়ালারা ঘুণাক্ষরেও কিছু টের পায়নি,—সুতরাং হুসেন অনায়াসেই কিউফায় এসে সগৌরবে উত্তোলন করতে পারেন তাঁর পতাকা।

কিন্তু দামাস্কাস নগরে বসে গুপ্তচরের মুখে সব খবর রাখছিলেন খলিফা এজিদ।

বসোরার শাসনকর্তা আমির ওবিদাল্লা। খলিফার হুকুমে তিনি গেলেন কিউফা শহরে। সমস্ত চক্রান্ত ধরা পড়তে বিলম্ব হল না। ভালো করে তৈরি হবার আগেই বিদ্রোহীদের নিয়ে মুসলিম অস্ত্রধারণ করলেন বটে, কিন্তু ব্যর্থ হল তাঁর চেষ্টা। পরাজিত হয়ে বিদ্রোহীরা পলায়ন করলে, খলিফার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হল মুসলিমের ছিন্নমুণ্ড।

ওদিকে মুসলিমের পত্র পেয়ে হুসেন নিজের কর্তব্য স্থির করে ফেলেছেন। নিঃসন্দিগ্ধ মনে তিনি কিউফায় যাবার আয়োজন করতে লাগলেন, কারণ মক্কা নগরে তখনও সেখানকার শেষ খবর পৌঁছোয়নি।

বন্ধুরা বললেন, ‘সাবধান হুসেন, সাবধান। কিউফার বাসিন্দাদের বিশ্বাসঘাতকতার কথা প্রবাদের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওদের উপরে তুমি খুব বেশি নির্ভর কোরো না।’

হুসেন বললেন, ‘না, আমি বিশ্বাস করি তারা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।’

নিকট আত্মীয় আবদাল্লা ইবন আব্বাস বললেন, ‘নিতান্তই যদি যেতে চাও, পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে যেও না, ওরা মক্কাতেই থাক।’

হুসেন বললেন, ‘ভবিষ্যৎ আছে ভগবানের হাতে। মেয়েরাও আমার সঙ্গে যাবে।’

কয়েকজন পত্নী, পুত্র-কন্যা, ভগ্নী ও ছোট একদল সৈন্য নিয়ে হুসেন কিউফার দিকে যাত্রা করলেন।

মক্কা থেকে বাবিলন, মাঝখানে তার কয়েকশত মাইলব্যাপী রৌদ্রদগ্ধ নির্জন মরুভূমির উপর দিয়ে হা হা করে বয়ে যাচ্ছে তৃষ্ণার্ত ও উত্তপ্ত বাতাস। দৈহিক কষ্ট আমলে না এনে সেই ভয়াবহ সুদীর্ঘ পথ পার হয়ে হুসেন অবশেষে সদলবলে বাবিলনের প্রান্তে এসে উপস্থিত হলেন।

এক হাজার অশ্বারোহী নিয়ে দেখা দিলে একজন সেনানী।

হুসেন শুধোলেন, ‘কে তুমি?’

সেনানী বললে, ‘আমি হার্যো, আমির ওবিদাল্লা আমার প্রভু! তাঁর আদেশে আপনাকে আমার সঙ্গে যেতে হবে কিউফা নগরে!’

হুসেন সগর্বে বললেন, ‘আমি ওবিদাল্লার হুকুম মানতে বাধ্য নই। আমি হচ্ছি আসল খলিফা, এখানে এসেছি কিউফার বাসিন্দাদের আমন্ত্রণে।’

দুই পক্ষে কথা কাটাকাটি হচ্ছে, এমন সময়ে হল আরও চারিজন নতুন অশ্বারোহীর আবির্ভাব। তাদের মধ্যে একজন ছিল হুসেনের পরিচিত, নাম তার থিরমা।

থিরমার মুখে পাওয়া গেল কিউফার সমস্ত দুঃসংবাদ। সেখানে এখন হুসেনের বন্ধু বলতে কেউ নেই!

থিরমা পরামর্শ দিলে, ‘আমার সঙ্গে আপনি নাজাপ্রদেশের আজাপাহাড়ে চলুন। সেখানে দশ হাজার যোদ্ধা নিয়ে আপনি আত্মরক্ষা করতে পারবেন।’

হুসেন বললেন, ‘না।’

সদলবলে তিনি আবার এগিয়ে চললেন এবং সঙ্গে সঙ্গে চলল হার্যোর যোদ্ধারা। তারা বাধাও দিলে না, সঙ্গও ছাড়লে না।

হুসেনের ভাবভঙ্গি এখনও স্বপ্নাচ্ছন্নের মতে। তাঁর মনের মধ্যে রয়েছে ভাবি অমঙ্গলের সূচনা। একদিন দেখলেন, তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল এক অশ্বারূঢ় মূর্তি। সে বললে, ‘মানুষরা পথে চলে রাত্রে। নিয়তিও নিশাচরী। সে আসে মানুষদের সঙ্গে দেখা করতে।’ মূর্তি আবার অদৃশ্য।

হুসেন বললেন, ‘আজ মৃত্যুদূতের দেখা পেলুম।’

ইউফ্রেটিস নদীতীর। আমির ওবিদাল্লার প্রেরিত চার হাজার সৈন্য নিয়ে আমার ইবন স্বাদ এসে হুসেনের পথরোধ করলেন।

হুসেন বললেন, ‘কিউফার বাসিন্দাদের কথায় ভুলে আজ আমার এই বিপদ। এখন আমি আবার মক্কায় ফিরে যেতে চাই।’

আমার এই খবর আমির ওবিদাল্লার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। আমিরের হুকুম এল : ‘সমস্ত সৈন্য নিয়ে ইউফ্রেটিস নদীকে আড়াল করে হুসেনের সামনে দাঁড়িয়ে থাক—যেন সে একফোঁটা জল না পায়। আগে সে খলিফা এজিদের বশ্যতা স্বীকার করুক, তারপর অন্য কথা।’

দিনের পর দিন যায়, জলাভাবে জীবন বিষময়—তৃষ্ণায় সকলের ছাতি ফেটে যাবার মতো হয়। তবু হুসেন অটল। কিছুতেই তিনি খলিফা এজিদের কাছে নতিস্বীকার করবেন না।

ওদিকে বিলম্ব দেখে আমির ওবিদাল্লা অধীর হয়ে উঠলেন। আমারের কাছে প্রেরণ করলেন আবার এক নতুন আদেশপত্র : ‘হুসেন যদি বশ না মানে, তবে তাদের সকলের উপর ঘোড়া চালিয়ে দাও। ঘোড়ার পায়ের তলায় তারা পিষে মরুক।’

পত্রবাহক হল সামার নামে এক যোদ্ধা—প্রকৃতি তার উগ্র, নিষ্ঠুর, ভীষণ। তার উপরেও গুপ্ত আদেশ রইল : ‘আমার ইবন সাদ যদি হুকুম না মানে, তরবারির আঘাতে তার মুণ্ড উড়িয়ে দিয়ে সৈন্যদের ভারগ্রহণ কোরো তুমিই।’

হজরত মহম্মদের নাতি কোনও বিপদে পড়েন, আমারের এমন ইচ্ছা ছিল না। আমিরের আদেশপত্র দেখিয়ে তিনি মিষ্ট কথায় হুসেনকে বোঝাবার জন্যে চেষ্টা করলেন যথেষ্ট।

কিন্তু হুসেন অটল।

আমার বলে গেলেন, ‘কাল সকাল পর্যন্ত ভাববার সময় রইল।’

হুসেন তাঁবুর দরজার কাছে তরবারির উপরে ভর দিয়ে বসে রইলেন স্তব্ধ মূর্তির মতো। তাঁর চক্ষের উপরে আবার ঘনিয়ে এল জাগ্রত স্বপ্নের ছায়া।

খানিকক্ষণ পরে আত্মস্থ হয়ে তিনি বললেন, ‘স্বপ্নে কাকে দেখলুম জান? মাহামহকে।’ তিনি আমাকে বললেন—’শীঘ্রই তুই আমার সঙ্গে স্বর্গবাসী হবি!’

তাঁর ভগ্নী কেঁদে উঠে বললেন, ‘আমাদের মা, বাবা, দাদা হাসান মারা গিয়েছেন, এইবারে আমাদের পালা।’ বলতে বলতে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন।

নিজের বন্ধু ও অনুচরদের ডেকে হুসেন বললেন, ‘শত্রুরা খালি আমার জীবন চায়। আমাকে এখানে রেখে তোমরা চলে যাও, আমার জন্যে তোমরা মরবে কেন?’

তারা একবাক্যে বললে, ‘ভগবান যেন আমাদের এমন দুর্মতি না দেন! তোমার মৃত্যুর পর আমরা বেঁচে থাকব? অসম্ভব!’

হুসেন বললেন, ‘তবে এস, সকলে মিলে মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হই।’

প্রার্থনার ভিতর দিয়ে কেটে গেল তাঁদের জীবনের শেষরাত্রি।

কারবালার মাঠে হল প্রভাতসূর্যোদয়।

বিশেষ কৌশলে তাঁবুগুলোকে সাজিয়ে, তাঁবুর দড়িগুলো এখানে-ওখানে বেঁধে বাধা সৃষ্টি করে, খাত খুঁড়ে হুসেন এমন ভাবে ব্যূহরচনা করেছেন যে, সামনের দিক ছাড়া আর কোনও দিক দিয়ে কেউ তার ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না।

হুসেনের সঙ্গে ছিল মাত্র চল্লিশজন পদাতিক ও বত্রিশজন অশ্বারোহী সৈনিক। শত্রুদের তুলনায় সংখ্যায় তারা তুচ্ছ বটে, কিন্তু তাদের প্রত্যেকেই ধর্মের জন্যে আত্মদান করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। স্নান সেরে পোশাক পরে আতর মেখে যোদ্ধারা হাসিমুখে বলাবলি করতে লাগল, ‘আর একটু পরেই আমরা মেলামেশা করব স্বর্গের হুরিদের সঙ্গে!’

তিরিশজন অশ্বারোহী নিয়ে হার্যো এসে হুসেনকে বললে, ‘প্রথমে আমিই আপনাকে বাধা দিতে বাধ্য হয়েছিলুম বলে এখন আমার অনুতাপ হচ্ছে। ব্যাপারটা এমন হবে আমি জানতুম না। আপনি পয়গম্বরের বংশধর, আপনার জন্যে আমরাও প্রাণ দিতে প্রস্তুত।’

আমারও হুসেনকে আক্রমণ করতে ইতস্তত করছেন দেখে বিভীষণ সামার ধনুকবাণ তুলে প্রথম অস্ত্র নিক্ষেপ করলে হুসেনের ব্যূহের মধ্যে।

আরম্ভ হল শেষদৃশ্য।

আমিরের সেনাদল ব্যূহের ভিতরে প্রবেশ করতে না পেরে দূর থেকেই তির ছুড়তে লাগল। মাঝে মাঝে আরব দেশের চিরাচরিত রীতি অনুসারে দুই পক্ষের দুইজন করে লোক এগিয়ে হাতাহাতি দ্বন্দ্বযুদ্ধে নিযুক্ত হয়, কিন্তু সেরকম যুদ্ধে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরাজিত হতে লাগল আমিরের সৈনিকরাই।

সামার শেষটা হুসেনের তাঁবুর ভিতর বর্শা চালিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বললে, ‘আগুন আনো! আগুন আনো! তাঁবু পুড়িয়ে দাও!’

তাঁবুর ভিতর থেকে উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে নারীরা সভয়ে বাইরে পালিয়ে এল।

হুসেন চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, ‘জাহান্নমে যাও! তোমরা কি আমার পরিবারর্গকেও ধ্বংস করতে চাও?’

সামার আবার পিছিয়ে গেল।

অসংখ্য শত্রুর ধনুক থেকে ছুটে আসছে রাশি রাশি বাণ, এবং দলে দলে ধরাশায়ী হচ্ছে হুসেনের সঙ্গীরা। এ যুদ্ধ নয়, এ হচ্ছে নির্দয় হত্যাকাণ্ড! অবশেষে হুসেন দাঁড়িয়ে রইলেন প্রায় একাকীই। কিন্তু তবু কেউ ভরসা করে তাঁর কাছে গেল না—এমনই তাঁর তরবারির মহিমা।

তাঁর কচি ছেলে আবদাল্লা, বাণবিদ্ধ হয়ে সেও মাটির উপর লুটিয়ে পড়ল। সেই কুসুমসুকুমার আহত দেহের রক্তধারা অঞ্জলি ভরে নিয়ে আকাশের দিকে নিক্ষেপ করে হুসেন বললেন, ‘হে আল্লা! তোমার সাহায্য থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছ বটে, কিন্তু যারা এই নির্দোষ রক্তপাত করলে তাদের তুমি ক্ষমা কোরো না।’

তারপর সামার সদলবলে ঝাঁপিয়ে পড়ল সঙ্গীহীন হুসেনের উপরে। হুসেন মরিয়া হয়ে লড়তে লড়তে অনেক শত্রু বধ করলেন বটে, কিন্তু শেষটা রক্তহীন অবশ দেহে মাটির উপরে পড়ে গেলেন, আর উঠলেন না। তাঁর দেহের উপরে তিরিশ জায়গায় ছিল অস্ত্রাঘাতের চিহ্ন এবং দেহের চৌত্রিশ জায়গায় ছিল থেঁতলে যাওয়ার দাগ। সামার তাঁর মুণ্ড কেটে নিয়ে অশ্বারোহীদের হুকুম দিলে, ‘এই দেহের উপর দিয়ে বার বার ঘোড়া চালিয়ে দাও—যেন এর চিহ্নমাত্র অবশিষ্ট না থাকে।

এই হত্যাকাণ্ডে মারা পড়েন হুসেনের বাহাত্তরজন সঙ্গী। শত্রুপক্ষে নিহত হয়েছিল অষ্টআশিজন এবং আহত হয়েছিল আরও বেশি লোক।

হুসেনের ছিন্নমুণ্ড বহন করে সামার উপস্থিত হল রাজসভায়। ওবিদাল্লা হাতের দণ্ড দিয়ে আঘাত করলেন মুণ্ডের ওষ্ঠাধারের উপরে।

একজন বৃদ্ধ সভাসদ বলে উঠলেন, ‘হা আল্লা! আমি যে স্বচক্ষে দেখেছি, পয়গম্বর তাঁর পবিত্র ওষ্ঠাধার দিয়ে চুম্বন করেছেন ওই ওষ্ঠাধর।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *