এমন হয় না – বিমল মিত্র

এমন হয় না – বিমল মিত্র

ভদ্রলোক বললেন, আপনি পুলিশে চাকরি করেন?

পুলিশের চাকরি শুনেই ভদ্রলোক যেন মুখ বাঁকালেন। মনে হল, পুলিশকে ভদ্রলোক তেমন সুনজরে দেখেন না।

আমি অবশ্য তখন পুলিশের চাকরিই করি। সে আজ থেকে কয়েক বছর আগেকার কথা। পুলিশের চাকরি হলেও সাধারণ পুলিশ নয়। সাদাসিধে পোশাকে ট্রেনে বাসে ট্রামে ঘুরে বেড়াই। কে কোথায় ঘুষ নিচ্ছে তারই খবর রাখি। তারপর একদিন যথারীতি এস—পিকে গিয়ে রিপোর্ট করি, এসব কথা এ গল্পে অবান্তর।

তবু এই প্রসঙ্গেই এ—গল্পটার কথা উঠলো।

ভদ্রলোক বললেন, আমি মশাই খুনি আসামি হয়ে একবার পুলিশের খপ্পরে পড়েছিলাম, সাধে কি আর পুলিশের নামে ভয় পাই?

—কি রকম?

ভদ্রলোক বললেন, সে এক ভীষণ ব্যাপার মশাই। সেই থেকে আমি কোর্ট আর পুলিশের ওপর হাড়ে হাড়ে চটে গেছি—

ট্রেনে এক কামরায় চলেছি। পাশের দিকে অন্য প্যাসেঞ্জাররা যে যার দল পাকিয়ে গল্প করতে ব্যস্ত। আমরা দুজন মুখোমুখি বসেছিলাম।

ভদ্রলোক বললেন, আজ থেকে অনেক দিন আগে। আমি তখন এজেন্সি বিজনেস করি। সামান্য কমিশনে অল্প প্রফিটে খুশি থাকি। সেই সময়ে একবার একটা অর্ডার পেলাম রামকান্ত বোস লেন থেকে। রামকান্ত বোস লেন দেখেছেন?

বললাম, না—

ভদ্রলোক বললেন, সে এক অদ্ভুত লেন মশাই, দোকান—পাট কারখানা বস্তি সব এক লাগোয়া। একেবারে গায়ে গায়ে লাগানো। তিরিশের একের বি রামকান্ত বোস লেন খুঁজে পাওয়া কি সহজ?

আমি যখন পৌঁছুলাম সেখানে, তখন রাত হয়ে গেছে অনেক। অন্ধকারে বাড়ির নম্বর দেখা যায় না ভালো করে। রাত নটা বেজেছে তখন। কাকে আর জিজ্ঞেস করি কোন বাড়িটার নম্বর তিরিশের একের বি।

একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, মশাই, তিরিশের একের বি বাড়িটা কোথায় হবে?

সে—লোকটা ব্যস্তবাগীশ লোক মনে হল; বললে, ওই দিকে দেখুন—

বলে লোকটা যেদিকে যাচ্ছিল, সেই দিকেই চলে গেল।

আমি বাড়ির নম্বরটা খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেলাম। একবার এদিক একবার ওদিক করে করে শেষকালে একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। মাটির বাড়ি, টিনের চাল। খানিকটা আবার খোলা। ছোট ছোট কাঠের জানলা। ভেতরেও অন্ধকার। কাকে ডাকবো, কার নাম ধরে চেঁচাবো বুঝতে পারছিলাম না।

অর্ডারটা পেয়েছিলাম কে একজন জে. কে গাঙ্গুলির কাছ থেকে।

বাড়ির নম্বর, নাম, ধাম সমস্তই আমার কাছে ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কিছুই কাজে লাগলো না।

আমাদের এই বিজনেসে এরকম ঘটনা নতুন নয়। নানা জায়গা থেকে অর্ডার আসে আমার ফার্মের ঠিকানায়। যাদের টেলিফোন আছে, তাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। আর তখন মশাই আমার নিজের কারবারে আমিই ম্যানেজার আর আমিই ক্লার্ক। আবার আমিই আমার নিজের চাপরাশি তখন। অফিসে তালা—চাবি দিয়ে বাইরে গিয়ে চা খেয়ে আসি। সারা দিন অফিস চালাই, আর সন্ধেবেলা বেরোই পোর্টফোলিও ব্যাগটা নিয়ে। তখন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াই। পার্টির বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দেখা করবার সময় হয় আমার।

—কিসের বিজনেস আপনার?

—আরে মশাই, বিজনেস কি আমার একটা জিনিসের? হরেক রকম মালের অর্ডার সাপ্লাই করতে হয়। কেউ চায় এক টন তেঁতুল বিচি, কেউ ঝ্যাঁটার কাঠি, কেউ আবার চায় ফড়িং—

—ফড়িং?

—হ্যাঁ মশাই, পাখির খাবার। আর একসঙ্গে কেউ তো এক টন তেঁতুল বিচি সাপ্লাই করতে পারে না। তাই সকলের কাছ থেকে দশ সের, বিশ সের করে জোগাড় করে সাপ্লাই করতে হয়।

—অত তেঁতুল—বিচি দিয়ে কী হতো?

ভদ্রলোক বললেন, ওই যে আটার সঙ্গে ভেজাল দেওয়ার জন্যে। তেঁতুল—বিচি গুঁড়ো করে আটার সঙ্গে মিশিয়ে দিলে আর ধরবার উপায় নেই। যাকগে, এসব বাজে কথা…আপনাকে আসল ব্যাপারটা খুলে বলি—

ভদ্রলোক কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। ট্রেনটা তখন পেন্ড্রা রোড স্টেশনে এসে থেমেছে।

বাইরের দিকে চেয়ে বললেন, এই চা—ওয়ালা—এই—

তারপর আমার দিকে ফিরে বললেন, আপনি চা খাবেন নাকি?

বললাম, দিন—

পুলিশের চাকরিতে সাধারণত তখন কারো কাছ থেকেই কিছু খেতাম না। কার মনে কী আছে, তা তো বলা যায় না। তবু ভদ্রলোককে দেখে কিন্তু সন্দেহ হবার মতো মনে হল না। তারপর ভদ্রলোক আমার সম্পূর্ণ অচেনা। সারাজীবনে আর কখনো আমার সঙ্গে দেখা হবার আশা নেই। আমার সঙ্গে তাঁর শত্রুতাই বা কী থাকতে পারে?

চা খেয়ে ভদ্রলোক বললেন, তারপর শুনুন—আমি সেই বাড়ির সামনের দরজার কড়া নাড়তে লাগলাম—

দরজার পাল্লা দুটো খোলাই রয়েছে। কিন্তু না বলে কয়ে তো ভেতরে হুট করে ঢুকে পড়তে পারি না। কিন্তু করবোই বা কী? আমারও তো কাজ। কাজ মানে ব্যবসা। সারা কলকাতা শহর টহল দিয়ে দিয়ে জুতোর শুকতলা ক্ষইয়ে ফেলি। তারপর আবার সেই রাত্রে বাড়ি ফেরা আছে। আবার পরদিন ভোরবেলা উঠেই বেরোতে হবে।

শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না দেখে বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেলাম।

ঢুকতে ঢুকতে ডাকতে লাগলাম, গাঙ্গুলিবাবু, গাঙ্গুলিবাবু—

কিন্তু কোথায় গাঙ্গুলিবাবু? সামনের দিকে একখানা ঘর। সে ঘরটা পেরিয়ে উঠোন। উঠোনের চারদিকে আবার সার—সার ছোট ছোট ঘর। মনে হল কোণের দিকের একখানা ঘরে যেন টিম—টিম করে আলো জ্বলছে। আলো যখন জ্বলছে, তখন নিশ্চয়ই লোক আছে।

সেই দিকে চেয়ে আবার ডাকলাম, গাঙ্গুলিবাবু—

কিন্তু কা—কস্য পরিবেদনা! কেউই উত্তর দিচ্ছে না।

বড় মশকিলে পড়লাম। কী করবো বুঝতে পারলাম না। উঠোনটা পেরিয়ে গিয়ে আবার ডাকলাম, গাঙ্গুলিবাবু আছেন—?

তবু উত্তর নেই। ভাবলাম ফিরে যাবো কিনা। কিন্তু এতদূর এসে ফিরে যাওয়া কি উচিত হবে!

একবার কী মনে হল—আরো এগিয়ে গেলাম।

ঘরটার ঠিক দরজার সামনে যেতেই আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত থরথর করে কেঁপে উঠলো। আমি এক নজর সেদিকে দেখেই যেন ভূত দেখে চমকে উঠেছি। আর সেখানে দাঁড়াতে পারলাম না। যেদিক দিয়ে ঢুকেছিলাম, সেই দিক দিয়েই বাইরে চলে এলাম। রাস্তায় আমাকে কেউ দেখতে পেলো কিনা তা আর তখন ভাববার সময় নেই। এক নিঃশ্বাসে বৌবাজার থানায় গিয়ে হাজির হলাম।

থানার অফিসার—ইন—চার্জ আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কী চান?

আমি কি আর তখন কথা বলতে পারছি মশাই যে সব খুলে বলবো? আমার তখন মাথা থেকে পা পর্যন্ত থরথর করে কাঁপছে। আমি কোন রকমে চেয়ারটার ওপরে বসে পড়ে বললাম, এক গ্লাস জল যদি কাউকে দিয়ে আনিয়ে দিতে পারেন—

জল এলো। জল খেলাম।

ও—সি খানিক পরে আমাকে জিজ্ঞেস করলে, কী হয়েছে বলুন তো আপনার?

বললাম, আমি এখুনি রামকান্ত বোস লেন থেকে আসছি। তিরিশের একের বি রামকান্ত বোস লেন। বাড়িতে কোনো লোকজন দেখতে পেলাম না। তাই বাড়ির মালিকের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ভেতরের উঠোনে ঢুকে গিয়েছিলুম। সদর দরজা খোলা ছিল কিনা। কিন্তু উঠোনের ভেতরে গিয়ে ডাকতেই নজরে পড়লো কোণের দিকের একটা ঘরের ভেতরে একটা খুন হয়ে পড়ে আছে। রক্তে সমস্ত মেঝে একেবারে ভেসে যাচ্ছে—

—তারপর?

বললাম, তারপর সেই দেখে আর সেখানে দাঁড়াইনি, সোজা দৌড়োতে দৌড়োতে আপনার কাছে আসছি…

—কিন্তু আপনি দেখতে পেলেন কী করে? আলো জ্বলছিল?

বললাম, মোমবাতি কিম্বা কেরোসিনের ল্যাম্প হয়তো জ্বলছিল একটা—

যার বাড়িতে আপনি গিয়েছিলেন, সে ভদ্রলোকের নাম কী?

বললাম, মিস্টার জে. কে. গাঙ্গুলি, এই দেখুন, এই তার চিঠি পেয়েই আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম—

ও—সি চিঠিটা হাতে নিলে। পড়ে দেখলে আদ্যোপান্ত। তারপর বললে, এ চিঠিটা আমার কাছে থাক—

বলে আমার নাম—ধাম—পরিচয়—কুলুজি সব টুকে নিলে। তারপর দুজন কনস্টেবলকে ডাকলে। তাদের সঙ্গে নিয়ে বেরোল।

যাবার সময় আমাকে বললে, আপনি বসুন এখানে, আমি আসছি—

আমাকে বসিয়ে রেখে অফিসার—ইন—চার্জ বাইরে চলে গেল।

থানায় বসে থাকতে থাকতে আমার বড় ভয় করতে লাগলো মশাই। পুলিশের খপ্পরে পড়লাম শেষকালে। না জানি কী হিতে বিপরীত হবে! তা ছাড়া শেষ পর্যন্ত আমায় যদি না ছাড়ে? আমাকে যদি হাজতে রেখে দেয়? অন্যের ভালো করতে এসে শেষকালে কি নিজেরই খারাপ হবে নাকি? পুলিশকে তো বিশ্বাস নেই। কিছু মনে করবেন না মশাই। আমরা সাধারণ মানুষ, ব্রিটিশ—আমলের লোক, পুলিশের ভয় এখনো আমাদের কাটেনি।

তা সেই রকম চুপচাপ বসে আছি থানায়। কত লোক আসছে যাচ্ছে, কত টেলিফোন আসছে। কেউ আমার দিকে দেখছে না। আমলই দিচ্ছে না আমাকে।

এমনি করে প্রায় এক ঘণ্টা কাটলো।

হঠাৎ ও—সি এসে ঘরে ঢুকলো। সঙ্গে সেই দুজন কনস্টেবল, আর একজন অচেনা ভদ্রলোক।

ভদ্রলোককে দেখিয়ে ও—সি বললে, দেখুন তো, একে চিনতে পারেন কিনা?

ভদ্রলোক আমার দিকে তখন একদৃষ্টে চেয়ে দেখছে।

আমিও চেয়ে দেখছি। কেউ কাউকে চিনতে পারছি না।

ও—সি বললে, এঁর নামই তো মিস্টার জে. কে. গাঙ্গুলি। আপনি এঁকে আগে কখনো দেখেননি?

বললাম না, আমি কী করে দেখবো ওঁকে! আমি তো ওঁর চিঠি পেয়েই ওঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।

ভদ্রলোক এতক্ষণে কথা বললে।

বললে, আর আমি এদিকে আপনার জন্যে হাঁ করে বসে আছি। মালটা আমার আর্জেন্ট দরকার, আর আপনি আসছেন না। চোদ্দো তারিখে আপনাকে চিঠি লিখেছি আর পনেরো দিন হয়ে গেল আপনার কোনো খোঁজখবর নেই।

আমি বললাম, আমি আর একটা পার্টির কাজে বাইরে গিয়েছিলাম, কলকাতার বাইরে—আর আমি ছাড়া তো আমার অন্য কোনো স্টাফ নেই—

—তা আপনি আমার বাড়িতে আজকে কখন গিয়েছিলেন?

—এই তো, তখন রাত প্রায় নটা হবে।

—সেকি মশাই, আমি সন্ধে ছটা থেকে বাড়িতে বসে আছি, যাবো কোথায়? বাসে—ট্রামে কি জায়গা পাওয়া যায় যে আপনার মতো ঘুরে বেড়াবো?

ভদ্রলোকের কথা শুনে আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। আমি নিজে গিয়ে দেখে এলাম, নিজে বাড়ির উঠোনে ঢুকলাম, আর দেখলাম একজন লোক খুন হয়ে পড়ে রয়েছে, আর ভদ্রলোক বলছেন আমি যাই নি!

ভদ্রলোক বললে, তাহলে আপনি বোধ হয় অন্য কোনো বাড়ির ভেতর ঢুকেছিলেন—

বললাম, তা কখনো হতে পারে? আমার চোখ নেই? আমি স্পষ্ট দেখলাম তিরিশের একের বি লেখা রয়েছে দরজার মাথায়।

ভদ্রলোক বললে, আপন দেখাতে পারেন আমাকে?

বললাম, নিশ্চয় দেখাতে পারি—

ভদ্রলোক বললে, যদি না দেখাতে পারেন, তাহলে কিন্তু আপনার নামে মানহানির মামলা করবো, আপনি পুলিশের সামনে আমাকে বেইজ্জত করেছেন!

—আমি আপনার বে—ইজ্জতি করেছি? বলছেন কী আপনি?

—বে—ইজ্জতি করছেন না? পুলিশ অফিসার যদি প্রমাণ করেন যে আমি আমার বাড়িতে লুকিয়ে লুকিয়ে খুন—খারাপির কারবার করি, তখন তো আমাকে ফাঁসিতে লটকাবেন?

আমি বললাম, দেখুন মশাই, আমি ভেবেছিলাম আমি হয়তো খুনের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়বো, সেই জন্যেই এই থানায় এসে এজাহার দিয়েছি। নইলে আপনার বিরুদ্ধে আমার কোনো রাগ নেই। আর রাগ থাকবেই বা কেন? আপনি তো আমার অচেনা লোক। আপনাকে আমি এর আগে কখনো দেখিনি। আর রামকান্ত বোস লেনেও আমি জীবনে কখনো যাইনি এর আগে—

—তাহলে আপনি মিথ্যে কথা বলছেন।

আমার রাগ হয়ে গেল। বললাম, খবরদার বলছি আমার সঙ্গে আপনি অমন করে কথা বলবেন না। যা দেখেছি তাই আমি বলেছি—

পুলিশ অফিসার বললেন, আপনারা ঝগড়া করছেন মিছিমিছি। কে মিথ্যে কথা বলছেন আর কে বলছেন না, তার প্রমাণ আমি করবো। আর যে বাড়িতে গিয়ে খুনটা দেখেছিলেন, সেটা আর একবার দেখাতে পারবেন?

বললাম, নিশ্চয়ই দেখাতে পারবো। চলুন, আমি আপনার সামনেই দেখিয়ে দেবো—

পুলিশ অফিসার বললেন, তাই চলুন—আর আপনিও চলুন আমার সঙ্গে—

সেদিন যে কী বিপদে পড়েছিলুম কী বলবো মশাই। পুলিশকে বরাবরই ভয় করি, অথচ সেই পুলিশের খপ্পরেই পড়তে হল আমাকে।

তা সেই রাত্রেই আবার তিনজনে মিলে সেই রামকান্ত বোস লেনের বাড়িতে গেলাম। সেই তিরিশের একের বি নম্বরের বাড়িতে।

গাঙ্গুলিবাবু বললেন, এই দেখুন, এই আমার বাড়ি। এই বাড়িতেই আপনি এসেছিলেন তো?

আমি ভালো করে চেয়ে দেখতে লাগলাম।

—বেশ ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিন মশাই। শেষকালে যেন বলবেন না যে আমি আপনাকে ধাপ্পা দিয়েছি। ঠিক করে দেখে বলুন এই বাড়িতেই আপনি এসেছিলেন কিনা—

আমি কী বলবো! রামকান্ত বোস লেনের কোনো বাড়িটা এক রকমের নয়। কোনোটা পাকা বাড়ি, কোনোটা মাটির, কোনোটা টিনের চাল। গাঙ্গুলিবাবুর বাড়িটাও মাটির বাড়ি। আমার কেমন মনে হতে লাগলো এই বাড়িতেই আমি ঘণ্টাখানেক আগে ঢুকেছিলুম।

—নম্বরটা ভালো করে দেখুন!

দেখলাম নম্বরটার দিকে চেয়ে।

—কী লেখা আছে?

বললাম, তিরিশের একের বি।

—এই বাড়িতেই আপনি ঢুকেছিলেন?

বললাম, হ্যাঁ কিন্তু তখন তো ভেতরে কোনো লোকজন ছিল না—সমস্ত বাড়িটা অন্ধকার লাগছিল—ভেতরে একটা উঠোন ছিল—

ভদ্রলোক বললেন, আমার বাড়িতেও একটা উঠোন আছে। চলুন দেখবেন চলুন—

আমি ভেতরে ঢুকলাম। ভদ্রলোক আগে আগে চলতে লাগলেন। পুলিশ অফিসারটিও সঙ্গে সঙ্গে চলতে লাগলো।

আমি ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলাম। ঠিক সেই রকমই বাড়িটা বটে, কিন্তু আসবাবপত্র ভরা, লোকজন রয়েছে। ভদ্রলোকের ছেলেমেয়েরা রয়েছে।

—কী দেখছেন?

অফিসারটি বললে, কী দেখছেন?

আমার তখন মুখে মুখে আটকে যাচ্ছে। কী বলবো বুঝতে পারলাম না।

—কী মশাই, বলুন কিছু? কোথায়, কোন ঘরে খুন—খারাপি দেখেছিলেন?

বললাম, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না—

ভদ্রলোক হাসলেন; বললেন, এক রাস্তায় তো দুটো বাড়ির একই নম্বর হতে পারে না। আপনি মিছিমিছি আমাকে খুনের দায়ে জড়াতে চেয়েছিলেন—আমি কি আর তা বুঝি না?

অফিসার—ইন—চার্জও আমাকে বললে, এখন তো দেখলেন সব, বুঝলেন আপনার মনের ভুল?

বললাম, তা হতে পারে, আমি হয়তো ভুলই দেখেছিলুম—

তারপর আর কী বলবো? চুপ করে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।

জে. কে. গাঙ্গুলি ভদ্রলোক তখন জিতে গেছে। তখন আরো তম্বি বেড়ে গেছে। দু—চার কথা শোনালো। আমার তখন চুপ করে থাকার পালা, তাই আমি সব কিল হজম করে গেলুম।

রাস্তায় এসে পুলিশ অফিসার বললে, যান, বাড়ি চলে যান—এবার থেকে নিজে সঠিক না হয়ে কিছু অ্যালিগেশন দেবেন না যার—তার নামে—

আমি নমস্কার করে ক্ষুণ্ণ মনে চলে এলাম।

ট্রেনের ভদ্রলোক বললেন, এ তো গেল সেই দিনের ব্যাপার। আমি ভাবলাম ঝঞ্ঝাট চুকলো। আমি আমার কারবার নিয়ে থাকবো, দুটো পয়সার ব্যবস্থা করবো, তা নয় যত ছেঁড়া ঝামেলা—

তারপর আমার দিকে চেয়ে বললেন, এবার আর এক কাপ চা খাবেন নাকি?

আর একটা স্টেশন এসে পড়েছিল। কিছু লোক উঠলো, আবার কিছু লোক নামলোও।

বললাম, তারপর?

ভদ্রলোক বললেন, আর এক কাপ খেলে পারতেন, চা’টা এখানে করে ভালো—

বলে গরম চায়ে ঘন—ঘন চুমুক দিতে লাগলেন। তারপর সবটা নিঃশেষ করে মাটির ভাঁড়টা টিপ করে প্ল্যাটফর্ম আর গাড়ির ফাঁকে ফেলে দিলেন।

আবার জিজ্ঞেস করলাম, তারপর?

ট্রেনটা আবার চলতে লাগলো। পেছন থেকে এক ভদ্রলোক বোধ হয় এতক্ষণ গল্পটা আগাগোড়া শুনছিলেন।

বললেন, আপনি রামকান্ত বোস লেনের কথা বলছেন তো?

আমরা দুজনেই চোখ ফিরিয়ে চেয়ে দেখলাম সেই দিকে। বেশ মোটাসোটা বয়স্ক প্রবীণ ভদ্রলোক।

—আমি মশাই ওই রামকান্ত বোস লেনেই একবার একটা বাড়ি কিনতে গিয়েছিলাম, সে কী বিপদ মশাই, আমার ক’টা টাকাই গচ্চা গেল—

এতক্ষণ যে ভদ্রলোক গল্প বলছিলেন তিনি বললেন, সেকি! আমিও তো বাড়ি কিনতে গিয়েছিলাম। কত নম্বরের বাড়িটা বলুন তো?

—তা মনে নেই, অনেক দিন আগেকার ব্যাপার তো!

—কী হয়েছিল আপনার?

পেছনের ভদ্রলোক বললেন, এক দালালের কথায় ভুলে বাড়িটা দেখতে গিয়েছিলুম। সামনে, আপনি যা বললেন, ওই মাটির একখানা ঘর, ভেতরে আরো চার—পাঁচখানা ঘর, মধ্যিখানে একটা উঠোন—

—দালালটার কিরকম চেহারা বলুন তো?

পেছনের ভদ্রলোক বললেন, কালো, বেঁটে, কোঁকড়ানো চুল মাথায়—

—ঠিক বলেছেন, বেটা মহা শয়তান। আগে তো বুঝতে পারিনি, আমি মশাই ওই দালালের পাল্লায় পড়েছিলুম। ওঃ, কী ডেঞ্জারাস লোক। আপনার কাছে কত টাকা ঠকিয়েছে?

—তা বারোশো টাকার মতন।

—বাড়ির মালিকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন?

পেছনের ভদ্রলোক বললেন, না দেখা করলে বারোশো টাকা কার হাতে দেবো? বাড়িটার দরদস্তুর ঠিক হলো পনেরো হাজার টাকায়, আমি তার নিমতলা ঘাট রোডের বাড়িতে গিয়ে দেখা করলাম। দেখলাম ভদ্রলোক বেশ প্রবীণ। বললেন, বাড়িটা তাঁর এক পিসিমার কাছ থেকে পাওয়া। পিসিমার কেউ ছেলেমেয়ে ছিল না। উত্তরাধিকার—সূত্রে তিনি ওটা পেয়েছিলেন। তাঁর বাড়ির দরকার নেই, সেই জন্যেই বেচে দিতে চান।

দুজনে কথা বলছিলেন। আর আমি বসে বসে দুজনের কথা শুনতে লাগলাম।

শেষকালে বললাম, আসল ব্যাপারটা কী হলো খুলে বলুন—আমি আপনাদের কথা ঠিক স্পষ্ট বুঝতে পারছি না।

আমার পাশের ভদ্রলোক বললেন, আসলে ব্যাপারটা হলো ওই নিমতলা ঘাট রোডের ভদ্রলোকই হলেন বাড়ির মালিক। তিনি ওই সম্পত্তিটা পেয়েছিলেন পিসিমার কাছ থেকে।

—সে তো শুনলাম। তারপর?

—তারপর ওঁর মতো আমিও একদিন বাড়ি দেখতে গেলাম। দালাল সঙ্গে করে আমাকেও নিয়ে গেল। দেখি সেই বাড়িটা আমি অনেক দিন আগে যে বাড়িটা দেখেছিলাম রাত নটায়। ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। নম্বরটা ভালো করে লক্ষ করলাম। পঞ্চাশের বি। সেদিন রাত্রে ওই নম্বরটাই আমি তিরিশের একের বি বলে ভুল করেছিলাম।

দালালটা বললে, কী হলো, কী দেখছেন?

আমি বললাম, দেখছি, বাড়িটা পুরোনো—

দালাল বললে, হ্যাঁ, মালিক তো বলেইছেন আপনাকে যে পুরোনো বাড়ি। নইলে এই সাত কাঠা জমির ওপর বাড়ির কখনো পনেরো হাজার টাকা দাম হয়? আপনিই বলুন না। এই জমির ওপর আপনি দু’তলা বাড়ি তুলে ভাড়া দিন না, মাসে মাসে আপনার পাঁচশো টাকা ভাড়া আসবে বে—কসুর।

দালাল অনেক কথা বলছিল, কিন্তু আমার কানে সে সব কথা যাচ্ছিল না।

একবার ভাবলাম এ বাড়ি নিয়ে কী করবো, বাড়ি ফিরে যাই। আবার ভাবলাম দেখিই না জিনিসটা কী! সেদিন যে মানুষ খুন দেখে ভয় পেয়েছিলাম ভয় পেয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়েছিলাম, সে রহস্যটা কী!

দালাল বললে, চলুন, ভেতরে চলুন—

দালালের পেছন—পেছন ভেতরে গেলাম। ঠিক সেই বাড়ি, সেই ঘর, সেই উঠোন। কিন্তু পরিষ্কার—পরিচ্ছন্ন। কোথাও নোংরা, জঞ্জাল কিছু নেই।

—এই দেখুন, পেছনে কত জায়গা। একতলাতেই আপনার দশখানা বেড—রুম করতে পারবেন আপনি ইচ্ছে করলে। তারপর দোতলা তুললে পুবদিকের রোদ পাবেন, দক্ষিণের বাতাস পাবেন, উত্তরের আলো পাবেন।

আমার যেন কেমন সন্দেহ হলো।

জিজ্ঞেস করলাম, এ—বাড়ি এতদিন বিক্রি হচ্ছে না কেন? কেউ কি এর আগে কিনতে এসেছিল?

—না মশাই, মালিকের কি টাকার অভাব? বাড়ি বিক্রির গা—ই নেই কর্তার।

আমি কিছু বললাম না মুখে। আমি যে এ—বাড়িতে আগে এসেছি তা জানালাম না। আমি যেন এ—পাড়াতে এই প্রথম আসছি এই রকম।

দেখালাম! আমি মশাই অর্ডার সাপ্লায়ের ব্যবসা করি, আমি অত সহজে ছাড়বো কেন? দালালটার কথার ভাবে বুঝলাম আগে অনেক খদ্দের বাড়ি কিনতে এসেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো এক কারণে কিনতে পারেনি বলে বাড়িটা খালি পড়ে আছে। আর, তা ছাড়া এ বাড়ির দামও কম। কেন কম? এ বাড়ির দাম পঁচিশ হাজার বললেও তো কেনবার লোকের অভাব হবে না।

দালালটা বললে, আমি নিজে গা করে মালিককে দিয়ে বেচাবার চেষ্টা করছি, যাতে আমি দুটো পয়সা পাই—

আমি সমস্ত বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। তারপর আবার বাইরের রাস্তায় এসে বললাম, ঠিক আছে, বাড়িটা তো দেখা হলো, আমার পছন্দও হয়েছে এবার বায়না করার ব্যাপার—

দালাল বললে, বারোশো টাকায় বায়না হবে, তারপর সার্চ—টার্চ করতে লাগবে মাসখানেক। মাসখানেক পরেই দলিল রেজিস্ট্রি হবে।

বললাম, তাই ঠিক রইল—

—কবে তাহলে মালিকের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন, বলুন?

বললাম, যেদিন তোমার সময় হবে, আমার টাকা রেডি—

দালালটা বললে, আমি তাহলে মালিকের সঙ্গে কথা বলে আপনাকে খবর দেবো।

দালাল চলে গেল। আমিও অন্যদিকে চলতে লাগলাম।

একজন লোক দেখছিলাম অনেকক্ষণ থেকে আমাদের লক্ষ করছিল। নীচু স্ট্যটাসের লোক। খালি গা, পায়ে চটি। বিড়ি খাচ্ছে ফুক—ফুক করে।

দালালটা চলে যেতেই আমি তার দিকে ভালো করে চেয়ে দেখলাম। লোকটাও একটু যেন উৎসাহ পেয়ে কাছে এলো।

বললে, আপনি বাড়িটা কিনছেন নাকি?

বললাম, তুমি কে?

লোকটা বললে, আমি এই পাড়াতেই থাকি। তা বাড়িটার কত দাম বলেছে?

বললাম, পনেরো হাজার—

লোকটা বিড়িটায় সুখটান দিলে। তারপর বললে, আপনার টাকা, আপনি কিনবেন, তাতে আমার কিছু বলবার নেই। তবে যা করবেন একটু ভেবেচিন্তে করবেন।

—কেন? একথা বলছো কেন? বাড়িটার কিছু গলদ আছে?

লোকটা বললে, গলদ তো আছেই, গলদ না থাকলে অ্যাদ্দিন বিক্রি না হয়ে শুধু শুধু খালি পড়ে আছে? একটা ভাড়াটে পর্যন্ত নেই, দেখতেই তো পেলেন।

—কী গলদ?

লোকটা আবার একটা বিড়ি ধরালে।

বললে, গলদ তো আছেই, নইলে বিক্রি হচ্ছে না কেন? এ তো স্ট্রেট কথা মশাই, এই ভাড়াটে—বাড়ির দুর্ভিক্ষের সময় একটা ভাড়াটেও আসছে না, গলদ না থাকলে এমন হয়?

—তা কী গলদ তুমি জানো কিছু?

—জানি না, তবে লোকের মুখে নানান কথা শুনতে পাই তো!

—কী শোনো?

লোকটা বললে, না, না, তা আমি বলবো না, আপনি নিজের পকেটের পাইস খরচ করে বাড়ি কিনতে যাচ্ছেন, আমি কেন তাতে বাদ সাধবো?

বললাম, না, এখানো আমি বায়নার টাকা দিইনি, তুমি বলো—গলদটা কী, তাই বলো আমাকে।

লোকটা বলে, আমি নিজের চোখে কিছু দেখিনি মশাই, যা শুনেছি তাই আপনাকে বলতে পারি।

—বলো।

—আরে মশাই, তাহলে আপনাকে সত্যি কথাটাই বলি। আপনি গেরস্ত মানুষ, আপনার কতকগুলো টাকা মিছিমিছি নষ্ট হবে, এটা আমি চাই না।

—তার মানে?

—তার মানে, বাড়ি আপনি কিনছেন কিনুন, কিন্তু টিঁকতে পারবেন না—এ বাড়িতে, এও বলে রাখছি। কোনো মানুষ ও—বাড়িতে টিঁকতে পারবে না।

আমি আরো অবাক হবার ভান করলাম।

বললাম, সেকি! কী বলছো তুমি?

—হ্যাঁ, ঠিক কথাই বলছি মশাই। আপনি তো জানেন না। আগে যারা কিনতে এসেছিল তারা জানে। এ বাড়ির দরজায় তালা—চাবি দেওয়া রয়েছে দেখলেন তো? ওই বাড়ির তালা— চাবি আবার যখন তখন খুলে যায়।

—খুলে যায়, মানে?

—খুলে যায় মানে কে খোলে, কে বন্ধ করে তার ঠিক নেই।

—তাহলে কি ভূতের বাড়ি বলছো? ভূতের উপদ্রব আছে?

লোকটা বললে, তা কী করে বলবো মশাই! যা শুনিচি তাই বললাম। অনেকে আবার রাত্তিরবেলা বাড়িতে ঢুকে দেখেছে খুন—খারাপি কাণ্ড।

—সেকি!

—তাই তো বলছিলুম, ও বাড়ি আপনি কিনবেন না মশাই। যদি বেঘোরে প্রাণটা খোয়াতে না চান তো কিনবেন না।

বলে লোকটা অন্যদিকে চলে যাচ্ছিল। আমি চেপে ধরলাম।

বললাম, আরো কী কী জানো ও—বাড়ি সম্বন্ধে তাই বলে দাও, আমি ছাপোষা মানুষ বাড়ি কিনে ঝামেলা পোয়াতে চাই না—

লোকটার যেন গা নেই আর, আমাকে এড়াতে চাইছে।

বললে, ওই তো বললাম মশাই, যা জানি সব আপনাকে বললুম।

বলে লোকটা ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল। আমি কী করবো বুঝতে পারলাম না। আমি সোজা নিজের অফিসে চলে গেলাম।

অনেকদিন পরে একদিন অফিসে কাজ করছি, হঠাৎ একজন ঘরে ঢুকলো। মুখখানার দিকে চেয়ে চমকে উঠলাম। মিস্টার জে. কে. গাঙ্গুলি!

—কী চাই আপনার?

গাঙ্গুলিবাবু বললে, নমস্কার, আমার সেই মালটার কী হলো?

বললাম, কী মাল?

—মনে নেই, আপনি সেই আমাদের পাড়ায় গিয়ে ভুল করে আমার বাড়ি মনে করে অন্য বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন? মনে নেই?

যেন এতক্ষণে মনে পড়লো, এমনি ভাবে বললাম, ও মনে পড়েছে—

গাঙ্গুলিবাবু বললে, সেদিন পুলিশের সামনে আপনি অমন করে বললেন, শুনে মনটা খিঁচড়ে গিয়েছিল, তাই কিছু কটু কথা শুনিয়েছি আপনাকে, কিছু মনে করবেন না। তা আমার সেই মালটার কী হলো?

—কোন মালটা বলুন তো?

গাঙ্গুলিবাবু বললেন, সেই যে দেড় টন হাড়?

এতক্ষণে যেন মনে পড়লো। বললাম, হ্যাঁ, নানান কাজের চাপে আর ও—কথা মনেই ছিল না। আমি চেয়েছিলাম দেড় টন হাড়, কিন্তু এখন আমার কাছে পার্টি বলছে তিন টন হাড় চাই—

গাঙ্গুলিবাবু বললে, তা তিন টন চাইলে তিন টনই দিতে পারি—

—কত তারিখের মধ্যে দিতে পারবেন?

—আপনি যেদিন বলবেন। আমার মশাই ট্যাংরাতে নিজের গোডাউন আছে। মালের অভাব কী?

বললাম, আপনি মশাই কোত্থেকে এত হাড় জোগাড় করেন? কিছু মনে করবেন না একথা জিজ্ঞেস করছি বলে—

—না, না, তা মনে করবো কেন? বড় শক্ত কারবার মশাই। গ্রামে গ্রামে আমার লোক আছে। বাংলাদেশের ক্ষেতে খামারে—ভাগাড়ে যে গরু—মোষ মরে, আমি পয়সা দিয়ে তা কিনে নিই। পাকিস্তান না হলে আমি আরো মাল সাপ্লাই করতে পারতুম। পাকিস্তান হওয়ার পর থেকেই একটু মুসকিল হয়েছে। খেত—খামার—ভাগাড় ওয়েস্ট বেঙ্গলে আর অত কোথায় বলুন না।

—তা এত গরু—মোষ মরে?

গাঙ্গুলিবাবু বললে, তা মরে না? মানুষই তো আজকাল মরে ভূত হয়ে যাচ্ছে। একবার নিমতলার শ্মশানে গিয়ে দেখে আসুন না, চিতে জ্বলছে তো জ্বলছেই। শ্মশান কখনও খালি যেতে দেখেছেন?

তা বটে! গাঙ্গুলিবাবু যা বললে তাতে বুঝলাম বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে তার টাকা দাদন দেওয়া থাকে মুচিদের কাছে, চামারদের কাছে। রাস্তায়—ঘাটে বনে—বাদাড়ে গরু—ছাগল—মোষ মরলেই তারা কিনে নেয়, কিম্বা কুড়িয়ে নেয়। তারপর তার হাড় জড়ো করে গাঙ্গুলিবাবুর গুদামে পাঠিয়ে দেয়।

আমি এত সব জানতুম না। এতদিন আমি নানারকম অর্ডার সাপ্লাই করেছি। ঝ্যাঁটার কাঠি, তেঁতুল—বিচি, পোকা—কামড়। কিন্তু হাড় এই প্রথম। একটা বিলিতি কোম্পানি অর্ডার দিয়েছিল হাড়ের—তারা ইয়োরোপে পাঠাবে। কিন্তু গাঙ্গুলিবাবুই বললে, পাকিস্তান হবার পর থেকেই নাকি কারবারের অবস্থা খারাপ চলছে। হাড়ের সাপ্লাই কমে যাচ্ছে। পাকিস্তান মার্কেটটাই হাড়ের কারবারে ফুলে—ফেঁপে উঠছে।

জিজ্ঞেস করলাম, কেন?

গাঙ্গুলিবাবু বললে, আরে, আপনি তা জানেন না? এই যে জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানে অত হিন্দু মরলো, মরলো কেন তা বুঝলেন না? বোন মার্চেন্টরা মতলব করেই তো ওটা করলে। লক্ষ লক্ষ মানুষের হাড় সাপ্লাই করে পাকিস্তানের বোন মার্চেন্টরা একেবারে রাতারাতি লাল হয়ে গেল। আর আমরা এখানে বসে বসে শুধু বুড়ো আঙুল চুষছি—

তারপর একটু থেমে বললে, তা থাকগে, সে সব বাজে কথা। কপালে যখন কষ্ট আছে তখন আর কাকে দোষ দেব? আপনি আমার তিন টন মাল কাটিয়ে দিন—দরের জন্যে আপনি ভাববেন না।

বললাম, ঠিক আছে, আমি আজই পার্টিকে চিঠি লিখে দিচ্ছি।

গাঙ্গুলিবাবু চলে গেল।

আমি ভাবতে লাগলাম। আমার মাথায় হঠাৎ উদয় হল বোন মার্চেন্টদের দুরবস্থার কথা। পাকিস্তান লাভ করছে আর ইন্ডিয়া লোকসান দিচ্ছে।

পরদিনই অফিস বন্ধ করে তখনি বাড়ি চলে এলাম।

পরদিনই হঠাৎ দালালটা এসে হাজির।

বললে, কী হল স্যার, সেই যে বায়না করবেন বলেছিলেন বাড়িটার?

বললাম, আরো কিছুদিন সময় চাই—আর এক সপ্তাহ।

দালালটা চলে গেল।

চলে যাবার সময় বললে, এই চান্সটা ছাড়বেন না স্যার, নইলে এমন সস্তায় বাড়ি আর পাবেন না।

দালালটাকে কথাটা স্পষ্ট করে বললাম না। শুধু বললাম, টাকাটা জোগাড় করেই তোমায় খবর দেব।

দালাল মানুষ, সহজে ছাড়তে চায় না। বেচা—কেনা হলেই দালালের লাভ। কিন্তু আমি ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত না দেখে কিছু করবো না ঠিক করলাম। ওদিকে মিস্টার গাঙ্গুলিও কেবল তাগাদা দিচ্ছে অর্ডারের জন্যে। আমি কী করবো বুঝতে পারলাম না। কিন্তু মনে মনে গোঁ চেপে গেল। একজন ভদ্রলোকের বাড়ি, তিনি সেটা বেচতে চান। দরও সস্তা। তবু কে এর পেছনে আছে যে, লোকটা এত বাধা দিচ্ছে?

সেদিন খবরের কাগজে হঠাৎ একটা খবর পেয়ে চমকে উঠলাম। বেশ বড় বড় করে ছাপা হয়েছে সামনের পাতায়। খবরটা পড়ে পর্যন্ত আমার কেমন সন্দেহ হতে লাগলো।

খবরটা ছিল এই—একটা মাল বোঝাই লরি মির্জাপুর স্ট্রিট দিয়ে যাচ্ছিল। যেতে যেতে হঠাৎ একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়। লরিটা পাশের ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে জোরে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। উল্টে যেতেই লরির মালগুলো রাস্তায় পড়ে ছত্রাকার হয়ে যায়। ড্রাইভার আর কুলিরা বাকি যে কজন গাড়িতে ছিল তারা সবাই সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের কোনও পাত্তা নেই। পুলিশ এসে লরির মাল আটক করে। লম্বা লম্বা কাঠের প্যাকিং কেস। যে প্যাকিং কেসগুলো ভেঙে যায়, তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে কয়েকটা মানুষের মৃতদেহ। পুলিশ কনস্টেবলরা মৃতদেহগুলো তদারক করছে।

খবরটা পড়েই আমি মশাই সোজা বাসে চড়ে মির্জাপুর স্ট্রিটে গিয়ে হাজির হলাম।

গিয়ে দেখি, সেখানে পুলিশ পাহারাওলাতে জায়গাটা ভর্তি। মানুষের ভিড়ও হয়েছে যথেষ্ট। সবই কৌতূহলী হয়ে একে—ওকে জিজ্ঞেস করছে, কী হয়েছে মশাই? কী হয়েছে এখানে?

কিন্তু কেউ বলতে পারছে না কোথা থেকে মালটা আসছিল, কিম্বা কোথায় যাচ্ছিল। একমাত্র ভরসা লরিটা।

শুনলাম লরির মালিকেরও নাকি পাত্তা নেই। যে নম্বরে গাড়ি রেজিস্ট্রি করা আছে, সে নম্বরটাই নাকি জাল। গাড়ির মালিকের যে নাম—ঠিকানা পুলিশের খাতায় লেখা আছে, সে নাম—ঠিকানারও নাকি কোনও হদিশ নেই।

আমি আর কী করবো, সোজা আবার আমার অফিসে চলে এলাম।

কিন্তু অফিসে বসেও কিছু কাজ করতে পারলাম না। সন্ধেবেলা আমি সেই থানায় গিয়ে হাজির হলাম। প্রথমে একটু সঙ্কোচ ছিল। কিন্তু গিয়ে দেখলাম থানার অফিসার—ইন—চার্জ অন্য লোক। আগেকার অফিসার বদলি হয়ে অন্য থানায় চলে গেছে।

আমি নিজের নাম—ধাম পেশা পরিচয় দিয়ে বললাম, দেখুন, আমার সন্দেহ হয়, ওই মিস্টার জে. কে গাঙ্গুলিকে।

—কে মিস্টার জে. কে. গাঙ্গুলি?

—ওই তিরিশের একের বি নম্বর বাড়িতে যিনি থাকেন।

—সে কী? সেই মিস্টার গাঙ্গুলি তো আমার এখানে এসেছিলেন। তিনি তো বোন মার্চেন্ট?

বললাম, হ্যাঁ, তিনিই। এই দেখুন—

বলে পকেট থেকে আমার কাগজপত্র সব বার করে দেখালাম। দেখালাম আমি তাকে তিন টন হাড়ের অর্ডার দিয়েছি। তাঁর ট্যাংরায় হাড়ের গোডাউন আছে। আরো বললাম, আমি রামকান্ত বোস লেনের পঞ্চাশের বি নম্বর বাড়িতে গিয়ে কী দেখেছিলাম। সমস্ত ব্যাপারটাই খুলে বললাম।

অফিসার—ইন—চার্জ সব দেখলেন সব শুনলেন। তারপর দলবল সঙ্গে জিপ নিয়ে চলে গেলেন, রামকান্ত বোস লেনে মিস্টার জে. কে. গাঙ্গুলির বাড়িতে।

ট্রেনটা আবার একটা স্টেশনে এসে থামল।

ভদ্রলোক গল্প থামিয়ে বললেন, আর এক কাপ চা হবে নাকি?

বললাম, থাক, তারপর কী হল বলুন?

পেছনের ভদ্রলোকও বললেন, ওঃ, আমি তো খুব বেঁচে গেছি মশাই—বারোশো টাকার ওপর দিয়ে কেটে গেছে। তারপর? তারপর?

ভদ্রলোক বললেন, তারপর আর কি, মিস্টার জে. কে. গাঙ্গুলি অ্যারেস্টও হল, হাতে হাত—কড়া পড়ল। কোর্টে কেস উঠল।

আমি মশাই রোজ কোর্টে যাই হিয়ারিং—এর সময়। কিন্তু মানুষটা অদ্ভুত। ভয়—ডর বলে কিছু নেই।

পাবলিক—প্রোসিকিউটর যত জিজ্ঞেস করে—আপনি এ সম্বন্ধে কিছু জানেন? ততই গাঙ্গুলিবাবু বলে, না।

কিছুই জানে না মিস্টার জে. কে. গাঙ্গুলি। সে একেবারে ইনোসেন্ট।

—আপনি হাড়ের ব্যবসা করেন?

—হ্যাঁ।

—আপনি হাড় কোথায় পান?

—মফসসল থেকে। আমার টাকা দাদন দেওয়া থাকে গ্রামের চামারদের কাছে।

যা হোক, এত সব খুঁটিনাটি ব্যাপার আপনাদের শোনবার দরকার নেই। যেদিন রায় বেরোল, সেদিন আমিও বসে আছি কোর্টে।

ভদ্রলোক চায়ে চুমুক দিলেন।

বললেন, বেড়ে চা করেছে মশাই, এক কাপ খেলে পারতেন।

বললাম, না থাক; আপনি বলুন, তারপর কী হল? কী রায় বেরোল?

ভদ্রলোক বললেন, জজসাহেব মশাই আসামীকে ছেড়ে দিলেন।

—ছেড়ে দিলে, মানে?

—ছেড়ে দিলে মানে, মুক্তি দিয়ে দিলে আসামিকে। একেবারে ইনোসেন্ট সিটিজেন মিস্টার জে. কে গাঙ্গুলি। তাকে অন্যায়ভাবে নাকি আসামি করা হয়েছে এই মামলায়। সেই মন্তব্য করলেন জজসাহেব।

—ছেড়ে দিলে?

পেছনের ভদ্রলোকও জিজ্ঞেস করলেন, ছেড়ে দিলে? বলেন কী?

পাশের ভদ্রলোক বললেন, হ্যাঁ মশাই, ছেড়ে দিলে। কিন্তু ভগবান যাকে মারে, জজসাহেব তাকে কী করে ছাড়বে বলুন? কোর্ট থেকে বেরোবার সঙ্গে সঙ্গে একজন বৃদ্ধ লোক সেই গাঙ্গুলিবাবুকে ছুরি মেরে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় খুন করে ফেললো।

—সে কী?

ভদ্রলোক বললেন, হ্যাঁ মশাই। সে এক আশ্চর্য কাণ্ড। আমরা তখন কোর্টের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। চারদিকে লোক গমগম করছে। সেই সময়ে সেই কাণ্ড। বুড়ো লোক, বয়েস প্রায় পঞ্চাশের ওপর।

শুনে আমি দৌড়ে গেলাম সেখানে। সেখানে তখন লোকে লোকারণ্য।

বুড়ো লোকটাকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। এ যেন সেই নিমতলা ঘাট রোডের বৃদ্ধ লোকটি! পঞ্চাশের বি নম্বরের বাড়িটা যার কাছে কিনতে গিয়েছিলাম।

কিন্তু বেশিক্ষণ দেখতে পেলাম না। ততক্ষণে পুলিশ দারোগা সবাই এসে তাঁকে ধরে ফেলেছে। আর তিনিও পালাতে চেষ্টা করছেন না। বেশ হাসিমুখে তাদের হাতে ধরা দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে থানার গাড়িতে গিয়ে উঠলেন।

—তারপর?

—তারপর সংক্ষেপে বলি। বৃদ্ধ লোকটির কেস উঠল কোর্টে। তার বৃদ্ধ বয়েসের কথা ভেবে জজসাহেব তাকে বসতে বললেন।

জজ জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কিছু বলবার আছে?

বৃদ্ধ বললেন, বলবার আছে বলেই তো আমি ওকে খুন করেছি ধর্মাবতার। আমার নাম বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি। জীবন আমার ছেলে। ওই জে. কে. গাঙ্গুলি অতবড় শয়তান ছেলে পৃথিবীর আর কোনও বাপের যেন না হয় ধর্মাবতার। আজ তাকে নিঃশেষ করতে পেরে আমি শান্তি পেয়েছি। আমার ছেলেকে ছোটবেলা থেকেই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলুম। সে মাতাল, সে জোচ্চেচার। আমার বংশের সে একমাত্র ছেলে হলেও আজ তাকে খুন করে আমি এক ফোঁটা চোখের জলও ফেলছি না তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। কারণ সে আমার বংশের কলঙ্ক। সে হাড়ের ব্যবসা করতো। খুব চাহিদা আছে বিদেশে। তাই ওই ব্যবসা করবে বলে আমার কাছে টাকা চেয়েছিল, কিন্তু আমি দিইনি। যাহোক, আজ সে মারা গেছে, তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে আমি আছি।

বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি একটু থেমে আবার বলতে লাগলেন আর সে শুধু একলা নয়, তার সঙ্গে আরো অনেকে আছে। তাদের নাম—ধাম বলতে পারলে আমি খুশি হতুম। কিন্তু তারা ভাগ্যবান বলেই আজ পার পেয়ে গেল। সে মানুষের হাড় বেচতো। মেডিক্যাল কলেজের যত বেওয়ারিশ ডেড—বডি সেইগুলো সে কিনতো। কিনে আমার পঞ্চাশের বি নম্বরের বাড়িটার মাটির তলায় ঘর করে সেখানে ছাল—চামড়া—মাংস পুঁতে ফেলতো—আর হাড়গুলো ট্যাংরার গোডাউনে গিয়ে জমা করতো। আমি তার পৈশাচিক কাজ পছন্দ করতাম না বলে ওই বাড়িটা অনেকদিন ধরে বেচবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যতবার খদ্দের এসেছে, ততবার সে তাদের ভয় দেখিয়ে দালাল লাগিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। মাঝখান থেকে দালালরা টাকা খেয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওই জমি—বাড়ি আমি জলের দরে বেচে দিতে চেয়েছি—তবু সে তাতে বাধা দিয়েছে। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, তাই সেদিন লরিটা রাস্তায় ভেঙে পড়ে গিয়ে সব ফাঁস হয়ে গেল। আর জীবন ধরা পড়লো। তখন মনে ভারী আনন্দ হল এই ভেবে যে, ভগবান যাকে শাস্তি দেয়নি, মানুষের আদালতে হয়তো সে উচিত শাস্তি পাবে। কিন্তু দেখলাম, মানুষের আদালতে ধর্মের বিচার হয় না। আর হবেই বা কী করে? দেশের মানুষও তো আজ অমানুষ হয়ে গেছে। তাই সেদিন যখন ধর্মাবতারের রায় বেরোয়, যখন সে হাসিমুখে কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসছিল, তখন আমি আর থাকতে পারলাম না ধর্মাবতার। কোর্টের উঠোনের ডাবওয়ালাটার কাছ থেকে কাটারিটা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে খুন করলুম। ধর্মাবতারের চোখে হয়তো আমি অন্যায় করেছি, কিন্তু আমি জানি মাথার ওপর আর একজন যে ধর্মাবতার আছেন তাঁর দরবারে সব সময় ন্যায়বিচার হয়।

—তারপর কী হল বললেন না?

—তারপর আর কী হবে, বৃদ্ধের বয়েসের কথা ভেবে তার চোদ্দ বছরের জেল হয়ে গেল—লাইফ সেনটেনস।

কুলিরা মালপত্র নামিয়ে নিয়েছে। ট্রেনটা ছেড়ে দেবে।

—নমস্কার।

বললাম, আচ্ছা, এ ব্যাপারটা কি সত্যি? কলকাতা শহরে ভেতরে ভেতরে এই ব্যাপার ঘটে?

ট্রেনটা তখন নড়তে শুরু করেছে। বললেন, এর চেয়েও বীভৎস ব্যাপার ঘটছে মশাই এখন কলকাতাতে। আর মিথ্যে গল্প শুনিয়ে আপনাদের লাভ কি আমার? আর এ তো আমার নিজের চোখে দেখা ঘটনা।

—আপনার নামটা বলে গেলেন না?

ভদ্রলোক বললেন, আজ্ঞে আমিই সেই হতভাগ্য বাপ—আমারই নাম বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায়, এই তো দু’বছর হল আমি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *