এষাস্য পরমা গতি?

এষাস্য পরমা গতি?

সত্যেরে দেখিব আমি জ্যোতির্ময় রূপে;
আমার চরম মোক্ষ, আমি গন্ধ ধূপে
 ভস্ম হব পরি লয়ে সে দীপ্ত তিলক
অগ্নিতে আছেন যিনি, জলে বিশ্বলোক–
 অন্তস্তলে, ওষধিতে, বনস্পতি মাঝে
 মম সত্তাবীণা যেন তারি স্পর্শে বাজে ॥

সে যুগ অতীত হল। তার পর ঋষি
কহিলেন, এ জীবন অন্ধ অমানিশি।
 সত্য বাক্য, সত্য চিন্তা, তথা সত্য কর্ম
ত্রিরত্ন তোমার হোক– সঙ্, বুদ্ধ ধর্ম
 দীপ্যমান সর্বলোকে অন্ধ তমোনাশা
ঈশ্বরের দাস্য ত্যজ, ত্যজ শূন্যে আশা।
 বুদ্ধ-জীন ক্ষত্রিয়ের অমিতাভ ভাষা।
তাপিত শূদ্রের বুকে এনেছিল আশা ॥

অতিক্রমি আরবের দুস্তর মরুরে
 ভারতে শ্যাম-সুধা-পঞ্চনদ ক্রোড়ে
আশ্রয় লভিল যবে নব সত্যদূত
 বক্ষেতে বাহুতে তার এক ধর্ম পূত
একেশ্বর। প্রণমিয়া এ ভূমিরে।
–যে দেশ ত্যজিয়া এল নাহি চাহি ফিরে–
কহিল, “সত্যেরে আমি যে সুন্দর রূপে
লভিয়াছি, তবু শুভ্র পাষাণের স্তূপে
 করিব প্রকাশ আমি। এস সর্বজন,
 জাতিবর্ণ নাহি হেথা। মুক্ত এ প্রাঙ্গণ
 আচণ্ডাল তরে। শুনি সে উদাত্ত বাণী
 শান্ত হল অভিযান, যুদ্ধে হানাহানি ॥

তার পর? তার পর লজ্জা, ঘৃণা, পাপ,
অপমান; প্রকাশিল অন্তহীন শাপ ॥
 যুগক্ষাত্র তেজে তার পাপ-প্রক্ষালন
চেষ্টা হল ব্যর্থ যবে। করিল বরণ
ভেদ-মন্ত্র ছিদ্রান্বেষী, পরম্পরাঘাত,
 হইল বিজয়টিকা– সে অভিসম্পাত ॥

দীর্ঘ রাত্রি অবসানে অরুণ আলোতে
মেলি সুপ্ত আঁখি দেখি চলে মুক্তস্রোতে
 নাগরিক বৃদ্ধ ক্ষুদ্র; জনপদে জাগে
দীন-দুঃখী, পাপী-তাপী। তারি পুরোভাগে
 মোহনের সাথে চলে যে ছিল নির্ভয়
মহাপুরুষের নামে দিতে পরিচয়,
 আজাদি মোতিরমালা চিত্ত কেড়ে লয়
সরোজিনী পঙ্কে ফোটে– জয় জয় জয়!
চক্রনেমি আবর্তন পূর্ণ হল ভেবে
কৃতজ্ঞ হৃদয় নিয়ে প্রণমিনু দেবে।

হায়রে বিদীর্ণ ভাল, হারে অর্বাচীন
চক্রনেমি আবর্তিল; কিন্তু হল লীন
সম্মুখের সুখস্বর্গ। কি অভিসম্পাতে
 ভাগ্যচক্র প্রবেশিল সেই অন্ধরাতে ॥
 ভূতনাথ গিরিশৃঙ্গে উভয়ে প্রয়াণ
নববীজমন্ত্র লাগি। নাহি অসম্মান!
নাহি অসম্মান তাহে। হেথা নাগরিক
দ্বি-ধা হয়ে তর্ক করে দীর্ণে দিগ্বিদিক!
কৌলীন্য বিচারের তাই কী জাত্যাভিমান!
 দম্ভ কিবা?– কে পড়িছে বেশি স্টেটসম্যান।

[আনন্দবাজার পত্রিকা ২৮.৭.১৯৪৫]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *