এলাচের কৌটো

এলাচের কৌটো

সাইকেল রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে খানিকটা এগোবার পরেই রত্নার মনে পড়ল একটা জিনিস নেওয়া হয়নি। সে ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল, এই এই, একটু থাম তো ভাই, একবার ফিরে যেতে হবে।

রিকশাচালক অপ্রসন্নভাবে মুখ ফিরিয়ে তাকাল। এই সময় দুদিক থেকে দুটো ট্রেন আসে, অনেক যাত্রী, তাই রিকশাওয়ালাদের পোয়াবারো। কলকাতার ট্যাক্সি ড্রাইভারদের মতন রুক্ষ হয়ে ওঠে। কী যেন নিজের মনে গজগজ করতে করতে রিকশাটা ফেরাল।

সদর দরজা খুলে যেতে হল দোতলায়। নিজের ঘরের টেবিলের ওপর রাখা আছে কৌটোটা। সেটা তাড়াতাড়ি ব্যাগে ভরে নিয়ে ফিরে যেতেই টান পড়ল আঁচলে। টেবিলের কোনায় যে চলটা উঠে আছে, সেখানে আটকেছে।

আঁচলটা ছাড়াতে গিয়ে শরীরটা কেঁপে উঠল রত্নার। আসল জিনিসটাই তো সে ভুলে গেছে। তার আইডেনটিটি কার্ড। এটা না থাকলে তো সে ঢুকতেই পারত না। আঁচলটা আটকাল বলেই তো মনে পড়ল। এটা যেন অলৌকিক ব্যাপার। ঠিক কেউ যেন তার আঁচল ধরে টেনে মনে করিয়ে দিল। ঠিক যেন ব্যাখ্যা করা যায় না।

রিকশাচালক বলল, অনেক টাইম লেগে গেল, দিদি। এক টাকা বেশি লাগবে।

তর্ক করতে ইচ্ছে করল না রত্নার। দেবে সে এক টাকা, কিন্তু কথা খরচ করবে না।

এই সময়টাতেই মফসসল শহর সবচেয়ে বেশি জেগে ওঠে। ট্রেন আসে, দোকানপাট খোলে। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা বেরোয়। হাসপাতালেও ভিড় হয়। এই হাসপাতালের সামনেই আটকা পড়তে হয় ট্রাফিক জ্যামে। সামনে আবার একটা ময়লার গাড়ি। রত্না কয়েক দানা এলাচ মুখে দিল।

জেলখানার গেটে পৌঁছতে বেজে গেল সাড়ে দশটা। অবশ্য স্কুলে যাওয়ার মতন সময়ের অত কড়াকড়ি নেই। এক মাস ধরে স্কুলে যেতে হচ্ছে না রত্নাকে, তার ডিউটি পড়েছে জেলে! ন-বছর ধরে স্কুলে একই জিনিস পড়াতে পড়াতে একঘেয়েমি এসে গিয়েছিল, সেই তুলনায় এখানকার কাজ তার ভালোই লাগছে। অন্য রকম অভিজ্ঞতা।

গেটের কাছে এসে কার্ডটা বার করল রত্না। তাতে তার ছবি লাগানো আছে। প্রথম দিন তাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন সুতপাদি, তিনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, কার্ডটা সাবধানে রাখিস। দেখিস, ভিতরে যেন কেউ জোর করে কেড়ে না নেয়। তাহলে কিন্তু তুই আর বেরুতেই পারবি না। এই গেটে আটকে দেবে।

কেউ অবশ্য কেড়ে নেবার চেষ্টা করেনি এর মধ্যে। তবে, দু-তিন জনের চোখের দৃষ্টি দেখলে ভয় ভয় করে।

জেলখানা। প্রথম দিন ঢুকে সত্যিই অবাক হয়েছিল রত্না। জেলখানার ভিতরটা কেমন হয় তার স্পষ্ট ধারণা ছিল না, গল্প-উপন্যাস পড়ে মনে হত, অন্ধকার-অন্ধকার ঘর, লোভী আর হিংস্র চেহারার পাহারাদার, লোহার দরজা, ডাণ্ডাবেড়ি, আর মানুষ হয়েও অনেকের অমানবিক ব্যবহার। আগেকার দিনের রাজবন্দিদের লেখা কয়েকটা বই পড়েছে রত্না, অল্প বয়সে, ভালো মনে নেই। বেশি মনে আছে, সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘জাগরী’ আর জয়া মিত্রের ‘হন্যমান’। জাগরীতে একটা অধ্যায়ের নাম ‘আওরৎ কিতা . মা’, আর জয়া মিত্রের বইতেও জেলের মধ্যে মেয়েদের কথাই প্রধান। সতীনাথ ভাদুড়ীর একটা গ্রন্থাবলি আছে বাড়িতে, এখানে আসবার পর রত্না একবার ভেবেছিল ‘জাগরী’টা আর একবার পড়ে ঝালিয়ে নেবে। ওরে বাবা, কী সাংঘাতিক বই, খানিকটা পড়তে পড়তেই চোখের জলে পাতাগুলো ঝাপসা হয়ে আসে। বিলুর ফাঁসি হবে, সেই রাতে তার মা-ও জেলে, তিনি নানাভাবে মনটাকে ফেরাবার চেষ্টা করছেন, এক জায়গায় বলছেন, ‘ছেলে তো নয়, একটা শত্রু। ছেলেদের কথা যত ভেবেছি, তার অর্ধেকও যদি ভগবানের কথা ভাবতাম, তাহলে নিশ্চয়ই ভগবানকে পাওয়া যেত!’ এই জায়গাটা পড়তে পড়তে রত্না ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিল।

প্রথম দিন এসে জেলখানা সম্পর্কে তার পুরনো ধারণা কিছুই মিলল না। এ যেন একটা বাগানবাড়ি। সত্যিই বেশ বড়ো বাগান, কত ফুল ফুটে আছে, বড়ো বড়ো গাছও কয়েকটা, মাঝখানের বাড়িটার রং সাদা। শুধু চারদিকটা উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।

অবশ্য আজকাল আর জেলখানা বলে না, নতুন নাম হয়েছে সংশোধনাগার, আর এটা শুধু মেয়েদের জন্য। এখানে একজনও পুরুষ নেই।

বাগানের মধ্যে একটা খড়ের চালাঘর। তার ভিতরে তিনখানা সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চ, একটা প্লাস্টিকের চেয়ারও আছে। আজ অবশ্য শীত পড়েছে একটু একটু, রোদ বেশ মোলায়েম, বাইরেও বসা যায়।

নানা বয়সের নারী, তবে আঠারোর নীচে কেউ নয়, ওপরের সীমা পঁয়তাল্লিশ-পঞ্চাশ। কেউ উৎকট গম্ভীর, কেউ বেশি কথা বলে, কেউ ঝগড়া ছাড়া থাকতে পারে না। অনেকেরই শরীরে রূপ নেই, স্বাস্থ্যও ভালো নয়।

রত্না ধীর পায়ে বাগানের মধ্য দিয়ে হেঁটে এসে চালাটার মধ্যে চেয়ারে বসল। সে নিজে থেকে কারুকেই ডাকে না। মিনিট পাঁচেক সে বসে রইল চুপ করে। তারপর দুটি তরুণী দৌড়তে দৌড়তে এসে দাঁড়াল, হাত পাতল তার সামনে।

রত্না কৌটো খুলে কয়েকটা করে এলাচদানা দিল ওদের হাতে।

টপ করে তা মুখে পুরেই ওদের একজন জিজ্ঞেস করল, দিদি, আপনি পান খান না?

এই প্রশ্নটা তাকে এখানকার অনেকেই করে। প্রথম দিন থেকে। অর্থাৎ ওদের পান খাবার নেশা। রত্নার পান খাওয়ার অভ্যেস থাকলে নিশ্চয়ই সে পানের ডিবে রাখত, ওরা চেয়ে নিত। কিন্তু রত্না কখনও পান খায়নি, এমনকি বিয়েবাড়িতেও সে পান নেয় না। পানের পিক ফেলার দৃশ্যটা তার অশ্লীল মনে হয়।

অনেকদিন থেকেই এলাচদানা খায় রত্না। আগে তার কাছে একটা ছোট্ট রুপোর কৌটো থাকত, এখন এখানকার অনেককে দিতে হয় বলে, সে একটা বড়ো টিনের কৌটো রাখে। এলাচের দামও বেশ!

রত্না লক্ষ করেছে, এরা অনেকেই বাইরে থেকে কিছু কিছু জিনিস আনায়। কী উপায়ে, তা সে জানে না। কেউ কেউ শুধু দোক্তা খায়, কয়েকজনকে সে বিড়ি টানতেও দেখেছে। এক মাঝবয়েসি, স্থূলাঙ্গিনী একদিন তাকে ফিসফিস করে বলেছিল, দিদি, আমার জন্য ইসবগুলের ভুসি এনে দেবে? আমি তোমায় পয়সা দেব। রত্না রাজি হয়নি। যত তুচ্ছ জিনিসই হোক, বাইরে থেকে এদের জন্য কিছু এনে দেবার নিষেধ আছে। এখানকার সুপার সুতপাদি বলেছিলেন, তুই এরা কে, কোন কারণে জেল খাটছে, তা কখনও জিজ্ঞেস করবি না। এদের জীবনকাহিনি জানতে চাইবি না। তাহলে এক একজন সম্পর্কে মনের মধ্যে একটা ধারণা গেঁথে যাবে। বরং খোলা মন নিয়ে সবাইকে সমান মনে করাই উচিত।

রত্না কখনও কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। তবু কী করে যেন জেনে গেছে, এখানে অন্তত তিনজন খুনের আসামি। নিজের হাতে খুন করেছে, যাবজ্জীবন বন্দিনী। তাদের মধ্যে একজন রত্নার ছাত্রী।

জেল কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছিলেন, এখানকার মেয়েদের নানা রকম হাতের কাজ শেখাবার সঙ্গে সঙ্গে লেখাপড়া শেখাবারও চেষ্টা হবে। যাতে কারাবাস থেকে মুক্ত হবার পর, তারা সুস্থ জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু লেখাপড়া তো জোর করে শেখানো যায় না। বেশিরভাগই সমাজের গরিব, নীচু শ্রেণির নারী। জীবনে বই কখনও ছুঁয়ে দেখেনি। বেশি বয়সে তারা একেবারে প্রথম থেকে শেখার আগ্রহ পায় না।

তবু নিয়মমাফিক দু-জন শিক্ষয়িত্রী আসে। তারা কয়েকজনকে এ-বি-সি-ডি, অ-আ-ক-খ শেখাতে চেষ্টা করে। রত্না অবশ্য বলে দিয়েছিল, সে অত প্রাথমিক স্তরে পড়াতে রাজি নয়। রত্নার ডাক পড়েছিল অন্য কারণে।

সুতপাদি একদিন জানতে পেরেছিলেন, খুনের আসামি বাসন্তী নামে একটি মেয়ে ঝগড়ার সময় ইংরেজিতে গালাগালি দেয়। সোয়াইন, ব্লাডি, বাস্টার্ড, বিচ, এইসব গালাগাল তার মুখ দিয়ে অনর্গল বেরিয়ে আসে। তার কেস হিস্ট্রিতে দেখা গেছে, সে একটি ধনী পরিবারে আয়ার কাজ করত। সেই বাড়িতে তাদের মুখ থেকে শুনে শুনে সে ওইসব গালাগাল মুখস্থ করেছে। সুতপাদি তার সঙ্গে কথা বলে বুঝলেন, সে ইংরেজি-বাংলা পড়তেও পারে, আলেকজান্ডার এবং সম্রাট অশোকের নাম জানে, অর্থাৎ প্রায় ক্লাস এইট-নাইনের বিদ্যে। সুতপাদি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুই আরও পড়তে চাস? সে ঘাড় নেড়েছিল। বছর খানেক পড়ালে এ মেয়ে মাধ্যমিকও পাস করতে পারে। তেমন যদি হয়, তাহলে এই সংশোধনাগারেও বেশ নাম হবে, ছবি উঠবে কাগজে। তাই সরকারি স্কুলে আবেদন করে রত্না হালদারকে তিনি আনিয়েছেন এখানে।

বাসন্তীকে পড়াতে গিয়ে রত্না দেখেছে, এ-মেয়েটির মেধা আছে, যা পড়ে, তা বেশ মনে রাখতে পারে। চবিবশ-পঁচিশ বছর বয়স, মুখখানা সুন্দর নয়, কিন্তু শরীর বেশ আঁট, বুকের গড়ন যেন বেশি বেশি। মাঝে মাঝে সে বেশ সরলভাবে হেসেও ওঠে। এ মেয়ে কেন দু-দুটো খুন করেছে, তা জানার জন্য রত্নার মনটা আকুলি-বিকুলি করলেও প্রশ্ন করার উপায় নেই। নিজে থেকে যদি সে কখনও কিছু বলে।

বাসন্তী বইখাতা নিয়ে এসে বসল তার সামনে।

ওকে পড়াতে পড়াতে রত্নার মনে হয়, পরীক্ষায় পাস করলেও সে বিদ্যে নিয়ে ও কী করবে? ও কি কোনোদিন ছাড়া পাবে? যাবজ্জীবন মানে চোদ্দো বছর, এই কেসে অনেকের ধারণা, গুড কনডাক্টের রিপোর্ট থাকলে বারো বছর পরেই খালাস হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সে ব্যবস্থা তো আর নেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে, যাবজ্জীবন মানে সারা জীবনই পচতে হবে জেলে। অন্তত কুড়ি-বাইশ বছরের আগে রিভিউয়ের প্রশ্ন নেই। সংশোধনাগার নাম হোক আর যাই-হোক, আসলে তো কারাগার।

আর একটি মেয়ে, সে রত্নার কাছে পড়তে আসে না, কিন্তু এই সময়টায় সে একটা খুঁটিতে ঠেস দিয়ে বসে থাকে। সে কোনো কথা বলে না, কোনো প্রশ্ন করলেও উত্তর দেয় না। বৃষ্টির সময় বাসন্তী তাকে বলেছিল, এই মেদ্দা বসে বসে ভিজছিস কেন, ভেতরে উঠে যা!

তা শুনেও মেয়েটি উঠে আসেনি, একই জায়গায় বসে বসে ভিজেছে।

রত্না জিজ্ঞেস করেছিল, ওর নাম কী বলল, মেদ্দা? এ আবার কী রকম নাম? মানে কী?

ঠোঁট উলটে বাসন্তী বলেছিল, কী জানি! সবাই তো ওই নামেই ডাকে। ও আমারও আগে থেকে আছে।

নাম শুনে বোঝাও যায় না বাঙালি কিনা। কথাও বলে না। তবু ও একদিন চমকে দিয়েছিল!

সেদিন বাসন্তী ছাড়াও অন্য চারটি মেয়ে ছিল এখানে। এরকম মাঝে মাঝে অন্যরাও আসে। পড়াশুনোর জন্য নয়, রত্নার কথা শোনে বড়ো বড়ো চোখ মেলে। সেইসব দিনে রত্না বই খুলে পড়ায় না, নানা রকম গল্প করে।

একটি মেয়ের নাম সবিতা। তাকে রত্না জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি তোমার নামের মানে জানো?

সবিতা দুদিকে মাথা নাড়ে কৌতূহল ও বিস্ময় মিশিয়ে। যেন এই প্রশ্নটা আগে কেউ তাকে জিজ্ঞেস করেনি। রত্নাও কম অবাক হয় না। নিজের একটা নাম, সারা জীবন বয়ে বেড়াবে, অথচ তার মানে জানবে না?

সে জিজ্ঞেস করে অন্য মেয়েদের নাম। লতা, রুবাত আর প্রমদা। এর মধ্যে একমাত্র লতাই তার নামের অর্থ বোঝে, লতাপাতা। সে অবশ্য হেসে বলল, রাত্তিরবেলা সাপকেও লতা বলে, সেই ভেবেই বোধহয় বাপ-মা তার ওই নাম দিয়েছিল।

রুবাত শুনে রত্নার খটকা লেগেছিল। এ আবার কী ধরনের নাম। মেয়েটির নাকে একটা নাকছাবি, মুখে এমন একটা ভাব আছে, যাতে মুসলমান বলে মনে হয়। কী ভাবের জন্য এমন মনে হয়, তা বলা শক্ত। তার নাম আরও কয়েকবার জিজ্ঞেস করে রত্না বুঝল, তার অনুমানই ঠিক। মেয়েটির নাম রুবাইয়াত। ঠিক উচ্চারণ করতেও পারে না।

সে বলেছিল, তোমার নামের মানেটা খুব সুন্দর। রুবাই হচ্ছে চার লাইনের এক ধরনের কবিতা। কবিতা জানো তো—পদ্য কিংবা ছড়ার মতন। তার থেকে রুবাইয়াত। ওমর খৈয়াম নামে একজন বড়ো কবি রুবাইয়াত লিখেছেন, সে গল্প অন্য একদিন বলব। আর প্রমদা হচ্ছে সুন্দরী মেয়ে। হ্যাঁ, প্রমদা, তুমিও তো সুন্দর। আর সবিতা, তুমি হচ্ছ আকাশের সূর্য। সূর্যের অনেক নাম আছে। যেমন, আদিত্য, অরুণ, ভাস্কর, রবি—এ সবই কিন্তু ছেলেদের নাম হয়। রবি নামটা নিশ্চয়ই শুনেছ, অনেকেরই নাম রবি হয়। বাসন্তী, তুমি তো রবি বানান জানো। র আর ব-এ হ্রস্বই। কিন্তু যদি রবীন্দ্র হয়, তাহলে কিন্তু ব-এ দীর্ঘই হয়ে যাবে। বদলে যাবে।

সবিতা জিজ্ঞেস করল, কেন বদলে যাবে?

এ প্রশ্ন শুনে খুশি হয়ে রত্না বলল, এই যে তুমি কেন জিজ্ঞেস করলে, তার মানে তোমার পড়াশুনো করার ইচ্ছে আছে। ওটা ব্যাকরণের ব্যাপার, পরে একদিন বোঝাব। তোমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম শুনেছ?

হায়, আমাদের এই বিশ্বকবির নাম গ্রাম-বাংলার অনেক নারীই জানে না। অনেক পুরুষও বোধহয় তাই। এদের মধ্যে একমাত্র বাসন্তী জানে।

রত্না জিজ্ঞেস করেছিল, বাসন্তী, তুমি রবীন্দ্রনাথের কোনো কবিতা বা গান মুখস্থ বলতে পার?

বাসন্তী দু’দিকে মাথা নাড়ল।

রত্না বলল, তাঁর কত গান তো শোনা যায়, রেডিয়োতে, পুজো প্যান্ডেলে, সিনেমায়। তার একটাও মনে নেই?

বাসন্তী বলল, কী জানি।

রত্নার মনে হল, শুনেছে নিশ্চয়ই। কিন্তু কোনটা রবীন্দ্রসঙ্গীত তা সে জানে না।

এই সময় সেই কাণ্ডটা হল, রত্না সচকিতে মুখ ফেরাল।

খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে থাকা মিদ্দা একটাও কথা না বললেও, সে নিশ্চয়ই এদের সব কথা কান খাড়া করে শোনে। সে এখন গুনগুন করে গাইছে, অশ্রু নদীর সুদূর পারে, ঘাট দেখা দেয়, তোমার দ্বারে…

সুর নির্ভুল তো বটেই, উচ্চারণেও স্পষ্ট। শিক্ষার ছাপ আছে।

একটুখানি মুগ্ধভাবে শুনে রত্না উচ্ছ্বসিতভাবে বলে উঠল, তুমি এত ভালো গান জানো? কোথায় শিখেছ?

সঙ্গে সঙ্গে মিদ্দা থেমে গেল তো বটেই, উঠে গেল সেখান থেকে।

ওই একদিনই, আর কখনও সে কথা বলেনি, গানও গায়নি। রত্না তার সঙ্গে ভাব জমাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।

যার সম্পর্কে কিছু জানা যায় না, তার সম্পর্কেই কৌতূহল থাকে বেশি। যে এমন পরিশীলিত গলায় গান গাইতে পারে, তাও রবীন্দ্রসংগীত, সে কেন নির্বাক? আর মিদ্দার মতন একটা বিচ্ছিরি নামই বা তার হবে কেন?

বাসন্তীকে পড়াতে হলেও তাকে ঠিক পছন্দ করতে পারে না রত্না। প্রথম প্রথম তাকে সরল, সাধারণ মনে হলেও, ক্রমশ বোঝা যায়, সে বেশ লোভী। রত্না নতুন শাড়ি পরে এলেই সে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে দেখে। চোখেমুখে ফুটে ওঠে ভিক্ষের ভাব। ইচ্ছে করলে রত্না ওকে একটা শাড়ি তো দিতেই পারে, কিন্তু কিছু দেওয়া যে নিষেধ। ওরা কেউ শাড়ি পরে না, একটা ঝোলা সেমিজের মতন পোশাক সবার। শাড়ি থাকলে গলায় ফাঁস বেঁধে কেউ যদি আত্মহত্যা করে?

একদিন রত্না এক জোড়া দুল কানে দিয়ে এসেছিল। বাসন্তী হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে কানে হাত দিয়ে দুলটা দেখতে লাগল। শিউরে উঠেছিল রত্না, এটা একটা খুনির হাত তো বটে।

একদিন বাসন্তী নিজের থেকেই বলল যে, এখান থেকে ছাড়া পেলে সে আর লোকের বাড়িতে কাজ করবে না। কোনো স্কুলে চাকরি নেবে।

শুনে খুবই অস্বস্তি বোধ করেছিল রত্না। খুনি হিসেবে যার শাস্তি হয়েছে, তাকে কি কোনো স্কুল চাকরি দেবে? মনে হয় না। তা ছাড়া ওর মেয়াদ শুরু হয়েছে মাত্র তিন বছর আগে। যদি কখনও ছাড়াও পায়, তাও পনেরো-কুড়ি বছরের আগে নয়। তখন ওর বয়েস কত হবে?

এসব কথা বলে ওকে নিরাশ করতে চায়নি রত্না।

যারা পড়াশুনো করতে চায় না, তারাও রত্নার কাছে এসে এলাচদানা চায়। সবাইকে নিয়মিত খাওয়াতে গেলে সে দুদিনেই ফতুর হয়ে যাবে। সেই জন্য সে একটা শর্ত আরোপ করার কথা ভেবেছিল একবার। যে-যে পড়তে চাইবে, শুধু তাদেরই দেবে। তারপরই মনে হয়েছিল, জোর করে পড়িয়েই বা কী হবে? পড়াশুনো না করলেই বা কী আসে যায়! সামান্য কয়েকটা এলাচদানা, প্রত্যাখ্যান করা যায় না। তাই এখন, যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ দেয়, ফুরিয়ে গেলে কৌটোটা উলটে দেখায়। সে এখন ছোটোএলাচের বদলে বড়োএলাচ কেনে, একটু সস্তা হয়।

মিদ্দা নামের মেয়েটি কোনোদিন এলাচ চায়নি। রত্না তাকে নিজে থেকে একদিন দিতে গিয়েছিল, সে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

ফেরার জন্য রত্না উঠে দাঁড়ায়। বাগানের চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে মেয়েরা। সারা দুপুর তারা এখানেই থাকে। কয়েকজন দল বেঁধে কীসব খেলে, কয়েকজন নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি করে। দুজন মহিলা ওয়ার্ডেন হেঁটে লাঠি হাতে পাহারা দেয়, কোথাও যদি কথা কাটাকাটি এক সময় হাতাহাতিতে গড়িয়ে যায়, তখন ওয়ার্ডেনরা এসে তাদের মারে। বেশ নিষ্ঠুরের মতনই জোরে জোরে পেটায়।

রত্নার মনে হয়, এই যে এতজন মেয়ে, এদের দেখলে বোঝাই যায় না, এরা সবাই জেল খাটার মতন অপরাধ করেছে। বাইরের সাধারণ মেয়েদেরই মতন তো। অবশ্য বাইরের সেইসব সাধারণ মেয়েদের মধ্যেও কি অপরাধী নেই? সবাই ধরা পড়ে না। রত্না নিজেও তো এখানে থাকতে পারত!

সব এলাচদানা ফুরিয়ে যাবার পরেও যে মেয়েটি এসে চাইল, রত্না বলল, কাল এসে প্রথম তোমাকেই দেব।

মেয়েটি হঠাৎ চোখ ছলছলিয়ে বলল, দিদি, আমি কিন্তু মুনশিবাড়ির গয়না চুরি করিনি। চুরি করল পারুল, আর ধরল আমাকে। আমাকে মিথ্যেমিথ্যি আটকে রেখেছে। আপনি একটু বলে দিন না। বাড়িতে আমার দুটো ছেলে…

রত্না দুর্বলভাবে বলল, আমি বললে শুনবে কেন?

মেয়েটি বলল, হ্যাঁ দিদি, আপনারা লেখাপড়া জানেন, আপনার কথা শুনবে।

এই মেয়েটির বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই নেই। হয়তো ওর কোনো উকিলও ছিল না।

তার হাত ছাড়িয়ে চলে আসতে আসতে রত্না ভাবে, মেয়েটি কি সত্যি কথা বলছে, না অভিনয়? বিনা দোষেও অনেকে নিশ্চয়ই জেল খাটে। মুখ দেখলেই বোঝা যায়, এখানকার অধিকাংশ মেয়েই গরিব ঘরের। গরিবরাই আইনের সুবিচার থেকে বঞ্চিত হয় অনেক সময়। যাদের পয়সা আছে, তারা আইনের লম্বা হাত দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারে পয়সার জোরে।

সুতপাদির সঙ্গে দেখা হল এক বিয়েবাড়িতে। তাঁর সঙ্গে অনেক আগে থেকেই পরিচয় ছিল রত্নার। তাপসের সঙ্গে যখন ছাড়াছাড়ি হয়, তখন সাংঘাতিক মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে এই সুতপাদিই অনেকখানি শুশ্রূষা করেছেন তার মনের। তাপস ওঁর পিসতুতো ভাই, তবু তিনি বলেছিলেন, তুই ওকে বিয়ে করতে রাজি হবার আগে আমাকে জানাসনি। ও তো একটা স্কাউন্ডে˜ল। চেহারাটা চকচকে, বাইরে থেকে কিছু বোঝা যায় না। ও তো ওর মায়ের গায়েও হাত তোলে, তোকে মারধর করবে, এ আর আশ্চর্য কী!

বিয়েবাড়িতে সুতপাদির সঙ্গেই তার বেশি গল্প হয়। কেমন সে পড়াচ্ছে, বাসন্তী পাস করতে পারবে কিনা, জেলের মেয়েদের সম্পর্কে তার ধারণা কী, এইসব প্রশ্ন করেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। নিছক চাকরি নয়, নিজের কাজটা ভালোবাসেন সুতপাদি।

এক সময় রত্না জিজ্ঞেস করে ফেলল, ওই মিদ্দা নামের মেয়েটাকে একেবারে বুঝতে পারি না। কথা বলে না কারও সঙ্গে। অথচ ভালো গান গায়। ওর আসল নামটা কী?

সুতপাদি হেসে বললেন, যে-কোনো কথা বলে না, সে তো রহস্যময়ী হবেই। খুব একটা রহস্য নেই। সাধারণ ঘটনা। রাগের মাথায় একজনকে খুন করে ফেলেছে। একটা ব্যাপার তো আমি দেখছি, এই যে এতগুলো মেয়ে প্রিজনার, এদের প্রায় প্রত্যেকেরই ক্রাইমের সঙ্গে কোনো না কোনো পুরুষ জড়িত। পুরুষরাই তাদের অপরাধের পথে ঠেলে দেয়। যেমন ধরো, নারী পাচারের কেস আছে কয়েকটা, মেয়েরাই বোকাসোকা মেয়েদের ফুসলিয়ে এনে দেহ ব্যবসায় চালান দেয়। কেউ কেউ ধরা পড়ে, শাস্তি হয়। মেয়েরা দোষী, কিন্তু ফ্লেশ ট্রেড তো চালাচ্ছে পুরুষরা। আসল ক্রিমিনাল তো তারাই। তারা ধরা পড়ে না।

রত্না চমকে গিয়ে বলল, এই মিদ্দাও সেই রকম কোনো কেসে ধরা পড়েছে নাকি?

সুতপা বলল, না। বললাম না, ওর খুনের কেস। ওর নাম মাধবী। কেন ওকে অন্যরা মিদ্দা না মেদ্দা বলে তা আমি জানি না। ও ছিল তোরই মতন স্কুল টিচার। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। অনেক ক্ষেত্রেই যা হয়, একজনের প্রেমে পড়ল, সে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার মধ্যে রেগুলার সেক্স রিলেশানও হল। এর মধ্যে একটা মন্দিরের সামনে গিয়ে বিয়ের ভানও করেছিল। তারপর মাধবী প্রেগন্যান্ট হতেই সে হারামজাদা নিজের মূর্তি ধরল। অ্যাবোরশান না করালে সে মাধবীকে ঘরে নিতে পারবে না। বিয়েই যদি হয়, তাহলে অ্যাবোরশানের প্রশ্ন উঠবে কেন? এই নিয়ে গালমন্দ, মারধর। মাধবী তখন গেল তার শাশুড়ির কাছে, সুবিচার চাইতে। সেই দিনই ঘটল ঘটনাটা। সেই মহিলা শুধু যে পুত্রস্নেহে অন্ধ তাই-ই নয়, তিনি এই সম্পর্কের কথা কিছুই জানতেন না। অন্য মেয়ের সঙ্গে তাঁর ছেলের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন। তিনি কুকুর-বেড়ালের মতন দূর দূর করে তাড়াতে চাইলেন মাধবীকে। খুব খারাপ ভাষায় গালাগালি দিতে দিতে ওকে বলেছিলেন, বাজারের বেশ্যা। সেটাই সহ্য করতে পারেনি মাধবী। ওর সেই স্বামীটা, তোর তাপসের মতনই হারামজাদা, তখন বাড়িতেই লুকিয়েছিল। গালাগাল শুনে মাধবী ওর শাশুড়িকে এসে একটা ধাক্কা দেয় খুব জোরে। মহিলাটি ধড়াস করে পড়ে গেলেন, সঙ্গে সঙ্গে অক্কা। ডেড। কোনো চিকিৎসাও করা যায়নি।

রত্না বলল, এটা কি মার্ডার? খুনের কোনো ইনটেনশান ছিল না।

সুতপাদি বললেন, ম্যান শ্লটার বলা যায়। কিন্তু ওদের পক্ষের উকিল ভয়ংকরভাবে কেসটা সাজিয়েছিল, একটা হাতুড়ি, মার্ডার ওয়েপন হিসেবে দেখিয়েছিল, জাজ লাইফ ইমপ্রিজনমেন্ট দিয়ে দিলেন। অবশ্য একটা আপিলের মামলা এখনও ঝুলে আছে। এর মধ্যে ওর পেটের বাচ্চাটাও নষ্ট হয়ে গেছে। এখানেও তুই দ্যাখ, সব নষ্টের মূলে ওই হারামজাদাটা, কিন্তু তার কোনো শাস্তি হল না। আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেল।

সুতপাদি মাধবীর পাষণ্ড স্বামীটার সঙ্গে তাপসের তুলনা করায় রত্না কেঁপে উঠেছিল। হ্যাঁ, তুলনা করা যায় তো বটেই। কিন্তু রত্নার মনে পড়েছিল অন্য কথা। তাপস যেদিন তাকে প্রথম লাথি মারে, সেদিন অপমানে, দুঃখে সে শুধু কেঁদেছিল। মাঝে মাঝেই এরকম চলার পর, তাপস আরও নৃশংস হয়ে উঠল, একদিন তার উরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছিল। সেদিন কি রত্না ভাবেনি সে তাপসকে খুন করবে? পর পর কয়েকদিন সে প্রতিশোধ নেবার জন্য খুনের পরিকল্পনা করেছিল। বিষ খাওয়াবে না ঘুমের মধ্যে ওর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেবে। কাগজে সেই সময় একটা খবর বেরিয়েছিল, বিদেশে একটি মেয়ে তার স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তার পুরুষাঙ্গটা কেটে নিয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত রত্না কিছুই পারেনি। তার সাহসে কুলোয়নি। এক বস্ত্রে পালিয়ে এসেছিল। খুনের ইচ্ছেটাও কি অপরাধ নয়? সত্যি সত্যি খুন করলে রত্নারও স্থান হত ওই জেলে। তার উরুতে এখনও সেই পোড়া দাগটা আছে।

দিন দুয়েক পর জেলের বাগানে গিয়ে রত্না একটা অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখল। সেই চালাঘরটার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গান গাইছে মেদ্দা অর্থাৎ মাধবী, তাকে ঘিরে আছে কুড়ি-পঁচিশটি মেয়ে। কয়েকজন তাল দিচ্ছে গানের সঙ্গে।

মাধবী গাইছে, ‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে, তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ…।’

রত্না কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই অনেকে মিলে কলস্বরে জানাল, মেদ্দা খালাস হয়ে গেছে।

আপিলে বেকসুর মুক্তি পেয়েছে মাধবী। হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গেছে অভিযোগ। হাতুড়িটিতে শুকনো রক্তের দাগ মানুষের নয়, মুর্গির। ওর শাশুড়ির গুরুতর হৃদরোগ ছিল। আগে দুবার অ্যাটাক হয়ে গেছে। মাধবী যে তাকে ধাক্কা দিয়েছে কিংবা কতটা জোরে, তার কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই, ঠিক সেই সময় অন্য কেউ সেখানে উপস্থিত ছিল না। বাড়ির দাসীটি স্বীকার করেছে, সে ছিল কলতলায়, শব্দ শুনে ছুটে আসে। অত্যধিক উত্তেজনায় ওরকম রোগীর হঠাৎ হার্ট ফেলিওর হতে পারে।

রত্না ভেবেছিল, মাধবীর যে মুহ্যমান অবস্থা এবং কারও সঙ্গে কথা না বলা, তা বোধহয় গভীর অনুতাপের জন্য। মধ্যবিত্ত ঘরের শিক্ষিত মেয়ে, খুন-টুনের মতন ব্যাপারে নাম জড়িত হওয়াটা তো চরম অপমানই। কিন্তু তা তো নয়। মুক্তির খবর শুনেই সে এত খুশি। গান শেষ করে সে এক একজন মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানাচ্ছে। এতদিন সে কথা বলত না, তবু সে সকলেরই নাম জানে, নাম ধরে ডাকছে।

একবার সে রত্নার দিকে ফিরতেই রত্না বলল, আমিও খুব খুশি হয়েছি।

রত্না এলাচের কৌটোটা খুলে বাড়িয়ে দিল তার দিকে।

বেশ কয়েকটা এলাচদানা তুলে নিয়ে মুখে দিল মাধবী। একটু চিবিয়ে নিয়ে বলল, বাঃ, কী সুন্দর স্বাদ হয়ে গেল মুখে। আগে খাইনি কেন?

রত্না বলল, আমি তো আগেও তোমায় দিতে চেয়েছিলাম। তুমি নাওনি।

আরও দুবার বাঃ বাঃ করে মাধবী বলল, ঠিক আছে। ফিরে এসে আবার খাব। আমি তো শিগগিরই ফিরে আসছি এখানে।

রত্না চকিতভাবে বলল, কেন, ফিরে আসবে…কেন? তোমার তো পুরোপুরি…ওরা কি সুপ্রিম কোর্টে যাবে?

রত্নার দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে মাধবী শান্ত গলায় বলল, না, সেজন্য না। বাইরে বেরিয়ে তো আমাকে আর একটা খুন করতে হবে। যে আমার নামে এই অপবাদ দিয়েছে, আমার পেটের সন্তান নষ্ট করেছে, তাকে শাস্তি দিতে না পারলে আমার বেঁচে থাকার মূল্য কী?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *